মেঘের পরে মেঘ -অন্তিম।
নুর স্তম্ভিত।রুপসা ওকে এমন সপাটে চড় মারতে পারে তা যেন ভাবনার বাইরে।তাও এতোগুলো লোকের সামনে।রুপসা যেন নিজের মধ্যে নেই।
“আপনার সাহস কি করে হয় ওর কলার ধরার?চোরের মায়ের যে বড় গলা হয় তার সবচেয়ে বড় প্রমান আপনি।বাজে লোক একটা।অনেক কস্ট হচ্ছে আপনার?এর থেকেও বেশি কস্ট হয়েছে আমাদের। কি করে পারলেন সমস্ত টা জেনেও এমন না জানার ভান ধরে থাকতে?এতো বড় অন্যায় করার আগে একবার ও বুক কাঁপলো না।একটি বারও ভাবলেন না যার সাথে এমন করছেন সে আপনারই প্রানের বন্ধু?যে আপনাকে নিজের ভাইয়ের চেয়েও বেশি মনে করে,বিশ্বাস করে।আর আপনি?তার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্ত গুলোকে জেলের মধ্যে নস্ট করতে বাধ্য করেছেন।আপনাকে আমি এমনি এমনি ছেড়ে দেবো?যে কস্ট প্রলয় এতোদিন করে এসেছে সেই একি কস্ট আপনিও ভোগ করবেন।তবেই বুঝবেন।”
“আমি তোমাকে ভালোবেসেছি এই কি আমার দোষ? ”
“না।কাউকে ভালোবাসা দোষের কিছু না।আমাকে আপনি কেন আরো অনেকেই ভালোবাসতে পারে এতে দোষের কিছু নেই।কিন্তু আমাকে পাওয়ার জন্য যে ছলনার আশ্রয় নিয়েছেন সেটা দোষের।আপনি যদি আমাকে ভালোই বাসতেন তবে আমার দুঃখের কারন হতেন না।আমার সুখ টাকেই নিজের সুখ মনে করতেন।”
নুর চুপ করে রইলো। মুখে কোন কথা যোগাচ্ছে না। নুরের বাবা মা চুড়ান্ত গালিগালাজ করতে লাগলো নুরকে।তাদের ছেলে এমন কাজ করতে পারে এ যেন ধারনার বাইরে। নাবিল শায়েরী চুপ করে আছে।সাবরিনা আরো হেঁচকি তুলে কাঁদছেন।ধীরে ধীরে হেঁটে নুরের সামনে এসে ওর গালে হাত রাখলেন।
“কেন এমন করলি বাবা?আমার ছেলের থেকে কোন অংশেই কম দেখিনি তোকে।একটা মেয়ের জন্য আমার ছেলেটাকে এতো কস্ট দিতে তোর বিবেকে বাঁধলো না?”
নুর চুপ।কোন কথা বলার ভাষা নেই।এতো মানুষের ঘৃণা ওর ভেতরের মানুষ টা কে নাড়া দিয়ে যাচ্ছে।
“কিছু মানুষই থাকে যারা অন্যের বুকে ছুড়ি মারতে একটু ভাবে না।নিজের স্বার্থটাই বড় তাদের কাছে।নিজের চাওয়াকে পূরণ করার জন্য এরা যা খুশি করতে পারে।আগেও এমন মানুষের কমতি ছিলো না।এখনো নেই।ভুলটা আমাদের, আমরা এদের কেই সবচেয়ে আপনজনের জায়গাটা দিয়ে বসি।যার যোগ্য তারা না।”
বললো শায়েরী।
“এতো মানুষের ঘৃণা নিয়ে বেঁচে থাকাটা কস্টের নুর।সবাই তোমাকে বিশ্বাসঘাতক মনে করবে এখন থেকে।যাদের চোখে এতোদিন ভালোবাসা দেখেছো,সম্মান দেখেছো তাদের চোখেই এখন থেকে ঘৃণা দেখবে।এটা যে কতোটা কস্টের তা তুমি এবার উপলব্ধি করতে পারবে।”
শায়েরীর কথার সাথে যোগ করলো নাবিল।
“এই লোকটা কি উপলব্ধি করবে আব্বু? এর মনে কোন মনুষ্যত্ব আছে না কি যে নিজের পাপকে মনে রাখবে?এই পাপ কে ভুলে আবার নতুন করে কোন পাপ করার চেষ্টা করবে।একে আমি পুলিশে দেবো।এটাই ঠিক হবে।”
উত্তেজিত স্বরে বললো রুপসা।
নাবিল রুপসাকে শান্ত করার চেষ্টা করলো।
