যে বর্ষণে প্রেমের ছোঁয়া পর্ব -১০+১১

#যে_বর্ষণে_প্রেমের_ছোঁয়া
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ১০

স্বচ্ছ দ্রুত নিজের কানের কাছ থেকে ফোন সরিয়ে সূক্ষ্ম ভাবনায় নিমগ্ন হলো। এই রিনরিনে নারী কণ্ঠ তার চেনা লাগছে। কোথায় যেন শুনেছে। তবে মস্তিষ্ক আর চিনে উঠতে দিলো না স্বচ্ছকে। অপরদিকে মোহ হ্যালো হ্যালো করেই চলেছে। সৌমিত্র স্বচ্ছের ফোনটা স্বচ্ছের কানের কাছে ধরিয়ে দিয়ে বলল,
“ভাই বেচারি হ্যালো, হ্যালো করে যাচ্ছে। তুমি জবাব দিচ্ছো না। এমন জবাব না দিলে তো তোমাকে বোবা ভেবে বসবে।”

স্বচ্ছ সৌমিত্রের পানে তাকিয়ে চোখ গরম করে ফের মোহের সঙ্গে কথায় মনোযোগী হলো। গলা খাঁকারি দিয়ে বলল,
“হ্যালো! কে বলছেন?”

মোহের মেজাজ উঠে গেল তুঙ্গে। নিজের রাগ চাপিয়ে না রেখে প্রকাশ করে ভারী সুরে বলল,
“আশ্চর্য লোক আপনি! প্রশ্নটা আমার করা উচিত। কারণ কলটা আপনি আমাকে করেছেন। আমি আপনাকে নয়। সেখানে এই প্রশ্ন আপনার করা বেমানান দেখাচ্ছে।”

সেই তেজ, সেই ঝাঁজ স্বচ্ছকে হতভম্ব করে তুলল। কিছুটা অস্বস্তিতেও পড়ে গেল সে। একটা মেয়ে তাকে এভাবে বলছে ভেবেই বেজায় ক্রোধ চেপে বসছে মনে।
“আমি আপনাকে সত্যিই চিনি না। সেজন্যই জিজ্ঞেস করলাম।”

“ওহ আচ্ছা! তো আপনি সেইসব ছেলেদের কাতারে পড়েন যারা রাতের বেলা ইচ্ছেমতো নম্বর ডায়াল করে মেয়েদের ডিস্টার্ব করেন?”

স্বচ্ছ এবার আর নিজের রোষানল দাবিয়ে রাখতে পারল না। ঝটপট করে উঠে দাঁড়িয়ে ক্রুদ্ধ হয়ে বলল,
“এক্সকিউজ মি! মুখ সামলে কথা বলুন। আমার এতটাও সময় নেই যে এসব অপ্রোয়জনীয় কাজে নিজের সময় নষ্ট করব।”

স্বচ্ছের রোষিত কণ্ঠ এবং ক্রোধে ভরা ব্যবহার দেখে সকলে ভড়কে গেল। ওপাশ থেকে মোহ তেজী সুরে বলল,
“সেটা তো দেখাই যাচ্ছে। অপরিচিত মেয়েকে কল করে ভদ্র সাজার নাটক সবাই করে।”

“আপনি কিন্তু এবার বেশি বেশি বলছেন। নিজের সীমার মধ্যে থাকুন নাহলে…”

পুরো কথাটি সম্পূর্ণ করাই হলো না স্বচ্ছের। সৌমিত্র হুট করে তার ফোনটা নির্বিঘ্নে নিজের নিকটে নিয়ে কল কেটে দিলো। স্বচ্ছ সৌমিত্রের দিকে কড়া দৃষ্টি নিক্ষেপ করে সুদীর্ঘ শ্বাস ছাড়ল।
“ভাই! আমি যা বুঝছি তোমার বিয়ে হওয়া শুধু মুশকিল না। একপ্রকার অসম্ভব। নিজের হবু বউয়ের সাথে এভাবে কে কথা বলে?”

সৌমিত্রের কথায় স্বচ্ছ তেতে উঠে প্রতিত্তোর করল,
“তুই জানিস? ওই মেয়ে কী কী বলেছে? আমাকে সেইসব বখাটে ছেলেদের কাতারে ফেলছে যারা রাতের বেলা মেয়েদের কল দিয়ে ডিস্টার্ব করে। আমি নাকি ভদ্র নই, ভদ্র সাজার নাটক করে যাচ্ছি।”

মিসেস. যামিনী এবার হাফ ছেড়ে বললেন,
“হে আল্লাহ্ রহম করো ছেলেটাকে। তোকে কলে লথা বলতে হবে না আর স্বচ্ছ। তার চেয়ে সরাসরি কথা বলিস কাল। কিন্তু একটু রাগ দমিয়ে কথাবার্তা বলবি। ঠিক আছে?”

