মরুর বুকে বৃষ্টি পর্ব ৪২

#মরুর_বুকে_বৃষ্টি 💖
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-৪২

★হেমন্তের আগমণ ঘটেছে। বাতাসের আনাগোনায় শীতল ভাব শুরু হয়েছে। মেঘলা মেঘলা দিন, মাঝে মধ্যে মিষ্টি রোদের উকিঝুকি।আবার কখনো ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। ভোরের দিকে হালকা ঠান্ডা হলেও দুপুরের তপ্ত রোদে ঘেমে একাকার।
এমন মৌসুমেই যেন ভ্রমণের আসল স্বাদ পাওয়া যায়।

গতকাল ওরা সবাই অনেক মজা করেছে। কলাতলী বিচের পর, সুগন্ধা বিচও ঘুরেছে ওরা। ছেলেরা তিনজন স্পিডবোট আর ঘোড়ার সওয়ারি করেছে।আর মেয়েরা পাশের মার্কেটে গিয়ে হরেক রকম কেনাকাটা করেছে। আরও অনেক মাস্তি করেছে সবাই ।

আজ এসেছে ইনানি বিচ। সবাই সকাল সকালই রেডি হয়ে নাস্তা করে এখানে এসে পৌঁছেছে। ওরা একটা লোকাল জীপ ভাড়া করে এসেছে। এখানকার পরিবেশ টা অনেক মনোমুগ্ধকর। সবার মনটা ফ্রেশ হয়ে যাচ্ছে। স্পেশালি নূরের কাছে আরও বেশি ভালো লাগছে। আদিত্য আর নূর হাত ধরে বালুর নরম বিছানায় হাঁটছে। সমুদ্রের ঠান্ডা বাতাসে মনপ্রাণ জুড়িয়ে দিচ্ছে। আজ আকাশ টা মেঘলা হওয়ায় পরিবেশ টা আরও বেশি অপূর্ব হয়ে উঠেছে। সামনেই আকাশ চুম্বি হয়ে দাড়িয়ে আছে সারি সারি ঝাউ বন আর নারিকেল গাছ। তার নিচ দিয়ে কতো শুকনো নারিকেল পরে আছে। সামনেই বিশাল সমুদ্রের নীল জলরাশীর শোঁ শোঁ গর্জনে অতুলনীয় অনুভূতি হচ্ছে।

আবির নারিকেল গাছ দেখে বিহানের দিকে তাকিয়ে বললো।
–চল আমি আর তুই মিলে এখানে ডাবের দোকান দেই। ভালোনা আইডিয়া টা? এক ডাব দশ টাকা। দেখবি আমাদের ব্যাবসা একদম জমজমাট হয়ে যাবে।

বিহান বলে উঠলো।
–হ ওইসব তো বুঝলাম। তয় ডাব পারবোডা ক্যাডা? তুই পারবি? নারকেল গাছ তো দূরে থাক, জীবনে কহনো কলা গাছেও চরছোস? আইছে আমার ব্যাবসায়ী।

–এমন ভাবে বলছিস যেন তুই সকাল দুপুর এই কাজই করিস। রাতের বেলায় কি নারকেল গাছে উঠে পার্ট টাইম ভুতের কাজ করিস?

–হ করিতো। তুই ও করবি নি? অনেক ফিমেল ভুত ফলোয়ার পাবি। লাইফ সেট হইয়া যাইবো মাইরি।
কথাটা বলে বিহান হাসতে লাগলো। বাকিরাও ওর কথায় হেঁসে দিল।

নূরের খুব ইচ্ছে করছে খালি পায়ে হাঁটার। নূর আদিত্যের দিকে তাকিয়ে বললো।
–আমি জুতো খুলে খালি পায়ে হাঁটি?

আদিত্য বলে উঠলো।
–এই না না একদম না। বিচে অনেক ভাঙা ঝিনুক আর শামুকের টুকরো থাকে। পায়ে বিঁধে যেতে পারে।

এবার আর নূরের রাগ হলোনা। বরং আদিত্যের প্রতি আবেগী হয়ে উঠলো। ইচ্ছে করছে সবার সামনেই জড়িয়ে ধরে বলতে, তুমি এতো ভালো কেন বাসো? মাঝে মধ্যে একটু কম ভালোবাসলেও তো হয়। এতো ভালোবাসা যে রাখার যাইগা পাইনা আমি। নূর মায়াবী চোখে আদিত্যের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো ভাবছে। আদিত্য নূরকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলে উঠলো।
–কি হয়েছে এঞ্জেল? আজ কি আমাকে বেশি হ্যান্ডসাম লাগছে?

