#মুগ্ধতায়_তুমি
#পর্বঃ৪
#Saiyara_Hossain_Kayanat
হঠাৎ করেই কেউ আমাকে হেচকা টান দিয়ে আমার ডান হাতটা পিছনের দিকে মুচড়ে ধরলো। মাথা ঘুরিয়ে পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখলাম শুভ্র ভাই। কিন্তু উনি কেন এমন করছেন!! আর কিছু ভাবার আগেই শুভ্র ভাই শক্ত গলায় বললেন-
—”সাইফের থেকে একটু দূরত্ব বজায় রাখতে পারিস না?? কোন ছেলে যেন নেক্সট টাইম তোর গায়ে হাত দেওয়ার সুযোগ না পায় মনে রাখিস।”
আমি এক ঝাটকায় নিজের হাত ছাড়িয়ে কিছুটা দূরে গিয়ে মৃদু চিৎকারে বললাম-
—”আজব আপনি আমার সাথে এমন কেন করছেন? একটা মেয়ের সাথে এমন বিহেভ করতে আপনার বিবেকে বাধে না!!”
শুভ্র ভাই আমার কিছুটা সামনে এসে একটু ঝুকে আমার মুখোমুখি হয়ে বললেন-
—”এই প্রশ্ন গুলোর উত্তর তোর এখন না জানলেও হবে আপাতত আমি তোকে যা বলেছি তা মেনে চল না হলে নেক্সট টাইম থাপ্পড় খাওয়ার জন্য রেডি থাকিস।”
কথা গুলো বলে শুভ্র ভাই সাথে সাথেই চলে গেলেন। আমি ভাবতে লাগলাম একটু আগে ঘটে যাওয়া ঘটনাটার কথা। শুভ্র ভাই আমার সাথে এতো বাজে ব্যবহার কেন করেন সব সময়। আমিও কেন যেন ওনাকে কিছুই বলতে পারি না। তবে কেন যেন ওনার কথা গুলো আগেও শুনেছি বলে মনে হলো কিন্তু কখন আর কার কাছ থেকে কিছুই মনে পরছে না।
——————
দুইদিন পার হয়ে গেল ওই ঘটনার পর শুভ্র ভাইকে যতটা পারছি এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছি কিন্তু হচ্ছে একদম তার উল্টো। যেখানই যাই সেখানেই শুভ্র ভাইয়ের সামনে পরি। আর কথায় কথায় শুভ্র ভাইয়ের ধমক খাওয়া যেন এখন আমার প্রতিদিনের রুটিন হয়ে গেছে। না চাইতেও ওনাকে এখন প্রচুর ভয় পাচ্ছি। আর অর্ক ভাইয়ের সামনে ধমক দিলেও অর্ক ভাই কিছুই বলে না বরং এমন একটা ভাব নিয়ে থাকে যেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এদের কাউকেই আমার কাছে স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না।
বিয়ের আর মাত্র পাঁচদিন বাকি মেহমান আসা শুরু হয়ে গেছে। আম্মু আর ভাইয়াও চলে আসছে আর আব্বুর কাজ থাকায় বিয়ের দু’দিন আগে আসবে৷
আম্মু আর ভাইয়ার সাথে শুভ্র ভাইয়ের একদম গলায়া গলায় ভাব মনে হয় যেন পরিবারেরই একজন। ওনারা আগে থেকেই চিনে একে অপরকে শুধু মাত্র আমিই চিনতাম না কি অদ্ভুত ব্যাপার। শুভ্র ভাই আম্মুর সাথে কথা বলছে তখন আমি অর্ক ভাইয়ার পাশে দাঁড়িয়ে শুভ্র ভাইকে দেখিয়ে বললাম-
—”আচ্ছা ভাইয়া ওনারা সবাই একে অপরকে আগে থেকে কিভাবে চিনে?”
—”আরিয়ানকে চিনিস?? তোর আব্বুর ফ্রেন্ডের ছেলে”
—”হ্যাঁ চিনি ছোট বেলা দেখেছিলাম তেমন একটা মনে নেই এখন। তবে আব্বুর ফ্রেন্ডের সাথে আমাদের খুব সম্পর্ক। কিন্তু তুমি এখন ওদের কথা কেন বললে?”
