মায়াবতী কাঞ্চনা পর্ব -০৮

#মায়াবতী_কাঞ্চনা
#সিমরান_মিমি
#পর্বসংখ্যা_০৮

ভোর সাতটা।দিনের আলো ফুটতেই এমন ধারালো সত্যের মুখোমুখি হবে সেটা ভাবেনি কাঞ্চনা।কহিনুর বেগম আর সুজন মির্জা কাঞ্চনাকে ধরে সোফায় বসালো।চোখের পাতলা পর্দার উপর সামান্য পানি ছিটিয়ে দিতেই নড়েচড়ে উঠলো কাঞ্চনা।জ্ঞানে আসতেই সবাইকে ফেলে ছুটলো বাড়ির দিকে।দোরগোড়ায় পা রাখতেই স্তব্ধ হয়ে গেল।

পুকুর থেকে বালতিতে পানি ভরে সেটা একটা মেয়ের সামনে দিচ্ছে সেলিম।মেয়েটাও বেশ যত্ন সহকারে মুখ-হাত ধুচ্ছে।কাঞ্চনা আরেকটু ভালো করে খেয়াল করলো মেয়েটার দিকে।দেখতে বেশ সুন্দর। যেমনি লম্বা,তেমনি আকর্ষণীয় দেহের গড়ন।তার উপর মুখটা কে একদম চাদের সাথে তুলনা করা যায়।চোখ দিয়ে না চাইতেও অশ্রু গড়িয়ে পড়লো।মেয়েটার দিকে তাকিয়ে নিজের হাত দুটোর দিকে একবার তাকালো কাঞ্চনা।বাদামী রঙের হাতদুটো দেখে নিজের প্রতি এক প্রথমবার এক বিতৃষ্ণা কাজ করলো।মেয়েটা কিছু বলতে বলতেই সেলিমের সাথে হেসে দিলো।অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো কাঞ্চনা।কি সুন্দর সেই হাসি!হাসলে গালের মাঝখানটাতে টোল পড়ে আশ্চর্য ভাবে ভিন্ন সৌন্দর্য তুলে ধরে।ডান হাতটা আলতো ভাবে তুলে নিজের গালে স্পর্শ করলো।কই তার তো কোনো টোল পড়ে না।না আছে কোনো সৌন্দর্য যা দিয়ে মুগ্ধ করবে সেলিমকে। কলি*জাটা দুম*ড়ে মু*চড়ে যাচ্ছে তার।

কাঞ্চনাকে উদভ্রান্তের মতো বাড়ির দিকে ছুটতে দেখে পিছু পিছু ভাই সুজন মির্জাও এসেছিলো।দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে সেলিমের পাশের মেয়েটাকে দেখে জ্বলে উঠলো।ছুটে গিয়ে সেলিমের কলার ধরলো।দাতে দাত খিচিয়ে বললো-

শু*য়ো*রের বাচ্চা।তোর সাহস কি ভাবে হয় আমার বোনকে রেখে আবার বিয়ে করার?কু*ত্তার বা*চ্চা তোকে আমি জেলের ভাত খাওয়াবো।

বিস্ময়ে বাকহারা হয়ে গেলো সেলিম।অতর্কিত এই আক্রমণ/চিৎকার/চেচামেচিতে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো মজিদ হাওলাদার। সকালবেলা এমন একটা নাটকের আয়োজন করেই ঘরে ওত পেতে দাঁড়িয়ে ছিলো রাবেয়া বেগম।সম্পর্কে সেলিমের সৎ চাচী।চেচামেচির আওয়াজ পেতেই তিনি ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন সাথে এলো আশে-পাশের প্রতিবেশীরাও।

কাঞ্চনা নির্বাক হয়ে উঠোনের এক কোনে বসে রইলো। যেন মুখ দিয়ে সামান্যতম শব্দ উচ্চারণ করার কোনো প্রয়াস নেই।কাঞ্চনা অবশ্যই সেলিমের চরিত্রে আঙুল ওঠাতে দেবে না ভেবেই নিশ্চুপ হয়ে হয়ে ছিলো কাঞ্চনা।কিন্তু তাকে নিরাশ করে সামান্য একজন দর্শকের ভুমিকা পালন করতেই বেশ আগ্রহী সে।সুবর্না আর মজিদ হাওলাদার মিলে সুজন মির্জাকে ছাড়ালেন।