নূর কিছু না বলে মুচকি হেসে আদিত্যের একবাহু জড়িয়ে ধরে কাঁধে হালকা করে মাথা রাখলো।

একটু পরে ওরা সবাই বিচে জমে থাকা পাথর গুলোর ওপরে গিয়ে বসলো। পাথর গুলো একটু শেওলা হয়ে কেমন পিচ্ছিল হয়ে গেছে। আদিত্য নূরের হাত ধরে সাবধানে একটা বড়ো পাথরের ওপর বসালো। তারপর নিজেও ওর পাশে বসলো। নূর আদিত্যের কাঁধে মাথা রেখে সমুদ্র বিলাস করতে লাগলো।

আবির ক্যামেরা বের করে ওদের এই সুন্দর মোমেন্ট টা ক্যাপচার করে নিল। তারপর আরও অনেক ছবি তুলতে লাগলো। নীলা নানান পোজে ছবি তুলছে। আর আবির শুধু ক্যাপচার করে যাচ্ছে। আয়াতও বিহানের পাশে বসে সমুদ্র দেখছে।সমুদ্রের পানির উত্তাল ঢেউয়ের শোঁ শোঁ শব্দে আর এমন মনোমুগ্ধকর পরিবেশে আয়াত আনমনেই গেয়ে উঠলো।
♬ দূরদ্বীপ বাসিনী,,

আয়াতের সাথে নূর আর নীলাও সুর মিলিয়ে গেয়ে উঠলো।
♬ দূরদ্বীপ বাসিনী, দূরদ্বীপ বাসিনী
♬ চিনি তোমারে চিনি, দারুচিনির দেশে
♬ তুমি বিদেশিনী গো,সুমন্দভাসিনী
♬ দূরদ্বীপ বাসিনী,দূরদ্বীপ বাসিনী,দূরদ্বীপ বাসিনী
♬ প্রশান্ত সাগরে তুফানে ও ঝড়ে
♬ প্রশান্ত সাগরে তুফানে ও ঝড়ে
♬ শুনেছি তোমারই অশান্ত রাগিণী
♬ শুনেছি তোমারই অশান্ত রাগিণী
♬ দূরদ্বীপ বাসিনী….

♬ বাজাও কি বনসুর পাহাড়ি বাঁশিতে
♬ বনান্ত ছেয়ে যায় বাসন্তী হাসিতে
♬ তব কমলই মনে, ফোটে এলাচের ফুল
♬ দোলে কুসুম বিলাসীনি
♬ দূরদ্বীপ বাসিনী….

ইনানি বিচে আরও কিছুক্ষন থেকে ওরা একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকলো। রেস্টুরেন্টে এসে একটু ফ্রেশ হয়ে এসে খাবারের জন্য টেবিল বুক করে বসে পড়লো। ওয়েটার মেনু নিয়ে আসলে আদিত্য সবার দিকে তাকিয়ে বললো।
–কি খাবে তোমরা? এখানে অনেক ভালো ভালো সামুদ্রিক মাছের আইটেম আছে যেমনঃ চিংড়ি,রুপচাঁদা, ছুরি,কোরাল, লইট্যা আর শুটকি মাছের ভর্তাও আছে।

নূর বলে উঠলো।
–আমি শুটকি ভর্তা খাবো।

আয়াত আর নীলাও শুটকি ভর্তার কথাই বললো। আবির বলে উঠলো।
–আমিতো ভাই সবগুলোই খাবো। আমার জন্য সব আইটেমই অর্ডার করো।

বিহান তার বিশেষ টিপুনি করে বললো।
–এতোযে হান্দাইবি, হজম করবার পারবি তো? শেষে জানি সব রাস্তায় ঢাইল্লা থুইয়া যাস না। আর যদি গাড়ির ভিতরে কোন গ্যাস ছাড়ছোচ খবর আছে তোর। এক্কেরে উষ্টা মাইরা গাড়ির থেকে ফালাই দিমু।

আবির দাঁত কিড়মিড় করে বললো।
–ওই তোর লজ্জা করেনা বউয়ের বড়ো ভাইয়ের সাথে এভাবে কথা বলতে? তোরে না বলছি সম্মান দিয়ে কথা বলবি? সবসময় সালাম দিয়ে কথা বলবি।

বিহান সয়তানি হাসি দিয়ে বললো।
–আরিব্বাস, আমিতো ভুইল্যাই গেচিলাম। তুই আবার আমার হুমু্ন্দি লাগোচ। তোরে তো সম্মান দেওয়াই হয়নাই। খাড়া অহনি সালাম করতাছি। কই তোর পা জোড়া কই?
কথাটা বলেই বিহান আবিরের এক পা ধরে উপর দিকে তুলে ফেললো। আর বেচারা আবির চেয়ার উল্টে নিচে পড়ে গেল।

এদের কান্ড দেখে সবার হাসার রোল পরে গেল। আবির রেগে গিয়ে উঠে বসে বিহানের পিঠে দুম করে একটা কিল বসিয়ে দিয়ে বললো।
–হারামি, এটা কেমন সম্মান?

–লে হালুয়া, তুই তো কইলি সালাম করতে। আর পাও না ধরলে সালাম ক্যামতে করুম?

–তাই বলে পা ধরে উপরে তুলতে হবে? তুই ঝুঁকে সালাম করতে পারিস না?

বিহান এটিটিউট দেখিয়ে বললো।
–বিহান কখনো কারোর সামনে ঝুঁকে না বুচ্ছস?

–হারামি, আমার বোনেরে আর তোর সাথে থাকতে দিব না।

–তো নিয়ে যা।কে ঠেকাইছে?

