#মুখোশের_আড়ালে
#পর্ব_৪
#Saji_Afroz
.
.
বিকেলে নিজের বাগানে হাঁটাহাঁটি করা মিয়াজ শেখের অভ্যেস ৷ আজও এর ব্যতিক্রম হলোনা । বাগানে পায়চারী করছেন তিনি । হঠাৎ একটি মেয়েলি কণ্ঠস্বর তার কানে এলো-
আমারো খুব ইচ্ছে, এমন ফুলের বাগান করার ৷ করবো করবো বলে করা হয়ে উঠেনি ।
.
পেছনে ফিরে পৌষীকে দেখে বেশ অবাকই হলেন মিয়াজ শেখ । মৃদু হেসে বললেন-
পৌষি! কি অবস্থা তোমার?
-ভালোই । আপনার?
-আমিও ভালো আছি । তুমি হঠাৎ?
-নিমন্ত্রণ আপনিই করেছিলেন ।
-তা করেছি । কিন্তু এভাবে হুট করে আশা করিনি ।
-তবে চলে যাই?
-আমি ওভাবে বিষয়টা বুঝাইনি । আমি চেয়েছি তুমি আসো । তাইতো ফোন দিয়েছিলাম । তবে এখন হঠাৎই দেখলাম…
-সুযোগ পেয়েছি, চলে এসেছি ।
-বেশ ভালো করেছো । তোমার স্বামী কোথায়?
-সে অফিসে ।
-ও আচ্ছা ।
.
এরইমাঝে বাগানে এসে উপস্থিত হলেন আমেনা বেগম ।
পৌষী তার পাশে এসে সালাম জানিয়ে জড়িয়ে ধরলেন তাকে ।
পৌষীর সাথে কিছুক্ষণ কথা বললেন তিনি । বেশ ভালোই লাগলো পৌষীকে ।
কথার এক পর্যায়ে তিনি বললেন-
তোমরা কথা বলো, আমি চায়ের ব্যবস্থা করছি ।
-আন্টি কোনো প্রয়োজন নেই এসবের ।
-তোমার না থাকলেও আমার আছে । প্রথমবার আমার বাড়িতে এসেছো তুমি ।
.
আমেনা বেগম ভেতরের দিকে এগিয়ে গেলে মিয়াজ শেখ বললেন-
জানতে চাইছোনা কেনো তোমাকে আসতে বলেছি?
-আমাকে নিশ্চয় ভালো লেগেছে আপনার ।
.
কথাটি বলেই হেসে ফেললো পৌষী ।
মিয়াজ শেখও হালকা হেসে বললেন-
তাতো লেগেছে বটেই! ভারী মিষ্টি মেয়ে তুমি । তবে তোমাকে আমি ডেকেছি একটি বিশেষ কারণে ।
-সে যে কারণই হোক না কেনো! আপনি আমার প্রিয় ব্যক্তিদের মাঝে একজন । পরিচিত হবার সুযোগ পেয়েছি এটাই অনেক ।
-তোমাকেও মানুষের কাছে প্রিয় বানাতে চাই আমি ।
-বুঝলাম না ।
-তোমার সাথে কাজ করতে চাই । আমি চাই তোমার কবিতার বই বের হোক । মানুষ তোমাকে চিনুক । তুমিও মানুষের কাছে প্রিয় হয়ে উঠো ।
.
মিয়াজ শেখের মুখে কথাটি শুনে স্তব্ধ হয়ে গেলো পৌষী । ছলছল করে উঠলো তার দুচোখ ।
মিয়াজ শেখ বললেন-
তোমার মতামত জানতে চাই ।
.
পৌষী কিছু বলার আগেই আমেনা বেগম এসে বললেন-
ভেতরে এসো তোমরা । চা হয়েছে ।
.
.
অফিসের কাজে ব্যস্ত ছিলো ফাহাদ । এমন সময় রবিন আসলো ৷ দুজনে একই অফিসে কাজ করে ।
রবিনকে দেখে ফাহাদ বলে উঠলো-
কিরে?
.
চেয়ারের উপর বসতে বসতে রবিন বললো-
কাল মিয়াজ চাচা পৌষী ভাবীর ফোন নাম্বার চেয়েছিলেন । উনার নাম্বার নেই আমার কাছে । তোরটা দিয়েছিলাম ৷ ফোন করেছিলো?
