মায়ন্তী পর্ব -০২

#মায়ন্তী
#রাইদাহ_উলফাত_আনিতা
#পর্বঃ০২

মায়াঙ্ক ভাইয়া বাঁকা হেসে উওর দিলেন দেখা যাক কেমন হয় এই পেত্নী টা।

আমাকে নিয়ে সবাই মশকরা শুরু করেছেন । আমি পেত্নী ভাইয়া? ঠিক আছে আমি আর বিয়েতে থাকবোই না গেলাম।

আরে মায়ন্তী বোকা,তুই বাচ্চাদের মতো করছিস কেন?মীনাক্ষী আপু বললো। সবাই ফাজলামো করছে।

হ্যাঁ সবাইতো আমার সাথে মজাই করে। মজা করে ধমকায়। মজা করে ঠাসস করে আমার গালটাও ভুলিয়ে দেয় তাইনা।

আমার কথা শুনে এখানে উপস্থিত সবাই অট্ট হাসিতে মেতে উল্টো।

মায়াঙ্ক ভাইয়া রেগেমেগে আমার দিকে তাকালেন। এতক্ষণ কি হাসি খুশীতে কথা বললেন যেই আমি কিছু বলতে গেলাম ওমনি দেখাতে চলে এলেন ওনার গোমরা মুখ। খাটাশ একটা।

আচ্ছা! আয়ুষ্মান ও মিনাক্ষী এখানে থাক তোরা সবাই। আমার অনেক কাজ আছে সেরে আসি। বলেই মায়াঙ্ক ভাইয়া চলে গেলেন ।

তবে উনি গোলাপি কালারের পাঞ্জাবি পড়েছেন। ভাইয়ার ভর্সা চেহারায় গোলাপি রঙটা ফুটে উঠেছে। যেন মনে হচ্ছে গোলাপি নেশায় মেতে উঠেছেন।

আমরা হাসি,আড্ডা মজায় মীনাক্ষী আপু ও আয়ুষ্মান ভাইয়ার সাথে সময় কাটাচ্ছি। মায়াঙ্ক ভাইয়া সমানে এদিক-ওদিকে ছুটছেন। কাজে খুবই ব্যস্ত। তবে দূরে দাঁড়িয়ে একটা মেয়ে সমানে মায়াঙ্ক ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছ। মনে হচ্ছে যেন চোখ দিয়ে গিলে ফেলবে। আমার ইচ্ছে করছে ধরে ওর চুল গুলো সব ছিঁড়ে দিই। পেত্নী মেয়ে কোথাকার। ছেলে মানুষ আর দেখেনি মনে হয় কখনো। আমার ভাইয়াকেই দেখতে হবে।

কিছুক্ষণ বাদেই কাজী সাহেব এসে বিবাহের কাজ সম্পন্ন করলেন। এবার বিদায় নেওয়ার পালা। এতদিন মা-বাবার পরে আপুই আমাকে সামলে রাখত,আমার দ্বিতীয় বটবৃক্ষ আপুই । আমার সব ভুল-ভ্রান্তির সমাধান ,আদর যত্ন আপুই করতো, আজ আপু চলে যাচ্ছে। ভীষণ মন খারাপ লাগছে। আপু মা-বাবা,কাকু-কাকিমার সাথে কথা বললেন। দূরে দাঁড়িয়ে মায়াঙ্ক ভাইয়া ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আছেন।

আপু ভাইয়ার কাছে গেল-মায়াঙ্ক! হ্যাঁ বল মীনাক্ষী। আজতো চলে যাচ্ছি। এবার তো একটু মন খুলে কথা বল আমার সাথে। মায়ন্তী একটু ছেলে মানুষি করে ওকে তোর হাতে তুলে দিলাম।

তোকে কি বলবো বলতো? যেখানেই যাসনা কেন চাওয়া একটাই ভালো থাকিস। আর মায়ন্তীকে নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না। তোর বোন ছোট বাচ্চা না।

বলে মায়াঙ্ক ভাইয়া আপুর কাছ থেকে চলে আসলেন। আপুর কিছুটা মন খারাপ হয়ে গেল।

মীনাক্ষী আপু ও আয়ুষ্মান ভাইয়ার বিদায় নেওয়া শেষে আয়ুষ্মান ভাইয়া ও রাজিব ভাইয়া আমাকে আপুর সাথে যেতে বলে আপুও খুব করে আমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য বায়না ধরে মা-বাবা,কাকু-কাকিমা অবশেষে রাজি হয়েছেন।