“থামো মা।এতো মানুষের ঘৃনাই ওকে কস্ট দেয়ার জন্য যথেষ্ট। এর জন্য পুলিশের দরকার নেই।মানুষের বিবেক একদিন জেগে উঠে। বিবেকের দংশনের থেকে বড় শাস্তি এই দুনিয়ায় আর হয় না। ”
নুরের মা বাবা উঠে দাঁড়ালো। এখানে বসে বসে আর অপমানিত হওয়ার কোন ইচ্ছেই নেই তাদের।
নুরের একহাত ধরে টান দিয়ে,
“চলো, এবার বাড়ি চলো।খুব বড়ো সিনেমা দেখালে।যার প্রধান ভিলেনই তুমি।কিন্তু আমি চেয়েছিলাম আমার ছেলে নায়ক হবে।তবে নায়ক হওয়ার যোগ্যতা সবার থাকে না।আর তুমি যা করেছো এটা নিয়ে আর কিছুই বলার নেই আমার।তোমার বাবার বহু কস্টে উপার্জিত সম্মান তুমি এভাবে ধুলোয় মিশিয়ে দিবে তা কখনো ভাবিনি। কারো কাছে মাফ চাইবো,সে মুখ তো তুমি রাখোনি।এখানে বসে বসে অপমানিত না হয়ে চলো ফিরে যাই।”
বললো নুরের মা।
নুর ধীরে ধীরে বাবা মায়ের পিছু পিছু চলে।
________
শফিকুল ইসলাম, সাবরিনা, নাবিল আর শায়েরী বসে আছে ড্রয়িংরুমে।সাবরিনা এখন শান্ত। শফিকুল ইসলাম মুখ নিচু করে বসে আছেন।রুপসা নিজের ঘরে শুয়ে আছে।ওর নাকি প্রচুর মাথা ব্যাথা করছে।করাটাও স্বাভাবিক। গত দুদিনে তো আর কম ধকল পোহাতে হয় নি।প্রলয় বসেছিল ওদের সাথেই।ফোন করার বাহানা দিয়ে সেও সরে পরেছে।
নাবিল গলা খাঁকারি দিয়ে শফিকুল ইসলামের দিকে তাকালো।
“তো, শফিক সাহেব, এবার কি করবেন?কিছু চিন্তা করেছেন কি?”
“আর কি চিন্তা করবো স্যার?সব তো হয়েই গেছে। এখন শুধু ছেলের বৌ কে ঘরে নিয়ে যেতে চাই। ”
“তাহলে আপনি রাজি?”
“রাজি না হওয়ার কি আছে স্যার?যেখানে বিয়েটাই হয়ে গেছে।”
“তার মানে কি?বিয়ে না হলে রাজি হতেন না?”
কথা টা ফাজলামো করে বললেও শফিক সাহেব নাবিলের কথাটা ধরতে পারলেন না।
তিনি প্রায় চিৎকার করে উঠলেন,
“এ্যাই না না।কি বলছেন স্যার?রাজি হবো না কেন?তাছাড়া আমি তো অনেক আগেই আপনাকে বলেছিলাম এ ব্যাপারে।”
“কিন্তু তারও আগে তো আপনি রাজি ছিলেন না।”
“তখনকার বিষয় টা অন্য ছিলো স্যার।সে কথা তুলে আমাকে আর লজ্জা দিবেন না প্লিজ। ”
“লজ্জা দেবো না কি বলছেন?বেয়াই আপনি।আপনাকেই তো বেশি বেশি লজ্জায় ফেলবো।হা হা হা।”
নাবিলের হাসির সাথে শফিক সাহেব আর বাকি সবাই হেসে দিলেন।
“তো এবার একটা তারিখ ঠিক করুন বেয়াই মশাই।ঘরের মেয়ে কে ঘরে নিয়ে যেতে চাই। ”
“সামনের শুক্রবার।আমাদের তো সব আয়োজন করাই ছিলো।এ কয়টা দিন আপনার জন্য দিলাম।না হলে আরেকটু আগে হলেও সমস্যা ছিলো না।কি বলো শায়েরী? ”
শায়েরীও সহমত জানালো।সবাই মিলে বাকি কথা ঠিকঠাক করে নিয়ে প্রলয়কে নিয়ে ওর বাবা মা চলে গেলো।যাওয়ার আগে সবার অগোচরে রুপসার রুমে একবার ঢু মেরেছিলো প্রলয়।
রুপসা নিজের খাটে চুপচাপ বসে ছিলো তখন।প্রলয়কে দেখে অবাক।
প্রলয় সামনে গিয়েই ওকে কোলে তুলে নিয়েছে। রুপসা ভয়ে দুহাতে প্রলয়ের গলা ধরে ফেলে।আৎকে উঠে বললো,
“কি করছেন?কেউ চলে আসবে তো?”
