মন দিয়েছে ধরা পর্ব -০৬

#মন_দিয়েছে_ধরা
#পর্বঃ৬
লেখনীতে#পুষ্পিতা_প্রিমা

চোখমুখ শক্ত করে নীরার দিকে চেয়ে রইলো রিপ। নীরার নাকটা যেন থেঁতলে গিয়েছে এমন। রিপও নিজের নাকের মাথা হাত দিয়ে মুছে ফেললো। নীরা চোখ তুলে একবার তাকিয়ে আবারও চোখ নামিয়ে ফেললো। কনিষ্ঠ আঙুলের নখ কামড়ে অন্য দিকে চোখ ঘুরিয়ে নিল। রিপ দ্রুত সরে পড়ে টিশার্টের হাতা ঠিক করে বলল

স্টুপিড নীরা। সবকিছুর একটা লিমিট থাকে।

নীরা চুপচাপ অন্য পাশে ঘুরে গেল। তার কেমন কেমন যেন লাগছে। এখনো পুরো শরীর শিরশির করছে। যে আজ অব্দি স্বেচ্ছায় তার হাতটা পর্যন্ত ধরেনি সেই মানুষটা আজ তার কত কাছাকাছি ছিল ভাবতেই শিউরে উঠলো মনপ্রাণ। লজ্জায় দুগাল তার ভারী হয়ে উঠেছে ক্রমশ। বালিশ আঁকড়ে চোখ বুঁজে ঘুমানোর চেষ্টা করলো সে। রিপ লাইট বন্ধ করে শুয়ে পড়লো। নীরা একবার ঘুরে তাকালো। মাঝখানে কোলবালিশ। ধুরর শুধু শুধু বালিশটাকে এনেছে সে। একদম পাগল। এডভোকেট ঘুমিয়ে যাক তারপর সে সেটিকে চুপটি করে সরিয়ে ফেলবে। হুহ এই সামান্য কোলবালিশ তাদের মাঝে দেয়াল হবে?নীরা এটা কখনোই হতে দেবে না।

রিপ একটা হাতের কব্জি কপালের উপর রেখে চোখ বুঁজলো। মেয়েটা কেন এমন অদ্ভুত তা ভাবতে ভাবতে তার চোখে ঘুম নামলো। মাঝরাতে ঘুম ভাঙার পর সে মেয়েটির উদ্ভট কাজ দেখে পুনরায় চমক খেল। তার হাতটা শাড়ির আঁচলে বাঁধা। আর সেই আঁচলের টানে হাতটা গিয়ে পড়েছে নীরার গায়ের উপর। রিপ হাতটা সরাতে গেলে নীরা শাড়ি আরও টেনে ধরলো। নীরা যতই নড়ে শাড়ির আঁচল ততই রিপের হাত টেনে ধরে। সে অন্য হাতের সাহায্যে গিঁট খোলার চেষ্টা করে। গিঁট খোলার জন্য একদম কাছাকাছি গিয়ে চেষ্টা করতে থাকে। হাত দিয়ে না পারতেই দাঁত দিয়ে খোলার চেষ্টা করতে যেতেই নীরা আঁতকে উঠে চোখ মেললো। নিজের উদরের কাছাকাছি রিপকে দেখে চেঁচিয়ে উঠে বলল

ছিঃ আপনি এমন অসভ্য আগে তো জানতাম না। এসব কি হচ্ছে। সরুন সরুন। ছিঃ ছিঃ।

রিপ হতভম্ব। নিজের বাঁধা হাতটা জোরে টানতেই নীরা তার শাড়ির আঁচল চেপে ধরে বলল

এখন আবার শাড়ি নিয়ে টানাটানি করছেন? ভারী অসভ্য তো আপনি। আল্লাহ আমার শরম করছে। আপনি সরুন।

রাবিশ নীরা। কিভাবে সরব আমি? হাত বেঁধেছ কেন? আর যা তা বলে যাচ্ছ। তোমার কি মনে হয় আমি ইচ্ছে করে…

পুরুষমানুষ সুযোগ পেলে অনেককিছু করার চেষ্টা করে।

হোয়াট ডু ইউ মিন বাই অনেককিছু? তোমার কি আমাকে ওরকম মনে হয় যে আমি…

আপনি সবই করতে পারেন কারণ আপনি আমার বিয়ে করা বর তাই। তো আপনি কি ভেবেছেন আমি আপনার পাশে ভয় পাওয়া ছাড়া ঘুমাই? মোটেও না। আমার তো ভয়ে রাতে ঘুমই হয় না।

রিপ বিরক্ত হলো। তার ঘুম এখনো কমপ্লিট হয়নি। সে হাতটা নিজের কাছে টেনে আনতেই নীরার শাড়ি সরে গেল। নীরা চেঁচিয়ে উঠে বলল

নাউজুবিল্লাহ আপনি দেখছি সত্যি সত্যি প্রমাণও দিচ্ছেন।

রিপ সেদিকে ত্রুক্ষেপ করলো না। সে গিঁট খোলায় ব্যস্ত। গিঁট খোলার পর নীরাকে ঢেকে দিয়ে বলল

নেক্সট টাইম আমার হাত বাঁধবে না নীরা। আমার ঘুমের ডিস্টার্ব হচ্ছে বুঝতে পেরেছ? তুমি কি নীরা? অদ্ভুত তুমি। আমি কি কোথাও পালিয়ে যাচ্ছি? এত উদ্ভট সব কাজ কি করে করো?

