মুগ্ধতায় তুমি পর্ব ২+৩

#মুগ্ধতায়_তুমি
#পর্বঃ২
#Saiyara_Hossain_Kayanat

দুজনের চোখাচোখি হতেই লজ্জায় আমি অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে ফেললাম। ইসসস লোকটা কি ভাববে এখন আমার এভাবে তাকিয়ে থাকা নিয়ে!!!

অচেনা- সরি ঘুমিয়ে পরে ছিলাম তাই বুঝতে পারিনি বাস থেমে গেছে।

আমি- হুম
(মনে মনে আল্লাহকে অনেকে ধন্যবাদ দিলাম। ভাগ্য ভালো বাস থেমে গেছিলো না হয় আমাকে কতোটা-ই না লজ্জায় পরতে হতো।)

লোকটা সিট থেকে উঠে দাড়াতেই আমিও সিট থেবে বের হয়ে গেলাম। বাস থেকে নামতে গিয়েই পরলাম আরেক ঝামেলায় বাহিরে খুব ভারি বৃষ্টি হচ্ছে। এক হাতে লাগেজ আরেক হাতে ছাতা নিয়ে হাটা শুরু করলাম। কোনো রিকশা বা সিএনজি কিছুই দেখা যাচ্ছে না দূর দুরান্ত পর্যন্ত।
রিকশা খুজতে খুজতে আনমনে হাটছিলাম হঠাৎ কেউ একজন আমার হাতে হেচকা টান দিয়ে কিছুটা দূরে নিয়ে গেলেন। আমার মস্তিষ্ক কিছু একটা ভাবার আগেই আমার পাশ দিয়ে দ্রুত স্পিডে একটি গাড়ি চলে গেল। আরেকটু হলেই হয়তো গাড়ির ধাক্কায় আমার প্রান পাখি উড়াল দিয়ে আকাশে চলে যেত। লোকটা আমার জান বাচিঁয়ে দিল। ধন্যবাদ বলার জন্য তার দিকে তাকাতেই দেখলাম উনি তো বাসের সেই অচেনা লোকটা।

অচেনা- রাস্তায় কি দেখাশুনে হাটতে পারেন না। আরেকটু হলেই তো মরে লাশ হয়ে যেতেন যদি আমি না থাকতাম।

আম- ধন্যবাদ। আসলে গাড়ি খুজতে খুজতে কখন রাস্তায় এসে পরেছি খেয়াল করিনি।

বৃষ্টিতে উনি পুরো ভিজেই গেছে তাই আমার ছাতাটা ওনার মাথায় দিলাম। দুজনেই রিকশার খোজার জন্য চুপচাপ এক ছাতার নিচে পাশাপাশি হেটে চলছি। কারও মুখেই কোনো শব্দ নেই শুধু বৃষ্টির শব্দ আর বিদ্যুৎ চমকানোর শব্দ শোনা যাচ্ছে।
অবশেষে একটা রিকশা পাওয়া গেলো। তবে দ্বিধায় পরে গেলাম এক রিকশায় কে উঠবে আমি না-কি ওই অচেনা লোক!!! পরক্ষণেই উনি বলে উঠলেন…

অচেনা – কি এতো ভাবছেন আপনি উঠে পরুন। অনেক রাত হয়ে যাচ্ছে বাহিরে থাকা আপনার জন্য সেফ না।

আমি- কিন্তু আপনি?

অচেনা- আমাকে নিয়ে ভাবতে হবে না আমি কিছু একটা মেনেজ করে নিব।

আমি- আচ্ছা… তাহলে ছাতাটা রাখুন।

(ছাতাটা ওনার হাতে ধরিয়ে দিয়ে রিকশায় উঠে চলে আসলাম। মামুর বাসায় এসেই এতো গুলা বকা খেলাম। এখানে পৌঁছে কেন তাদেরকে ফোন দিলাম না। একা একা কেন আসতে গেলাম ব্লা ব্লা ব্লা…..)

