রুপালির রূপ
সাইয়্যেদাতুন নেছা আফনান
পর্ব:-১১
রুপালির আজকাল দিন ভালো যাচ্ছে না। সারাদিন শুধু রাদের কথা মাথায় আসে। ভাইয়ের এমন পরিনতি দেখে ভয় হচ্ছে। কীসের ভয় জানা নেই। তবে ভয়ের কথা মাথায় আসতেই রাদের মুখটা ভেসে ওঠে।
সেদিনের পরে কেটে গিয়েছে আড়াই মাস। এই আড়াই মাসে ফাহিম চাকরি খুঁজে নিয়েছে। নিজের মতো ব্যস্ত সময় পার করছে। রুপালি হোস্টেল থেকে বাসায় এসেছে। পড়াশোনা এবং টিউশনি নিয়ে দিন পার করছে তবে রাতের বেলায় রাদের কথা ভিষণ মনে পরে। মাঝেমধ্যে চিরকুটগুলো বের করে পরে। হানিফ সওদাগর রাইয়ান শেখের সাথে নিয়মিত কথা বলেন। মিসেস রাহিও মাঝেমধ্যে এসে গল্প করে যান। তবে সবকিছু ঠিকমতো চললেও রাদ রুপালির সাথে যোগাযোগ করে না। রুপালিও কোনোভাবে যোগাযোগ করে নি। দু’জনই ইগো নিয়ে চলছে।
রাদেরও পা ঠিক হয়েছে। অফিসে যোগও দিয়েছে। অফিসের চাপে রুপালির সাথে যোগাযোগ করার সুযোগ পায় নি। ভাবছে রুপালিকে সময় দেয়া উচিত। সময় দিলে হয়তো স্বাভাবিক হতে পারবে তার সাথে। কিন্তু রাদ-রুপালি জানে না সম্পর্ক একটা বাগানের মতো এখানে পরিচর্যা না করলে জঙ্গল হয়ে যায় আর সেখানের আগাছা পরিষ্কার করাটা অনেকটাই কঠিন।
——-
ফাহিমের কথা অনুযায়ী মিসেস রেহানা মেয়ে দেখা শুরু করেছেন। তবে ফাহিমের কোনো মেয়েই পছন্দ হচ্ছে না। আজ মিসেস রেহানা রাদ’দের বাসায় এসেছেন। কথার প্রসঙ্গে বললেন,
” আপা, একটা ঝামেলায় পরেছি।”
” কি ঝামেলা?”
” ফাহিম নিজেই মেয়ে দেখতে বলছে অথচ ওর কোনো মেয়ে পছন্দ হচ্ছে না।”
” সে কি!”
“হ্যাঁ, আপনাদের খোঁজে কোনো মেয়ে আছে?”
” হ্যাঁ……”
কলিংবেল বেজে ওঠায় মিসেস রাহি দরজা খুললেন। রাদ এসেছে অফিস থেকে। ড্রয়িংরুমে আসতেই মিসেস রেহানাকে দেখে ওষ্ঠে হাসি ফুটলো রাদের। তার রূপের সাথে এতদিন বাদে দেখা হবে এই আনন্দে। আশেপাশে তাকিয়ে রুপালিকে কোথাও না দেখে মিসেস রেহানাকে সালাম দেয়।
“আসসালামু আলাইকুম আন্টি।”
” ওয়ালাইকুমুস সালাম বাবা, কেমন আছো?”
” আলহামদুলিল্লাহ। বাসার সবাই কেমন আছে?”
” আলহামদুলিল্লাহ।”
” ফাহিম ভাইয়ের কি খবর?”
” কি আর বলবো বাবা, সে আমাকে মেয়ে দেখতে বলেছে অথচ এত মেয়ে দেখলাম তার কোনো মেয়েকে পছন্দ হচ্ছে না!”
রাদ কিছু বলার আগেই মিসেস রাহি শরবত নিয়ে এগিয়ে আসলেন। রাদ শরবত খেয়ে রুমের দিকে এগিয়ে গেল। কয়েকবার ইতি-উতি দিতে ভুললো না। হতাশ হয়ে যেতেই মিসেস রেহানা বললো,
” আপা, রাদ কি কাউকে খুঁজছে?”
” বোঝেন নি? রুপালিকে খুঁজছে!”
মিসেস রেহানা হেসে উঠলেন। হাসলেন মিসেস রাহিও। তিনিও চান রুপালি বউ হয়ে আসুক, তবে আদৌ কি আসবে?! আর না আসলে রাদের কি হবে?
———–
রাদ আজ রুপালিদের বাসায় এসেছে। উদ্দ্যেশ্য ফাহিমের সাথে দেখা করা। শুক্রবার হওয়ায় ফাহিমও বাসায়ই ছিল। জুমআ পড়ে রাদ ফাহিমকে বললো,
” ভাইজান, চলুন সামনের লেকে ঘুরে আসি।”
” বাসায় তো বোন আর মা অপেক্ষা করছে।”
” একটু সময় চলুন”
ফাহিম বুঝলো রাদ কিছু বলতে চাচ্ছে। ভেবেছে রুপালির সম্পর্কে বলবে। বাসায় আসার পরে হানিফ সওদাগর সব খুলে বলেছেন ফাহিমকে। ফাহিমের বলে,
“কোনো মানুষই ভুলের উর্ধ্বে নয়। মানুষ মাত্রই ভুল হবে। বোনেরও ভুল আছে আর রাদেরও। হবু বউকে এমন ভাবে বলাটা একদমই অনুচিত আর আন্টিরও ভুল ছিল। সাথে বোনের ভুল হয়েছে ওর বান্ধবীদের সাথে এমন কথায় তাল মিলানোর সেটা সিরিয়াস ভাবে হোক কিংবা মজা করে। তার মজাটা বান্ধবীরা বোঝে নি বলেই রাদের পা ভেঙেছে। সেদিন শুধু পা না ভেঙে বড় এক্সিডেন্ট হতে পারতো! তবে যা হয়েছে ভুলে যাওয়া উচিত। চাইলে নতুন করে শুরু করা যায়। আর না চাইলে এভাবে ঝুলিয়ে না রেখে ভেঙে দেয়া যায় তবে এতে দুই পক্ষের অনুশোচনা হবে আজন্ম।”
ফাহিমের ভাবনার মাঝে রাদ বলে,
– ভাইজান, আপনার মেয়েদের পছন্দ হচ্ছে না কেন?
