মৃত কাঠগোলাপ পর্ব -৩৫+৩৬

#মৃত_কাঠগোলাপ – ৩৫
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
___________________________
সুন্দর এক ফুরফুরে সকাল! প্যারিসের চারিদিকে কেমন যেন প্রেম প্রেম সুভাস! এ শহর প্রেমের শহর কি-না।
সুন্দর এ সকাল উপভোগ করতে আয়েশী-ধ্রুব প্যারিস ঘুরতে বেরিয়েছে। নতুন দেশ, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এসব কিছু আয়েশীকে ভীষন মুগ্ধ করছে। আয়েশীর মনের ক্ষত জাদুর ন্যায় হাওয়ায় মিলিয়েছে। আয়েশী হাসছে, প্রাণ খুলে। হাসলে আয়েশীর চোখ ছোট হয়ে, ভ্রুতে ভাঁজ পড়ে, সর্বোপরি ভীষন সুন্দর দেখায় আয়েশীকে। আয়েশীকে ভালো থাকতে দেখে ধ্রুব খুশি হয়। ধ্রুবর বলিষ্ট হাতের ভাঁজে আয়েশীর নরম হাত ডুবে! আয়েশীর এসবে মনোযোগ নেই। সে তো মগ্ন প্রেমের শহরের প্রেম সাগরের স্রোতে ভেসে যেতে, ডুবে যেতে, হারিয়ে যেতে, উন্মাদ হতে!
ধ্রুব বলল, ‘ কিছু খাবে? ‘
আয়েশী হেসে বলল, ‘ না। শুধু দেখব। ‘
ধ্রুবর ঠোঁট হাসে, মুখ হাসে। ধ্রুব বলে, ‘ শুধু দেখলে পেট ভরবে? ‘
আয়েশী উত্তর দেয় না। ধ্রুব আয়েশীকে সাথে করে তুর্কিশ রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করে। ধ্রুব আয়েশীকে চেয়ার টেনে বসতে দেয়। আয়েশী বসে। ধ্রুব খাবার অর্ডার দেয়। ট্রফস, মাউস অফ চকলেট, ক্লাফাউটিস, কনফিড দি কানার্ড, আর ওয়াইন!
ওয়াইনের নাম শুনে আয়েশী তাৎক্ষণিক বলল, ‘ আমি মদ খাব না। ‘
ধ্রুব ভ্রু কুঁচকায়। বলে, ‘ ওয়াইন মদ না! ‘
‘ কিন্তু মদের মতো। আমি এসব ছাইপাঁশ খাব না। ‘
‘ ঠিক আছে, ঠিক আছে। তোমার খেতে হবে না। আমি খাব শুধু। ‘
আয়েশী মুখ বাঁকাল। বলল, ‘ নেশাজাতীয় দ্রব্য খাওয়া ভালো না। ‘
ধ্রুব মৃদু হাসে। ঠোঁট কামড়ে বলে, ‘ আমি খারাপ তো তাই খারাপ জিনিস খাই। ‘
আয়েশী তীক্ষ্ম চোখে ধ্রুবকে পরখ করে। ধ্রুব ভ্রু বাঁকালে আয়েশী দ্রুত চোখ সরিয়ে নেয়।
প্রায় আধ ঘন্টা পর আয়েশীদের টেবিলে খাবার আসে। অনেক দেরি করে খাবার দিয়েছে ওরা। বাংলাদেশে অর্ডার দেওয়ার দশ মিনিটের মধ্যে খাবার দিয়ে দেয়। এখানে এত দেরি করল কেন? সার্ভিস ভালো না!
