মন দিতে চাই পর্ব -০৭

#মন_দিতে_চাই
#৭ম_পর্ব
#লেখনীতে_সুপ্রিয়া_চক্রবর্তী

মামা মামিকে বলল বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে৷ মামার আদেশ শুনে মামি কান্নায় ভেঙে পড়ল। মামার পায়ের কাছে বসে বলল , দয়া করে আমার সাথে এমন করো না। আমরা কত বছর ধরে সংসার করছি। আমাদের সুখের সংসার এভাবে ভেঙে যেতে পারে না।

মামা মামির থেকে দূরে সরে এসে বলে , তোমার মতো এত নিচ মহিলার সাথে এতদিন সংসার করেছি ভেবেই আমার খারাপ লাগছে। কিন্তু আর না। এবার আমি আর তোমার সাথে থাকব না। তুমি এক্ষুনি আমার বাড়ি থেকে চলে যাও। আমি তালাকনামা পাঠিয়ে দেব।

মামার কাছে অনেক অনুরোধ করে ব্যর্থ হলে মামি আমার কাছে এসে সাহায্য চায়। আমার হাত ধরে বলে , আমি জানি ঝিনুক আমি তোর সাথে অনেক অন্যায় করেছি। যা হয়তো ক্ষমার অযোগ্য। কিন্তু তাই বলে আমি নিশ্চয়ই এত বড় শাস্তি পাবো না। আমার নিজের হাতে তৈরি সংসার আমি ছাড়তে পারব না ঝিনুক। আমি তোর কাছে হাতজোড় করছি , প্রয়োজনে তোর পায়ে

মামি আমার পায়ে হাত দিতে চাইলে আমি সরে আসলাম। মামি আমার সাথে যত খারাপ ব্যবহারই করুক না কেন এই সময় আমার মামির জন্য খারাপ লাগতে লাগল। আমি তাই মামাকে অনুরোধ করলাম , যা হবার তা তো হয়েই গেছে মামা। এখন শুধু শুধু নিজেদের মধ্যে ঝামেলা করে কি হবে। মামি তো নিজের ভুলের জন্য অনুতপ্ত। তবে আমি বলবো না মামিকে ক্ষমা করে দিতে। কারণ মামির জন্য শুধু আমার ক্ষতি হয়নি , তোমার নিজেরও অনেক ক্ষতি হয়েছে। তোমার মান-সম্মান এবং চাকরি দুটোই তুমি হারিয়েছ মামির কারণে। তাই মামি অবশ্যই শাস্তির দাবিদার। তবে সেটা তালাক নয়। অন্যভাবেও তো শাস্তি দেওয়া যায়।

তুই বল ঝিনু এই মহিলাকে আমি কিভাবে শাস্তি দেব।

সেটা তোমার ব্যাপার মামা। আমি শুধু তোমাকে এটুকু বলব মামিকে তালাক দিও না। এছাড়া তুমি যা শাস্তি দেবার দাও , সেই ব্যাপারে আমি মাথা ঘামাবো না।

মামি আমার দিকে হতবাক হয়ে তাকালেন। আমার থেকে এরকম কথা আশা করেন নি বোধহয়। ভেবেছিলেন আমি হয়তো মামির হয়ে কথা বলবো। মামি কি করে এমনটা ভাবল আমার জানা নেই। নিজের প্রতি হওয়া মানলেও আজ মামির কারণে মামার যা ক্ষতি হয়েছে সেটা আমি কোনদিনও মেনে নিতে পারব না। তাই মামিকে অবশ্যই তার কৃতকর্মের জন্য উপযুক্ত শাস্তি পেতেই হবে। তবেই তার একটা উপযুক্ত শিক্ষা হবে।

মামা মামিকে বলল , আমার কাছে ঝিনুর কথা যুক্তিযুক্ত লাগছে। তোমাকে আমি অন্যভাবে শাস্তি দেব। ডিভোর্স দেব না , তবে আজ থেকে তুমি আর আমি আলাদা থাকব। শুধু তাই নয় এই বাড়ির সব কাজ তুমি করবে। যেহেতু আমার চাকরি চলে গেছে , তাই এখন তোমাকে আরো বেশি বেশি শ্রম দিতে হবে। আমি ভাবছি জমানো টাকা দিয়ে একটু গরুর খামার দেবো। সেই খামারের সব কাজ করবে তুমি।

মামার কথায় মামির টনক নড়ে। মামি টিস্যু দিয়ে অশ্রু মুছে বলে , তুমি জানো তো আমি গোবরের গন্ধ একদম সহ্য করতে পারি না। তাহলে আমাকে এমন শাস্তি কেন দিচ্ছ।

আমি কোন কথা শুনতে চাইনা। হয় তুমি আমার সব কথা মেনে নেবে আর নাহলে তালাকনামায় সই করে এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে।

ঠিক আছে আমি তোমার সব কথা মেনে চলব। তবুও তুমি আমায় তালাক দিও না। এই বয়সে এসে আমি এটা সহ্য করতে পারব না।

মামির অসহায় মুখ দেখে প্রথমে খারাপ লাগলেও , খুব একটা করুণা হলো না। সে যেসব কাজ করেছে তাতে এমনটা হওয়ারই ছিল।

