#মন_পাড়ায়
#পর্ব_৪৩
#নিলুফার_ইয়াসমিন_ঊষা
অর্ক গভীর নিশ্বাস ফেলে বলল,
“সৈকত আমি তোর সাথে প্রভার ব্যাপারে কথা বলতে এসেছি।”
সৈকত একটু অবাক হলো। তার অর্কের সাথে কথা বলার বিন্দু পরিমাণ আগ্রহ ছিলো না কিছু মুহূর্ত পূর্বেও কিন্তু প্রভা ভাবির কথা শুনে তার আগ্রহ হচ্ছে। সৈকত সামনে এগিয়ে এসে বলল,
“কী কথা বলুন?”
অর্ক একটা ফাইল এগিয়ে দিয়ে বলল,
“এইটা বিনয় ও নূহার কেইসের ফাইল।”
“তো আমাকে কেন দিচ্ছেন?”
“একটা সাহায্য লাগবে। বিনয় ও নূহার অতীত সম্পর্কে কিছু ডিটেইলস বের করতে পারবি?”
সৈকত কিছুই বুঝতে পারছিলো না। জিজ্ঞাসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো অর্কের দিকে। অর্ক গভীর নিশ্বাস ফেলে মাথা ঝুঁকিয়ে বলল,
“প্লিজ ভুল বুঝিস না আমাকে আমি প্রভার সাথে বিয়েটা করেছিলাম ওর বিরুদ্ধে প্রমাণ জমা করার জন্য। তুই জানিস বিনয় আমার কত কাছের বন্ধু আর নূহাও আমার জন্য বিশেষ ব্যক্তি ছিলো। ভালোবাসতাম ওকে আমি। সব পরিস্থিতি ইশারা করছিলো প্রভা এইসবের পিছনে দায়ী। সাথে খালা অর্থাৎ বিনয়ের মা প্রভার ব্যাপারে যা বলেছে, বিনয় যা বলেছিলো তাতে আমার সন্দেহ হয়। ওকে সাইক্রিয়াটিস্টের কাছে নেওয়া হতো তুই জানিস। আমি ভাবতাম হয়তো ওর সমস্যার কারণে ভুল করেছে। কিন্তু কথা হলো বিনয় আমাকে ওর চরিত্র নিয়ে অনেক কথা বলেছে আর খালা বলেছিলো ও পরিবারে অনেক অশান্তি করতো। আমাদের বিয়ের প্রায় পাঁচ মাস হতে এলো কিন্তু আমি এমন কিছু দেখি নি। আগে আমি ওকে জানতাম বা চিনতাম না কিন্তু এখন ওকে ভালোমতো বুঝতে শিখেছি। ও বুঝেশুনে কখনো এত বড় কাজ করবে না। আরে ও তো কারও ক্ষতির কথাও ভাবে না। সারাক্ষণ শুধু অন্যদের সুখের কথা ভাবে।”
সৈকত ভীষণ খুশি হলো অর্কের কথা শুনে। অবশেষে সে নিজের মনের কথা শুনছে। প্রভা ভাবিকে বিশ্বাস করছে। তবুও সে তার খুশু না দেখিয়ে গম্ভীর গলায় বলল,
“অর্থাৎ আপনি শেষমেশ মেনেছেন যে বিনয় ভাইয়া ও নূহা সম্পর্কে ছিলো?”
“অসম্ভব। বিনয় কখনো এমন কিছু করবে না। সম্ভবত কোনো ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে।”
সৈকত গভীর নিশ্বাস ফেললো। কিন্তু বিনয় ও নূহার সম্পর্কের ব্যাপারে কিছু বলল না। কারণ এইটা অর্কের নিজে বুঝতে হবে ও নিজেকে সামলাতে হবে। তাই সে বলল,
“আপনার ফাইল নিজের কাছে রাখুন।”
“সৈকত আমার জন্য না হলেও প্রভার জন্য এতটুকু কর। আমি প্রভার পাশে থাকলেও খালা ওকে বুঝতে চাইবে না। আবার কেইসও ওপেন করতে পারে অথবা ওর মানসিক সমস্যার কথা তুলতে পারে। এইটা প্রভার জন্য সমস্যা দাঁড় করবে।”
সৈকত অর্কের কথা না শোনার ভান করে আলমারির দিকে এগিয়ে গেল এবং সেখানে থাকা ব্যাগ থেকে একটি কাগজ বের করে অর্কের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
“আমি এই কাজ আড়াই বছর আগের থেকে শুরু করে দিয়েছি। আপনার থেকে আমার কাছে এই কেইসের বেশি তথ্য আছে। আর এই রইলো নূহার সাইক্রিয়াটিস্টের প্রিসক্রিপশন। নূহারও মানসিক সমস্যা ছিলো আর এইটা অনেক আগের থেকে। সময় দেখুন প্রায় সাত বছর আগের এই কাগজ।”
অর্ক সৈকতের হাত থেকে কাগজটা নিয়ে ভালোমতো দেখলো। বিস্মিত সুরে বলল,
“সাইক্রিয়াটিস্ট দীপ্তির কাছে তো প্রভাও যায়।”
“ওইটাই আর অনেক আগের থেকে।”
“তুই এইটা কোথা থেকে পেয়েছিস?”