সামনাসামনি কিছু না বললেও খুশীতে চোখ চকচক করছে মজিদ হাওলাদারের।ছেলে তার পরী ধরে এনেছে।যদি সে নিজের সুখের জন্য এমন কিছু করে তাহলে কখনোই ছেলের প্রতি নারাজ হবে না।এমনিতেও টাকার লোভে একটা হিংস্র/কুৎসিত মেয়ের সাথে বিয়ে দিয়েছে সে।ছেলে যদি তার ভুল শুধরে আবার বিয়ে করে তাতে সে বেজায় খুশি।

প্রতিবেশীদের চিল্লাপাল্লাতে সেলিম কথা বলার সুযোগ ই পাচ্ছে না।সবার একই কথা-

একজন শিক্ষিত,ভদ্র ছেলে হয়ে কি করে সে এই নিকৃষ্ট কাজটি করতে পারলো।প্রথম স্ত্রীর অনুমতি ব্যাতিত বিয়ে করেছে তার উপর সেই মেয়েকে নিয়ে একই বাড়িতে রাত কাটিয়েছে এটা সবচেয়ে নিকৃষ্ট কাজ।

আমি কাউকে বিয়ে করিনি।সুবর্না আমার ক্লাসেই পড়ে।ওকে শুধু মাত্র আশ্রয় দিয়েছি আমি।

পুরো উঠোনভর্তি মানুষের মধ্যে চেচিয়ে বললো সেলিম।তেতে উঠলো তার চাচা।বললো-

হ,আমরা তো কিচ্ছু বুঝি না।তোমার বান্ধবী রে তুমি আশ্রয় দিতে বাড়ি নিয়া আসছো তাও আবার বেনারসী -টসী পড়াইয়া।সিদা পাইছো আমাগো।

পুনরায় সবাই সেলিমের চাচার সাথে তাল মিলাতে লাগলো।

সেলিম পুনরায় চিৎকার করে বললো-

দেখুন,আমার কথাটা শুনুন।সুবর্নার কালকে বিয়ে ছিলো।কিন্তু ও বিয়েতে রাজী ছিল না।তাই ও পালিয়ে আমার কাছে এসেছে।

রাবেয়া বেগম হায়হায় করে উঠলেন।বললেন-

আল্লাহ গো।কি কয় এই পোলায়।বিয়া না কইরাই মাইয়া লইয়া বাড়ি আইছে।এক বাড়িতে রাইত কাডাইছে।হায় হায় আমাগো মুখ আর রাখলো না।ওই সেলিম,তোর যদি ধলা বউই লাগবো তয় তুই কাঞ্চনারে কইয়াই তো আবার বিয়া করতে পারতি।বিয়া না কইরাই মাইয়া লইয়া ঘরে ঢুকছোস ক্যান।ওই মাইয়া,তোমার লাঝ সরম নাই।বিয়াইত্তা এক বেডার কান্দে ঝুইলা পড়ছো।বাড়ি কই তোমার?এহন যে সেলিম তোমারে অস্বীকার করতেছে তাতে তোমার কত্ত বড় বিপদ হইবো তা তুমি জানো?সব সত্যি সত্যি কইয়া দাও।
সুবর্না ভয়ে ভয়ে সেলিমের দিকে তাকালো।তারপর উঠোনভর্তি মানুষের দিকে তাকিয়ে দম নিল।যাই হোক,আজ সত্য কথা বলবে সে।কতদিন আর এই সত্য চাপিয়ে রাখবে।নিচু কন্ঠে বললো-

আমি আর সেলিম দুজন দুজনকে অনেক আগে থেকেই চিনি।সেই প্রাইমারি থেকে এক সাথে পড়ি।আমি ওকে পছন্দও করি।ওকে ছাড়া দ্বিতীয় কাউকে বিয়ে করবো না বলেই বিয়ের আসর ছেড়ে পালিয়ে ওর কাছে এসেছি।কিন্তু আমি জানতাম না সেলিম বিয়ে করছে (বলেই কেদে দিলো।)

চঞ্চল চোখ দুটো পুনরায় অশ্রুতে ভেসে গেল।ভেবেছিল হয়তো এই মেয়েটা সব অস্বীকার করবে কিন্তু তা আর হলো না।ছোটবেলা থেকেই হয়তো একে অপরকে ভালোবাসে।মাঝখানে মায়ের চিকিৎসার জন্য কাঞ্চনাকে বাধ্য হয়ে বিয়ে করেছে সেলিম।দৃঢ় চিত্তে উঠে দাড়ালো কাঞ্চনা।ধীর পায়ে সেলিমের সামনে গিয়ে চোখের দিকে তাকিয়ে বললো-