“এরপর আমি কেন আমার পুরো ফ্যামিলির কাউকে ওই মেয়ের সাথে দেখা করতে যেতে দেব না। আমি জানি না তোমরা কার সাথে বিয়ের কথাবার্তা বলে এসেছ। কিন্তু আমি বলে রাখছি। বিয়ের কথা এই অবধিই শেষ। আর কথা যেন না ওঠে। তাহলে আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে না।”

আর কারোর কথার অপেক্ষা করল না স্বচ্ছ। এলোমেলো পায়ে সিঁড়ি বেয়ে তড়িৎ বেগে উঠে গেল সে। স্বচ্ছের মা মিসেস. জেবা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। হতাশার সহিত নিজের বোনকে বললেন,
“আমি তোকে বলেছিলাম তোর স্বচ্ছের বিয়ে নিয়ে এত ব্যস্ত হওয়ার দরকার নেই। তুই শুধু শুধু বাড়াবাড়ি করে যাস।”

“তুই চুপ কর। ছেলে একজনকে পছন্দ করেছে এমনি এমনি কী করে ছেড়ে দিই বল তো? যা হবে ভালোর জন্য হবে।”

সবকিছুর মাঝে নিশ্চুপ রইল সৌমিত্র। এই মুহূর্তে মুখ খুললে হতে পারে মহাবিপদ! তার থেকে চুপ থাকাই শ্রেয়।

কল কেটে যাওয়ায় আননোন নম্বরের দিকে ভ্রু কুঞ্চিত করে বেশ কিছুটা সময় চেয়ে রইল মোহ। অতঃপর ফোনটা পাশের ছোটো কাঠের টেবিলে রাখতেই নজরে পড়ল তার মায়ের দেওয়া সেই পাত্রের নম্বর। কিছুক্ষণ আগে কথা হওয়া লোকটির নম্বরেও শেষে আটানব্বই আর ছোটো চিরকুটেও আটানব্বই। মোহ এবার নড়েচড়ে বসল। নম্বরের চিরকুট আর ফোনের নম্বর মিলিয়ে দেখতেই ঠোঁটজোড়া আপনাআপনি হা হয়ে গেল। নিজের কপালে হাত দিয়ে চাপড় মে/রে বলল,
“এ কী করে বসলাম!”

সকালে উঠে নিজে থেকে তৈরি হয়ে নিলো মোহ। মনে মনে ভেবে নিলো গত রাতে সেসব কথা বলার জন্য গিয়ে ক্ষমা চাইবে সে। একটি বেগুনি হালকা কাজের জামা পরে ভেজা চুলটা ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবল মোহ। তারপর ইথানকে একটা হলুদ রঙের টিশার্ট পরাতে আরম্ভ করল সে। মিসেস. সুফিয়া এক গ্লাস দুধ নিয়ে ঘরে এলেন। মোহকে একবার পরখ করে নিলেন ভালো করে। তারপর চোখমুখ কুঁচকে বললেন,
“আর কোনো জামা নেই তোর? কী পরেছিস এটা?”

মোহ নিজের জামা দেখে নিলো একবার এবং বলল,
“কেন কী সমস্যা? খারাপ কী?”

“তোকে কতবার বলেছি? বড়োলোক ঘর থেকে প্রস্তাব এসেছে। তো সেই অনুযায়ী ভালো কাপড়চোপড় পরে যেতে হবে না? নাহলে কীভাবে হবে? তোর ওই লাল সুন্দর কাজ করা জামাটা কোথায়?”

“ধুয়ে দিয়েছি। ময়লা হয়ে গিয়েছিল। আর মা আমি জাঁকজমকভাবে নিজেকে প্রেজেন্ট করতে পারব না কারোর সামনে। আমি যেমন আমি চাই মানুষ আমাকে তেমনটাই চিনুক।”

মিসেস. সুফিয়া বুঝে নিলেন মেয়ের সাথে তর্ক করা বেকার। মোহ যা বুঝবে সেটাই করবে। তাকে বলেও লাভ নেই। তাই সে যে পাত্রের সঙ্গে দেখা করতে যেতে রাজি হয়েছে তাতেই সন্তুষ্ট থাকা উচিত। এবার তিনি লক্ষ্য করলেন মোহ ইথানকেও তৈরি করছে। তিনি সন্দিহান হয়ে শুধালেন,
“ওকে রেডি করাচ্ছিস কেন?”

“ওকে নিয়ে যাব সাথে করে।”

সঙ্গে সঙ্গে মিসেস. সুফিয়ার বি স্ফোরিত আওয়াজে উত্তর দিলেন,
“সে কী কেন? কোথায় তোরা দুজন একসাথে কথা বলবি তা নয়। ও তো আমার কাছে ভালোই থাকে।”

“কিন্তু আমাকেও তো খোঁজে তাই না? তাই নিয়েই যাচ্ছি।”

মোহের স্পষ্ট সিদ্ধান্তে এবার বেঁকে বসলেন মিসেস. সুফিয়া।
“একদম না। ওকে রেখে যাবি আমার কাছে। ইথান! আজ আমরা পার্কে যাব। মনে আছে? তোমায় বলেছিলাম একদিন পার্কে নিয়ে যাব? আজ আমরা ঘুরতে যাই? তোমার মায়ের সাথে গেলে তো আমার সাথে যেতে পারবে না।”