অর্ক ভাই সামনের সোফায় বসে থাকা শুভ্র ভাইকে দেখিয়ে বললেন-
—”ওই যে আরিয়ান হাসান শুভ্র এবার বুঝতে পেরেছিস নাকি আরও সহজ করতে হবে।”
আমি ভাইয়ের কথা শুনে থ মেরে বসে রইলাম অবাক লাগছে খুব। অর্ক ভাই আমার মাথায়া একটা টোকা দিয়ে আবার বলা শুরু করলেন-
—”তোকে কি আমি শুধু শুধুই পিচ্ছি ডাকি!!! তুই কি জানতি না আমার মামা তোর আব্বুর খুব ভালো ফ্রেন্ড? তাহলে এটা কেন বুঝতে পারলি না আমার মামতো ভাই মানেই তোর আব্বুর ফ্রেন্ডর ছেলে!!! আর তুই আরিয়ানকে চিনতে পারলি না এটা কেমন কথা। তোর এতো বড় মাথায় এই ছোট্ট একটা বিষয় কেন ডুকলো না!!!
অর্ক ভাইয়ের কথা শুনে আমার নিজের উপরই রাগ হচ্ছে আসলেই তো আমার মাথায় কেন আসলো না এই কথা গুলো। নিজেকে খুব বোকা মনে হচ্ছে এই মুহূর্তে। আরিয়ানকে আমি দেখেছি প্রায় দশ এগারো বছর আগে হয়তো এর বেশিও হতে পারে। আর ওনার নাম শুভ্র এটা তো আমি জানতাম না। শুভ্র ভাইয়ের ছবিও কখনো দেখিনি শুধু ছোটবেলার ছবিই দেখতাম। আংকেলের বাসায় আসা যাওয়া হতো তবে কখনো কেউ আমার সামনে শুভ্র ভাইকে নিয়ে কথা বলেনি শুধু জানতাম বিদেশে থাকে। আস্তে আস্তে এখন সব বুঝতে পারছি। এই জন্যই শুভ্র ভাইয়ের ধমক শুনে মনে হয়েছিল আগে এমন ধমক শুনেছি।
আমার যতটুকু মনে পরছে শুভ্র ভাই ছোটবেলাও আমাকে অনেক বকা দিতেন। তাকে আমি প্রচন্ড ভয় পেতাম। বিদেশ চলে গেছে এটা শুনে তখন খুব খুশি হয়েছিলাম। দেশে এসে এখন আবার শুরু করেছেন আমাকে ধমকানোর কাজ। নাহ এসব নিয়ে আর ভাবতে ইচ্ছে করছে না সবকিছু অসহ্যকর লাগছে।
————————
বিকেলে ছাদে গিয়ে দেখি শুভ্র ভাই দাঁড়িয়ে আছে। আমি আর সামনে না গিয়ে নিচে যাওয়ার জন্য পা বারাতেই শুভ্র ভাই আগের মতো সামনের দিকে তাকিয়ে থেকেই বললেন-
—”পালিয়ে যাচ্ছিস নাকি ভয়ে?”
উনি পিছনে না তাকিয়েই কিভাবে বুঝলেন আমি এসেছি!!! আমি ওনার পাশে দাঁড়িয়ে বললাম-
—”ভয় পাবো কেন! আমি তো এমনিই চলে যাচ্ছিলাম। আচ্ছা যাইহোক আপনি আমাকে আগে কেন বলেন নি আপনি আব্বুর বন্ধুর ছেলে??”