আমারও খুব ইচ্ছে আমার আপুর সাথে কুটুম বাড়িতে আমিই যাবো । আমিও তৈরি হয়ে আপুদের গাড়িতে উঠতে যাবো। হাত বাড়িয়েছি গাড়ির দরজা খুলতে হঠাৎ কেউ এসে আমার হাত ধরে ফেললো।

তাকিয়ে দেখি মায়াঙ্ক ভাইয়া। রক্তচক্ষু নিয়ে আমার দিকে চেয়ে আছেন। আমি অবাক চোখে তাকিয়ে আছি। মা-বাবা,কাকিমা-কাকু বললেন কি হয়েছে মায়াঙ্ক। মায়ন্তীকে মীনাক্ষী নিয়ে যাচ্ছে। বৌ ভাতে গিয়ে আমরা নিয়ে আসবো।

আয়ুষ্মান ভাইয়া বললেন মায়াঙ্ক কি হলো? দেরি হয়ে যাচ্ছে ভাই এবার তো যেতে দে। মায়ন্তীর কিছু হবেনা কথা দিলাম। মীনাক্ষী আপুও বললো মায়াঙ্ক কি হলো তোর।

কাকিমা তোমার মেয়ে কি ছোট? মীনাক্ষী তোর বোন কি ছোটোটি আছে এখনো এত বড় মেয়েকে তুই তোর বিয়ের দিন তোর নতুন শশুর বাড়িতে নিয়ে যেতে চাচ্ছিস? উওর দে আমার কথার? কিছুটা ধমকিয়ে।

পাশ থেকে রাজিব ভাইয়া বলে উঠলেন-মায়াঙ্ক ও গেলে সমস্যা কি?

রাজিব চুপ তোর আর একটা কথা শুনতে চাইনা। বলে মীনাক্ষী আপুদের গাড়ির দরজা জোরে চাপিয়ে দিলেন।

মায়াঙ্ক কোন সমস্যা হবেনা যেতে দে মায়ন্তী কে কাকু মনি ভাইয়াকে বললেন।

বাবা বৌ,-ভাত পরশুদিন আর পাশেই আয়ুষদের বাসা প্রয়োজন হলে আমি মায়ন্তীকে নিয়ে ঘুরে আসবো।

আমার ব্যপারটা ভীষন খারাপ লাগলো। আমি দৌঁড়ে নিজের রুমে চলে এলাম। পিছন থেকে মা-কাকিমা কয়েকবার ডাকলেন। আমার শুনতে ইচ্ছে হলোনা। কি হতো আমাকে আপুর সাথে যেতে দিলে। শুধু শুধু আমার উপরই এমন,আমার সব কাজের উপরেই ওনার খবরদারী,মেজাজ দেখানো।

কিছুক্ষণ বাদেই গাড়ি গেট পেরিয়ে চলে গেলো। আমার ভীষণ খারাপ লাগছে।

ধূর ভাল্লাগেনা যত্তসব । বলেই ওয়াশরুমে ঢুকে গেলাম। নিজে নিজেই বলতে লাগলাম ভাইয়ার সামনে আর যাবোই না কখনো কথাও বলব না। ফ্রেশ হওয়া শেষে প্রায় আধাঘন্টা বাদে ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে দেখি মায়াঙ্ক ভাইয়া আমার রুমে।

এই যাহ ভাইয়া এখানে। আ আআমাকে আবার মা/রতে এসেছেন নাতো।

আ আ আপনি এখানে ভাইয়া। আমি আবার কি করলাম? আমিতো যেতে চায়নি। আপুই তো!

ভাইয়া একপা-দুপা করে আমার দিকে এগিয়ে আসছেন। আমি ভয় পেয়ে কিছুটা পিছিয়ে যাচ্ছি। প্রায় ভাইয়া আমার থেকে ১ হাত দূরে দাঁড়িয়ে। আমার ভয়ে হাত-পা কাঁপতে শুরু করে দিয়েছে। এই মানুষ টাকে যে কেন আমার এত ভয় করে। আমি চোখ বন্ধ করে নেই। ভাইয়া বলে উঠলেন-

চুপ বোকা আর একটা কথা বলবিতো ঠাস করে চর মেরে দিবো চুপচাপ খেয়ে ঘুমিয়ে পর । এত বড় হয়েছিস কোন কান্ডজ্ঞান নেই তোর। বিয়ে দিলেই বাচ্চার মা হয়ে যাবি। বলেই ঠাস করে দরজা লাগিয়ে চলে গেল।

আমি হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। আমি অবাক চোখে তাকিয়ে আছি। উনি এলেন এই বা কেন আবার চলেই বা গেলেন কেন? কি সব বলে গেলেন?