ছোট্ট ইথানের মন ঘুরে গেল। লাফিয়ে উঠে বলল,
“হ্যাঁ, আমি পার্কে যাব নানুমনির সাথে।”

ইথানের জেদের কাছে এবার হার মানতে হয় মোহকে। তাকে মায়ের কাছে রেখেই চলে আসতে হয় পাত্রের সাথে দেখা করতে।

রেস্টুরেন্টে বেশ কিছু সময় ধরে বসে আছে স্বচ্ছ। ক্ষণে ক্ষণে বড়ো বড়ো শ্বাস নিয়ে অস্থির হয়ে উঠছে সে। তার অদম্য আগ্রহ বুকে প্রতি মুহূর্ত নাড়া দিয়ে উঠছে এটা দেখার জন্য যে কে এই তেজীয়ান নারী! স্বচ্ছ গত রাতেই ক্ষীণ আশঙ্কা করেছিল সেই কণ্ঠ শুনে। পরক্ষণেই আবার মত পাল্টেছে। কারণ এটা সেই বিছুটি পাতা হতেই পারে না। দুঃস্বপ্নেও না।

মেয়েটি এখনো আসছে না। অন্যদিকে বর্ষার আবহাওয়া প্রকৃতিতে মেখে গিয়েছে। মেঘলা আকাশ থেকে ভেসে আসছে গুড়গুড় শব্দ। স্বচ্ছের মনে হচ্ছে মেয়েটা আসবে তো? পরক্ষণেই হাফ ছেড়ে সিটে ঠেস দিয়ে ফোনটা হাতে ধরে বসল স্বচ্ছ। তার ধূসর রঙের শার্টের কলার একহাতে ঠিক করে ঘোলাটে দৃষ্টি রাখল মোবাইলের স্ক্রিনের সেই নম্বরে। মেয়েটিকে কল দিতে চেয়ে আবার দিলো না। যদি আবার আবোলতাবোল বকে? একটা সময় তিতিবিরক্ত হয়ে বলেই দিলো,
“মেয়েদের সাথে কীভাবে প্রেম করে? এরা তো বিয়ের সময়ও অপেক্ষা করাতে করাতে বুড়ো বানিয়ে দিবে। এদের সাথে প্রেম করে নাকি?”

সে তার প্রতিত্তোরে পেল একটি কড়া নারী কণ্ঠের কথা। সে এভাবে নিজের কথার উত্তর পেয়ে যাবে আশা করে নি।
“মেয়েদের সাথে প্রেম করবে না তো কি ছেলেদের সাথে করবে? আপনি কি ছেলেদের সাথে প্রেম করে অভ্যস্ত?”

হুড়মুড়িয়ে পিছু ফিরে তাকাল স্বচ্ছ। আশাতীতভাবে তার অপ্রিয় বিছুটি পাতাকে দেখে চোখদুটি কপালে উঠে যাওয়ার উপক্রম। থতমত খেয়ে বলে বসল,
“তুমি এখানে?”

মোহ সোজা কথায় খোঁচা দিয়ে বলল,
“কেন? এই রেস্টুরেন্টটাও কি আপনার বাবা বিশ লাখের বদলে পাঁচ লাখ দিয়ে কিনে নিয়েছেন?”

স্বচ্ছ উঠে দাঁড়াল। চোয়াল শক্ত করে বলল,
“মুখ সামলে কথা বলো। তোমার সাথে অপ্রয়োজনীয় কথা বলে সময় নষ্ট করার ইচ্ছে বা আগ্রহ কোনোটাই আমার নেই।”

“সেম টু ইউ। আপনার সঙ্গে কথা বলে নিজের মেজাজ খারাপ করতে আমি চাই না। এমনিতে মি. পাত্রের সাথে আমাকে ভালো মনে কথা বলতে হবে।”

“আমারও একই দশা! পাত্রীর সঙ্গে নরম গলায় কথা বলতে হবে। তোমার সঙ্গে কথা বলে আগেই মাথা খারাপ করতে চাই না।”

মোহ মুখ বাঁকিয়ে বলল,
“ওহ হো! আপনিও পাত্রীর সঙ্গে মিট করতে এসেছেন? তা পাত্রী মেয়ে নাকি ছেলে?”

মোহের এমন উদ্ভট কথায় কপালে কিঞ্চিৎ ভাঁজ পড়ে গেল স্বচ্ছে। তার ছোট্ট সাগরের ন্যায় চক্ষু দুটো ক্রমাগত সরু হয়ে এলো। মোহ গলা খাঁকারি দিয়ে বলল,
“না মানে একটু আগে যে বললেন মেয়েদের সাথে প্রেম করা যায় না তাই বলছিলাম।”

স্বচ্ছের কান দুটো লাল হয়ে আসে। কিছু বলতে উদ্যত হবে তৎক্ষণাৎ তাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে মোহ গটগট করে সামনে হেঁটে চলে যায়। স্বচ্ছ রাগে ফোঁসফোঁস করতে করতে নিজের জায়গায় বসে পড়ে। ইচ্ছে করে গিয়ে মেয়েটির গাল টিপে ধরতে। এত বাঁকা কথাবার্তা বলা কি খুব প্রয়োজন?

