মেঘবিলাসী পর্ব ৩২+৩৩+৩৪

#মেঘবিলাসী
#israt_jahan_arina
#part_32

কিছুর তীব্র ঘ্রাণ নাকে আসতেই তিন্নির ঘুম ভেঙে গেলো। চোখ মেলে কয়েক সেকেন্ড পর বুঝতে পারলো এটা শিউলি ফুলের ঘ্রাণ। ভোরের ধমকা হাওয়ায় বারান্দার পর্দাটা এলোমেলো উড়ছে।পরক্ষণে চোখ পড়লো দেয়ালে টানানো ঘড়িটার দিকে। সারে ছয়টা বাজে।অনেক দিন পর এতো সকালে তিন্নির ঘুম ভাঙলো।এমন সময় বারান্দায় দাড়িয়ে এক কাপ গরম চা না খেলেই নয়।

বিছানা ছেড়ে উঠতে যেতেই দেখলো সে করো হাতে আবদ্ধ।মাথা ঘুরিয়ে দেখলো জিসান তাকে পেছন থেকে ঝাপটে ধরে আছে।তিন্নি মুচকি হাসলো।এটা আজ নতুন নয়।ঘুমানোর সময় মাঝে একটা কোল বালিশ রাখলেও কোনো দিন তা সকালে খুজে পাওয়া যায় না।প্রথম প্রথম একটু অসস্তি লাগলেও এখন খুব ভালো লাগে।এই মানুষটার ছোঁয়া তার কখনো খারাপ মনে হয়নি।

তিন্নি খুব সাবধানে জিসানের হাতের বাধন আলগা করে উঠে পড়লো।ফ্রেশ হয়ে চা হাতে বারান্দার চেয়ারে বসলো।চারিদিক নিস্তব্ধতায় ঘেরা। রাস্তায় খুব অল্প সংখ্যক মানুষের আনাগোনা।পরিবেশটা চমৎকার।

তারপর সে তার দৃষ্টি ফেরালো জিসানের দিকে।তিন্নি ভাবছে সকল কবিরা শুধু মেয়েদের সুন্দর্যের বর্ণনা দিয়েছে।আচ্ছা তার সামনে যেই পুরুষটি ঘুমিয়ে আছে তাকে দেখলে নিশ্চয়ই কবিরা ছেলেদের রূপের বর্ণনা দিতে বাধ্য হতো।
তিন্নি তার পর তাকালো পাশের দেয়ালে।তাদের বিয়ের একটা ছবি বড় করে বাঁধানো।এই বাসায় প্রথম এসেই সে এটা খেয়াল করেছে।বিয়ের দিন মানুষটাকে ভীষণ সুন্দর লাগছিলো।অবশ্য সে সেই দিন খেয়াল করে নি।তবে মানুষটা বার বার তাকেই দেখছিলো সেটা সে খেয়াল করেছে। মুনা এসে বার বার বলছিলো

-“জানো আপু,দুলাভাইকে পুরো হিরো লাগছে।আমার জন্যও কিন্তু এমন জামাই খুজে বের করবে।”

তখন এক ধমক দিয়েছিলো তাকে।কথাটা মনে পড়তেই মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠল তার।
এই কয়েক দিনে এই বাসাটা তার খুব আপন মনে হয়।যেমন বারান্দার ডান পাশের চেয়ারটা তার, ক্লোজেটের একটা পাস তার,এমনকি ডাইনিং এ জিসানের পাশের চেয়ারটা তার জন্য বরাদ্দ।সব কিছু আপন মনে হলেও মানুষটিকে এখনো পুরো পুরি আপন ভাবতে পারেনি।
ডোর বেলের শব্দে তার ধ্যান ভাঙ্গলো। সে জানে এই সময়ে রোজিনা খালা আসে। তাই সে চলে গেল দরজা খুলতে। তিন্নিকে দেখে রোকিনা খালা হেসে বললেন

-“সক্কাল সক্কাল তোমার মুখখানি দেখলে সারাদিন আমার অনেক ভালা যায়।”

-“তাই নাকি খালা? আপনার ছেলে মেয়ে কয়জন?”

-“একটা পোলা দুইটা মাইয়া। একটা মাইয়া আর একটা পোলারে বিয়া দিয়া ফালাইছি। ছুডু মাইয়াডা লেহাপড়া করে। শুনলাম তুমি নাহি ডাক্তার।”

-“না খালা আমি এখনো ডক্টর হইনি। এখনো লেখাপড়া করছি। পাশ করতে পারলে ডাক্তার হতে পারব।”

-“তোমার মুখখানা দেখলে অসুস্থ মানুষ অসুস্থ হইয়া যাইব।জিসান বাবাতো দুই দিন পর পর শরিলে কাডা ছেড়া কইরা বাসায় আহে। ভালা হইছে তুমি তহন সেবা করতে পারবা। শোনো একখান কতা কই।জামাইর হইলো লোহা।আর বউরা হইলো চুম্ববুক।এই সাট ফেন্ট না পিন্দ্দা শাড়ি পিনবা। দেখবা জামাই কেমন অচলের তলে আইসা থাকবো।”

তিন্নি জানে এখন তিনি আরও নানা উপদেশ দেওয়া শুরু করবে। মানুষটাকে প্রথমদিকে বিরক্তিকর লাগলেও এখন তার ভীষণ মজা লাগে তার কথা শুনে। তিন্নি বললো

-“খালা আপনার জিসান বাবাকে আমার আঁচলের নিচে না রেখে ভাবছি আমার জিন্স এর পকেটে রাখবো। বিষয়টা ইন্টারেস্টিং হবে না?”

রোজিনা খালা যেন বোকা বনে গেলো। এমন কথা তিনি জীবনেও শুনেনি।
কিছুক্ষণ পর এলার্মের শব্দে জিসানের ঘুম ভেঙে গেল। ঘুম থেকে উঠে আসে পাশে সে তিন্নিকে দেখতে পেল না। দ্রুত রুম থেকে বের হয়ে দেখল তিন্নি আর রোজিনা খালা টেবিলে নাস্তা সাজাচ্ছে।
তারা নাস্তা খেয়ে রেডি হয়ে নিলো।তিন্নি বললো

-“আপনার এখনই অফিসে জয়েন করা ঠিক হচ্ছে না। এখনো পুরোপুরি সুস্থ নন আপনি।”

-“চিন্তা করো না আমি সুস্থ আছি। আর আমি আজ জয়েন করছিনা। কিছু ইম্পরট্যান্ট কাজ আছে সেটা সেরেই চলে আসব। আমি কিন্তু তোমার কলেজের সামনে থাকব।তোমার ক্লাস শেষে আমরা একসাথে আসবো বাসায়।”

-“আচ্ছা ঠিক আছে।”

কলেজে এসেই তিন্নি মনোযোগ দিয়ে ক্লাস গুলো করলো। এই কয়েকদিনে অনেক গাফিলতি হয়েছে। এখন তাকে ভালো মতো পড়তে হবে।
ক্লাস শেষ করে বের হয়ে তিন্নি সীমাকে বললো

-“তোকে ভীষণ খুশি খুশি লাগছে,কাহিনী কি?”

