#মায়ন্তী
#রাইদাহ_উলফাত_আনিতা
#পর্ব_১০
মায়ন্তীর কাঁদছে। বাইরে থেকে সবাই এত ডাকাডাকি করার পরে-ও মায়ন্তী দরজা খুলছে না। সারারাত মায়ন্তী মায়াঙ্কের কথা ভাবতে থাকে।
মায়ন্তী’র কথা ভাইয়ার কি আমার জন্য একটুও খারাপ লাগছেনা? ছোট বেলায় তো ওনাকে আমি বুঝতাম কই এখন বুঝতে পারিনা কেন?
ওনার একটুও খারাপ লাগেনা বিদেশ যাওয়ার আগে যে আমি ওনাতে পাগল তুমি করে বলতাম, প্রায় ছেলে মানুষি করে পাগলামি করতাম। কই আপনি ফিরে আসার পরে তো আর এমন করিনি। আপনার কি একটুও খারাপ লাগেনি ভাইয়া?
আসলে কি জানেন আপনার চোখে যখন ছোট ছিলাম তখন ভালো মেয়ে ছিলাম এখন আমি বড় হয়ে গেছি। এখন পঁচা হয়ে গেছি তাই-না।
এত দিনে আমাকে একটুও মনে পড়ে নি? কেন ছেড়ে গেছিলেন ভাইয়া কেন? আমি একটু ঘুমিয়ে পড়েছিলাম বলে আপনি সোজা বিদেশে চলে গেলেন । আমার কথা ভাবলেনই না।
যখন ফিরলেন আপনার চোখে আমি এতটাই খারাপ প্রতিটা পদে পদে আপনি আমাকে রাগ দেখান বকেন। আগে’তো আপনি আগলে রাখতেন। জানেন আগে অনায়াসে আপনাকে সব কথা বলতে পারতাম এখন আমার আপনাকে এত পরিমাণ ভয় করে আপনার সামনে যেতেই আমার ভয় করে।
আপনার দিকে যখন অন্য মেয়ে চোখ তুলেও তাকায় আমার বুকটা ফেঁটে যায়। জানেন আমার খুব হিংসা হয়। আমিতো আগে এসব কিছু অনুভব করতাম না। আপনার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে আমিও বিয়ে করছি এটাই জানতাম। তবে আপনি চলে যাওয়ার পর সব কিছু ভাবনায় আসে। আমি বুঝতে পারি আমি আপনাকে ভালোবাসি।
“মায়াঙ্ক ভাইয়া আমি আপনাকে ভালোবাসি”
হ্যাঁ ভালোবাসি,ভালোবাসি!
আপনি আমাকে একটুও ভালোবাসেন না। আমি রাজিব ভাইয়াকে বিয়ে করব। হ্যাঁ আমি ওনাকে বিয়ে করব। তবেই আপনি আমার কষ্ট টা বুঝবেন।
মায়ন্তী বলতে বলতে ঘুমিয়ে পড়ে!