সামনে এগিয়ে এসে আশেপাশে দিশাহারার ন্যায় তাকিয়ে থাকে মোহ। সে জানে না পাত্র কোনটা। আন্দাজ করেও বুঝে উঠতে পারে না। শেষমেশ না পেয়ে সেই নম্বরটাতে কল লাগায় সে।

সেই অনাকাঙ্ক্ষিত কল পেয়ে ভড়কে উঠে তাকায় স্বচ্ছ। আগপাছ না ভেবে কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ফের ঝাঁজালো কণ্ঠ ভেসে আসে।
“হ্যালো! আমার সঙ্গে কাল আপনার কথা হয়েছিল। আমি বুঝতে পারিনি আপনি সেই লোক যার পরিবারের সঙ্গে বিয়ের কথা হয়েছিল আমার পরিবারের। আসলে আমি সেই রেস্টুরেন্টে পৌঁছে গেছি। আপনি কোথায় আছেন বলতে পারবেন? তাহলে সুবিধা হতো।”

স্বচ্ছ সঙ্গে সঙ্গে চাঞ্চল্যের সঙ্গে জবাব দেয়,
“আমিও তো রেস্টুরেন্টেই আছি।”

মোহ নীরব হয়ে পড়ে। কণ্ঠ গত রাতের মতোই চেনা লাগছে। এবার একটু বেশিই চেনা লাগছে। সে থেমে থেমে বলে,
“আচ্ছা আমি তো রেস্টুরেন্টের ভেতরেই আছি। আপনি কোন রঙের শার্ট বা টিশার্ট বা যেই জামা পরে আছেন সেটা বলতে পারবেন? তাহলে চিনতে সুবিধা হয়।”

“ওহ আমি গ্রে কালার শার্ট পরে আছি। সামনের দিকেই বসে আছি। ওয়েট আমি উঠে দাঁড়াচ্ছি। তাহলে দেখতে পাবেন।”

স্বচ্ছ উঠে দাঁড়ায়। আশেপাশে ঘুরে ঘুরে তাকিয়ে দেখে। পেছন ফিরে তাকাতেই হতবিহ্বল হয়ে পড়ে সে। মোহের কানের কাছেও ফোন দেখে মুখের প্রতিক্রিয়া পাল্টে যায়। মোহও ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে স্বচ্ছের দিকে। দুজনের দৃষ্টিই যেন বলে দিচ্ছে, এ অসম্ভব! মোহ কথা বলতে চাইল। তবে দলা পাকিয়ে যাচ্ছে প্রতিটি শব্দ। কোনোরকমে বলল,
“ওই বিড়ালের মতো চোখজোড়ার মালিক কি আপনি?”

স্বচ্ছও পাল্টা প্রশ্ন করে ফোনে,
“ওই মঞ্জুলিকার মতো চুলগুলোর অধিকারিনী কি তুমি?”

ফট করে কল কেটে দিলো মোহ। ব্যস…আর কারোরই বুঝতে বাকি রইল না যে যাকে দেখার অদম্য কৌতূহল তাদের ছিল সেই অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যক্তি তাদের সবচেয়ে অপ্রিয় ব্যক্তি। দুঃস্বপ্নেও যারা কখনো এক হওয়ার কথা ভাবতে পারে না তাদেরকেই এক করে দেওয়া জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পরিবার। তারা যদি জানত তাদের সম্পর্ক সাপেনেউলের তবে কি এই চেষ্টা করত? এই সাপেনেউলে সম্পর্ক কখনো কি রোমিও-জুলিয়েট সম্পর্কে গড়াবে?

চলবে… #যে_বর্ষণে_প্রেমের_ছোঁয়া
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ১১

মুখোমুখি বসে আছে মোহ আর স্বচ্ছ। দুজনের মুখে কথা না থাকলেও নিজের লোচন দুটো দ্বারা যেন তারা একে অপরকে ভস্ম করে দেওয়ার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। বেশ কিছুটা সময় অতিবাহিত হবার পরেও যখন স্বচ্ছের মুখ থেকে বিস্ময়াবিষ্ট হওয়ার কারণেও কথা বের হলো না তখনই মোহ হাতের তালু দ্বারা টেবিলে আ;ঘাত করে ঝাঁজালো সুরে বলল,
“আপনি বাসায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছেন কেন?”

আচমকা মোহের এমন ধারালো কথায় চমকে নড়েচড়ে বসল স্বচ্ছ। পরক্ষণেই নিজেকে সামাল দিয়ে কড়া গলায় জবাবে বলল,
আমার কি দায়ে পড়েছে তোমার বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাতে? দুনিয়ায় কি মেয়েদের কম পড়ে গিয়েছে নাকি?”

