#মায়ন্তী
#রাইদাহ_উলফাত_আনিতা
#পর্বঃ_০৫
মায়াঙ্ক রেগেমেগে চিল্লিয়ে উঠে রাজিববব–
রাজিব মায়ন্তী’কে জড়িয়ে আছে। ওকে পড়ে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচিয়েছে । মায়ন্তী পড়ে যাওয়ার ভয়ে রাজিবের হাত খামচে ধরে।
তখনি মায়াঙ্ক রাজিব চলে চিল্লিয়ে উঠে। মায়াঙ্ক দ্রুত পায়ে রাজিবের দিকে এগিয়ে আসছে। মায়ম্তী মায়াঙ্কের দিকে তাকায় ও ভীষণ রেগে গেছে।
মায়ন্তীর এক হাত ধরে হুট করে টান দিয়ে রাজিবের কাছ থেকে মায়ন্তীকে সরিয়ে নেয় মায়াঙ্ক। রাগী চোখে রাজিবকে বলে তোকে আমি পরে দেখে নিবো।
বলেই মায়ন্তীর হাত জোড় দিয়ে চেপে ধরে টেনে টেনে ভিতরে নিয়ে যেতে থাকে। মায়ন্তী আহ ভাইয়া লাগছে আমার। হাত ছাড়ুন। যাচ্ছিতো আমি। মায়াঙ্ক কোন কথা না বলে মায়ন্তী’কে নিয়ে ভিতরে যায়।
মীনাক্ষী খুব সুন্দর করে সেজেছে। হেঁসে হেঁসে বাড়ির সবার সাথে কথা বলছে। বিয়ের পর তাঁর শশুর বাড়িত তাঁর বাবার বাসার মানুষেরা এসেছে। প্রতিটা মেয়ের কাছে এটা খুশির ব্যপার
তখনি মীনাক্ষীর চোখ যায় গেটের দিকে। দেখে মায়ন্তীকে হাত ধরে টেনে মায়াঙ্ক নিয়ে আসছে।
মায়ন্তী’কে দেখার সাথে সাথেই মীনাক্ষী মায়াঙ্ক ও মায়ন্তীর কাছে আসে।
কিরে মায়ন্তী কেমন আছিস? তোকে তো খুব সুন্দর লাগছে। পরী হয়ে গেছিস দেখছি। ভাইয়া সাথে,এখন ভয় করছেনা ভাইয়াকে নাকি?
আপু উফফ তুমি কি যে বলোনা।
মায়াঙ্ক কিরে মায়ন্তীর হাত ধরে আছিস যে মনে হচ্ছে হাত ছাড়লেই পালিয়ে যাবে।
মীনাক্ষীর কথা শুনে মায়াঙ্ক মায়ন্তীর হাত ছেড়ে দিলো। চারপাশে তাকিয়ে দেখলো সবাই দেখছে মায়ন্তী মাথা নিচু করে আছে।
তোকে কি বলব তোর বোন যেখানে সেখানে, ছেলেদের গায়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। আমাদের বাসার তো একটা মান-সম্মান আছে। তোর শশুর বাসায় এসেছি সব দিক দেখে শুনে চলতে হবে। না জানি আবার কার গায়ে পড়ে যায়।
হাহাহা কি বলিস মায়াঙ্ক কার কার গায়ে পড়লো রে?
আপু তুমিও ভাইয়ার সাথে পাল্লা দিচ্ছ। আমি কারো গায়ে পড়িনি। সকালবেলা পা পিছলে পড়েছিলাম ভাইয়া এসে বাঁচিয়েছিল। আর এখানে রাজিব—
মায়ন্তী চুপ একদম চুপ আর একবার কথা বলবিতো ঠাটিয়ে চর মারবো।
ভা ভাইয়া আ আমি–
উফফ বাবা তোরা দু’জনে থাম হয়েছে আয় সবার সাথে কথা বল।
সবার সাথে কথা বলার পর। দু’জন মহিলা এসে মায়ন্তী ও মীনাক্ষীর সামনে দাঁড়ালো। মায়াঙ্ক সবার সাথে ঘুরে ঘুরে কথা বলছে। মীনাক্ষী কে এক মহিলা বললো কিগো মা কে এটা?
