#রৌদ্র_কুয়াশা
Suvhan Årag(ছদ্মনাম)
পর্ব ২৮
৮২
“মামোনি,
ও মামোনি।তুমি কি আমাকে ভুলেই গেছো?আমাকে ভুলে রসগোল্লার মতো গপগপ করে খেয়ে ফেলেছো।তোমার কিন্তু পেত ফুলে ঢোল ঢরাক্কা হবে বলে দিলাম।তুমি আমাকে একটু ও ভালোবাসো না।মামোনি তুমি কেন আমাকে খাইয়ে দেও না?জানো মা আমাকে কততো বকে।আমাকে মারেও খুব।আমার বুঝি ব্যাথা লাগেনা। মামোনি তুমিই বলোনা মা এতো পচা কেন?তুমি তো এ তো পচা না।মায়ের কাছে বসে একটু কথা বললেই আমাকে বকে।তুমি তো বকতে না।মামোনি তুমি তাড়াতাড়ি এসো।তোমার একটুও মনে পড়েনা তোমার আলু বুড়ির কথা।তুমি এসো।তারপর আমি তুমি মেলে চুপটি করে কোথাও একটা লুকিয়ে পড়ব।মা আর নানুমনি খুজবে।আমরা পলাপলি খেলব মামোনি।আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি মামোনি একদম আমার রসগোল্লার মতো।মামোনি কাল তো বার্থ ডে ।তুমি আসবে না?
তোমার আলু পাখি”
চিঠিটা পড়েই একটানে ছিড়ে ফেললো মিলা।আলিশা এক কোনে দাঁড়িয়ে শায়লা বেগমকে জড়িয়ে ধরে ভয়ে গুটিশুটি মেরে দাড়িয়ে আছে।
-অসভ্য মেয়ে।সব সময় শুধু মামোনি মামোনি মামোনি।নিজের টিচারকে দিয়ে এই চিঠি লিখিয়েছিস তুই?আমাকে ছোট করা ছাড়া তোর কোন কাজ নেই।টিচারের সামনেও মাকে ছোট করিস।তোর জীবনে তোর মা এর কোন স্থান নেই এটাই বোঝাতে চাস তুই?
আলিশা ভয়ে এবার কেঁদেই দিল।শায়লা বেগম আলিশা র কান্না দেখে মিলার দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকালেন।
-এজন্য ই তো ও মা থেকে মামোনিকে খোজে বেশি।কি ব্যবহার করিস তুই ওর সাথে?নিজের বাচ্চার সাথে কেউ এভাবে কথা বলে?
-শোনো মা বাচ্চার সাথে কিভাবে কথা বলে সেটা আমাকে শেখাতে এসো না।তোমার থেকেও ভালো জানি আমি।
-ও।আমি দু দুটো মেয়ে মানুষ করে এতোবড় করলাম তুই সারাদিন শুয়েই কাটালি।খালি মেয়েটাকে পাশে বসিয়ে বুঝি ও মানুষ হয়ে যায়।এতোই অভিজ্ঞ হয়ে গেছিস তুই?
-অবশ্যই। আমি তোমার মতো মা হব না যে শাসন না করে ছেলে মেয়েদের একদম বিগড়ে দেব।
-মিলা!
-চেচাবে না।কি মানুষ করেছিলে নিজের ছোট মেয়েকে?বাহ!কতোই না মুখ পোড়ালো ও তোমার।
-সব সময় কেন ইলাকে টানিস তুই?
-বেশ করেছি।ঐ ইলাই নষ্টের গোড়া।আমার সংসার ভেঙে শান্তি হয়নি।এখন আমার বাচ্চাকে ও দূরে ঠেলে দিয়েছে আমার থেকে।এতোটাই দূরে ঠেলে দিয়েছে যে প্রাইভেট টিচারের কাছে অ আ শেখার বয়সে তিনি তাকে উল্টা চিঠি লিখে দিতে বলেন।তার আদরের মামোনিকে দেবে বলে।
-তুই ওকে কেন বকছিস?কি বোঝে ও এসবের।ও ইলাকে ভালোবাসে।তাই যা ভেবেছে বলে ছে।ওর দোষ কোথায়?ও কি বোঝে ভালো খারাপের মানে?
