মেঘের ওপর আকাশ উড়ে পর্ব -০৪

#মেঘের_ওপর_আকাশ_উড়ে
#Part_04
#Writer_NOVA

পরেরদিন সকালে…….

শরীর ঠান্ডায় লাগতেই মৃদুল পিটপিট করে চোখ খুললো। সারা শরীর বরফ হয়ে আছে তার। ফট করে উঠে বসে এদিক সেদিক তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করলো সে কোথায়। ওপরের বিছানায় তাকিয়ে দেখলো তা ফাকা।নিচের বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখলো সাবা হাত-পা ছড়িয়ে উপুড় হয়ে ঘুমোচ্ছে। আর মৃদুল ওয়াসরুমের দরজার সামনে বসে আছে। মৃদুল দাঁতে দাঁত চেপে বিরবির করে বললো,

— আমার বিছানাটা দখল করলি তাও মানলাম। কিন্তু নিচেরটাও তোকে দখল করতে হলো? আমাকে ওয়াসরুমের সামনে পাঠিয়ে দিয়েছিস। আমিও তো বলি এতো ঠান্ডা লাগে কেন? তোর আরামের ঘুমের বারোটা বাজাচ্ছি আমি।

মৃদুল উঠে গিয়ে সাবার কান ধরে টান মারলো। সাবা ঘুমের ঘোরে ওর হাতে ঠাস করে দুটো চড় মেরে অন্য দিকে ঘুরে ঘুমিয়ে পরলো। মৃদুল কপাল কুঁচকে দৌড়ে গিয়ে ওয়াসরুম থেকে এক মগ পানি এনে সাবার শরীরে ঢেলে দিলো। অন্যদিকে সাবা স্বপ্নে দেখছে গভীর পানিতে সে ধীরে ধীরে তলিয়ে যাচ্ছে। ধরফর করে উঠে দেখে ওর সারা শরীর ভিজে একাকার। অবাক চোখে সারা শরীরের দিকে তাকিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে মৃদুলের হাতে মগ দেখে পুরো বিষয় ক্লিয়ার হলো। চোখ বন্ধ করে বড় করে একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে মৃদুলকে বললো,

— এসব কি?

— দেখতে পাচ্ছিস না?

— সকাল, সকাল শুরু করছিস?

— কে শুরু করছে তাতো দেখতে পাচ্ছি।

— তুই শুরু করেছিস।

— জ্বি না ম্যাডাম। তুই শুরু করেছিস। আমার বেডে তোর কি?

— কোথায় তোর বেড?

— একটু ভালো করে তাকিয়ে দেখ।

সাবা আশেপাশে তাকিয়ে দেখে মৃদুলের বিছানার ওপর বসে আছে সে। তবুও গলায় জোর রেখে বললো,

— তো কি হয়েছে?

— কি হয়েছে মানে কি? তোর জন্য আমি উপরের বিছানা ছেড়ে দিয়েছি। আর তুই শেষে নিচের বিছানাটাও দখল করে নিলি।

— তাই বলে ভিজিয়ে দিবি?

— জ্বি।

সাবা কিছু সময় ফোঁস ফোঁস করতে করতে এগিয়ে এসে মৃদুলের পায়ে জোরে লাথি বসিয়ে দিলো। মৃদুলও ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নয়। ওর চুলগুলো ধরে একটা ঘূর্ণি দিয়ে পিঠে দুম করে একটা বসিয়ে দিলো।সাবা ওর বুকের মধ্যে জোরে ঘুষি মারলো। মারামারি করতে করতে বিছানায় গড়াগড়ি খেতে লাগলো। তবুও কেউ থামে না। সুযোগ বুঝে সাবা মৃদুলের পেটের ওপর উঠে শয়তানি হাসি দিয়ে বললো,

— এখন কোথায় যাবি?