শুভ্র ভাই আমার দিকে ফিরে বললেন-
—”বাসে তুই আমাকে দেখেও চিনতে পারিস নি তাই আমিও তখন আর কিছু বলিনি। কিন্তু বাসায় এসেও যখন আমার পরিচয় দিলাম তখনও তুই আমাকে চিনতে পারলি না। আচ্ছা তুই কি শুধু হাতে পায়েই বড় হয়েছিস নাকি??? মাথায় কি বুদ্ধি বলতে কিছু নেই??? এই সহজ ব্যাপারটা বুঝতে তোর এতো দিন সময় কেন লাগলো? আমি আগেই বলে দিয়েছিলাম আমি অর্কের মামাতো ভাই। আর অর্কের মামা তো একজনই সেটা হলো তোর বাবার বন্ধু সেই হিসেবে আমি হলাম তোর বাবার বন্ধুর ছেলে।”
—”আমি আসলে এতো কিছু ভেবে দেখি নি।”
শুভ্র ভাই ছাদ থেকে চলে যেতে যেতে বললেন-
—”তুই আমার ব্যাপারে এতো কিছু না ভাবলেও আমি তোর ব্যাপারে সব জানি। তোর প্রিয় আইসক্রিম থেকে শুরু করে তোর প্রাক্তন সবই আমার জানা আছে।”
এতো টুক বলে একটু থামলেন পিছন ফিরে আমার দিকে তাকিয়ে শক্ত গলায় বললেন-
—”অতীত যেন অতীতই থাকে বর্তমান বা ভবিষ্যতে যেন কোনো প্রভাব না ফেলে। আর একটা কথা ভবিষ্যতে যেন কখনও কারও সামনে ঘুমন্ত অবস্থায় আসতে না দেখি। যদি আবার কখনো দেখি ঘুম থেকে উঠেই কারো সামনে এসেছিস ওইদিন তোকে কি শাস্তি দিব সেটা আমি নিজেও জানি না এটা আমার হুমকি বা আদেশ যা ইচ্ছে হয় ভাবতে পারিস।”
এই কথা বলেই শুভ্র ভাই ছাদ থেকে সাথে সাথেই চলে গেলেন। আর আমি এখনো থ মেরে দাঁড়িয়ে আছি। কি বলে গেলেন শুভ্র ভাই এইসব আমাকে এভাবে হুমকি দিয়ে গেলেন আর উনি আমার প্রাক্তনের কথাই বা জানলেন কি করে। আমার এই সম্পর্কে কথা তো আমার বেস্ট ফ্রেন্ড আর অর্ক ভাই ছাড়া কেউ জানে না। উনি যদি সবাইকে জানিয়ে দেয় তাহলে আমার কি হবে??? আম্মু তো আমাকে মেরে আধমরা বানিয়ে দিবে। আর আইসক্রিম!! শুভ্র ভাই তাহলে ওইদিন আমার রুমে আইসক্রিম রেখে এসেছিল??? উফফফ এই লোক তো খুব সাংঘাতিক মানুষ। ওনাকে নিয়ে ভাবতে ভাবতেই আমি পাগল হয়ে যাব।
——————
রাতে বারান্দার দোলনায় বসে ভাবতে লাগলাম অতীতের সেই প্রাক্তনের কথা।
কলেজে ভর্তি হওয়ার কিছু দিন পর পরই আহনাফ নামের এক ছেলে আমাকে প্রপোজ করে। প্রথমে রাজি না হলেও একটা সময় আহনাফের পাগলামো দেখে আবেগের বশে রাজি হয়ে যাই। প্রথম ভালো লাগা, প্রথম অনুভূতি সবই ছিল আহনাফ। সম্পর্কে এক মাস পর আহনাফ কেমন যেন অন্যরকম হয়ে গেল। একদিন কলেজে যেয়ে কেন্টিনে আহনাফ কে বসে থাকতে দেখে তার দিকে এগিয়ে গেলাম। কেন্টিনের সামনে গিয়ে আহনাফ আর ওর বন্ধুদের কথা শুনে যেন আমার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেল। আহনাফ এতো বড় ধোকা দিল আমাকে??