-ওকে বুঝতে হবে।ওর মামোনি একটা নষ্ট মেয়ে।বেশ্যা বাজারের বেশ্যা।
-মিলা!চুপ কর বলছি।লজ্জা করছে না এইটুকুন বাচ্চার সামনে কি ভাষা দিচ্ছিস?এই বোধ টুকু ও কি হারিয়ে গেছে তোর?একটু আগে তো খুব মা হওয়ার সাফাই গাইছিলি।
শায়লা বেগমের কথা শুনে মিলা চুপ হয়ে গেল।শায়লা বেগম আলিশা কে টেনে সামনে আনলেন।
-নানু আমাকে ছেড়ো না। মা মারবে।খুব ব্যাথা লাগে তো।
-না সোনা।কিছু হবে না।তুমি যাও তো।ঐ ঘরে গিয়ে খেলা করো।
আলিশা ঢোক গিলে ভয়ে ভয়ে মিলার দিকে তাকাচ্ছে।মিলা তাকে তার কাছ থেকে যেতে নিষেধ করেছে।
-নানু।যাও।কিছু হবে না।
-সত্যি?
-হুম যাও।
শায়লা বেগমের কথা শুনে আলিশা দৌড়ে পুতুল হাতে বেরিয়ে গেল।
-আমি এতোদিন ধরে এত বছর ধরে শুধূ চাইতাম তুই যেন সুস্থ হোস।কিন্তু আজ বলছি তুই যে এখন শোয়া না দেয়ালে পিঠ দিয়ে বসতে পারছিস, হাত চালাতে পারছিস আমি না সহ্য করতে পারছি না।তোর জন্য পঙ্গুত্বই ঠিক ছিল।
-মা!
-বিছানায় শোয়া থাকতিস এতোদিন।বাচ্চা মেয়ে টা তাও রেহাই পেতোনা তোর মুখের ভাষা থেকে।এখন তো গায়ে হাত তুলিস।না জানি সম্পূর্ণ সুস্থ হলে কি দুঃখ আছে ওর কপালে।
-ও তোমার কাছে এখন আমি কালসাপ হয়েছি তাই তো?
-আমি ছোট থেকেই ইলাকে মনে করতাম বড্ড স্বার্থপর হবে ও।তরকারির বড় মাছটা ও ও আগে খেতে চাইত।কিন্তু আমি ভুলে যেতাম তুই বড়।তোকে অগ্রাধিকার দিতে দিতে এমন অবস্থা করে ফেলেছিলাম আমি মেয়েটার ঐটুকুন বয়সেই দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছিল।তাই তো নিজের চাওয়াটা পরে আদায় করে নিত।আর আমি ভাবতাম স্বার্থপর।তোকে অনেক প্রশ্রয় দিয়েছি আমি।তোর ভুলের জন্য ও ইলা শাস্তি পেয়েছে।তুই তো স্বীকার করতিস না।উল্টা দোষ চাপাতিস ওর ওপর।আমি ও অন্ধ হয়ে থাকতাম।ওকে ই শাস্তি দেখতাম।আজ আমি অন্ধ না।আমার চোখের বাধন খুলেছে।কিন্তু আফসোস আজ আমার অন্ধ থাকা না থাকাতে কিছুই হবে না।মাঝখান থেকে আমি হারিয়ে ফেলেছি আমার সন্তানের ভালো বাসা।আমি ভালো মা হতে পারিনি।মায়েরা অপরাধ করে না এটা ভুল।আজ বুঝেছি।আমি অপরাধ করেছি।আফসোস আজ এই অনুতাপে কিছুই হবে না।
-ও এখন দেখছি সব দোষ আমার।মেয়ে টাকা দিচ্ছে বলে গলে যাচ্ছো একদম।
-ভুলে যাস না মিলা আজ বসে আছিস হাত চালাতে পারছিস।সবই আল্লাহর রহমত।ওনার ইশারাতেই কিন্তু ঐ ইলার টাকাতেই তোর চিকিৎসা হয়েছে।এতোটা অকৃতজ্ঞ হোস না।
-শোনো আমার সংসার ভেঙেছে ও।তার বদলে এ কটা টাকা কিছুই না।
-কটা টাকা!হাসালি।
-ঐ বেশ্যাটার সাফাই গাইতে খুব ভালো লাগছে তাই না।
-হ্যা।বেশ্যাটার ও মন আছে।তোর মতো স্বার্থপর না।অমানুষ না।