“তাহলে আপনার ফ্যামিলি আমার মায়ের কাছে কেন এই দাবি করেছে যে আপনি আমাকে ভালোবাসেন? এসব কী? কী করতে চাইছেন আপনি?”

স্বচ্ছ তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে বলল,
“এই শোনো আমার মাথা এতটাও খারাপ না যে আমার ফ্যামিলিকে আমি এসব ভুলভাল কথা বলতে যাব। আমি যদি নেশা করে মাতালও হয়ে থাকি তবে তোমাকে ভালোবাসার কথা আমি জীবনেও বলতে যাব না। কারণ এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা।”

“তো আপনার পরিবার কি মিথ্যা বলল? বললে কেনই বা বলল! আপনার জন্য আমি ফাঁসাদে পড়ে গেছি।”

“তো আমি কি খুশিতে নাচানাচি শুরু করে দিয়েছি? আমি তো বুঝতেই পারছি না এই ভালোবাসাবাসির কথাটা এলো কোথায় থেকে।”

মোহ এবার প্রচণ্ড অতিষ্ঠ হয়ে জবাবে বলল,
“আমি ওসব কিছু জানি না জানতেও চাই না। আমি আপনার মতো একজন বদমেজাজি, একরোখা, অসৎ বাবার ছেলেকে বিয়ে করতে পারব না। অবশ্য বিয়ে করা তো দূর আপনাকে তো আমার সহ্যই হয় না একটা মুহূর্তও। আপনি জানেন? এই মুহূর্তে অসহ্য লাগছে আপনাকে দেখে আমার।”

স্বচ্ছ সরাসরি একপ্রকার বিদ্রুপ করেই হেসে দিলো মোহের কথায়। চোখ রাঙিয়ে, কপাল ভাঁজ করে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল মোহ। স্বচ্ছ এবার ব্যঙ্গ করে বলে ওঠে,
“আমি যেন বসে আছে উনাকে বিয়ে করবার জন্য। শুনে রাখো, পৃথিবীতে যদি মেয়েদের দুর্ভিক্ষও দেখা দেয় তবুও তোমার কাছে এই আহিয়ান স্বচ্ছ কখনো আসবে না। জীবনেও না।”

মোহ উঠে দাঁড়ায় যাওয়ার জন্য। কটমট করে নিজের ব্যাগটা কাঁধে তুলে নেয়। বিড়বিড়িয়ে আপনাআপনি বলতে থাকে,
“জানি না কেন যতই দোয়া করি এই লোকটার সামনাসামনি যেন না হতে হয় ঠিক ততবার এই লোকটার সামনাসামনি হয়ে যাই। আসলে আমার ভাগ্যটাই খারাপ।”

স্বচ্ছ কিছু বলতে চায় মোহের এমন কথায়। মোহের তবে ফোনের রিংটোন স্বচ্ছের কথায় বাঁধ সাধে। মোহ ফোনটা বের করে মায়ের নামটা দেখে বিরক্তির মাত্রা বেড়ে যায়। তখনি ভেবে নেয় কল রিসিভ করে ঠিকমতো ঝেড়ে দিবে প্রথমে। ভাবনা অনুযায়ী সেখানেই কল রিসিভ করে বসল মোহ। তবে মায়ের ওপাশ থেকে কান্নারত সুর সবকিছু পাল্টে দিলো। মোহের চোখমুখের কড়া ভাব কেটে গেল। শিউরে উঠল গায়ের লোম। অস্থিরচিত্তে মিসেস. সুফিয়াকে শুধাল,
“মা! কী হয়েছে? কাঁদছ কেন?”

মিসেস. সুফিয়া কাঁদতে কাঁদতে কম্পান্বিত গলায় শুধু একটি শব্দই উচ্চারণ করতে পারলেন।
ইথান…”

ইথানের নামটা শুনে বুকের ভেতরটা জ্বলে উঠল মোহের। নিজেকে সামলাতে না পেরে খানিকটা চিল্লিয়ে বলল,
“কী হয়েছে ইথানের? বলো মা! আমার ইথান ঠিক আছে?”

“আমি রান্না করছিলাম। দরজা খোলা থাকায় ছাঁদে চলে গিয়েছিল। সিঁড়িতে দৌড়াদৌড়ি করতে গিয়ে পড়ে গিয়েছে সিঁড়ি থেকে গড়িয়ে। কপাল ফে/টে গেছে। র/ক্ত বেরিয়েই যাচ্ছে। থামার নাম নিচ্ছে না। তোর বাবাও বাড়িতে নেই। সম্ভবত স্কুলে ক্লাসে আছে তাই ফোনটা বন্ধ। আমি কী করব বুঝতে পারছি না। বাহিরে বৃষ্টিও শুরু হয়েছে।”,

ইথানের এই বিপত্তি শুনে যেন শ্বাস নেওয়া বন্ধ হয়ে গেল মোহের। কষ্ট হলো প্রশ্বাস ফেলতে। অনেক কষ্ট দৃঢ় প্রশ্বাস ফেলে চাপা উত্তেজনা নিয়ে বলল,
“আমি আসছি। এখনি আসছি।”