#মুগ্ধতায়_তুমি
#পর্বঃ৫
#Saiyara_Hossain_Kayanat
আহনাফ তার বন্ধুদের উদ্দেশ্য করে বলছে-
—”তোদের এই ফালতু ডেয়ার এর জন্য আমি অনন্যার পিছনে প্রায় দুমাস ধরে ঘুরছি। আজ আর তোদের এইসব ট্রুথ ওর ডেয়ার খেলার মধ্যে আমি নেই। তোরাই খেল এসব গেম।”
আহনাফের এই কথা শুনে ওর বন্ধুরা বললো-
—”তুই প্রপোজ করেছিস আর ওই মেয়ে রাজি হয়েছে এই পর্যন্তই ডেয়ার ছিলো। তুই এখনো কেন রিলেশন রাখলি ব্রেকআপ করে দে কাহিনি শেষ।”
এতোটুক শুনেই চলে আসলাম ওদের আর কোনো কথা শোনার মতো শক্তি আমার নেই। এতোটা বোকা আমি কি করে হলাম। আহনাফের কাছ এতো সহজে কিভাবে ধোকা খেয়ে গেলাম। আমার বিশ্বাস ভেঙে গেলো আহনাফের উপর থেকে। বাসায়া গিয়ে ওইদিন প্রচুর কান্না করে ছিলাম। এর পর আর কান্না আসেনি নিজেকে অনেক শক্ত করে ফেলেছিলাম। ওই দিনের পর থেকে আহনাফের সাথে আর কোনো যোগাযোগ করি নি আহনাফ বার বার আমার সাথে কথা বলতে চেয়েছিল। আমি শুধু বলেছিলাম- “আপনার ডেয়ার কমপ্লিট হয়ে গেছে এখন আর কথা বলার কোনো কারন আমি দেখছি না।” এই কথা বলেই চলে এসেছিলাম আহনাফকে আর কিছু বলতে দেইনি।
এটাই ছিল আমাদের শেষ কথা। এর পর আহনাফ দেখা করতে চাইলেও আমি ইগ্নোর করতাম সব জায়গায় শাকিল ভাইয়াকে নিয়ে যেতাম। কারন আহনাফ কে দেখলেই আমি দুর্বল হয়ে পরতাম। কিছুদিন যেতেই শুনেছিলাম আহনাফ অন্য শহরে চলে গেছে পরিবাবের সাথে দু’বছর পর এখানে আসার পথেই দেখেছিলাম আহনাফকে।
অতীত নিয়ে ভাবতে ভাবতে বারান্দার দোলনাতেই ঘুমিয়ে পরলাম।
———————
সকালে আযানের শব্দে ঘুম ভেঙে গেল। শোয়া থেকে উঠে বসতেই খেয়াল করলাম আমি বিছানায়। কিন্তু আমি রুমে কখন আসলাম!!! আমি তো বারান্দাতেই ঘুমিয়ে পরেছিলাম তাহলে কি আমি ঘুমের ঘোরেই এসে পরেছি!!
বিছানা থেকে উঠেতেই পাশের টেবিলে একটি চিরকুট দেখতে পেলাম। চিরকুট খুলে দেখলাম-
“যেখানে সেখানে ঘুমিয়ে পরা কি তোমার অভ্যাস হয়ে গেছি নাকি ঘুমন্তপরি!!! ভ্যাগিস আমি দেখেছিলাম নিচ থেকে তুমি বারান্দায় ঘুমাচ্ছো। যদি অন্য কেউ দেখতো তখন তোমার শাস্তি নিশ্চিত ছিল।
আমি চাই না তোমার এই ঘুমন্ত চেহারার মুগ্ধতায় অন্য কেউ হারিয়ে যাক। তোমার মুগ্ধতার শহরে আমি শুধু নিজেকে হারাতে চাই বারংবার।
আর হ্যাঁ যা চলে গেছে সেটা নিয়ে বেশি ভেবে মন খারাপ করো না।
ইতি,
তোমার মুগ্ধতায় মুগ্ধ এক প্রেমিক”
চিরকুটটা পরে আমি যেন বাকরুদ্ধ হয়ে গেছি। কি ভাববো সেটাও বুঝতে পারছি না মাথা কেমন যেন ফাঁক ফাঁক লাগছে এই মুহূর্তে। কেমন অদ্ভুত রকমেরই অনুভূতি হচ্ছে আমার মধ্যে। শুভ্র ভাই আমাকে কেন এসব চিঠি লিখবে!! মজা করছে নাকি আমার সাথে!! আর আমাকেই বা বারান্দায় থেকে রুমে নিয়ে আসলো কিভাবে????? নাহ আর কিছু ভাবতে পারছি না আমি।
———————
নামাজ পরে সকাল সকাল বাগানে হাঁটাহাঁটি করতে চলে গেলাম। শীতল বাতাস বইছে চারপাশে। বাগানের পাশে বসার জায়গায় বসে চোখ বন্ধ করে সকালের এই শীতল হাওয়া অনুভব করছি। তখনই পাশ থেকে শুভ্র ভাইয়ের কন্ঠ কানে ভেসে আসলো।
—”এখন কি আবার আমার কোলে চড়ে রুমে যেতে ইচ্ছে করছে নাকি তোর যে এখানে বসে বসে ঘুমাচ্ছিস!!!”
