মন দিয়েছে ধরা পর্ব -০৫

#মন_দিয়েছে_ধরা
#পর্বঃ৫
লেখনীতে#পুষ্পিতা_প্রিমা

পরীর পাশে চুপিচুপি শুইয়ে পড়লো ইশা। বাপ
মেয়ে খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। মেয়ে ব্যাথা না পায় মতো খুব সাবধানে শুয়েছে আদি। ইশা দু’জনের দিকে তাকিয়ে হাসলো। তার সুখী সংসার। মেয়ের ঘুমন্ত মুখে, গালে, কপালে, নাকে ছোট ছোট চুমুতে ভরিয়ে দিল। একহাত রেখে জড়িয়ে ধরতেই আদি চট করে তার হাত সরিয়ে দিল। চোখ মেলে বলল

কি করছ মিষ্টি?

ইশা হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে বলল

কি করলাম? আমার মেয়েকে আমি জড়িয়ে ধরব না?

তোমার হাতের ভার ও সইতে পারবে না।

ইশা চোখ বড়বড় করে তাকালো। বলল

আমি ওকে জড়িয়ে ধরব না তাহলে?

আমি ধরেছি? আমার মতো ঘুমাও।

ইশা নাকফুলিয়ে চাইলো। আদি এক চোখ বন্ধ রাখলো অপর চোখ খোলা। খোলা চোখ দিয়ে ইশাকে দেখতে দেখতে দুজনেই একসাথে হেসে উঠলো। ইশা বালিশ দিয়ে তার মুখে মেরে বলল

আপনি আমার সাথে কথা বলবেন না।

আদির হাসার আওয়াজে পরী নড়েচড়ে উঠে গেল। তারপর উপুড় হয়ে শোয়া থেকে উঠে বসলো।

ক্ষেপা চোখে তাকালো সে ইশার দিকে। ইশা বলল

আপনার দোষ।

তোমার দোষ মিষ্টি।

পরী বসে চোখ কচলাতে কচলাতে কেঁদে উঠলো। ইশা হাত বাড়িয়ে বুকের উপর টেনে নিয়ে পিঠের উপর আলতো হাত বুলিয়ে মুখে ছড়া কাটতেই পরী শান্ত হয়ে গেল। আদি বলল

মিষ্টি আমাকে দাও।

আপনি তখন থেকে নিয়ে বসে আছেন। এখন ও আমার।

আদি পাশ ফিরে শুয়ে গেল। পরী মুখ তুলে ইশার মুখে তাকিয়ে বলল

মাববো।

ইশা ভেঙচি কেটে বলল

ভ্যাঁ ভ্যাঁ।

পরী রেগে শব্দ করলো

উমমম।

ইশা ভেঙচি কেটে বলল

একদম বাপের মতো বজ্জাত হয়েছে। আদি চট করে ফিরে পরীকে টেনে নিয়ে নিল। দু’হাতের বাঁধনে বেঁধে গালে চুমু খেয়ে বলল

এবার নাও।

পরী খিকখিক করে হেসে উঠলো। ইশা গালফুলিয়ে বলল

মেয়েকে পেয়ে বড়লোক হয়ে গেছেন? যখন ও থাকবে না তখন কি করবেন?

কথাটা বলে ফেলার পরই ইশা বুঝতে পারলো সে ভুলসময় ভুল কথা বলে ফেলেছে। আদি তার দিকে রুষ্ট চোখে চেয়ে আছে। যেন ইশা আর কিছু বলতে গেলেই সে গর্জে উঠবে। ইশা আর কিছু বলল না।

পরী আদির মুখে লালা লাগিয়ে দিচ্ছে। আদি তাকে শক্ত বাঁধনে বেঁধে রেখে বলল

আমি আমার মেয়েকে আর কোথাও যেতে দেব না মিষ্টি।

ইশা চুপ করে থাকলো। পরী ডাকলো

আববা।

আদি তার নিষ্পাপ মুখটার দিকে তাকিয়ে গভীর চুমু দিল কপালে। বলল

মিষ্টি তুমি প্লিজ আমার মেয়েকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিও না। আমার কি দোষ বলো? আমি সুস্থ থাকলে প্রাণ থাকতেও তোমাদেরকে একা ছাড়তাম না। প্লিজ তোমার ভাইদের একটু বুঝিয়ে বলো ওকে যেন নিয়ে না যায়।

ইশা তার কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো। চুলগুলো ঘেঁটে দিতে দিতে বলল

ওকে কেউ নিয়ে যাবে না ডক্টর।

সত্যি?

