#মায়ন্তী
#রাইদাহ_উলফাত_আনিতা
#পর্ব_০৭
মায়ন্তী ওরে কে রে বাঁচাও রে বলে লাফিয়ে উঠে মায়াঙ্ক কে জড়িয়ে ধরে-
মায়াঙ্ক কিছুটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। যে মায়ন্তী কিনা মায়াঙ্ক কে এত ভয় পায় সে কিনা ওকে জড়িয়ে ধরেছে। যতই ঘুমের ঘোরে পানি গায়ে পড়ায় ভয় পেয়ে হোক না কেন! তাই বলে ওকে জড়িয়ে ধরবে?
মায়ন্তী চুপচাপ চোখ বন্ধ করে মায়াঙ্কের টি-শার্ট খামচে ধরে আছে।
মায়াঙ্ক কিছুটা অসস্থিতে পড়ে যায় মেয়েটা’র সঙ্গে একটু বেশি বেশি করা হয়ে গেল ভাবছে।
মায়ন্তী এই মায়ন্তী কিরে তুই নিজেও ভীজলি আমাকেও ভীজিয়ে দিলি। যা দূরে যা। ছাড় আমাকে।
মায়ন্তী চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে মায়াঙ্কে জড়িয়ে ধরেছে।
ভা ভাইয়া আপনি! বলেই মায়াঙ্কে ছেড়ে দাঁড়ায় । আ আপনি এখানে? আপনি আমাকে পানি দিয়েছেন?
তো কি তোর গায়ে মধু এনে ঢেলে দিবো নাকি? তোর না আজ ভার্সিটিতে যাওয়ার কথা? এলার্ম দিয়ে ঘুমিয়েছিস এলার্ম এতবার বাজার পরে-ও তোর কানে শব্দ যায়না। আমার ঘুম টাই নষ্ট করে দিলি।
যা তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আয়। নিজেও ভিজেছিস আমাকেও ভিজিয়ে দিলি। কত বড় হয়েছিস দেখেছিস। দুদিন বাদে তোকে বিয়ে দিয়ে দিবে বাসা থেকে আর তুই কিনা যত্তসব।
ভাইয়া আমি কি করলাম? আপনিতো গায়ে পানি দিয়েছেন।
চুপ একদম চুপ মুখে মুখে কথা বলা শিখেছিস। বলেই মায়াঙ্ক রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।
মায়ন্তী বির বির করে বলে খাটাশ একটা নিজেই গায়ে পানি দেয় আবার নিজেই উমম আসছে আমার বিয়ের কথা বলতে বয়েই গেছে আমার অন্য কাউকে বিয়ে করতে বলতে বলতে মায়ন্তী মুসকি হেঁসে দেয়।
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ভার্সিটির ক্লাস শুরু হওয়ার আর মাত্র৷ ১ঘন্টা আছে এতদূর যেতে হবে আবার। বলেই মায়ন্তী কাবাড থেকে নিজের কাপড় বের করে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়।
ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে তাড়াহুড়ো করে রেডি হয়ে মায়ন্তী বাইরে আসে মা মা বলে ডাকে মা আমাকে খেতে দাও আমার লেট হয়ে যাচ্ছে বলে মায়ন্তী গিয়ে ডাইনিংয়ে বসে পড়ে। বসতেই মীনাক্ষী ও আয়ুষ্মান সেজে গুজে মায়ন্তীর কাছে আসে।
আয়ুষ্মান বলে মায়ন্তী আমরা আসলাম কিসের কি ঘুরবো আড্ডা দিবো তা না তুমি ভার্সিটিতে যাচ্ছো। এটা মোটেও ঠিক হচ্ছেনা। মীনাক্ষী ও বলে উঠলো মায়ন্তী আজ না গেলেই কি নয়?
