মায়ন্তী পর্ব -০৮

#মায়ন্তী
#রাইদাহ_উলফাত_আনিতা
#পর্ব_০৮

মায়ন্তী হুট করে কাঁশতে থাকে। গলায় খাবার উঠে যায় ওর। মায়ন্তী খাবার ফেলে দিয়ে উঠে যায় ওখান থেকে ওয়াশরুমের ঐদিকে যায়।

মীনাক্ষী বলে মায়ন্তী কি হলো তোর? তুই ঠিক আছিস?

মায়ন্তী কোন কথা না বলেই ওয়াশরুমে ঢুকে। বেসিনে পানি ছেড়ে চোখে-মুখে পানি দিতে থাকে। হ্যাঁ মায়ন্তী কাঁদছে? কেন কাঁদছে মায়ন্তী?

কেন ভাইয়া কেন এমন করছেন আমার সাথে। আমি যে আর পারছিনা। কেন করছেন এমনটা বিদেশে যাওয়ার আগের কথা ভুলে গেলেন আপনি? ৩ বছর আগের সব ভুলে গেছেন?

জানেন না আমি আপনাকে কি চোখে দেখি? আপনি কি অবুঝ ভাইয়া?

৩ বছর আগে আমি ছোট ছিলাম আপনার করা অপরাধ কে আমি মাথা পেতে নিয়েছি আপনি যা বলেছেন তাই মেনেছি সেই আপনি আমাকে ছেড়ে চলে গেলেন বিদেশে ৩ বছর বাদে ফিরলেন আপুর বিয়ের জন্য আমার জন্য না।।

ফিরলেন তবুও নতুন রুপ নিয়ে। আমাকে সহ্যই করতে পারেন না আপনি? আমি আপনার আশেপাশে গেলেই আপনার রাগ উঠে যায়। রুপসা ঐ মেয়েটা আপনার হাত ধরে কথা বলছে আপনার মুখ মুছে দিচ্ছে। এটাও আমাকে দেখতে হবে? উফ আমি আর পারছিনা।

ঠিক আছে ভাইয়া ঠিক আছে আমিও আপনাকে দেখিয়ে দিবো বলে দিলাম এই মায়ন্তী সিনহা আপনার মতোই হয়ে দেখাবে। ৩ বছর আগের মতোই আপনাকে এই আমার কাছেই আসতে হবে। মিলিয়ে নিবেন।

মায়ন্তী ফিরে এসে দেখে মায়াঙ্ক নেই। মায়াঙ্ক নিজের কফি শেষ করে একটু বাইরে হাটার জন্য বেড়িয়ে গেছে।

মীনাক্ষী, আয়ুষ্মান ও রুপসা বসে গল্প করছিল। মায়ন্তী আসায় মীনাক্ষী বলে কিরে কি হয়েছে তোর। ঐভাবে গেলি যে?

আসলে আপু আমি একটু বেশি খেয়েছি তো গলায় আঁটকে গেছিল তাই আরকি।

ও আচ্ছা! এখন ঠিক আছিস তো? আচ্ছা চল এখন বাড়ি যাওয়া যাক। এই মায়াঙ্ক তো এখনো আসলো না কই যে গেল?

এদিকে মায়াঙ্ক একা একা রেস্তোরাঁর ধার দিয়ে হাঁটছে। মুখে কোন কথা নেই বেশ বিষন্নতা আর একবুক হতাশা নিয়ে হাঁটছে।

আচ্ছা তোমরা অপেক্ষা করো আমি মায়াঙ্ক’কে নিয়ে আসি বলে আয়ুষ্মান বেড়িয়ে যায়।

মায়াঙ্ক বলে কত অদ্ভুত আমার জীবন! কি চেয়েছিলাম আর কি পেয়েছি? যা চেয়েছিলাম তাতো হাহাহ যা চাইনি তাই পেয়েছি। এখন আর আফসোস হয়’না। আমি সুখে থাকতে চাই। আমার মানুষ’টাকে নিজের করে পেতে চাই।

বলতে বলতেই কে যেন এসে মায়াঙ্কের কাঁধে হাত রাখে। মায়াঙ্ক চমকে উঠে বলে কে?