কল কেটে মোহ তড়িঘড়ি করে বের হতে গিয়ে টেবিলের সঙ্গে পায়ে লেগে উপুড় হয়ে পড়তে নিলে তাকে ধরতে উদ্যত হয় স্বচ্ছ। পরমুহূর্তেই মোহ নিজেকে সামলে নিয়ে এলোমেলো ভঙ্গিমায় ছুটে যায় বাহিরের দিকে।

মোহের অদ্ভুত, ফ্যাকাসে, আতঙ্কে ভরপুর মুখশ্রী স্বচ্ছকে অযথাই উদগ্রীব করে তুলল। কিছুটা সময় বসে থেকে নিজেকে শান্ত না করতে পেরে বিচলিত হয়ে সেও উঠে এলো নিজের কফি খাওয়ার বিল মিটিয়ে।

স্বচ্ছ বাহিরে এসে ভেবেছিল মোহের দেখা পাবে না। তবে তার ভাবনা ভুল প্রমাণিত করল মোহ। মেয়েটা দাঁড়িয়ে আছে। চোখেমুখে টানটান উত্তেজনা। স্বচ্ছ চোখ সরিয়ে মোহের থেকে খানিকটা দূরত্বে দাঁড়িয়ে রইল। মোহ পাগলের মতো রিকশা, অটোকে ডেকে চলেছে। এই বৃষ্টিতে বেশিরভাগ গাড়ি নাকচ করে দিচ্ছে। নয়ত যাত্রী রয়েছে গাড়িতে। তার এত তাড়া দেখে স্বচ্ছ না চাইতেও খানিকটা ব্যাকুল হলো। মোহ এবার খালি অটো পেল। তবে মোহের এত তাড়াহুড়ো দেখল অটোর চালক ঠিকই অতিরিক্ত দাম চেয়ে বসলেন।
“হ যামু। কিন্তু আমারে আড়াইশ টেহা দেওয়া লাগবে। তাইলে যামু।”

মোহ আশ্চর্য হয়ে গেল।
“এত কেন মামা? অন্যসময় তো দেড়শ হলেই যাওয়া যায়।”

“এখন যাওন যাইব না। বৃষ্টি দেখতাছ না? বৃষ্টির সময় ভাড়া বেশি হইবই তো। তার উপর রাস্তা খারাপ। না গেলে যাইয়ো না। এখন অনেক প্যাসেঞ্জার বেশি ভাড়া দিয়া যাওনের জন্য দাঁড়াইয়া আছে।”

মোহ বিপাকে পড়ে গেল। গলা ধরে আসছে তার। অটো চালকের ওপর রাগ হলেও প্রকাশ করতে পারছে না। সে অনুনয়ের সঙ্গে বলল,
“মামা! আমার যাওয়াটা খুবই জরুরি। আমার কাছে একশ আশি টাকা আছে। আমি কি আপনাকে বাড়িতে পৌঁছে বাকি টাকা দিতে পারি?”

অটো চালক ব্যঙ্গ করে হেসে বলল,
“না, না। এসব ধান্ধাবাজি আমার সাথে চলবে না মামনি। টেহা দিবা কইয়া গায়েব হইয়া যাইবা! এসব হইব না।”

মোহ আরো কিছু বলতে চাইল। তবে তার আগেই অটো চালক চলে গেল। নিজের চুল টেনে ধরে বিষণ্ণ মনে স্থির হয়ে রইল মোহ। পুরোটাই পর্যবেক্ষণ করল স্বচ্ছ। আঁড়চোখে মোহের পানে চাইতেই খেয়াল করল মোহ দুহাত দিয়ে পুরো মুখ ঢেকে দাঁড়িয়ে রয়েছে। নিজের মনের ভেতরকার হাজারও বাকবিতন্ডা কাটিয়ে স্বচ্ছ মোহের নিকটে এলো। গম্ভীর গলায় বলল,
“তুমি চাইলে আমি তোমাকে বাড়িতে পৌঁছে দিতে পারি!”

মুখ থেকে তৎক্ষনাৎ দুহাত সরিয়ে নিলো মোহ। মেয়েটির চোখের নিচ ভেজা। কে কাঁদছিল। তার চোখের পাতায় পানি লেগে রয়েছে। ভাঙা গলায় মোহ তবুও তেজ দেখিয়ে বলল,
“কোনো দরকার নেই।”

“বিপদে পড়েছ তুমি। সাহায্য করতে চাইছি। তবুও নিজের তেজ বজায় রাখা জরুরি? তোমার ফোনে কথা বলা শুনে মনে হলো বাড়িতে তোমার কারোর কিছু হয়েছে। এজন্য হেল্প করতে চাইলাম। বাট ইটস ওকে। যেতে না চাইলে আমারও এত দায়ে পড়েনি।”

