রৌদ্র কুয়াশা পর্ব ২৭+২৮

#রৌদ্র_কুয়াশা
Suvhan Årag(ছদ্মনাম)
পর্ব ২৭

৮০

আজহার সাহেবের সাথে কথা বলে বিছানা ছেড়ে উঠে দাড়ালো মাহির।ঘড়ির দিকে আরেকবার তাকালো। দশটা বেজে চল্লিশ মিনিট।

-এতো দেরী হয়ে গেছে!উহ।খুব খিদেও পেয়েছে।এই ইলাটাও যে কোথায় গেল?নির্ঘাত মুখ ফুলিয়ে বসে আছে।বুঝিনা কাছে ও টানবে না।দূরে ও যেতে দেবে না।একরাশ অভিমানের দোকান খুলে বসবে কিছু হলেই।আচ্ছা অভিমান না কি ভালোবাসা বাড়ায়।সত্যি কি তাই?মানুষ নাকি প্রিয়জনের ওপর ই যত রাগ অভিমান করে।তবে কি আমি,,,,,,আমি কি পেরেছি তবে ইলার প্রিয়জন হতে?

কেন যেন নিজের অজান্তেই মাহির হেসে ফেললো।মনে একটা খুশি খুশি ভাব।না পাওয়া জিনিসটাকে পাওয়ার খুশি।মাহির নিচে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো।দরজার কাছে যেতেই বেশ জোরে কারোর সাথে ধাক্কা খেল।

-ওহ বাবাগো।এ মানুষ না পিলার।

মাহির তাকিয়ে দেখে ইলা রাগি দৃষ্টিতে মাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে।সে নিজেও ঘরে ঢুকতেই এসেছিল।ধাক্কা লেগে ইলা কিছুটা দূরে সরে দাড়িয়ে আছে।কোমড়ে হাত রেখে চোখ গুলো বড় বড় করে মাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে।

-তুমি?
-না আপনার খালাতো বোন সকিনা।
-এই আমার কোন খালাতো বোন নেই।
-খালাতো বোন যখন নেই বউ নিশ্চয়ই আছে।আর এ বাড়িতে আপনি ছাড়া আর কেউ যদি থেকে থাকে সেটা নিশ্চয়ই আমি।এভাবে তুমি!ঢঙ করে অবাক হওয়ার কি আছে?
-তুমি দিন দিন বড্ড ঝগরুটে হয়ে যাচ্ছো।
-কি বললেন আপনি?
-কোনো এক মহানারী বলেছিলেন,স্ত্রী বিয়ের প্রথম প্রথম থাকেন একদম ভেজা বিলাইয়ের মতো।ঠিক যেন তার সামনে দুধের বাটি রাখা হয়েছে সে চুকচুক করে খাচ্ছে।আহা কি ঠান্ডা!কিন্তু কদিন যেতেই বোঝা যায় বোম্বাই মরিচের তেজ কত!

মাহিরের কথা শুনে ইলা দু পা এগিয়ে তেড়ে আসলো মাহিরের দিকে।

-এই আপনি কি বললেন?
-আমি না।এক মহানারী বলেছিলেন।
-আমার সাথে ফাজলামি করেন?আমার কথা আমাকে ফেরান।

মাহির মুচকি হেসে ইলাকে কোমড় জড়িয়ে নিজের কাছে টেনে আনলো।ইলা তো বেশ বিব্রত বোধ করছে।

-কি করছেন টাকি?
-আমি টাকি মাছ খাইনা।
-আরে!আমি কখন বললাম আপনি টাকি মাছ খান?
– আমি পিলার?
-জিরাফের মতো এরকম লম্বা হলে মানুষ পিলার বলবে নাকি খাম্বা বলবে!
-খাম্বা আর পিলারের পার্থক্য কি?
-ইয়ে মানে,,,।
-কি?
-ঐ হলো একটা।ছাড়ুন।
-সকাল থেকে এরকম ফুলকো লুচির মতো রেগে মুখটা ফুলিয়ে রেখেছো কেন?
-ছাড়ুন।
-একটা কথা ছিল।
-কি?
-তুমি যেন কি বলেছিলে একটু আগে?
-কি?
-একটু আগে না।অনেকক্ষণ আগে।
-কি?
-স্বামীরা প্রথম প্রথম নাকি প্রেমিক থাকে।
-হুম।বলেছিলাম তো?
-আমি কি তোমার প্রেমিক হতে পেরেছি?