“কোথা থেকে পেয়েছি সেটা আপনার জানার বিষয় না। আপনার কাছে এখন এইটা আছে তাই কাজে লাগান। আমি কাল দীপ্তি চক্রবর্তীর সাথে দেখা করতে যাচ্ছি।”
“আমিও যাব কিন্তু পুরশু যেতে পারবো। কাল অভিজিৎ এর বোনের বিয়ের অনুষ্ঠান। যেতেই হবে।”
“উনি কী বিনয় ভাইয়ার বন্ধু ছিলেন? কারণ প্রভা ভাবিকে নিয়ে গেলে তার কথা শুনতে হবে।”
“অভিজিৎ আমাদের বিজনেসের সাথে জড়িত। ও প্রভাকে চিনে না।”
“এখন এইখান থেকে যেতে পারেন।”
অর্ক দীর্ঘশ্বাস ফেললো। কিছু বলতে নিয়েও আর বলল না। ফেরত হাঁটা শুরু করল। আবার থেমে যেয়ে পিছনে ফিরে তাকিয়ে বলল,
“আচ্ছা তুই দুই বছর ধরে কেন এই প্রমাণ খুঁজতেছিলি। আর এখনও? তুই জানতি যে আমার ও প্রভার বিয়ের কারণ কী?”
“কারণ যাই হোক বর্তমানে আপনি তাকে আপন করে নিয়েছেন। যত্নে রাখবেন, নাহয় আবার হারিয়ে যাবে।”
অর্ক মৃদু হেসে বলল,
“তুই বলতে না চাইলে হাজার চেষ্টা সত্ত্বেও তোর থেকে কথা বের করা যাবে না। জানা আছে।”
সৈকত অন্যদিকে তাকাল। অর্কের কথার উত্তর দিলো না। মানুষ যতটা আপন হয় তার সাথে অভিমানটা ততটাই গভীর হয়।
.
.
প্রভা দাঁড়িয়ে আছে ব্যালকনিতে। দেখছে মেঘলা আকাশটাকে। এই যেন ঝুম করে এক বৃষ্টি নামবে ও এই শুকনো শহরটা ভিজে যাবে। কেউ মন পাঠাবে বৃষ্টির আহ্বানে আর কেউ মন পোড়াবে এই বৃষ্টিময় রাতে কারো মায়ায়……
কিন্তু সে ঠিক কী করবে? কাকে মন পাঠাবে আর কার জন্য মন পোড়াবে?
স্মৃতির পীড়াদায়ক সময়গুলো মনে করে না বর্তমানের এক অসম্পূর্ণ সম্পর্কের বাঁধনে থাকায়? এত ছোট ছোট কথায় অভিমান করা মেয়ে সে কখনোই ছিলো না। কিন্তু সে যতই ভাবুক না কেন যে বিনয়ের সাথে অর্ককে মিলাবে না। বিশ্বাস ভাঙলে সে মানুষের উপর ভাঙে সম্পর্কের উপর নয়। কিন্তু তবুও মনের কোনো এক অংশে সে ভয়টা থেকেই যায়। নিজ অনিচ্ছাকৃত ভাবেই একই সম্পর্কে জড়িত থাকা মানুষগুলোকে মন তুলনা করতে শুরু করে। বিনয়ও তাও সাথে এমন ব্যবহার করত প্রায়-ই। কিন্তু সে কখনো তার সাথে অভিমান করতো না। বুঝত তাকে, ভালোবাসলে ভালোবাসার মানুষটাকে বুঝতে শিখতে হয়। অথচ সে ভালোবাসার এমন পরিমাণ পেয়ে মনের কোণে ভয় ঢুকে যাওয়াটা তো অস্বাভাবিক কিছু না। যদি অর্কও তার সাথে এমন করে?
পরক্ষণেই ভাবলো এমন তো না যে অর্ক কখনো বলেছে সে তাকে ভালোবাসে। উল্টো অর্ক আগেই বলে দিয়েছে সে এখনো অন্যকাওকে ভালোবাসে। আর অর্ক থেকেই বা কেন আশা করছে সে? সে নিজে কী অর্ককে ভালোবাসতে পেরেছে?
সম্ভবত না।
তবে তার প্রতি এক গভীর স্থান সৃষ্টি করেছে পাড়াতে৷ যদি মন পাড়ায় সকল স্থানের নাম প্রয়োজন হয় তবে অর্কের জন্য মায়ার স্থানটাই যথাযথ হবে।
চিন্তা করতে করতেই কারো ছোঁয়া পেল সে৷ তার কাঁধে কেউ হাত রাখল। কিন্তু পিছনে তাকাল না। কিছু বললও না। সে জানে তো অর্ক ছাড়া আর কে আসবে?