আদিত্য এবার একটু ধমকের সুরে বললো।
–কি শুরু করেছিস তোরা বাচ্চাদের মতো? দেখ সবাই দেখছে। এখন চুপচাপ খেয়ে নে।

একটু পরে খাবার আসলে সবাই খাওয়া শুরু করলো। সবাই খুব তৃপ্ত সহকারে আহার গ্রহণ করলো। খাবার গুলো সত্যিই অনেক মজার ছিল। খাবার শেষে সবার পছন্দের ডিজার্ট অর্ডার করলো। নূরের জন্য ওর ফেবারিট রসমালাই অর্ডার করলো আদিত্য। খাবার শেষ করে কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে আবার বেড়িয়ে পড়লো ওরা।

আবারও ওদের রিজার্ভ করা জীপে এসে বসলো। এবার ওরা হিমছড়ি যাবে। হিমছড়ি পাহাড়, ঝর্ণা আর বিচ ঘুরবে।

কিছুক্ষণ পরেই জীপ চলতে শুরু করলো। জীপের ছাঁদ খোলা হওয়ায় শোঁ শোঁ করে বাতাস লাগছে। আবির আর বিহান উঠে দাঁড়িয়ে বাতাস খেতে খেতে চারপাশের সবকিছু দেখতে লাগলো। ওদের দেখে নূরও আদিত্যের দিকে তাকিয়ে বললো।
–আমিও দাঁড়িয়ে দেখবো প্লিজ।

আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
–ঠিক আছে।
আদিত্য নূরের হাত ধরে ওকে নিয়ে দাঁড়াল। উঠে দাঁড়াতেই শোঁ শোঁ বাতাসে নূরের চুলগুলো সব আদিত্যের মুখে বারি খাচ্ছে। নূরের প্রচুর ভালো লাগছে। দুইপাশে সারি সারি গাছগাছালি আর পাহাড়ের সৌন্দর্য দেখা যাচ্ছে। একটু পরে আয়াত আর নীলাও উঠে দাঁড়িয়ে মোমেন্ট ইনজয় করতে লাগলো। আবির ক্যামেরা চালু করে সব ভিডিও করতে লাগলো।

আরো কিছুক্ষন পর ওরা হিমছড়ি এসে পৌঁছাল। জীপ থেকে নেমে ওরা হেঁটে হেঁটে হিমছড়ি পাহাড়ের ঝর্ণার দিকে এগিয়ে গেল। আদিত্য সবসময়ের মতো নূরের হাত ধরে হাটছে। পাহাড়ি রাস্তা হওয়ায় হাটঁতে একটু অসুবিধা হচ্ছে। তারওপর এদিকে একটু বৃষ্টি হওয়ায় রাস্তাটা আরও কাঁদা কাঁদা আর পিচ্ছিল হয়ে গেছে। আদিত্য নূরের দিকে তাকিয়ে বললো।
–নূর তোমার হাঁটতে সমস্যা হলে আমি কোলে নিবো?

নূর চোখ বড়বড় করে বললো।
–এই না না একদম না। আমি একদম ঠিক আছি। সবার সামনে এভাবে কোলে নিবেনা কিন্তু।

–আরে আমার বউকে আমি কোলে এতে সবার কি যায় আসে?

–হ্যাঁ অনেক যায় আসে। আমি নিজের পায়েই হাঁটতে পারবো কোলে নিতে হবে না।

আবির পেছন থেকে বলে উঠলো।
–আরে ভাই তোমার এতো কোলে নেওয়ার শখ থাকলে আমাকে নাও না? আমার তো হাঁটতে হাঁটতে পা লেগে গাছ হয়ে ফল ফলসিও ধরে গেছে।

বিহান তার বিশেষ টিপুনি করে বললো।
–পোকা ধরা ফল হইবো। বান্দরেও খায়না।

এভাবে হাসাহাসির মধ্যেই ওরা ঝর্ণার কাছে এসে পৌঁছাল। ঝর্ণা দেখে সবার মন জুড়িয়ে গেল। পাহাড়ের বুক চিড়ে নেমে আসা ঝর্ণা ধারার ঝুমঝুম শব্দ আর সচ্ছ পানির কলরবে নেচে উঠছে মন। নূরের খুব ইচ্ছে হচ্ছে ঝর্ণার পানি ধরার। তার ইচ্ছার কথা আদিত্যকে বলতেই আদিত্য নূরের হাত ধরে ধীরে ধীরে ঝর্ণার কাছে নিয়ে গেল। ঝর্ণার কাছে দাঁড়িয়ে দুহাতে ঝর্ণার পানি ধরছে নূর। নূরের যে কি খুশী লাগছে। অনূভুতি টা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না।

আবির ক্যামেরা বের করে ওদের ছবি তুলে নিল। বাকিরাও একে একে ঝর্ণার পানিতে নিজেদের স্নিগ্ধ করে নিল। আর আবিরতো গায়ের টিশার্ট খুলে সোজা ঝর্ণার নিচে দুহাত ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে গেল। আর ওখানকার মেয়েগুলো সব হা করে আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে। নীলাতো শুধু রাগে কটমট করছে। মনে মনে শুধু ভাবছে, একবার শুধু একলা পাই তারপর সব হিরোগিরি ছুটিয়ে দেব।

একটু পরে ওরা আবার ব্যাক করলো। ঝর্ণার দেখার পর ওরা হিমছড়ি সমুদ্র সৈকতও দেখলো। তারপর আবার জীপে করে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলো। কক্সবাজার আসতে আসতে বিকেল হয়ে গেল। হাতে সময় থাকায় ওরা আজ লাবনী পয়েন্ট আর শৈবাল পয়েন্টেও যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। লাবনী পয়েন্ট ঘুরে ওরা শৈবাল পয়েন্টে এলো।

