মাদকাসক্ত স্বামী পর্ব ৭

মাদকাসক্ত স্বামী
___________________
লেখিকা:বাবুনি
__________________
(পার্ট:৭)

“রামিম” আজ থেকে ৫বছর আগের ঘটনা__
আমি তখন কলেজে ভর্তি হয়েছি__ বেশ ভালোই দিন কাটছিলো আমার, বন্ধুবান্ধব এর সাথে আড্ডা দিয়ে, ক্লাস করে__
প্রেম কি জিনিস সেটা আমি বুঝতাম না, কখনো এসবে জড়াইনি তখন ও__
যখন আমি ইন্টার প্রথম বর্ষের পরীক্ষা দিয়ে, সবে মাত্র পাশ করে দ্বিতীয় বর্ষে ভর্তি হই__
অনেক ভালো স্টুডেন্ট ছিলাম, অনেক ভালো রিজাল্ট ও করেছিলাম__
হঠাৎ করেই আমার পৃথিবী নতুন রুপে আবির্ভূত হয়__ একদিন একটা নতুন মেয়ে আমাদের কলেজে আমাদের ক্লাসেই ভর্তি হয়__
ওকে প্রথম দেখেই আমার পৃথিবীটা পুরোপুরি পাল্টে যায়__ আমি প্রেমে পড়ে যাই ওর , আস্তে আস্তে ওর প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ি যত সময় যায় তত বেশিই ___
একটা সময় আমি তান্নিকে আমার ভালোবাসার কথা জানাই___ ও আমার প্রস্তাব গ্রহন করে নি প্রথমে___
“তাম্মি” মেয়েটার নাম শুনে চমকে উঠলো, চোখ বড় বড় করে “রামিমের” দিকে তাকিয়ে মনদিয়ে শুনতে লাগলো ওর কথা__
“রামিম” ও আমার প্রস্তাব গ্রহন না করার পিছনের কারণ টা ছিল ওর বাবা মা__
“তাম্মি” কেন ওর বাবা মা আবার কি করলেন__!
“রামিম” ওর আব্বু আম্মু ওর কলেজে পড়া শেষ হলে, একটা ভালো বাইরা দেশি ছেলের সাথে বিয়ে দিতে চান__
আমি ওকে বলি যে আমিও ,একদিন বাইরা দেশে যাবো আমার পড়ালেখা শেষ হলে__ ও যাতে এরকম না করে, ও শুধু আমার উপর একটু ভরসা রাখে__
“তাম্মি” তারপর কি হলো__!
“রামিম” ওর সাথে আমার রিলেশন হয়ে যায়__ আমি আর ও তখন অনেক বেশি ভালোবাসি একে অপরকে__ আমাদের ভালোবাসা টা তখন অনেক গভীরে চলে গেছে__ আমাদের দুজনেরই বিশ্বাস একে অন্যকে ছাড়া থাকতে পারবো না__ কিন্তু আমার বিশ্বাস যে এতটা ভুল ছিল সেটা বুঝতে পারি নি আমি__ (ওর চোখ দুটো দিয়ে অঝোরে বৃষ্টির মতো জল ঝরে পড়ছে__)
চোখ দুটো মুছতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে “রামিম”__
“তাম্মি” সরি আপনাকে হার্ড করার জন্য__
“রামিম” ইটস্ ওকে__ সরি বলতে হবে না তকে__
“তাম্মি” তারপর কি হলো__!
“রামিম” একদিন,” তান্নি” আমাকে ফোন করে জানায় ওর বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে__
আমি তখন বলি তুমি এসব কি বলছো, আমাদের এতো বছরের সম্পর্ক সেটার কি হবে__!
“তান্নি” তখন বলে , আমি কিছু বুঝতে পারছি না কি করবো__ প্লিজ তুমি কিছু একটা করো__
আমি তখন ওকে বলি, তুমি চিন্তা করো না আমার আম্মু আব্বুকে আজই তোমাদের বাসায় পাঠাবো__ যে করে হোক আমি ওনাদের রাজি করাবো__ তুমি শুধু আমার হাত টা ছেড়ে চলে যেও না__
“তান্নি” বলে ঠিক আছে, যা করার তাড়াতাড়ি কর__

ঐদিন বিকেলেই আমি আমার আম্মু আব্বু কে সব বুঝিয়ে বলি__ ওনারা আমার সুখের কথা ভেবে রাজি হয়ে যান__ আমার আম্মু আব্বু সবাই “তান্নিদের” বাসায় যায়__ আমি শুধু বাসায় বসে অপেক্ষার প্রহর গুনছিলাম কখন আব্বু আম্মু আসবে__ কখন শুনবো ওর সাথে আমার বিয়ে টা ঠিক হয়ে গেছে__