অর্ক পিছন থেকে বলল,
“সরি আসলে ভীষণ চিন্তায় ছিলাম। ক্লায়েন্টদের একটা প্রেজেন্টেশন দিতে হতো। কালকে দেওয়ার কথা অথচ সম্পূর্ণ কাজ ভুল করে রেখেছিলো তাই তাড়াহুড়ো করে আমারই সব করতে হলো। আর একটা বিষয় নিয়েও চিন্তিত ছিলাম। সরি, আর হবে না প্রমিজ।”
প্রভা মৃদু কন্ঠে বলল,
“আমি কিছু মনে করি নি।”
অর্ক প্রভার কাঁধ থেকে হাত সরিয়ে তার হাতটা পিছন থেকে গলায় জড়িয়ে ধরে তার পিঠ নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে দিলো।
অর্ক তার কাঁধের উপর চিবুক রেখে মোহগ্রস্ততা কন্ঠে বলল,
“তোমার কন্ঠ শুনে মনে হচ্ছে আঘাত পেয়েছ আমার ব্যবহারে।”
চমকে উঠলো প্রভা। মুহূর্তে যেন তার মন পাড়াতে উষ্ণতা ছড়িয়ে গেল। অর্ক তাকে বুঝে এতটুকু জেনে। এতটুকু কথাও তার মন পাড়ায় খুশির বর্ষণ হতে পারে সে জানতো না। সে তার নিশ্বাস রুদ্ধ করে বলল,
“কিছুটা।”
“কাউকে ভালো না বাসলে কী তার মন্দ ব্যবহারে জন্য মানুষ কষ্ট পায়?”
সে মুহূর্তেই ঝুম বৃষ্টির আগমন হলো। মাতাল হাওয়ায় সাথে বৃষ্টি মিশে ছুঁয়ে গেল দুইজনকে। সে মাতাল হাওয়ায় এক মাতোয়ারা জাদু ছিলো যা দুইজনকে এক অদ্ভুত নেশায় ডুবিয়ে দিয়ে গেল।
অর্ক আবারও জিজ্ঞেস করল,
“বলো না কাউকে না ভালোবাসলে কী কারো একটুখানি খারাপ ব্যবহারেও মানুষ কষ্ট পায়?”
“ভালোবাসা থাক বা না থাক, আপন মানুষগুলোর ছোট থেকে ছোট আঘাতেও ভীষণ কষ্ট হয়।”
অর্ক প্রভার কাঁধে আলতো করে ঠোঁট ছোঁয়াল।
শিউরে উঠলো প্রভা। বৃষ্টির মিষ্টি হাওয়ার সাথে অর্কের ছোঁয়া লাগছে আরও মিষ্টি।
বিদ্যুৎ চমকালো। বজ্রপাতের বিকট শব্দে প্রভা প্রচন্ড ভয় পেল। সাথে সাথে পিছনে ফিরে জড়িয়ে ধরলো অর্ককে। খামচে ধরলো তার পরনের শার্ট। চোখ বন্ধ করে গভীর নিশ্বাস ফেললো। যখন সে বিকট শব্দটা কমে এলো তখন সে অর্ককে ছেড়ে তার দিকে তাকালো। চোখে চোখ রাখতে তার বুক কেঁপে উঠলো। এমন নেশাভরা রাতে এই নেশাভরা চাহনিতে সে হাজারোবার ডুবে যেতে চাইবে।
তুমুল ঝড় এসে দুই জলে ভিজিয়ে দিলো। প্রভার সে মায়া-মাখা মুখটায় বৃষ্টির বিন্দু বিন্দু জল তার মুখে সেজে আছে। তাকে দেখাচ্ছে আরও আকর্ষণীয় ও মায়াময়। সে চেয়েও দূরে সরতে পারছে না এই মায়া থেকে। প্রভার এক কোমরে হাত দিয়ে নিজের কাছে টেনে নিলো। মুগ্ধ নয়নে তার দিকে তাকিয়ে বলল,
“তুমি এতটা মায়াময়ী কেন? যে আমি নিজ অজান্তেই তোমাকে খুব করে চাইতে শুরু করি।”
প্রভা ঢোক গিললো। তার নিশ্বাস ভারী হয়ে আসছে। অর্ক যখন একটু ঝুঁকে তার কানে নিচে চুমু খেল তখন সে যেন নিজের সাথের সকল যুদ্ধ হেরে গেল। নিজ অজান্তেই অর্কের কাছে নিজেকে সমার্পিত করে দিলো।
অর্ক প্রভাকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে তাকে উঁচু করে তার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো।
এই প্রথম প্রভাকে অতীতের কোনো ভয় কাবু করে নি। সেও অর্কের চুলে হাত ডোবাল। বয়ে যেতে শুরু করলো এই মাতাল ঢেউয়ের দোলায়।
অর্ক সে অবস্থাতেই প্রভা’কে তুলে নিজ কক্ষে নিয়ে গেল। তাকে বিছানায় বসিয়ে তাকে ছেড়ে তার দিকে তাকালো। প্রভার মুখোমুখি হলো। দুইজনে এতটা কাছে যে একে অপরের নিশ্বাসটাও অনুভব করছে। প্রভার মুখখানি দেখে আরও নেশা লেগে গেল অর্কের। সে প্রভার সারামুখে ও গলায় চুমু খেতে শুরু করল।
এমন এক মুহূর্তে দরজায় টোকা পড়লো। অর্ক সেদিকে খেয়ালও নেই। প্রভা তাকে থামিয়ে বলল,
“কেউ এসেছে।”
অর্ক প্রভাকে ছেড়ে বিস্মিত সুরে বলল,
“কী?”
