রৌদ্র কুয়াশা পর্ব ৩০+৩১

#রৌদ্র_কুয়াশা
Suvhan Årag(ছদ্মনাম)
পর্ব ৩০

::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::

-আরে নীল শোন,,,,,এমা।এ কোথায় গেল?

আরিয়ান কথা বলতে বলতে পেছনে ঘুরে দেখে নীল নেই।আরিয়ান দরজার দিকে এগিয়ে গেল।

-ও চলে যায়নি তো?কিন্তু আমাকে তো বলে যাবে।

আরিয়ান কয়েক কদম এগিয়ে গিয়ে দেখে নিল এখনো দরজার বাইরে দাড়িয়ে আছে।চোখ দুটো স্থির।যেন কোনো স্ট্যাচু দাড়িয়ে আছে।

আরিয়ান নীলের হাত ধরে হালকা ঝাঁকুনি দিয়ে বললো,

-আরে এই নীল।কি রে?তুই বাইরে দাড়িয়ে আছিস কেন?

আরিয়ানের ঝাকুনিতে নীল নিজের ঘোর থেকে বেরিয়ে এলো।

-ও স্যার কিছু না।
-কিছু না বললেই হলো?তুই হা হয়ে তাকিয়েছিলি।কি হয়েছে বলতো?
-না স্যার সত্যি কিছু না।হঠাৎ করে ঐ একটা কাজ মনে পড়ে গেল।
-কি কাজ হুম?নিশ্চয়ই গার্লেফ্রন্ড কে সারাদিন কল করিস নি আজ?

আরিয়ানের কথা শুনে নীল নিজের জিভ কামড়ে বললো,

-আসতাগফিরুল্লাহ।স্যার গার্লেফ্রন্ড আর আমি!স্যার এতো বড় একটা অপবাদ দিতে পারলেন।
-শোন।তোকে আমার একটু ও বিশ্বাস হয়না। এতো হ্যান্ডসাম একটা ছেলে এতো ভালো জব করিস আবার বলিস গার্লেফ্রন্ড নেই!সত্যি করে বললে কি আমি তোর গার্লেফ্রন্ড কে পটিয়ে নিজের করে নেব নাকি?
-স্যার সত্যি নেই।যা একটু রাখার ইচ্ছে ছিল আপনার আর মাহির স্যারের পাল্লায় পড়ে সব শেষ।
-আমরা আবার কি করলাম?
-ঐ যে।মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছেন ভালোবাসতে হলে বিয়ে করো।বউকে ভালোবাসো।আমার মাথায় ও না সেটা পেরেকের মতো গেঁথে গেছে।কি করব বলুন?সঙ্গ দোষে নাকি লোহা ভাসে।আর আমাকে দেখুন।আমার ক্ষেত্রে আপনাদের সঙ্গে আমি সিঙ্গেল হয়ে নদীর মাঝে নাকানি চুবানি খাচ্ছি।আহা কি কষ্ট!
-তা এতো কষ্ট করার কি দরকার?বাপ মায়ের তো একমাত্র ছেলে তুই।বিয়েটা করেই ফেল।
-ঐ যে।সেই আবার আপনাদের সঙ্গে আসতে হবে।
-এখানে আবার আমরা কি করলাম?
-মনের মানুষ না পেলে বিয়ে করবেন না আপনি।তেমন আমি।

নীল অসহায় চেহারা নিয়ে আরিয়ানের দিকে তাকালো।নীলের চাহনি দেখে আরিয়ান আর নিজেকে সামলাতে পারলো না।ফিক করে হেসে দিল।

-স্যার আপনি হাসছেন?
-তোর কথা শুনে যে কেউ হাসবে।নে ভেতরে আয়।
-স্যার শুনুন।
-হুম বল।
-স্যার যিনি দরজা খুললেন উনি কে?
-ওহ।ও ই সেই অনু।
-ওহ!বড্ড বাচ্চা মেয়ে।চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে বয়স কত কম তার।
-হুম।মেয়ে টার ভাগ্যটাই খারাপ।এই বয়সে এতো বড় ঝড় সামলাতে হচ্ছে।
-উনি কি ওনার স্বামীর কাছে ফিরবেন না?
-তোকে তো সব বলেছি।আর মেয়েটা কে অনেক শক্ত দেখলাম।ভাঙবে তবু মচকাবে না।স্বামীর কাছে ফেরার কোনো ইচ্ছে ই দেখিনা।অবশ্য ঐ জানোয়ারের কাছে ফেরার থেকে মরে যাওয়া ও ভালো।আরে সব কথা কি বাইরে দাঁড়িয়েই বলবি?ভেতরে আয় তো।সারাদিন আমাকে কিপ্টা বলিস।আজ আর তোকে মামা ওয়েফার না ভালো কিছু ই খাওয়াব।
-হ্যা স্যার চলুন।