আমার অপেক্ষার অবসান ঘটে ঠিকই কিন্তু সেটা সম্পূর্ণ ভিন্ন খবরে__ আব্বু আম্মু বাসায় আসতেই আমি হাসি মুখে ওদের দিকে এগিয়ে যাই__ জানতে চাই কি বললেন ওর আব্বু__!
আম্মু আব্বুর মুখ খুব মলিন হয়ে যায় তখন, ওনারা গম্ভীর ভাবে সোফায় গিয়ে বসেন__
আমি তখন ওনাদের পাশে গিয়ে জিজ্ঞেস করি কি হয়েছে__ আমার বোন “রিমি” তখন বলে, কি হয় নি তাই বল__ তর জন্য শুধু তর জন্য আব্বুকে আজ অপমান হতে হলো__
আমি বলি, কেন আমি আবার কি করলাম__
“রিমি” ঐখান থেকে উঠে রুমে চলে যায়__
আমি আম্মুকে জিজ্ঞেস করি কি হয়েছে__
আম্মু বলেন, ওনারা না করে দিয়েছেন ওনাদের মেয়েকে তর সাথে বিয়ে দিতে পারবেন না___
আমি, কিন্তু কেন আম্মু___!
আম্মু ও বসা থেকে উঠে রুমে চলে যান__
তখন আব্বু আর আমি বসে আছি, আমি আব্বুর পাশে গিয়ে বলি আব্বু প্লিজ বল কি হয়েছে__!
আব্বু তখন বলেন,” আরমান সাহেব” ওনার মেয়েকে তর সাথে বিয়ে দিতে পারবে না __
আমি, কিন্তু কেন__!
আব্বু, কারণ ওনার মেয়ের বিয়ে ঠিক করে ফেলেছেন তিনি অন্য জায়গায়__ তাছাড়া ,___
আমি, তাছাড়া কি আব্বু__!
আব্বু, তাছাড়া ওনি বলেছেন তর মতো একটা বেকার ছেলের বাবা হয়ে __ কি করে তর বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসলাম ওনার কাছে__আমি ওনাকে বুঝিয়ে বলতে গেলে, ওনি বলেন__ এসব সম্পর্কে আমাকে বুঝাতে আসবেন না প্লিজ__ আপনি আমার বাসায় মেহমান এসেছেন , বসুন চা-নাস্তা করুন__ তবে এসব নিয়ে আর কোনো আলোচনা করতে চাচ্ছি না আমি__
আরোও বিভিন্ন ধরনের অপমানজনক কথা বলেছেন ওনি__
এরপর ও কি ঐখানে বসে থাকা যায় তুই বল__!
আমি তখন বলি, কিন্তু আব্বু “তান্নি” ও তো আমায় খুব ভালোবাসে ও তো আমাকে ছাড়া থাকতে পারবে না আব্বু___
আব্বু তখন হেসে বলে, আরে বোকা ছেলে ও যদি সত্যিই তকে ছাড়া থাকতে পারবে না__ তাহলে একবার ও কেন ওর আব্বুর কাছে তকে চাইলো না__! ও কেন আমাদের সামনে এসে কিছু বললো না__
আমি তখন বললাম, আব্বু ও হয়তো ওর আব্বুকে ভয় পেয়ে এরকম করেছে__
আব্বু বলে, তুই বলছিস ভয় পেয়ে এরকম করেছে__! তুই ভুল ভাবছিস__ তুই দেখিস ও টাকা পয়সার মায়ায় পরে তকে ভুলে যাবে__
ওর বাবা ওকে লোভ দেখিয়ে তর কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দিবে__
আমি তখন চিৎকার করে বলি, না আব্বু না ও কখনো এরকম করতে পারে না___
বলে দৌড়ে উপরে যাই, রুমে এসে ফোন হাতে নিয়ে ওকে কল করি__
ও বার বার আমার কল কেটে দেয়, আমি বার বার কল করতে থাকি__
একটা সময় ও আমার কল ধরে, আমি ফোন ধরতেই কান্না করতে করতে বলি___ তান্নি প্লিজ তান্নি তুমি আমাকে ছেড়ে যেও না__ আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না__
ও তখন বলে, রামিম পাগলামি করো না তো__ তুমি বুঝবে হয়তো , দেখো তুমি একটা বেকার ছেলে আর কোনো মেয়ের বাবাই চায় না__ এরকম একটা ছেলের সাথে তার মেয়েকে বিয়ে দিতে__ আমার বাবা মা ও তার ব্যতিক্রম নয়__ তাছাড়া আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে , তুমি আমাকে ভুলে যাও__
আমি তখন চিৎকার করে কান্না করতে করতে বলি, তান্নি তুমি প্লিজ এরকম করো না__
আমি তোমাকে আমার বাসায় নিয়ে আসবো__ প্লিজ তুমি ভয় পেয়ো না , আমি এক্ষুনি আসছি__
ও তখন বলে, রামিম তুমি কোনো ঝামেলা করো না প্লিজ যদি আমার ভালো চাও__
আমি তখন বলি, তুমি যাই বল তুমি শুধু আমার তুমি আমার ছাড়া অন্য কারো হতে পারবে না কখনো না__
তান্নি তখন বলে, রামিম তুমি আমাকে সত্যি ভালোবেসে থাকলে কখনোই এরকম কিছু করবে না__ যাতে আমার আর আমার বাবার সম্মান টা নষ্ট হয়ে যায়__ যদি তুমি এরকম কিছু করো তাহলে তুমি আমার মরা মুখ দেখবে__
আমি তখন ওকে বলি, প্লিজ তান্নি তুমি এরকম করো না আমি তোমার পায়ে ধরে বলছি__ প্লিজ আমাকে এতো বড় শাস্তি দিও না প্লিজ আমি সহ্য করতে পারবো না__ আমি পারবো না তোমাকে ছাড়া থাকতে___
ও তখন কল কেটে দিল আমার কোনো কথা না শুনে___ আমি আবার কল করি , কিন্তু ওর ফোন সুইচস্টপ দেখায়__ আমি তখন ফোন টা এক আছাড় মেরে ভেঙ্গে দেই__ আর ফ্লোরে হাঁটু গেড়ে বসে কান্না করতে থাকি___
কাল তান্নির বিয়ে, কাল থেকে ও অন্য কারো হয়ে যাবে এটা আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না__ আমার খুব কষ্ট হচ্ছিলো, আমি তখন বাসা থেকে বের হয়ে যাই তান্নিকে নিয়ে আসবো বলে__ কিন্তু রাস্তায় বের হয়েই মনে পড়ে যায় ওর দেয়া কসমের কথা__ না আমি ওর মরা মুখ দেখতে পারবো না___
দোকানে গিয়ে ১০ প্যাকেট সিগারেট কিনে আবার বাসায় ফিরে আসি__ এসে রুমের দরজা লক করে একটার পর একটা সিগারেট ধরিয়ে ধুম টানতে থাকি___ বার বার ওর বলা কথা গুলো কানে বাজতে থাকে__ আর ওর সাথে কাটানো প্রতিটি মুহূর্ত চোখের সামনে ভেসে ওঠে__ আর আব্বুর কথা টা মনে পড়ে তখন আব্বু তাহলে ঠিকই বলেছিল__ টাকা পয়সার মায়ায় পরে ও আমাকে ভুলে গেলো__ ভুলে গেলো আমার ভালোবাসা___ না আর পারছি না খুব কষ্ট হচ্ছে , সিগারেটের ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে গেছে পুরো রুম__ একদম অন্ধকার হয়ে গেছে রুম ধোঁয়ায়__ দম বন্ধ হয়ে আসছিল আমার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল খুব__ তবুও সিগারেট খেয়েই যাচ্ছিলাম___ কখন যে শেষ রাতে চোখ দুটো বন্ধ হয়ে গেছে আর জানি না__
যখন ঘুম ভাঙ্গল তখন এক দৌড়ে নিচে নেমে আসলাম__ আম্মু ও রিমি আমাকে ধরে জিজ্ঞেস করলো, আমার কি হয়েছে সারা রাত ধরে কি করছি রুম থেকে এত ধোঁয়া বের হচ্ছিল কেন__ আরোও কত কি__
আমি শুধু বলছিলাম পাগলের মতো আম্মু আমার তান্নি কোথায়___! আমার তান্নিকে নিয়ে আসবো আমাকে যেতে হবে__ তান্নিকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না আম্মু__ বলে ফ্লোরে বসে পড়ি হাঁটু গেড়ে___ তারপর আম্মুর পায়ে ধরে কান্না করতে করতে বলি , আম্মু আমার তান্নি কে এনে দাও প্লিজ__
আব্বু আম্মু, রিমি, সবার চোখেই পানি টলমল করছে__ আমার কান্না দেখে সবার ই খুব কষ্ট হচ্ছে__ কারণ এর আগে কখনো আমি কোনো কিছুর জন্য এইভাবে কান্না করি নি__ শুধু তান্নির জন্য আমি এইরকম পাগলামি করেছি ঐ সময়___