শায়লা বেগম রেগে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন।মিলা বসে দাঁত কিড়মিড় করছে।
৮৩
ড্রয়িং রুমে মন খারাপ করে বসে আছে ইলা।টমেটো সসের বোতল হাতে নিয়ে টিভি দেখছে।একটু পর পর বোতলে মুখ লাগিয়ে সস খাচ্ছে।মুখে মাখিয়ে ফেলছে।সেদিকে ইলার হুশ নেই।মাঝে মাঝে কেঁদে কেঁদে একাকার হয়ে যাচ্ছে।সোফায় বসে মাহির ল্যাপটপে কাজ করছে আর আড়চোখে ইলার কান্ডে কারখানা দেখছে।
-বুঝলাম না।এর যে আজ কি হলো?আচ্ছা সারাদিন বাড়িতে একা থাকে।জিন ভুত ধরে নি তো?ওহ নো?হতেই পারে।জিন ভর করলে নাকি মানুষের রাগ বেড়ে যায়।জিন তো মেয়েদের ওপর বেশি ভর করে।আরো আমার সুন্দরী বউ।নাহ।এই জিন তাড়াতেই হবে।
মাহির চুপচাপ কিছু না বলে মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে অনেক ধীরে ধীরে ইলার পাশ থেকে চলে গেল।রান্না ঘরে ঢুকলো।
-আচ্ছা জিন ছাড়ানোর ঘরোয়া কি উপায় আছে?উহ।এতো রাতে তো ওকে কোন হুজুরের কাছেও নিতে পারব না।ঘরোয়া কিছুই করতে হবে।না হলে দেখা গেল বজ্জাত জিন আমার বউকে মাঝরাতে উড়িয়ে নিয়ে চলে গেল।নাহহহ,,,,,।
মাহির যেন বলার মধ্যে ই নিজের চোখের সামনে সব কল্পনা করে নিল।ইলা ঘুমিয়ে আছে।হঠাৎ করে বিছানার ওপর ইলা ভাসছে।একটা আগুনের কুন্ডলি যেন ইলার মাথার কাছে আছে।সাদা কাপড়ে মুড়িয়ে ইলাকে নিয়ে চলে যাচ্ছে।মাহির চিৎকার করছে।কিন্তু বাধা দিতে পারছে না।জিন মাহিরের হাত পা বেধে রেখে দিয়েছে।
-নাহ।অসম্ভব।আমি আমার পানিজলকে হারাতে পারব না।এতগুলো বছর অপেক্ষার পর ওকে পেয়েছি আমি।নাহ এটা হতে পারে না।
মাহির দাড়িয়ে ভাবতেই লাগল।
-আচ্ছা ইউটিউবে যদি সার্চ দেই।নিশ্চয়ই কিছু না কিছু পাব।ইউটিউবে তো এখন টয়লেট পরিষ্কার করার ভিডিও ও পাওয়া যায়।এটাও নিশ্চয়ই থাকবে।
মাহির আর দেরী না করে ট্রাউজারের পকেট থেকে ফোন বের করে ইউটিউবে সার্চ দিল।যা দেখলো সেটা মাহিরের কল্পনার বাইরে।
-কিহ!ঝাড়ু দিয়ে মারতে হবে।অসম্ভব!এসব নিশ্চয়ই কুসংস্কার।
মাহির আবার কি ভেবে যেন দাড়িয়ে গেল।সে এটাই ভাবছে কুসংস্কার যদি হবে তাহলে ঝাড়ু পেটা নিয়েই কেন হলো?অন্য কিছু নিয়ে হতে পারতো।দুশো ঘা বেতের বাড়ি নিয়ে ও হতে পারত।
-কিছু তো আছেই।তার মানে বোধ হয় ঝাড়ু নিশ্চয়ই একটু হলেও কাজ করে।হয়তো পুরোপুরি করে না।ওষুধের ক্ষেত্রে যদি এমন হয় এটা কেন হতে পারেনা?ওষুধ তো সবার জন্য একি হয়না।বয়সভেদে শারীরিক গঠন ভেদে ডোজ ও আলাদা হয়।না।এটাই করব আমি।
মাহির নেট খুঁজে আরো কিছু বের করলো।এই যেমন, আগুন ,লোহা এসবে ঐসব জিন ভয় পায়।আরো কিছু আমল ও দেখে নিল।
-কোনটা ফলো করব?একসাথে সব গুলোই করি।সেটাই ভালো হবে।কাজ দ্রুত হবে।কিন্ত ঝাড়ু?