মীনাক্ষী বললো কাকি মনি এটা আমার বোন মায়ন্তী।
ও আচ্ছা। আসার সময় দেখলাম কার যেন হাত ধরে ভিতরে আসলো। কে হয় উনি? মায়ন্তীর বর নাকি?
না না কি বলেন এসব? মায়ন্তী চিল্লিয়ে বললো।
মীনাক্ষী বলল না কাকীমা মায়ন্তী পড়ে গেছিলো বলে আমাদের বড় আব্বুর ছেলে মায়াঙ্ক বলেছিলাম না তোমাদের ওর কথা উনি মায়াঙ্ক। মায়ন্তীকে নিয়ে এসেছে।
ও আচ্ছা আচ্ছা! তো মনে হচ্ছে-না যে মায়ন্তী কোন আঘাত পেয়েছে। দু’জন এডাল্ট ছেলে মেয়ে হাতে-হাত রেখে কোন অনুষ্ঠানে কাপল ছাড়া আসেনা তাই আরকি।
মায়ন্তী চোখ গুলো বেশ বড় বড় করে তাকিয়ে মহিলা দু’জনের কথা শুনছিল। পাশেই মায়াঙ্ক দাঁড়িয়ে লোকেদের সাথে কথা বলছে। মায়ন্তী একবার মায়াঙ্কের দিকে দেখছে আরেকবার মহিলাদের।
রাত ১০ টা বেজে গেছে—
এবার মায়ন্তীদের আয়ুষ্মান ও মীনাক্ষী’কে নিয়ে যাওয়ার সময় হয়ে গেছে। মীনাক্ষীর মা-বাবা,কাকু-কাকীমা সবার থেকে বিদায় নিলো। একে একে সবাই বাড়ির বাইরে গিয়ে গাড়িতে উঠছে।
মায়ন্তীর খাওয়ার সময় ড্রেসে দাগ পড়ে যায়। মায়ন্তীর বেশ খারাপ লাগে। মনে মনে এই ভেবে খুশী হয়েছিলো ও দীর্ঘ ৩ বছর পর ওর ভাইয়ার কাছ থেকে কোন গিফট পেয়েছে।
এই ভাবনাতেই দাগ তোলার জন্য মীনাক্ষী দের ওয়াশরুমে গিয়ে প্রায় ১৫ মিনিট থেকে আছে। এমন সময় হঠাৎ ওয়াশরুমের লাইট বন্ধ হয়ে যায়।
ওয়াশরুমের দরজা খোলা থাকায় কেউ হঠাৎ করে মায়ন্তীর কাছে আসে মায়ন্তীকে ধরে দেয়ালে চেপে ধরে, ওর মুখ চেপে ধরে। মায়ন্তী ভয় পেয়ে যায়।
উমম উমম বলে মায়ন্তী চিল্লানোর চেষ্টা করে। এমন সময় অনুভুত হয় মায়ন্তীর চোখে মুখে সামনে থাকা ব্যাক্তির নিঃশ্বাস উপচে পড়ছে। মায়ন্তী কিছুটা শান্ত হয়ে সামনে থাকা ব্যাক্তির হার্টবিট শুনতে থাকে।
হঠাৎ সামনে থাকা ব্যাক্তিটি মায়ন্তীর পেট জোড়ে চেপে ধরলো। শক্ত হাত দিয়ে পেটে প্রায় মোচড় কাটছে।
মায়ন্তী ব্যথায় কুঁকড়ে উঠছে। মুখ চেপে ধরায় চিল্লাতেও পারছেনা। মায়ন্তীর হাত দু’টো সেই অপরিচিত ব্যাক্তির এক হাত দিয়েই আঁটকে রাখছে। মায়ন্তীর ব্যথায় চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো।
সামনে থাকা ব্যক্তিটি বলে উঠলো তোমার শরীরে অন্য কেউ হাত দেওয়ার সাহস পায় কিভাবে? আনসার মি? বলেই মায়ন্তীর থুঁতনি চেপে ধরে নিজের একদম মুখের কাছে নিয়ে আসে। মায়ন্তী একমুহূর্তের জন্য জ্ঞানহীন হয়ে গেছিল। আবার সামনে থাকা লোকটি বললো তোমার আশেপাশে কেউ আসলে সে ম/র/বে সাথে তোমাকে নিয়েও মরবে।
কথা গুলো যেন কেমন শুনাচ্ছিলো। বারবার মায়ন্তীর কানে এসে লাগছিলো যেন কন্ঠস্বর চেনা আবার মনে হচ্ছে অচেনা।
মায়ন্তী ভয় পেয়ে যায় ভীষণ । সামনে থাকা ব্যক্তিটি মায়ন্তীকে হুমকি স্বরুপ বলে সাবধানে থাকবে কেউ যেন ভুল করেও তোমাকে ছুঁতে না পারে। হুট করে লাইট অন হয়ে যায় মায়ন্তী জোড়ে জোড়ে শ্বাস নেয়। চারপাশে তাকিয়ে দেখে আশেপাশে কেউ নেই।
মায়ন্তী বেড়াতে যাবে তখনই মায়ন্তী মায়ন্তী বলে মায়ন্তীর সামনে রাজিব এসে দ্বার হয়।
কি মায়ন্তী তুমি এখানে আর সবাই গাড়িতে বসে তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।
মায়ন্তীর চোখে পানি দেখে রাজিব বলে মায়ন্তী একি তোমার চোখে পানি কি হয়েছে?
