মুগ্ধতায় তুমি পর্ব ১

দীর্ঘ দুইবছর পর প্রক্তনের সামনাসামনি হলাম। এতো দিন পর ভালোবাসার মানুষকে চোখের সামনে দেখে মনে হচ্ছে হৃদপিণ্ডে কেউ যেন হাতুড়ি পেটাচ্ছে। পুরনো সব কথা মনে পরতেই তিক্ততা যেন সব অনুভূতি গুলোকে চাপা দিয়ে পরক্ষণেই রাগ আর ঘৃণায় পরিনত করলো সকল অনুভূতি।

প্রাক্তনকে দেখেও না দেখার মতো করে পিছন ঘুরে উল্টো পথে হাটা শুরু করলাম। পিছন থেকে তার ডাক শুনতে পেয়েও পা থামালাম না রাগে দ্রুত হেটে যাচ্ছি বাসের দিকে। প্রচন্ড রাগ হচ্ছে এই মুহূর্তে। খুব ভালো একটা মুড নিয়ে বাসা থেকে বের হয়েছিলাম মামুর বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে।এই প্রথম একা একা জার্নি করে মামুর বাসায় যাবো ভেবেই মন খুশিতে নেচে উঠেছিল। কিন্তু আমার খুশি তো আবার বেশিক্ষণ আমার সাথে থাকতে নারাজ তাই রাস্তায় প্রাক্তনের সামনে পরে মুডের বারোটা বেজে গেলো। আর পুরনো স্মৃতি গুলোও যেন মনের দরজায় কড়া নাড়ছে।

হাটতে হাটতে বাসের সামনে এসে পরলাম। বাসে উঠে টিকিট নাম্বার অনুযায়ী জানালার পাশে বসে পরালাম। ভাইয়াকে আগেই বলে দিয়েছিলাম জানালার পাশের সিটই আমার লাগবেই আর না হলে এই বাসে যাবো না। যাক সয়তান ভাইটা তাহলে এবার আমার কথা সুন্দর মতো রাখলো।

কিছুক্ষণ বাহিরে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চোখ বন্ধ করে রইলাম। চোখের সামনে পুরনো সব কথা ভেসে উঠছে। ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে পাওয়া কষ্ট, অবহেলা, ধোকা সব মনে পরে যাচ্ছে নিজেকে খুব দুর্বল মনে হচ্ছে এই মুহূর্তে। অসহায় হয়ে পরছি নিজের অতীতের সব বিষাক্ত স্মৃতির কাছে। এতো দিন ধরে নিজেকে শক্ত করে রেখেছি এখন এমন দুর্বল হয়ে পরলে চলবে না কোনো ভাবেই।

অতীত নিয়ে ভাবা বন্ধ করে চুপ করে চোখ বন্ধ করে কানে হেডফোন গুঁজে দিলাম।একটু পর মনে হলো কেউ আমার পাশের সিটে বসলো কিন্তু এই মুহূর্তে চোখ মেলে তাকে দেখার কোনো ইচ্ছেই আমার হচ্ছে না। তাই আগের মতো করেই সিটে শরীর এলিয়ে দিয়ে বসে আছি। সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠার ফলে চোখে ঘুম নেমে এলো খুব দ্রুত।

হঠাৎ করেই মাথায় প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করায় ঘুম যেন ফুরুত করেই উধাও হয়ে গেল। চোখ মেলে তাকাতেই সামনে এক বিশাল আকারের পুরুষালী মাথা দেখতে পেলাম। হ্যাঁ….. চুল দেখে তো মনে হচ্ছে পুরুষই কিন্তু এভাবে ঝুঁকি আছে কেন আমার দিকে!! আমার ভাবনা শেষ হওয়ার আগেই লোকটি নিজের জায়গায় চলে গেলেন। আমি চোখ মুখ কুচকে মাথায় হাত ঘষতে ঘষতে কিছু বলার জন্য মুখ খুলবো তার আগেই অচেনা লোকটি এক নাগাড়ে বলা শুরু করলেন….

অচেনা – সরি মিস অর মিসেস যাইহোক…. আসলে জানালা দিয়ে ধুলোবালি আসায় জানালা বন্ধ করার জন্য চেষ্টা করছিলাম আর ঠিক সেই মুহূর্তেই বাস ব্রেক কষলো যার ফলাফল সরূপ আপনার ঘুম ভেঙে গেল। I am extremely sorry for thet.. Soo sorry.
(এক নিশ্বাসে কথা গুলো বলে বড় একটা শ্বাস নিলেন অচেনা লোকটা)

আমি – It’s okay. এতো উত্তেজিত হতে হবে না। আমি বুঝতে পেরেছি ব্যাপারটা।

অচেনা- মাথায় কি বেশি ব্যথা লেগেছে না-কি!!!