—————————————————————————
মায়াঙ্কের একটা ভালো লাগার জায়গা নদীর তীর, ভালো লাগা খারাপ লাগা সব নদীতে মেশাতে চলে আসে মায়াঙ্ক। আজকেও তাঁর বিপরীত নয়।
মায়াঙ্ক গাড়ির উপরে শুয়ে গভির রাতের দূর আকাশের পানে চেয়ে থেকে কিছুক্ষন পর চোখ বন্ধ করে আছে। মায়াঙ্কের চোখের সামনে ভেসে উঠে তিনবছর আগের কিছু স্মৃতি —
হ্যালো,হ্যালো মায়াঙ্ক কই তুই তাড়াতাড়ি আয় হসপিটালে।।
মায়াঙ্ক হসপিটালের বেডে শুয়ে। দু-চোখ বেয়ে অঝোরে পানি পড়ছে। পাশে দু’জন লোক দাঁড়িয়ে কথা বলছে।
মায়াঙ্ক তোর এখানে থাকা উচিত হবেনা। তোকে বাইরে যেতে হবে।
নাহহহ বলে মায়াঙ্ক ভাবনার জগৎ থেকে বাইরে আসে। দ্রুত গাড়ির ভিতরে যায়। এখন মাঝরাত। মায়াঙ্ক দ্রুত গাড়ি চালিয়ে বাড়িতে আসে। সোজা নিজের রুমের ভিতরে ঢুকে যায়। মায়াঙ্ক এসেছে কেউ বুঝতেই পারলো না।
মায়াঙ্ক এসেই আলমারিতে কি যেন খুব করে খুঁজছে। এমন ভাবে তল্লাশি চালিয়ে যাচ্ছে যেন মনে হচ্ছে খুব ভয়ংকর কিছু হারিয়ে ফেলেছে। কারো হাতে পড়লে খুব বড় বিপদ হয়ে যাবে। তন্নতন্ন করে খুঁজেও যখন পাচ্ছেনা। উফফ আর ভালো লাগছেনা। না না এ হতে পারে না। সব কিছু আমাকে সামলিয়ে নিতে হবে। আর কি একটু অপেক্ষা করা যেত না। আর কিছুদিনের তো অপেক্ষা ছিল মাত্র।
————————- ————————- ————————-
আযানের ধ্বনি শুনে মায়ন্তীর ঘুম ভেঙে যায়। সকল ক্লান্তি, ভাবনা দূর করার জন্য মায়ন্তী ওযু করে এসে নামাজ আদায়ের জন্য বসে পড়ে।
নামাজ শেষে মায়ন্তী ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়িয়ে ভোরের মিষ্টি রোদ অনুভব করছে,মায়ন্তীর ব্যালকনিতে রোদ আসে মায়ন্তীকে উষ্ণ করতে।
থাকতে থাকতেই সকাল ৭ টা বাজে মায়ন্তী নিজের দরজা খোলার সাথেই বসার রুমের দিকে চোখ যায়। মায়াঙ্ক শোফায় শুয়ে ঘুমাচ্ছে।
মায়ন্তী মনে মনে বলে কি নিষ্পাপ চেহারা। নিশ্চুপ হয়ে আছে কত সুন্দর লাগছে। মায়াবী চেহারা। কিন্তু এখুনি জেগে উঠলেই। মায়ন্তী মায়াঙ্কের দিকে তাকিয়ে আছে–
মায়ন্তী এই মায়ন্তী শোন এদিকে-
কি হয়েছে আপু বলো?
মায়ন্তী তুই কি সত্যি সত্যি মন থেকে বলেছিস তুই রাজিবকে বিয়ে করবি? আর রাজিবের সাথে তোর কিসের সম্পর্ক? তুই ওকে পছন্দ করিস আদৌ? আর হঠাৎ করেই বা রাজিব ওর মা-বাবাকে নিয়ে চলে আসলো? এতদিন তো তুই পড়াশোনা, পড়াশোনা করে মাথা খেতিস। মায়াঙ্ক চলে যাওয়ার পর থেকে তুই তো বিয়ের কথা মাথায় ও আনিস নি। এমনকি কোন ছেলের সাথে কথাও বলিস নি। তুই নাটক করছিস কেন? এমন করে কি পাবি?
উফফ আপু এত কথা বলো কেন? কি হয়েছে? আমি রাজিব ভাইয়াকে বিয়ে করছি ব্যাস। আর একটা কথাও শুনতে চাইনা। মায়ন্তী কিছুটা চিল্লিয়ে কথা বলল—বলতেই মায়াঙ্কের ঘুম ভেঙে যায়। মায়াঙ্ক মায়ন্তীর দিকে তাকিয়ে আছে। মায়ন্তী-মায়াঙ্কে দেখে আর ওখানে থাকে না চলে যায় ভিতরে।
চিল্লাতে থাকে মা মা,কাকী মনি আমার বিয়ে কবে ফাইনাল করবে বলোতো তোমরা। কেন জানি কিছুই বলছনা তোমরা?
মায়ন্তী কি হচ্ছে কি এসব? তুই পাগল হয়ে গেছিস? লাজলজ্জা কি নেই তোর?