মাহির এদিক ওদিক তাকিয়ে রান্নাঘরের কোনেই একটা ঝাড়ু দেখতে পেল।দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে রাখা।
-ওহ।যাক।ডিয়ার জিন,বি রেডি টু ছাড়া মাই বউ।
মাহির রান্নাঘর থেকে দেয়াশলাইয়ের বক্সটা পকেটে ভরে নিল।হাতে একটা ছুরি।আরেক হাতে ঝাড়ু।আয়তাল কুরসি পড়তে পড়তে ড্রয়িং রুমের দিকে গেল।মাহির জানে সূরা ফাতিহা, ইখলাস, ফালাক, নাস,আয়াতুল কুরসি পড়ে পুরো শরীরে ফু দিলে এসব আসে না কাছে।কিন্ত ইলার কাছে গিয়ে এগুলো পড়ে ফু দিতে গিলে যদি তার আগে জিন ভর করে ইলার ঘাড়ে।আর ইলা তাকে মেরে ফেলে।মাহির রিস্ক নিতে চায়না।
#রৌদ্র_কুয়াশা
Suvhan Årag(ছদ্মনাম)
পর্ব ২৯
মাহির ধীর গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে ইলার দিকে।ইলা টিভি দেখাতে ব্যস্ত।মনে হচ্ছে ইলা এখানে না টিভির ভেতরেই ঢুকে আছে।মাহির পা টিপে টিপে ইলার পেছনের দিকে যাচ্ছে আক্রমণ করার জন্য।
ইলা হঠাৎ খেয়াল করল ওর পেছনে কারোর ছায়া।সাদা টাইলসের ফ্লোরে স্পষ্ট কারোর ছায়া দেখা যাচ্ছে।ছায়াটা একটু বেকে আছে।ছায়াটার হাতের দিকে আরো লক্ষ্য করলো ইলা।হাতে কিছু একটা আছে।দু হাতে ছায়টা সেটা উচু করেছে যেন কাউকে ফ্লোরে ফেলে পিটিয়ে মারবে এমন।ঝাড়ুর শলার ছায়া দেখেও চমকে গেল ইলা।ইলা নিজের হাতের সসের বোতল টা শক্ত করে ধরলো।তবে কি কেউ তাকে মারতে এসেছে?নাহ।সে ও কম যায় কিসে?সে ও সসের বোতল দিয়ে আক্রমণকারী কে পরাস্ত করবে।
-আআআআআআ।
ইলা চিৎকার দিয়ে উঠে দাড়িয়ে পেছনে ঘুরলো।সসের বোতল টা সামনে ধরে চোখ বুজে চিৎকার করে ডাকতে লাগল মাহির কে।
-আআ।মাহির মাহির।বাচান আমাকে। আআআ।
ইলার চিৎকার শুনে মাহির নিজেই ভয় পেয়ে গেল।মাহিরের হাত থেকে ঝাড়ুটা পড়ে গেল।মাহির ও চেচানো শুরু করলো।
-আআআআ।
কিছুক্ষণ পর।
মাহির চুপ হয়ে গেছে।সামনে ইলা কোমড়ে একটা হাত রেখে আরেকঁটা হাতে সসের বোতল নিয়ে মাহিরের দিকে তাক করে অগ্নীরূপ ধারণ করে আছে।
মাহির ঢোক গিলে বললো,
-কি?