স্বচ্ছ পুনরায় অন্যপাশে গিয়ে দাঁড়াল। মোহের তেজী উত্তরে মেজাজ চড়ে গিয়েছে তার। সে বিড়বিড়িয়ে বলল,
“ভাঙবে তবু মচকাবে না। এমন মেয়ে জীবনে প্রথমবার দেখলাম। আমার ভুল হয়েছে। ম্যাডামকে সাহায্য করার জন্য গিয়েছিলাম।”

মোহের পায়ের পাতা স্থির থাকতে চাইছে না। মন চাইছে ছুটেই তার আদরের ইথানের কাছে চলে যেতে। কিন্তু কতক্ষণ ছুটবে? এখান থেকে বহুদূর বাড়ি! সে স্বচ্ছের দিকে আঁড়চোখে তাকাল। তীব্র বাতাসে বাঁকা হয়ে পড়ছে বৃষ্টি। বৃষ্টি ঝিরিঝিরি হয়ে মোহ আর স্বচ্ছ উভয়ের গা ভিজাচ্ছে। মোহ আর স্বচ্ছ ছাড়াও সেখানে বেশ কিছু লোক উপস্থিত রয়েছে। তারাও অপেক্ষা করছে বর্ষণ থামার। একটা সময় মোহের জেদ হার মানল নিজের অস্থিরতার কাছে। সকল গুমর ভেঙে স্বচ্ছের কাছে গটগটিয়ে গিয়ে মিনমিন করে বলল,
“আমি যেতে রাজি আছি!”

পকেটে হাত গুঁজে ভূতলে বৃষ্টির একেকটা ফোঁটা পড়ার ছন্দ আপনমনে উপভোগ করছিল স্বচ্ছ। মোহের কথায় কিছুটা চকিতে তাকাল সে। বলল,
“কোথায় যেতে রাজি আছো?”

মোহ বিব্রতবোধ করে বলে ওঠে,
“আপনি যে আমাকে পৌঁছে দিতে চাইলেন বাড়ি অবধি!”

“কিন্তু আমার মন এখন পাল্টে গিয়েছে। তোমায় সাহায্য করতে আর মন চাইছে না।”

স্বচ্ছের স্পষ্ট কথায় বেশ অপমানিত বোধ করল মোহ। সেই সঙ্গে প্রচণ্ড রাগে কেঁপে উঠল সর্বাঙ্গ। তবে ভুলে গেলে চলবে না ভুলটা তার নিজের। কারণ সে-ই প্রথমে স্বচ্ছকে ফিরিয়ে দিয়েছে। তাই মোহ একরাশ হতাশা নিয়ে অন্যপাশ ঘুরে যেতেই স্বচ্ছ ভারী গলায় বলল,
“এইযে মিস. বিছুটি পাতা! এখানেই দাঁড়াও। আমি বাইক নিয়ে আসছি।”

না চাইতেও মোহের সিক্ত মুখখানিতে খুশিতে ঝলমল করে উঠল। স্বচ্ছ ফের বলল,
“যেতে যেতে গা ভিজে যাবে কিন্তু। আমি আজকে গাড়ি আনিনি।

মোহ ফট করে জবাবে বলে,
“সমস্যা নেই। আমি শুধু ইথানের কাছে পৌঁছাতে চাই। আমার বাড়ি যেতে চাই।”

স্বচ্ছ মোহের উত্তর শুনে দ্রুত নিজের বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়া বাইকটি মোহের সামনে এনে দাঁড় করাল।
“নাও উঠে পড়ো।”

স্বচ্ছের সঙ্গে যেতে রাজি হলেও মোহের বুক এখন ধড়ফড় করছে। কেননা তার সঙ্গে যেতে হলে তার একদম নিকটে বসতে হবে। এমন অস্বস্তিকর পরিস্থিতি যেন আর দুটো নেই। পা যেন বাড়াতেই মন চাইছে না। স্বচ্ছ তৎক্ষনাৎ তাড়া দিলো,
“এই মেয়ে! তাড়াতাড়ি ওঠো।”

ঢক গিলে স্বচ্ছের বাইকের পেছনে উঠে বসল মোহ। সঙ্গে সঙ্গে লেগে গেল স্বচ্ছের চপচপে ভিজে পিঠের সঙ্গে মোহের ডান বাহুর সংঘর্ষ। কেঁপে উঠে একটু দূরে সরে বসল মোহ। স্বচ্ছ বাইক স্টার্ট দিয়ে বলল,
“এটা বাইক ম্যাডাম। বাস না। যে এত জায়গা থাকবে আর চাইলেই আপনি একশ হাত দূরে বসতে পারবেন। আমায় ধরে বসলে ভালো হয়। ফুল স্পিডে চালাব তো! মাঝরাস্তায় পড়ে টড়ে গেলে আমার দোষ নেই।”

মোহ এবার খানিকটা সরে এলো স্বচ্ছের কাছে। স্বচ্ছকে না ধরে বাইকের পেছনের হ্যান্ডেল ধরল সে। নিচু সুরে বলল,
“সমস্যা নেই। আপনি চলুন।”