– কেমন জানি, সুন্দর লাগে না চোখে!
– কিন্তু আমি যতগুলো দেখলাম সবাই তো বলা চলে সুন্দরী।
– আব… কেমন যেন আমার ভালো লাগে না.
– আপুর মতো লাগে না এইতো?
– না না, এমন না…..
– এমনই। আপনি তাকে ভালোবেসেছেন সে না বাসলেও। তাই আপনার কষ্ট হয় আরেকজনকে নিয়ে ভাবতে। তাকে নিয়ে ঘর করবেন এটা কল্পনা করতেই অসুন্দর হয়ে ওঠে। তবে ভাইজান আপনি বাহ্যিক সৌন্দর্যকে প্রাধান্য না দিয়ে আত্মীক সৌন্দর্যটাকে খেয়াল করুন। দেখুন মোহনা আপুর চেয়ে কোন গুণটায় সে সেরা?
– মোহনার ভুলগুলো আমার চোখের পরতো না।
– আপনাকে দেয়া বড় বিশ্বাসঘাতকাও কি আপনার চোখে পরে না?
– জানি না। আমি ওর জায়গায় ভিন্ন কাউকে কল্পনাও করতে পারি না রাদ। মা যদি জোর করে কাউকে বিয়ে করিয়ে দেয় তাহলে হয়তো আস্তে আস্তে তার সাথে থাকতে থাকতে তাকে ভালোবাসবো নয়তো বিশ্বাস করো রাদ আমি কাউকেই ভাবতে পারছি না।
– আচ্ছা ভাইয়া, আমার যতটুকু মনে পরে আপনার ছোট চাচ্চু মানে ইকবাল চাচ্চুর ছোট মেয়ে আফরা আপনাকে পছন্দ করতো। আপনাদের সাথে যেহেতু আমাদের আগে থেকেই সম্পর্ক তাই দাদুর মাধ্যমে শুনেছিলাম।
– হ্যাঁ, তবে ওর বিয়ে হয়ে গিয়েছে বোধহয়! তাছাড়া আমাকে এখন কি দেখে গ্রহণ করবে?
– যে ভালোবাসে সে কখনো কোনো কিছুর বিনিময়ে ভালোবাসে না।
– তাহলে তুমি আর রুপালি কেন দূরত্ব টানছো নিজেদের মধ্যে?
– আমি আর বাড়াবো না দূরত্ব। তবে আপনার বোনের অনুমতি ছাড়া তো আর এগোবে না।
রাদ ফাহিম আরো কথা বলতে বলতে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
———-
মেরুন রঙের থ্রি-পিস পরেছে রুপালি। হাতে ঝুমকো চুড়ি। ঝুনঝুন আওয়াজ হচ্ছে বেশ। মায়ের সাথে টেবিল সাজাতে ব্যস্ত সে। হঠাৎ কলিংবেল বাজায় দ্রুত দরজা খুলে দেয়। শুভ্র রঙের পাঞ্জাবি পরিহিত রাদকে দেখে রুপালি থমকে যায়। বুকের ভিতর অন্যরকম অনুভূত হয়। নিজের চোখকে সামাল দিয়ে সরে আসে রুপালি। রাদ মুচকি হেসে ভিতরে আসে। ফাহিম তার পরেই ভিতরে আসে।
টেবিল ভর্তি খাবার দেখে রাদ বলে,
– আন্টি এত খাবার একা কেন করেছেন?
– আমি একা করি নি, রুপালিও ছিল।
রাদ প্রফুল্ল হয়ে বললো,
– রুপালি কোন কোন আইটেম…….
থেমে যায় রাদ। লজ্জা পায় নিজের কান্ডে। মিসেস রেহানাও হেসে ফেলেন। নিঃশব্দে হেসে প্রস্থান করেন। রুপালি আড়ালেই ছিল। রাদের এহেন কথায় নিজেও লজ্জা পায়। ফাহিম ডাকে রুপালিকে। রুপালিও বসে খাবার টেবিলে।
খাওয়া শেষে সবাই উঠে যেতেই গিফট বক্স এগিয়ে দেয় রুপালির দিকে। রুপালি চমকে সামনে তাকায়। কেউ দেখার আগেই খামচে নেয় বক্স। দ্রুত পায়ে প্রস্থান করে। রুপালির তাড়া দেখে রাদ হাসে। যুবকের মনে যেন বসন্ত এসেছে।
চলবে,
( সন্ধ্যায় আমার ছেলে প্লাস্টিকের স্কেল আমার চোখের কণায় ঢুকিয়ে দেয়। আচমকা দেয়ায় অনেকটাই লোগে গিয়েছে। চোখে,মাথায় ব্যপক যন্ত্রণা হচ্ছে। আগের লেখা ছিল অনেক অংশ তাই দিতে পেরেছি। আফওয়ান এমন দেরী হওয়ায়। দোয়া করবেন যাতে সেড়ে যায়।)