আমি আয়ুষ্মান৷ কিরে কি হয়েছে তোর বলতো? মায়ন্তীর সাথে এমন করিস কেন? তুই তো— আয়ুষ্মান দ্বারা আর কিছু বলিস না তুই কি বলতে চাস আমি ভালোই জানি। এ ব্যপারে কথা বলতে চাই না চল বাসায় যাবো এখন। দুপুর হয়ে এসেছে।

মায়াঙ্ক তুই?

আহ আয়ুষ্মান বললাম না তোকে? আর এ ব্যপারে কিছু শুনতে চাচ্ছি না। চল বাসায় চল ওদের নিয়ে আয় আমি গাড়িতে আছি।

পুরো গাড়িতে নিঃস্তব্ধতা রয়েছে। কেউ কারো সাথে কথা বলছে না। রুপসা মায়াঙ্কের সাথে এত কথা বলার চেষ্টা করছে মায়াঙ্কের কেন জানিনা কিছু ভালোই লাগছেনা। গাড়ির লুকিং গ্লাসে বারবার কেন জানিনা ওর চোখ যাচ্ছে।

এদিকে মায়ন্তী অপলক বাইরের ব্যস্ত শহর দেখাতে মনোনিবেশ করেছে। এদিকে ওকে কে দেখছে না দেখছে ওর কোন খেয়াল নেই। কে কার সাথে কথা বলছে না বলছে মনেই ধরছে না তাঁর।

মায়ন্তীর চোখ দু’টো তাঁর প্রিয় মানুষটার জন্য অসহ্য ব্যথায় ভিজে আছে। বার-বার কাউকে নিয়ে মন থেকে ভাবতে চাচ্ছে না মায়ন্তী তবুও একই কথা,একই মানুষ চোখের সামনে ভেসে উঠেছে।

ব্যস্ত শহরের কোন না কোন ফাঁকে সেই মনের মানুষ’টাকে নিয়ে ঘর বাঁধার স্বপ্ন ওকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে।

ভালোবাসলে বুঝি এমন-ই হয়। যতই চাই ভুলতে একটু নতুন করে বাঁচতে কিন্তু পুরোনো স্মৃতি গুলো আমাদের আঁকড়ে ধরে। নতুন করে বাঁচতে দেয়না।

দেখতে দেখতে মায়াঙ্ক’দের গাড়ি বাড়িতে চলে এসেছে এখন দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়েছে। মায়াঙ্ক সবাই’কে নামিয়ে দিয়ে গাড়ি নিয়ে আবার কেন জানি বেড়িয়ে পড়লো।

এদিকে মায়ন্তী বাড়িতে ঢুকেই সোজা নিজের রুমে ঢুকে গেছে।

সন্ধ্যার দিক মীনাক্ষী মায়ন্তী’কে ডাকে মায়ন্তী এই মায়ন্তী কিরে সন্ধ্যা হয়ে গেছে এবার বাইরে আয়। নিশ্চয়ই শুয়ে আছিস এই সময়ে শুয়ে থাকতে নাই বাইরে আয় বলছি।

মায়ন্তী’কে এতবার ডাকার পরে-ও যখন কোন সারা দিচ্ছে না তখন মীনাক্ষী আর দরজার বাইরে থাকেনা। সেও মন খারাপ করে নিজের ঘরে যায়। ঘরে গিয়ে বলে আয়ুষ্মান এই আয়ুষ্মান শুনোনা। আচ্ছা মায়ন্তীর কি হলো বলোতো এসেই দরজা লাগিয়ে ঘরে ঢুকছে তো ঢুকছেই বেড়চ্ছেই না। রোস্তোঁরায় ও কেমন যেন করলো। আবার সেই পুরনো-

মীনাক্ষী এই ব্যপারে যার কথা বলার সেই কথা বলতে চাইছেনা তো আমি বা তুমি কি বলবো। কিছু জানিনা আমি এ ব্যপারে। চুপ থাকো দেখে যাও কি হয়।