সবার বকা খেয়ে রুমে গেলাম। মামুর বাসায় আমার জন্য আলাদা একটা রুম বরাদ্দ থাকে সময়ের জন্য। কারণ আমি কারও সাথে রুম শেয়ার করতে পারি না। আর আমি হলাম বাড়ির একমাত্র মেয়ে সবার খুব আদরের। আমার সব কাজিনই ছেলে। তাই সবাই আমাকে এতোটা আদর করে যে আমাকে কখনো কোনো কিছুতে কষ্ট পেতে দেয় না।

(আমি অনন্যা। অনার্সে ভর্তি হয়েছি কিছু দিন হলো। বাবা মায়ের দুই মাত্র সন্তানের মধ্যে ছোট সন্তান আমি। আমার তিন বছরের বড় ভাই শাকিল আস্ত এক সয়তান সারাদিন আমার পিছনে লেগে থাকাই ওর প্রধান কাজ। অর্ক ভাইয়ের বিয়ে উপলক্ষেই মামুর বাসায় আসা। তবে বিয়ের আরও অনেক সময় বাকি।)

কিছুক্ষণ পর ফ্রেশ হয়ে ড্রইংরুমে গেলাম। মামু, মামানি আর অর্ক ভাইয়ের সঙ্গে আড্ডা দিলাম বেশ অনেক সময় ধরে। ওদের সবার সাথেই আমার বন্ধুত্বসুলভ সম্পর্ক। (মামুর একমাত্র ছেলে অর্ক। আমার থেকে ৫ বছরের বড়। আর ভাই আমার দেখতে মাশাল্লাহ খুব হ্যান্ডসাম)

আড্ডা শেষে ডিনার করে রুমে এসে পরলাম। বোরিং লাগছে তাই ব্যালকনিতে চলে আসলাম বাহিরে এখনো ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে। চারপাশ মুগ্ধতা ছেয়ে আছে। বৃষ্টির পর যেন প্রকৃতির রূপ কয়েকগুণ বেড়ে যায়।

বৃষ্টি দেখতে দেখতে হঠাৎ করেই বাসের সেই অচেনা লোকটার কথা মনে পরে গেল। এতটা সময় একসাথে পথ জার্নি করার পরেও একজন আরেকজনের নামটাই জানতে চাইনি আমরা। কি অদ্ভুত ব্যাপার!!!

সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং টেবিলে নাস্তার জন্য আসলাম।

আমি- গুড মর্নিং মামু।

মামু- গুড মর্নিং মামুনি বসো নাস্তা করবে।

আমি চেয়ারে বসতেই যাব তখনই অর্ক ভাইয়া এসে আমার মাথায় আস্তে একটা থাপ্পড় মেরে আমার চেয়ারে বসে পরলো।

অর্ক – কিরে পিচ্চি দাঁড়িয়ে আছিস কেন নাস্তা করবি না!!

আমি- বসতে আর দিলা কই তুমিই তো বসে পরলা আমার চেয়ারে। (রাগ দেখিয়ে বললাম)

অর্ক – ওহহহহহ তাই না-কি?? চেয়ারে কি তোর নাম লেখা আছে??

আমি রেগে মামু বলে চিৎকার দিতেই মামু অর্ক ভাইকে এক রামধমক দিয়ে চুপ করে দিলেন।

নাস্তা করে ফোন স্ক্রোল করতে করতে রুমে যাওয়ার পথে মনে হলো গেস্ট রুমের সামনে কেউ দাড়িয়ে আছে। কিছু দূর যেতেই থমকে দাঁড়িয়ে পরলাম মনে হলো বাসের সেই অচেনা লোকটাকে দেখতে পেলাম। মনের ভুল ভেবে যাওয়ার জন্য পা আগাতেই পিছন থেকে কারও কণ্ঠ ভেসে আসলো।

অচেনা – এইইই আপনি বাসের সেই মেয়েটা না!!! এখানে কি করছেন?? আর আমাকে দেখেও এভাবে চলে যাচ্ছিলেন কেন??

আমি অবাক হয়ে ওনার দিকে তাকিয়ে আছি। উনি কথা বলছেন এটা কি তাহলে মনের ভুল না!! আসলেই অচেনা লোকটা মামুর বাসায়!!!

অচেনা – আরে কিছু না বলে এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন??

আমি- না মানে আপনি এখানে কি করছেন???

অচেনা – আমিও একই প্রশ্ন আপনাকে করেছিলাম।

আমি – এটা আমার মামার বাসা আমি এখানে থাকাটাই স্বাভাবিক.. কিন্তু আপনি??

অচেনা- এটা আমার ফুপির বাসা মানে অর্কের মামাতো ভাই আমি।

আমি – ওহহহ কিন্তু আপনাকে আগে তো কখনো এ বাসায় দেখিনি….

