#মায়ন্তী
#রাইদাহ_উলফাত_আনিতা
#পর্ব_০৩
মায়াঙ্ক মায়ন্তীর রুম থেকে বেড়িয়ে রেগেমেগে বাড়ির বাইরে যাওয়ার জন্য বের হয় তখন মায়াঙ্কের মা রানু রহমান বললেন-
মায়াঙ্ক দ্বারা! তুই এভাবে মায়ন্তী’কে কেন টেনে টেনে নিয়ে এলি? আর তুই এসেছিস থেকে ওর উপর যা নয় তাই করে যাচ্ছিস! তুই এতদিন পর এসেছিস বলে তোর বাবা আর মায়ন্তীর বাবা কিছুই বলছেন না। আগের বারের কথা ভুলে যাসনা যেন।
তুই নিজেই বলছিস মায়ন্তী বড় হয়ে গেছে আবার তুই নিজেই একজন এডাল্ট মেয়ের গায়ে সমানে হাত তুলে যাচ্ছিস। সমস্যা কি তোর? কি করেছে আজ মায়ন্তী? তুই অযথাই সবসময়ই ওর গায়ে হাত তুলিস।
মা আমি কখনো ওকে অযথা মারিনি। এর বেশি আমি তোমাকে বলতেও পারবো না।
বলেই মায়াঙ্ক দ্রুত পায়ে হেটে বাড়ির বাইরে যেয়ে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে গেল।
রানু রহমান পিছন থেকে মায়াঙ্ক,মায়াঙ্ক শোন! মায়াঙ্ক’কে এতবার ডাকার পরে-ও মায়াঙ্ক শুনলো না।
এদিকে মায়ন্তী সমানে চেষ্টা করে যাচ্ছে নিজের হাতের বাঁধন খোলার জন্য। মায়ন্তীর মুখ বাঁধা নেই কেন জানিনা মায়ন্তীর ইচ্ছে করলো না কাউকে ডাকতে। একা একাই চেষ্টা করতে লাগলো। অনবরত চোখের পানি গড়িয়ে পড়তে লাগলো মায়ন্তীর।
মায়ন্তী ভাবনায় তলিয়ে গেল—-
“আজ থেকে ৪ বছর আগে”
মীনাক্ষী এই মীনাক্ষী কই’রে বেড়িয়ে আয় আমি এসেছি।
আমি মীনাক্ষী আপু আমাদের রুমে বসে দু’জনে লুডু খেলতেছি। হঠাৎ বাইরে থেকে কারো কন্ঠ শুনতে পেলাম ।
আপু এই আপু মায়াঙ্ক ভাইয়ার কন্ঠ না। ভাইয়া এসেছে আমাদের বাসায়। ধূর মায়ন্তী কি যা তা বলিস। মায়াঙ্ক তো শহরে ওদের বাসায়। আমাদের এই মহশালে ও আসবে কেন? আপু আমি সিউর ওটা মায়াঙ্ক ভাইয়ারই কন্ঠ।
আমি আপুর আগে লাফ দিয়ে উঠে বাইরে আসলাম। দেখলাম মায়াঙ্ক ভাইয়া বাবা-র সাথে বসে কথা বলছে।
ভাইয়া তুমি এসেছ? কখন এলে আমার জন্য চকলেট নিয়ে এসেছ আর আমার পুতুল ?
কিরে মায়ন্তী কেমন আছিস? পিচ্চি বুড়ি পিচ্চিই থেকে গেলি দেখছি। এই নে তোর চকলেট আর এই যে তোর পুতুল। এবার খুশী তো!
ভাইয়া আলহামদুলিল্লাহ আমি ভালো আছি তুমি কেমন আছো? তোমাকে অনেক ভালোবাসি ভাইয়া।
মায়ন্তী চুপ সবসময়ই পাকনামো করিস না যাহহ এখান থেকে। মীনাক্ষী আপু ধমক দিয়ে বললো আমাকে।
আপু আমি কি করলাম? জানো ভাইয়া আমার জন্য এই দেখো এত্তো গুলো চকলেট নিয়ে এসেছে। আর দেখো পুতুল।
মায়ন্তী তুই!!