নীরা খানিকক্ষণ চুপ থাকলো। তারপর প্রগাঢ় অভিমানী কন্ঠে বলে উঠলো,

আমার সাথেই তো উদ্ভট সব ঘটনা ঘটেছে সেই প্রথম থেকে সেটা বলবেন না?

রিপ চুপ করে গেল। কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনি নীরা বলে উঠলো

আমি অদ্ভুত। উদ্ভট সব কাজ করতে পছন্দ করি। আপনি কাল সকাল সকাল আমাকে আমাদের বাড়িতে দিয়ে আসবেন। বাবাকে গিয়ে বলব ওই বাড়িতে দু মিনিটও সময় হয় না কারো আমার কথা শোনার। হয় বোবার মতো চুপ, নয়ত রাগ, বিরক্তি। দেখেও না দেখার মতো হয়ে থাকি, বুঝে না বুঝার মতো অবুঝ সেজে থাকি। কারো মন গলানোর কোনো দায় পড়েনি আমার। আমি শুধু শুধু একটা উটকো ঝামেলা হয়ে আপনার জীবনে এসে পড়েছি। আমাকে কালকে দিয়ে আসবেন নয়ত আমি চলে যাব।

রিপ কপালের উপর কব্জি রেখে চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকলো। ফোঁস করে শ্বাস ফেলে বলল

ঠিক আছে।

ঠিক তো হবেই। আপনাকে কেউ বিরক্ত করবে না আর।

আমি একবারও কাউকে বলিনি আমি বিরক্ত হচ্ছি।

বলতে হয় না।

ঘুমাও নীরা। বাচ্চাদের মতো রাগ করবে না।

নীরার ফোঁপানির শব্দ শুনে রিপ ‘চ কারান্ত’ শব্দ করলো। ধীরে ধীরে শাড়ির আঁচল টেনে নিয়ে নিজের হাতটা বেঁধে ফেললো। নীরা ফিরে তাকাতেই দেখলো রিপ দাঁত দিয়ে টেনে গিঁট বাঁধছে।

নীরা বলে উঠলো

আপনি চলে গেলেও সমস্যা নেই। খুলুন।

তুমি খোলো।

বলেই রিপ পাশ ফিরে শুয়ে পড়লো। হাতের টানে নীরা গিয়ে ঠেকলো তার পিঠের সাথে। বলল

কি করছেন? আমি এভাবে ঘুমাতে পারব না। খুলে দিন। আপনি যেখানে ইচ্ছে যান আমার কোনো সমস্যা নেই।

তুমি আজকে ঘুমিওনা।

নীরার কান্না পেল। রিপের ঘুম চলে আসতেই সে পিঠের সাথে মুখ লাগিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো। মাঝরাতে রিপ পাশ ফিরতেই রিপের বুকের নীচে চাপা পড়লো সে। চোখ মেলতেই নিজেকে এমন সুন্দর এক অবস্থানে দেখে সুখ সুখ অনুভূতি হলো নীরার। কতকিছু ভেবে রেখেছিল সে সকালবেলার জন্য। বাড়িতে চলে যাবে এইসেই কিন্তু এখন ওসব কিচ্ছু করতে ইচ্ছে করছেনা। রিপের হাতটি তার গা জড়িয়ে ধরা। নীরা লজ্জাবনত মুখটা ধীরেধীরে তুলে তাকালো। আঙুলের মাথা দিয়ে ছুঁয়ে ছুঁয়ে দিল গাল, নাক, ঠোঁট। ভীষণরকম সুখে পাগল হলো সে এই ভেবে ইশশ এই পুরো মানুষটা একদিন তার হবে। ইচ্ছে করেই তাকে বুকে টেনে নেবে। নীরা কাছে না এলে রাগ করবে। বলবে আমাকে তুমিও বুঝোনা নীরা।
ভাবতে ভাবতেই রিপের বুকে মুখ গুঁজে রাখলো নীরা। বিড়বিড় করলো আজ মশাইয়ের ঘুমটা বেশ ভারী হোক, নীরাও এভাবে লেপ্টে থাকুক। এভাবে একটু একটু করে ছুঁতে ছুঁতে সে মন ছুঁয়ে ফেলবে। সেদিনই হবে নীরার জয়। নীরা চাইলেই ছেড়ে যেতে পারে। মানুষটা তাকে আটকাবে না। কিন্তু মানুষটার নিঃসঙ্গতাও কখনো কাটবে না।
নীরা তার প্রিয় মানুষটিকে নিঃসঙ্গ রেখে কোথাও শান্তি পাবে না। সে মরণ অব্দি পাশে থাকবে বলে শপথ নিয়েছে। পাশে থাকবে একদিন কাছেও থাকবে।

চলবে…..

যেটা লিখেছি সেটাই দিলাম। 🥱🥱

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here