“তাম্মির” চোখেও জল চলে আসলো, রামিমের, কষ্টের কাহিনী শুনে___ ওর লাইফস্টোরি টা সত্যিই অনেক কষ্টের , মনে মনে বলল ছেলে টা অনেক আঘাত পেয়েছে__ এর জন্য ই তো আজ এরকম , অতিরিক্ত আঘাত না পেলে মানুষ কখনো এরকম হয় না___ কিন্তু তান্নি আপু কেন এরকম করলো___! ( তান্নি হচ্ছে তাম্মির চাচাতো বোন, ওরা আলাদা বাসায় থাকে__) আর আমাকেই কেন আম্মু আব্বু তান্নি আপুর বয়ফ্রেন্ড এর সাথে বিয়ে দিলেন___ ওনারা কি সব জেনে শুনে এরকম করেছেন__ না কি জানেন না ___ আমাকে সত্যি টা জানতেই হবে__ আমার সাথে কেন এরকম হলো__
তারপর , বললো তারপর কি হলো__!
“রামিম” তারপর আম্মু বললো , বাবা তর তান্নির বিয়ে হয়ে গেছে এতক্ষণে__
এই কথা শুনে আমি জ্ঞান হারিয়ে নিচে পড়ে যাই___ আম্মু আব্বু আমাকে নিয়ে হসপিটাল ভর্তি করে__ ঐখানে যখন জ্ঞান ফিরে আসে তখন , হসপিটালের বেড থেকে উঠে বাইরে বের হয়ে আসি___ আম্মু আব্বু পিছন পিছন আসে আমার, আমি তখন মদের দোকানে ঢুকে এক বোতল মদ হাতে নিয়ে __ খেতে থাকি নিরলসভাবে , মদ খেয়ে ঐখানে ই পড়ে থাকি__ তারপর আম্মু আব্বু বাসায় নিয়ে আসে__