সুমাইয়া বললো

-“হ্যাঁ আমিও খেয়াল করেছি। বেশ এক্সাইটেড দেখাচ্ছে তোকে। সত্যি ঘটনা কি সেটা বল?”

সীমা মুচকি হেসে বললো
-“আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে।”

রত্ন অবাক হয়ে বললো
-“এই কাহিনী কবে হলো কিছুই তো জানালি না?”

-“আসলে হঠাৎ করেই তাহসান ওর বাবা মা নিয়ে চলে আসলো আর বাবাও রাজি হয়ে গেলো।”

রত্না অবাক হয়ে বললো
-“এই কোন তাহসান?জিসান ভাইয়ের কলিগ উনি?”

এবার সীমা একটু লজ্জা পেয়ে মুচকি হাসলো আর মাথা নেড়ে হ্যা জানালো।”

-“ও! তলে তলে এত দূর?”

তিন্নি হেসে বললো
-“সেন্টি খাইস না বান্ধবী। একদিন তোরও হবে।”

-“আল্লাহ এই সব বিবাহিত মহিলাদের মাঝখানে আমি একাই অবিবাহিত রয়ে গেলাম। কেমন এতিম এতিম লাগছে নিজেকে।”

রত্নার কথা শুনে সবাই হেসে উঠল। কলেজ গেইটে এসে তিন্নি কিছুটা থমকে দাঁড়ালো। সামনে জিসান দাঁড়িয়ে একটা মেয়ের সাথে কথা বলছে। তিন্নির মোটেও ভালো লাগছে না। সে মেয়েটাকে একদম সহ্য করতে পারছে না। পরক্ষণেই বেশ অবাক হয়ে নিজেকে প্রশ্ন করলো

‘আমি এমন ট্রিপিক্যাল ওয়াইফের মত কেন বিহেভ করছি। এগুলো মোটেও আমার সাথে যায় না।’

বান্ধবীদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সে জিসানের সামনে গেলো। ততক্ষণে মেয়েটিও চলে গেছে। তিন্নি কে দেখে জিসান মুচকি হাসলো। কিন্তু আজকের হাসিটা তিন্নির মটেও ভাল লাগলো না। হাসি দেখিয়ে মেয়েদের পাগল করে এই লোক। তিন্নি জিজ্ঞাসা করলো

-“মেয়েটি আপনার পরিচিত?”

অবাক হয়ে জিসান বললো

-“কোন মেয়েটি?”

তিন্নির এবার রাগ হচ্ছে। সে কিছুটা রেগে বললো
-“আমি আসার আগে কত জন মেয়ের সাথে কথা বলেছেন আপনি?”

বিষয়টা ধরতে পেরে জিসান মুচকি হেসে বললো

-“এত জেলাস হওয়ার দরকার নেই বউ। মেয়েটার সাথে আমার অফিসে দেখা হয়েছিল। তার বাবার একটা কেস আমাদের হাতে এসেছিল। তখনই তার সাথে পরিচয়। আজ হঠাৎ অনেকদিন পর দেখে কথা বললো।”

-“আমি মোটেও জেলাস না।”

-“তা তো দেখতেই পাচ্ছি।”

-“আপনি বেশি কথা বলেন। চুপচাপ গাড়ি চালান।”

জিসান বুঝতে পারল তার প্রিয়তমার মাথা গরম হয়ে গেছে। তাই তার মাথা ঠান্ডা করার জন্য লং ড্রাইভে বের হলো। সারাটা বিকেল ঘুরে সন্ধ্যার দিকে তারা একটা আইসক্রিম পার্লারে থামল।

তিন্নি মনোযোগ দিয়ে আইসক্রিম খাচ্ছে আর জিসান মুগ্ধ হয়ে তা দেখছে। এই মেয়ের আইসক্রিম খাওয়াতে কোন বাচ্চামো নেই। মুখের আশেপাশে আইসক্রিম লেগে থাকলে তা সে খুব যত্নসহকারে মুছে দিতে পারতো। কিন্তু না তার বউ অলওয়েজ পারফেক্ট।

দুজন অনেক গল্প করছে আর আইসক্রিম খাচ্ছে। হঠাৎ টিভির একটা নিউজ দেখে তিন্নি থমকে গেলো। তিন্নি অস্থির হয়ে উঠল। তার পুরো শরীর রীতিমতো কাঁপছে। তার গলা শুকিয়ে আসছে। সামনে থাকার গ্লাসে পানি নিয়ে খেতে পারল না। অলরেডি তার হাত থেকে পড়ে গ্লাসটা ভেঙে গেছে।

তিন্নি কেন বিচলিত হচ্ছে সেটা সে বুঝতে পারলো না।পিছনে ঘুরে টিভির দিকে তাকালো জিসান।খেয়াল করতেই দেখতে পেলো টিভিতে নির্বাচনী প্রচারণার খবর চলছে। হঠাৎ করে তিন্নি এমন কেন করছে কিছুই তার বোধগম্য হলো না। জিসান তিন্নিকে জিজ্ঞাসা করলো

-“তিন্নি আর ইউ ওকে? তোমাকে এমন অস্থির লাগছে কেন?”

তিন্নির মুখ দিয়ে যেন কথা বের হচ্ছে না। তার ঠোটজোড়া কাপতে শুরু করলো। মনে হচ্ছে দম বন্ধ হয়ে আসছে। অনেক কষ্ট সে বললো

-“আ…. আ…আমি বাসায় যাবো।”

-“ঠিক আছে যাবো। কিন্তু তুমি এমন করছ কেন সব ঠিক আছে।”

-“সব ঠিক আছে।প্লিজ আমি এক্ষুনি বাসায় যাব।”

কথাটা বলে তিন্নি দ্রুত বেরিয়ে গেলো। জিসানও দ্রুত তিন্নির পিছন পিছন আসলো। সারাটা রাস্তা তিন্নি কোনো কথা বলেনি। বাসায় এসে সে সোজা গেস্ট রুমে ঢুকে গেলো। জিসান কিছুক্ষণ দরজায় নক করলো।আর বললো

-“তিন্নি তোমার শরীর ঠিক আছে?প্লিজ কিছু বলো।”

ওপাশ থেকে তিন্নি বললো
-“আমি ঠিক আছি। প্লিজ আমি কিছুক্ষন একা থাকতে চাই।”

জিসান আর কিছুই বলতে পারলোনা। চুপচাপ রুমে চলে আসলো। তিনি হঠাৎ এমন কেন করছে। আগে কখনো সে তাকে এতোটা অস্থির হতে দেখেনি।তিন্নি কি তার কাছ থেকে কিছু লুকাচ্ছে? টেনসনে সারারাত সে ঘুমাতে পারলোনা। ভোরের দিকে তার চোখ লেগে আসলো।

রোদে ঝলমলে আলো চোখে পড়তেই জিসানের ঘুম ভেঙে গেল। সে দ্রুত উঠে বসলো। রাতের কথা মনে পরতেই সে গেস্ট রুমের দিকে এগিয়ে গেল। কিন্তু আশ্চর্য ব্যাপার দরজাটা খোলা। তিন্নি সেখানে নেই। সারা বাসা খোঁজে সে তিন্নিকে পেল না। ভীষণ টেনশন হতে লাগল তার।