তাহলে এই জন্য গত তিনদিন ধরে ভাইয়ের জ্বরের দোহাই দিয়ে আমাকে বাপের বাড়ি পাঠানোর জন্য উঠে পড়ে লেগেছিলেন। ভেবেছিলেন,একবার মেয়ে ঘরে উঠাতে পারলে সমাজের মানুষ তো চেপে ধরে হলেও বিয়ে দিয়ে দিবে। তাইতো?

থেমে,
কিন্তু এসবের কোনো দরকার ছিলো না। আমাকে যদি বিয়ের পরেও বলতেন, আপনার অন্য কোনো মেয়ের সাথে সম্পর্ক রয়েছে,আমার মতো কুৎসিত একটা মেয়ের সাথে সংসার করতে পারবেন না তাহলেই আমি চলে যেতাম।বিশ্বাস করুন চলে যেতাম।এর জন্য এতো মার,ঝগড়া, কথায় কথায় গায়ে হাত তোলার কোনো দরকার ছিলো না।

যাই হোক,আমার কোনো চাওয়া পাওয়া নেই ওনার কাছে।এদেরকে বিয়ে পড়িয়ে দিন। আমি মুক্তি দিয়ে দিলাম এদের।খুব শীঘ্রই ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দিব। (দুহাত দিয়ে চোখ দুটো মুছে ধীর পায়ে চলে গেল উঠানের বাইরে একে একে সবার দৃষ্টিসীমানার বাইরে।

অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো সেলিম।উঠোনভর্তি মানুষের চিৎকার চেচামেচির আওয়াজ ধীরে ধীরে বাড়তেই রইলো।অসহায় চিত্তে সুবর্নার দিকে তাকিয়ে রইলো।কাউকে সাহায্য করার পরিনাম যে এমনটা হবে তা ক্ষুণাক্ষরেও বুজতে পারেনি সেলিম।দম নিয়ে সুবর্নার দিকে তাকিয়ে বললো-

আমার সংসার টা এভাবে না ভাঙলেও পারতি।

কেদে দিল সুবর্না।বললো-

ভগবানের দোহাই,তুই বিশ্বাস কর।আমি যা বলেছি সব সত্যি।লজ্জায় কখনো তোকে বলি নি এসব। আমি তোর জন্যই বিয়ের মন্ডপ ছেড়ে পালিয়ে এসেছি।

চমকে তাকালো মজিদ হাওলাদার।একি,এ মেয়ে যে হিন্দু ধর্মের।হায়হায় করতে লাগলো প্রতিবেশীরা।শেষ পর্যন্ত অন্য ধর্মের মেয়ের সাথেও প্রেম করতে দিধা করেনি সেলিম।সুজন মির্জা ঘৃনার দৃষ্টিতে তাকালো সেলিমের দিকে।তারপর হনহন করে বেরিয়ে গেল বাড়ির বাইরে।

এদিকে ভয়ে,দুশ্চিন্তায়,উত্তেজনায় বুকে হাত দিয়ে বসে পড়লেন মজিদ হাওলাদার।প্রেশার হাই হয়ে ধীরে ধীরে বুকে ব্যাথা বাড়ছে তার।ছেলে তার কাল রাতেই সমস্ত ঘটনা খুলে বলেছে।সকাল হতে যখন শুনলো এই সেলিম বিয়ে করেছে তখন ভীষণ খুশি হলেও মেয়ে যে অন্য ধর্মের এটা ভেবেই শরীরের সমস্ত জোর হারালেন তিনি।গ্রামের লোক জোর করে হলেও এই বিয়ে দেবে। অতি দুশ্চিন্তায় স্ট্রক করে বসলেন তিনি।

এতো বিপদের মাঝখানে কোনো দিকে না তাকিয়েই বাবাকে নিয়ে দ্রুত হসপিটালে ছুটলো সেলিম।এতো এতো মানুষ অথচ সাহায্য করার মতো কেউ নেই।
বাবাকে হাসপাতালে চিকিৎসা ধীন রেখে ছুটলো সুবর্নার বাড়িতে।সুবর্নার বাবা-মাকে নিয়ে বিকেলে বাড়ি আসতেই পুনরায় গ্রামে সালিশ বসলো।
তার বাবা-মা কোনো মতেই ভিন্নধর্মী ছেলের সাথে মেয়ের বিয়ে দেবে না।এদিকে মেয়ের পরিচয় জেনে ভীষণ দুশ্চিন্তায় পড়লো সেলিমের চাচা।