মাহির ঘাড় নিচু করে ইলার মুখের কাছে মুখ নিয়ে কথাটা বললো।ইলা তো আরেক বিপদে পড়লো।ইলা ঢোক গিলে একবার মাহিরের দিকে তাকাচ্ছে আরেকবার নিচের দিকে।

-কি বলো?
-জানিনা।
-জানিনা বললে হবে না।উওর চাই।
-আরে আমি তো একটা কথার কথা বলেছি তাই না।
-পানিজল।
-কি?
-আমার সাথে প্রেম করবে?

মাহিরের কথা শুনে ইলা হা হয়ে মাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে।বিয়ে করা বউকে কেউ প্রেমের প্রস্তাব দেয়?ইলার জানা ছিল না।তার থেকে ইলার অবাক হওয়ার কারণ মাহির তাকে এ ধরনের কথা বলছে।ভেতরে ভেতরে তো তার ভীষণ লজ্জা লাগছে।মাহির তো উওরের আশায় ইলার দিকে তাকিয়ে আছে।কি উওর দেবে ইলা মাহিরকে?ইলা এটা ভেবেই পারছে না।

-কি হলো বলো?প্রেম করবে আমার সাথে?দু জনে একসাথে হাত ধরে ঘুরে বেরাব।একসাথে আইসক্রিম খাব।রাস্তা দিয়ে চলতে ফিরতে খুনসুটি করব।বলো না?
-খাবার রেখেছি গরম করে।আমার খিদে পেয়েছে।আপনিও আসুন।

ইলা নিজেকে ছাড়াতে চাইলে মাহির ইলাকে পরম যত্নে বুকের সাথে জড়িয়ে নেয়।

-পানিজল।কিছু কি শুনতে পাও?কোনো আওয়াজ?যদি পাও তো জেনে রেখো তোমার জন্য আওয়াজ টা হয়।যদি শুনে থাকো তবে জেনে রাখো এই আওয়াজটাই খুব শিগগিরই তোমাকে গ্রাস করবে।তুমি নিজেই ছুটে আসবে এই আওয়াজের কাছে।একটা সময় আসবে।তোমার আওয়াজ গুলো ও আমার হবে।আর আমার তো তোমারই আছে।আমি অপেক্ষায় থাকব সেই প্রহরের।

ইলা কিছুই বললো না।পরম শান্তিতে সে মাহিরের বুকে মাথা রেখে আছে।ইলার কাছে আপাতত এই স্থানটা এতোটাই শান্তির লাগছে যে এখানে মাথা রেখে কতগুলো নিরঘুম রাত ও পূর্ণিমার আলোয় বসে রাত কাটানোর সাক্ষী হওয়ার মতোন।

৮১

-ডাবের পানি চলবে?

অনু মাথা দুদিকে নাড়িয়ে আরিয়ানকে না সূচক জবাব দিল।আরিয়ানের বেশ মেজাজ খারাপ হলো অনুর আচরণে।

-এই যে।মুখে বলা যায় না?

আরিয়ানের কথা শুনে অনু আরিয়ানের দিকে তাকালো।

-বলছি মুখে বলা যায় না?
-কি বলব?
-না।না কথাটা কি মুখে বলা যায় না?
-না।
-মানে?
-আপনিই তো বললেন না বলতে।
-ও আল্লাহ!আমি পাগল হয়ে যাব।

আরিয়ান মাথা গরম করে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে।টেবিলের ওপর থেকে পানির গ্লাস নিয়ে দু চুমুক পানি খেল।অনু টেবিলের বিপরীত পাশে চুপ করে বসে আছে।কলেজ থেকে বেরিয়েই আরিয়ান অনুকে নিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে এসেছে।সকালে তাড়াহুড়ো তে কেউ ই ভালো করে খেয়ে আসেনি।