-কি?
-কি?
-ফাজলামি করছেন আমার সাথে!
ইলা দাঁত কিড়মিড় করে চোখ গরম করে তাকিয়ে আছে মাহিরের দিকে।মাহিরের মাথায় অন্য চিন্তা।
মাহির মনে মনে বলছে,
-আমি বুঝতে পেরেছি ইলা এটা তুমি নও।ঐ জিন তোমাকে দিয়ে এরকম কাজ করাচ্ছে।আহারে আমার বউটা।চিন্তা করোনা আজকে ঝাড়ু মেরে ওটাকে বিদায় করব আমি।
মাহিরের ভাবনার রেশ কাটলো ইলার তুড়ি বাজানোতে।মাহির একটু চমকে উঠে ইলার দিকে তাকালো।
-ঐ হ্যালো।কোথায় হারিয়েছেন?
-আমি সব বুঝতে পারছি ইলা।
-আমিও সব বুঝতে পারছি।
-তুমি কি বুঝেছো?
-বউ পেটাতে এসেছেন।নারী নির্যাতন করতে এসেছেন।আপনাকে তো আমি জেলের গুড় রুটি খাইয়ে ছারপোকার কামড় খাইয়ে ছাড়ব বলে দিলাম।
-তুমি কিভাবে জানলে জেলে গুড় রুটি দেয়?তুমি জেল খেটেছো নাকি?
-কি বললেন আপনি?
মাহির ইলার কথার উওর না দিয়ে মেঝে থেকে ঝাড়ুটা তুলে আবার হাতে নিলে।মাহিরের এমন কান্ডে ইলা দু কদম পিছিয়ে গেল।
-ককিই করছেন আপনি?
মাহির ঝাড়ু নিয়ে ইলার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।ইলা বেচারী পিছোতে পিছোতে গোল টি টেবিলের চারপাশে ঘুরছে।
-আরে এমন করছেন কেন আপনি?ভালো হবে না বলে দিচ্ছি।
-ইলা আমি জানি তুমি রাগ করছো।কিন্তু আমি নিরুপায়।দেখো তোমার ঘাড়ে জিন ভর করেছে ।যার জন্য তুমি সকাল থেকে এমন আচরণ করছো।তুমি চিন্তা করোনা।তোমার মাহির থাকতে এই জিন ঝাড়ু পেটা খেয়ে বিদায় হবেই।
-কিহ!
মাহির মাথা নাড়িয়ে হ্যা সূচক উওর দিল ইলাকে।ইলা সসের বোতল টা নিয়ে মাহিরের দিকে এগিয়ে গেল।
-ঝাড়ু ফেলুন।নইলে আপনার মাথা আমি এই বোতল দিয়ে ফাটাব বলে দিলাম।কাঁচের বোতল বুঝতে পারছেন তো?
-না।
-ফেলবেন।নাকি এক্ষুণি,,,,।
-ফেলছি।
ইলার অগ্নীরূপ দেখে নিমিষেই মাহির যেন বাঘ থেকে ভেজা বিড়াল হয়ে গেল।হাত থেকে ঝাড়ু টা ফেলে দিল।ইলা সঙ্গে সঙ্গে ঝাড়ু টা তুলে নিজের হাতে নিল।সসের বোতল টা টেবিলের ওপর রাখলো।
-আজ দেখাচ্ছি মজা আপনাকে।জিন ভর করেছে না কালুয়া ভর করেছে আজ দেখাব আপনাকে।
ইলা মাহির কে ঝাড়ু নিয়ে তাড়া করছে।মাহির উল্টা দৌড় দিচ্ছে।
-পানিজল ছেড়ে দেও।
-না।আজ তো ঝাড়ুর বাড়ি মেরেই ছাড়ব।জিন যে আমার না আপনার মাথায় ভর করেছে বেশ বুঝতে পেরেছি আমি।
দুজনেই ছোটাছুটি করতে করতে বেডরুমে চলে এলো।ইলা হাঁপিয়ে গেছে।ঝাড়ু ফেলে বিছানায় হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে পড়লো।মাহির ও ইলার পাশে।
ইলা হাঁপাতে হাঁপাতে বলছে,
-আপনার মতো বদ লোক জীবনে দেখিনি আমি।
-ইলা সত্যি বলছি।আমি ইউটিউবে দেখেছি সব।ঝাড়ু মারলে জিন পালায়।
-আর একটা কথা বললেনা আপনাকে ঝাড়ু এবার সত্যি সত্যি মারব।বালের ইউটিউব।আরে ওখানে তো পানি গরম করার রেসিপিও পাওয়া যায়।কদিন পর দেখবেন টয়লেট কিভাবে করতে হয় সেই পদ্ধতিও দেখাবে।আজাইরা।কি আছে ওতে?দু একটা ভালো কিছু ছাড়া আর সব পাগলের কারখানা।
-তোমার ঘাড়ে সত্যি,,, ,।
ইলা এবার পাশ ফিরে উঠে মাহির ওপর উঠে গেল।মাহির নিচে শোয়া তার ওপর ইলা।মাহিরের পানজাবির গলা ধরলো ইলা।
-কি বললেন আপনি?