হঠাৎ চোখ পরল তার টেবিলের দিকে। এখনে তিন্নির বই ছিল। কিন্তু এখন টেবিলটা ফাঁকা। কিছু একটা ভেবে জিসান দ্রুত ক্লজেট খুললো। তিন্নির কোন জামাকাপড় নেই। তিন্নিকে ফোন কল করেও পেলো না।তার ফোনটা বন্ধ। উপায় না পেয়ে জিসান তিন্নির বাবাকে কল করলো। তিন্নির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বললেন

-“চিন্তা করো না বাবা।তিন্নি সকালেই বাসায় এসেছে।তার নাকি নেক্সট উইকে পরীক্ষা। তবে তার তোমাকে বলে আসা উচিত ছিল। আমি কথা বলব তিন্নির সাথে।”

-“না বাবা সমস্যা নেই। আমিও বুঝতে পারছিলাম তিন্নির এখানে লেখাপড়ায় খুব ডিস্টার্ব হচ্ছিলো। আপনি কিছু বলার প্রয়োজন নেই। আমি পরে ওর সাথে কথা বলে নেব।”

-“ঠিক আছে বাবা।”

তিন্নির বাবার সাথে কথা বলার পরও জিসানের মনটা অস্থির হয়ে আছে। তিন্নির এভাবে চলে যাওয়ায় জিসান খুব কষ্ট পেয়েছে। সে তিন্নিকে এখানে বেঁধে রাখতে চায়নি। তিন্নি নিজের ইচ্ছায় এখানে ছিলো।তবে এভাবে চলে যাওয়ার মানে কি?আর রাতে তিন্নি সেখানে এমন কি দেখেছিল যে এমন অস্থির হয়ে উঠেছিল?#মেঘবিলাসী
#israt_jahan_arina
#part_33

ভালো লাগার মুহূর্ত গুলো কেনো দীর্ঘস্থায়ী হয় না।মনে হয় এক পলকেই ভালো সময় চলে যায়।অথচ খারাপ সময় হয় অনেক বেশি দীর্ঘস্থয়ী।বর্তমান সময়টাকে জিসানের দীর্ঘ মনে হচ্ছে।মনে হচ্ছে এই প্রহরের শেষ নেই।ভালোবাসার মানুষের অবহেলা গায়ে কাটার মত বিধে।জিসানের বর্তমান অবস্থা অনেকটা এমন।

সেদিন বিকেলে সে তিন্নির সাথে দেখা করতে বাসায় যায়। কিন্তু তিন্নি জিসানের সাথে দেখা করে না।তিন্নি লেখা পড়া নিয়ে ব্যাস্ত।জিসান ভীষণ কষ্ট পেয়েছে।সে তো তিন্নিকে স্টাডিতে বরাবর সাপোর্ট করে এসেছে।এমনকি তার ক্যারিয়ারে যাতে কোনো ভাবে বাধা না আসে তাই সে তিন্নির সাথে অনেকটা দুরত্ব বজায় রেখেছে।তিন্নির মানুষিক অবস্থা বুঝার চেষ্টা করেছে।

পরবর্তী সময় গুলি জিসানের জন্য ছিলো আরো বেশি বিষাদময়।তিন্নি তার কল recived করতোনা।বাসায় গেলে সামনে আসেনা।জিসানকে এড়িয়ে চলতো।তিন্নির এই খামখেয়ালিপনা জিসানকে ক্ষত বিক্ষত করছে।
এতো দিনে কি সে তিন্নির মনে একটুও জায়গা করতে পারেনি?তিন্নিকে তার ভালোবাসা কি সে বুঝাতে পারেনি?তিন্নি মোটেও বোকা না।তার প্রতিটা ফিলিংস এর সাথে তিন্নি পরিচিত।বন্ধু না ভাবলেও একজন শুভাকাঙ্ক্ষী তো ভাবতে পারতো?এই মেয়েটার মনটা এতো পাথর কেনো?যে পাথর হাজারো অশ্রুকণা বিনিময়েও গলেনা।

কয়েক দিন আগে কথা।
জিসান তিন্নিকে এক পলক দেখার জন্য অস্থির হয়ে উঠেছে।একটু কথা বলতে পাগল হয়ে তিন্নির কলেজের সামনে অপেক্ষা করেছে।যদি একটু চোখের তৃষ্ণা মেটানোর যায়।প্রায় তিন ঘন্টা অপেক্ষা করেও তিন্নির দেখা পায়নি।আরো বেশ কয়েক দিন তিন্নির কলেজের সামনে এভাবে অপেক্ষা করেছে।কিন্তু তিন্নি তার কাছে ধরা দেয়নি।এমন কি হলো যে তিন্নি তাকে অভয়েড করছে।সম্পর্কের প্রথম থেকেই তিন্নির গা ছাড়া ভাব।কিন্তু এই কিছুদিন সে তিন্নির চোখে অন্যকিছু দেখেছে।তিন্নির চোখের ভাষা বদলাতে দেখেছে।তিন্নির চোখে নিজের জন্য মুগ্ধতা দেখেছে।তিন্নির চোখে যা ছিলো তাকে অনায়াসে ভালোবাসার নাম দেয়া যায়।ভালোবাসি কথাটা সবসময় মুখে বলতে হয় না।অনেক সময় বুঝে নিতে হয়।তবেকি তার ধারণা ভুল?সে কি তিন্নিকে ভুল বিশ্লেষন করেছে?

জিসানকে একাকীত্ব যেনো আরো ঝাপটে ধরলো।তার মনে জমতে শুরু করলো অভিমানের পাহাড়।সে সব কষ্ট ভুলতে কাজে ডুবে গেলো। সেই মানুষটা যদি তাকে ছাড়া ভালো থাকে,তবে সে কেনো তাকে ডিস্টার্ব করবে?বিদ্যার রানী বিদ্যা গ্রহণ করে বিদ্যাসাগর হয়ে যাক।তাতে সে আর মাথা ঘামাবেনা।হয়তো তার মত এতিমরা করো ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য না।

জিসানদের পুরো টিম হাইপ্রফাইল কেস বেশি হ্যান্ডেল করে। ইদানিং একটা কেস নিয়ে সে কাজ করছে।বড় বড় কয়েকজন নেতা গুম হয়েছে।পাবলিকালি খবরটা মিডিয়াতে আসেনি।খুব গোপনে কাজ করতে হচ্ছে।জিসান বেশ কয়েক জন ইনফরমারকে কাজে লাগিয়েছে।আর নিজেও বিভিন্ন ইনফরমেশন কালেক্ট করতে ব্যাস্ত হয়ে পড়েছে।রিয়াজ জিসানের মানুষিক অবস্থা কিছুটা আঁচ করতে পেরে তাকে ধরেবেধে সূচনার কাছে নিয়ে এসেছে।জিসান সবার কাছে নিজের ফিলিংস লুকাতে পারলেও সূচনার কাছে পারেনা।
সূচনার বাসায় এসে কিছুক্ষণ কথা বলে রিয়াজ অন্য রুমে চলে যায়।এখন দুই ফ্রেন্ড সুখ দুঃখের আলাপ করবে। এখানে থেকে তার কাজ কি?
সূচনা বললো

-“কীরে দিন দিন তো রোবটমেন হয়ে যাচ্ছিস।কাজে এভাবে ডুবে আছিস কেনো?টাকা তো কম কামাস না।বেবি প্ল্যান করছিস নাকি?কিন্তু চেহারায় কেমন দেবদাস দেবদাস লুক।”

-“এমন কিছু না।তুই অলয়েজ বেশি বুঝিস।”

-“দেখ এতো সেন্টি খাইসনা।কি হইসে বলে ফেল।”

-“কি হয়েছে জানিনা।জানলেতো আমি নিজেই সমাধান করতে পারতাম।”

-“তিন্নির উপর রেগে আছিস?”