— সর সাবা।

— একটুও না।

সামনে থাকা বালিশ নিয়ে মৃদুলের মুখে পরপর চারটা বারি দিলো। বালিশটা একটু শক্ত টাইপের। তাই এই চারটা বারিতে মৃদুল চোখে কিছুটা সরিষা ফুল দেখছে। চুপচাপ চোখ দুটো বন্ধ করে শুয়ে রইলো। ওর পেটের ওপর বসেই সাবা খিলখিল করে হাসছে।
হঠাৎ মৃদুলের দিকে তাকিয়ে থমকে গেলো। দুই গালে থাপ্পড় দিতে দিতে ভয়ার্ত কন্ঠে বললো,

— এই মৃদুল কি হয়েছে তোর? মৃদুল, মৃদুলরে।

সাবা এগিয়ে এসে ওর মুখের সামনে ঝুঁকে পরলো।এতে ওর এলোমেলো চুলগুলো মৃদুলের মুখে বারি খেতে লাগলো। মৃদুল এমন সুযোগের অপেক্ষা করছিলো। চোখ খুলে একগালে হেসে সুযোগ বুঝে সাবাকে কাবু করে ফেললো। এখন সাবার ওপর পুরো ভর দিয়ে মৃদুল শুয়ে আছে। সাবা ওকে এক চিমটিও সরাতে পারছে না। মৃদুল ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,

— এবার তোকে কে বাচাবে সাইব্বানি?

— ওপর থেকে সর।

— তুই সরছিলি?

— প্লিজ মৃদুল।

মৃদুল ওর দিকে না তাকিয়ে গলায় মুখ গুঁজে শুয়ে রইলো। সাবা এবার কিছুটা চমকে উঠলো। মৃদুল এই প্রথম ওর এতো কাছে। নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসছে তার। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো,

— মৃদুল উঠ।

— উহু।

— প্লিজ!

— আমার ভালো লাগছে। এভাবেই থাক।

— ভালো হবে না কিন্তু।

— না হোক।

— আমার ভালো লাগছে না।

মৃদুল মাথা উঠিয়ে সাবার নাকের সাথে নিজের নাকটাকে হালকা করে ঘষা দিয়ে চোখে চোখ রেখে বললো,

— একটু আদর করি?

মৃদুলের কথা শুনে সাবার চোখ দুটো অটোমেটিক বড় হয়ে গেলো। ভয়ে মুখটাও শুকিয়ে একটুখানি হয়ে গেলো। কি বলছে এসব? ছেলেটার মাথা কি খারাপ হয়ে গেলো নাকি? আগের মৃদুলের সাথে এখনকার মৃদুলের আকাশ-পাতাল তফাৎ। সাবা কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে থেমে থেমে বললো,

— মৃদুল আমি ফ্রেশ হবো। উপর থেকে উঠ।

মৃদুল একলাফে ওর ওপর থেকে উঠে জোরে হো হো করে হাসতে লাগলো। ওর হাসির দিকে সাবা বিস্মিত চোখে তাকিয়ে রইলো। মৃদুল কিছু সময় বিছানায় গড়াগড়ি খেয়ে হাসতে হাসতে বললো,

— কি কেমন দিলাম? তুই ভাবলি কি করে তোকে স্ত্রীর অধিকার দিবো আমি? যা সর সামনের থেকে। তোকে ভয় দেখাতে বলেছি এসব। তোর মুখটা যা হয়েছিলো না🤣। একদম দেখার মতো।আমি আদর আর তোকে, ইম্পসিবল!

সাবা প্রতিত্তোরে কিছু বললো না। মন খারাপ করে ওয়াসরুমে চলে গেলো। সাবার মন খারাপ কেন হলো তা বুঝলো না মৃদুল। হাসি থামিয়ে সাবার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো।

💞💞💞

রিসিপশনের অনুষ্ঠানে বউ সেজে চুপ করে বসে আছে সাবা। সকালের ঘটনার পর থেকে ওর মুখটা ঘন আঁধারে ঢেকে আছে। ওর কানের মধ্যে শুধু মৃদুলের একটা কথাই বাজছে, “তুই ভাবলি কি করে তোকে স্ত্রীর অধিকার দিবো আমি?” এই কথাটা শুনে ওর মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু কেন? তার উত্তর খুঁজে পাচ্ছে না। সবাই নতুন বউ দেখে নানা কথা বলছে। কিন্তু সেসব সাবার কানে ঢুকছে না। সে একধ্যানে সামনের চেয়ারের দিকে তাকিয়ে রইলো।

— শালা, বলেছিলি পড়াশোনা শেষ না করে বিয়ে করবি না। এখন আমাদের আগে কাজ সেরে ফেললি।

মৃদুলের বন্ধু রাহিম ওর কাঁধে মৃদু চাপর মেরে কথাটা বললো। রাহিম,রাতুল,মৃদুল,শান্তা, সুমাইয়া। এই পাঁচজন কলেজ জীবনের বন্ধু। একসাথে মাস্টার্সে পড়ছে। রাহিমের কথায় মৃদুল মুচকি হেসে বললো,