ওকে সত্যি অনেক ভালোবাসতাম কিন্তু ওই মিথ্যাবাদী টা আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করলো___ হা হা হা___ আজ আর কাউকে ভালোবাসি না এই আমি___ আজ আর কেউ আমার আপন না__ এই মদের বোতল আমার আপন___ আমার সুখ দুঃখের সাথী___
আমার লাইফ এটাই আমার লাইফ বলে , হুইস্কির বোতল টার দিকে তাকিয়ে মুখে একটা বিশ্রী সয়তানি হাসি দেয় সে___

“তাম্মি” বলে, আমি বুঝতে পারছি আপনার কষ্ট __ কিন্তু এইভাবে নিজেকে কষ্ট দেয়ার আর শেষ করে দেয়ার কোনো মানে হয় না__ আপনি নতুন করে শুরু করেন নিজের জীবনকে সুন্দর ভাবে গড়ে তুলুন___
অতীতের সব কিছু ভুলে গিয়ে নতুন ভাবে বাঁচতে শিখুন___

“রামিম” ভুলে যাবো কাকে এই মদের বোতল কে ___! হা হা হা__ আরে এইটা তো আমার দীর্ঘ ৫বছরের সঙ্গী___
আর তুই এত জ্ঞান দিচ্ছিস কেন আমাকে __ শুনতে চাইছিস বলছি__ আর একটা কথা বলবি না, ঘুমিয়ে পড় আর সকালে উঠে এই বাসা থেকে বিদায় হবি ওকে___

“তাম্মি” চলে তো যাবো কিন্তু প্লিজ আমাকে আরোও ২টা দিন সময় দেন__ বলেই তাম্মি, “রামিমের” পায়ে ধরে কান্না করে দিল___

“রামিম” এই কি করছিস ছাড় আমার পা ছাড়__
“তাম্মি” তাহলে বলেন আরোও দুটো দিন সময় দিবেন___! সবেমাত্র বিয়ে হয়েছে আর এখন ই বাসায় ফিরে গেলে লোকে কি বলবে__ আর আমার আম্মু আব্বু খুব কষ্ট পাবে___ প্লিজ একটু দয়া করুন__
“রামিম” কিছুক্ষণ চুপ করে ভেবে বললো, ওকে যা এখন ঘুমা___

তারপর , যে যার মতো ঘুমিয়ে পড়লো___

# ধন্যবাদ গল্প টা পড়ার জন্য__ ভালো লাগলে লাইক কমেন্ট করে সাথে থাকবেন__ নিজে ভালো থাকবেন অন্যকে ও ভালো রাখবেন__ মানুষের মনে কষ্ট দিবেন না কখনো __ এমন ও হতে পারে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ টা না ও পেতে পারেন___

চলবে__!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here