ও মা কি বলো লাজলজ্জা নেই মানে কি হ্যাঁ তোমরা আমাকে বিয়ে দিবেনা বুঝি? বিয়ে ঠিক করার কথা বললাম অমনি লাজলজ্জা নেই আমার।
কাকীমনি, কাকীমনি তুমি বলতো কবে আমাকে বিয়ে দিবে?
মায়ন্তী তোর বিয়ে খুব তাড়াতাড়ি হবে! আর তোর মন মতোই বিয়ে হবে দেখেনিস।
এইতো আমার সোনা-মা। মায়ের থেকে তুমি আমাকে বেশি ভালো বুঝো। বলেই মায়ন্তী ওর কাকীমনিকে জড়িয়ে ধরে।
হয়েছে ছাড় আর এমন করতে হবেনা।
উহু না তোমাকে ছাড়ছিনা। সারাজীবন —
থেমে গেলি যে?
না ও কিছুনা। আচ্ছা যাই রাজিব ভাইয়া ভোর থেকে ফোন দিতেই আছে। এখনো কথা বলা হয়নি। বলেই মায়ন্তী চলে গেল।
পাশেই মায়াঙ্ক দাঁড়িয়ে। মা আমাকে এক-কাপ চা দেওতো।
মায়াঙ্ক বাইরে তো যাবি। বাইরে খেয়ে নিস। আমি এখন চা করতে পারবোনা।
মা-কি বলছ কি? তুমি জানোনা আমি বাইরের চা খাইনা?
তো কি হয়েছে এখন থেকে খাবি!
ঠিক আছে আর চা খাবোই না আমি।
মায়াঙ্ক এই নে চা। আমি করেই রেখেছিলাম।
রেহেনা তুমি আবার কখন চা করলে?
বনু আমি চা করেইছি মায়াঙ্কের জন্য।
ধন্যবাদ কাকীমনি!!
রানু বেগম মনে মনে বলে নিজের মেয়েকে যার জন্য কষ্ট পেতে হয় ও তাঁর জন্যই —
পরিবেশ কি শান্ত! সবাই সবার মতো ব্যস্ত। কেউ কোন কথা বলছে না। না আছে কারো মনে কাল কি হয়েছে!
মায়াঙ্ক ডাইনিংয়ে বসে খবরের কাগজ পড়ছে। তাতেই আসবো বলে ভিতরে আসে রাজিব।
মায়াঙ্ক রাজিবের দিকে রক্তচক্ষু নিয়ে তাকিয়ে আছে। রাজিবের যেন মায়াঙ্কের দিকে নজরেই পড়ছে না। রাজিব মায়াঙ্ক’কে এড়িয়ে গিয়ে মায়ন্তীর মাকে সালাম জানায়।
আসসালামু আলাইকুম আন্টি। কেমন আছেন?
মায়ন্তীর মা যেন রাজিব’কে সহ্য করতেই পারছেনা। বলে ওয়ালাইকুমুস সালাম।
রাজিব তুমি এখানে?
হ্যাঁ আন্টি আসলে আজ বাবা-মা পুনরায় আসছেন। বিয়ের দিন-তারিখ ঠিক করতে। তাই একটু মায়ন্তীর সাথে কথা বলতে এসেছিলাম।
মায়াঙ্ক আর নিরবতা পালন করতে পারল না। উঠে পিছন থেকে রাজিবের কাঁধ শক্ত করে ধরে বলে রাজিব তুই আমাদের বাড়ির মেয়েকে এতটা ফেলনা ভেবেছিস? বিয়ে না হতেই তুই দেখা করতে চলে এসেছিস মেয়ের বাসায়? বেরিয়ে যা এখনি।
দাঁড়ান- রাজিব ভাইয়া আজ না হোক কাল এই বাড়ির হবু জামাই। উনি চাইলে আসতেই পারেন। মায়ন্তী পিছন থেকে বলে উঠে।
মায়াঙ্ক বলে উঠে মায়ন্তীইইইই—।
চলবে……………………………………….