-দেখো তুমি অকারণে বসে বসে কাদছিলে নিচে।আবার হাসছিলে এজন্য আমি ভাবলাম,,,।
-জিন ধরেছে তাই তো।
-হুম।
-আরে পাগল আমি একটা মুভি দেখছিলাম।ওটা দেখেই হাসছিলাম।কান্নার সিন দেখে কাদছিলাম।আর মন তো খারাপ ছিল এজন্য সকাল থেকে মুড ভালো নেই।
-কি হয়েছে?
-কাল আলিশা র জন্ম দিন।এই প্রথম ওর জন্ম দিনে আমি ওর সাথে থাকব না।
-ওহ।
-হুম।
ইলার মুখটা অন্ধকার হয়ে গেল নিমিষেই।মাহির খেয়াল করছে এতক্ষণে যে ইলা তার ওপর নিজের ভার ছেড়ে রেখেছে।ইলার নিজের ও সেদিকে হুশ নেই।
-পানিজল।
-হুম।
-তুমি তো সব সস একাই খাবে ভেবেছিলাম।এখন তো দেখছি আমার জন্য ও একটু রেখেছো।যাক এতোটা ও নিষ্ঠুর তুমি নও।
-মানে?
ইলার ঠোঁটের পাশ দিয়ে সস লেখে আছে।মাহির চোখের ইশারায় ইলাকে সেটা বোঝালো।ইলা বুঝতে পেরেই মাহিরের ওপর থেকে উঠতে যাবে তার আগেই মাহির তাকে নিজের বাহুবন্দী করে ফেললো।
-কি করছেন মাহির?আমি উঠবো।
-তুমি নিজের ইচ্ছেই এখানে এসেছো।কিন্ত উঠবে আমার ইচ্ছে তে।
-মানে?
-আমিও তো একটু সস খেতে চাই।পুরো বোতল লাগবে না।এটুকুই যথেষ্ট।পুরো বোতলের চেয়ে এটুকু র ঝাঝ আরো বেশি জানো পানিজল?
মাহিরের কথা শুনে ইলা রীতিমতো কাঁপতে শুরু করলো।ওঠার চেষ্টা করতে লাগলো।কিন্তু মাহিরের সাথে পেরে উঠলো না।
-মাহির আআআপনি,,,।
ইলার কথা শেষ হওয়ার আগেই মাহির এক অভিনব পদ্ধতিতে নিজের সস খাওয়ার আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে লেগে পড়লো।পদ্ধতি টা হয়তো বেশি গভীর থেকে গভীরতর।
৮৪
খাবার টেবিলে বসে আছে নিবিড়।পাশে দাড়িয়ে আছেন ইসমাত বেগম।নিবিড়ের সব পছন্দের খাবার আজ তিনি রান্না করেছেন।রুটি,হালুয়া, চুচড়ো মাছের ঝোল,পোড়া বেগুন ভর্তা,হাসের মাংস আর পুডিং।
হালুয়া রুটি মুখে দিতেই আবার চোখ মুখ খিচে উচ্ছিষ্ট ফেলানোর পাত্রে সব ফেলে দিল।
-ইয়াক।
ইসমাত বেগম দাড়িয়ে দাড়িয়ে নিবিড়ের কান্ড দেখছেন।মাছের তরকারি, ভর্তা, মাংস একে একে সব মুখে দিয়ে এই একি কাজ করছে নিবিড়।
-আবার কি হলো নিবিড়?