“কেউ এসেছে।”
“এই সময় কে এসেছে? আর সময় পায় নি? আমি দেখছি।”
অর্ক একরাশ বিরক্তি নিয়ে দরজা খুলে দেখল বিনু ও অদিন এসেছে। ওদের দেখে অর্কের বিরক্তটা আর রইলো না। সে নিচে বসে বলল,
“সো মাই প্রিন্স এন্ড প্রিন্সেস, কী চাই আপনাদের?”
অদিন বলল,
“বিদ্যুৎ চমকেছে না তাই… তাই না আপু থেকে ভয় পেয়ে গেছে। তাই অদিন আর অদিনের আপু আর মা বাবার সাথে ঘুমাবে।”
বিনু অদিনকে মেরে বলল,
“একদম মিথ্যা বলবি না। তুই ভয়ে আমার কাছে এসে ‘আপু মা’র কাছে কাছে যাব মা’র কাছে যাব শুরু করেছিস।'”
আবার অর্কের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আংকেল ও ভীতু, আমি না।”
অর্ক হেসে বলল,
“আচ্ছা আচ্ছা আজ আমার প্রিন্স ও প্রিন্সেস আমাদের সাথে ঘুমাবে।”
অদিন দৌড়ে গেল বিছানার দিকে। লাফিয়ে প্রভার কোলে মাথা রাখল।
বিনু অর্কের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,
“আংকেল আপনি ও মা ভিজলেন কীভাবে?”
অর্ক চোখ দুটো বড় বড় তাকাল প্রভার দিকে। প্রভাও একটু অস্বস্তি নিয়ে তাকাল অর্কের দিকে। ইশারায় বলল উওর দিতে। অর্ক একটু কেশে বলল,
“ওই তোমার মায়ের সাথে বারান্দা থেকে কাপড় আনছিলাম তাই।”
“কাপড় কোথায়?”
“গুছিয়ে আলমারিতে রেখে দিয়েছি।”
বিনু টেনে বলল, “ও…….”
প্রভা ও অর্ক একে একে কাপড় পালটে আসলো। অর্ক অদিন ও বিনুকে ঘুম পাড়িয়ে তাদের পাশে শুয়ে ছিলো। প্রভার অন্যপাশে যেয়ে শুয়ে পড়লো। মিটিমিটি হাসছিলো সে। অর্ক জিজ্ঞেস করল,
“হাসছ কেন?”
প্রভা তার হাসি চাপা দিয়ে মাথা ডানে বামে নাড়লো। কিন্তু আবারও ফিক করে হেসে দিলো।
অর্ক মৃদু কন্ঠে বলল,
“আমি তো ভালো মতো জানি আমার জ্বলাতে মরিচ লাগানো হচ্ছে। কিন্তু অন্যদিন তো ওরা থাকবে না।”
প্রভা তবুও হাসছিল।
অর্ক রাগান্বিত বলল,
“প্রভা ভালো হচ্ছে না কিন্তু।”
কন্ঠ শুনে অদিন একটু নড়ে-চড়ে অর্কের উপর পা ও হাত দিয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়লো।
প্রভার হাসি আরও বাড়লো।
.
.
এত গভীর রাতেও ঘুম আসছে না ঝিনুকের। সে মৃদু আলোয় তাকিয়ে আছে নিচে ঘুমন্ত সৈকতের দিকে৷ তার ফোনে কল আসলো। সে তার পাশ থেকে ফোন নিয়ে দেখে অঞ্জলির কল। অবাক হলো সে। এত রাতে অঞ্জলির কল দেওয়াটা অনেক অবাক করার বিষয়। সে ফোনটা রিসিভ করে বারান্দায় গেল। বলল,
“এত রাতে কল দিলি যে সব ঠিকাছে তো?”
ওপাশ থেকে অঞ্জলির কান্নামাখা কন্ঠ। সে বলল,
“কিছু ঠিক নেই দোস্ত। কিছুই ঠিক নেই।”
অঞ্জলি কান্নার জন্য ঠিক মতো কথাও বলতে পারছে না। ঝিনুকের ভীষণ ভয় করতে শুরু করলো। সে জিজ্ঞেস করল,
“তুই শান্ত হো। কী হয়েছে আমায় বল।”
“মা এক ছেলের সাথে বিয়ের কথা বলেছিলো তোর মনে আছে?”