শুভ্র ভাইয়ের কথা শুনে চট করেই চোখ খুলে ওনার দিকে তাকালাম পরক্ষণেই লজ্জায় আবার মাথা নিচু করে ফেললাম। ছিঃ কি লজ্জার বিষয় উনি কাল রাতে তাহলে আমাকে কোলে করে রুমে নিয়ে গেছিলো!!! আর কোলে করে নিয়ে গেলেও কি এভাবে আমার সামনে বলে লজ্জায় ফেলতে হবে আমকে!! শুভ্র ভাই আমাকে নিচের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আবার বললেন-
—”এতো লজ্জা পেতে হবে না। এখন চল আমার সাথে।”
এই সকালবেলা কোথায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলছে আমাকে!! আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই উনি আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলেন। রাস্তায় গিয়ে আমার হাত ছেড়ে আমার পাশাপাশি হাটা শুরু করলেন। হাটতে হাটতে উনি একটি চায়ের দোকানের সামনে এসে থামলেন। বেঞ্চিতে বসে চুপচাপ চা খাচ্ছিলাম হঠাৎ করে দোকানদার শুভ্র ভাইকে বললেন-
—”নতুন নতুন বিয়া হইসে বুঝি ভাইসাহেব?? আমার দোহানে মেলা মানুষই সকাল বেলা আইসা বউ নিয়া চা খাইয়া যায়। সকালে খরেদার কম থাহে তো তাই।”
ওনার কথা শুনে আমি বিষম খেয়ে কাশতে লাগলাম শুভ্র ভাই এসে আমার পিঠে আস্তে আস্তে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন। আড় চোখে তাকিয়ে দেখলাম শুভ্র ভাই মুচকি মুচকি হাসছে। দোকানদার আবার বললেন-
—”ভাবি মনে হয় শরম পাইছে ভাইসাহেব।”
শুভ্র ভাইও এবার তাল মিলিয়ে বললেন-
—”হুম ও অল্পতেই লজ্জায় নুয়ে পরে একদম লজ্জাবতী গাছের মতো”
এই কথা বলেই উচ্চস্বরে হাসা শুরু করলেন। আর এইদিকে লজ্জায় আমার ইচ্ছে করছে মাটিতে মিশে যেতে। শুভ্র ভাই ইচ্ছে করেই আমাকে এমন লজ্জায় ফেলছে বার বার। আমি এখানে আর থাকতে না পেরে হাটা শুরু করলাম শুভ্র ভাই ও পিছন পিছন আসলেন। পুরো রাস্তায় আর কোনো কথা বললাম না। ওনার দিকে তাকাতেই যেন লজ্জা লাগছে আমার।
বাসায় এসে দেখলাম শুভ্র ভাইয়ের আব্বু আম্মু আর আমার আব্বু এসে পরেছে। ড্রইংরুমে সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। এতো সকালে আমাদের দুজনকে এক সাথে দেখে কে কি ভাচ্ছে আল্লাহ মালুম। শুভ্র ভাইয়ের আব্বু আমার কাছে এসে বললেন-
—”আমার মামনিকে ঘুরতে নিয়ে গেছিলি বুঝি শুভ্র!! মামনি শুভ্র তোমাকে ধমকায় নি তো আবার?? ওর তো ছোট থেকেই তোমাকে ধমকানো অভ্যাস এখন কি পাল্টেছে নাকি আগের মতোই আছে??