এই জায়গাটাও অসম্ভব সুন্দর। বিচের পাশেই ঝাউবনের ভেতর চিকন ইটের রাস্তা।সেখান দিয়ে ওরা হাঁটাহাঁটি করছে। আবির হঠাৎ পেছন থেকে নিলার হাত চেপে ধরে সবার অগোচরে নীলাকে টেনে নিয়ে গেল ঝাউবনের ভেতর। বনের আড়ালে নিয়ে গিয়ে একটা গাছের সাথে আটকে ধরলো। নীলা ভ্রু কুঁচকে কিছুটা রাগী কন্ঠে বললো।
–কি হলো এখানে নিয়ে আসলেন কেন? ছাড়ুন আমাকে।

আবির একটু অভিমানী সুরে বললো।
–তুমি না আসলেই একটা নিষ্ঠুর। আমার সাথে এতো নির্দয় কেন তুমি? বেড়াতে এসে কোথায় একটু নিজের হবু বরের সাথে টাইম স্পেন্ড করবে। একটু বেশি বেশি করে ভিটামিন এর ডোজ দিবে। তানা সবসময় শুধু ওদের সাথে চিপকে থাকা। আরে ভাই এই অধমের দিকেও তো একটু চোখ তুলে তাকাও।

নীলা একটু তাচ্ছিল্যের সুরে বললো।
–কেন? আমার তাকাতে হবে কেন? আপনার তো তাকানোর জন্য অনেক মানুষ আছে। তাদের কে বেশি করে নিজের বডি দেখিয়ে বেড়ান।

আবির দুষ্টু হেসে বললো।
–কেমন জানি পোড়া পোড়া গন্ধ পাচ্ছি। কোথাও কিছু পুড়ছে নাকি?

নীলা রাগ দেখিয়ে চলে যেতে নিলে আবির নীলাকে টান দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বললো।
–আমিতো আমার সবকিছু আমার কচি বিয়াইন কেই দেখাতে চাই।আমার ভালোবাসা, আমার অনুভূতি আর আমার মিষ্টি মিষ্টি আদরগুলোও। এখন সেই যদি না দেখে, তাহলে অন্যেরা তো নজর দিবেই তাইনা। তাই বলছি কি সবসময় আমার কাছাকাছি থাকো। আর তোমার স্পেশাল নজর টিকা লাগিয়ে দাও। তাই দেখবে কেও আর নজর দিতে পারবে না।

আবিরের কথায় নীলা মাথা নিচু করে লাজুক হাসলো। আবির নিলার থুতনি ধরে মুখটা একটু উপরে তুলে নিলার ঠোঁটের দিকে ঝুঁকতেই নীলা হঠাৎ চোখ বড়বড় করে বললো।
–আরে জিজু..

আবির চমকে গিয়ে নীলাকে ছেড়ে পেছনে তাকালো। পেছনে কাওকেই দেখতে পেল না আবির। আর নীলা এই সুযোগে ভো দৌড় দিল। আবির বুঝতে পারলো নীলা ওকে আবার বোকা বানিয়ে চলে গেছে। আবির অতি করুন চোখে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো।
–এটা কোন কথা? খালি আমার সাথেই কেন এমন হয়? এই জীবন রেখে কি লাভ? এরচেয়ে ভালো উঠিয়ে নাও পৃথিবী থেকে। না না আমাকে না ওই পাশের বাড়ির মকবুল রে উঠাও। হে হে আমিতো শুধু মজা করছিলাম বাই বাই।

সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে সূর্য অস্ত যাওয়ার সময় হয়েছে। আদিত্য নূরকে নিয়ে বিচের বালুতে এসে দাঁড়াল। একটু পরেই আকাশ কমলা রঙের হয়ে এলো। চারপাশ আবছা লাল লালিমায় ছড়িয়ে পড়লো। আদিত্য নূরের পেছনে দাঁড়িয়ে পেছন থেকে নূরের ডান হাতের নিচে হাত দিয়ে নূরের হাতটা সামনে উঁচু করে মেলে ধরলো। তখনই সামনে বিশাল থালার মতো হলুদ সূর্যটা ধীরে ধীরে ডুবতে শুরু করলো। নূরের মনে হচ্ছে সূর্যটা যেন ওর হাতের ওপরই নামছে। নূর বিস্মিত হয়ে গেল।এতো সুন্দর একটা মুহূর্ত এর আগে কখনো হয়নি ওর। সত্যিই মুহূর্ত টা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। ইটস বিয়ন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড।
____

সন্ধ্যার পরে সবাই আবার রিসোর্টে ফিরে এলো।আয়াত রুমে ঢুকে চুপচাপ ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে ওর কানের দুল খুলতে লাগলো। বিহান বেডে বসে বলে উঠলো।
–আমার টিশার্ট আর টাওজার কোথায় রেখেছ একটু বের করে দাও তো।

আয়াত কোনকথা না বলে চুপচাপ লাগেজ খুলে বিহানের কাপড়চোপড় বের করে এনে বিহানের সামনে বেডের ওপর রেখে দিল। তারপর আবার গিয়ে নিজের কাজ করতে লাগলো। বিহান হাতের ঘড়িটা খুলতে খুলতে বললো।
–আজকের দিনটা সত্যিই অনেক ভালো ছিল তাইনা? অনেক দিন পর এতো মজা করলাম।

আয়াত আয়নার সামনে নিজের কাজ করতে করতে ছোট্ট করে বললো।
–হুম,,

বিহান আরও কিছু টুকটাক বললো।তবে আয়াত শুধু হু হু করে যাচ্ছে। বিহান এবার ব্যাপার টা খেয়াল করলো। বিহান ভ্রু কুঁচকে বললো।
–কি হয়েছে তোমার? কথা না বলে শুধু হু হু করছো কেন?