-“যে আমার রাগের পরওয়া করেনা,তার উপর রেগে কি হবে?তুইতো সবই জানিস।আমি কখনো কোনো মেয়ের প্রতি দূর্বল হয়নি।কিন্তু এই মেয়েটা আমাকে এতটা দুর্বল করে দিয়েছে যে একটা ধমকা হাওয়া এলেই আমি ভেঙে গুড়িয়ে যাবো।আমিতো ওকে শর্তহীন ভালোবেসেছি।বিনিময়ে ভালোবাসা পাওয়ার আশা নিশ্চয়ই করেছি,কিন্তু জোর করিনি।এমনটা না যে সে কিছু জানে না।আমি ওকে কতটা ভালোবাসি,কতটা চাই সে এটা ভালো করেই জানে।তবে এতটা অবহেলা কেনো করছে?একটা বার ওকে দেখার জন্য কাতর হয়ে ওর কাছে ছুটে যাই।কিন্তু সে ধরা দেয়না।”

কথা গুলো বলতে বলতে জিসানের চোখ বেয়ে দু ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো।কাপা কাপা গলায় আবার বললো

-“আচ্ছা সূচনা,আমি যে ওর চোখে ভালোবাসা দেখতে পেয়েছি সেটা কি ভুল?আমার চোখ এতো বড়ো ধোঁকা কি করে খেতে পারে?এই পুরো পৃথিবীটা আমার কাছে বিষাক্ত মনে হচ্ছে।আমি আর ওর এই অবহেলা নিতে পারছিনা।আজকাল বাসায় থাকতে কষ্ট হয়।আমার বাসার প্রতিটা কোনায় ওর বিচরণ দেখতে পাই।মনে হচ্চে আমার বুকটা জ্বলে যাচ্ছে।”

জিসান কথাগুলো শুনে সূচনার দু চোখ ভিজে উঠলো।এই মানুষটাকে সে কখনো এতটা ভেঙে পড়তে দেখেনি।জিসানকে সান্তনা দেবার মত কোনো ভাষা তার কাছে নেই।
_________________________
বিকেল চারটা বাজে।জিসান কফি খাওয়া জন্য একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকলো।আসলে তার মাথাটা ভীষণ ধরেছে।কাজের অনেক বেশি চাপ।বেশ কয়েক জায়গাতে দৌড়াতে হয়েছে তাকে।তাই এই ক্লান্তি দুর করতে কফির বিকল্প কিছু নেই।একটা চেয়ারে বসে সে কফি অর্ডার করলো।

বিকেলের এই ঠান্ডা পরিবেশ জিসানের ভালো লাগে।তবে আজ তার তেমন ভালো লাগছেনা।মন ভালো না থাকলে বোধহয় আশেপাশের সব কিছুই অর্থহীন লাগে।কয়দিন হলো সে তিন্নিদের বাসায় যায় না।আর না তিন্নির নম্বরে কল দেয়।গত কয়েক দিনে সে কতো বার তিন্নির নম্বরে কল করেছে তার কোনো হিসাব নেই।প্রথম দিকে রিং হলেও পরবর্তীতে তার নম্বর বন্ধ বলছে।সে কি তিন্নিকে এতটাই বিরক্ত করছিলো যে ফোন বন্ধ করে রাখতে হচ্ছে।

হাজারো ভাবনার মাঝে কফি খেতে খেতে তার চোখ পড়লো দূরের একটা টেবিলে।সে কি ভুল দেখছে?এতো দিন পর কাঙ্ক্ষিত মানুষটিকে সে দেখছে।তবে জিসান বেশিক্ষণ নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে পারলো না।তিন্নির পাশে একটা ছেলে বসে আছে।ছেলেটা কিছু বলছে আর তিন্নি মুচকি মুচকি হাসছে।

মুহূর্তেই যেনো তার সকল অভিমান ক্ষোভে পরিণত হলো।সে দ্রুত এগিয়ে গেলো তিন্নির দিকে।জিসান তিন্নির টেবিলের কাছাকাছি আসতেই দুজনের চোখাচোখি হলো।মুহূর্তেই তিন্নি দাড়িয়ে গেলো।এই মুহূর্তে হয়তো সে জিসানকে একদমই আসা করেনি।জিসান এক মুহুর্ত দেরি না করে তিন্নির হাত ধরে নিলো আর সামনের লোকটিকে উদ্দেশ্য করে বললো

-“সরি আপনাদের ডিস্টার্ব করার জন্য। বাট আমি আমার ওয়াইফকে নিয়ে যাচ্ছি।”

কথাটা বলেই সে তিন্নির হাত ধরে বাইরে বেরিয়ে আসলো।আর লোকটা হা করে তাদের দেখছে।
এই সময়টা তিন্নি নিরব ভূমিকা পালন করলো।জিসান তিন্নিকে গাড়িতে বসিয়ে ড্রাইভে করা শুরু করলো।
জিসান অনেকক্ষণ ড্রাইভ করে নীরব একটা জায়গায় গাড়ি থামালো।কিছুক্ষণ নিরবতা পালন করে জিসান বললো

-“আমাকে ইগনোর কেনো করছো?”

তিন্নির পাস থেকে কোনো জবাব এলো না।জিসান আবার বললো

-“আমার অপরাধ কি?কেনো আমাকে এ ভাবে কষ্ট দিচ্ছ?না দেখা করছো,আর না কল রিসিভ করছো।কতদিন তোমার কলেজের সামনে ঘন্টার পর ঘন্টা দাড়িয়ে থেকেছি।কিন্তু তুমি আসোনি।কি চাইছো তুমি?কি করলে বুজবে যে আমি তোমাকে পাগলের মত ভালোবাসি?”