আয়েশী প্রশ্ন করে, ‘ ওরা এত দেরি করে খাবার দিল কেন? ‘
ধ্রুব আয়েশীর প্লেট আয়েশীর কাছে এগিয়ে দিয়ে বলে,
‘ ওরা অর্ডার দেয়ার পর খাবার রান্না করে দেয়। গরম থাকে, খেতে ভালো লাগে তখন। ‘
ধ্রুব আয়েশীর কোলে সাদা কাপড়ের মত কিছু একটা রেখে দেয়। আয়েশী চেনে এই কাপড়। ছোটবেলায় খাবার খেতে গেলে, আয়েশী জামা নষ্ট করে ফেলত। তাই মা এই কাপড় রেখে খাইয়ে দিতেন। কিন্তু আয়েশী তো এখন বড় হয়েছে। ওর এই কাপড় কেন লাগবে? আয়েশী প্রশ্ন করে,
‘ আমার লাগবে না এই কাপড়। ‘
ধ্রুব নিজের কোলেও একটা কাপড় রাখে। খাবার চামচ দিয়ে নেড়ে বলে, ‘ এটা রাখা ভালো। ভুল করে খাবার ফেলে দিলে, কাপড় নষ্ট হবে না। ‘
আয়েশী চুপ থাকে। আয়েশী টেবিলে রাখা খাবার একবার জরিপ করে নেয়। খাবারগুলো যেন কেমন কেমন! আয়েশী ট্রফসের প্লেট থেকে খেতে নিল। মুখে এক চামচ দিতেই আয়েশী মুখ কুঁচকে ফেলে। ‘ ওয়াক ‘ বলে আর্তনাদ করে বলে, ‘ এগুলো কি? ‘
ধ্রুব নিরালায় খেতে খেতে বলল, ‘ কালো মাশরুম। ‘
‘ মানে? এখানে আমরা ব্যাঙের ছাতা খেতে এসেছি? ছিঃ! ‘
ধ্রুব মৃদু হেসে আয়েশীর মুখে ট্রফস এক চামচ জোরপূর্বক প্রবেশ করিয়ে বলে, ‘ খাও। সব মাশরুম ব্যাঙের ছাতা হয় না। এই মাশরুমগুলো চাষ করা হয়। খেতে থাকো। একসময় ভালো লাগবে। ‘
আয়েশী ধ্রুবর কথামত খেতে থাকে। পেটে ক্ষুধা তার। তাই না খেয়েও উপায় নেই। আয়েশী খেতে খেতে একসময় উপভোগ করতে থাকে ট্রফস! আয়েশী মাউস অফ চকলেট খায়। চকলেট টা খুব বেশি মোলায়েম। মুখে দিলেই হাওয়ার ন্যায় মিলিয়ে যাচ্ছে। দারুন খেতে!
ধ্রুব খাচ্ছে, আর একটু পরপর ওয়াইনের গ্লাসে চুমুক দিচ্ছে। আয়েশী দেখছে, কিন্তু কিছু বলছে না। তার সামনে বসে কেউ মদ খাচ্ছে, ভাবতে আয়েশী গা গুলিয়ে যাচ্ছে। ধ্রুব যদিও বলেছে এসব মদ না, তবুও আয়েশীর ভীষন অস্বস্থি লাগছে। আয়েশী প্রশ্ন করল, ‘ এসব খেয়ে আপনার নেশা হয় না? ‘
‘ না, অভ্যাস আছে। ওয়াইনে খুব কম পরিমাণে নেশা থাকে। আমি ওয়াইন ছাড়াও অন্যান্য হার্ড নেশা জাতীয় ড্রিংকস খেয়ে থাকি। ‘
‘ অর্থাৎ মদ? ‘
‘ হ্যাঁ। ‘
আয়েশীর বমি পেল। ছিঃ, ধ্রুব মদ খায়? আয়েশী বলল,
‘ আমি আপনাকে ভালো ভেবেছিলাম! ‘
‘ কেন ভাবলে? আমি কি ভাবতে বলেছি? ‘
‘ হ্যাঁ, এখন তো বলবেন’ই। ‘
ধ্রুব মৃদু হেসে আয়েশীর দিকে ঝুঁকে আসে। আয়েশী ভরকায়। মাথা কিছুটা পিছিয়ে বলে, ‘ কি হয়েছে? ‘
ধ্রুব আয়েশীর ঠোঁটের পাশে আঙ্গুল বুলায়। আয়েশী খানিক কেপে বলে, ‘ সরে….’