আয়াত লাগেজ থেকে নিজের কাপড়চোপড় বের করতে করতে ছোট্ট করে বললো।
–কিছুই হয়নি।

আয়াত ওর কাপড়চোপড় নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে যেতে নিলেই বিহান ওর হাত ধরে টান দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বললো।
–আরে হইচে কি? এমতে মুখ লটকাইয়া আছ ক্যালা?

আয়াত নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বলে উঠলো।
–কি আবার হবে? কিছুই হয়নি। ছাড়ুন ফ্রেশ হবো।

বিহান এবার আরও শক্ত করে ধরে বললো।
–সত্যি কথা না বললে ছাড়া পাচ্ছ না তুমি। আরে বাবা না বললে জানবো কি করে কি হয়েছে?

–বললাম তো কিছু হয়নি। ছাড়ুন আমাকে।

–দেখ এখন কিন্তু রাগ বারাচ্ছ আমার। আরে এভাবে রাগ করার কারণ টা কি সেটাই বুঝতে পারছি না আমি। সবকিছু তো ঠিকই ছিল। হঠাৎ কি হয়ে গেল তোমার? এমন বিহেব করছ কেন?

আয়াত এবার একটু তাচ্ছিল্যের সুরে বললো।
–ও তাহলে এখন আমার ওপর বিরক্তও হয়ে যাচ্ছেন আপনি। তাইতো তখন ভাইয়াকে ওভাবে নির্দ্বিধায় বলে দিলেন আমাকে নিয়ে যেতে। নিশ্চয় আর ভালো লাগছে না আমাকে। না লাগার ই কথা। আপনি তো আর আমাকে চাননি। আমিই তো আপনার ঘাড়ে চড়ে বসেছিলাম। তাইতো এখন ঘাড় থেকে নামাতে চাচ্ছেন।

বিহান যেন তাজ্জব বনে গেল। ওই সামান্য মজার ব্যাপারটা এই মেয়ে এতো সিরিয়াস বানিয়ে বসে আছে? আয়াতের কথাগুলো শুনে বিহান রাগে চোয়াল শক্ত করে বললো।
–আমিতো ভেবেছিলাম তুমি ম্যাচিউর আর বুদ্ধিমান হয়ে গেছ। কিন্তু তুমি যে এত্তো বড়ো ডাম্প তা আমার জানা ছিল না।

বিহানের কথায় আয়াত ছলছল চোখে বিহানের দিকে তাকালে বিহান আরও রাগী কন্ঠে বললো। –খবরদার!এক ফোটা চোখের পানিও যেন না পরে। একফোটা পানি নিচে পড়লে তোমার খবর আছে। ঠিকই তো বলেছি। তুমি ডাম্প না হলে কি নিতান্ত সামান্য একটা মজার ব্যাপার নিয়ে কেউ এভাবে সিরিয়াস হয়ে বসে থাকে? আরে আমি আর আবির তো সারাদিনই যা বলি সব মজা করে বলি। তাই বলে কি ওইসব ধরে বসে থাকবে তুমি? এতটুকু কমনসেন্সে নেই তোমার? আবার গাধীর মতো কিসব আবোল তাবোল বলে যাচ্ছে। আর কখনো এসব ফালতু কথা বললে দেব এক থাপ্পড় মেরে।

আয়াত অভিমানী সুরে বললো।
–হ্যাঁ মারুন না, এখন এটাই বাদ আছে। এটাও করুন।

বিহান মুচকি হেসে বললো।
–বুঝেছি বউটার বোধহয় আদর একটু কম হয়ে গেছে তাই এমন করছে। ব্যাপার না এখুনি সব পুষিয়ে দিচ্ছি।
কথাটা বলে বিহান আয়াত কে পাঁজা কোলে তুলে নিল। আর আয়াত লাজুক হেসে বিহানের বুকে মুখ লুকালো।
___

নূর রুমে এসে কাপড়চোপড় বের করে ওয়াশরুমের দিকে যেতে নিলেই আদিত্য ওর হাত ধরে বললো।
–এখন চেঞ্জ করার দরকার নেই। আমরা আবার বের হবো।

নূর ভ্রু কুঁচকে বললো।
–এখন আবার কোথায় যাবো? দেখ সারাদিন ঘুরে ঘুরে আমি অনেক টায়ার্ড হয়ে গেছি এখন আর কোথাও যেতে পারবোনা।

আদিত্য একটু আদুরে কন্ঠে বললো।
–একবার চলোনা আমার সাথে, দেখবে তোমার সব টায়ার্ডনেস মুহূর্তেই ছু মন্তর হয়ে যাবে।

–আচ্ছা ঠিক আছে। কিন্তু যাবোটা কোথায়?