মায়ন্তীর মনও চাচ্ছে আজ না যেতে তবুও যেতে চাচ্ছে। আয়ুষ্মান ও মীনাক্ষী বলল যখনই মায়ন্তীর ও মন চাইলো আজ যাবেনা। মায়ন্তী শুধু বলবে আমি যাচ্ছি—–
থাম তুই। আয়ুষ্মান, মীনাক্ষী তোদের বিয়ে হয়েছে বলে কি মায়ন্তীর ও বিয়ে হয়েছে? ওকেও তোদের সাথে আড্ডা দিতে হবে? ও ভার্সিটি যাবে মানে যাবেই। আমি আছি, রুপসা আছে এতেই আড্ডা জমে যাবে ওকে যেতে দে।
মায়ন্তীর পুরো মনটা খারাপ হয়ে যায়। মনে মনে বলতে থাকে এই খাটাশ টা শুধু আমার সময়েই এমন কেন? আমি থাকলে রুপসার সাথে আড্ডা জমতো না নাকি ঠিক আছে আমিও থাকবোনা যাচ্ছি আমি।
মায়ন্তী খাবার ছেড়ে উঠে পড়ে বলে আসছি আমি। বলেই গেটের দিকে পা বাড়ায়।
মায়ন্তী কিরে খেয়েতো যাবি নাকি মীনাক্ষী বলে উঠলো।
তখনই মায়ন্তী বলে ক্ষিধে নেই আমার। বলেই গেটের বাইরে পা বাড়ায়। মায়াঙ্ক বলে উঠে ড্রপ করে দিবো?
না লাগবেনা মায়ন্তী চেঁচিয়ে বলে চলে যায়।
মায়ন্তীর দের ভার্সিটি বাসার কাছেই হওয়ায় মায়ন্তী ধীরে ধীরে হেঁটে হেঁটে আনমনে মায়াঙ্ক’কে বকা দিতে দিতে হেঁটে যাচ্ছে। আর রাস্তায় পড়ে থাকা পাথর পা দিয়ে ছুঁড়ে মারছে।
হঠাৎ পিছন থেকে একটা গাড়ি হর্ণ দিয়ে এসে ঠিক মায়ন্তীর পিছনে দাঁড়ায় মায়ন্তী বেশ ভয় পেয়ে দূরে সরে দাঁড়ায়।
চেঁচিয়ে বলে কোন বেকুব রে দেখে শুনে গাড়ি চালাতে পারেনা। মায়ন্তী চোখ ছোট ছোট করে এক নিঃশ্বাসে কথা গুলো বলে থেমে যায়। তাঁর পর গাড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে আর কারও গাড়ি নয় মায়াঙ্কের গাড়ি।
আ আপনি ভাইয়া। মায়ন্তী বলতেই গাড়ির দরজা খুলে রুপসা ও মীনাক্ষী বেড়িয়ে আসে। আর বলে হয়েছে আজ আর তোকে ভার্সিটিতে যেতে হবে না। চল আমরা এখন ঘুরতে যাবো।
মায়ন্তী কিছুক্ষণ গাড়ির ভিতরে থাকা মায়াঙ্কের দিকে তাকিয়ে আছে দেখছে মায়াঙ্ক অন্যদিকে তাকিয়ে আছে।
কি শালিকা চলে এসো। বললাম বাসায়! আজ ভার্সিটি যেও না। শুনলে না কি আর করার? তোমাকে সারপ্রাইজ দিতে চলে এলাম।
মায়ন্তী বলে উঠলো না ভাইয়া আমি যাবোনা। আমাকে ভার্সিটিতে যেতে হবে।
রুপসা বলে আরে মায়ন্তী মায়াঙ্ক তোমাকে কিছুই বলবেনা চলে এসো।
না আপু ভাইয়া আমাকে কি বলবে আমি যাবোনা। তোমরা বরং যাও এখন আমার লেট হয়ে যাচ্ছে।
হয়েছে তোকে এত ন্যাকামি দেখাতে হবে না চুপচাপ এসে গাড়িতে বস।
মায়াঙ্ক কিছুটা ধমকিয়ে মায়ন্তী’কে বলে। মায়ন্তীর পুরো শরীর ভয়ের চোটে কেঁপে ওঠে। রাস্তায় ও এভাবে কেউ ব্যবহার করে?