ধ্রুব আয়েশীর ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে বলে, ‘ শুশশ ‘
আয়েশী থেমে যায়। ধ্রুব কি করতে চাইছে সে বুঝতে পারছে না। ধ্রুব আয়েশীর ঠোঁটের পাশে লেগে থাকা মাশরুমের টুকরো আঙ্গুল দিয়ে মুছে দিয়ে বলে, ‘ আমি মানুষটা ভীষন খারাপ, রক্তজবা! এতটা খারাপ যতটা তুমি ভাবতেও পারবে না। ‘
আয়েশীর বুক কেঁপে উঠে। কি বলতে চাইছে ধ্রুব? আয়েশী ভয় পেয়ে চোখ পিটপিট করে। ধ্রুব হেসে সরে আসে। চেয়ারে ঠিকঠাক বসে বলে, ‘ ভয় পেও না। আমি খারাপ হলে ভয়ংকর নই। ‘
আয়েশী দম ছাড়ে। ধ্রুব সরে যেতে, আয়েশী লম্বা নিঃশ্বাস ছাড়ে। আজকাল ধ্রুব আয়েশীর পাশে এলে, আয়েশীর নিঃশ্বাস আটকে আসে। মিছামিছি রাগ দেখালেও, আয়েশী মনেমনে ধ্রুবকে নিয়ে ভাবে। কেন ভাবে? ধ্রুব আয়েশীর প্রেমে ব্যর্থ মনকে নতুন ভাবে বাঁচতে শিখিয়েছে, সে জন্যে? আয়েশী যখন দুঃখ পায়, ধ্রুব আয়েশীর পাশে থাকে, সে জন্যে? নাকি আয়েশীকে মৃদুলের পরে ধ্রুব ভালো বুঝতে পারে, সে জন্যে?
প্রেমে আহত মনকে সুস্থ করে তুলতে, ওষুধ নয়, বরং প্রেম প্রয়োজন! প্রেমে কষ্ট পাওয়া ব্যক্তি তার অবচেতন মনে পুনরায় প্রেম চায়। এমন প্রেম, যে প্রেম তার ভেতরের সমস্ত কষ্টকে শুষে নিবে। মরে যেতে চাওয়া মনকে নতুন ভাবে বাঁচতে শেখাবে।
আয়েশী কখনো ভাবে নি, মৃদুলের পর আয়েশী অন্য পুরুষকে কাউকে নিয়ে ভাবতে পারবে। আয়েশীর কাছে মৃদুল তার সবকিছু ছিল। প্রাণ,জীবন, আত্মা সবকিছু! আয়েশী চেয়েছিল এক পুরুষকে আকরে ধরে জনম পার করে দিতে। অথচ সে পুরুষ আয়েশীকে কখনোই ভালোবাসেনি। সারাজীবন শুধু ধোঁকা দিয়ে গেছে। আয়েশী বোকা, তার ভালোবাসার মানুষের দেওয়া ধোঁকা তার প্রেমান্ধ চোখ বুঝতে পারেনি। কিন্তু যখন বুঝতে পেরেছে, আয়েশী তখন থেকে মৃদুলকে ঘৃনা করে এসেছে। তবে পেরেছে কি? আয়েশীর অবচেতন মন কেন এখনো মৃদুলের জন্যে পুড়ে?