-হ্যাঁ ।
-কি বলেছে?
-বাসায় যেতে বলেছে ।
-কি বলিস! আমারেই বললো না কখনো । কেইসটা কি?
-আমিও বুঝতে পারছিনা ।
-আমি মনেহয় পারছি ।
-কি?
-সেদিন ভাবী কবিতা শুনাইলো চাচারে । নিশ্চয় ভাবীর কবিতা চাচার মনে ধরেছে । তাকে কোনো ভালো অফার দিতে পারে ।
-যেমন?
-বই বের করার ।
-পৌষী আর বই!
-কেনো রে! ভাবীতো ভালোই কবিতা বলেছিলো সেদিন । তার নিজের লেখা ছিলো সেটি ।
-এসব… বাদ দে । তুই বুঝবিনা ।
-আমি আগেও খেয়াল করেছি ফাহাদ । তুই সবসময় ভাবীকে ছোট করে দেখিস । এটা ঠিক না । মাশআল্লাহ ভাবী কতো সুন্দরী । তার রান্না খেয়েছি । অনেক ভালো রান্না । ব্যবহার, আদব-কায়দা সবই ভালো ৷ এখন দেখছি সাহিত্যের দিকেও আগ্রহ আছে । তবে সমস্যা কি?
.
ফাহাদকে নিশ্চুপ দেখে রবিন বললো-
আমি জানিনা তোদের মাঝে কি চলছে । তবে ফাহাদ তোর এসব আচরণ আমার ভালো লাগছেনা । ভাবীরে প্রায়োরিটি দে । উনি তোর স্ত্রী!
.
.
আমেনা বেগমের সাথে তার বাড়ি ঘুরে দেখছে পৌষী ।
আমেনা বেগম বললেন-
আমি এতো কিছু জিজ্ঞাসা করলাম তোমাকে । তুমি তো কিছু করো?
-আপনাদের ছেলেমেয়ে কেউ থাকেনা এই বাসায়?
-আমাদের একটাই ছেলে । সে এখানে থাকেনা । ব্যবসার কাজের জন্য ঢাকায় থাকতে হয় । আমাদের আরেকটা বাড়ি আছে ওখানে ।
-একা থাকে ওখানে?
-কাজের লোক রাখা আছে । আমিও যাই । আমি ৬মাস এখানে থাকলে ৬মাস ওখানে থাকি । আমার কাছে স্বামী সন্তান দুজনেই প্রিয় ।
-সবাই একসাথে থাকতেই পারেন ঢাকায় । যেহেতু বাড়িও আছে ।
-আমি চেয়েছি । কিন্তু তোমার আঙ্কেল এখান থেকে যেতে চাননা । তিনি বলেন, এটাই তার শান্তি নিবাস । তার পিতার ছোঁয়া আছে এই বাড়িতে ।
-বাড়ির নাম দেখেছি আমি । আসলেই সুন্দর নাম । শান্তি নিবাস!
.
.
আজ সন্ধ্যে সাতটায় অফিস থেকে বাসায় ফিরে এসেছে ফাহাদ । কিন্তু দরজায় তালা লাগানো দেখে চমকে গেলো সে । পৌষী এই সময়ে গেলো কোথায়? তাকে জানালোও না ফোন করে ।
পকেটে হাত দিয়ে ফোন বের করতেই পৌষীর কণ্ঠ শুনতে পেলো ফাহাদ ।
-আজ এতো তাড়াতাড়ি চলে এসেছেন?
.
পৌষীর কথার উত্তর না দিয়ে ফাহাদ বললো-
কোথায় গিয়েছিলে তুমি?
.
চাবি দিয়ে তালা খুলতে খুলতে জবাব দিলো সে-
একটু কাজ ছিলো ।
.
ভেতরে প্রবেশ করতেই খুব জোরে শব্দ করে দরজাটা বন্ধ করলো ফাহাদ ।
পৌষী তার দিকে তাকাতেই সে বললো-
তোমাকে এই সময়ে বাসা থেকে কে বের হতে বলেছে? কোনো কিছুর প্রয়োজন হলে আমাকেই ফোন করে বলতে!