তিন্নি এবার ও কিছু বললোনা। মাথা নিচু করে বসে আছে।তিন্নির এই চুপ থাকাতে যেনো জিসানের রাগকে বাড়িয়ে দিচ্ছে।জিসান মলিন হেসে বললো

-“আমিকি তোমাকে খুব বেশি ডিস্টার্ব করছি যে ফোনটা বন্ধ করে রেখেছো?চিন্তা করো না আমি আর তোমাকে ডিস্টার্ব করবো না।আমার মত মানুষের যোগ্যতা নেই কাউকে ভালোবাসার।আমার মত এতিমদের করুন করা যায় ভালোবাসা নয়।আমি কখনো তোমার লাইফ হস্তক্ষেপ করিনি,আর ভবিষ্যতেও করবনা।তাছাড়া আমি চাইনা আমার জন্য তোমার স্টাডি কোনো সমস্যা হোক।কোনো সম্পর্কই একা টিকিয়ে রাখা সম্ভব না।আমিও চাইনা তুমি এই মিথ্যা সম্পর্কের মাঝে নিজেকে জরাও।”

কথা গুলো বলতে বলতে জিসানের চোখ ভিজে উঠলো।জিসান আর কিছুই বললো না।আবার ড্রাইভে করতে শুরু করলো।সে সোজা তিন্নিদের বাসার সামনে গাড়ি থামালো।জিসান এবার বললো

-“তোমার গন্তব্যে চলে এসেছি।দোয়া করি অনেক বড় ডক্টর হও।তবে একটা আফসোস রয়ে গেলো।আমার অপরাধ কি সেটা জানা হলোনা।”

তিন্নি কিছুই বলছে না।জিসান চেচিয়ে বললো

-“প্লিজ তিন্নি বাসায় যাও।তুমি আর কিছুক্ষণ থাকলে আমি আমার রাগকে কন্ট্রোল করতে পারবো না।”

কিছুক্ষণ নিরবতা পর তিন্নি কাপা কাপা হাতে গাড়ির দরজা খুলতে গেলেই জিসান একটানে তিন্নিকে নিজের কাছে এনে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খেয়ে বললো

-“তুমিকি কিছুই বুঝিনা তিন্নি?আমার বুকে কি যন্ত্রণা হচ্ছে সেটাকী দেখনা?আমার এই দম বন্ধ করা অনুভূতিকে কি কখনো বুঝেনা?আমাকে কেনো ভালোবাসতে পারলেনা?”

তিন্নির দু চোখ বেয়ে পানি পড়ছে।জিসান দ্রুত তিন্নিকে ছেড়ে দিয়ে বললো

-“সরি তোমাকে এ ভাবে স্পর্শ করা ঠিক হয়নি।বাসায় যাও।”

তিন্নি কোনো মতে গাড়ি থেকে বের হলো।জিসান আর এক মুহুর্ত দারালোনা।সে তার দুর্বলতা আর কাউকে দেখাতে চায়না।আর তিন্নি সেখানে দাড়িয়ে জিসানের যাওয়ার দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকলো।

আজ রাতের আকাশে কোনো চাঁদ দেখা যাচ্ছেনা।চারদিক কেমন অন্ধকার।তিন্নি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আকাশ দেখছে।আকাশে অনেক মেঘ জমেছে।আকাশের মতো তার মনেও মেঘ জমেছে।মানুষ বৃষ্টিবিলাস করে।কিন্তু সে করে মেঘবিলাস।যেই মেঘ কখনো কারো সামনে বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়েনা।

আচ্ছা জীবন কেনো আমাদের প্ল্যান মতো চলেনা।যদি চলতো তবে সে ওই মানুষকে কখনো কষ্ট দিত না।তার জন্য একটা মানুষ এতটা কষ্টে আছে,এই অপরাধবোধ তাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে।এইযে মানুষটা তার বাসায় আসে তাকে একটা ঝলক দেখতে।কিন্তু সে নিজের মুখ লুকাতে তার সামনে যায়না।অনবরত মানুষটা তাকে কল করে যায়।কিন্তু তাকে কি জবাব দিবে সেই ভয়ে কল ধরেনা।এই মানুষটার কল যদি ইগনোর করতে না পারে সেই ভয়ে ফোনটাও বন্ধ করে রেখেছে।মানুষটা তার কলেজের সামনে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করে আর সে আড়ালে থেকে তাকে দেখে।এই মানুষটার কেয়ারিং বিহাভের জন্য তার প্রচন্ড গিলটি ফিল হয়।দিনের পরদিন সে এই মানুষটাকে ঠকাচ্ছে তাই সে এখন মুখ লুকিয়ে ফিরছে।সে তো কাউকে ঠকাতে চায়নি।তবে নিয়তি কেনো তাকে এই অব্দি এনে দার করিয়েছে?#মেঘবিলাসী
#israt_jahan_arina
#part_34

হঠাৎ সেদিন খুব সকালে তিন্নি জিসানের বাসা থেকে চলে আসায় তিন্নির বাবা মা ভীষণ চিন্তায় পড়ে যান।তারাতো মেয়েকে রেখে এসেছে জিসানের খেয়াল রাখার জন্য আর দুজনে একান্ত সময় কাটাতে পারবে বলে।কিন্তু এতো সকালে মেয়েকে একা দেখে তারা চিন্তায় পরে জন।তিন্নির চোখ গুলোও ফোলা ছিলো।দেখেই বোজা যাচ্ছে সারা রাত ঘুমায়নি।তিন্নিকে কিছু জিজ্ঞাসা করার আগেই সে তার রুমে যেয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।তিনি জানে তার জেদি মেয়েকে কিছু জিজ্ঞাসা করলেও উত্তর দিবে না।মন শান্ত হলে ঠিক নিজের বাবার কাছে চলে যাবে।

এই কয়দিন তিন্নি ঠিক মত ঘুমাতে পারেনি।তার অতীত থেকে সে অনেক আগেই বেরিয়েছে।তবুও ক্ষতটা বার বার তাজা হয়ে যায়।আচ্ছা মানুষ নাকি চাইলে সব পারে? তাহলে তিন্নিও তার সেই অতীতটা মুছে দিতো।

রাতে খাবার শেষে তিন্নি গেলো তার বাবার রুমে।আজ তার বাবাকে খুব প্রয়োজন।সে যেই দ্বিধার মধ্যে আছে,একমাত্র তার বাবাই তার সমাধান দিতে পারবে।রুমে ঢুকতেই দেখতে পেলো তার বাবা বারান্দায় বসে চা খাচ্ছেন।এটা তার পুরনো সভ্যাব।রাতে বাবার চা লাগবেই।

আনিসুর রহমান এতক্ষণ মেয়ের চিন্তাই করছিলেন।কিছুদিন যাবত মেয়েটাকে বিষণ্ণ লাগছে।জিসানের সাথে তার কিছু একটা জামেলা চলছে সেটা বুঝতে পারছে।কিছু ভেবে পিছনে ফিরতেই দেখতে পেলো তিন্নি বারান্দার দরজায় দাড়িয়ে আছে।মেয়েকে দেখে তিনি মিষ্টি হেসে পাশে বসতে ইশারা করলেন।

তিন্নিও বাধ্য মেয়ের মতো বাবার পাশে বসে পড়লো।আনিসুর রহমান হেসে বললেন

-“মা জানো, যখন প্রথম শুনলাম তুমি দুনিয়াতে আসবে তখন আমি আল্লাহর কাছে একটা মেয়ে চেয়েছি।তোমাকে যখন প্রথম কোলে দিলো আমি তোমাকে দেখে কেঁদে দিয়েছিলাম। তুমি বড় বড় চোখে আমার দিকে তাকিয়ে হাসছিলে।সেদিন আমি বুঝতে পেরেছি আমার জীবনের সব সুখ তোমার মধ্যে।ছোট বেলায় তুমি যখন কাদতে আমি অস্থির হয়ে যেতাম।মনে আছে তুমি একবার সাইকেল চালাতে যেয়ে পরে অনেক ব্যাথা পেয়েছিলে।আমি সেই দিনই ওই সাইকেল ভেঙে দিয়েছি।আমার রাজকন্যাকে কষ্ট দেয় এমন জিনিস আমি তোমার কাছ থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করেছি।তবে আমার বিশ্বাস তোমার পাশে এখন যেই মানুষটা আছে সে কখনো তোমাকে ইচ্ছাকৃত ভাবে কষ্ট দিবেনা।আমিকি ভুল বলছি মা?”