আচ্ছা, আয়েশী কি ধ্রুবকে একটা সুযোগ দিবে? স্বামী হিসেবে ধ্রুবর কি একটা সুযোগ প্রাপ্য নয়? অবশ্যই প্রাপ্য! যে মানুষ আয়েশীকে ভালোবাসার নামে অনবরত ধোঁকা দিয়েছে, তাকে ভেবে অন্যকে কষ্ট দেওয়ার কি মানে? কিন্তু ধ্রুবকে ভালোবাসতে আয়েশীর মন মানছে না। যখন ধ্রুবকে নিয়ে চিন্তা করতে চায়, আয়েশীর চোখে মৃদুলের চেহারা ভাসে। আয়েশী ক্লান্ত এ দুই পুরুষের দ্বন্ধে। একজনকে আয়েশী ভালোবেসে কষ্ট পেয়েছে, আরেকজন আয়েশীকে ভালোবেসে কষ্ট পাচ্ছে। কি করবে আয়েশী? কোথায় যাবে? পিষে যাচ্ছে আয়েশী তার মনের দ্বন্ধে! বাঁচতে চায় আয়েশী এই মানুষিক কষ্ট থেকে!
‘ আয়েশী, খাচ্ছ না কেন? ‘
ধ্রুবর কথায় আয়েশীর ধ্যান ভাঙে। আয়েশী অন্যমনস্ক হয়ে চামচ নেড়ে বলে, ‘ খাচ্ছি। ‘
ধ্রুব বুঝতে পারে আয়েশী কিছু নিয়ে চিন্তায় আছে। মৃদুলকে নিয়ে? ধ্রুব আয়েশীর গালে হাত রেখে কোমল কণ্ঠে শুধায়,
‘ মৃদুলকে মনে পড়ছে? ‘
আয়েশী চেঁতে উঠে। ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলে,
‘ মৃদুলের নাম আমার সামনে নিবেন না। আমি তাকে ঘৃনা করি, প্রচন্ড ঘৃনা। ”
ধ্রুব বাঁকা হাসে। যাক, শেষ অব্দি ধ্রুবর জয় হয়েছে। আর হবে না কেন? ধ্রুবর পরিকল্পনা আজ অব্দি বৃথা যায় নি। ধ্রুব যা ভাবে, তাই সঠিক! অন্যান্য মানুষ যা চিন্তা করে, ধ্রুবর চিন্তাধারা তার চেয়ে হাজারগুণ উর্ধ্বে! হা হা হা! বোকা মেয়ে!
ধ্রুব খাবারের দাম দিতে কাউন্টারে যায়। আয়েশী চেয়ারে বসে আছে। আবার কান্না পাচ্ছে তার। এত কান্না কই থেকে আসে তার? কি হবে, যদি কাঁদতে কাঁদতে আয়েশীর চোখের জল একদিন শুকিয়ে যায়? আয়েশী কি তখন আর কাঁদতে পারবে না? তাহলে না কেঁদে, আয়েশী তার কষ্ট থেকে কি করে মুক্ত হবে? কষ্ট বুকে নিয়ে আয়েশী তো ধুঁকে ধুঁকে মরে যাবে।

ধ্রুব টাকা দিয়ে এসে দেখে আয়েশী চেয়ারে বসে নেই। বরং আয়েশীর চেয়ার উল্টে মাটিতে পড়ে আছে। ধ্রুবর বুক ধ্বক করে উঠে। কোথায় গেল আয়েশী? ধ্রুব উন্মাদের মত সম্পূর্ন রেস্টুরেন্টের ভেতর-বাহির খুঁজে চলে। না, কোথাও নেই আয়েশী!
#মৃত_কাঠগোলাপ – ৩৬
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
_____________________________
ধ্রুব ভয়ংকর রাগান্বিত! ওসমানকে ডেকে এনে ভীষন রকমের ঝেড়েছে। ফরাসি পুলিশরা পথে নেমেছে আয়েশীর খুঁজে। ধ্রুব বাংলাদেশের জনপ্রিয় ব্যবসায়ী। তার স্ত্রী ফরাসিদের দেশে এসে কিডন্যাপ হয়েছে, কি লজ্জা ! কি লজ্জা! তাই ফরাসি পুলিশরা নিজেদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে ধ্রুবর স্ত্রীকে খুঁজে দেওয়ার।
ধ্রুব হাতের মুঠোয় একটি কাঁচের গ্লাস নিয়ে তা চড়চড় করে ভেঙে ফেলল। ধ্রুবর হাতের মধ্যে কাঁচ ভেঙে ঢুকে গেছে। হাত কেটে র’ক্ত ঝরছে। অথচ ধ্রুব নির্বিকার! সে ব্যস্ত ফোনকলে। একে ফোন করছে, ওকে ফোন করছে! সে কি ভীষন অস্থিরতা তার! ধ্রুবর হাত কাটতে দেখে, ওসমান এগিয়ে এল। থরোথরো করে কেঁপে বলল, ‘ স্যার, আপনার হাত….’
