#মেঘবিলাসী
#israt_jahan_arina
#Part_1
পৃথিবীতে সবচাইতে বিরক্তিকর কাজ হচ্ছে বাসার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা। তিন্নির কাছে এই মুহূর্তে তাই মনে হচ্ছে। কখন থেকে ডোর বেল বাজাচ্ছে কিন্তু দরজা খুলছে না কেউ। এমনিতেই আজ অনেক টায়ার্ড সে। দরজাটা খুলে দিলো তার মা আর সাথে সাথেই রান্নাঘরে দৌড়ে চলে গেল। এই মুহুর্তে তিন্নির প্রচন্ড বিরক্ত লাগছে। বাসায় ঢুকে তার চোখ পরল ড্রইং রুমে। সে ভেবেছিল বাসায় মনে হয় কেউ নেই। কিন্তু এখন তো দেখি বাসায় পুরো মাছের বাজার। ড্রইং রুমের ফ্লোরে গোল হয়ে বসে আছে তার বেশ কয়েকজন কাজিন। জম্পেশ আড্ডা আর খেলাধুলা চলছে। তিন্নি পাশের একটা সোফায় গিয়ে বসল। সবাই এখন মহাব্যস্ত কেউ তিন্নির দিকে খেয়াল করছে না। তিন্নি ক্লান্ত চোখে সকল কাজিনদের দেখছে। এর মাঝে একজনের দিকে তার চোখ পরল। তার ঠিক সামনে বসে আছে রাতুল ভাইয়া। তার দিকে একবার তাকিয়ে তারপর সে তাকালো তার হাতে থাকা একটি শপিং ব্যাগের দিকে। আর সাথে সাথেই একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লো তিন্নি। এই মানুষটাকে সে ঠিক কবে থেকে পছন্দ করে তা তার জানা নেই। রাতুল তার ফুফাতো ভাই। খুব ছোট থেকেই সে তার অন্য সকল কাজিনদের থেকে এই রাতুল ভাই কে একটু বেশি স্পেশাল মনে করে। কেন তা ঠিক জানা নেই।
কাজিন দের এই আড্ডায় তিন্নিকে সবসময়ই খুব কম দেখা যায়। ছোট থেকেই সে খুব ইন্ট্রোভার্ট টাইপের মেয়ে। আর তার উগ্র মেজাজ সম্পর্কে সকলেরই জানা। এর জন্যই হয়তো তিন্নিকে তার কাজিনদের গ্রুপে খুব বেশি একটা দেখা যায়না। আর আড্ডাবাজি ও তিন্নির খুব একটা পছন্দ না।মাঝে মাঝে যখনই সে এই আড্ডায় আসে তাতো রাতুল ভাই কে দেখার জন্য। একা থাকতেই সে বেশি পছন্দ করে। তাই বলে যে তার বন্ধু-বান্ধবের সংখ্যা কম তা কিন্তু নয়। কিন্তু এই মুহূর্তে তাঁর রাতুলের উপর প্রচণ্ড বিরক্তি কাজ করছে। আর মন চাচ্ছে তার হাতে থাকায় শপিং ব্যাগ টা রাতুলের মাথায় মারতে।
প্রচন্ড ক্লান্তি নিয়ে সে উঠে চলে গেল তার নিজের রুমে। রুমে ঢুকে তার চোখ পরল বা পাশে রাখা সোফায় বসা মানুষটার উপর। মানুষটাকে দেখে তার বিরক্তির মাত্রা আরো বেড়ে গেল। মানুষটার সোফায় বসে পা দোলাচ্ছে। প্রচন্ড বিরক্ত নিয়ে সে তার হাতে থাকা শপিং ব্যাগ আর কাঁধের ব্যাগটা খাটের উপর ছুড়ে মারল আর নিজেও খাটে বসে পড়ল। মানুষটাকে এখন তো একদম দেখতে ইচ্ছে করছে না। লোকটার দিকে চোখ পড়তেই লোকটা একটা মুচকি হাসি দিলো। চোখ ফিরিয়ে নিল তিন্নি। কিছুক্ষণ দুজনের মাঝে নিস্তব্ধতা কাজ করলো। হালকা কাশি দিয়ে লোকটা প্রথমে কথা শুরু করলো।
”কেমন আছেন আপনি।” তিন্নি কোন জবাব দিল না। লোকটি আবার বললো”আপনাকে অনেক ক্লান্ত দেখাচ্ছে”। তিন্নি একটা দীর্ঘ নিশ্বাস নিল। আর ভাবতে থাকলো, সে তো এই লোকটাকে কখনো স্বামী রুপে আশা করেনি। সে তো চিনেও না এই লোকটাকে। তাদের দুজনকে দেখলে কেউ বলতে পারবে না যে তাদের মাত্র ১০ দিন আগে বিয়ে হয়েছে।ওই দিন খুব ঘরোয়া ভাবেই তাদের কাবিন হয়েছে। তিন্নির তো এই মুহূর্তে এই লোকটার নামও মনে পড়ছে না। তিন্নি আসলে এতক্ষণ লোকটার নাম মনে করার চেষ্টা করছিল। তাই লোকটার প্রশ্ন খেয়াল করতে পারিনি। হ্যাঁ মনে পড়েছে লোকটার নাম জিসান। কিন্তু তার পুরো নামটা তার মনে পড়ছে না। এই মুহূর্তে তার একটু অদ্ভুত লাগছে লোকটা তার স্বামী কিন্তু তার পুরো নামটাই তার মনের নেই। জীবনে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে তিনি কখনও ভাবেনি।
লোকটা এবার সোফা থেকে উঠে তিন্নির পাশে এসে বসলো। তিন্নির এবার খুব অস্বস্তি হচ্ছে। হয়তো হওয়াটাই স্বাভাবিক। কারন সে এই মুহূর্তে লোকটার সাথে কথা বলতে চাচ্ছে না। এই বিয়েটা তিন্নি তার বাবার ইচ্ছাতেই করেছিল। সে তার বাবাকে প্রচন্ডরকম ভালোবাসে। বাবার জোরাজুরিতে সেই বিয়েতে রাজি হয়েছিল। তিন্নির বাবার নাম আনিসুর রহমান। তিন্নির একটা ছোট ভাই আছে নাম তামিম রহমান। সে এবার ক্লাস ফাইভে। তিন্নির মতে তামিমের মত এত দুষ্টু বাচ্চা দুনিয়াতে মনে হয় আর একটাও নেই। তাদের দুই ভাই-বোনের মধ্যে দা কুমড়ো সম্পর্ক। একজন উত্তর তো একজন দক্ষিণ। যাইহোক তিন্নির এখন বিয়ে না করার বেশকিছু কারণ আছে। মেডিকেলে পড়ার খুব ইচ্ছে। তার সব সময় ইচ্ছা ছিল লেখাপড়া শেষ করে তারপর বিয়ে করবে। তাছাড়া সামনে তিন্নির এইচএসসি পরীক্ষা আছে। এছাড়াও সবচেয়ে বড় রিজন হচ্ছে তার মনজুড়ে অন্যকেও বিচরণ করে। তবে বিয়েটা সে রাতুলের ওপর অনেকটা অভিমান নিয়েই করেছে।