মরুর বুকে বৃষ্টি পর্ব ৪১

#মরুর_বুকে_বৃষ্টি 💖
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-৪১

★আরও এক সপ্তাহ পার হয়ে গেছে। সবাই যার যার জীবনে হাসি খুশী দিন কাটাচ্ছে। আজ সবাই আদিত্যের বাসায় মিলিত হয়েছে। আদিত্যই সবাইকে আসতে বলেছে। সন্ধ্যার সময় সবাই ড্রয়িং রুমে বসে সবাই আড্ডা দিচ্ছে। একটু পরে আদিত্য অফিস থেকে ফিরলো। দরজায় বেল বাজাতেই প্রতিদিনের মতো নূর হাসিমুখে গিয়ে দরজা খুলে দিল।

দরজা খুলে দিতেই আদিত্য যাথারিতী তার অভ্যাস অনুযায়ী প্রশান্তির হাসি দিল।কোনদিকে না তাকিয়ে নূরকে জড়িয়ে ধরলো। নূর বেচারি কিছু বলার সময়ও পেল না। আদিত্য এবার ঠোঁট চোখা করে নূরের গালে চুমু দিতে গেলে,নূর চোখের ইশারায় পেছনে তাকাতে বললো। আদিত্য ওইভাবেই সামনে তাকিয়ে দেখলো সবকয়টা দাঁত কেলিয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। আবির তখন দুষ্টু হেসে বললো।
–ছ্যা ছ্যা ছ্যা কি দিনকাল এলো। আজকাল কার পোলাপানের লজ্জা শরম যেন হোল সেলে বেঁচে দিয়ে এসেছে। কেমন মাছুম বাচ্চাদের সামনে চুম্মা চাটি করে বেড়াচ্ছে। এদের জন্যই দেশ আজ রসাতলে চলে যাচ্ছে। আল্লাহ তুমি এদের হেদায়েত দান করো।

নূরতো লজ্জায় মাটির নিচে ডেবে যাচ্ছে। তবে আদিত্য ড্যাম কেয়ার ভাব নিয়ে বললো।
–তো তোকে দেখতে কে বলেছে? আমার বউকে আমি যেখানে খুশী সেখানেই আদর করবো তোর কিবে? তুই দেখতে না পারলে চোখ বন্ধ করে রাখ।

কথাটা বলেই আদিত্য নূরের গালে টুস করে একটা চুমু দিয়ে দিল। নূর লজ্জায় মরি মরি অবস্থা। বিহান মুখে আঙুল ঢুকিয়ে শিস বাজিয়ে উঠে বললো।
–জিও মামা। এই না হলে আছল বাপের বেটা। বউরে আদর করুম তার আবার শুক্রবার শনিবারের কি আছে? তাইনা বউ?
কথাটা বলে বিহান এক হাতে আয়াতের কাঁধের উপর দিয়ে নিজের সাথে চেপে ধরলো।
আয়াত চোখ বড়বড় করে বিহানের দিকে তাকালো। বড় ভাইদের সামনে কেমন নির্লজ্জের মতো কাজ করছে।

বিহান এবার আবিরের দিকে তাকিয়ে বললো।
–আর তুই আসল কথাটা ক না। আসল কথা ওইলো তোর এসব দেখে পরানডা জ্বইল্যা যায়। কারণ তুই এসব করতে পারোস না তাই। তোর অবস্থা অহন ওই অসহায় ব্যাক্তির মতো হয়েছে। যার সামনে সুস্বাদু খাবার রাখা আছে তবে খেতে মানা।
কথাটা বলেই বিহান হো হো করে হেসে উঠলো। বাকিরাও হাসতে লাগলো। আবির অসহায় ভাব বলে উঠলো।
–হ্যাঁরে ভাই ঠিকই বলেছিস। আজ কচি বিয়াইনের সাথে প্রেম করার ফল পাচ্ছি। এর চেয়ে তো বিদেশি মেয়ের সাথে প্রেম করাই ভালো ছিল। কমছে কম এমন অনাহারে তো থাকতে হতো না।

আবিরের কথায় নীলা দাঁত কটমট করে চোখ গরম করে তাকালো আবিরের দিকে। আবির সেটা দেখে মেকি হাসি দিয়ে বললো।
–হে হে জাস্ট কিডিং। আমার কচি বিয়াইনের মতো কি কেউ হয় নাকি।

একটু পরে বিহান আদিত্যের দিকে তাকিয়ে বললো।
–হ্যাঁরে হঠাৎ ডাকলি যে? কি হইচে? কিছু বলবি?