ধ্রুব ওসমানের কলার চেপে ধরলো আহত হাতের মুঠোয়। ওসমানের কলারে ধ্রুবর হাতের রক্তে মাখামাখি! ওসমান ভয়ার্ত চোখে ধ্রুবর দিকে চাইল। ধ্রুব ভয়ংকর রেগে বলল,
‘ একদম চুপ শা’লার বাচ্চা! তুই বাইরে পাহারায় থাকলে ওরা আয়েশীকে কিডন্যাপ করত পারল কি করে? বল। ‘
ধ্রুব যাচ্ছেতাই বলে সবার সামনে অপমান করতে লাগল ওসমানকে। বাবার বয়সী এক লোককে এমন জঘন্যভাবে অপমান করতে দেখে রেস্টুরেন্টের সবাই হতভম্ব! রেস্টুরেন্টের মালিক এগিয়ে আসতে চাইলেন। তবে ধ্রুবর রক্তিম চোখ দুখানা দেখে তার গলা শুকিয়ে খা খা হয়ে গেল। তিনি সেখানেই দমে গেলেন। ওসমান চোখ ঘুরিয়ে আশপাশ পরখ করল। সবার তাদের দিকে চেয়ে আছে। সবার চোখে করুণা, ভয়, আতঙ্ক! ওসমানের আত্মসম্মানে আঘাত হানলো প্রবলভাবে। মাথা চাড়া দিয়ে উঠল ভয়ংকর রাগ, ক্ষোভ! ধ্রুব এবার সীমা ছাড়িয়ে গেছে। অনেক হয়েছে, আর না। ‘ সামনে থেকে সর কুত্তার বাচ্চা ‘ বলে ধ্রুব ওসমানকে ছেড়ে দিল। আচমকা ছাড়া পেয়ে, ওসমান দু কদম পিছিয়ে গেল। জুতো ছাড়া, খালি পা স্পর্শ করল মাটিতে থাকা কাঁচের টুকরোসমূহকে। তাৎক্ষণিক ওসমানের পা চ্যাক করে কেটে গেল। ওসমান মৃদু আর্তনাদ করে পা চেপে ধরে ধপ করে চেয়ারে বসে পড়ল।
ধ্রুব রাগে ফুঁসছে। নাক দিয়ে ভুসভুস আওয়াজ বের হচ্ছে। মন চাচ্ছে,রেস্টুরেন্টে থাকা সবাইকে চিবিয়ে চিবিয়ে খেয়ে ফেলতে। কিন্তু তা করতে পারছে না, তাই রাগটা সময়ের সাথে তরতর করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশ হলে এখনি এখানের সবাইকে সে খু’ন করে ফেলতে তার হাত কাঁপতো না। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এটা বাংলাদেশ না, ফ্রান্স!
