মায়াবিনী_মানবী পর্ব ৮

#মায়াবিনী_মানবী
#হুমাশা_এহতেশাম
#পর্ব_০৮

–আপনি আপনার বাবার সাথে ভালো বিহেভ করেন না কেন?

জুইঁর প্রশ্নে আলআবি থমকে দাঁড়িয়ে পরল।জুইঁ আলআবির দিকে চোখ ঘুরাতেই দেখল আলআবি থমথমে মুখ করে সোজা তাকিয়ে আছে। আলআবি কথা বলছে না দেখে জুইঁ বিপাকে পড়ে গেল।ওর মনে হচ্ছে আলআবিকে এই প্রশ্নটা করে কোন গুরুতর ভুল করে ফেলেছে।জুইঁ ভাবছে আলআবি রেগে গিয়েছে।তাই জুইঁ আর উত্তর এর আশা না করে এক পা সামনে এগোতে ই আলআবি বলে উঠলো…

–সময় হলে একদিন না একদিন তুমি জেনেই যাবে।তাই এমন প্রশ্ন আর কখনো করবে না।

জুইঁ আর কোন প্রশ্ন করল না।আরও কিছু সময় হাঁটাহাঁটি করে বাড়ি এসে পরল।বাড়ি আসতেই দুজনের মিসেস পারভীনের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল।
ওদের দুজনকে সকাল সকাল বাইরে থেকে আসতে দেখে আলআবি কে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞেস করলেন…

–এতো সকালে তোরা কোথায় গিয়েছিলি?

–মা বেনজিকে নিয়ে হাঁটতে গিয়েছিলাম।(আলআবি)

মিসেস পারভীন জুইঁকে জিজ্ঞেস করলেন…

–জুইঁ? আমাকে বলে যাসনি কেন?

–আমি যেতে চেয়েছিলাম নাকি?আলআবি ভাইয়া তো…..

জুইঁ তার কথা শেষ করার আগেই মিসেস পারভীন বলে উঠলেন…

–আলআবি তুই ওকে জোর করে নিয়ে গিয়েছিলি?

জুইঁ তড়িঘড়ি করে বলল…

–হ্যাঁ।হ্যাঁ আমাকে জোর করে নিয়ে গিয়েছিল।

জুইঁ ঘাড় হালকা ঘুড়িয়ে আলআবির দিকে তাকাতেই আলআবির অগ্নিমূর্তির রূপ দেখে ভয়ে ভয়ে একটা শুকনো ঢোক গিলে মিসেস পারভীন কে বলল…

–আসলে জোর করে নিয়ে গিয়েছিল কিন্তু পরে ভালো লেগেছে। সকাল সকাল হাঁটতে আসলেই অনেক ভালো লাগে।বেনজির সাথে হেঁটেও অনেক মজা পেয়েছি।

আলআবির দিকে আড়চোখে তাকিয়ে দেখল এখনও আলআবি নিজের মধ্যে ক্রোধভাব ধরে রেখেছে। জুইঁ মিসেস পারভীন কে বলে দ্রুত পা চালিয়ে নিজের রুমে চলে গেল।

হরমোন এর বিক্রিয়া ভালোবাসা ঘটাতে সাহায্য করে। মানব দেহের মস্তিষ্কে রয়েছে ভেনট্রাল টেগমেন্টাল এরিয়া(ভিটিএ)।এই এরিয়ার এ১০ নামক কোষ ডোপামিন তৈরি করে থাকে। মস্তিষ্কের ডোপামিন এর সঙ্গে নোরিপাইন নামের আরও একটি রাসায়নিক উচ্চমাত্রায় যুক্ত থাকে। ডোপামিন ও নোরিপাইন রাসায়নিকের কারণে দুটি বিপরীত লিঙ্গ একসঙ্গে সময় কাটানোর ইচ্ছা পোষণ করে। যা মূলত আলআবি আর জুইঁর সঙ্গে হচ্ছে।

ঘড়ির কাঁটা ক্রমাগত চক্রাকারে ঘুরতে ঘুরতে জুইঁ আর আলআবিকে এক সপ্তাহ সামনে এগিয়ে নিয়ে এসেছে। এক সপ্তাহ হতে চলেছে তাদের বন্ধুত্ব নামক সম্পর্কের।জীবনের ১৬৮ ঘন্টা তারা পাড় করে নিজেদের মধ্যে একটা সম্পর্কের নাম দিয়েছে তা হল বন্ধু।

আলআবির উপর প্রথম প্রথম বিরক্ত হলেও এখন তারা স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। জুই এখন আলআবির প্রত্যেকটা কাজে ভালো লাগার অনুভুতি কে অনুভব করতে পারে।

জুইঁ আলআবি উভয়ই মানুষ। তাদের দুজনেরই সেরোটোনিন নামক একটা হরমোন রয়েছে। এই হরমোন টাকে হ্যাপি ক্যামিকেল ও বলা হয়ে থাকে। হ্যাপি কেমিক্যাল বলার কারণ হলো একটাই। তা হলো প্রেম। এই প্রেমের প্রাথমিক পর্যায় হলো মৌহ। একজন যুবক ও যুবতীর মধ্যে মোহ সৃষ্টি হয় সেরেটোনিন হরমোন নিঃসরণ এর ফলে ই।

জুইঁ ও প্রেমের প্রথম ধাপ অর্থাৎ মোহ পার করে ফেলেছে। কেবল এক সপ্তার পরিচয়ে জুইঁর আলআবির সঙ্গে সময় কাটাতে ভালো লাগে। আলআবির সঙ্গে থাকলে নিজেকে খুব নিরাপদ মনে হয়। জুইঁর জানা নেই এটা ভালোলাগা নাকি ভালোবাসা তবে তার মনে হয় ভালোলাগা আর ভালোবাসার মাঝামাঝি যে মায়া নামক অনুভূতি রয়েছে জুই আলাবির জন্য সেটাই অনুভব করে।