এতক্ষণ তিন্নি চুপ করে বাবার কথা শুনছিল।আর তার চোখ দিয়ে গড়িয়ে পানি পড়ছিলো।বাবার কাছে কখনো তাকে কোনো কিছু ব্যাখ্যা করতে হয়নি। তিনি মেয়ের মুখ দেখেই সব বুঝতে পারে।তিন্নির তো মনে হয় তার বাবার নিশ্চয়ই কোনো অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী।তিন্নি বাবার কাধে মাথা রাখলো আর বলতে শুরু করলো

-“পাপা আমার সাথে এমন কেনো হচ্ছে।সব কিছু এলোমেলো লাগছে।জানো পাপা,প্রথম যখন তুমি আমাকে বিয়ের কথা বললে আমি অনেক ভয় পেয়ে গেছিলাম।কারণ আমি আমার লাইফে কাউকে চাইনি।যেখানে আমি নিজে অন্ধকারে ডুবে আছি সেখানে অন্য কাউকে আমি টেনে নিয়ে আসতে চাইনি।জানো পাপা মানুষটাকে বিয়ের পর থেকে আমি ইগনোর করে এসেছি।না আমি তার মায়ায় পড়তে চেয়েছি। আর না তাকে আমার মায়ায় জড়াতে চেয়েছি।তুমি জানো পাপা তাকে একবার দেখার পর থেকে আমি আর তার দিকে তাকাতাম না।আমার ভীষণ ভয় হতো।
জানো পাপা, আমি ভালোবাসার অনুভূতি কেমন হয় জানতামনা।কিন্তু এই মানুষটা আমাকে এতটা কেয়ার করে,আমাকে এতটা সম্মান দেয় যে আমি ধীরে ধীরে মানুষটার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েছি।জানো পাপা,এই মানুষটা আমার প্রতিটা অবহেলা মুখ বুজে সহ্য করে গেছে।কোনো দিন আমার উপর বিরক্ত হয়নি।এই মানুষটা চোখে আমি আমার জন্য অসীম ভালোবাসা দেখতে পাই।তার এই ভালোবাসা আমাকে তিলে তিলে শেষ করে দিচ্ছে।মানুষটা পরিবারহীন বড় হয়েছে।এমন একটা মানুষকে আমি দিনের পর দিন ঠকিয়ে যাচ্ছি।”

কথাটা বলে তিন্নি হাউমাউ করে কেঁদে দিলো।আজ অনেক দিন পর তিন্নির বাবা মেয়েকে কাদতে দেখলো।মেয়েটা যেনো কেমন পাথর হয়ে গেছিলো।কাদুক।কেঁদে মনের সব সব দুঃখ কমিয়ে ফেলুক।আনিসুর রহমান মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।তিন্নি আবার বলতে শুরু করলো

-“আমরা সবাই মিলে মানুষটাকে ঠকাচ্ছি।সে কখনোই আমার মত মেয়ে ডিজার্ভ করে না।মানুষটার চোখের দিকে তাকালে আমার ভীষণ গিলটি ফিল হয়।আমি যত বার এই সম্পর্কটাকে নিয়ে ভাবতে চেয়েছি ততবার আমার অতীত আমার চোখের সামনে ভেসে উঠেছে।আমি কি করবো পাপা?আমি ভীষণ সার্থপর।সব কিছুর পরও এই মানুষটাকে আমি সারা জীবন আমার পাশে চাই।না আমি মানুষটাকে নিজের থেকে দূরে রাখতে পারছি,আর না পারছি নিজের সাথে জড়িয়ে নিতে।আমার জন্য মানুষটা ভীষণ কষ্ট পাচ্ছে।”

আনিসুর রহমানের দুই চোখ ভিজে উঠলো।তিনি বললেন

-“তুমি কাউকে ঠকাও নি।আমার মেয়ে কাউকে ঠকাতে পারেনা।এই সব কিছুতে যদি কেউ অপরাধী হয়ে থাকে তবে সেটা আমি।আমি তোমাকে জোর করে এই সম্পর্কে বেধে দিয়েছি।তুমি গিলটি ফিল করোনা মা।তবে আমার বিশ্বাস তোমার অতীত জিসানের মধ্যে তেমন কোনো প্রভাব ফেলবে না।তবুও আমাদের আগেই এই বিষয়টা ওকে বলা উচিত ছিলো।তুমি এখন যেই কষ্টে আছো তার একটাই সমাধান,জিসানকে সব খুলে বলো।তোমার গিলটি ফেলিং থেকে বেরিয়ে আসবে।”

তিন্নি কাপা কাপা কন্ঠে বললো

-“পাপা তার পর যদি সে আমাকে ঘৃণা করে, আমাকে যদি তার জীবন থেকে বের করে দেয়।আমি এবার আর নিজেকে সামলাতে পারবোনা।”

তিন্নির বাবা বললো
-“আগেই কিছু ভেবো না।”

-“পাপা আমার ভীষণ ভয় হচ্ছে।”

-“আমার মেয়েতো ভীতু না।আমার মেয়ে অনেক সাহসী।”

তারা আরো কিছুক্ষন কথা বলে ঘুমুতে চলে গেলো।আর দরজার আড়ালে থেকে কেউ একজন চোখের পানি ঝরাতে লাগলো।
অনেক্ষন ধরে আনিসুর রহমান আর অবনী রহমান শুয়ে আছে। কারো চোখে ঘুম নেই। হঠাৎ অবনী রহমান বলে উঠলেন

-“তুমি কি মেয়েটার সংসার ভেঙে ফেলতে চাইছো?”

-“মোটেও না।”

-“তাহলে মেয়েকে উল্টা পাল্টা এডভাইস কেনো দিলে।”

-“কারো কথা লুকিয়ে শুনতে নেই।”

এবার অবনী রহমান রাগে কেঁদে দিলেন।উঠে বসে চিৎকার করে বললেন

-“মেয়েকে কি তুমি শুধু একাই ভালোবাসো?আমি বাসি না?এতো কষ্টে আমার মেয়েটা স্বাভাবিক হয়েছে।বিয়ের পর আমি দেখেছি মেয়েটা অনেক হাসি খুশি থাকতে।কিন্তু তুমি মেয়েটার জীবনে আবার দুঃখ আনতে চাইছো?”

