মায়ন্তী পর্ব -০৪

#মায়ন্তী
#রাইদাহ_উলফাত_আনিতা
#পর্ব_০৪

বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা,সন্ধ্যা পেরিয়ে মাঝ রাত মায়াঙ্ক এখনো বাসায় ফিরেনি।

সবাই ঘুমিয়ে পড়লেও কেন জানি মায়ন্তীর চোখে ঘুম নেই। বার বার বাসার গেটের দিকে নজর দিয়ে আসছে এই বুঝি মায়াঙ্ক ভাইয়া আসলো। কিন্তু না মায়াঙ্কের আসার কোন নাম নাই।

ধূর ভাইয়ার আবার কি হলো? বাসায় আসছেন না কেন? আমার উপর রাগ করে এভাবে বাসার বাইরে থাকতে হবে নাকি।

মায়ন্তী পায়চারী করছে আর গেটের কাছে যাচ্ছে। বাসায় সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। সারাদিনই সবাই প্রচুর খেটেছে রাত পোহালেই মীনাক্ষীর বৌ-ভাত। আয়ুষ্মান দের বাসায় যেতে হবে।

ঘড়ির কাটা ১ টা ছুঁয়েছে। মায়াঙ্কের অপেক্ষা করতে করতে মায়ন্তী বসার রুমেই সোফায় শুয়ে পড়েছে।

রাত ২ টা মায়াঙ্কের গাড়ি এসে বাড়ির সামনে থামলো। মায়াঙ্কের মুখটা একদম ফ্যাকাশে লাগছে। মনে হচ্ছে মায়াঙ্ক একটুও ভালো নেই। মায়াঙ্কের উপর দিয়ে কোন ঝড় বয়ে চলেছে।।

কোন শব্দ ছাড়াই মায়াঙ্ক বাইরে থেকে গেট খুলে ভিতরে আসে। নিজের রুমে যাবে ঠিক সেই সময় চোখ যায় বসার রুমের লাইট জ্বালানো। মায়াঙ্ক কিছু একটা ভেবে ধীরে ধীরে বসার রুমের ভিতরে গিয়ে দেখে মায়ন্তী গুটি মেরে সোফায় শুয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে।

মায়াঙ্ক কিছুটা মুসকি হেসে মায়ন্তীকে দেখে। বিরবির করে বলে তুই বড় হইলি না। মায়াঙ্ক মায়ন্তীর কাছে যায়। মায়ন্তীর ঘুমন্ত নিষ্পাপ চেহারার দিকে তাকিয়ে আছে মায়াঙ্ক। কী মায়াবী চেহারা। কোন কলঙ্কের ছাপ নেই চেহারায়। মায়ন্তীর মুখে লেগে থাকা চুল গুলো আলতো করে মায়াঙ্ক কানের পিঠে গুঁজে দিলো। মায়ন্তী কিছুটা নড়ে উঠলো।

মায়াঙ্ক আর কিছু না ভেবেই মায়ন্তী’কে কোলে তুলে নেয়। মায়ন্তীকে ওর রুমে নিয়ে গিয়ে শুইয়ে কাঁথা গায়ে দিয়ে দেয়। মায়াঙ্ক চলে যেতে নিলেই মায়াঙ্কের হাত চেপে ধরে মায়ন্তী। মায়াঙ্ক পিছনে না তাকিয়েই বলে মায়ন্তী ঘুমাসনি। হাত’টা ছাড় ঘুমিয়ে পর। অনেক রাত হয়েছে। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর যখন মায়ন্তীর কোন সারা পেল না মায়াঙ্ক তখন পিছন ঘুরে তাকিয়ে দেখে মায়ন্তী ঘুমন্ত অবস্থায় হাত ধরে রেখেছে আর বিরবির করে বলছে—

ভাইয়া কেন ছেড়ে গেছিলে আমাকে জানো আমি তোমাকে কত মিস করেছি। তুমি আমাকে না জানিয়েই বিদেশে চলে গেলে। তুমি আমাকে ছেড়ে যাওয়ার পর কেউ চকলেট,পুতুল কিছুই এনে দেয়নি। তুমি খুব খুব পঁচা হয়ে গেছ। তুমি আগে আমাকে একটুও বকতে না কত ভালোবাসতে। এখন একটুও ভালোবাসনা। পঁচা পঁচা পঁচা।

মায়ন্তী কি বলছে এসব ঘুমের ঘোরে। পাগল হয়ে গেছে নাকি? এই মেয়েকে নিয়ে আমি পারিনা। বয়স হয়ে গিয়েছে ঠিক আছে কিন্তু এখনো ওর জ্ঞান-বুদ্ধি হাঁটুর নিচে। বলেই আলতো করে মায়ন্তীর হাতটা নিজের হাত থেকে সরিয়ে দিয়ে মায়াঙ্ক রুম থেকে বেড়িয়ে নিজের রুমে চলে যায় ঘুমাতে।