এদিকে মায়াঙ্ক ভাইয়া নিজের রুমে ফ্রেশ হ’য়ে ঘুমানোর জন্য তৈরি হচ্ছেন কাকী মনি রুমে ঢুকলেন-

মায়াঙ্ক ঘুমিয়েছিস? আসবো। মা তুমি এই সময় কিছু বলবে? আসো।

আচ্ছা শোন রাগ করিস না মায়ন্তী কে যেতে দিলিনা কেন গেলেই বা কি হতো? মীনাক্ষী আছে,আয়ুষ্মান ওর বাসার সবাই তো আছেন ওরা দেখে রাখতো মায়ন্তী কে সমস্যাতো হতো না।

মা তুমি আর এই ব্যপার নিয়ে আমাকে কিছু বলতে এসোনা। তুমি ভালো করেই জানো আমি কি কারণে মায়ন্তীকে যেতে দিলাম না। রাজিব– থাক তোমাকে এসব শুনতে হবেনা। অনেক রাত হয়েছে ঘুমাতে যাও আমিও ঘুমাবো।

মায়ন্তী ঘুমিয়েছে । গভীর ঘুমে ঘুমিয়ে আছে। এদিকে কেউ আসতে দরজা খুলে ধীর পায়ে মায়ন্তীর পাশে এসে বসলো। মাথায় হাত দিয়ে বলতে লাগলো স্যরিরে মন খারাপ করেছিস জানি। তবে এছাড়া আমার কিছুই করার ছিলোনা। তুই যদি যেতিস আমি তোকে হারিয়ে ফেলতাম। বলেই কেউ মায়ন্তীর কপালে চুমু একে দিয়ে চলে গেলো। মায়ন্তী বুঝতেও পারলোনা।

সকালবেলা সারা বাড়িতে চেঁচামেচির আওয়াজ শুনে মায়াঙ্কের ঘুম ভাঙে। ঘুম থেকে উঠে মায়াঙ্ক বাইরে যায়। সাথে সাথে মায়ন্তীর মা মায়াঙ্কের কাছে আসেন-

বাবা মায়াঙ্ক মায়ন্তী কে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। কাল রাতেই দেখে এসেছি ও ঘুমিয়ে আছে। সকালবেলা ওকে ডাকতে গিয়ে দেখি ওর দরজা খোলা। ওতো এত সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেনা। গোটা বাড়ি তন্নতন্ন করে খুঁজলাম আমরা। বাইরে থেকেও ওর বাবা ও ভাইজান খুঁজে এলেন। বলেই কান্না শুরু করে দিলেন।

আরে কাকীমা তুমি কান্না করতেছ কেন? এ আর নতুন কী? তোমার মেয়েকে চিনোনা তুমি? বাসায় কেউ কিছু বললেই মন খারাপ হলেই উধাও হয়ে যায়। সবার এটেনশন পাওয়া হচ্ছে ওর স্বভাব। আসলে ও খুব বড় হয়ে গেছে। মানুসিক রোগীদের মতো আচরণ করে ওকে ডক্টর দেখানো উচিত। তোমরা যে যার কাজে যাও। মীনাক্ষীর বাসায় কাল যেতে হবে সব কাজ সেরে নাও।

এদিকে মায়ন্তী নদীর পাড়ে এসে একা একাই বসে আছে। পাথর নিচ্ছে আর নদীতে ছুঁড়ে মারছে বিরবির করে বলছে যাবোনা বাড়ি আমি, কেউ আমাকে ভালোবাসেনা,আমার কথা কেউ ভাবেনা । বলতে বলতে পাশে একদল ছেলে আসে তাঁদের মধ্যে একজন বলে আপুনি এত সকাল বেলা যে কি হয়েছে? মন খারাপ? মন ভালো করে দিতে হবে বুঝি?