–দ্যাটস আ সারপ্রাইজ। আগে চলো তারপর দেখতে পাবে।

নূর মুচকি হেসে বললো।
–ঠিক আসে চলো।

আদিত্যও মুচকি হেসে নূরের হাত ধরে রুম থেকে বেরিয়ে এলো।

বাইরে এসে আদিত্য ওর বুক করা গাড়িতে নূরকে নিয়ে এসে বসলো। ড্রাইভার কে লোকেশন বলতেই ড্রাইভার গাড়ি চালু করলো। অনেকক্ষণ পর গাড়ী তার জায়গা মতো এসে পৌঁছাল। গাড়ী থামতেই আদিত্য নূরের চোখে একটা কালো কাপড় বেঁধে দিল। নূর একটু অবাক হয়ে বললো।
–এসব কি?

আদিত্য দুষ্টুমি করে বললো।
–কিডন্যাপ। আমি তোমাকে কিডন্যাপ করছি।

নূর হালকা হাসলো। কাপড় বাঁধা শেষে আদিত্য গাড়ি থেকে নেমে নূরের হাত ধরে ওকে ধীরে ধীরে নামাল। তারপর ওর দুই কাঁধ ধরে আস্তে আস্তে ওকে সামনের দিকে নিয়ে গেল। কিছুক্ষণ হাঁটার পর আদিত্য থেমে গিয়ে নূরের কানের কাছে ঝুঁকে বললো।
–আর ইউ রেডি?

নূর মাথা ঝাকালো। মানে ও রেডি। আদিত্য এবার নূরের চোখের বাধন আস্তে করে খুলে দিল। নূর চোখ খুলে সামনে তাকাতেই অবাক হয়ে গেল। বিস্ময় আর খুশিতে হা করে দুই হাত মুখে চেপে ধরলো নূর। ওরা বর্তমানে এখন শিপইয়ার্ড (জাহাজের ঘাটে) আছে। আর নূরের সামনে একটা প্রাইভেট ছোট শিপ দেখতে পাচ্ছে। যেটা ফেইরি লাইটস দিয়ে সুন্দর করে সাজানো। নূরের খুশিতে যেন কেঁদে দেওয়ার উপক্রম। নূর আদিত্যের দিকে বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে বললো।
–এটা আমাদের জন্য?

আদিত্য মুচকি হেসে বললো। হ্যাঁ বলতে পারো। আজ রাতের জন্য এটা আমাদের। আদিত্য নূরের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো।
–লেটস গো মাই কুইন।

নূর হাসিমুখে আদিত্যের হাতে হাত রাখলো।আদিত্য নূরের হাত ধরে ধীরে ধীরে সিড়ি বেয়ে জাহাজে উঠলো। ওরা উঠতেই আদিত্যের প্ল্যান অনুযায়ী জাহাজ টা চালু হয়ে গেল। জাহাজে শুধু ওরা দুজন আর জাহাজ চালক ছাড়া আর কেও নেই।জাহাজ চালক তার স্থানে বসে জাহাজ চালাচ্ছে। তাই আদিত্য আর নূর কি করবে না করবে সেটা তার চোখে পড়বেনা।

আদিত্য প্রথমে নূরকে জাহাজের কেবিনে নিয়ে এলো। কেবিনটাও অনেক সুন্দর। ছোটখাট একটা বেডরুমের মতো। এখানে বেড সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সবকিছুই আছে। আদিত্য বেডের ওপর থেকে একটা প্যাকেট নিয়ে নূরের হাতে দিয়ে বললো।
–এটা তোমার জন্য। এটা পরে একটু পরে জাহাজের পেছন সাইটে আসো আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করছি।
নূর মাথা ঝাকিয়ে সায় জানালো। আদিত্য রুম থেকে বেড়িয়ে গেল।

দশ মিনিট পর নূর ধীরে ধীরে কেবিন থেকে বেড়িয়ে এলো। জাহাজ এতক্ষণে কিনারা থেকে অনেক দূরে চলে এসেছে। রাতের খোলা আকাশের নীচে নীল সমুদ্রের পানির ওপরে জাহাজ চলছে। পানির মিষ্টি ঘ্রাণ আর শোঁ শোঁ আওয়াজে মুখরিত পরিবেশ। সবকিছু মিলিয়ে মুহুর্ত টা যেন একটা স্বর্গীয় করে তুলেছে। নূর মুগ্ধমনে ধীরে ধীরে আদিত্যের বলা অনুযায়ী জাহাজের পেছনের দিকে এগুলো।

পেছনের দিকে আসতেই নূর আরও অবাক হয়ে গেল। জাহাজের পেছন সাইটে অনেকক্ষানি খোলা জায়গা। চারিদিকে গ্রীলের রেলিং করা। জায়গাটা ফুল দিয়ে ডেকোরেট করা। মাঝখানে একটা ছোট্ট গোল টেবিল, আর দুপাশে দুটো চেয়ার রাখা। সেগুলও সাদা কাপড় দিয়ে ডেকোরেট করা, আর তারওপর কাচের বয়ামের ভেতর সুগন্ধী ক্যান্ডেল জ্বালানো। টেবিলের ওপর উঁচু ঢাকনা দিয়ে ঢাকা কিছু জিনিস আছে। হয়তো খাবার হবে। নূর এবার আরেকটু এগিয়ে গিয়ে দেখলো গ্রীলের গা ঘেঁষে উল্টো হয়ে প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আদিত্য। এরই মাঝে আদিত্য চেঞ্জও করে নিয়েছে। আদিত্য পার্পল কালারের কোট প্যান্ট পড়েছে। মাথার চুলগুলোও জেল দিয়ে স্পাইক করে নিয়েছে। অসম্ভব ড্যাশিং লাগছে আদিত্যকে। নূর শুধু হা করে তাকিয়ে আছে।