সকাল ১০ টা–

হৈচৈ এ মেতে উঠেছে মায়ন্তী দের বাসা সবাই কত কাজ নিয়ে ব্যস্ত। সন্ধ্যায় মীনাক্ষী কে নিতে যাবে মীনাঙ্ক্ষীর আজ বৌ-ভাত বলে কথা। চারিদিকে কত আনন্দ উল্লাস এ সেজে উঠেছে দুই বাড়ি। ওদিকে আয়ুষ্মান দের বাসা এদিকে মায়ন্তীদের বাসা। মীনাক্ষীকে আজ নিয়ে আসা হবে। সবার মনে খুশীর ঝিলিক ছড়িয়ে পড়েছে। ছুটছে সবাই নানা কাজে। সকাল সকাল সব আত্মীয় স্বজনেরা এসে উপস্থিত হয়েছে।

এখন পর্যন্ত মায়ন্তী ঘুম থেকে উঠেনি। মায়াঙ্ক উঠেই কাজে লেগে পড়েছে। বার বার মায়ন্তী বলে ডাক দিচ্ছে। কেউ মায়াঙ্কের কথা শুনেও মায়ন্তীকে ডাকতে যাচ্ছেনা।

মায়ন্তীর প্রতি মায়াঙ্কের অযথা হুটহাট গায়ে হাত তোলার কারনেই কিছুটা রেগে আছে সবাই।

মায়ন্তী চোখ ডলতে ডলতে ঘুম থেকে উঠেছে সবে মাত্র। ঘড়ির কাটা ১০.৩০ ছুঁই ছুঁই। মায়ন্তী লাফিয়ে বিছানা থেকে উঠে এই যা এত বেলা হয়ে গেছে। আর আমি পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছি। আর ভাইয়া, ভাইয়া বাসায় এসেছেন তো?

মায়ন্তী আর কিছু না বলে দৌঁড়ে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়। কিছুক্ষণ বাদেই ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে আসে মায়ন্তী। আসতেই মায়ন্তী, মায়ন্তী বলে ঘরে ঢুকলো মায়ন্তীর মা রেহেনা বেগম।

কিরে এখন ঘুম থেকে উঠার সময় হইলো তোর। তুই জানিস না আজ তোর বোনের বৌ-ভাত অনুষ্ঠান ঐ বাড়িতে। কত কাজ পরে আছে বলতো। আর মায়াঙ্ক কতবার তোকে ডাকছে তোর শোনার নামই নেই।

কি বলো ভাইয়া আমাকে ডেকেছিলো। কখন ডেকেছে? বলেই কোন রকম গায়ে ওরনা জড়িয়ে দৌড়ে বাইরে যায় মায়ন্তী।

বাইরে এসে দেখে মায়াঙ্ক ডেকোরেশনের দিক সামলাচ্ছে। কোথায় কিভাবে কি করা হবে সেটা দেখছে। মায়ন্তীকে দেখার সাথেই মায়াঙ্ক বলল তুই শুধু বসে বসে খাওয়ার ধান্দায় থাকিস নাকি এদিকে আয় আর ঐযে ফুল গুলো রাখা আছে নিয়ে আয় যা তাড়াতাড়ি।

মায়ন্তী জ্বী ভাইয়া বলে দৌঁড়াতে যাবে পায়ে পা লাগিয়ে পরে যেতে ধরে তখনি মায়াঙ্ক দৌঁড়ে এসে মায়ন্তীকে ধরে ফেলে। মায়াঙ্কের এতটা কাছে কখনো মায়ন্তী আসেনি। মায়ন্তীর শ্বাস জোড়ে উঠা নামা করতে লাগলো। মায়াঙ্ক অপলক চোখে মায়ন্তীর দিকে তাকিয়ে আছে।

মায়ন্তীর মা রেহেনা বেগম বললেন মায়ন্তী তুই ঠিক আছিস?

তখনি মায়াঙ্ক মায়ন্তী’কে ছেড়ে দেয় মায়ন্তী আগের ন্যায় আসতে মাটিতে পরে যায়।

মায়াঙ্ক মায়ন্তীকে বলে তুই কি দেখে শুনেও চলতে পারিস না। এখনই কি হয়ে যেত। যা এখান থেকে কোন কাজ করতে হবেনা।

মায়ন্তী এক গাল ফুলিয়ে বসে আছে। আর বিরবির করছে যদি আমাকে পরে যেতেই না দিবে তাহলে আবার এভাবে ফেললো কেন? খাটাশ একটা।

রানু রহমান এসে মায়ন্তীকে তুললো। মা তোর কোথাও লাগেনিতো তুই ঠিক আছিস! আয় চল ঘরে চল তোকে কিছু করতে হবেনা আমি করছি।

মায়ন্তী কিছু না বলে মায়াঙ্কের দিকে তাকায়। মায়াঙ্ক রাগী চোখে মায়ন্তীর দিকে তাকিয়ে আছে। মায়ন্তী এরকম দেখে বেশ ভয় পেয়ে যায়। আর এক মুহুর্ত না দাঁড়িয়ে ভিতরে চলে যায়।