মায়ন্তী ঘুরে তাকিয়ে দেখে একদল ছেলে । তাঁদের মধ্যে যে কেউ বাজে কথা বলছে ও সেটা বুঝতে পেরেছে। ততক্ষনাৎ মায়ন্তী উঠে দাঁড়িয়ে বাসার উদ্দেশ্যে হাঁটা দেয়। পিছে পিছে ছেলেগুলো মায়ন্তীকে টোন করতে করতে ফলো করে। ভোর বেলা রাস্তা ঘাট ফাঁকা কেউ কোথাও নেই। মায়ন্তী জোড়ে জোড়ে হাঁটছে। মায়ন্তী যত জোড়ে হাঁটছে ছেলেগুলোও তেমনই গতি বেগে হাঁটছে মায়ন্তী একসময় দৌঁড় দিতে যাতে তখনি একটা সাদা কার এসে মায়ন্তীর সামনে এসে থামে একটুর জন্য ধাক্কা লাগেনি মায়ন্তীর।

মায়ন্তী গাড়ির ভিতরে থাকা লোকটির দিকে তাকিয়ে আছে। লুকিং গ্লাস নামিয়ে কিরে মায়ন্তী কেমন লাগছে এখন তোর মন খারাপ ভালো হয়ে গেলো বুঝি? এদিকে কোথায় যাচ্ছিস। যানা নদীর পাড়ে। বলেই গাড়ি থেকে নামলো।

ভা ভা ভাইয়া আপনি এখানে। মায়াঙ্ক মায়ন্তীর সাথে কথা না বলেই মায়ন্তীর পিছনে থাকা ছেলেগুলোর উদ্দেশ্যে নিজের শার্টের হাতা ফোল্ড করতে লাগলেন। কি হয়েছে ভাইয়েরা? ভালো আছেন তো? নাকি ভালো থাকার ব্যবস্থা করতে হবে।

ছেলে গুলোর মধ্যে একজন বলে উঠলো কে রে তুই ভালো চাস তো এখান থেকে যা। বলা দেরি নেই মায়াঙ্ক ভাইয়া ছেলেটির মুখে একটা ঘুষি মেরে দিলেন। ছেলেটি দূরে গিয়ে পড়ে গেল। নাক ফেটে রক্ত ঝরতে লাগলো। বাকি ছেলে গুলো এমন দেখে ছেলেটিকে তুলে পালিয়ে গেলো।

মায়াঙ্ক ভাইয়ার চোখ মুখ রাগে লাল হয়ে আছে। আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। ভা ভা ভাইয়া আ আ আমি আসলে। বলার আগেই ঠাসস করে একটা চর মারলেন। জোড়ে হাত চেপে ধরে আমার পিছনে নিয়ে গিয়ে কোমড়ে চেপে ধরলেন। এক হাত দিয়ে আমার মুখ চেপে ধরলেন আর বললেন তোর খুব সাহস হয়ে গেছে তাইনা। বাসায় চল আগে বলেই ধাক্কা দিয়ে গাড়ির ভিতরে বসতে বললেন।

আমি গাড়িতে বসতেই নিজেও গাড়িতে বসে আমাকে নিজেই সিটবেল্ড লাগিয়ে দিলেন। খুব দ্রুত গাড়ি চালিয়ে বাসায় সামনে এসে থামলেন।

গাড়ি থেকে নামতেই এদিকে এসে গাড়ির দরজা খুলে আমার হাত ধরে টেনে গাড়ি থেকে নামালেন। জোড় করে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন বাড়ির ভিতরে মা-কাকীমা এসে বলছেন মায়াঙ্ক দাঁড়াও কোথায় গেছিল মায়ন্তী।

ভাইয়া কারো কথা না শুনে সোজা আমাকে আমার রুমে নিয়ে গেলেন। আমার হাত ছেড়ে দিয়ে ঠাসস করে দরজা লাগিয়ে দিলেন। বাইরে থেকে কাকীমা বার বার ডেকে যাচ্ছেন। ভাইয়া জোড়ে চিল্লিয়ে বললেন মা তোমরা এখন যাও তোমাদের সাথে আমি পড়ে কথা বলছি।

আমি ভয়ে ভয়ে বললাম ভা ভাইয়া আমি- বলতেই আবারও ঠাস করে চর মারলেন। আমার হাত দু’টো আমার পিছনে কোমড়ে চেপে ধরে নিজের পকেট থেকে দড়ি বের করে বেঁধে দিলেন। দিয়েই থাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দিলেন। পা দু’টো ও বেঁধে দিলেন। বললেন এটাই তোর শাস্তি দেখবো আর তুই-কিভাবে বাড়ির বাইরে বের হোস। নিজে রুম থেকে বেড়িয়ে দরজা বাইরে থেকে লাগিয়ে দিলেন।

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here