-আচ্ছা বাদ দিন।কি খাবেন বলুন?আধ ঘন্টা ধরে বসে আছি।কিছুই অর্ডার করলাম না।
-আমি কিছু খাব না।আপনি আপনার জন্য কিছু চাইলে অর্ডার করুন।
-আমার জন্য করতে হলে কি আপনাকে এখানে আনতাম!দেখুন বাড়ি যেতে দেরী হবে।ঢাকা শহরের যা জ্যাম।আপনি কিছু খেয়ে নিন।না হলে বাড়ি যেতে যেতে দুপুর গড়িয়ে যাবে।
-আমি এভাবে সকলের সামনে বসে খেতে পারিনা।

আরিয়ানের যেন মাথায় টনক নড়লো।আসলেই তো সে ভুলেই গিয়েছিল অনু আর পাঁচটা মেয়ের মতো চলাফেরা করে না।

-আমি খুবই দুঃখিত।আপনি কি খাবেন বলুন আমি প্যাক করে নিচ্ছি।গাড়িতে বসেই না হয় খাবেন।
-আপনি যা খাবেন আমার জন্য ও তাই অর্ডার করুন।
-আরে।আমার পছন্দ তো আপনার মতো এক না।আপনি বলুন।
-ঠিকাছে ।আলু ভর্তা আর ডাল ভাত।ওটাতেই আমার চলে যাবে।

অনুর কথা শুনে আরিয়ান হা হয়ে তাকিয়ে আছে।রেস্টুরেন্টে বসে কেউ এসব খেতে চায়?আরিয়ান তো ভাবতেই পারছে না।আরিয়ান এদিক ওদিক তাকালো।কেউ আবার অনুর কথা শুনেছে কি না।সবাই যার যার মতো ব্যস্ত।আরিয়ান একবার ভাবলো অনু এতো টা বোকা কিভাবে হয়।পরেই তার মনে বলো সে গ্রামের মেয়ে।এসব নাই জানতে পারে।

আরিয়ান একটু স্বর নিচু করে বললো,

-অনু।আপনি আগে কখনো বাইরে খেয়েছেন?
-হ্যাঁ।ঐ জে এসসি পরীক্ষার সময় সকালে খেয়ে যেতে পারিনি হলে।পরীক্ষা র মধ্যে ই অসুস্থ হয়ে পড়ি।পরীক্ষা র পর আমার মামা ডাল,আলু ভর্তা আর মুরগির মাংস দিয়ে হোটেলে খাইয়ে ছিল।
-ওহ।আসলে অনু এখানে এসব পাওয়া যায় না।
-কেন?
-এখানে বিদেশী খাবার বেশি পাওয়া যায়।
-ওহ।
-ঠিকাছে আমিই না হয় আপনার জন্য অর্ডার করছি।
-আচ্ছা।

আরিয়ান ওয়েটার কে ডেকে ফ্রাইড রাইস,ভেজিটেবল, আর চিকেন ফ্রাই অর্ডার করলো অনুর জন্য।নিজের জন্য বার্গার আর কফি।সব কিছু প্যাক করে নিয়ে বিল পে করে অনুকে নিয়ে গাড়িতে বসলো আরিয়ান।

-আপনি খেয়ে নিন।
-গাড়ি চালাবেন না?
-গাড়ি চললে ঠিকমতো খেতে পারবেন না।খাওয়া শেষ করুন তারপর।
-আচ্ছা।
-শুনুন।
-হুম।
-আপনার কলেজে ভর্তি তো করলাম আমার রিকমেন্ড এ।কিন্তু তিন দিনের মধ্যে আপনার এস এসসি পরীক্ষার মার্ক সিট,সার্টিফিকেট জমা দিতে হবে।এগুলো তো আপনি নিয়ে আসেননি।
-এসএসসি পরীক্ষার মার্ক সিট?আমি তো জানিই না আমার রেজাল্ট কি।রেজাল্ট এর আগেই বিয়ে দিয়ে দিল।ওনাকে অনেকবার বলেছিলাম রেজাল্ট এর কথা।কিন্তু।