“আংকেল আপনার এই অসভ্য ছেলে এখন আগের থেকেও বেশি ধমকায়, হুমকি দেয় আর কথায় কথায় আমাকে লজ্জায় ফেলে। আস্ত একটা অসভ্য লোক।” এসব বলতে চাইলেও মনের কথা মনেই রেখে দিলাম আর মুখে বললাম-
—”নাহ আংকেল ঠিক আছে। এসব বাদ দাও তোমার কখন আসলে?”
—”এই মাত্রই আসলাম”
আংকেল আন্টির আর বাকি সবার সাথে কুশল বিনিময় শেষে রুমে চলে আসলাম।
——————
অর্ক ভাইয়ার গায়ে হলুদে আমি হলুদ লেহেঙ্গা পরতে চেয়েছিলাম কারন আমি শাড়ি পরে চলতেই পারি না। কেমন যেন ভয় লাগে মনে হয় এই বুঝি শাড়ী খুলে যাবে, এখনই হয়তো শাড়িতে পেচিয়ে পরে যাব একদমই বিরক্তিকর লাগে। কিন্তু ওই অসভ্য শুভ্র ভাই সবাইকে কড়া গলায় বলে দিয়েছে মেয়েরা সবাই শাড়ি আর ছেলেরা পাঞ্জাবি পরবে। একটাই গায়ে হলুদের ড্রেস কোড। শুভ্র ভাই সবার জন্য শাড়ি আর পাঞ্জাবি পছন্দ করে কিনে নিয়ে আসছে।
অর্ক ভাইয়ার ফ্রেন্ডের বোনের সাথে আমার খুব ভালো সম্পর্ক হয়ে গেছে একদিনেই। মেয়েটার নাম প্রমি আমার থেকে দুই এক বছরের ছোট হয়েও খুব বেশি চঞ্চল আর পটু। আমি শাড়ি পরতে পারি না বলে প্রমিই আমাকে শাড়ি পরিয়ে দিয়েছে।
আয়নায় নিজেকে দেখছি নিখুঁতভাবে হলুদের সাথে শুভ্র রঙের শাড়ি। খুব বেশিই সুন্দর শাড়িটা। হালকা লিপস্টিক আর কাজল দিয়ে কাচা ফুলের গহনা গুলো পরে ফেললাম। আমার কোমর অব্দি চুল গুলো খুলে দিলাম। অবশেষে রেডি হয়ে গেলাম। আয়নায় নিজেকে দেখে সব কিছু ঠিকঠাক লাগলেও কিছু একটার কমতি মনে হচ্ছে সাজ যেন পুরো হয়নি। কিন্তু কিসের কমতি!!
হঠাৎ করেই দরজার কেউ নক দিল। দরজা খুলে দিতেই শুভ্র ভাই রুমের ভিতরে ডুকে দরজা লাগিয়ে দিলেন। এভাবে রুমে ডুকে দরজা লাগানোর মানে কি??? শুভ্র ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বসলাম-
—”আপনি এখনো রেডি হননি কেন? একটু পরেই তো অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যাবে। আর আমার রুমে কি করছেন দরজা লাগালেন কেন? একটা মেয়ের রুমে হুটহাট করে ডুকে পরতে আপনার লজ্জা করে না?? কেউ দেখে ফেলে কি হবে ভাবতে পারছেন?? আপনি যান এখান থেকে শুভ্র ভাই।
এক নিশ্বাসে কথা গুলো বলে ফেললাম। শুভ্র ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে দেখলাম ওনার চোখ গুলো লাল আকার ধারণ করেছে। কপালের রগ গুলো ভেসে ওঠেছে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে আমার কথায় উনি প্রচুর ক্ষেপে গেছে। আমি হয়তো বেশিই বলে ফেলেছি। শুভ্র ভাই আস্তে আস্তে আমার সামনে আসছে। যে পরিমানে রেগে এখনই হয়তো আমার গালে এক বিশাল আকারের থাপ্পড় পরবে। এই ওনার হাতের থাপ্পড় বেচে থাকতে পারবো কি কে জানে!! ভয়ে চোখ দুটো খিচে বন্ধ করে ফেললাম।
চলবে….
(