-আম্মাজান এটা কি রেধেছেন।ইশ।ডাল তো সিদ্ধ হয়নি।
-সিদ্ধ করে বেটে নিয়েছি নিবিড়।
-সিদ্ধ সিদ্ধ গন্ধ আসছে তো।
-এমন গন্ধ কি আদৌ হয় নিবিড়?
-দেখি পুডিং দেখি।
নিবিড় একটু পুডিং মুখে দিয়ে সাথে সাথে সেটাও ফেলে দিল।পানি মুখে দিয়ে কুলকুচি করতে লাগলো।
-ইয়াক।আম্মাজান আপনি আপনার রান্না ভুলে গেছেন।
-আমি তো সবই খেলাম নিবিড়।পাশের দু বাড়ি ও দিয়েছি।ওরাও প্রশংসা করলো।
-আম্মাজান ওদের মুখের স্বাদ নেই।এই শক্ত রুটি কেউ চিবুতে পারে?না না।
-তাহলে?না খেয়ে থাকবে?
-আম্মাজান অনুকে বলুন না আমাকে অমলেট করে দিতে।আমার তাতেই হয়ে যাবে।
-নিবিড়!
-থাক।ওর কষ্ট হবে।ওকে বলুন ডিম সিদ্ধ করে দিতে।না না।ওটাতে ও কষ্ট।ওকে বলুন একটু গুড় মুড়ি এনে ঘরে যেতে।আমি খেয়ে নেব।
-নিবিড় চুপ করো তুমি।কেন বার বার এক কথা বলো?অনু চলে গেছে নিবিড়।বোঝার চেষ্টা করো।
ইসমাত বেগমের কথা শুনে এবার নিজের চুল নিজেই ছিড়তে লাগলো ।চিৎকার করে কাদতে লাগলো নিবিড়।
-আমার অনু চাই আম্মাজান।আমার বউ পুতুল চাই।আমার অনু চাই।
নিবিড় চিৎকার করতে করতে হঠাৎকরেই অজ্ঞান হয়ে ফ্লোরে পড়ে গেল।
-নিবিড়।
ইসমাত বেগম দৌড়ে গিয়ে ফ্লোরে বসে নিবিড়ের মাথাটা কোলের ওপর রাখলেন।
-নিবিড় কে আবার ডাক্তার দেখাতে হবে।না।নিবিড়কে ছাড়া আমি কি নিয়ে থাকব।
৮৫
কলিংবেলের আওয়াজ এলো।তুলি একটু নড়েচড়ে বসলো।অনু ঘড়ির দিকে তাকালো।আজ অনেক রাত হয়েছে।আরিয়ান এখনো বাড়ি আসেনি।দুপুরে ঐ যে অনুকে বাড়ি নামিয়ে দিয়ে গেল আর খোঁজ নেই তার।
-অনু।
-হুম।
– ভাইয়া এসেছে বোধ হয়।
-হয়তো।আমি দেখছি।
অনু ভালো করে মাথায় ঘোমটা দিয়ে দরজা র দিকে গেল।দরজা খুলেই অবাক অনু।দরজার ওপাশের মুখটা তার অচেনা।হুট করেই তার পেছনে চেনা মুখ দাড়িয়ে।সেটা আর কেউ না আরিয়ান।অনু দরজা খোলা রেখেই ভেতরে চলে গেল।
-কি রে নীল দাড়িয়ে আছিস কেন?ভেতরে চল।
-হ্যা,,,,যাচ্ছি।
আরিয়ান নীলের পাশ কেটে ভেতরে ঢুকলো।নীল এখনো হা হয়ে দাড়িয়ে আছে।
“এক অজানা অপ্সরী,
যাকে প্রতিনিয়ত দেখে এসেছি,
খুঁজে এসেছি
গোলাপ বাগানে।”
চলবে———–