অচেনা- আসলে আমি দেশের বাহিরে ছিলাম তাই কখনো এ বাসায় আসা হয়নি।

আমি- ওহহ

আর কিছু না বলে আমি চুপচাপ নিজের রুমে এসে পরলাম। রুমে আসতেই মনে পরল আমার এবারও একেঅপরের নাম জানতে চাইনি।

বিকেলে আমি আর অর্ক ভাই ছাদে আড্ডা দিচ্ছিলাম তখনই অচেনা লোকটা ছাদে আসলেন। অর্ক ভাইয়া ওনাকে দেখে আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন।

অর্ক – পিচ্চি ও হচ্ছে শুভ্র আমার মামাতো ভাই। (আমার মাথায় হাত রেখে) এই হচ্ছে আমাদের পিচ্চি মানে অনন্যা আমার ফুপির মেয়ে।

শুভ্র – আরে আমি এই মেয়েকে চিনি আমরা এক বাসেই ছিলাম… অনেক ঘুমকাতুরে মেয়ে। বাসে সারা পথ ঘুমিয়েই ছিলো। এতো ঘুমকাতুরে যে দেখে মনে হয় উনি দুনিয়ায়র মধ্যেই নেই।
এই অসভ্য লোকের কথা শুনে রাগে আমার পিত্তি জ্বলে উঠল। আমি এক প্রকার চেচিয়ে বলে উঠলাম….

আমি- এই আপনি কি বলছেন এইসব!!! না জেনে শুনে বেশি কথা বলতে আসবেন না।

শুভ্র – আমি নিজের চোখে দেখিছি আপনি মরার মতো পরে পরে ঘুমাচ্ছেন বাসে। আর আপনি তো রাস্তায় হাটার সময়ও ঘুমান তাই তো আশেপাশে গাড়ি চলছে কি না তা-ও দেখেন না।

ওনার কথা শুনে রাগের মাত্রা তরতর করে বেরে চলছে। আমি কিছু একটা বলতে নিব তার আগেই অর্ক ভাই বলা শুরু করলেন।

অর্ক – আরে কি শুরু করেছিস তোরা দুজন। প্রথম পরিচয়েই এই রকম নির্লজ্জের মতো ঝগড়া শুরু দিয়েছিস কেন আজব।

ভাইয়ার কথা শুনে রেগেমেগে ছাদ থেকে নিচে নেমে আসলাম। এই মুহূর্তে ওদের সাথে ঝগড়া করতে একদমই ইচ্ছে হচ্ছে না বিশেষ করে ওই অসভ্য লোকাটাকে তো দেখতেই ইচ্ছে করছে না। নামটা কি সুন্দর শুভ্র… আর কথাবার্তা একদম অসভ্যের মতো। একটা অচেনা মেয়ের সাথে কেও এভাবে ঝগড়া করে????
#মুগ্ধতায়_তুমি
#পর্বঃ৩
#saiyara_hossain_kayanat

সারাদিন ধরে অর্ক ভাইকে অনেক রিকুয়েষ্ট করার পর আমাকে ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার জন্য রাজি করালাম। রাতে রেডি হয়ে ড্রইংরুমে যাবো তখনই পেছন থেকে অসভ্য লোকটা বলে উঠলো-

— ”কোথায় যাওয়া হচ্ছে ঘুমন্ত প্রিন্সেস?”

— “দেখুন আপনি আমাকে এসব নামে ডাকবেন না বলে দিচ্ছি।”

শুভ্র ভাই পকেটে হাত দিয়ে একটু ভাব নিয়ে বললেন-

— “শুভ্রের যা ইচ্ছে হয় শুভ্র তা-ই বলে এতে কারও পারমিশন নেয় না।”

— হুম ভালো।

আমি আর শুভ্র ভাইয়ের সাথে কথা না বারিয়ে অর্ক ভাইয়ার কাছে চলে আসলাম। আমি আর ভাইয়া বের হব তখনি বাধা হলো ওই অসভ্য শুভ্রটা আমাদের সাথেই উনি ঘুরে বের হবে। উফফ….আমাদের সাথেই কেন যেতে হবে ওনাকে!!!