আরিয়ান নীলকে ভেতরে ঢুকিয়ে দরজাটা লক করে দিল।

৮৬

ওয়াশরুমের দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দাড়িয়ে আছে ইলা।বিপরীত পাশে আয়নাতে নিজের মুখ দেখতে পাচ্ছে সে।এখনো যেন গাল দুটো লাল হয়ে আছে।লজ্জা র ভার এতোটাই বেশি হয়ে গিয়েছিল তার।বুকে হাত দিয়ে ঘনঘন নিঃশ্বাস নিচ্ছে সে।বুকের ভেতর যেন এখনো ধরফর করছে।যেন কেউ খুব জোরে হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করছে।শরীরের কম্পন এখনো কমেনি তার।এটা কি ছিল?কিছুক্ষণ আগের ঘটনাটা মনে পড়তেই যেন ইলার গাল দুটো আরো গোলাপী রসগোল্লা হয়ে যাচ্ছে।না এই স্পর্শ টা প্রথম বার নয়।মাহির এর আগেও এভাবেই তাকে স্পর্শ করেছিল।কোনো এক রাতে।সেদিন তার চোখে ছিল এক আগ্নেয়গিরির উত্তাপ।এতোটাই রেগে ছিল সে।সেদিনের ঘটনা টা ইলার কাছে অনুভূতি না ঘৃনার জন্ম দিয়েছিল।কিন্তু আজ!এক বিবাহিত নারী।তার স্বামীর থেকে পাওয়া বিশেষ কিছু হয় তো খুব বেশি নয়।তবুও অনুভূতি টা যে কেমন সেটা ইলা নিজেই জানে।আরো আছে মাহিরের নেশাক্ত দৃষ্টি।যেন এক সাগর আলকোহলে ডুবে ছিল তার চোখের মনি দুটো।বার বার ইলার চোখের দিকে তাকাচ্ছিল।মনি দুটো বার বার লাফালাফি করছি ল এদিক ওদিক।ইলা যেন ঐ সাগরেই ডুবে ছিল।তবুও কপাল।লজ্জার ভার বেশি হওয়ায় ইলা আর সইতে পারেনি।ধাক্কা দিয়ে ছুটে আসে ওয়াশরুমে র ভেতর।না হলে আজ হয়তো আরো বেশি কিছু ই ঘটে যেত।চোখ বুজে সেটা কল্পনা করতেই ইলা আরেক দফা কম্পিত হতে লাগলো।

ইলা আয়নার দিকে তাকিয়ে নিজেই নিজেকে বলতে লাগলো,

-আমার এমন কেন হয়?একটা পুরানো অনুভূতি পাই আপনি আশেপাশে থাকলে।এই অনুভূতি টা ঝড়ো হাওয়ার জন্য ও হতো।মাহিরের প্রতি টানটা বেড়েই চলেছে।তবে কি আমি মাহিরের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ছি?

ইলার কপালে চিন্তার ভাঁজ।আবার নিমিষেই মিলিয়ে গেল সব।ইলার মুখে একটা অজানা হাসি ফুটে উঠলো।

-দুর্বল হতে সমস্যা কি?উনি তো আমার ই।আমার সম্পত্তি।দুর্বলতা না তার থেকে বেশি কিছুই ওনার প্রাপ্য।আমার সর্বস্ব।

বারান্দায় দাড়িয়ে মাহির পায়চারি করছে।ইলার কথা মনে করতেই নিজে নিজেই পাগলের মতো হেসে উঠছে।

-আমার বউটা বড্ড বেশি লাজুক।কিন্তু এর লজ্জার জন্য যত সমস্যা আমার।কি এমন হতো যদি সময় টা আরো দীর্ঘ হতো।অনেক দীর্ঘ।ধরা যাক পুরো রাতটা।উহুম।তাতেও নয়।এই রাত কেটে যদি আর ভোর না হতো।

“কন্যে,
তোমারেই পাইবার জন্য আমি দূরে দূরে যাই,
বেশিক্ষণ না কেন যে কিছুক্ষণ হয়ে যায়,
আমি বার বার হই তৃষ্ণার্ত, না পারি হতে সংযত,
তোমারই মোহে মরিবার চাই”।