“হ্যাঁ।”
“ছেলেটা কে জানিস? ছেলেটা ভাদ্র ভাইয়া। আমার মা বাবা এমন কীভাবে করতে পারে? আমার জীবন নিয়ে এমন খেলা করতে হলে এত পড়াশোনা করিয়ে বড় করল কেন? ভাদ্র ভাইয়ার স্বভাব বাচ্চাদের মতো। উনারা আমাকে উনার সাথে বিয়ে দেওয়ার কথাও কীভাবে ভাবতে পারে? আমি কী কোনো খেলনা না’কি যে যে কাউকে দিয়ে দিবে?”
#মন_পাড়ায়
#পর্ব_৪৪
#নিলুফার_ইয়াসমিন_ঊষা
“ছেলেটা কে জানিস? ছেলেটা ভাদ্র ভাইয়া। আমার মা বাবা এমন কীভাবে করতে পারে? আমার জীবন নিয়ে এমন খেলা করতে হলে এত পড়াশোনা করিয়ে বড় করল কেন? ভাদ্র ভাইয়ার স্বভাব বাচ্চাদের মতো। উনারা আমাকে উনার সাথে বিয়ে দেওয়ার কথাও কীভাবে ভাবতে পারে? আমি কী কোনো খেলনা না’কি যে যে কাউকে দিয়ে দিবে?”
ঝিনুক কিছু সময় স্তব্ধ রইল। তার বুঝে উঠতে সময় লাগলো। সে আবার ভাবলো অঞ্জলির কথাগুলো। সে ইতস্তভাবে বলল,
“তুই….তুই সম্ভবত ভুল শুনেছিস।”
“মা নিজে বলেছে আমায়। বড় স্যার বাবা ও মা’য়ের কাছে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে আর তারা হ্যাঁ বলে দিয়েছে। বলতো তারা এভাবে আমার জীবন নষ্ট করতে চাচ্ছে কেন?”
“তুই চিন্তা করিস না। আমি আছি তো, আমি কিছু হতে দিব না।”
“তুই সত্যি বিয়েটা থামিয়ে দিবি তো?”
“সত্যি। তুই চিন্তা করিস না।”
ফোন রাখার পর ঝিনুক সৈকতকে জাগাতে গিয়েও থেমে গেল। বিকালে অঞ্জলির কথা শুনে সৈকতের প্রতিক্রিয়া দেখে মনে হয় সে কিছু জানে না। আর ভাদ্রের প্রতি সৈকতের যত্ন ওর এমন কিছু জানার পরও কাওকে কিছু না বলার অর্থ সে আসলেই কিছু জানে না। ঝিনুক যেয়ে বিছানায় বসলো। সারারাত ভরে এই একটাই চিন্তায় ছিলো সে। সারাটারাত তার নির্ঘুম কাটলো।
সকালে সৈকত উঠতেই ঝিনুক তার সাথে কথা বলার চেষ্টা করল কিছু সৈকত তাকে পাত্তাই দিচ্ছে না। ইগনোর করছে শুধু৷ আজ ভার্সিটি বন্ধ দেখে বাহিরে যেয়েও কথা বলার সুযোগ নেই। তাই বাসাতেই যেকোনোভাবে বলতে হবে। তাই সৈকতের বের হওয়ার পূর্বে সে দরজার সামনে এসে দুইহাত দুইদিকে মেলে যাওয়ার রাস্তা বন্ধ করল আর বলল,
“আমি কিছু বলতে চাচ্ছি সকাল থেকে। কানে কথা যায় না?”
“আমার যতটুকু মনে আছে কেউ বলেছিলো সে আমার সাথে কোনো কথা বলতেই ইচ্ছুক নয়।”
“ওহ প্লিজ নিজেকে এত গুরুত্ব দেবার দরকার নেই। কাজ ছাড়া আমি কথাও বলতাম না। আর তোমার তো কোনো ট্রেন ছুটে যাচ্ছে না। যাচ্ছ তো ওই জ্যোতি কৌতির কাছেই। আমার কথা ওর থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।”
সৈকত ঝুঁকে ঝিনুকের মুখোমুখি হলো। বলল,
“আসলে আমি ইকবালের সাথে দেখা করতে যাচ্ছিলাম। কিন্তু জ্যোতির সাথে দেখা করাটাও মন্দ হয় না। ও তোমার থেকে হাজারগুণ বেটার।”
ঝিনুক তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো সৈকতের দিকে।
সৈকত পিছনে ফিরে মোবাইল বের করে বলল,
“আইডিয়াটা কাজে লাগানো উচিত। ওকে কল দিয়ে বলি যেহেতু দুইদিন ভার্সিটি অফফ কোথাও ঘুরে আসি। দুইজনই শুধু যাবে। ট্রিপটা সেই মজার হবে।”
ঝিনুকের কথাটা শুনতেই শরীর জ্বলে উঠলো। বহু কষ্টে সে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করে সৈকতের সামনে যেয়ে তার হাত ধরে বলল,
“আমার কথা তোমার এইসব কুচুর-পুচুর থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ?”