হুমম।

আদি হাসলো। তার হাসি দেখে পরীও খিকখিক করে হাসতে লাগলো।

_________________

কোলবালিশের গায়ে পা তুলে ঘুমিয়ে আছে নীরা। এমনভাবে শুয়েছে তার শোয়ার জন্য জায়গা রাখেনি। রিপ গ্লাসে পানি ঢেলে খেতে খেতে আরও একবারও ঘুমন্ত মহিলাটির দিকে তাকালো। আজ কি বকবকটাই না করলো। রিপ তখন থেকে এটাই ভেবে যাচ্ছে। অথচ মনে হয়েছে মেয়েটা কত ভদ্র।
পানি খেতে খেতে হঠাৎ করে সে দেখলো নীরা চোখ মেলে তাকিয়ে আছে। খুকখুক করে কেশে উঠতেই মুখ থেকে পানি পড়ে গেল রিপের। দেখলো নীরা আবারও চোখ বন্ধ করে রেখেছে। চোখ কি খোলা ছিল নাকি সে ভুল দেখেছে?

অফিসের পোশাক বদলে একটা টিশার্ট গায়ে দিল সে। রুমে পায়চারি করতে করতে ভাবলো সে কিভাবে শোবে? মেয়েটাকে ডাকবে? না ডাকবে না। আবারও বকবক করা শুরু করবে। রিপের প্রচন্ড ঘুম আসছে। সে হাঁটতে হাঁটতে শুনতে পেল

ভিজেবিড়ালের বন্য মুরগীর সাথে দেখছি দারুণ ভাব জমেছে।

রিপ ফিরে তাকালো তার দিকে। নীরার চোখজোড়া বন্ধ। রিপ কপাল ভাঁজ করে তাকিয়ে থাকলো। মেয়েটা জেগে আছে? কথাটা বলে কি বুঝাতে চেয়েছে? কে ভিজেবিড়াল? কে বন্য মুরগী?

নীরা!

নীরা বুঝে পায় না একটা মানুষ কতটা শান্ত হলে গালি শুনেও এতটা শান্তস্বরে কথা বলতে পারে। উফফ এরকম একটা এলিয়েনকে সে কি করে যে ভালোবেসে উল্টিয়ে ফেলেছে কে জানে।

তুমি জেগে আছ? জেগে থাকলে আমাকে সাইড দাও।

নীরা বিড়বিড়িয়ে বলল,

এখন আবার ঘরের মুরগীর সাথে ভাব করতে এসেছে।

হোয়াট?

নীরা নড়েচড়ে সারা বিছানাজুড়ে লুটোপুটি খেতে খেতে বলল

এ কি আপনি দাঁড়িয়ে আছেন কেন? শুয়ে পড়ুন।

কিভাবে শুয়ে পড়বো? জায়গা রেখেছ? সাইড দাও। আমার ঘুম পাচ্ছে।

নীরা বড়বড় করে চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে বলল

কেন আপনার অফিসে ঘুমানোর জায়গা নেই?

রিপ ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে বলল

কি বলতে চাইছো? আমি ওখানে চলে যাব?

এটা আবার জিজ্ঞেস করার কি আছে? আচ্ছা আচ্ছা আপনি এখানে ঘুমাতে এসেছেন?

রিপ আমতাআমতা করে বলল

তো কোথায় যাব? এটা আমার ঘর।

মানেটা কি? তো আমার ঘর কোনটা?

রিপের এত বকবক করতে ইচ্ছে করছে না। তাও সে উত্তর দিল।

এইটা।

আপনারও এইটা?

হ্যা হ্যা তাই তো।

সত্যি?

হ্যা সত্যি? তুমি আমাকে মিথ্যে বলতে দেখেছ কখনো?

তারমানে এটা আপনারও ঘর আমারও ঘর।

হ্যা ওরকমই।

দুটো মিলে কি হয়?

নীরা গালে হাত দিয়ে ভাবতে লাগলো। রিপ হনহনিয়ে বিছানার পাশে গিয়ে বসতে যাবে নীরা তখনি সেখানে শাড়ির আঁচল মেলে দিয়ে বসলো। বলল

আমার উত্তর দিন।

কিসের উত্তর নীরা?

রিপের গলায় বিরক্তি ভাব।

আপনার ঘর আর আমার ঘর মিলে কি হয়?

আমাদের ঘর হয়।

নীরা গালভরে হাসলো। তারপর ধপাস করে শুয়ে পড়ে হাসতে হাসতে বলল

থ্যাংকস এডভোকেট সাহেব। আপনি এবার শুঁতে পারেন।

রিপ শুঁতে যাবে ঠিক তখনি নীরা সেই জায়গায় গিয়ে শুয়ে পড়লো। রিপ এবার রাগ করে হন্তদন্ত পায়ে সরে পড়তে যাবে ঠিক তখনি নীরা খপ করে তার হাত ধরে আটকাতে গিয়ে বড়সড় একটি ভুল করে ফেললো। তার হাতটা খপ করে ধরে ফেললো রিপের কাঁধের কাছে টিশার্টটি । তারপর টানটা একটু জোরে পড়ায় টাল সামলাতে না পারায় রিপের শরীর জলোচ্ছ্বাসের মতো আছড়ে পড়লো তার উপর। সাথে সাথেই নীরার কন্ঠরোধ হয়ে এল। ভেতর থেকে কোনো শব্দ আসা বন্ধ হয়ে গিয়েছে পুরোপুরি। ভাবলো কোথায় সে এখন?

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here