রুপকথা,পর্ব:১

#রুপকথা। পর্ব-১
লেখক- ইতি চৌধুরী

আজ জুম্মা বার। এমনিতেও রোদ প্রতি ওয়াক্ত নামাজ এলাকার মসজিদে গিয়েই আদায় করে। জুম্মা বার মানে তার কাছে বিশেষ দিন। বিশেষ কোনো কারণে নয়, এমনি। কিছু দিন থাকে যা বিশেষ কারণ ছাড়াই আমাদের জন্য বিশেষ। তেমনি রোদের জন্য শুক্রবার টা বিশেষ। একটা আনন্দ আমেজ খুঁজে পায় এই দিনটায় সে। একটা কিঞ্চিৎ ঈদ ঈদ ভাব থাকে।
প্রতি জুম্মার দিনের মতো আজও সে পাঞ্জাবি পরেছে। আজ পরেছে কালো রঙের পাঞ্জাবি। পাঞ্জাবির গলায় ও হাতায় কালো রঙের সুতা দিয়েই হালকা এমব্রয়ডারি করা। কালোর মাঝে কালো, বরাবরই কালো রঙটা তাকে চমৎকার মানায়। দেখে চোখে তাত লেগে যাওয়ার মতো মানায়। অনেকেই অবশ্য বলে যেকোনো রঙের পাঞ্জাবিতেই তাকে দারুণ মানায়। বিশেষ করে বলেন রোদের মা সাইয়ারা বেগম। ছেলেকে পাঞ্জাবি পরণে দেখলেই এগিয়ে এসে থুতু ছিটায় যেন ছেলের নজর না লাগে। যদি বেচারা পাঞ্জাবি পরে বের হয় বা বন্ধুদের সাথে দেখা করতে যায় তাহলে তো খবরই আছে। নানারকম ভাবে তাকে উত্যক্ত হতে হয়। কখনো এই বন্ধুর বোন প্রেম নিবেন করছে তো কখনো সেই বন্ধুর বোন। এই কারণে ক্লোজ বন্ধুদের বাসায় পর্যন্ত যাওয়া ছেড়ে দিয়েছে সে। কিন্তু কথায় আছে না আমি বিপদে ছেড়ে দিলেও বিপদ আমাকে ছাড়েনি। আপদ হয়ে তা ঘাড়ে চড়ে বসে রয়েছে। বন্ধুর বোনেদের হাত থেকে রক্ষা পেলেও পাশের বাসার মেয়েটার হাত থেকে মুক্তি মিলছে না তার। গত তিনটা মাস ধরেই নতুন এক আপদ তার ঘাড়ে চড়েছে। পাশের বিল্ডিংয়ের দোতলার বারান্দায় একটা মেয়ে চব্বিশ ঘন্টাই যেন ওৎ পেতে থাকে তার জন্য। সম্ভবত নতুন এসেছে এই এলাকায়। আগে রোদ এই মেয়েকে দেখেনি। তবে যেদিন থেকে দেখছে সেদিন থেকেই তার জিন্দেগী বরবাদ করার জন্য উঠে পরে লেগেছে এই মেয়ে। নামাজের দেরি হচ্ছে। হয়তো এতক্ষণে ইমাম সাহেবের খুদবা শুরু হয়ে গেছে তাই একপ্রকার তাড়াহুড়ো করেই বেরিয়ে পরে। পাশের বিল্ডিং ক্রস করার সময়ই রোদ মনে মনে ইয়া নাফসি যপতে শুরু করে। কিন্তু বিশেষ লাভ হয় না। পাশের বিল্ডিংটা ক্রস করার সময়ই রোদের কানে ভেসে আসে,
‘এই হিরো এদিকে তাকাবা না?’
রোদের কদম থেমে যায়। বাধ্য হয়ে থমকে দাঁড়ায় সে। তাকাবে না বলে মনে মনে ঠিক করে। কিন্তু কিসের কি! দোতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটার যেন কোনো লাজ লজ্জা নেই। সে গলা চড়াও করে বলে,
‘তাকাবা নাকি এখনই থ্রি ম্যাজিকাল ওয়ার্ড বলে চিৎকার করব?’