রোজকার মতো আজও দুজন মানব মানবী স্বচ্ছ গোলাকৃতির থালার ন্যায় চাঁদের আলো গায়ে মাখিয়ে পাশাপাশি বসে আছে।হৃদয়ে তাদের একই সুর।তবে অব্যক্ত আজও। এদের একজন জুইঁ আর একজন আলআবি। জুইঁ তার হাতের অর্ধেক কফি পূর্ণ মগে চুমুক দিয়ে হাসি হাসি মুখ করে আলআবি কে বলল…

–চলুন না তারা গুনি।যে যত বেশি গুনতে পারবে আগামীকাল সে তার সব কথা মেনে চলবে। মানে আমি আপনার থেকে বেশি গুনলে আপনি আগামীকাল আমার সব কথা কথা মেনে চলবেন।

আলআবি জুইঁ কে পাল্টা প্রশ্ন করে…

–আর আমি বেশি গুনলে কে কার কথা শুনবে?

–কি শুনব আবার।সেই এসে থেকেই তো আপনার কথা পাই টু পাই শুনছি।(জুইঁ)

আলআবি কফির মগটা পাশে রেখে জুইঁর দিকে পূর্ণ দৃষ্টি দিয়ে বলল…

–তুমি হেরে গেলে কালকে সকালে নিজ হাতে নাস্তা বানাবে।রাজি?

জুইঁ ভাব নিয়ে বলল…

–দু’শো বার রাজি।

জুইঁ গুনতে শুরু করলো…

–১ ২ ৩ ৪ ৫ ৬ ৭

হঠাৎ করে কানে শুনতে পেল আলআবি গুনছে…

–১০,২০,৩০,৪০,৫০,১০০

জুইঁ আলআবি থামিয়ে দিয়ে বলল…

–এই! এই! আপনার গোনা হচ্ছে না। ১০০ টা তারা কোথা থেকে দেখলেন?

আলআবি অবিশ্বাসের সহিত বলল…

–আরে তুমি দেখতে পাচ্ছ না?

জুইঁ ভ্রু কুটি করে আলআবির দিকে তাকাতেই আলআবি আবার বলে উঠলো…

–তোমার তো চোখে চশমা নেই তাই হয়তো দেখতে পারছ না।ব্যাপার না।নাও আমার চশমা চোখে লাগিয়ে দেখ।

আলআবি চশমা খুলতে খুলতে কথা গুলো বলল।জুইঁ কপট রাগ দেখিয়ে বলল…

–ফাজলামো করছেন আমার সাথে?

কথা টা শেষ করে ই আবার বলে উঠলো…

–ঠিক বলেছেন। আপনার ওই মোটা গ্লাসের চশমা পড়ে যদি আকাশের দিকে তাকাই তাহলে তারা একটার জায়গা পাঁচটা তো দেখবোই।

আলআবি চশমা টাও খুলে কফির মগের পাশে রাখল।তারপর জুইঁকে উদ্দেশ্য করে বলল…

–ফাজলামো তো তুমি করছো।পুরো আকাশে কয়টা তাঁরা আছে তাতো তোমার অংকের মাস্টার বাবাও বলতে পারবে না।

–তাহলে আমি যখন বললাম তাঁরা গুনবো তখন কিছু বললেন না কেন।

আলআবি মুচকি হেসে জবাব দিল…

–তোমার তখন তাঁরা গুনতে ইচ্ছে হয়েছিল তাই বাঁধা দেই নি।ইচ্ছে কে কখনো দমিয়ে রাখতে হয় না।এইসব ছোট ছোট ইচ্ছে গুলো পুরণ করলে আমাদের মন অনেক ভালো থাকে।

জুইঁর সামনে বসা লোকটা তার ছোট ভিত্তিহীন ইচ্ছে টাকেও কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে। অন্য কেউ হলে হয়তো হেসেই উরিয়ে দিত।বা এমন কোন কথা বলতো যাতে তার ইচ্ছে টা পূরণ করার ইচ্ছে ই শেষ হয়ে যেত।এসব ভেবেই জুইঁর অনেক শান্তি লাগছে।

আলআবি জুইঁ কে বলে উঠলো…

–চলো অন্য একটা টেকনিক ইউজ করি। করবে?

–কি?(জুইঁ)

আলআবি বলতে লাগলো…

–তুমি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকবপ আর আমি তোমার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকব।যার চোখের পাতা আগে পড়বে অর্থ্যাৎ যে সর্বপ্রথম পলক ফেলবে সে হেরে যাবে।

জুইঁ আলআবির কথায় কোন আপত্তি জানালো না।কারণ সে সুযোগ পেয়ে গেল আলআবির চোখে চোখ রাখার।দুদিন ধরে শুধু জুইঁর আলআবিকে দেখতে ইচ্ছে করে।রোজ সকালে যখন হাঁটতে যায় অথবা বিকেলে বাগানে সবাই একসাথে বসে তখন জুইঁ আড় চোখে একটু পর পর আলআবি কে দেখে নেয়।

চলবে………….

[বিঃদ্রঃ গল্পটি সম্পূর্ণরূপে কাল্পনিক।গল্পের সকল প্রকার চরিত্র, উক্তি কাল্পনিক।অনুগ্রহ করে বাস্তবিক অর্থ খুজতে গিয়ে বিভ্রান্ত হবেন না আর লেখিকা কে ও বিভ্রান্ত করবেন না]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here