“আসুক।”
“নামান আমাকে।পরে যাবো।”
চোখ মুখ খিঁচে রেখে।
“ভালো করে পেঁচিয়ে ধরো।পরবে না।”
রুপসার মনে হলো এবার বুঝি লজ্জায় শেষ হয়ে যাবে।এই লোক এমন কেন?
রুপসার কপালে সশব্দে চুমু খেয়ে নিয়ে ওকে আস্তে করে নামিয়ে দিলো প্রলয়।কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,
“এবারকার মতো ছেড়ে দিলাম।আসছে শুক্রবার আর ছাড়া পাবে না।একেবারে বুকের ভেতর লুকিয়ে রাখবো।”
বলেই চলে গেলো।আর রুপসা আবেশে মত্ত হয়ে চিন্তায় বিভোর। শুক্রবার তো দরজার ওপাশেই।এখন কি হবে?
_______
অবশেষে সব জল্পনা কল্পনা শেষ করে দিয়ে প্রলয় রুপসার বিবাহোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হলো।অফ হোয়াইট আর মেরুন রঙের ভারী লেহেঙ্গা আর গা ভর্তি গয়নায় একদম পরীর লাগছিলো রুপসাকে।রুপ যেন গলে গলে পরছে।
প্রলয়ের অবস্থা তো নাজেহাল।রুপসাকে ভালোভাবে এক নজর দেখতেও পারছে না। যখনি এক ঝলক ওকে দেখার জন্য উঁকি দেয় তখনি শ্যালিকাদের হাসির রোল উঠে।
“আরে দুলাভাই, এতো তাড়া কিসের?যাবে তো আপনারই বাড়িতে। তখন সামনে বসিয়ে রেখে যতো খুশি দেখবেন।এখন এতো তাকালে তো মানুষ বেহায়া বলবে।”
কথা শেষে ফের হাসির রোল।প্রলয় আড় চোখে একবার রুপসাকে দেখে নিঃশ্বাস ফেললো।কেন যেন লোকের কথার তোয়াক্কা না করে রুপসাকেই দেখতে ইচ্ছে করছে।বেহায়া বলবে তো বলুক।ওর নিজের বৌ ও যতো ইচ্ছে দেখবে।আর রুপসাটাও না,এতো কেন সুন্দর লাগতে হবে ওকে?কখন যে ওকে কাছে পাবে?
মনে মনে গজরাতে থাকলেও চোখ সামনের দিকে রাখলো প্রলয়।
আর রুপসা?বরাবরের মতোই লাজুকলতা হয়ে মাথা নিচু করে আছে।প্রলয়ের সাথে একবার চোখাচোখি হয়েছিল। কি নেশাতুর, ঘোরলাগা চোখ!অচেনা অজানা আহ্বান। তাকিয়ে থাকতে পারেনি রুপসা।বুক ধক্ করে উঠেছিলো।
______
“তুমি এখানে বসে আছো যে?সবাই তোমাকে খুঁজছে। বিদায়ের সময় হয়ে এলো তো।”
“হু?”