আমি- না ঠিক আছে।

অচেনা – আচ্ছা। তো কোথায় যাচ্ছেন আপনি?

আমি – বাস তো একটা নির্দিষ্ট জায়গাতেই যাচ্ছে তাই আমি আলাদা করে নতুন কোনো জায়গায় তো যেতে পারবো না তাই না!!

অচেনা – ওহহ তাই তো.. আসলে খেয়াল ছিলো না।

আমি কিছু না বলে চুপ করে বসে আছি। বিরক্ত লাগছে কাঁচা ঘুম ভাঙার কারনে। এমনিতেই ঠিকঠাক ঘুম না হলে আমার মাথায় যন্ত্রণা শুরু হয়। আবার কিছুক্ষণ পরেই অচেনা লোকটা ল্যাপটপে ভিডিও কলে হয়তো অফিসের কোনো কথা বলছে। ওনাদের কথাবার্তায় যেন আমার বিরক্ত লাগা হাজার গুণ বেরে গেল তরতর করেই। প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে নিজের কান থেকে হেডফোনটা খুলে ওনার কাছে দিলাম।

আমি- এটা নিন আর আস্তে আস্তে কথা বলুন।
(এতো টুক বলেই মুখ ফিরিয়ে জানালার বাহিরে দৃষ্টি দিলাম।)

লোকটি কথা শেষে হেডফোন আমাকে ফিরে দিয়েলেন।

অচেনা- আসলে খুবই জরুরি কল ছিলো তাই বাসেই কথা বলতে হলো। আপনি নিশ্চয়ই বিরক্ত হয়েছেন।

আমি- নাহ ঠিক আছে। (বিরক্ত হয়েও ভদ্রতার জন্য তা প্রকাশ করলাম না)

অচেনা- আপনার কি মুড অফ নাকি সবসময় এভাবেই কথা বলেন??

আমি- এভাবে মানে কিভাবে? কি বুঝাতে চাচ্ছেন??

অচেনা- মানে এইতো কম কথা বলেন আর যতটুকু বলেন মনে হয় খুব বিরক্ত হয়ে বলেন।

আমি- না আসলে একটু মাথা ব্যথা তাই আরকি…

অচেনা- ওহহ

আবার দু’জন চুপ করে নিজেদের মতো ব্যস্ত হয়ে পরলাম। আমি বাহিরের প্রকৃতি অনুভব করতে ব্যস্ত আর উনি ফোন স্ক্রোল করতে।
বাস থেমে গেল কিছু সময় বিরতির নেয়ার জন্য। প্রায় সবাই নেমে গেলেন যে যার প্রয়োজনে।

অচেনা – বাস থেকে নামবেন না?? মানে কিছু খেতে যাবেন না???

আমি- না.. ভালো লাগছে না। এখানেই ঠিক আছি।

অচেনা- ওহহ কিছু লাগলে আমাকে বলতে পারেন নিয়ে আসবো।

আমি- না আপনার কষ্ট করতে হবে না।

লোকটা নেমে গেলেন বাস থেকে। আর আমি চোখ বুজে সিটে হেলান দিয়ে বসে আছি। চোখ মেলে তাকাতেই আমি হতবাক বাহিরে অন্ধকার হয়ে গেছে। তার মানে আমি বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘুমিয়ে কাটালাম!!! ভাগ্যিস বাস পৌঁছাতে আরও পথ বাকি আছে নাহলে আমাকে একা বাসেই থাকতে হতো।

পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখলাম লোকটা ঘুমিয়ে আছে। এতোক্ষন তাকে ভালো করে খেয়াল না করলেও এখন খেয়াল করলাম। লোকটা দেখতে বেশ ফর্সা এতোটা ফর্সা ছেলেদের আমার একদমই ভালো লাগে কেমন যেনো সাদা বিড়াল মিনে হয়। গালে হাল্কা ছোটো ছোট খোচা দাঁড়ি, চুল গুলো একদম সিল্ক কপালের সামনে এসে পরে আছে। নাহ…. একটা অচেনা লোককে এভাবে পর্যবেক্ষন করা একদমই উচিত না। চোখ ফিরিয়ে নিব তার আগেই উনি চোখ মেলে তাকালেন আর চোখাচোখি হয়ে গেল।

চলবে….

#মুগ্ধতায়_তুমি
#পর্বঃ১
#Saiyara_Hossain_Kayanat

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here