স্বচ্ছের বাইক চলতে শুরু করল। বাইকের গতি বাড়তে থাকল সেই সঙ্গে বর্ষণের গতিও। যেন এই সাপ নেউলকে একসঙ্গে দেখে প্রকৃতি বেশিই জেগে উঠেছে। শুরু করে দিয়েছে আকাশের বজ্রপাত। সেই খোলা আকাশের নিচে এই বজ্রপাত শুনে মাঝে মাঝে ভয়ে কম্পন ধরছে মোহের শরীরে। বাইকের হ্যান্ডেল ধরে সুবিধা করতে পারছে না। স্বচ্ছের বাইকের গতি আরো বাড়ল। আচমকা এমনটা হওয়ায় মোহের একহাত আপনাআপনি জোরেশোরে স্বচ্ছের পেটের শার্টের অংশ খামচে ধরতে বাধ্য হলো। আকাশে বজ্রপাত, প্রকৃতিকে ভেজানো বর্ষণ এবং খোলা সেই আসমানের নিচে বাইকে ভিজতে থাকা একজন পুরুষ এবং একজন রমনী! নিজ থেকে নিজের চির শত্রুর কাতারে ফেলা পুরুষটিকে রমনী নিজে ছুঁয়ে ফেলে হতভম্ব হলো। সেই সঙ্গে ভেতরটা শীতল হয়ে এলো তার।

স্বচ্ছ অনেকটা সময় বাইক নিয়ন্ত্রণ করতে মনোযোগী থাকতে থাকতে আচমকা বলল,
“মঞ্জুলিকার মতো চুল নয় শুধু তোমার। আচরণটাও মঞ্জুলিকার মতোই করছ। শুধু শার্ট যেভাবে চেপে ধরেছ যদি ছিঁড়ে যায় নিজেই উল্টো হয়ে পড়ে যাবে। একহাত আমার কাঁধে রাখো। এখনো আমি ফুল স্পিড তুলিনি।”

মোহ কথা না বাড়িয়ে বাধ্য মেয়ের মতো এবার আস্তে করে স্বচ্ছের কাঁধে হাত রাখে। মোহ হঠাৎ জিজ্ঞাসা করে,
“আচ্ছা! আপনার আর আমার সম্পর্ক শুরু থেকেই ভালো নয়। তবুও আপনি আমার সাহায্য করলেন কী মনে করে?”

“আমি সাহায্য কিছু মনে করেই করিনা। তোমায় দেখে মনে হলো তুমি খুবই বিপদে আছো। তাই এইটুকু সময় আমাদের সেই খারাপ সম্পর্কের কথা একপাশে রেখে দিয়েছি। তোমায় সাহায্য করা শেষ হলে ঠিকই আবার আগের মতো হয়ে যাব।”

স্বচ্ছের এমন উদ্ভট কথায় এত চিন্তার মাঝেও কেন যেন হাসি এসে যায় তার উপর মোহের। কী অদ্ভুত কথাবার্তা! একজনের প্রতি রাগ থাকলে বুঝি সেটা সাময়িক সময়ের জন্য পাশে রেখে দেওয়া যায়?

স্বচ্ছ ফের কৌতূহলবশত প্রশ্ন করে ফেলল,
“আচ্ছা! হঠাৎ তুমি এতটা ভয় পেলে রেস্টুরেন্টেই সেটা আমি খেয়াল করলাম। বাড়িতে কোনো সমস্যা হয়েছে তোমার? কারোর কোনো বিপদ হয়েছে? ফোনে মনে হয় ইথান না কারোর নাম বললে! এই বিষয়ে আর কোনো সাহায্য লাগলে বলতে পারো।”

“আমার ইথান খেলতে খেলতে সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়েছে। এই বৃষ্টিতে মা একা কী করবে বুঝে উঠতে পারছে না। আমার এই চিন্তা হচ্ছে যে অতিরিক্ত ব্লি/ডিং না হয়ে যায়!”

“ইথানকে খুব ভালোবাসো? তোমায় বোন বা ভাইয়ের ছেলে হয় নাকি? সেদিন একটা পিচ্চি ছেলে বাচ্চাকে দেখেছিলাম সে ইথান আই থিংক?”

“হু। তবে সে আমার বোন বা ভাইয়ের ছেলে নয়। আমারই ছেলে।”

স্বচ্ছ হঠাৎই বাইকের নিয়ন্ত্রণ হারায়। পরক্ষণেই নিজেকে সামলে তীব্র উদ্বেগ নিয়ে শুধায়,
“তুমি বিবাহিত?”

‘কেন? বিবাহিত না হলে বুঝি সন্তান থাকতে পারে না?”

মোহের পাল্টা প্রশ্ন শুনে অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে স্বচ্ছ। মুখে আর কোনো কথা আসে না। অদ্ভুত তিক্ততা ঘিরে ধরে থাকে। এই তিক্ততার সূচনা কীসে বা কীভাবে হলো সে নিজেও জানে না!

চলবে…

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here