আহহ মীনাক্ষী কি শুরু করেছিস কি তুই? বাচ্চা মানুষ ও আমাকে ফোন করে বলেছিল ভাইয়া আমার জন্য চকলেট ও পুতুল নিয়ে আসবে প্লিজ। ওর তো এ-সবেই পছন্দের । আমি ভালোবেসেই ওর জন্য নিয়ে এসেছি।
মায়াঙ্ক তুই সবসময় ওকে রায় দিস কেন বলতো? আমি কিছু একটু করলেই আমাকে পৃথিবীর যত রাগ আছে সব দেখিয়ে দিস। আর ওকে।
মীনাক্ষী তুই কি ছোট বাচ্চা হইলি নাকি? আজব তুই। মায়ন্তীর বয়সই বা কত হয়েছে। কি বুঝে ও এসব।
বাবা বলল আচ্ছা তোমরা কথা বলো আমি আসছি বলেই বাবা বেড়িয়ে গেল । মা এসে ভাইয়ার সাথে কথা বললো ভাইয়া মাকে সালাম জানাল ।
মা ভাইয়াকে ভিতরে নিয়ে গেল । ভাইয়া খুব কমই আমাদের বাসায় আসে। মা-ভাইয়া,আপু ওরা একে-অপরের সাথে কথা বলছে।
আমি চকলেট,পুতুল পেয়ে খুব খুশী হয়ে নিজের রুমে চলে গেলাম।
মায়াঙ্ক তুই আসবি আমাকে একবার ও তো বললিনা।
দেখ মীনাক্ষী তোকে সবসময় বলে আমাকে আসতে হবে এমন কোন মানে আছে? আমি কাকু-কাকীমার কাছে এসেছি।
মায়াঙ্ক আমার কথা’টা রাখলিনা।
কি হয়েছে আপু ভাইয়া কি কথা রাখেনি তোমার? ভাইয়া এই ভাইয়া কি হয়েছে আপুর কোন কথা রাখনি তুমি? তুমিও পঁচা ছেলেদের মতো হয়ে গেছ। মানুষের কথা শুনোনা।
আরে মায়ন্তী কখন এলি আয় এদিকে আয় বস। তা তোর পুতুল আর চকলেট গুলো ভালো লেগেছে তো?
অনেক ভালো লেগেছে ভাইয়া। জানো পুতুল টা আমাকে দেখতেই থাকে যেন একটা পিচ্চিপরী কে দেখছে। জানো আমার অনেক লজ্জা করে পুতুল’কে দেখতে।
মায়ন্তী তোর ছেলে মানুষি গেল না। তুই ভাইয়াকে এসব কি বলছিস। পুতুল তোকে পিচ্চিপরী ভাবে এইজন্যই দেখছে?