-“তোমার কি মনে হয় সত্যি কখনো লুকানো থাকে?আর মেয়েটা ভেতরে ভেতরে মরে যাচ্ছে তা কি তুমি দেখো না?তোমার জন্য জিসানকে কিছু বলতে পারিনি।”

-“তুমি প্লিজ আমার মেয়েটার সংসার ভেঙে যেতে দিও না।প্লিজ ওকে এইসব বলতে মানা করো।”

-“আমি চাই তিন্নি জিসানকে সব জানাক।তবে আমার বিশ্বাস আছে জিসানের উপর।সে কখনো আমার মেয়ের হাত ছাড়বে না।”

অবনী রহমান কাদতে কাদতে স্বামীকে জড়িয়ে ধরে বললেন
-“এমনটাই যেনো হয়।”
________________________
আজ সন্ধায় জিসান বাসায় চলে আসলো।কাজের ব্যস্ততায় কয়কদিন ঠিক মত ঘুম হয়নি।আসলে সবাইকে বুজিয়েছে যে কাজের চাপে সব হচ্ছে।তবে তার মন জানে কেনো সে এতটা এলোমেলো হয়েগেছে।সেই দিনের পর আর সে তিন্নির বাসায় বা কলেজ যায়নি।ভবিষ্যৎ ডক্টর মানুষকে অযথা বিরক্ত করার কোনো মানে হয়না।সে থাকুক নিজের মতো।এতো সব ভাবতে ভাবতে সে বাসার দরজা খুললো।তার জীবনটা এতটাই একাকিত্বের ঘেরা যে দিন শেষে বাসার দরজা খোলার মতো কেউ নেই।
বাসায় ঢুকেই জিসানের কেমন যেনো লাগছে।যেমনটা তিন্নি থাকলে লাগতো।মেয়েটা এই বাসা থেকে চলে যাবার পর থেকে যেনো বাসাটা আরো খালি খালি লাগে।তবে আজ সে আবার সেই গ্রান পাচ্ছে।তিন্নির গ্রান।যেই গ্রান তাকে পাগল করে তুলে।মেয়েটা চলে যেয়েও তার প্রতিটা সৃতিতে মিশে আছে।তবে এতো দিন পর আবার এই গ্রান পাওয়ার মানেটা সে বুজলনা।তবে সে যা ভাবছে ত সম্ভব না।

রুমে ঢুকে লাইট অন করে সে নিজের শার্ট খুলতে লাগলো।শার্ট খুলে সে পিছনের দিকে ছুঁড়ে মারলো।তার এখন প্রচন্ড বিরক্ত হচ্ছে।তিন্নির সেই সুবাস এখন আরো তীব্র ভাবে পাচ্ছে।এই মেয়েটা পাশে না থেকেও তার অনুভূতি নিয়ে খেলে।মাথার চুলে হাত বুলিয়ে পিছনে ঘুরেই সে ভীষণ শকড হলো।সে কি কোনো স্বপ্ন দেখছে।তিন্নিকে সে এই মুহূর্তে মোটেও আসা করেনি।তিন্নি খাটে বসে আছে।তবে তিন্নির এই সময় এই জায়গাতে আসতে যতনা আশ্চর্য হয়েছে,তার চাইতে বেশি আশ্চর্য হয়েছে তিন্নিকে এই ভাবে দেখে।
তিন্নি জিসানের দেওয়া সেই আকাশী রঙের শাড়িটা পরে এসেছে।এই মেয়েটাকে জিসান একবার শাড়ি পরা দেখার জন্য কত আশা করেছে।তবে কখনো সে আসা পূরণ হয়নি।মূলত সে কখনো তিন্নিকে এই ইচ্ছার কথা বলে নি।সে জানতো তিন্নিকে শাড়ি পরা অবস্থায় ভীষণ ভালো লাগবে।তবে তার বউটাকে এমন শাস রুদ্য করা সুন্দর লাগবে তা ভাবতে পারেনি।

জিসান বার বার শুকনো ঢোক গিলছে।এই মেয়ে কি আমাকে দমবন্ধ করে মেরে ফেলতে চায়ছে নাকি?আচ্ছা বিয়ের পর তিন্নি কি ঠোঁটে লিপস্টিক দিয়েছিলো?জিসানের ঠিক মনে পড়ছে না।তবে আজ তিন্নির ঠোঁটে হালকা পিংক লিপস্টিক, চোখে কাজল পড়েছে।আচ্ছা সে যদি এখন টুপ করে তিন্নির ঠোঁটে চুমু খেয়ে বসে তবে কি বিষয়টা খারাপ হবে?মোটেই না।কে বলেছে এই মেয়েকে এতো আকর্ষণীয় সাজে তার সামনে আসতে।
এইযে তার পাতলা শাড়ী ভেদ করে বেলি বাটন যে জিসানের মনকে আরো অস্থির করে তুলছে, তবুও তো সে নিজেকে সংযত করে রেখেছে। তারও তো মন চাইছে একটা বার সেখানে ছুয়ে দিতে।কই সে তো তবুও ছুয়ে দেয়নি।এই যে সে মনের বিরুদ্ধে কতো শত যুদ্ধ করে যাচ্ছে সেটাকী এই মেয়েটা কখনো বুজবে?

যেখানে তার ছুয়ে দেওয়ার অধিকার নেই সেখানে তিন্নিরও এতো সেজে আসার অধিকার নেই।যতই হোক দিন শেষে সেও পুরুষ।সামনে বউ লোভনীয় কিটক্যাট চকলেট সেজে বসে আছে।আর সে কিনা স্পর্শ করেও দেখতে পারবেনা।এই মেয়েকি আবার তার ইমোশন নিয়ে খেলতে চাইছে? এবার আর সে সেই সুযোক দিবে না।

তিন্নি সন্ধ্যার কিছুক্ষণ আগে এসেছে জিসানের বাসায়।তার কাছে এই বাসার একটা চাবি ছিলো।এই বাসাটা তার ভীষণ আপন লাগে।অনেক ভালো সময় কেটেছে তার এই বসাতে।পুরো বাসাটা অনেকটা এলোমেলো। মানুষটাকি বাসায় থাকেনা?তাহলে সব কেমন ফেকাসে লাগছে কেনো?অনেক্ষন যাবত সে বসে আছে জিসানের অপেক্ষায়।বসে বসে সে কথা গুছিয়ে নিচ্ছে।সে আজ জিসানকে সব বলতে চায়।তার পর যা হবার তাই হবে।এই মানুষটাকে আর অন্ধকারে রাখতে চায় না।

তিন্নি ভাবতে ভাবতে দেখলো রুমের লাইট জ্বলে উঠেছে।আর জিসান উল্টো দিকে ফিরে শার্ট খুলছে।তিন্নি আর কিছুই বলতে পারলো না।সে অবাক হয়ে জিসানকে দেখছে।এই কয়দিনে লোকটা কিছুটা শুকিয়ে গেছে।তার পরও এই মানুষটার সব কিছুই এতো আকর্ষণীয় কেনো?এইযে মাত্র চুলে হাত বুলিয়ে দিলো।এটা যেনো তিন্নির বুকে বিষাক্ত তীর নিক্ষেপ করলো।হঠাৎ তার মুখের উপর জিসানের শার্ট এসে পড়লো।সে দ্রুত তা সরিয়ে নিলো।জিসানের অবাক চোখে তার দিকে তাকানো দেখে তিন্নির ভীষণ অস্থির লাগছে।তিন্নি যে এতোখন কথা সাজিয়ে রেখে ছিলো সব যেনো এক মুহূর্তেই ভেস্তে গেলো।সে কি বলবে বুজে উঠতে পারছিলো না।সে বিছানা থেকে উঠে দাড়িয়ে রইলো।সে কিছু বলবে তার আগেই জিসান বলে উঠলো

-“তুমি হঠাৎ এখানে?