সৈকত ঝিনুকের হাত থেকে হাত সরিয়ে বলল,
“মেডাম আপনি তো ময়লা হয়ে যাবেন আমাকে ছুঁলে। পরে আপনার নিজেকেই ঘৃণা লাগবে।”
ঝিনুক মেজাজ খারাপে মেঝেতেই কতগুলো লাথি মারলো। তারপর আচমকায় সৈকতের কলার ধরে এক টানে নিজের কাছে টান দিলো। কাছে আসতেই দুইজনের চোখে চোখ পড়লো। মুহূর্তেই যেন দুইজনে স্থির হয়ে গেল। যেন আশাই করে নি এমন কিছু একটা হবার। মনে উঠলো প্রকাণ্ড এক অনুভূতির ঝড়।
ঝিনুকের নিশ্বাসটাও যেন আটকে আসছিলো। তার এই মুহূর্তে সম্পূর্ণ পৃথিবীটা স্থির লাগছিলো। নিজ অজান্তেই তার চোখদুটো অশ্রুসিক্ত হয়ে গেল। কেন তা সে নিজেই বুঝতে পারলো না। সাথে সাথে সৈকত পিছিয়ে গেল। দাঁড়িয়ে অন্যদিকে মুখ করে নিলো। আর বলল,
“অযথা আমার কাছে এসে দুটি হৃদয়ে হাহাকার করো না।”
বলে যেতে নিলেই ঝিনুক নিজেকে সামলে বলল,
“অঞ্জলির বিয়ে নিয়ে কথা ছিলো।”
“আমি ওর থেকে শুনে নিব।”
“বিয়ে ভাদ্র ভাইয়ার সাথে ঠিক হয়েছে।”
কথাটা শুনতেই সৈকত থেমে গেল। পিছনে ফিরে কিছুক্ষণ বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ঝিনুকের দিকে। তার মনে হলো সে ভুল কিছু শুনেছে। তাই জিজ্ঞেস করল,
“তুমি কার নাম নিলে?”
“ভাদ্র ভাইয়া।”
সৈকত নিজের চোখ মুখ কুঁচকে রাগান্বিত স্বরে বলল,
“তোমার মাথা ঠিক আছে? কী বলছো এইসব? এইসব কথা আমার নিজের মস্তিষ্কে কীভাবে বসালে?”
“আমি কেন তোমাকে ভুল বলব? অঞ্জলি নিজে আমাকে বলেছে।”
“ও হয়তো এক কথা বলেছে তুমি অন্য কথা ধরে নিয়েছ। এইটা সম্ভবই না। আমি নিজে ওকে কল দিচ্ছি।”
“আজব তো আমি মিথ্যা কেন বলবো?”
“আমি বলি নি তুমি মিথ্যা বলেছ, আমি বলেছি তুমি ভুল বুঝেছ। দুইটায় পার্থক্য আছে।”
দুইজনের উঁচু স্বরে কথা শুনে সৈকতের মা এসে পড়লো রুমে। সে দুইজনের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলল,
“কী হয়েছে? দুইজনে ঝগড়া করছ কেন?”
সৈকত রাগান্বিত স্বরে বলল,
“মা দেখ ও উল্টা-পাল্টা একটা কথা বুঝে বসে আছে। ও বলছে ভাদ্র ভাইয়ার বিয়ে না’কি অঞ্জলির সাথে।”
সৈকতের মা’কেও বিস্মিত দেখা গেল। সে বললেন,
“না না এমন কিছু না। ঝিনুক সম্ভবত ভুল বুঝেছে।”
“ঐটাই। এইবার তো মা’য়ের মুখ থেকে শুনলে?”
ঝিনুক বলল,
“কিন্তু অঞ্জলি আমাকে নিজে বলেছে।”
“হয়েছে। এই নিয়ে আর কথা হবে না।”
সৈকতের কথা শুনে মা তার গালে আলতো করে থাপ্পড় মেরে বলল,
“তোর সাহস তো কম না আমার বৌমার সাথে এত উঁচু স্বরে কথা বলছিস?”
সৈকত গালে হাত দিয়ে কপাল কুঁচকে বলল,
“খারাপ কিছু তো বলি নি।”
“আমার সাথে আয় তোকে ভালো খারাপ বুঝাচ্ছি। দুইজনের বিয়ের একবছরও হয় নি আর যা শুরু করলি কয়েকবছর পর কি করবি?”