আদিত্য সবার সামনে দাঁড়িয়ে বললো।
–তোদের সবার জন্য একটা গুড নিউজ আছে।

সবাই হঠাৎ অতি খুশী হয়ে গেল । আবির আর বিহান এসে আদিত্যকে জড়িয়ে ধরে বললো।
–ওয়াও ইয়ার অভিনন্দন অভিনন্দন। অনেক অনেক শুভকামনা।

আয়াত আর নীলাও খুশিতে নেচে উঠে নূরকে জড়িয়ে ধরে আস্তে।
–ইয়াহুউউ,, উই আর সো হ্যাপি। অনেক অনেক অভিনন্দন।

আদিত্য আর নূর দুজনেই ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। এরা কিসের অভিনন্দন দিচ্ছে সেটাই বুঝতে পারছে না ওরা। আদিত্য ভ্রু কুঁচকে বললো।
–পুরো কথা না শুনেই খুশী হচ্ছিস কেন তোরা? আর এতো অভিনন্দন দেওয়ারই বা কি আছে?

আবির বলে উঠলো।
–বারে আমি চাচু হতে যাচ্ছি আর খুশী হবোনা? আমার তো খুশিতে সারা বাড়ি জুড়ে নাচতে ইচ্ছে করছে।

বিহান,
–হ আমিতো দুইটা হমু।চাচু আবার মামা। আমারতো ডাবল খুশী।

আয়াত,
–আর আমি ফুপি হতে চলেছি ওয়াও ভাবতেই কি খুশী লাগছে।

নীলা,
–আরে আমিতো খালামনি হব।ইশশ কি মজা।

আদিত্য আর নূর যেন তাজ্জব বনে গেল। যার বিয়ে তার খবর নাই, পাড়া পড়শীর ঘুম কামাই। এদের অবস্থাটাও তেমনই হয়েছে। আদিত্য একটু ধমকের সুরে বললো।
–চুপ কর সবগুলো। পুরো কথা শোনার আগেই লাফালাফি শুরু করে দিয়েছে। আরে এমন কিছুই না।

আবির বলে উঠলো।
–কেন তুমিই তো বললে গুড নিউজ। তাইতো আমরা,,

–তাইতো তোরা ধেইধেই করে নাচা শুরু করে দিলি। গুড নিউজ মানে কি শুধু ওটাই নাকি? আরে আমিতো অন্যকিছু বলছিলাম।

–কি বলছিলে?

–আসলে আমি আমাদের সবার জন্য কক্সবাজার যাওয়ার প্ল্যান করেছি। সব অ্যারেঞ্জমেন্টও করে ফেলেছি। কাল সকালেই আমরা সবাই প্লেনে করে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবো।

আদিত্যের কথায় সবাই খুশীতে হইহই করে নাচতে লাগলো।
__

ডিনার শেষে একটু আগে আদিত্য রুমে এসেছে। ফোনে কারোর সাথে কথা বলছে। তখনই হঠাৎ নূর রুমে এসে দৌড়ে আদিত্যকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। আদিত্য মুচকি হেসে ফোন কেটে বিছানার উপর রাখলো। তারপর নূরের হাত ধরে ওকে সামনে নিয়ে আসলো।নূর সামনে থেকে আবারও জড়িয়ে ধরে খুশী মনে বলে উঠলো।
–থ্যাংক ইউ, থ্যাংক ইউ, থ্যাংক ইউ সোওওও মাচ। এত্তো গুলো থ্যাংক ইউ। জানো আমার সেই ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন ছিল সমুদ্র দেখার। সমুদ্রের পানিতে নামার। কিন্তু কখনো যাওয়া হয়নি। স্কুল কলেজ থেকে পিকনিকে গেলেও বাবা আমাকে একা ছাড়তো না। তাই যাওয়াও হতো না। এখন ফাইনালি সমুদ্র দেখতে পারবো। ইশশ আমার যে কি খুশী লাগছে।