-আপনার আগের সিম বদলিয়েছেন । এটা অবশ্য সবাইকে দিয়েছিলেন, আমাকে ছাড়া ।
.
পৌষীর কথা শুনে থেমে গেলো ফাহাদ ।
আসলেই তো! নতুন সিমের নাম্বারটা পৌষী জানেনা ।
নিজের মোবাইলটা এগিয়ে দিয়ে পৌষী বললো-
নতুন নাম্বারটা তুলে দিন আপনার ।
.
.
আমেনা বেগমকে চিন্তিত দেখে মিয়াজ শেখ বললেন-
আমার বিবিকে চিন্তিত মনে হচ্ছে?
-হ্যাঁ ।
-কি নিয়ে?
-পৌষীকে দেখে আজ একজনের কথা মনে পড়ে গেলো ।
-আমি জানি কার কথা বলছো তুমি ।
-তুমি মানুষটা অনেক ভালো । এই সুযোগে তোমার…
-আমার সবটা মাথায় আছে আমেনা । তবে পৌষী অন্যরকম এটা অস্বীকার করা যাবেনা । সবাই তো এক নয় ।
-এটা ঠিক!
-চিন্তা করোনা ।
-হুম ।
-দেখি তোমার ছেলেকে ভিডিও কল দাও । তার সাথে কথা বলো, ভালো লাগবে ।
.
মিয়াজ শেখের কথামতো ছেলেকে ফোন করে কথা বলতে থাকলেন আমেনা বেগম । মিয়াজ শেখ জানেন, আমেনা বেগমের দুশ্চিন্তা কিভাবে দূর করা যায় ।
.
.
অনেকক্ষণ যাবৎ উষ্ণের ফেবু এর প্রোফাইল দেখে চলেছে পৌষী ।
উষ্ণে ছবিতে মেয়েদের নানারকম কমেন্ট দেখে হেসে চলেছে সে ।
ফাহাদ এসে বললো-
পৌষী আমার…
.
ফাহাদকে থামিয়ে সে বললো-
বিরক্ত করবেন না ।
-কেনো! এখন তো তুমি উষ্ণ কে দেখছোনা ।
-উষ্ণ এর ছবিতে মেয়েদের কমেন্ট দেখছি । কতো মেয়ে ওর জন্য পাগল । কিন্তু ও কাউকে পাত্তাই দেয়না ।
.
কথাটি বলে আবারো হাসলো পৌষী ।
ফাহাদ তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো-
এমন ভাব নিয়ে বলছো যেনো তোমাকে খুব পাত্তা দেয় ।
-চাইনি তাই দেয়না । চাইলে নিশ্চয় দিতো ।
-তোমার আইডির নাম দেখলেই ইগনোর করবে । কি যেনো? ডানা কাটা পরী ।
.
কথাটি বলেই হাসতে থাকলো ফাহাদ ।
পৌষী বললো-
আমার গ্রামের এক বড় ভাই খুলে দিয়েছিলো এই নামে । আমাকে দেখতে তার পরীর মতো লাগে তাই ।
-এসব আগেও বলেছো । কিন্তু এসব তো আর উষ্ণ জানেনা । এমন নামের রিকোয়েস্ট সে এক্সেপ্ট করবেনা ।
-আমি রিকোয়েস্ট দিলেই এক্সেপ্ট করবে ।
-তাই নাকি! দেখাও তো?
-তাই দেখাচ্ছি ।
.
উষ্ণ এর আইডিতে রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে দিলো পৌষী ।
ফাহাদ রুম থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে বললো-
এক্সেপ্ট করলে বইলো ।
.
পৌষী জানে, কি করলে উষ্ণ তার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট এক্সেপ্ট করবে ।
ডায়েরিতে নিজের সুন্দর হাতের লেখা দিয়ে চটজলদি একটি কবিতা লিখে ফেললো পৌষী । সেটির ছবি তুলে প্রোফাইল পিকচার দিলো সে ।
উষ্ণের চোখ কবিতাতে পড়লেই রিকোয়েস্ট এক্সেপ্ট করবে সে । না করে পারবেই না!
.
চলবে