ধ্রুবর সেলফোনে কল এল। ধ্রুব কল রিসিভ করলে, শুনে,
‘ স্যার, আমরা খুঁজে পেয়েছি তাকে। ‘
ধ্রুব চোখ উল্টে মৃদু নিঃশ্বাস ছাড়ে। বলে,
‘ কোথায় সে? ‘
লোকটি ধ্রুবকে ঠিকানা বলে। ধ্রুব ফোন কেটে দেয়। দেরি না করে দ্রুত গাড়িতে চড়ে বসে। ওসমান পা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হেঁটে ধ্রুবর পাশের সিটে বসে।
প্রায় এক ঘণ্টার রাস্তা ধ্রুব পনেরো মিনিট পেরিয়ে আসে। ট্র্যাফিক পুলিশ অনেকবার ধ্রুবকে আটক করেছে। তবে ধ্রুব অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সহিত ট্র্যাফিক পুলিশকে সামলে নিয়েছে।
ধ্রুব গাড়ি থেকে নামে। ওসমান পেছন পেছন হেঁটে আসে। ধ্রুব দানবের ন্যায় বড়বড় পা ফেলে সামনে এগুচ্ছে। ওসমান কাঁটা পা নিয়ে ধ্রুবর নাগাল পাচ্ছে না। তাই সে যতটা দ্রুত সম্ভব ধ্রুবর নাগালে থাকার চেষ্টা করছে।

ধ্রুব একটি কক্ষের সামনে আসে। পরিত্যাক্ত একটি কক্ষ। চারপাশে ভীষন নোংরা, আবর্জনায় ভরপুর। ধ্রুব আবর্জনা ঠেলে দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে।
এ কি হলো?
ধ্রুবর চোখ আগুন হল। কান রাগে লাল হল। মস্তিষ্কের ভেতরে দাউদাউ করে ফুটতে লাগল। ‘ ইউ বাস্টার্ড’ বলে ধ্রুব ধপাধপ পায়ে এগিয়ে গিয়ে ছেলেটার কলার চেপে ধরল। তারপর, এক শক্ত ঘুষি পড়ল ছেলেটার নাকে। ছেলেটা নাকে হাত চেপে ধরল। ধ্রুব রাগে পাগল হয়ে গেছে। ছেলেটার গায়ে আবারও আঘাত করতে এগিয়ে গেল। তবে পারল না। ছেলেটা পাল্টা ধ্রুবর বুকে ঘুষি দিল। ধ্রুব আক্রমনে কিছুটা পিছিয়ে গেল। তবে হার মানল না। ছেলেটা আফ্রিকান! লড়াইয়ে অভ্যস্ত হাত চিনতে ধ্রুবর একটুও ভুল হল না। ধ্রুব সমান ভাবে আক্রমন করল নিগ্রো এই ছেলেকে।
পালাক্রমে আক্রমনের এই ধারায় আফ্রিকান ছেলেটা হার মানল। মাটিতে পড়ে ব্যথায় কুকিয়ে উঠল। ধ্রুব ছেলেটার পুরুষাঙ্গে লাথি দিয়ে বলল, ‘ নাও ইউ উইল সি ইউর ডেথ, ব্লাডি রা’স্কেল। ‘
ছেলেটা ব্যথায় অজ্ঞান হওয়ার উপক্রম। পুরুষাঙ্গ চেপে ধরে বারবার বলছে, ‘ আই অ্যাম সরি, সরি! প্লিজ ফরগিভ মি। ‘
তবে ধ্রুব ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নয়। ধ্রুব ওসমানকে ডেকে বলে, ‘ যত টাকা লাগুক,এই কু’ত্তার বা’চ্চাকে , বাংলাদেশে পাঠা। একে আমি বাংলাদেশে দেখছি। বুঝা গেছে। ‘
ধ্রুবর চিৎকারে ওসমান কেঁপে উঠল। ওসমান দ্রুত মাথা হেলিয়ে লোকটিকে টেনে হিঁচড়ে বাইরে নিয়ে আসে।
ধ্রুব কপাল চুলকে ঘাড় কাত করে পাশে ছটফট করতে থাকা আয়েশীর দিকে তাকায়। আয়েশীর মুখ বাঁধা, কথা বলতে পারছে না। তবে চোখের ইশারায় ধ্রুবকে নিজের কাছে ডাকছে। ধ্রুব ধপ করে আয়েশীর পাশে বসে। দু ঘণ্টায় আয়েশীর কি হাল হয়েছে! নিজের কামনা মেটানোর জন্যে জামা কাপড় ছিঁড়ে ফেলেছে ওই শু’য়োরের বাচ্চা। ধ্রুবর ন্যায় কঠিন মানুষের চোখেও আজ জল জমেছে। প্রিয়তমার এই দুর্দশা দেখে কষ্টে ধ্রুবর বুকটা ফেঁটে যাচ্ছে। ধ্রুব আয়েশীর মুখের বাঁধন খুলে দেয়। আয়েশী হাঁপাতে থাকে। জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে, মৃদু স্বরে বলে, ‘ আ-মি নিঃ-শ্বা-স নি-তে পার-ছি না। খু-ব ক-ষ্ট হ-চ্ছে আম….’