সৈকত বিড়বিড় করে বলল,
“কয়েকবছর পর বিয়ে থাকলেই না।”
মা কথাটা ঠিক না শুনতে পেরে জিজ্ঞেস করল,
“কী বললি?”
সৈকত দ্রুত মাথা নাড়ালো আর বলল,
“কিছু না।”
বলে ঝিনুকের দিকে তাকাল। চোখে চোখ পড়তেই দুইজনে চোখ সরিয়ে নিলো।
সৈকত মা’য়ের সাথে যখন চলে গেল তখনও ঝিনুক দাঁড়িয়ে ছিলো সেখানে। চোখ বন্ধ করে গভীর নিশ্বাস ফেললো। তার চোখের সামনে ভেসে উঠলো সে মধ্যরাতটি……
রাঙামাটিতে দুইদিন কাটিয়ে তাদের বাসায় আসা হলো। তবুও সে রাতে ঘুম আসছিলো না ঝিনুকের। আচমকায় বেজে উঠল ফোনটা। ফোনের শব্দ শুনেই চমকে উঠে সে। এই মধ্যরাতে কে কল দিতে পারে?
সে উঠে ডাইনিং রুমে যেয়ে কলটা ধরলো। ওপাশ থেকে কেউ ঘন নিশ্বাস ফেলতে ফেলতে বলল,
“আমি তোমার বাসার বাহিরে।”
কন্ঠটা শুনতে চমকে উঠে ঝিনুক। বলে,
“সৈকত আপনি!”
“বাহিরে আসবে একটু?”
“বাহিরে? আপনি না চলে গিয়েছিলেন।”
“একটু আসো না, প্লিজ।”
ঝিনুক ফোন রেখে সর্বপ্রথম তার খালু ও খালার রুমে উঁকি মারলো। দুইজনই ঘুমানো। তারপর গেল বাহিরে। যেয়ে দেখে সৈকত দাঁড়িয়ে আছে। কপাল থেকে সমানে ঘাম ঝরছে। সে এখনো হাঁপাচ্ছে। ঝিনুক তার সামনে যেয়ে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল,
“আপনি না সবার সাথে চলে গিয়েছিলেন? ফিরে এলেন কেন? আর এই অবস্থা কেন আপনার?”
“বাসস্ট্যান্ড থেকে দৌড়ে এসেছি।”
“আপনি আসলেই একটা পাগল। এমন কেন করতে গেলেন?”
বলে নিজের ওড়না দিয়ে সৈকতের কপাল মুছতে শুরু করল আর সৈকত তার হাত ধরে বলল,
“আই লাভ ইউ।”
চমকে উঠে ঝিনুক। থতমত খেয়ে যায় হঠাৎ সৈকতের এমন স্বীকারোক্তিতে। মধ্যরাতের প্রেমাহাওয়া এলো আর তাদের দুইজনকে ছুঁয়ে চলে গেল। সাথে দিয়ে গেল ঝিনুকের গালে লজ্জার রঙ মাখিয়ে। ঝিনুক মাথা নামিয়ে বলল,
“এইটা বলতে এভাবে দৌড়ে এলেন?”
“যদি পরে বলতে না পারি। জীবনটা তো অনেক ছোট তাই দেরি করে লাভ কী বলো?”
ঝিনুক হেসে মাথা নাড়িয়ে বলল,
“পাগল।”
“উওর দেও।”
“কীসের?”
“কীসের মানে? সবে না প্রাপোজ করলাম?”
“এভাবে কেউ প্রাপোজ করে? ফিল্ম দেখেন না?”
“যখন এবং যেখানে অনুভূতিরা তোমাকে ঘিরে বসে তখন এবং সেখানেই নিজের মনের কথা বলে দেওয়া উচিত। এইবার উওর দেও।”
ঝিনুক মাথা উঠিয়ে সৈকতের চোখে চোখ রেখে বলল,
“এতদিনেও কী উওরটা বুঝেন নি বুঝি?”
“বুঝেছি তো কিন্তু তোমার মুখ থেকে শুনতে চাই।”
ঝিনুক সৈকতের বুকে হাত রেখে আস্তে করে তাকে ধাক্কা দিয়ে বলল,
“সবুরে মেওয়া ফলে। অপেক্ষা করতে শিখুন আর যান এইখান থেকে এখন।”
সৈকত ঝিনুকের হাত ধরে তাকে এক টানে নিজের কাছে নিয়ে এলো আর বলল,
“উওর না দিলে আজ যাওয়া হচ্ছে না। অনশন করব তোমার বাসার সামনে। তারপর তোমার খালু ও খালামণিকে কী উওর দিবে তুমি জানো।”
ঝিনুক হেসে তার পায়ের আঙ্গুলে ভর দিয়ে দাঁড়াল। সৈকতের কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল,
“ভালোবাসি।”
আচমকায় মনে হলো বুকের ভেতটা যেন কেউ চেপে ধরলো। অতীতের পাতা থেকে বেরিয়ে বর্তমানে ভীষণ অস্বস্তি লাগলো ঝিনুকের। তার মনে হচ্ছে তার চারপাশের হাওয়ায় মেশানো শুধু বিষণ্ণতা আর বিষণ্ণতা…….