নূর এবার আদিত্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে একটু গলা খাঁকারি দিয়ে উঠলো। তৎক্ষনাৎ আদিত্য পেছনে ফিরে তাকালো। আর তাকাতেই আদিত্যের হৃৎস্পন্দন থমকে গেল। আদিত্যের আখি যুগল যেন নূরের রুপের ঝলকানিতে ঝলছে যাচ্ছে। আদিত্যর দেওয়া এই ড্রেসে ওর কল্পনার চেয়েও বেশি সুন্দর লাগছে নূরকে। আদিত্য নূরকে একটা ওয়েস্টার্ন গাউন দিয়েছে। গাঢ় লাল রঙের অফ শোল্ডার বডি ফিটিং গাউন। যার নিচের অংশে একপাশে কাটা। সেই কাটায় নূরের ফর্সা মোলায়েম পা দেখা যাচ্ছে।
(যেমনটা বলিউড/হলিউড এর নায়িকারা এ্যাওয়ার্ড শোয়ের রেড কার্পেটে পড়ে থাকে)

আদিত্য অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার অপরুপ প্রিয়তমার দিকে। নূর একটু লাজুক হেসে আমতা আমতা করে বললো।
–এত কিছু কি উপলক্ষে? আজতো বিশেষ কোন দিনও না।

নূরের কথায় আদিত্যের ঘোর কাটলো। আদিত্য মুচকি হেসে নূরের কাছে এগিয়ে এসে বললো।
–তোমার সাথে কাটানো প্রতিটা দিনই আমার কাছে বিশেষ দিন। তবে হ্যা আজকে আমি একটা বিশেষ কাজের জন্যই এই আয়োজন করেছি।

নূর ভ্রু কুঁচকে বললো।
–কি কাজ?

আজ আমি সেই আসল কাজটা করবো যেটা তুমি একবার করতে বলেছিলে। তোমার ভাষ্যমতে এই আসল কাজটা না করলে নাকি বর বউ খেলা হয়না। তো আজকে আমি সেই আসল কাজটা করবো। কারণ এখন তুমি সেই কাজটার মর্মার্থ ভালো করে বুঝতে পারবে। আদিত্যের কথার মর্ম বুঝতে পেরে নূর লাজুক হাসলো। আদিত্য এগিয়ে গিয়ে টেবিলের ওপর থেকে ফুলের তোড়া নিয়ে এসে নূরের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে নূরের দিকে তাকিয়ে বললো।
–আমি বলবোনা আমি তোমাকে ভালোবাসি। কারণ তোমার প্রতি আমার অনিভূতি গুলো শুধু ভালোবাসা নামক ছোট্ট একটা ওয়ার্ডে সীমাবদ্ধ হবে না। আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি সেটাও বলবোনা। কারণ অনেকেরও একটা সীমা আছে। আর আমার অনুভূতি গুলো সীমাহীন, যার কোন অন্ত নেই। শুধু বলবো নিঃশ্বাসের প্রয়োজনে তোমাকে চাই। বেঁচে থাকার প্রয়োজনে তোমাকে চাই। তোমাকে চাই প্রতিটা মূহুর্তে, চোখ খুললে তোমাকে চাই,চোখ বন্ধ করলেও তোমাকে চাই। সুখে তোমাকে চাই, দুঃখে তোমাকে চাই, তোমার সাথে জীবনের সবকিছু শেয়ার করতে চাই,তোমার সাথে বুড়ো হতে চাই,মরণের সময়ও তোমার মুখটা দেখে মরতে চাই। তুমি আছ তো আমি আছি, তুমি ছাড়া আমি নিঃশ্ব।

আদিত্যের এমন হৃদয় নিংড়ানো আবেগপ্রবণ কথায় নূরের চোখে আনন্দ অশ্রু চলে এলো। নিজেকে আজ দুনিয়ার সবচেয়ে ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে। ছোটবেলায় শুধু ফেইরিটেলের গল্প শুনতো ও। তবে আজ নিজের জীবন টাই যেন ফেইরিটেল হয়ে গেছে। নূর ভাষা হারিয়ে ফেলছে। তবুও নিজেকে একটু সামলে নিয়ে মুচকি হেসে বললো।
–যাই বলো আসল কাজটা তো তুমি করলেই না।

আদিত্য হালকা হেঁসে বললো।
–ওঁকে মাই এঞ্জেল এ্যাজ ইউর উইস। সো মিসেস আদিত্য আই লাভ ইউ,আই লাভ ইউ,আই লাভ ইউ❤️

নূর এবার আদিত্যের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে আদিত্যের হাত থেকে ফুলের তোড়া টা নিয়ে বললো।
–আই লাভ ইউ টু মাই হিরো।

আদিত্য প্রাপ্তির হাসি দিয়ে নূরকে জড়িয়ে ধরলো। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে নূরের হাত ধরে ওকেও তুলে দাঁড় করালো। আদিত্য একপাশ থেকে একটা লাল রঙের ফানুস নিয়ে এলো। ফানুস টা নূরের হাতে দিয়ে আদিত্য নিচে আগুন ধরিয়ে দিল। এরপর সে নিজেও দুই হাতে ফানুস টা ধরে নূরের দিকে তাকিয়ে বললো।
–উড়িয়ে দাও আমাদের ভালোবাসার নামে।
অতঃপর দুজনে একসাথে ফানুস টা ছেড়ে দিল।ফানুস টা উড়ে যাওয়া পর্যন্ত দুজনে সেদিকেই তাকিয়ে রইলো। এ যেন অনবদ্য অনূভুতি।