তাই বলে চুপ থাকবো। আমি আমার বোনের এমন কষ্ট দেখতে পারবো না।

মীনাক্ষী কিছুই করার নেই বুঝেছ। আমি যা বলছি শুনো———————————————

আচ্ছা ঠিক আছে তোমার কথাই মানলাম তাই যেন হয়।

হুমম তাই হবে । আসো তো এদিকে একটু।

কি মাথা ঠিক আছে ছাড় তো। বলেই মীনাক্ষী বেড়িয়ে যায়।

আরে মীনাক্ষী শুনো তো। আরে এই। উফফ বাপ্রে নতুন নতুন বিয়ে করে কি বা করলাম। ধূর ভাল্লাগেনা।

————————————————————————

রাত ৯ টা মায়ন্তী’দের ডাইনিংয়ে মায়ন্তীর মা-বাবা,মায়াঙ্কের মা-বাবা,মীনাক্ষী -আয়ুষ্মান, মায়াঙ্ক, রাজিব এবং রাজিবের মা-বাবা উপস্থিত।

কারো মুখে কোন কথা নেই। সবাই চুপ-চাপ ভীষণ চুপচাপ। নিস্তব্ধতা বিরাজমান মায়ন্তীদের বাসায় ।

মায়াঙ্ক বলে উঠলো আঙ্কেল-আন্টি আপনারা এসেছেন আমরা সবাই তাতে খুশী।

আমার মনে হয় আপনাদের আমার এখনকার বলা কথায় খারাপ লাগবে।

আমি বলব মায়ন্তীর বিয়ে কখনোই রাজিবের সাথে হতে পারেনা। হবে না। ও ছোট এখনো ওর বয়স হয়নি বিয়ের। আর হলেও ওকে বিয়ে দেওয়া হবেনা এখন। বুঝেছেন? আপনারা এখন আসতে পারেন।

রাজিব বলে মায়াঙ্ক তুই?

রাজিব এক্ষুনি বেড়িয়ে যাবি এখান থেকে তুই।

তখনই নাহ বলে চিল্লিয়ে উঠে মায়ন্তী। এ বিয়ে হবে আমি রাজিব ভাইয়াকে বিয়ে করবো।

মা-বাবা,কাকু-কাকীমা রাজিব ভাইয়াকে তো তোমরা আগে থেকেই চিনো। ভাইয়া অনেক ভালো। আমি আর ভাইয়া দু’জন-দূজনকে পছন্দ করি। আমি চাই আমাদের বিয়ে খুব তাড়াতাড়ি হয়ে যাক।

আর আঙ্কেল আন্টি আপনারা ভাইয়ার কথায় কিছু মনে করবেন না। ভাইয়া আমাকে নিজের বোনের মতো খুব ভালোবাসেন তো। আমার বিয়ে মেনে নিতে পারবেন না।

মীনাক্ষী বলে মায়ন্তী তুই কি বলছিস এসব। তুই রাজিব’কে?

হ্যাঁ আপু হ্যাঁ আমি রাজিব ভাইয়াকে বিয়ে করবো। এই ব্যপারে আর কিছু শুনতে চাইনা।

মায়ন্তীইইই!! জোড়ে চিল্লিয়ে উঠে মায়াঙ্ক সামনে থাকা ফুলের টপ ভেঙে ফেলে চলে যায়।

এদিকে মায়ন্তী বলে মা-বাবা,কাকু-কাকীমা তোমাদের কোন আপত্তি আছে এই বিয়েতে??

মায়ন্তীর মা-বাবা বলে না আমাদের কোন আপত্তি নেই। রাজিব অনেক ভালো ছেলে। আমি ওকে ছোট বেলা থেকেই চিনি। মায়াঙ্কের সাথে বেড়াতে দেখেছি।

তখনই মায়ন্তীর কাকীমা বলে উঠে মায়ন্তী তুই এই বিয়ে সত্যি করতে চাস? পারবি বিয়ে করতে? তুই যদি বলিস হ্যাঁ আমার কোন আপত্তি নেই!

মায়ন্তী হ্যাঁ বলেই সোজা নিজের রুমে চলে যায় আর পিছনে তাকায় না। জোড়ে শব্দ করে দরজা লাগিয়ে দেয়।

চলবে……………………………………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here