দেখতে দেখতে সন্ধ্যা হয়ে এলো। এখন মীনাক্ষীর শশুর বাসায় যাওয়ার জন্য সবাই বেড়বে।

মায়াঙ্ক গাড়িতে ড্রাইভিং সিটে বসে একেরপর এক হর্ণ বাজিয়ে যাচ্ছে। সবাই রেডি হয়ে এসে গাড়িতে বসে আছে মায়ন্তীর আসার এখনো নাম নেই। রানু রহমান মায়াঙ্ককে শান্ত হতে বলে। যে দ্বারা আমি ওকে নিয়ে আসি।

তখনি মায়াঙ্ক বলে দাঁড়াও মা আমি নিয়ে আসছি। ওর সাজতে এত সময় লাগে? ও কি বিয়ে করতে যাচ্ছে যে এত সময় লাগছে? বলেই মায়াঙ্ক বেড়িয়ে বাড়ির ভিতরে যায় মায়ন্তীকে নিতে। মায়ন্তীকে দেখতে পায় মায়ন্তীর রুমে মায়ন্তী মাথার চুল বাঁধবে বাঁধতে পারছেনা।

মায়াঙ্ক গিয়ে দেখে —-

মায়ন্তী পড়েছে মায়াঙ্কের দেওয়া নীল গাউন । গলায় পাথরের চিক হার,ঠোঁটে হালকা গোলাপি লিপস্টিক। হাতে ব্যাচ। গাউনের সাথে চুল খোঁপায় মানাবে বলে সমানে চেষ্টা করে যাচ্ছে খোঁপা করার জন্য।কিন্তু পারছেনা।

মায়াঙ্ক চুপ করে দাঁড়িয়ে অপলক চোখে মায়ন্তীর দিকে তাকিয়ে আছে। মুখে কোন কথা বলছেনা। এখনি যে মায়াঙ্ক রেগে মায়ন্তীকে নিতে এসেছিল সে যেন চুপসে গেছে।

হঠাৎ মায়ন্তী আয়নায় দেখে দরজায় মায়াঙ্ক দাঁড়িয়ে আছে। মায়াঙ্কের পড়নে নীল কোর্ট প্যান্ট। মায়াঙ্কের ভর্সা চেহারায় নীল রঙটা ফুটে উঠেছে সাথে ওর মাথার চুল গুলো বাতাসে উড়ছে। মায়ন্তী তাকিয়ে আছে মায়াঙ্কের দিকে।

মায়ন্তী বলে উঠলো ভাইয়া কখন এলেন আপনি?

বলতেই মায়াঙ্ক চমকে উঠে উওর দিলো তোর এত সময় লাগে সাজতে নাকি। এদিকে আয়তো এদিকে আয় বলেই নিজে এসে মায়ন্তীকে ঘুরিয়ে ওর কোমর সমান চুল গুলো হাতে প্যাচাতে লাগলো। সুন্দর করে খোঁপা বানিয়ে নিজের পকেট থেকে সুন্দর একটা পাথরের কাটা মাথায় দিয়ে দিলো। আয়নায় মায়ন্তী মায়াঙ্কে দেখছে। মায়াঙ্ক ও মায়ন্তীকে দেখছে।

মায়াঙ্ক বলে উঠলো চল এবার এত সেজেছিস মনে হয় বিয়ে করতে যাসছিস যত্তসব।

ভাইয়া আমি কই সেজেছি শুধুতো—

হয়েছে এবার থাম চল এখন দেরি হয়ে গেছে।

হ্যাঁ যাচ্ছি ভাইয়া। আচ্ছা ভাইয়া মাথার কাটা টা আপনি কোথায় পেলেন? এটাতো আমার নয়।

মায়ন্তী তুই আসবি কিনা তোকে রেখে যাবো?

না না ভাইয়া আমি যাচ্ছি বলেই দু’জনে বেরিয়ে আসলো। মায়াঙ্ক ড্রাইভিং সিটে বসেছে মায়ন্তী ওর পাশে। মায়াঙ্ক সমানে সামনে তাকিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে। মায়ন্তী মায়াঙ্কের দিকে তাকিয়ে আছে।

রাত ৯ টা নাগাদ মীনাক্ষী’র শ্বশুর বাড়িতে পৌঁছে যায় মায়ন্তীরা সবাই। ।

ওদের রিসিভ করতে যায় আয়ুষ্মান ও রাজিব। গাড়ি থেকে নেমে সবাই আয়ুষ্মান ও রাজিবের সাথে কথা বলে ভিতরে যাবে তাতেই মায়ন্তীর গাউন পায়ে লেগে মায়ন্তী পরে যেতে নেয় তখনই রাজিব এসে মায়ন্তীকে ধরে ফেলে। মায়ন্তীর কোমরে হাত দেয়।

মায়াঙ্ক রেগেমেগে চিল্লিয়ে উঠে রাজিববব————

চলবে……………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here