কিছুক্ষণ পর আদিত্য নূরকে নিয়ে ক্যান্ডেল লাইট ডিনার করে নিল। ডিনার শেষে আদিত্য ডান্স করার জন্য নূরের দিকে হাত বাড়িয়ে দিল। নূরও মায়াবী হেসে আদিত্যের হাতে হাত রাখলো। আদিত্য এক হাত নূরের কোমড়ে রেখে, আরেক হাত নূরের হাতের ভেতরে দিয়ে আস্তে আস্তে নেচে নেচে গাইতে লাগলো।
♬ ♬ পাল দো পাল কি কিউ হে জিন্দেগী
♬ ♬ ইস পেয়ার কো হে সাদিয়া কাফি নেহি
♬ ♬ তো খুদা সে মাঙ লু মহলত মে ইক নায়ি
♬ ♬ আব দূর তুজ সে যানা নেহি

♬ ♬ জো তু মেরা হামদারদ হে
♬ ♬ সুহানা হার দারদ হে
♬ ♬ জো তু মেরা হামদারদ হে
♬ ♬ সুহানা হার দারদ হে

♬ ♬ তেরি মুসকুরাহাটে হে তাকাত মেরি
♬ ♬ মুঝকো ইনি সে উমিদ মিলি
♬ ♬ চাহে কারে কই সিতাম ইয়ে জাহা
♬ ♬ ইনমে হি হে ছাদা হিফাজাত মেরি
♬ ♬ জিন্দেগানী বাড়ি খুবসুরাত হুয়ি
♬ ♬ জান্নাত আব অর কেয়া হোগি কাহি

♬ ♬ জো তু মেরা হামদারদ হে
♬ ♬ সুহানা হার দারদ হে
♬ ♬ জো তু মেরা হামদারদ হে
♬ ♬ সুহানা হার দারদ হে
(সংক্ষিপ্ত)

রেলিঙের কাছে নিচে পা মেলে বসে আছে আদিত্য। আর তার দুপায়ের মাঝখানে বসে আছে নূর। আদিত্য পেছন থেকে নূরের কোমড় জড়িয়ে ধরে বসে আছে। নূর শুধু এই জোসনা রাতের বেলায় বিশাল সমুদ্রের ওপর ভাসমান হয়ে সমুদ্র বিলাস করছে।এমন সৌন্দর্য হয়তো ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না। আজকের এই মুহূর্ত গুলো খুবই স্পেশাল ওর কাছে। তাইতো সে প্রতিটা মুহূর্ত ইনজয় করছে ।

তবে আদিত্যর কাছে তার এঞ্জেল থাকতে অন্য কোন সৌন্দর্যে কি তার চোখ যায়? সেতো শুধু নূরে বিভোর। আর এখনো তাই আছে।আদিত্য নূরের খোলা চুলগুলো সরিয়ে নূরের উন্মুক্ত কাঁধে মুখ ডুবিয়ে আছে। মাঝে মাঝে চুমু দিচ্ছে আবার নাক ঘষছে। আদিত্যের এহেন কাজকর্মে নূর লাজুক হেসে বললো।
–আচ্ছা মিঃ,তো এইকারনেই এতো আয়োজন হচ্ছিল তাইনা?আসল মতলব তো এটাই। নিজের লাভটা ভালোই বুঝ তাইনা?

আদিত্য এবার নূরের মুখটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিল। নূর লজ্জায় মাথা নিচু করে রয়েছে। নূরের এই লাজুক লাল আভাটা আদিত্যর নেশা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। আদিত্য নূরের থুতনিতে হাত দিয়ে মুখটা একটু উঁচু করে, বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে নূরের ঠোঁটে স্লাইড করলো।নূর শিউরে উঠে চোখ বন্ধ করে নিল।আদিত্য নূরের ঠোঁটের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে নেশা ভরা কন্ঠে বলে উঠলো।
–এমনি এমনিতো আর এতো বড় বিজনেস ম্যান হয়নি।নিজের লাভ ছাড়া কোন কাজ করিনা আমি। আর এখন আমার লাভের পালা।

কথাটা বলে আদিত্য ধীরে ধীরে নূরের ঠোঁটের দিকে ঝুঁকতে লাগলো। আর একসময় নূরের রসালো অধর যুগলে ডুব দিল। আদিত্যের কোট খামচে ধরে নিজেও আদিত্যের ভালোবাসায় সায় দিতে লাগলো। আদিত্যর নেশা আরও বেড়ে গেল। আদিত্য চুমু খেতে খেতে নূরকে পাঁজা কোলে তুলে নিল। কোলে নিয়ে ওভাবেই কেবিনে চলে এলো। কেবিনে এসে পা দিয়ে ঠেলে ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দিল।

আর ওরা চললো ওদের সুখের রাজ্যে।

চলবে……..
(ভ্রমন নিয়ে আমি এই প্রথম লিখলাম। জানিনা কেমন হয়েছে।
কোন ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার চোখে দেখবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here