“চলো।বিদায়ের সময় হয়ে এলো তো।”
নাবিল নিজের চোখের কোল মুছে নিলো।কেন যেন বারেবার সিক্ত হয়ে যাচ্ছে।বাঁধা মানছে না।শায়েরীর কথায় প্রথমেই কথা বলতে পারলো না।গভীর দৃষ্টিতে চেয়ে দেখলো শায়েরী কে।
শায়েরীর গলার স্বর ভার ভার।চোখও ছলছলে।মুখের দিকে তাকালেই বোঝা যাচ্ছে অন্তরের ব্যথা।অথচ কতো ধীর।কতোটা সংযমে আছে।নিজেকে সুন্দর ভাবে স্বাভাবিক রেখেছে।যেন মেয়ে কে বিয়ে দিয়ে বিদায় দিচ্ছে না,বাইরে কোথায় বেরাতে পাঠাচ্ছে।
নাবিলের অশ্রুসিক্ত চোখ দেখে শায়েরী পরম মমতায় নিজের আঁচল দিয়ে চোখের কোন মুছিয়ে দিলো।
“কাঁদছো কেন?ওরা তো মৌলভীবাজার চলে যাচ্ছে না।ঢাকাতেই থাকছে।সামনেই তো। চাইলে রোজ গিয়ে দেখা করে আসা যাবে।ওর সামনে এমন করো না।নিজেকে সামলাও।তাহলে মেয়ে আরো ভেঙে পরবে।কতো ঝড়ের পর আজকের দিনে এসে পৌঁছেছে মেয়েটা। ওকে খুশি মনে নতুন সংসারে যেতে দাও।”
“আমি তো তাই চাই শায়ু।কিন্তু মন মানছে না।”
গলা ধরে আসে নাবিলের।
শায়েরীর চোখের কোনও আদ্র হতে শুরু করে। কিন্তু পরক্ষনেই নিজেকে সামলে নেয়।
“চলো।সবাই খুঁজছে তোমাকে।কতো রাত হয়ে এলো।উঠো।”
নাবিল এবার উঠলো। ধীরে ধীরে সবার সামনে গিয়ে পৌঁছুলো।প্রলয়ের হাতে রুপসাকে তুলে দেবার সময় নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলো না নাবিল।হু হু করে কেঁদে উঠলো।
“বাবা,,আমার কলিজার টুকরো টাকে তোমার হাতে দিলাম।ওর কোন অযত্ন করো না বাবা।”
আর বলতে পারে না নাবিল।বাবার কান্নার সাথে রুপসার কান্নার ও বেগ বারে।দু হাতে নাবিলের গলা জড়িয়ে বাবা বাবা বলে কাঁদতে থাকে।রুপসার কয়েকজন কাজিন চেষ্টা করেও ছাড়াতে পারে না।অনেকটা সময় পর নাবিল নিজেকে শান্ত করে।
“আর কাঁদিস না মা।চল।এবার তো যেতে হবে।”
“আমি যাবো না বাবা,আমি তোমাদের ছেড়ে কোথাও যাবো না বাবা।”
চিৎকার করে কাঁদতে থাকে রুপসা।মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করে নাবিল।
অদূরে দাঁড়িয়ে রুপসার এমন কান্নায় আবেগী হয়ে ওঠে প্রলয়।মেয়ে বিদায় এতো কস্টের তা ওর জানা ছিলো না।সারাজীবন বিয়ে এটেন্ড করেছে কিন্তু নিজের পরিবার পরিজন কে ছেড়ে আসতে একটা মেয়ের যে কতো কস্ট হয় তা বোঝার চেষ্টা করেনি কখনো।
পাশে দাঁড়ানো ছোট চাচাকে ডাকে প্রলয়।
“কি হয়েছে? ”
চাচা জিজ্ঞেস করে।
“ওর মনে হয় খুব কস্ট হচ্ছে চাচা।যেতে চাইছে না যখন থাক এখন।পরে নেওয়া যাবে।”
প্রলয়ের চাচা প্রলয়ের দিকে শান্তভাবে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে একটা ধমক দিলেন।
“যা গাড়িতে গিয়ে বস।গাঁধা কোথাকার।”
চাচার ধমক খেয়ে প্রলয় আর কোন কথা বললো না।
ওদিকে রুপসার কান্না থামেনি।নিজের মাকে খুঁজে চলেছে।অবশেষে শায়েরী এসে মেয়ে কে বুকে নিয়ে আদর করে, বুঝিয়ে গাড়িতে তুলে দিলো।
রুপসাকে নিয়ে গাড়ি চলতে শুরু করলো।
______
এই মুহূর্তে প্রলয়ের ঘরে খাটের উপর বসে আছে রুপসা।গায়ে বিয়ের লেহেঙ্গা গহনা। প্রথমে এসব খুলে ফেলতে চেয়েছিলো কিন্তু প্রলয়ের এক ভাবি নিষেধ করেছে।বলেছে প্রলয়ের অনুমতি নিয়ে বদলে আসতে।
এদিকে প্রলয়ের ও কোন খবর নেই।এইসব ভারী ভারী জিনিসে দমবন্ধ অবস্থা রুপসার।
প্রলয় এলো আরো ঘন্টা খানেক পর।
নিজের গায়ের শেরওয়ানি টা খুলে রুপসার পাশে বসে পরলো ধপ করে।রুপসা চমকে গেল।
“থ্যাংকস্।”
“কেন?”