আয়েশীর আর বলতে হয় না। ধ্রুব তার ফ্যাসফ্যাসে ঠোঁট চেপে ধরে আয়েশীর ঠোঁটে! আয়েশী জোরে নিঃশ্বাস নেয়। ধ্রুব তার ভেতরের নিঃশ্বাস আয়েশীর ঠোঁটে নির্গত করছে। আয়েশী কাঁপছে থরথর করে। ধ্রুব তাকে ঘনিষ্ট ভাবে স্পর্শ করছে, আয়েশীর তা বোধগম্য হচ্ছে না। আয়েশী ধ্রুবর কাধের টিশার্ট শক্ত করে মুঠোয় পুড়ে ক্রমাগত নিঃশ্বাস নিচ্ছে। একসময় আয়েশী সহজ হয়ে আসে। আয়েশী ধ্রুবর থেকে ঠোঁট ছাড়িয়ে নিতে চায়। তবে দুর্বলতার কারনে পারে না। ধ্রুব এবার আয়েশীর ঠোঁটে মেতে উঠেছে। ধ্রুবর হাত আয়েশীর পিঠে বিচরন করছে। ধ্রুবর বেসামাল স্পর্শে আয়েশী কেঁপে কেঁপে উঠছে। সম্পূর্ণ আশ্চর্যজনক ভাবে আয়েশী এখন লজ্জা পাচ্ছে। লজ্জায় আলুথালু হয়ে জমে গেছে তার মাখন ন্যায় শরীর। আয়েশী তো ধ্রুবকে ঘৃনা করে। ধ্রুবর স্পর্শে এমন তো হওয়ার কথা না! তবে কেন এমন হচ্ছে? আয়েশী কেন ধ্রুবর স্পর্শে আরাম লাগছে, সুখে ভেসে যেতে ইচ্ছা হচ্ছে। তাহলে মৃদুল? আয়েশীর এই অনুভুতির দ্বন্ধে মৃদুল কোথায়? না, না! মৃদুল নেই। কোথাও নেই। মৃদুলকে আয়েশী ঘৃ’না করে। প্রচন্ড ঘৃ’না!
আয়েশী আর ভাবতে পারছে না। ধ্রুবর ঠোঁট প্রবলভাবে আয়েশীর ঠোঁটে প্রবেশ করছে। আয়েশীর ভাবনার সাগর ধ্রুবর স্পর্শে ভেসে যাচ্ছে, হারিয়ে যাচ্ছে, অতলে ডুবে যাচ্ছে। জীবনের এই কঠিন দ্বন্দ্বের কথা চিন্তা করে, আয়েশীর চোখের কার্নিশ বেয়ে জল প্রবাহিত হয়। ধ্রুবর দেওয়া সুখ, কেন যেন আয়েশীর কষ্টকে ভুলাতে পারছে না। আয়েশীর কষ্ট মেঘালয়ের মত! দূর থেকে দেখলে মনে হয় অতি ক্ষুদ্র!
কিন্তু যে কাছে আসে, বসে, আয়েশীর হাতে হাত রাখে, সে জানে আয়েশীর কষ্টের গভীরতা কতটা তীব্র! আয়েশীর এই কষ্ট দেখে সবার বুক কেঁপে উঠে। ধ্রুবর কাঁপে কি?

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here