মাতাল_হাওয়া পর্ব ৮

#মাতাল_হাওয়া
#৮ম_পর্ব
#তাসনিম
বাইরে ঝিরিঝিরি বাতাস বইছে। মেঘের গর্জন শুনা যাচ্ছে। যেকোনো সময় বৃষ্টি নামতে পারে। নিস্তব্ধ রাত চারিদিকে সুনসান নিরবতা। আকাশে কালো মেঘ করেছে তার সাথে কালো মেঘ জমেছে নিরব তুলির মনেও। নিরব বারান্দায় দাঁড়িয়ে নিকোটিনের ধোঁয়ায় নিজেকে পুরাচ্ছে। তুলিও বারান্দায় বসে বসে কান্না করে চোখ ফুলাচ্ছে। নিস্তব্ধ রাত কারো জন্য খুব সুখকর আবার কারো জন্য যন্ত্রণা ছাড়া আর কিছুনা। রাতের এই অন্ধকারে দুজন মানুষের মনেও অন্ধকার নেমেছে। কালো মেঘে ছেয়ে গেছে দুটি মন। কিছুক্ষন আগের কথা…………

সেন্টমার্টিন থেকে ফিরেছে আজ পনেরো দিন হয়ে গেছে তাই নিরব ভাবলো এইবার মা বাবা কে জানানো উচিৎ তুলি আর ওর বিয়ের বেপারে। সন্ধায় অফিস থেকে ফিরে নিরব বাবা মা কে ড্রয়িংরুমে ডাকলো।

“মা-বাবা তোমাদের সাথে কিছু জরুরি কথা ছিল।”
“হ্যাঁ বাবা বল” সালেহা বেগম বললো।
“আমি একজনকে খুব পছন্দ করি। ভালোও বাসি। ওকে বিয়ে করতে চাই যদি তোমাদের কোনো আপত্তি না থাকে।”
“এইটা তো খুব ভালো কথা, আমার ছেলে শেষমেষ বিয়ে করতে রাজী হয়েছে আমার আর কি চাই। তো মেয়েটা কে শুনি।” উৎসুক হয়ে সালেহা বেগম বললো।
“বিয়ে করবে ভালো কথা। কিন্তু আমাদের জানতে তো হবে মেয়ে কে, কোথায় থাকে, মেয়ের পরিবার কেমন, বংশগত যোগ্যতা কেমন। সব যদি ঠিক থাকে তো আমাদের আর আপত্তি কেন থাকবে।” রহমান সাহেব গম্ভীর গলায় বলে উঠলো।
“বাবা—-মা—- আস—লে মেয়েটাকে তোমরা খুব ভালো ভাবে চিনো। আর ও এই বাড়িরই মেয়ে।”
সালেহা বেগম অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“বাড়ির মেয়ে! কে বল শুনি তো বাবা।”
“তুলি”
“নিরব” রহমান সাহেব চিতকার করে উঠল।
“তোমার সাহস হয় কি করে একটা অনাথ মেয়েকে এই বাড়ির বউ করতে চাও! ওই মেয়ের কোনো যোগ্যতা নেই এই বাড়ির বউ হবার। তুমি ভাবলে কি করে আমি তোমার এই প্রস্তাবে রাজী হব।”
“আহা থামোনা! ছেলেটাকে তো কথাটা শেষ করতে দাও।”
“তুমি থামো সালেহা! তোমার আস্কারা পেয়ে এই ছেলে মাথায় উঠেছে।।পরিবারের মান মারিয়াদা সব ভুলে গেছে। আমি কখনো এই সম্পর্ক মানবোনা। মরে গেলেও না।”
“বাবা! কি বলছো তুমি এসব! তুলিকে আমি ভালোবাসি আর ও এই পরিবারেরই মেয়ে ছোটো থেকে তোমারাই ওকে বড়ো করেছো। আর এখন অনাথ নামটা ওর মাথায় মেরে দিলে। তুলির চেয়ে বেশি যোগ্য মেয়ে আমার জন্য কেউ হতে পারবেনা। আমি তুলিকেই বিয়ে করতে চাই। আর না হলে আজীবন চিরকুমার হয়ে থাকতে রাজি আমি।” নিরব শক্ত কন্ঠে বলে উঠলো।
“সালেহা! তোমার ছেলেকে বলে দাও আমি কখনো এই সম্পর্ক এই বিয়ে মানবোনা তারপরো যদি ও তুলিকে বিয়ে করতে চায় তো আমার বাড়ি থেকে যেনো বের হয়ে যায়। এইবাড়ির দিকে যেনো কখনো ফিরে না তাকায়।”
“আমার কথাটা তো শুনো।” আকুল কন্ঠে বলে উঠে সালেহা বেগম। কিন্তু তার আগেই রহমান সাহেব চলে যায়।
“বাবা! আমার কথা শুন। বাবার কথা শুনে রাগ করিসনা। আর রাগের মাথায় কোনো ডিসিশনও নিসনা। আমি উনাকে বুঝাবো। বুঝালে উনি ঠিক বুঝবে দেখিস। আমাকে একটু সময় দে বাবা।”