অনুর মুখটা নিমিষেই অন্ধকার হয়ে গেল।আরিয়ান বিষয় টা বুঝতে পারলো।

-আরে।তাহলে তো আরো সুবিধা হলো।না হলে আপনার বাড়িতে এগুলো আনতে গেলে বিপদে পড়তে হতো।আপনার স্কুলে গিয়েই পাব।কিন্তু আপনার রেজিস্ট্রেশন কার্ড,এডমিট কার্ড ওগুলো?
-ওগুলো তো আমার বান্ধবীর কাছে।
-মানে?
-বিয়ে করতে রাজী হচ্ছিলাম না বলে ওগুলো নিয়ে মা পুড়িয়ে ফেলতে গিয়েছিল।হাতে পায়ে ধরে বাবা আর আমি আটকাই।পরে আমার বান্ধবীর কাছে দিয়ে দেই।কারণ মা আমি না থাকলে আবার ওগুলো পোড়াতো।তারপর বিয়ের পর আর আনতে যাওয়া হয়নি।
-একটা কথা কি জানেন অনু?
-কি?
-আল্লাহ তার বান্দার কতোটা ভালো চান।এই দেখুন না কোথ থেকে কোথায় চলে গেছে আপনার জিনিসগুলো।এখন যদি বাড়িতে আনতে যেতেন কতোই না বিপদ আবার।তার চেয়ে এবার কেউ জানতেই পারবে না।আমি গিয়ে সব আনবো।
-সত্যি?
-হুম সত্যি।কিন্তু লক্ষ্য যেন ঠিক থাকে।আমি চাই আপনি নিজের পায়ে দাড়ান।

চলবে———
রৌদ্র_কুয়াশা
Suvhan Årag(ছদ্মনাম)
পর্ব ২৮

৮২

“মামোনি,
ও মামোনি।তুমি কি আমাকে ভুলেই গেছো?আমাকে ভুলে রসগোল্লার মতো গপগপ করে খেয়ে ফেলেছো।তোমার কিন্তু পেত ফুলে ঢোল ঢরাক্কা হবে বলে দিলাম।তুমি আমাকে একটু ও ভালোবাসো না।মামোনি তুমি কেন আমাকে খাইয়ে দেও না?জানো মা আমাকে কততো বকে।আমাকে মারেও খুব।আমার বুঝি ব্যাথা লাগেনা। মামোনি তুমিই বলোনা মা এতো পচা কেন?তুমি তো এ তো পচা না।মায়ের কাছে বসে একটু কথা বললেই আমাকে বকে।তুমি তো বকতে না।মামোনি তুমি তাড়াতাড়ি এসো।তোমার একটুও মনে পড়েনা তোমার আলু বুড়ির কথা।তুমি এসো।তারপর আমি তুমি মেলে চুপটি করে কোথাও একটা লুকিয়ে পড়ব।মা আর নানুমনি খুজবে।আমরা পলাপলি খেলব মামোনি।আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি মামোনি একদম আমার রসগোল্লার মতো।মামোনি কাল তো বার্থ ডে ।তুমি আসবে না?

তোমার আলু পাখি”

চিঠিটা পড়েই একটানে ছিড়ে ফেললো মিলা।আলিশা এক কোনে দাঁড়িয়ে শায়লা বেগমকে জড়িয়ে ধরে ভয়ে গুটিশুটি মেরে দাড়িয়ে আছে।

-অসভ্য মেয়ে।সব সময় শুধু মামোনি মামোনি মামোনি।নিজের টিচারকে দিয়ে এই চিঠি লিখিয়েছিস তুই?আমাকে ছোট করা ছাড়া তোর কোন কাজ নেই।টিচারের সামনেও মাকে ছোট করিস।তোর জীবনে তোর মা এর কোন স্থান নেই এটাই বোঝাতে চাস তুই?