.
.
প্রভা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুলে খোপা বাঁধতে যেয়েও থেমে গেল। তার মনে পড়লো অর্ক একবার বলেছিল তাকে না’কি খোলা চুলে বেশি ভালো লাগে। অর্কের কাছেও কী ভালো লাগে?
ভাবতেই চুলটা খুলে দিলো প্রভা। আয়নায় তাকিয়ে মৃদু হাসলো। আজ কতবছর পর অন্য কারও পছন্দটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ তার জন্য। ব্যাপারটা অস্বস্তিকর হওয়ার কথা ছিলো কিন্তু ব্যাপারটা ভেবে হৃদয়ে অদ্ভুত এক উষ্ণতার আভাস পাচ্ছে সে।
আয়নাতে নিজেকে দেখতে শুরু করল। খারাপ লাগছে না। শুধু অপূর্ণ লাগছে। কিন্তু কীসের অপূর্ণতা সে বুঝতে পারলো না। আয়নার দিকে নিজের পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখলো তবুও দেখতে পারলো না। অবশেষে দেখল অর্ক তার পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে। নিজ অজান্তেই তার হাসিটা প্রশস্ত হয়ে গেল। তার অপূর্ণতাও যে পূর্ণতা পেল।
অর্ক কিছু না বলেই তিনটা গোলাপ প্রভার চুলের একপাশে লাগিয়ে বলল,
“ক্লিপ দেও।”
“আমি লাগিয়ে নিচ্ছি।”
“উফফ প্রভা তুমিও না বেশ কথা বলো।”
প্রভা হেসে একটা বাক্স থেকে ক্লিপ বের করে দিলো অর্ককে। অর্ক ফুলটা মাথায় লাগিয়ে দিয়ে প্রভাকে নিজের দিকে ঘুরালো তার কপালে শাড়ির সাথে মিলিয়ে নীল রঙের একটি টিপ লাগিয়ে দিলো। যত্ন করে হাতে ক’টা চুড়ি পরিয়ে বলল,
“সুন্দর লাগছে।”
“তাই? দাঁড়ান দেখি তো।”
প্রভা ঘুরতে নিলেই অর্ক তার কাঁধ ধরে থামিয়ে দেয় তাকে। বলে,
“আমার চোখে দেখে নেও। হাজারোগুণ বেশি সুন্দর লাগবে তোমাকে।”
কথাটায় কী ছিলো সে জানে না। কিন্তু সে কথায় প্রভার বুকের ভেতর ধ্ক করে উঠলো। সে মুচকি হেসে মাথা নামিয়ে নিলো।
অর্ক তার চিবুকে হাত রেখে মুখটা তুলল। মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে বলল,
“তুমি জানো, আমার জীবনের দেখা সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্যটা তুমি।”
বলে প্রভার দিকে ঝুঁকে তার কপালে আলতো করে চুমু খেল।
ভালোবাসার ছোঁয়াটা পেতেই চোখ বন্ধ করে নিলো প্রভা। চোখ বন্ধ করার সাথে সাথেই তার গাল বয়ে গেল এক ধারা নোনাজল। মনের গহীনে এত বছরের ব্যাথাটা আজও আছে তবে আজকের ব্যাথাটা মধুর। ভীষণ মধুর।
অর্ক মুখ তুলে দেখলো প্রভার গালে বয়ে যাওয়া জল। সে প্রভার গালে আলতো করে চুমু খেয়ে বলল,
“আজকের পর আর কখনো তোমার চোখের কষ্টের জল আসতে দিব না প্রভা। আর কখনো না।”
প্রভা চোখ দুটো খুলল। সে অশ্রুসিক্ত চোখ নিয়েই মৃদু হেসে বলল,
“যাওয়া যাক?”
অর্ক হেসে মাথা নাড়ালো। প্রভার হাতটা নিজের হাত নিয়ে পথ চলতে শুরু করল।
বিয়ের অনুষ্ঠানে যেয়ে প্রভাকে এক কোণায় দাঁড় করিয়ে বলল,
“তুমি এইখানে থাকো। আমি উপহারটা নিচে দিয়ে আসি। সেখানে ভিড় অনেক তাই তোমাকে এখানে রেখে যাচ্ছি। আমি কিছুক্ষণের মধ্যে আসব। তুমি নড়বে না। ঠিকাছে?”
প্রভা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলল।
অর্ক যাওয়ার পর প্রভা আশেপাশে দেখছিল। কিছুক্ষণ পরই তার কাঁধে কারও ছোঁয়া পায় প্রভা। সে বলল,
“এত জলদি উপহার দিয়ে এসে…..”
পিছনে ফিরেই থমকে গেল সে। লোকটাকে দেখেই যেন তার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো।
চলবে……
[