নিরব চুপচাপ চলে যেতে নিলে তুলিকে দাড়িয়ে থাকতে দেখলো। তুলির চোখ দিয়ে অনবরত পানি পরছে। নিরব এর বুকে মোচড় দিয়ে উঠলো। তুলি যে সবকথা শুনে নিয়েছে তা আর বুঝার বাকী নেই নিরবের। তুলিকে কিছু বলার আগেই তুলি এক দৌড়ে নিজের রুমে চলে গেল। দরজা বন্ধ করে কান্না করতে করতে নিচে বসে পরল। ওর আগেই ভাবা উচিত ছিল ওর মতো অনাথ কে কেউ নিজের ঘরে জায়গা দিতে পারে কিন্তু আপন কারো জায়গা দিতে পারেনা। কান্না করতে করতে নিচে শুয়ে পরলো তুলি। আজ মা বাবার কথা খুব মনে পরছে। কেন নিয়ে গেলনা উনারা আমাকে নিজের সাথে তাহলে আজ এইদিন দেখতে হতোনা। তুলি মনে মনে ঠিক করে নিল চলে যাবে এই বাড়ি থেকে নিরব এর মন থেকেও। ওর জন্য বাবা ছেলের মাঝে দেয়াল সৃষ্টি করতে দিবেনা। ওর জন্য নিরব এর প্রেম আদার বেপারির মতো যা কখনও ওর হবেনা। চোখ গুলো ব্যাথা করছে তুলির অনবরত কান্না করার কারণে। কিন্তু এই ব্যাথার থেকে বেশী রক্তক্ষরণ হচ্ছে তুলির বুকে যেই ব্যাথা দুমড়ে মুচড়ে দিচ্ছে ওর প্রতিটি ভাবনাকে।

নিরব ভাবতে পারছে না কিছু। বাবা এইটা কি বললো! কিভাবে বলতে পারলো! ভেবে পাচ্ছেনা নিরব। না ও বাবা মাকে ছাড়তে পারবে না তুলিকে। ওরা তিনজন ওর অস্তিত্বে মিশে আছে। একজনকে ছাড়া আরেকজনকে নিয়ে বাচতে পারবেনা।এদের মধ্যে কাউকে ছাড়ার সাহস নেই ওর। কিন্তু কিভাবে কি মেনেজ করবে বুঝে উঠতে পারছেনা। এইরকম দোটানায় জীবনে কখনো পড়েনি নিরব। এক গভীর নিঃস্বাস ছেড়ে আকাশের দিকে তাকালো। কাল কি হবে তার জানা নেই।

চলবে………..

[বিঃদ্রঃ দয়া করে কার্টেসি ব্যাতীত কপি করবেন না।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here