আদিত্য দুই হাতে নূরের মুখটা ধরে বলে উঠলো।
–আর তোমার এই খুশীটাই তো আমার তৃপ্তি। আমার তো বাবাকে ধন্যবাদ দিতে ইচ্ছে করছে। যার জন্য তোমাকে আমি আজ এই খুশীটা দিতে পারলাম। কারণে আগে কখনো গেলে তো আজকের মতো তোমার এই খুশীটা আমি দেখতে পেতাম না।

নূর আদিত্যের গলা জড়িয়ে ধরে বললো।
–ধন্যবাদ হিরো। ইউ আর বেস্ট হাসব্যান্ড ইন দা ওয়ার্ল্ড।

আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
–হয়েছে হয়েছে এখন ঘুমিয়ে পড় চলো। কাল আবার সকাল সকাল উঠতে হবে।নাহলে তুমি যে ঘুম পাগলি। তোমার ঘুমই ভাঙবে না।

–আরে কি বলো। আমার তো এক্সাইটমেন্টে আজ ঘুমই আসবেনা। কখন সকাল হবে আর কখন যেতে পারবো।

আদিত্য নূরের কোমড় জড়িয়ে ধরে দুষ্টু হেসে বললো।
–তাহলে আর শুধু শুধু জেগে থেকে কি হবে? তোমার তো সময় কাটবে না তাইনা। তার চেয়ে বরং কিছু কাজ করা যাক এতে তোমার সময়ও কেটে যাবে কি বলো?
কথাটা বলে আদিত্য চোখ টিপ মারলো। নূর আদিত্যের মনোভাব বুঝতে পেরে মুখ দিয়ে মিছেমিছি হাই তুলে বললো।
–কিজে বলোনা, আমার তো ঘুমে চোখ ভেঙে আসছে। যাই তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ি।
নূর তাড়াতাড়ি করে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো। আদিত্যও হেসে দিয়ে বেডে এসে নূরকে বুকে জড়িয়ে শুয়ে পড়লো।
___

পরদিন সকাল সকাল সবাই রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়লো এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে। এয়ারপোর্টে এসে যথাসময়ে ওরা প্লেনে উঠে পড়লো। নূরের এক্সাইটমেন্টে হাতা পা কাঁপাকাঁপি করছে। এই প্রথম ও প্লেনে চড়েছে। সবকিছুই অতী আনন্দিত লাগছে ওর কাছে। এক অভূতপূর্ব অনুভূতি হচ্ছে।

আদিত্য নূরের হাত ধরে ওদের সিটে এসে জানালার পাশের সিটে নূরকে বসিয়ে দিয়ে নিজেও ওর পাশের সিটে বসলো। তারপর নূরের সিটবেল্ট লাগিয়ে দিল। একটু পরেই প্লেন টেক অফ করতে শুরু করলো। নূরের এবার কেমন যেন ভয় লাগতে শুরু করলো। মনে হচ্ছে ও বোধহয় প্লেন থেকে পরে যাচ্ছে। নূর ভয়ে আদিত্যর বাহু খামচে ধরলো। আদিত্য তাড়াতাড়ি করে নূরকে বুকের মাঝে জড়িয়ে নিয়ে বললো।
–ভয় নেই এঞ্জেল আমি আছি না। কিছু হবে না। রিলাক্স, টেক অ্যা ডিপ ব্রেথ।

কিছুক্ষণের মধ্যেই প্লেন পুরোপুরি টেক অফ করে সোজা হয়ে গেল। নূর এবার একটু শান্ত হয়ে এলো। আদিত্য নূরের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো।
–দেখ সব ঠিক হয়ে গেছে। জানালার বাইরে তাকিয়ে দেখ কত সুন্দর লাগছে দেখতে।