মায়ন্তী আর কিছু বললো না। চুপচাপ গাড়িতে উঠে বসলো। ড্রাইভিং সিটে মায়াঙ্ক ওর পাশে রুপসা,পিছনে আয়ুষ্মান,মীনাক্ষী ও মায়ন্তী।
মায়ন্তী বারবার গাড়ির গ্লাসে মায়াঙ্ক কে দেখছিল। হঠাৎ রুপসা মায়াঙ্কের হাতে হাত দিয়ে কথা বলতে থাকে আচ্ছা মায়াঙ্ক আমরা কোথায় যাচ্ছি বলতো । তখন ও বললাম তোমাকে তুমি বললেই না কোথায় যাচ্ছি আমরা?
মায়ন্তীর একে বারই রুপসাকে আর সহ্য হচ্ছেনা। মনে হচ্ছে এখনই গাড়ি থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিবে। মনে মনে রুপসাকে গালি দিচ্ছে পেত্নী কোথাকার আর ছেলে পাশ’নি আমার ভাইয়ার উপরই ঝুলে পড়ার চেষ্টা করছিস তোকে তো!!
আমরা মেয়ে কখনই পারিনা নিজের ভালোবাসার মানুষ’কে অন্য কারো সাথে দেখতে সেটা বুঝে হোক আর না বুঝেও হোক। নিজের ভালোবাসার মানুষের প্রতি নিজের এক অন্যরকম অধিকারবোধ জন্মায়।
মায়ন্তী পুরো রেগে আছে। মায়াঙ্কের দিকে চেয়ে আছে মায়ন্তী।
মায়াঙ্ক হুট করে নিজের হাত থেকে রুপসার হাত সরিয়ে নিজেই রুপসার হাত ধরে বলে তোমাকে তো বললাম রাজধানীর দিকে যাবো ঐখানে একটা নতুন রেস্টুরেন্ট তৈরি হয়েছে সেখানেই ঘুরবো একটু।
ও আচ্ছা আচ্ছা আমিও একবার গেছিলাম অনেক সুন্দর জায়গা’টা। আর রেস্তোরাঁটা বেশ চমকালো। ভালোই পরিবেশ ঐখানে।
এমন চলতে চলতেই পৌঁছে যায় মায়ন্তী’রা। ভিতরে যায়। গিয়ে বসে আয়ুষ্মান বলে বলো সবাই কে কি খাবে মায়াঙ্ক বলল আমি কোল্ড কফি নিচ্ছি তোরা কি খাবি সিলেক্ট কর।
রুপসা বলে উঠলো আমিও কোল্ড কফি খাবো। আয়ুষ্মান ও মীনাক্ষী বলে উঠলো আমরা কাচ্চি বিরিয়ানি। মায়ন্তী তোর জন্য কি অর্ডার দিবো?
মায়ন্তী কিছুটা চিল্লিয়ে বলে আমি হট কফি,বার্গার,পিজ্জা,বিরিয়ানি সব খাবো।
তখনই রুপসা বলে মায়ন্তী তুমি এত খেতে পারবে?
মায়ন্তী চেঁচিয়ে বলে হ্যাঁ আমার এতটুকুতে হবে না আমি আরও খাবো।
খাবার সার্ভ করার পর মায়াঙ্ক ও রুপসা একে অন্যের সাথে কথা বলতে বলতে কফি খাচ্ছিল। এমনটা থেকে মায়ন্তী নিজের খাবার একেরপর এক খেয়েই যাচ্ছে।
হঠাৎ মায়াঙ্কের মুখে কফির দাগ দেখা যায় রুপসা হঠাৎ করে নিজের টিস্যু দিয়ে মায়াঙ্কের মুখ মুছে দেয়।
মায়ন্তী হুট করে কাঁশতে থাকে গলায় খাবার উঠে যায় মায়ন্তীর। মায়ন্তী খাবার ফেলে দিয়ে উঠে ওখান থেকে চলে যায়!!
চলবে…………………………………….