মায়ন্তী রাজিবের কথার উওর না দিয়ে দৌড়ে গাড়ির কাছে যায়। গিয়ে দেখে মায়াঙ্ক গাড়িতে বসে আছে। মায়াঙ্কের পাশের সিটে আয়ুষ্মানের কাজিন রূপসা বসেছে। মায়ন্তী কিছু না বলেই আয়ুষ্মান ও মীনাক্ষীর সাথে বসে পড়ে।
শুধু মায়ন্তীদের গাড়ি এতক্ষণ ছিল সবাই ওদের রেখেই বাসায় পৌঁছে গেছে।
মীনাক্ষী বললো কিরে তুই এতক্ষণ কোথায় ছিলি? কত খুঁজলো সবাই তোকে। কতক্ষণ থেকে অপেক্ষা করে আছি বলতো। বাসায় যাবো কত মজা করবো। কই ছিলি?
আপু ও কিছুনা আমি ওয়াশরুমে ছিলাম। আসলে ড্রেসে দাগ পড়ে গেছিলো একটু।
মায়ন্তী রীতিমতো মীনাক্ষীর কাছে লুকিয়ে গেলো। আসলে ওর কি হয়েছে ।
মীনাক্ষী বলল তোর চোখ মুখ এমন লাগছে কেন রে তুই কেঁদেছিস নাকি।
আপু কি যা তা বলছ কাঁদবো কেন? আমি ওয়াশরুমে গেছিলাম চোখে মুখে পানি ছিটিয়েছি।
মায়াঙ্ক বলে উঠলো হয়েছে এবার তোদের যাওয়া যাক এবার। অনেক রাত হয়ে গিয়েছে।
আয়ুষ্মান বললো হুম চল এখন।
রাত ১২ টা নাগাদ বাসায় পৌঁছে যায় মায়ন্তী’রা পুরো রাস্তায় মায়ন্তী ভেবে এসেছে কে ছিল ওয়াশরুমে। যে মায়ন্তীর সাথে এরকম বাজে ব্যবহার করলো। চেনা চেনা লাগছে আবার চিনতেও পারছেনা।
মায়ন্তী বাসায় ফিরেই কারো সাথে কোন কথা না বলে মীনাক্ষী দের নিয়ে এসেই সোজা নিজের রুমে ঢুকে যায়।
কাবাড থেকে নিজের কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। দীর্ঘ ১ ঘন্টা ধরে ফ্রেশ হওয়ার পর মায়ন্তী বাইরে এসে আয়নার সামনে দাঁড়ায়। পরনের কামিজ নিজের পেটের অংশ টা থেকে কিছুটা সরিয়ে আয়নায় দেখে ভর্সা পেটে লাল দাগ জমে আছে। নখের আঁচড় স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।
মায়ন্তীর মনে ভেসে উঠল মীনাক্ষীর শশুর বড়িতে হওয়া সেই ঘটনা। এমন দেখে আঁতকে উঠে চোখের কোনে পুনরায় পানি চলে আসে মায়ন্তীর ।
তখনি মায়ন্তী, মায়ন্তী বলে ঘরে ঢুকে মীনাক্ষী ————————-
চলবে…………………….