আদিত্যের কথায় নূর এবার ধীরে ধীরে মাথা তুলে জানালার বাইরে তাকালো। বাইরের দিকে তাকিয়ে সত্যিই নূর মুগ্ধ হয়ে গেল। উপর থেকে নিচের সবকিছু কতো ছোট ছোট লাগছে। ছোট ছোট ঘরবাড়ি, গাছগাছালি, নদীনালা সবই দেখা যাচ্ছে। জানালার পাশ দিয়ে ভেসে বেড়ানো সাদা মেঘের ভেলা দেখা যাচ্ছে। সবকিছু অপূর্ব অতুলনীয় লাগছে। নূরের ইচ্ছে করছে হাত বাড়িয়ে মেঘগুলো ছুঁতে। তবে আপসোস এখন এটা সম্ভব না। তাই মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে সবকিছু উপভোগ করছে। আর আদিত্য তার এঞ্জেলের মুগ্ধতা দেখে মুগ্ধ হচ্ছে।

যথাসময়ে প্লেন কক্সবাজার এয়ারপোর্টে ল্যান্ড করলে সবাই একে একে নেমে এলো। প্লেন থেকে নেমে ওঁরা এয়ারপোর্টের বাইরে এসে দাঁড়াল। আদিত্য আগে থেকেই গাড়ি বুক করে রেখেছিল। তাই ওদের জন্য আগে থেকেই এয়ারপোর্টের বাইরে গাড়ি অপেক্ষা করছিল । আদিত্য ড্রাইভার কে ফোন করতেই একটু পরে একটা ব্লাক হাইস কার ওদের সামনে এসে থামলো। সবাই যার যার মতো গাড়িতে উঠে বসলো। আদিত্য ড্রাইভারকে প্রথমে ওদের বুক করা রিসোর্টে নিয়ে যেতে বললো।

গাড়ি চলছে আপন গতিতে। নূর জানালার বাইরে তাকিয়ে দুই পাশের সারিবদ্ধ সবুজ গাছগাছালি দেখছে। নূর যতই দেখছে ততই মুগ্ধ। আদিত্য কলাতলী বিচের কাছে একটা নামীদামী রিসোর্ট বুক করেছে। গাড়ি সেদিকেই যাচ্ছে। গাড়ির ভেতর থেকেই বড়বড় নারিকেল গাছের সারি আর সমুদ্র দেখা যাচ্ছে। নূরের যেন আর তর সইছে না। কখন ও ওই সমুদ্রের পানিতে নামতে পারবে।

কিছুক্ষণ পরেই ওরা রিসোর্টে চলে এলো। রিসোর্টে এসে আদিত্য রিসিপশন থেকে চাবি নিয়ে সবাইকে যার যার রুমের চাবি দিয়ে দিল। আদিত্য দুটো হানিমুন সুইট বুক করেছে। একটা ওর আর নূরের,আরেকটা বিহান আর আয়াতের জন্য। আর দুটো আলাদা রুম বুক করেছে আবির আর নীলার জন্য। আদিত্য সবাইকে ওদের চাবি দিয়ে বললো।
–আপাতত আমরা একটু ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া করে নেবো। তারপর আবার বের হবো।

সবাই খুশী খুশী রাজি হলেও আবির মুখ ফুলিয়ে রেখেছে। সেটা দেখে আদিত্য বলে উঠলো।
–কিরে তোর আবার কি হলো? এভাবে বাংলার পাঁচের মতো মুখ বানিয়ে রেখেছিস কেন?

আবির করুন সুরে বললো।
–ভাইয়া এটা কেমন কথা? মানে তোমরা দুজন যার যার পার্টনার নিয়ে একসাথে থাকবে।আর আমার বেলায় এমন অবিচার কেন? যাও খেলবোনা আমি।না মানে বলছিলাম যে নীলা বেচারি একা একা তো ভয় পাবে তাইনা? তাই বলছিলাম যে আমরা একরুমেই থাকি না?