আমি মামিকে বললাম , আশা করি এবার তুমি শুধরে যাওয়ার চেষ্টা করবে। জীবনে সুযোগ কিন্তু বারবার পাওয়া যায়না। তাই সেই সুযোগ পেয়েছ সেটা কাজে লাগাও।

মামি কিছু বলল না। কিন্তু তার অঙ্গভঙ্গি দেখেই আমি বুঝতে পেরেছি মনে মনে হয়তো আমাকে অনেক গালি দিচ্ছে। কিছু কিছু মানুষের স্বভাব কু*কু*রের লেজের মতো। জীবনেও সোজা হয়না , বাকা থাকে সবসময়। মামিও সেই তালিকায় নথিভুক্ত। তাই এত কিছুর পরেও মামি একটুও শোধরানোর নাম নিচ্ছে না। আমি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে ঘরের দিকে রওনা দিলাম। মাথায় এখনো প্রচণ্ড ব্যাথা করছে৷ একটু বিশ্রাম নিলে হয়তো ঠিক হয়ে যাবো। তাই নিজের কক্ষে এসে বিছানায় শুয়ে পড়লাম। মনে পড়ে গেল মুক্তো নামক সুন্দর কন্ঠস্বরের অধিকারী মানুষটির কথা। যার হয়তো আজ আমার হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা হয়তো ভাগ্যে অন্য কিছু লিখে রেখেছেন। তাই আমার আর পাওয়া হলো না তাকে। জীবনে সব চাওয়া পূর্ণ হয়না। নিজের মনকে আমি এটা বোঝালাম। চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করল। কিন্তু মুক্তোর চিন্তা কিছুতেই মাথা থেকে দূরে সরল না। আমার বারবার মনে হতে লাগল মুক্তো কি আমায় ভুল বুঝল? একবারের জন্য যদি সুযোগ পেতাম তার কাছে ক্ষমা চাওয়ার। তাহলে আমি অনেক শান্তি পেতাম।

এসব ব্যাপার নিয়ে ভাবনা চিন্তা করতেই আমার মনে পড়ে গেল আমার ফোনে তো মুক্তোর নাম্বার আছে। আমি বালিশের নিচ থেকে ফোন বের করে হাতে নিলাম। কল লিস্টে গিয়ে মুক্তোর নাম্বার খুঁজতে লাগলাম। একটু খুঁজতেই পেয়েও গেলাম। আর সময় নষ্ট না করে কল দিলাম। ফোন রিং হচ্ছে কিন্তু কেউ রিসিভ করছে না। এভাবে ফোনটা কে*টে গেল। আমি দ্বিতীয় বার কল দিলাম। এবার একটু পরেই কল রিসিভ করলেন উনি।

আমি কিভাবে কথা বলব বুঝতে পারছিলাম না। ওনার কাছে এখন হয়তো আমি অপরাধী। কত স্বপ্ন নিয়ে উনি এসেছিলেন আমাকে বিয়ে করতে। মামির দুষ্টু পরিকল্পনার কারণে সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেল।

আমি কিছু বলার আগেই মুক্তো বলল , কে রে? কে বিরক্ত করছিস এত রাতে আমায়। এমনিই আমার বিয়ে ভেঙে গেছে। সেই চিন্তায় আমি ঘুমাতে পারছি না। আর তুই কে যে আমায় বিরক্ত করছিস। হু দা হেল আর ইউ? আ উইল ফা*ক ইউ।

গলা শুনেই বুঝলাম উনি ড্রিংক করে আছেন। তাই তার সুন্দর কন্ঠস্বর কিরকম বাজে শোনাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে ওনার সাথে কথা বলা উচিৎ হবে কিনা সেটা নিয়ে ভাবতে লাগলাম আমি।

আমার থেকে কোন উত্তর না পেয়ে হয়তো রেগে গেলেন মুক্তো। চট জলদি কল কা*ট করে দিলেন। আমি তপ্ত শ্বাস ফেলে জানালার কাছে এসে দাঁড়ালাম। আজ আমাবস্যা। আকাশে চাঁদের দেখা নেই। আমার জীবনেও আজ ঘোর আমাবস্যা নেমে এসেছে। যাকে নিজের মনে স্থান দিতে চেয়েছিলাম , যার মনে নিজের জন্য স্থান তৈরি করতে চেয়েছিলাম। তাকে কষ্ট দিয়ে ফেললাম , তার থেকে ঘৃণা পেলাম।

আমার অজান্তেই আঁখি যুগল ছলছল করে উঠল। ভীষণ কষ্টে বুকে যন্ত্রণা হচ্ছে। আমি পারছি না নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণ কর‍তে।

এমন সময় কেউ আমার পিঠে হাত রাখলে আমি পিছনে ফিরে তাকালাম। স্নিগ্ধা আপিকে দেখে ভরসা পেলাম। স্নিগ্ধা আপি আমাকে বলল , জানিস ঝিনুক তোর জন্য আমার সত্যি খুব খারাপ লাগছে। শুরু থেকে তোর জীবনে একের পর এক কষ্ট। এত কষ্ট নিয়ে তুই কিভাবে বেঁচে আছিস বল? আমি তোর যায়গায় থাকলে হয়তো এতদিনে মরেই যেতাম।

আমি শুধু মৃদু হাসলাম। আসলে এখন আর কোন কষ্টই আমার কাছে কষ্ট মনে হয়না। মনে হয় মৃত্যু হলেই সব কষ্ট থেকে মুক্তি পাবো।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here