কাঞ্চনা যাতে তেজ দেখাতে না পারে সেই জন্যই তাকে তাড়িয়েছে।কিন্তু এ মেয়ে যে রায় বাড়ির মেয়ে।একে ধরে কোনোমতে বিয়ে করিয়ে দিলে তো দুদিনের মধ্যে চোট-পাট করে তাদের কে তাড়িয়ে দিতে সময় লাগবে না।অংক কষতে ভীষণ ভুল করে ফেলেছেন তারা।গ্রামের মুরব্বীদের সাথে মত বিনিময় করে শেষ পর্যন্ত যাদের মেয়ে তাদের হাতেই দিয়ে দিলেন।

সালিশ শেষ হয়েছে রাত আটটায়।সেলিম ভেবেছিলো সালিশির সিদ্ধান্ত জানার পরে কাঞ্চনা নিজে থেকেই ফিরে আসবে।কিন্তু তা আর হলো না।পরের দিন জানতে পারলো কাঞ্চনা সেদিন দুপুরেই ঢাকার বাসে ঢাকা গিয়েছে।কাঞ্চনার গায়ে হাত তুলতো সেলিম জানার পর থেকেই আক্রোশে ফেটে পড়েছেন সুজন।আর যাই হোক,বোনকে পুনরায় এই ঘরে তিনি পাঠাবেন না।সেই ভাবনা করেই সালিশির পরিনতি বোনকে জানালেন না।

ভীষন ভাবে ভেঙে পড়লো সেলিম। বাবার এক সাইড প্যারালাইজড হয়ে গেছে৷ হাতে যা টাকা ছিলো তা কোথায় রেখেছে সেটুকুও বলতে পারছেন না শেষে বাধ্য হয়ে দোকান টুকু চাচার কাছে বিক্রি করে দিলেন।দুপুরের রান্না করে টাকা নিয়ে হস্পিটালে যেতেই স্তব্ধ হয়ে যায় সেলিম।কুড়ি মিনিট আগেই মজিদ হাওলাদার ইন্তেকাল করেছেন।পুরো পৃথিবী যেন তছনছ হয়ে যায় তার।
আশে পাশে কত মানুষ অথচ তার কাধে হাত রাখার মতো কেউ নেই। ধীরে ধীরে আরো শক্ত হয়ে যায় সে। কাঞ্চনা যদি নিজে থেকে কখনো না ফেরে তাহলে সে কখনোই তাকে ফেরাবে না এমন ভাবনা করেই ধীরে ধীরে নিজের লেখাপড়ায় মনযোগ দেয়। এদিকে মজিদ হাওলাদারের মৃত্যুর পনের দিন পরে কাঞ্চনা জানতে পারে সকল কথা।প্রথম প্রথম চক্ষুলজ্জার কারনে না ফিরলেও পরবর্তীতে কঠিন হয়ে যায়।সেলিম কি তাকে ফেরাতে পারতো না।এতটাই ঠুনকো সে তার কাছে।যদি সে থাকতে পারে তবে কাঞ্চনা কেন পারবে না।
এভাবেই দুজনার নিজস্ব আত্নসম্মান আর জেদের কারনে ধীরে ধীরে সম্পর্ক টা আরো দুর্বল হয়ে যায়।বাড়তে থাকে দুরত্ব। দায়ী করতে থাকে একজন অন্যজনকে।