নীলা ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলো।
–ও হ্যাঁলো, আপনাকে কে বললো আমি ভয় পাবো? আমি মোটেও ভয় পাইনা। আমি একাই থাকতে পারবো।

আবির দাঁতে দাঁত চেপে বললো।
–তুমি চুপ থাকোনা। তুমি হলে ছোট মানুষ, তুমি কিছু বোঝ না।

আদিত্য বলে উঠলো।
–ওই বুদ্ধিমান, নিজের ফালতু আইডিয়া তোর কাছেই রাখ। শিয়ালের কাছে মুরগী বাগি দেওয়ার মতো বোকা আমি না। এখন ড্রামা বন্ধ করে নিজের রুমে যা।

বেচারা আবির অগত্যা মলিন মুখে নিজের রুমের দিকে এগুলো। বাকিরাও যার যার রুমে গেল।

বিহান আর আয়াত ওদের রুমে ঢুকতেই বিহান বেডের ওপর ঠাস করে চিত হয়ে শুয়ে পড়লো। আয়াত বিহানের কাছে এগিয়ে এসে বললো।
–একি আপনি এখন শুলেন কেন? ভাইয়া কি বললো শোনেননি? তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিন আবার বের হতে হবে।

বিহান হঠাৎ আয়াতের হাত ধরে টান দিয়ে নিজের বুকের ওপর ফেলে দিল। আয়াত চমকে উঠে বললো।
–আরে কি করছেন ছাড়ুন ফ্রেশ হতে হবে তো।
বিহান আয়াতের গলায় মুখ ডুবিয়ে নেশালো কন্ঠে বললো।
–ছাড়না বাইরে যাওয়া। ওদের যেতে দাও। আমারতো রুমেই ভালো লাগছে। আমরা আজকে রুমেই থাকিনা? শুধু তুমি আর আমি আর কেও না। ভেবে দেখ কতো মজা হবে।

আয়াত বলে উঠলো।
–এই না, একদম না। দেখুন একদম এসব চিন্তাভাবনা করবেন না। আমি কিন্তু বেড়াতে এসেছি, সমুদ্র দেখতে এসেছি। রুমে ঢুকে বসে থাকতে আসিনি। এমন করলে কিন্তু আমি কথা বলবোনা। প্লিজ উঠুন না?

–ওকে বাবা উঠছি। তোমাদের না ভালো জিনিসের কদর নেই। কতো সুন্দর একটা অফার দিলাম তাও কান্দে।নিজের জামাইয়ের চাইতে আজ ওই সমুদ্রই বড়ো হয়ে গেল? কি আছে ওই সমুদ্রে? খালি পানি আর পানি এটা কোন দেখার জিনিস হলো?

–সে আপনি বুঝবেন না। তাড়াতাড়ি যান ফ্রেশ হয়ে নিন।

–হ্যাঁ হ্যাঁ যাচ্ছি।
কথাটা বলে বিহান গাল ফুলিয়ে টাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকলো। আয়াত মুচকি হেসে উঠে গিয়ে লাগেজ খুলে দুজনের জামা কাপড় বের করলো।

আদিত্যরাও ওদের রুমে ঢুকলো। নূর রুমে ঢুকে হা হয়ে গেল। রুমটা খুবই সুন্দর। হয়তো রিসোর্টের সবচেয়ে বেস্ট রুম এটা। জানালা দিয়ে সমুদ্র দেখা যাচ্ছে। নূর দ্রুত গিয়ে জানালা খুলে দিতেই ঠান্ডা দমকা হাওয়া এসে নূরের মুখে লাগলো। নূর আবেশে চোখ বন্ধ করে নিল। শরীর টা যেন শীতল হয়ে গেল ওর। আদিত্য মুচকি হেসে নূরের কাছে এসে পেছন থেকে দুই হাতে নূরের কোমড় জড়িয়ে কাঁধে থুতনি রেখে বললো।
–রুমটা পছন্দ হয়েছে আমার এঞ্জেলের?

নূর আদিত্যের কাঁধে মাথা এলিয়ে দিয়ে বললো। –শুধু পছন্দ না অনেক অনেক অনেক পছন্দ হয়েছে। আমারতো আর তর সইছে না। আমরা কখন সমুদ্রে যাবো বলোনা?