— আমি কি রাজি ছিলাম নাকি? বাবা তো ধরে-বেধে বিয়ে দিয়ে দিলো।

মৃদুলের আরেক বন্ধু রাতুল টিটকারির সুরে বললো
— হইছে দোস্ত, আর আঙ্কেলের দোষ দিতে হবে না। তুই যে নিজেও এর জন্য রাজী ছিলি তা আমরা জানি।

রাতুলের সাথে গলা মিলালো শান্তা,
— হু বুঝছি তো। খুব তো বড় মুখে বলেছিলি মাস্টার্সের পড়া শেষ করে বাবার গার্মেন্টসে হাত দিবো। তারপর বিয়ের কথা চিন্তা করবো। এখন তো মনে হচ্ছে ততদিনে বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে গার্মেন্টস ঘুরতে যাবি।

সুমাইয়া ওর কাঁধে একটা ধাক্কা দিয়ে বললো,
— আরে বুঝুস না কেন শান্তা, তারও তো বিয়ের ইচ্ছে ছিলো। কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না যেই মেয়েকে ও দেখতে পারতো না তাকে বিয়ে করে নিলো। কিভাবে সম্ভব এসব?

রাহিম গলা খাকরি দিয়ে বললো,
— হয়তো মনের কানেকশন ছিলো।

রাহিমের কথায় সব একসাথে হেসে উঠলো। কিন্তু মৃদুলের সেদিকে হুশ নেই। সকাল থেকে সাবার মনটা খারাপ দেখে তারও কেমন জানি মনটা আনচান করছে। সাবাকে এতটা চুপচাপ মেনে নিতে পারছে না সে। চোখ, মুখ পুচকে মনে মনে ভাবলো,

— আমি কি ওকে একটু বেশি হার্ট করে ফেলেছি? সকালে এরকম করে কথা বলা আমার একটুও ঠিক হয়নি। মাফ চেয়ে নিবো কি?

শান্তা মৃদুলের চোখের সামনে হাত নাড়াতে মৃদুলের ধ্যান ভাঙলো। শান্তা চোখে সন্দেহ রেখে জিজ্ঞেস করলো,
— কিরে কি ভাবছিস?

মৃদুল ওদের তাড়া দিয়ে বললো,
— তোরা একটু থাক আমি আসছি।

সুমাইয়া বললো,
— কোথায় যাস?

রাতুল এক চোখ মেরে বললো,
— আরে বুঝিস না কেন সুমাইয়া? এনার্জি কমে গেছে তাই বউয়ের কাছে যাচ্ছে।

বন্ধু-বান্ধবীদের টিপ্পনী কাটা কথাবার্তায় কান না দিয়ে মৃদুল দ্রুত পায়ে স্টেজের দিকে চলে গেলো।

দুপুরে খাবারের পর্ব শেষ করে লেহেঙ্গা উঁচিয়ে এদিকে সেদিকে তাকিয়ে মৃদুলকে খুঁজে বেড়াচ্ছে তুলি। জানে সে অন্যকারোর। তবুও তাকে এক নজর না দেখলে এই মুহুর্তে শান্তি পাবে না তুলি। হঠাৎ পেছন থেকে কেউ ডেকে উঠলো,

— তুলতুলি!

তুলি চোখ মুখ কুঁচকে বিরক্তির সহিত পেছনে তাকালো। যাকে ভেবেছিলো সেই। সাবার ছোট ভাই সিয়াম নায়ক সেজে দাঁড়িয়ে আছে। বয়স খুব বেশি না। সামনের বছর এইচএসসি দিবে। আর তুলি এসএসসি। দুই বছরের সিনিয়র সিয়াম। তুলির বিরক্ত হওয়ার কারণ হলো সে জানে সিয়াম তাকে পছন্দ করে। কিন্তু তুলি তো সেই কবেই মৃদুলকে মন দিয়ে বসে আছে। তুলিকে থম মেরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সিয়াম মুচকি হেসে বললো,

— কেমন আছো?

তুলি কোন উত্তর না দিয়ে দ্রুত সেখান থেকে চলে গেলো। সিয়াম মৃদু হেসে মাথার পেছনের চুলগুলো নাড়াতে নাড়াতে বললো,

— কতদিন এভাবে পালিয়ে বেড়াবে রংতুলি? ধরা তো তোমাকে দিতেই হবে।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here