তিন্নি কি বলবে বুঝে উঠতে পারছেনা। জিসান আবার কিছুটা ধমকের সুরে বললো

-“কি ব্যাপার,কথা বলছো না কেনো?”

তিন্নি কাপা কাপা কন্ঠে বললো

-“আ..আসলে আপনার সাথে কিছু ক…কথা ছিলো।”

জিসান এর আবার ভীষণ রাগ লাগছে।এই মেয়ে কি কিছু বাকি রেখেছে বলার?তাহলে এতো সেজে আবার তাকে দুর্বল করে এই সম্পর্ক সে চায়না বলতে এসেছে?
জিসান রেগে বললো

-“তোমার সাথে আমার কোনো কথা নেই।তুমি বাসায় যাও।”

তিন্নি জিসানের কথায় পাহাড় সমান অভিমান দেখতে পেলো।অভিমান হবেনা কেনো?সে তো মানুষটাকে অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছে।
তিন্নি বললো

-“দেখুন আমি অনেক ভেবে কথা গুলু আপনাকে বলতে এসেছি।প্লিজ আমাকে বলতে দিন।”

জিসান রাগ আবার চূড়ান্তে পর্যে চলে গেছে।এই মেয়েকে ভেবে তার সাথে কথা বলতে হবে?আর সে শুধু কথা বলতে এসেছে?নিশ্চয়ই এই সম্পর্ক থেকে মুক্তি চাইতে এসেছে।সে তিন্নির দুই বাহু চেপে ধরে চিৎকার করে বলতে শুরু করলো

-” এই কি মনে করো নিজেকে?এতো কিসের অহংকার তোমার?আমাকে তোমার মানুষ মনে হয় না?যখন তখন আমার ইমোশন নিয়ে খেলতে চাইছো?আমার আগে পিছে কেউ নেই বলে কি ভেবেছো আমার জীবনটা নিয়ে যেই ভাবে খুশি সেই ভাবে খেলবে?তুমি কি চাও সারা জীবন আমি তোমার পিছে এমন মরিয়া হয়ে ঘুরি?

আমি তোমাকে পাগলের মতো ভালোবাসি বলে তোমার সব অযৌক্তিক কাজ মেনে নিবো তা কখনো না।ওই কয়টা দিন তোমার পিছনে পাগলের মত ছুটেছি।অথচ তুমি আমাকে একটা বার দেখা দাওনি।আমাকে তোমার পিছনে কুকুরের মত ঘুরাতে চাও?এতো অহংকার তোমার? তুমি কি ভেবেছো আমি শুধু তোমার রূপের পাগল হয়ে তোমার পিছে ঘুরে বেড়াবো?
বিয়ের প্রথম থেকেই তুমি আমাদের এই সম্পর্কটাকে কোনো মূল্য দাওনি।সব সময় আমাকে ইগনোর করেছো।কখনো এই সম্পর্কটাকে একটা সুযোক দাওনি।আর আমি সব বুঝেও পাগলের মত তোমার সব ইগনোর সহ্য করেছি।”

তিন্নির হাতে ভীষণ ব্যাথা পাচ্ছে।তবুও সে জিসানকে কিছুই বললো না।মানুষটা অনেক কষ্ট পেয়েছে।সে ভীষণ ভাবে মানুষটাকে আঘাত করেছে।
জিসানের দু চোখ ভিজে উঠলো।সে আবার বলতে শুরু করলো

-“কি দোষ ছিল আমার বলোতো?তোমাকে ভালোবাসাটাই কি দোষ?আমিতো কোনো দিন তোমাকে এই সম্পর্কে কোনো প্রকার জোর করিনি।আর না কখনো খারাপ ভাবে ছুয়ে দেখেছি।আমার কোনো ইচ্ছা কি তোমার উপর চাপিয়ে দিয়েছি?আমিতো তোমাকে আমার একাকিত্বের বন্ধু বানাতে চেয়েছি।একটা ছোট সংসার সাজাতে চেয়েছি।যেই সংসারটা থাকবে ভালোবাসায় পূর্ণ।
যেহেতু এমন কিছুই চাওনা তুমি তবে এ ভাবে আমার সামনে আসার মনে কি?আমিতো তোমার পিছু ছেড়েই দিয়েছি।তবে কেনো এ ভাবে আমার সামনে এসেছো?আমার দৈর্যের পরীক্ষা নিতে?তবে একটা কথা শুনে নাও।বউরে শরীর লোভে পড়ে নিজের কামনা পূরণ করার মতো পুরুষ আমি নই।তাই তুমি আমার পরীক্ষা নেওয়া বন্ধ করো।”

তিন্নির দুই চোখ বেয়ে অশ্রু ধরা গড়িয়ে পড়ছে।সে কাপা গলায় বললো

-“আমি আপনার কোনো পরীক্ষা নিচ্ছি না।আপনি ভুল বুঝছেন।”

জিসান রেগে তিন্নির দুই বাহুতে আরো জোরে চাপ দিয়ে বললো

-“কোনটা ভুল তিন্নি?আমার ভালোবাসাকে বুঝেও দিনের পর দিন তা এড়িয়ে চলাকে?আচ্ছা বাত দাও সব।তুমি যেমন চাও নিজের জীবন তেমন ভেবেই কাটাও।আমি কখনো বাধা দিবো না।”

-“প্লিজ একটাবার আমাকে কথা বলার সুযোগ দিন।”

তিন্নির চোখের জলে কাজল লেপ্টে যাচ্ছে।জিসানের বুকটা ফেটে যাচ্ছে।তবুও আজ সে আর নিজের দুর্বলতাকে তিন্নির সামনে প্রকাশ করতে চায় না।জিসান চিৎকার করে বলে উঠলো

-“আর কিছুই শুনতে চাইনা আমি। এখনি চলে যাও।”

কথাটা বলে জিসান তিন্নিকে ছেড়ে দিলো।জিসানের চিৎকারে তিন্নি ভয় পেয়ে গেলো।এই মানুষটাকে সে কখনো এমন রূপে দেখেনি।
তিন্নি কাপা কাপা হাতে বিছানা থেকে নিজের ব্যাগটা কাধে তুলে নিলো।ব্যাগ থেকে একটা খাম বের করে খাটের টেবিলে রাখলো।আর বললো

-“আমি জানি অনেক কষ্ট দিয়েছি আপনাকে।তবে আমি এমন কিছুই করতে চাইনি।আজ অনেক কথাই আপনাকে বলতে চেয়েছি।তবে মুখে হয়তো বলা সম্ভব হতো না।একটু সময় করে এই কাগজটা দেখে নিবেন।আর সব কিছুর জন্য সরি।পারলে আমাকে মাফ করে দেবেন।”

তিন্নি আর কিছুই বলতে পারলো না।তার বুক ফেটে কান্না আসছে।সে বেরিয়ে আসলো জিসানের বাসা থেকে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here