–যাবো যাবো একটু পেশেন্স রাখ। আগে ফ্রেশ হবে চলো।

নূর মাথা ঝাকিয়ে কাপড়চোপড় নিয়ে ফ্রেশ হতে গেল।

কিছুক্ষণ পর সবাই আবার নিচে নেমে এলো। সবাই একসাথে খাওয়া দাওয়া শেষে বিচের দিকে গেল।
বীচে আসতেই নূরের খুশি আর দেখে কে । সমুদ্রের সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়ে গেল নূর। সমুদ্রের পানিতে পা ডুবাতেই নূরের সারা শরীর যেন শিরশির করে উঠলো। আনন্দচিত্তে নেচে উঠলো মনটা।

আবিরতো এসেই নেমে পরেছে পানিতে। বিহান দুষ্টু হেসে বললো।
–পানিতে যেন মুইত্যা দিসনা। তোর তো ভরসা নাই।

বিহানের কথায় আবির তেড়ে এলো বিহানের দিকে। আর বিহান দৌড়াতে লাগলো। আবির একসময় বিহানকে ধরে পানির ভেতর ঠেসে ধরে বললো।
–হারামি আমি মুতি না? তাহলে তুই এখন সেটা খা।

ওদের কান্ড দেখে সবাই হাসছে। একটু পরে আবির আর বিহান দুজনেই পানিতে মাস্তি শুরু করে দিল। দুজন একসাথে পানির ভেতর নাচতে নাচতে গান গাইছে।
♬ আজ ব্লু হে পানি পানি পানি পানি পানি পানি
♬ অর দিন ভি সানি সানি সানি সানি সানি সানি
♬ আজা ও অন দা বিচ ইয়ারো ফটো মেরি খিচ
♬ ফুটি কিছমাত হোগি তেরি
♬ আগার তু নেহি ইয়ে বাত না মানি
♬ আ হাঁহ আ হাঁহ আ হাঁহ

আয়াত আর নীলাও হাঁটু পানিতে নেমে পানি ছিটাছিটি করছে।
ওদের পানিতে মাস্তি করতে দেখে নূরেরও পানিতে নামতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু আদিত্য ওর হাত ধরে রেখেছে দেখে ও পারছে না। নূর আদিত্যের দিকে তাকিয়ে বললো।
–হাত ছাড়না আমিও পানিতে নামবো।

আদিত্য বলে উঠলো।
–না এখানে নামা যাবেনা। দেখছনা আশেপাশে কতো মানুষ। সাদমান শাহরিয়ার আদিত্যর স্ত্রী এভাবে সবার সামনে ভেজা শরীরে থাকবে সেটা কখনোই সম্ভব না।

আদিত্যর কথায় নূরের মনটাই খারাপ হয়ে গেল। সমুদ্রে এসে যদি পানিতেই না নামলো তাহলে আসার কি মানে হলো? নূর অভিমানী সুরে বললো।
–ঠিক আছে তাহলে আর এখানে থেকে কি লাভ?চল রিসোর্টে ফিরে যাই।

–ঠিক আছে চলো।
আদিত্য নূরের হাত ধরে হাঁটা শুরু করলো। নূর আরও অবাক হয়ে গেল। ওতো ভেবেছিল ওর মন খারাপ দেখে আদিত্য রাজি হয়ে যাবে।কিন্তু সেতো ওর মন খারাপ কে নির্দ্বিধায় উপেক্ষা করে দিল। নূরের এবার কান্না পাচ্ছে। ইচ্ছে করছে এখান থেকে ছুটে চলে যেতে। কিন্তু মানুষজনের সামনে এভাবে সিনক্রিয়েট করা যাবেনা। তাই নূর ওভাবেই অভিমান করে আদিত্যের সাথে যেতে লাগলো।

একটু পর নূর দেখলো আদিত্য রিসোর্টের দিকে না। অন্য দিকে যাচ্ছে। নূর সেটা দেখে একটু ভ্রু কুঁচকালো। তবে অভিমানের কারণে কিছু বললো না। আজ সে কথাই বলবেনা আদিত্যের সাথে। মনে মনে পণ করে নিয়েছে। এভাবে বিচ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ওরা অনেক দূরে চলে এসেছে। এদিকে তেমন কোন লোকজন দেখা যাচ্ছে না। যায়গাটাও খুব সুন্দর। মানুষের কোলাহল না থাকায় এদিকটা অনেক মনোরম আর নিরিবিলি। নূর মুগ্ধ হয়ে দেখতে লাগলো। তখনই আদিত্য বলে উঠলো।
–নামবে পানিতে?