চোখ বুজে মাহির বিড়বিড় করছে।অনুভব করছে প্রতিটা মুহূর্ত।তার সেই শুরু থেকে।শুরুর ইলা কে আজ অব্দি অনুভব করতে গেলে যে পুরো রাতটা কেটে যাবে তবুও শেষ হবে না।মাহির ই জানে ইলা নামের গভীরতা তার জীবনে ঠিক কতটুকু।পানিজলের ঢেউ এর ধাক্কা ঠিক কতটুকু।

মাহির চোখ খুলে ফেললো।এবার ঘরে যাওয়া প্রয়োজন মনে করলো সে।ঘরের দিকে পা বাড়ালো।

ঘরে ঢুকেই বিছানার দিকে তাকিয়ে আরো বেশি হাসি পেল মাহিরের।ইলা বিছানার মাঝখানে বসে আছে।শাড়ির ওপর বড় ওড়না জড়িয়ে মুখে নিকাব বেধে ফোন টিপছে।মাহির কে দেখেও না দেখার ভান করে চোখ ঘুরিয়ে নিল ইলা।ইলার চোখ দুটোই শুধু দেখা যাচ্ছে।মাহির ধীর পায়ে ইলার এগিয়ে গিয়ে ইলার পাশে বসলো।ইলা মাহিরের দিকে এক নজর তাকিয়ে একটু পিছিয়ে বসলো।

-পানিজল।
-কি?
-তুমি এই রাতে এগারোটার সময় মুখে নিকাব বেধে বসে আছো কেন?
-এগারোটা বেজে গেছে বুঝি?
-হুম।
-ও।আসলে আমি পর্দা করছি।
-কিহ!
-হ্যা।এ তো অবাক হওয়ার কি আছে?আপনিই তো বলেছেন এখন থেকে এভাবে চলতে হবে আমাকে।এজন্য ট্রায়াল দিচ্ছি।
-ওহ।সিরিয়াসলি তুমি পর্দা করছো!

মাহির ভ্রু কুচকে ইলার দিকে তাকালো।ইলা মাথা ঝাকিয়ে উওর দিল,

-হুম।দেখতে পারছেন না।নাকি চোখের ডাক্তার দেখাব আপনাকে?
-আমাকে ডাক্তার দেখাতে হবে না।যে কাজের জন্য এই রাতের বেলা মুখ বেঁধে রেখেছো সেটাই তো হলো না।
-মানে?
-জরজেটের ওড়নার ভেতর দিয়ে ঠিক ই তোমার গাল দুটো দেখা যাচ্ছে।আমার দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে ফেলছো লজ্জা তে লাল হচ্ছো কি ভেবেছো বুঝিনা?

মাহির অট্টো হাসিতে ফেটে পড়লো।ইলা বেচারী আরো লজ্জায় পড়ে গেল।এসেছিল বাঘিনী রূপ নিতে হয়ে গেল বিলাই।কত কষ্টে মাহির কে নিজের সামনে বসিয়ে রেখেছিল সে।ইলা নিজের নিকাব খুলে ফেললো।রাগে কষ্টে কান্না আসছে তার।মাহির আবার তাকে লজ্জায় ফেলে দিল।

-আপনি এটাও দেখে ফেলেছেন?
-হুম।
-থাকব না আমি এখানে।

ইলা উঠতে গেলে মাহির ইলার হাত ধরে টেনে বসিয়ে দেয়।

-বাদরামি না করে এখন ঘুমা ও।কাল সকালে অনেক রান্না করতে হবে।সকাল সকাল বাজার আসবে।
-কেন?
-তোমার আলু পাখির জন্মদিন।আর তুমি তাকে তার পছন্দ মতো খাওয়াবে না?
-আপনি আলিশার কাছে নিয়ে যাবেন আমাকে?
-হুম।

খুশিতে ইলার চোখ পানিতে ভরে উঠলো।

(সবাই উপরের কথা গুলো অবশ্য ই পড়বেন)

৮৭

নিল বিছানা তে শুয়ে এপাশ ওপাশ করছে।ঘুম আসছে না তার।এই প্রথম কাউকে এতোটাই মনে ধরেছে তার।

নীল ফোন টা নিয়ে আরিয়ানের নাম্বারে ডায়েল করলো।একটু পরই রিসিভ করলো আরিয়ান।

-হ্যা নীল বল।
-স্যার আপনি ঘুমাননি?
-না রে।আমি তো অনেক রাত জাগি।তুই ঘুমাস নি কেন?
-ঘুম আসছে না।
-এত রাতে ফোন করলি যে?
-স্যার আমার মনে হয় সেইদিন এসে গেছে।
-কি?
-আমি আপনার থেকে কিছু চাইব।কিন্ত আপনি না করতে পারবেন না।
-কি চাস বল?
-আজ না।যদি কখনো সম্ভব হয় তো।না হলে এটা সম্ভব নাও হতে পারে।
-কি জিনিস সেটা তো বল?
-আজ না।সুযোগ হলে বলব।
-আচ্ছা।
-গুড নাইট স্যার।
-গুড নাইট।
#রৌদ্র_কুয়াশা
Suvhan Årag(ছদ্মনাম)
পর্ব ৩১