মেয়েটা এমনিতেই চিৎকার করে কথা বলছে। এরপরেও চিৎকার করা সম্ভব তা রোদের জানা ছিল না। কিন্তু রোদ এও জানে এই মেয়েকে দিয়ে ভরসা নেই, কি বলতে কি করে বসে এর মাথা ঠিক নেই। তাই বাধ্য হয়েই সে পাশ ফিরে দোতলার বারান্দায় তাকায়। তাকে আপাদমস্তক দেখে নিয়ে মেয়েটা মুখে আঙ্গুল দিয়ে সিটি বাজায়। চোখ জোড়া বড় বড় গোল করে নিয়ে থ ধরে যায় রোদ। মেয়েটা এত বেহায়া কেন তার বুঝে আসে না। একটা মেয়ে এত বেহায়া হতে পারে! এ-ও সম্ভব? রোদ মেয়েটার চাহনি দেখে একবার ঢোক গিলে যেন মেয়েটা তাকে চোখে গিলছে। কি বিচ্ছিরি ব্যাপার স্যাপার। আশেপাশে কেউ দেখে ফেললে বিশাল সর্বনাশ হবে। রোদকে আগের চাইতে আরেকটু বেশি চমকে দিয়ে হাত বাড়িয়ে মেয়েটা নিজের ঠোঁট ছুঁয়ে একটা চুমু তার দিকে ছুঁড়ে মারে। চমকে, আতংকে তাক লেগে যায় রোদ। মেয়েটা বলে ওঠে,
‘ওগো কালো তে যা লাগছে না তোমায়? আমি জজ হলে তোমাকে আজীবন কালো পাঞ্জাবি পরে থাকার শাস্তি দিতাম।’
রোদের গলা শুকিয়ে আসছে। নিজেকে সামলে নিয়ে আমতা আমতা করে বলল,
‘নামাজের সময় হয়ে গেছে, আমি যাই প্লিজ।’
‘ঠিক আছে সোনা যাও। ভালো করে নামাজ পড়বা। একদম ফাঁকি দিবানা ঠিক আছে? প্রতি রাকাতের দোয়ায় আমাকেই চাইবার কেবল। মনে থাকবে?’
রোদ ডানে বামে মাথা ঝাঁকিয়ে হ্যাঁ করেই ভৌ দৌড় লাগায়। তার দৌড় দেখে পেছন থেকে বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটা বলে,
‘আরে পড়ে যাবা তো। পরেরবার ধরলেই খবর আছে।’
রোদ আর এক মুহূর্ত অপেক্ষা করে না। এই মেয়েটার মাথায় নিশ্চয়ই সিট আছে। নাহলে দিনে দুপুরে কেউ প্রকাশ্যে এমন কান্ড ঘটাতে পারে? এর কি বাসায় কেউ নেই? কেউ দেখে ফেললে পরে কী হবে?
নাহ, এভাবে আর চলতে পারে না। সে কেন বিনা কারণে মেয়েটাকে ভয় পাবে? অপরিচিত একটা মেয়ের যন্ত্রণা সহ্য করবে? বহুত করেছে তবে আর নয়। যেভাবেই হোক সে মেয়েটাকে শক্ত করে একটা জবাব দিবেই দিবে, তাকে দিতেই হবে। আর একদিনও সে এই মেয়ের যন্ত্রণা সহ্য করবে না, না, না। মনে মনে এসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে রোদ এ-ও ভাবে, মেয়ে মেয়ে করছি কেন? ফাজিল মেয়েটার নাম তো ইতি। যেখানে ইতি মানে শেষ, সেখানে এই ইতি নামের মেয়েটার জন্য তার জীবনের সব যন্ত্রণার শুরু।
ইতিকে দেখে নিবে সে, এসব ভাবতে ভাবতেই চোখ মুখ শক্ত করে মসজিদে প্রবেশ করে রোদ।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here