নূর অবাক হয়ে আদিত্যের দিকে তাকিয়ে বললো।
–কিন্তু তুমিতো বললে নামতে পারবোনা।

আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
–আমি বলেছিলাম ওখানে নামা যাবেনা। তারমানে এই না যে আমি আমার এঞ্জেলের ইচ্ছে পূরণ করবো না। ওখানে মানুষ ছিল তাই নামতে দেইনি। তবে এখানে কেউ নেই। এটা রেস্ট্রিকটেড এরিয়া। এখানে জনসাধারণের আসার পারমিশন নেই। তবে আমি এখানকার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছ থেকে পারমিশন নিয়ে নিয়েছি। আর তুমিতো জানোই তোমার হাসব্যান্ড কে মানা করার ক্ষমতা কারোর নেই।

নূর খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেল। ফট করে আদিত্যের গালে চুমু খেয়ে বললো।
–থ্যাংক ইউ, ইউ আর দ্য বেস্ট।

আদিত্য তৃপ্তির হাসি দিয়ে পান্টের নিচের অংশ গুটিয়ে নিল। তারপর নূরের হাত ধরে ধীরে ধীরে পানিতে নামলো। নূরতো পানিতে নেমে বাচ্চাদের মতো লাফাতে শুরু করে দিল। হাঁটু পানিতে নেমে হাত দিয়ে পানি ছিটাছিটি করছে। নূর দুষ্টুমি করে দুই হাতে পানি নিয়ে আদিত্যের দিকে ছুরে মারলো। আদিত্য মুখের ওপর হাত নিয়ে বললো।
–কি করছো এঞ্জেল?

নূর আদিত্যের কথায় পাত্তা না দিয়ে আরো বেশি করে পানি মারতে লাগলো।তাই এবার আদিত্যও নূরকে পানি মারতে শুরু করলো। নূর আদিত্যের সাথে পেরে না উঠে এবার পানির ভেতর হাত দিয়ে একদলা বালি তুলে নিয়ে আদিত্যের গায়ে ছুঁড়ে মারলো। আদিত্য থেমে গিয়ে একবার নিজের গায়ের দিকে আরেক বার নূরের দিকে তাকালো। নূর জিব দেখিয়ে বললো।
–এখন কেমন লাগে? আমার সাথে পাঙ্গা নিলে এমনই হবে।

–তবেড়ে দুষ্টু। দাড়াও দেখাচ্ছি মজা।
কথাটা বলে আদিত্য নূরের দিকে তেড়ে আসতে লাগলো। আর নূর তা দেখে হাসতে হাসতে পানির ভেতর দৌড়াতে লাগলো। আদিত্যও হাসি মুখে নূরের পেছনে দৌড়াচ্ছে। একসময় নূরের কাছে এসে ওকে ধরে ফেললো। দুই হাতে পেছন থেকে নূরের কোমড় জড়িয়ে ধরে উঁচু করে গোল গোল ঘোরাতে লাগলো। আর নূর খিলখিল করে হাসতে লাগলো। এরপর আদিত্য নূরকে পাঁজা কোলে নিয়ে আরো গভীর পানিতে এগিয়ে গেল।
বুক সমান পানিতে এসে আদিত্য নূরের দুই পা নিজের কোমড়ের সাথে পেঁচিয়ে নূরকে কোলে বসিয়ে নিল। নূরের চোখের দিকে তাকিয়ে বললো।
–আর ইউ রেডি?

নূর মাথা নিচু করে হালকা ঝাকালো। মানে সে রেডি। আদিত্য মুচকি হেসে নূরের ঠোঁটে নিজের ঠোঁট চেপে ধরে নূরকে নিয়ে পানিতে ডুব দিল।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here