আমি আর ভাইয়া কথা বলতে বলতে সামনে হাটছি আর শুভ্র ভাইয়া পিছন পিছন ফোনের দিকে তাকিয়ে হাটছে। বেশ কিছু সময় সোডিয়ামের আলোর ফাঁকা রাস্তায় রাত ১১টা পর্যন্ত হেটে বাসায় চলে আসলাম। কিন্তু আইসক্রিম পার্লার বন্ধ থাকায় মুড অফ হয়ে আছে। তাই কারও বেশি একটা কথা বললাম না

ডিনার করে রুমে গিয়ে বিছানার পাশের টেবিলে চোখ পরতেই মুহুর্তের মধ্যেই মন খারাপ চলে গেল। টেবিলের উপরে আমার প্রিয় দুটি আইসক্রিম রাখা হয়তো অর্ক ভাইয়া রেখে গেছে কিন্তু কখনো!! ভাইয়া তো আমার সাথেই ডাইনিং রুমে ছিল।
যাইহোক এসব চিন্তা না করে আগে আমার আইসক্রিম খাই।

————————

সকালে কিছু মানুষের হাসাহাসি আর কথার শব্দে ঘুম ভেঙে গেল। মাথায় ওড়না টা কোনো রকম পেচিয়ে ড্রয়িং রুমে দিকে পা বারালাম। ড্রয়িং রুমে তাকিয়ে দেখি সোফায় বেশ কিছু মানুষ বসে আছে। তার মধ্যে আমার কাজিনের সংখ্যাই বেশি। বড় মামার ছেলে সাইফ ভাই আমাকে দেখেই বলল-

—“কিরে অনি কেমন আছিস? এদিকে আয়।” (সাইফ ভাইয়া আমাকে অনি বলে ডাকে। উনি আমার থেকে বেশ বড় হলেও আমার সাথে খুব ফ্রেন্ডলি কথা বলে।)

আমি ভাইয়ার পাশে গিয়ে বসে বললাম –

— ”আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি… তোমার সবাই কেমন আছো? আর আমাকে বলোনি কেন তোমরা আজ আসবে? আর এসেছো ভালো কথা আমাকে ডাক দাওনি কেন??”

সাইফ ভাইয়া আমাকে এক হাত দিয়ে জরিয়ে ধরে বললেন-

— “আরে বাবা এতো প্রশ্ন করছিস কেন থাম এবার। আর সরি আমরা মাত্রই এসেছি তুই নাকি ঘুমিয়ে ছিলি তাই ডাক দেইনি।”

— “আচ্ছা বুঝলাম।”

তারপর স্মরণ আর আবিরের দিকে তাকিয়ে বললাম-
— “কিরে তোরা এভাবে চুপ করে আছিস কেন? কেমন আছিস তোরা?”

(স্মরণ আর আবির বড় মামার ছেলে। দুজন জমজ হলেও দেখতে একদমই আলাদা। আমার থেকে একবছরের বড় হওয়ায় তুই করেই বলি)

—” আমরা আর কি বলবো তুই আর সাইফ ভাই তো সব কথা বলছিস।”

রান্না ঘর থেকে মামামি এসে বললেন-

—”এই তোরা সবাই যা এখন ফ্রেশ হয়ে আয় নাস্তা করবি।”

মামানির কথা শুনে সবাই যার যার রুমে যাওয়া জন্য উঠে পরলাম তখনই চোখ পরল পাশের সোফায় বসে থাকা শুভ্র ভাইয়ের দিকে। উনি কিভাবে যেন তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি সেদিকে পাত্তা না দিয়ে রুমে চলে গেলাম।

———–————

গোধূলি বিকেলের পশ্চিম আকাশে সূর্যের রক্তিম আভাটা যেন মন ছুয়ে যায়। বিকেলে ছাদে দাঁড়িয়ে আছি একা হাতে কফির মগ নিয়ে। বিকেলের পরিবেশ আমার খুব ভালো লাগে। ছাদে দাঁড়িয়ে বাহিরের পরিবেশ দেখছি সূর্যের শান্ত হয়ে লাল হয়ে ওঠা, রাস্তায় মানুষের আনাগোনা, দূরের মাঠে বাচ্চাদের খেলা করা সব কিছুতেই যেন মুগ্ধতা ছেয়ে আছে।

হঠাৎ করে পিছনে কারও অস্তিত্ব অনুভব করলাম। পিছন ফিরে তাকাতেই দেয়ালের মতো কিছু একটার সাথে ধাক্কা খেলাম। উপরে তাকিয়ে দেখলাম শুভ্র ভাই দারিয়ে আছে আর আমি ওনার বুকের সাথে ধাক্কা খেয়েছি। আমি ওনার থেকে কিছুটা দূরে সরে দাড়ালাম। উনি আমার পাশে একটু দূরত্ব বজায় রেখে রেলিংয়ে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে বললেন-

— “এই সন্ধ্যায় এখানে দাঁড়িয়ে একা একা কি করছিস? ভূতের সাথে গল্প করছিস বুঝি!!”