আলিশা ভয়ে এবার কেঁদেই দিল।শায়লা বেগম আলিশা র কান্না দেখে মিলার দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকালেন।

-এজন্য ই তো ও মা থেকে মামোনিকে খোজে বেশি।কি ব্যবহার করিস তুই ওর সাথে?নিজের বাচ্চার সাথে কেউ এভাবে কথা বলে?
-শোনো মা বাচ্চার সাথে কিভাবে কথা বলে সেটা আমাকে শেখাতে এসো না।তোমার থেকেও ভালো জানি আমি।
-ও।আমি দু দুটো মেয়ে মানুষ করে এতোবড় করলাম তুই সারাদিন শুয়েই কাটালি।খালি মেয়েটাকে পাশে বসিয়ে বুঝি ও মানুষ হয়ে যায়।এতোই অভিজ্ঞ হয়ে গেছিস তুই?
-অবশ্যই। আমি তোমার মতো মা হব না যে শাসন না করে ছেলে মেয়েদের একদম বিগড়ে দেব।
-মিলা!
-চেচাবে না।কি মানুষ করেছিলে নিজের ছোট মেয়েকে?বাহ!কতোই না মুখ পোড়ালো ও তোমার।
-সব সময় কেন ইলাকে টানিস তুই?
-বেশ করেছি।ঐ ইলাই নষ্টের গোড়া।আমার সংসার ভেঙে শান্তি হয়নি।এখন আমার বাচ্চাকে ও দূরে ঠেলে দিয়েছে আমার থেকে।এতোটাই দূরে ঠেলে দিয়েছে যে প্রাইভেট টিচারের কাছে অ আ শেখার বয়সে তিনি তাকে উল্টা চিঠি লিখে দিতে বলেন।তার আদরের মামোনিকে দেবে বলে।
-তুই ওকে কেন বকছিস?কি বোঝে ও এসবের।ও ইলাকে ভালোবাসে।তাই যা ভেবেছে বলে ছে।ওর দোষ কোথায়?ও কি বোঝে ভালো খারাপের মানে?
-ওকে বুঝতে হবে।ওর মামোনি একটা নষ্ট মেয়ে।বেশ্যা বাজারের বেশ্যা।
-মিলা!চুপ কর বলছি।লজ্জা করছে না এইটুকুন বাচ্চার সামনে কি ভাষা দিচ্ছিস?এই বোধ টুকু ও কি হারিয়ে গেছে তোর?একটু আগে তো খুব মা হওয়ার সাফাই গাইছিলি।

শায়লা বেগমের কথা শুনে মিলা চুপ হয়ে গেল।শায়লা বেগম আলিশা কে টেনে সামনে আনলেন।

-নানু আমাকে ছেড়ো না। মা মারবে।খুব ব্যাথা লাগে তো।
-না সোনা।কিছু হবে না।তুমি যাও তো।ঐ ঘরে গিয়ে খেলা করো।

আলিশা ঢোক গিলে ভয়ে ভয়ে মিলার দিকে তাকাচ্ছে।মিলা তাকে তার কাছ থেকে যেতে নিষেধ করেছে।