তাই নাকি মায়ন্তী সত্যি তো তুই একটা পিচ্চিপরী আমার মিষ্টিপরী।
সত্যি ভাইয়া। ভালোবাসি,ভালোবাসি ভাইয়া।
মীনাক্ষী আপু রেগে মায়ন্তী তুই যাবি এখান থেকে। ভাইয়া আর আমি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলছি যাহ এখান থেকে।
————————————-
এসব ভাবতে ভাবতে মায়ন্তীর ভাবনার ছেদ ঘটলো মায়াঙ্কের মায়ের ডাকে। মুলত মায়ন্তীর যে-কোন খারাপ লাগা, ভালো লাগার একমাত্র সাথী মায়াঙ্কের মা রানু রহমান । নিজের মায়ের সাথে কমই সখ্যতা মায়ন্তীর।
রানু রহমান বাইরে থেকে দরজা খুলে ভিতরে এসে দেখে মায়ন্তী হাত-পা বাঁধা অবস্থায় বিছানায় পড়ে আছে।
মায়ন্তীইই তুই ঠিক আছিস তো? এসব কি মায়াঙ্ক এসব কি করেছে? বলতে বলতে আমার হাত-পা খুলে দিলো কাকীমা।
আমি কাকীমার গলা জড়িয়ে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলাম। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বললাম কাকীমা ভাইয়া আমাকে এখন আর ছোট বেলার মতো ভালোবাসেনা। আগে ভাইয়া আমাকে কত ভালোবাসতো এখন একটুও বাসেনা। আগে আমাকে কেউ বকলে ভাইয়া আমাকে আগলে নিতো। এমনকি আপুর বকা খাওয়া থেকেও ভাইয়া আমাকে বাঁচাতো। এখন আমাকে শুধু বকে,মা/রে আমাকে একটুও ভালোবাসেনা। আমার ভাইয়া’কে খুব ভয় করে।
আরে পাগলী শান্ত হয়ে নে। কি হয়েছে বলতো? মায়াঙ্ক এভাবে কেন তোকে নিয়ে এলো? আর তুই সকাল সকাল কেথায় গিয়েছিলি? মায়াঙ্ক আবার এভাবেই বা বেঁধে রেখেছে কেন?
মায়ন্তী ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে সকাল বেলার সব কথাই বললো———————————–!!
সব শুনে তারপর রানু রহমান বললো মায়ন্তী শোন আমি তোকে একটাই কথা বলবো–
আমরা তারই ওপর রাগ, অভিমান এবং অধিকার খাটাই,
যে মানুষ আমাদের প্রিয় মানুষ!!
আচ্ছা তোর কোথাও লাগেনিতো। তুই ঠিক আছিস?
কাকীমনি ভাইয়ার কি আমি প্রিয় মানুষ যে উনি আমাকে রাগ দেখান?
তোকে এতসব বুঝতে হবেনা যা ফ্রেশ হয়ে নে সারাদিন তো কিছু খেলিনা। আমি খাবার নিয়ে আসতেছি। ফ্রেশ হয়ে নে।
আচ্ছা! আর কিন্তু আমি তোমার ছেলের সাথে কথা বলবো না। সামনেও যাবো না বলে দিলাম।
আচ্ছা বাবা বলিস না। যাতো অনেক কাজ আছে আমার। মীনাক্ষীর শশুর বাড়িতে মিষ্টান্ন পাঠাতে হবে। কাল বৌ-ভাত অনেক কাজ পড়ে আছে একটু বাদেই আত্নীয়স্বজন আসা শুরু হয়ে যাবে। যা এখন তুই আমি আসছি। বলে কাকীমা চলে গেলেন।
আমি বসে বসে মায়াঙ্ক ভাইয়াকে বকে যাচ্ছি খাটাশ, দাঁড় কাক কোথাকার। আমাকে মারেন তাইনা। আজ আপনার একদিন তো আমার একদিন হুঁহ।
বলে মায়ন্তী ওয়াশরুমে ঢুকে গেল।
এদিকে মায়াঙ্ক নদীর পাড়ে নির্জন এলাকায় এসে গাড়িতে হেলান দিয়ে দূর আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে গুনগুন করে গান গাইছে–
~আমার সকল অভিযোগে তুমি~
তোমার মিষ্টি হাসিটা কি আমি?
~আমার না বলা কথার মাঝে~
তোমার গানের কত সূর ভাসে
~তোমায় নিয়ে আমার লেখা গানে~
অযথা কত স্বপ্ন বোনা আছে!!
~আমার হাতের আঙ্গুলের ভাজে
“তোমাকে নিয়ে কত কাব্য রটে”
~ভুলিনিতো আমি তোমার মুখের হাসি~
আমার গাওয়া গানে তোমাকে ভালোবাসি!!
চলবে————–!!