শুভ্র ভাইয়ের মুখে তুই সম্বোধন শুনে আমি বেশ অনেকটাই অবাক হলাম। মাত্র দু’দিনের পরিচয়ে কেউ তুই সম্বোধন করে আমার জানা ছিল না। আমি অবাকের রেশ কাটিয়ে বললাম-

— “আপনি আমাকে তুই করে বলছেন কেন? মাত্রই তো দু’দিন হলো পরিচয়ের।”

— “তুই করে বলতেই পারি কারন আমি কম করে হলেও তোর থেকে ছয় বছরের বড় হব। আর তোকে কে বললো আমাদের পরিচয় মাত্র দু’দিনের!! বাড়ির সবাই তোকে তুই করে বলে তাহলে আমি বললে কি সমস্যা? আর সমস্যা থাকলেও সেটা মানিয়ে নিতে শিখ।”

আমি কিছু বলবো তার আগেই উনি ঝড়েরবেগে ছাদ থেকে চলে গেলেন। আমি দাঁড়িয়ে থেকে শুভ্র ভাইয়ের বলা কথা গুলো ভাবতে লাগলাম। কি বলে গেলেন উনি এই গুলা!! সব আমার মাথার দশ হাত উপর দিয়ে গেল। হঠাৎ করে শুভ্র ভাই ছাদের দরজার সামনে এসে আদেশের সুরে বললেন-

— “সন্ধ্যা নেমে এসেছে এখন আর ছাদে দাঁড়িয়ে থাকা লাগবে না। পাঁচ মিনিটের মধ্যে রুমে যাবি এক সেকেন্ড সময়ও যেন দেরি না হয়। আর হ্যাঁ কেউ আমার কথার অবাধ্য হলে তা আমার একদমই পছন্দ না।”

এই কথা বলেই আবার সেকেন্ডের মধ্যেই গায়েব হয়ে গেলেন। ওনার কথা শুনে আমি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম না সাথে সাথেই রুমে এসে পরলাম। বসে বসে ভাবতে লাগলাম কি হলো শুভ্র ভাইয়ের!! হঠাৎ করেই এতটা পরিবর্তন হলো কিভাবে?? বাসের সেই মানুষটা থেকে এই মানুষটাকে একদমই আলাদা মনে হচ্ছে। আর আমার সাথেই বা এরকম করে কথা বললেন কেন আমার যতটুকু মনে পরে আমি ওনাকে আগে কখনো দেখিনি।

——————————

বাড়ির কিছু অংশ ঝাড়বাতি দিয়ে সাজানো হয়ে গেছে। ঝাড়বাতির আলোয় বাহির টা বেশ আলোকিত হয়ে আছে। বিয়ের আরও আটদিন বাকি মামুর একমাত্র ছেলে তা-ই ওনার ইচ্ছে অনেক আগে থেকেই বাড়ি যেন বিয়ের আমেজে মেতে থাকে। তাই তো বিশেষ করে আমাদের সব কাজিনদের দশ আগেই আসার আদেশ দেওয়া হয়েছিল। এই মুহূর্তে আমরা কাজিনরা মিলে ছাদে আড্ডা দিচ্ছি। বিকেলে খালু আমাদের সবার থেকে ছোট্ট খালাতো ভাইকে দিয়ে গেছিলেন। আদনান ঝাড়বাতির আলো দেখে এখানে ওখানে ছুটোছুটি করছে। আবার একটু পর পর হাপিয়ে উঠছে। আমার কোলে কিছুক্ষণ বসে থেকে আবার চলে যাচ্ছে।

আমি সাইফ আর অর্ক ভাইয়ের মাঝে বসে আছি। শুভ্র ভাই ভাই ঠিক আমার সামনেই বসে আছে। উনি আমার দিক তাকিয়ে আছে আমি বেশ ভালো করেই বুঝতে পারছি।

আড্ডার এক পর্যায় সাইফ ভাই আমার মাথায় হাত রেখে বললেন-

— “অনি অনেক রাত হয়ে গেছে তুই যা রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পর। ঠিক মতো না ঘুমালে আবার মাথার যন্ত্রণায় কাল সারাদিন ভুগতে হবে তোর।”

আমি সবাইকে গুড নাইট বলে নিচে চলে আসলাম। আমি রুমে যাবো ঠিক তখনই কেউ ঝড়ের গতিতে এসে আমাকে হেচকা টান দিয়ে ডান হাতটা খুব শক্ত করে পিছন দিকে মুচড়ে ধরলো।

চলবে….

(ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আর কোনো ভুল বা মন্তব্য থাকলে বলতে পারেন।)
চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here