-নানু।যাও।কিছু হবে না।
-সত্যি?
-হুম যাও।

শায়লা বেগমের কথা শুনে আলিশা দৌড়ে পুতুল হাতে বেরিয়ে গেল।

-আমি এতোদিন ধরে এত বছর ধরে শুধূ চাইতাম তুই যেন সুস্থ হোস।কিন্তু আজ বলছি তুই যে এখন শোয়া না দেয়ালে পিঠ দিয়ে বসতে পারছিস, হাত চালাতে পারছিস আমি না সহ্য করতে পারছি না।তোর জন্য পঙ্গুত্বই ঠিক ছিল।
-মা!
-বিছানায় শোয়া থাকতিস এতোদিন।বাচ্চা মেয়ে টা তাও রেহাই পেতোনা তোর মুখের ভাষা থেকে।এখন তো গায়ে হাত তুলিস।না জানি সম্পূর্ণ সুস্থ হলে কি দুঃখ আছে ওর কপালে।
-ও তোমার কাছে এখন আমি কালসাপ হয়েছি তাই তো?
-আমি ছোট থেকেই ইলাকে মনে করতাম বড্ড স্বার্থপর হবে ও।তরকারির বড় মাছটা ও ও আগে খেতে চাইত।কিন্তু আমি ভুলে যেতাম তুই বড়।তোকে অগ্রাধিকার দিতে দিতে এমন অবস্থা করে ফেলেছিলাম আমি মেয়েটার ঐটুকুন বয়সেই দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছিল।তাই তো নিজের চাওয়াটা পরে আদায় করে নিত।আর আমি ভাবতাম স্বার্থপর।তোকে অনেক প্রশ্রয় দিয়েছি আমি।তোর ভুলের জন্য ও ইলা শাস্তি পেয়েছে।তুই তো স্বীকার করতিস না।উল্টা দোষ চাপাতিস ওর ওপর।আমি ও অন্ধ হয়ে থাকতাম।ওকে ই শাস্তি দেখতাম।আজ আমি অন্ধ না।আমার চোখের বাধন খুলেছে।কিন্তু আফসোস আজ আমার অন্ধ থাকা না থাকাতে কিছুই হবে না।মাঝখান থেকে আমি হারিয়ে ফেলেছি আমার সন্তানের ভালো বাসা।আমি ভালো মা হতে পারিনি।মায়েরা অপরাধ করে না এটা ভুল।আজ বুঝেছি।আমি অপরাধ করেছি।আফসোস আজ এই অনুতাপে কিছুই হবে না।
-ও এখন দেখছি সব দোষ আমার।মেয়ে টাকা দিচ্ছে বলে গলে যাচ্ছো একদম।
-ভুলে যাস না মিলা আজ বসে আছিস হাত চালাতে পারছিস।সবই আল্লাহর রহমত।ওনার ইশারাতেই কিন্তু ঐ ইলার টাকাতেই তোর চিকিৎসা হয়েছে।এতোটা অকৃতজ্ঞ হোস না।
-শোনো আমার সংসার ভেঙেছে ও।তার বদলে এ কটা টাকা কিছুই না।
-কটা টাকা!হাসালি।
-ঐ বেশ্যাটার সাফাই গাইতে খুব ভালো লাগছে তাই না।
-হ্যা।বেশ্যাটার ও মন আছে।তোর মতো স্বার্থপর না।অমানুষ না।

শায়লা বেগম রেগে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন।মিলা বসে দাঁত কিড়মিড় করছে।

৮৩

ড্রয়িং রুমে মন খারাপ করে বসে আছে ইলা।টমেটো সসের বোতল হাতে নিয়ে টিভি দেখছে।একটু পর পর বোতলে মুখ লাগিয়ে সস খাচ্ছে।মুখে মাখিয়ে ফেলছে।সেদিকে ইলার হুশ নেই।মাঝে মাঝে কেঁদে কেঁদে একাকার হয়ে যাচ্ছে।সোফায় বসে মাহির ল্যাপটপে কাজ করছে আর আড়চোখে ইলার কান্ডে কারখানা দেখছে।

-বুঝলাম না।এর যে আজ কি হলো?আচ্ছা সারাদিন বাড়িতে একা থাকে।জিন ভুত ধরে নি তো?ওহ নো?হতেই পারে।জিন ভর করলে নাকি মানুষের রাগ বেড়ে যায়।জিন তো মেয়েদের ওপর বেশি ভর করে।আরো আমার সুন্দরী বউ।নাহ।এই জিন তাড়াতেই হবে।

মাহির চুপচাপ কিছু না বলে মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে অনেক ধীরে ধীরে ইলার পাশ থেকে চলে গেল।রান্না ঘরে ঢুকলো।

-আচ্ছা জিন ছাড়ানোর ঘরোয়া কি উপায় আছে?উহ।এতো রাতে তো ওকে কোন হুজুরের কাছেও নিতে পারব না।ঘরোয়া কিছুই করতে হবে।না হলে দেখা গেল বজ্জাত জিন আমার বউকে মাঝরাতে উড়িয়ে নিয়ে চলে গেল।নাহহহ,,,,,।