__________
__________
দুহাতে মুখ ঢেকে ডুকরে কেদে ওঠে কাঞ্চনা।কি হতো, সেদিন আরেকটা দিন গ্রামে থাকলে?তাহলে আজ এই তের বছর একাকীত্বের মধ্যে থাকতে হতো না।আর নাতো সেলিম এতো কষ্ট পেতো।সেলিমের কথা মনে আসতেই জ্বরের কথা খেয়ালে এলো।তৎক্ষণাৎ উঠে দাঁড়িয়ে সেলিমের বাড়ির সামনে এলো।আগের সেই টিনের ঘর আর নেই।বেশ সুন্দরভাবে একতালা দালান ঊঠানো হয়েছে। সদর দরজা ধরতেই মড়মড়িয়ে খুলে গেল দরজা।মুখে হাসি ফুটলো কাঞ্চনার। সেলিম হয়তো নিজে থেকেই কাঞ্চনার জন্য দরজা খুলে রেখেছো নয়তো জ্বরের ঘোরে দরজা লাগাতে ভুলে গেছে । ধীর পায়ে বেশ সন্তর্পনে ঘরের মধ্যে ঢুকলো।সামনে বেশ খোলামেলা মেহমানদের জায়গা বানানো হয়েছে।ডান পাশের রুমের আলো জালানো দেখেই সেদিকে গেল কাঞ্চনা।খাটের উপর উপুড় হয়ে পড়ে আছে সেলিম।কতক্ষণ পর পর শিউরে উঠছে দেহটা।দ্রুতপায়ে গিয়ে খাটের উপর বসলো কাঞ্চনা।সেলিমকে ঠেলে ভালো করে শোয়ালো।কাঞ্চনাকে খুব একটা সাহায্য না করলেও বাধাও দিল না সেলিম।

ওষুধ খেয়েছেন?(শান্ত স্বরে বললো কাঞ্চনা)

নাহ,

কাঞ্চনা-না মানে,গায়ে কত্ত জর আর আপনি এখনো ওষুধ খান নি।(ধমকের সরে কথাগুলো বলে টেবিলের কাছে গেল।ছোট্ট একটা ঝুড়িতে অনেকগুলো ওষুধ রাখা।সেখান থেকে ওষুধ খুজতেই পুনরায় সেলিমকে বললো-

কিছু খেয়েছেন?

বরাবরের মতো নাহ উত্তর ভেসে আসলো।ক্রোধে ফেটে পড়লো কাঞ্চনা। কিন্তু সেটা প্রকাশ করলো না।দ্রুতপায়ে ছুটে গেলো রান্নাঘরে। গিয়েই অবাক হয়ে গেল।সব বাসন ধোয়া মোছা, সাজানো।কোনো রান্নাই হয়নি।পুনরায় সেলিমের কাছে আসলো কাঞ্চনা।

শেফালী চাচী রান্না করেনি?আপনি দুপুরে কি খেয়েছেন?

সেলিম বরাবরের মতো শান্ত গলায় বলল-
নাহ,রান্না করতে বারন করেছিলাম।

চেচিয়ে উঠল কাঞ্চনা।বলল-

তাহলে কি খাবেন আপনি।

সেলিম নিরব।থমথম করে হেটে পুনরায় রান্নাঘরে গেল কাঞ্চনা।ফ্রিজ থেকে দুটো ডিম নামিয়ে অমলেট করলো।তারপর সেটা সেলিমকে জোর করে খাইয়ে দিয়ে ওষুধ খাওয়ালো।গায়ে কাথা দিয়ে শুইয়ে দিয়ে পুনরায় চললো রান্নাঘরে রুটি বানাতে।

রাত বারোটা তখন।সেলিমকে রুটি খাইয়ে দিচ্ছে কাঞ্চনা।নিশ্চুপ বাচ্চাদের মতো ফ্যালফাল করে তাকিয়ে শান্তভাবে খেয়ে নিচ্ছে সেলিম।হঠাৎ মুখ ফুটিয়ে শান্ত ভাবে বললো-

আজ সব ঠিকঠাক থাকলে আমাদের একটা বাচ্চা থাকতো।তাই না কাঞ্চনা?পুরো বাড়ি জুড়ো দৌড়াতো, হাসতো,খেলতো।আর এখন?

চোখ ছল ছল করে উঠলো কাঞ্চনার।আবেগকে আটকে না রাখতে পেরেই সেলিম কে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেদে দিল।

এরইমধ্যে ঠাস ঠাস করে সদর দরজায় ধাক্কার আওয়াজ এলো।বাইরে থেকে প্রচুর চিৎকার চেচামেচির আওয়াজ আসছে।

চলবে?

প্রিয় পাঠক,গল্পের প্রয়োজনে ধর্ম,গায়ের রঙ অনেক কিছু নিয়েই কটু কথা লিখতে হচ্ছে। এগুলো শুধুমাত্র সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকেই লিখছি আমি।তাই দয়া করে কেউ নারাজ হবেন না।আমি তারপরেও এসব লেখার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here