“এই যে বিয়ের সাজপোশাক গুলো খুলে ফেলনি তাই।তখন তো তোমাকে দেখতেই পারিনি ঠিক ভাবে।এখন মন ভরে দেখবো।”
প্রলয়ের গলায় কিছু একটা ছিলো রুপসা মাথা নিচু করে ফেললো।প্রলয় তাকিয়ে রইলো অপলক।কতোটা সময় পেরিয়ে গেছে জানে না প্রলয়।
“শুনুন।”
রুপসার ডাকে ধ্যান ভঙ্গ হলো প্রলয়ের।
“আমি এগুলো বদলে আসি?আমার হাসফাস লাগছে।”
চুড়িতে টুংটাং আওয়াজ তুলে বললো রুপসা।
“বদলাবে?খুব খারাপ লাগছে? ”
“হ্যাঁ।কেন?আপনার কি ইচ্ছে? ”
“আমার কি ইচ্ছে জানতে চাও?”
দুস্টুমি মিশিয়ে বললো প্রলয়।কিন্তু রুপসা ধরতে পারলোনা।
“হ্যাঁ,বলুন।”
প্রলয় রুপসার কানেকানে ফিসফিস করে কিছু বললো।
রুপসা লজ্জায় বিছানার চাদর খামচে ধরলো।বুকে নিঃশ্বাসের দ্রুত উঠানামা স্পষ্ট । কোনরকমে মুখে বললো
,
“না।কখনো না।”
প্রলয় হাসলো হা হা করে।ফের ফিসফিস করে বললো,
“দেখা যাবে।”
রুপসা দ্রুত বিছানা থেকে নেমে ওয়াশরুমে ছুটলো।সেখানে আগে থেকেই কাপড় নেওয়া ছিলো।রুপসা ধীরে ধীরে নিজেকে সমস্ত অলংকার আর ভারী সাজপোশাক থেকে মুক্ত করলো।সুতির একটা থ্রিপিস পরে অজু করে বেরিয়ে এলো।
প্রলয় সামনেই দাঁড়িয়েছিল।
“অজু করে এসেছো?”
“হু।”
“দাঁড়াও।আমি এখনি আসছি।”
প্রলয় অজুকরে বের হয়ে রুপসাকে নিয়ে নামাজে দাঁড়ালো।নিজেদের সুখী দাম্পত্য জীবনের জন্যও দোয়া চাইলো মোনাজাতে।
নামাজ শেষে দুজন খাটে এসে বসলো।রুপসার একটা হাত নিজের হাতে নিয়ে বললো,
“আমার জন্য অনেক কস্ট করেছো রুপসা।মেঘের পরে যেমন মেঘ থাকে, আবার মেঘের স্তর শেষ হলেই সূর্যের দেখা পাওয়া যায়।স্নিগ্ধ চাঁদের আলোয় চারিদিক উদ্ভাসিত হয়।আল্লাহর অশেষ রহমতে আমাদের জীবনের মেঘ কেটে গেছে। তুমি আমাকে কথা দাও,আগে যেমন, যেভাবে আমাকে ভালোবেসেছো,ভরসা করেছো বাকি জীবনটাও করবে তাহলে আমার আর কোন কিছু চাওয়ার থাকবে না।”
রুপসা মৃদু স্বরে বললো,
“ইনশাআল্লাহ। ”
“এবার আর একটা অনুরোধ। ”
“কি?”
“তুমি করে বলো।সেই কবে থেকে অপেক্ষা করিয়ে রেখেছো,এবার আমার পাওনা আমাকে বুঝিয়ে দাও।”
রুপসা হাসলো।
“হাসলে হবে না।”
“তুমি।”
ছোট্ট করে বললো রুপসা।
“এভাবে বললে হবে না”
“তো কিভাবে বলবো?”
“আমি জানি না।”
মাথার নিচে বালিশ দিয়ে চোখ বন্ধ করলো প্রলয়।
রুপসা পরলো বিপদে।এখন এই লোক কে কিভাবে তুমি বলবে?
তারপর ধীরে ধীরে বললো,
“প্রলয়,আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি। ”
বলেই দু হাতে মুখ ঢেকে নিলো রুপসা। প্রলয় উঠে বসলো। রুপসা কে জড়িয়ে ধরলো মুহূর্তেই।
“আমিও তোমাকে খুব ভালোবাসি বৌ।”
বেহেশতের সুঘ্রান দিয়ে শুরু হয় প্রলয় রুপসার নতুন জীবন।যার ঘ্রান পরবর্তীতেও ছড়াতে থাকে।
“সমাপ্ত। ”
মুনিরা মেহজাবিন।
(“