মাহির যেন বলার মধ্যে ই নিজের চোখের সামনে সব কল্পনা করে নিল।ইলা ঘুমিয়ে আছে।হঠাৎ করে বিছানার ওপর ইলা ভাসছে।একটা আগুনের কুন্ডলি যেন ইলার মাথার কাছে আছে।সাদা কাপড়ে মুড়িয়ে ইলাকে নিয়ে চলে যাচ্ছে।মাহির চিৎকার করছে।কিন্তু বাধা দিতে পারছে না।জিন মাহিরের হাত পা বেধে রেখে দিয়েছে।

-নাহ।অসম্ভব।আমি আমার পানিজলকে হারাতে পারব না।এতগুলো বছর অপেক্ষার পর ওকে পেয়েছি আমি।নাহ এটা হতে পারে না।

মাহির দাড়িয়ে ভাবতেই লাগল।

-আচ্ছা ইউটিউবে যদি সার্চ দেই।নিশ্চয়ই কিছু না কিছু পাব।ইউটিউবে তো এখন টয়লেট পরিষ্কার করার ভিডিও ও পাওয়া যায়।এটাও নিশ্চয়ই থাকবে।

মাহির আর দেরী না করে ট্রাউজারের পকেট থেকে ফোন বের করে ইউটিউবে সার্চ দিল।যা দেখলো সেটা মাহিরের কল্পনার বাইরে।

-কিহ!ঝাড়ু দিয়ে মারতে হবে।অসম্ভব!এসব নিশ্চয়ই কুসংস্কার।

মাহির আবার কি ভেবে যেন দাড়িয়ে গেল।সে এটাই ভাবছে কুসংস্কার যদি হবে তাহলে ঝাড়ু পেটা নিয়েই কেন হলো?অন্য কিছু নিয়ে হতে পারতো।দুশো ঘা বেতের বাড়ি নিয়ে ও হতে পারত।

-কিছু তো আছেই।তার মানে বোধ হয় ঝাড়ু নিশ্চয়ই একটু হলেও কাজ করে।হয়তো পুরোপুরি করে না।ওষুধের ক্ষেত্রে যদি এমন হয় এটা কেন হতে পারেনা?ওষুধ তো সবার জন্য একি হয়না।বয়সভেদে শারীরিক গঠন ভেদে ডোজ ও আলাদা হয়।না।এটাই করব আমি।

মাহির নেট খুঁজে আরো কিছু বের করলো।এই যেমন, আগুন ,লোহা এসবে ঐসব জিন ভয় পায়।আরো কিছু আমল ও দেখে নিল।

-কোনটা ফলো করব?একসাথে সব গুলোই করি।সেটাই ভালো হবে।কাজ দ্রুত হবে।কিন্ত ঝাড়ু?

মাহির এদিক ওদিক তাকিয়ে রান্নাঘরের কোনেই একটা ঝাড়ু দেখতে পেল।দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে রাখা।

-ওহ।যাক।ডিয়ার জিন,বি রেডি টু ছাড়া মাই বউ।

মাহির রান্নাঘর থেকে দেয়াশলাইয়ের বক্সটা পকেটে ভরে নিল।হাতে একটা ছুরি।আরেক হাতে ঝাড়ু।আয়তাল কুরসি পড়তে পড়তে ড্রয়িং রুমের দিকে গেল।মাহির জানে সূরা ফাতিহা, ইখলাস, ফালাক, নাস,আয়াতুল কুরসি পড়ে পুরো শরীরে ফু দিলে এসব আসে না কাছে।কিন্ত ইলার কাছে গিয়ে এগুলো পড়ে ফু দিতে গিলে যদি তার আগে জিন ভর করে ইলার ঘাড়ে।আর ইলা তাকে মেরে ফেলে।মাহির রিস্ক নিতে চায়না।

চলবে———–

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here