::::

ফোন রেখে নীল আবার অন্য জগতে ডুব দিল।টানা টানা চোখের প্রেমে।ঘন কালো পাপড়ির দেশে।

-মা তো কতদিন ধরে বললো বিয়ে করতে।ভেবেছিলাম করব না।মনের মানুষ নেই।আজ আমি কাউকে পেয়েছি।উহুম মনের মানুষ না ।মনে ধরেছে।সেখানে আরেক বাধা।সে স্বামী পরিত্যক্তা বললেই চলে।কিছুতেই কিছু সম্ভব না।না আছে সম্ভাবনা।তবুও দেখি রাত জেগে যাই।যদি কখনো মেলে।দুঃস্বপ্ন ও যে সত্যি হয়,অসম্ভব ও সম্ভব হয়।

নিজের সাথে নিজ আলাপনে ব্যস্ত নীল।এর মধ্যে আরেকবার তার ফোনের বাতি জ্বলে উঠলো।

-উহ!এখন আবার কে?মানুষ বলে ব্যাচেলার লাইফ সব চেয়ে আনন্দের।আর গার্ল ফ্রেন্ড না থাকলে তো হলোই।কেউ বিরক্ত করার নেই।আমি বেচারা অদ্ভুত কপাল পোড়া প্রাণী।আমার গার্ল ফ্রেন্ড নেই,কিন্তু কাজ নামক গার্ল ফ্রেন্ড এর অভাব নেই।আমার খোঁজ নেওয়ার লোক নেই তাতে কি?অমুক তমুক কোম্পানির লোকের হ্যান ত্যান প্রজেক্ট এর ফোনের অভাব নেই।আহা কি কষ্ট।

নিজের মনে হাজারো কষ্ট নিয়ে নীল ফোন হাতে নিল।ততক্ষণে কল কেটে গেছে।কল লিস্ট চেক করে দেখে মাহির ফোন করেছে।নীল এক লাফে উঠে বসলো শোয়া থেকে।

-ওহ নো!মাহির স্যার!

নীল নিজে কল করতে যাবে তার আগেই মাহির আবার কল করলো।নীল সাথে সাথে রিসিভ করলো।

-আসসালামু আলাইকুম স্যার।স্যার আসলে হয়েছে কি আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।ও সরি।না ঘুমাইনি।সবে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম।চোখ দুটো একটু এটে আসছিল।স্যার এজন্য ফোন ধরতে দেরি হয়েছে।

নীল এক দমে সম্পূর্ণ কথা গুলো বলে ফেললো।ওপাশ থেকে মাহির উওর দিলো,

-ওয়ালাইকুম আসসালাম।রিল্যাক্স নীল।এতো দ্রুত বলার কি আছে?আমি কি তোর কাছে কৈফিয়ত চেয়েছি?

নীল একটু দম নিয়ে বললো,

-না স্যার সেটা তো আপনি কখনো ই নেননি।
-তাহলে?এতো সিরিয়াস হতে হবে না নীল।
-স্যার আপনি কি কোনো দরকারে ফোন করেছিলেন?
-হুম।তোমাকে যেই বাজারের লিস্ট দিয়েছিলাম আজ মনে আছে ?
-হ্যাঁ স্যার।সকাল সকাল ই সব পৌছে যাবে আপনার ওখানে।
-এটাই জানার ছিল।তুই ঘুমা তাহলে।আমিও না।এতো রাতে তোকে ফোন দিলাম।
-স্যার সমস্যা নেই।আমি তো জেগেই ছিলাম।
-আচ্ছা এখন ঘুমা।কাল ও আমি অফিসে যাব না।কাল ইলা আর আলিশা কে নিয়ে বের হব।তুই আলিশার ঐ টিচারকে সকাল সকাল পাঠিয়ে দিস।আর কাল ডাক্তার কেও বলিস যেন অনেকক্ষণ ধরে মিলা আপার চেকাপ করান।
-আচ্ছা স্যার।
-আল্লাহ হাফেজ।
-আল্লাহ হাফেজ।

নীল ফোন কেটে দিয়ে বালিশের পাশে ফোন রেখে দিয়ে চোখ বুজলো।

মাহির ফোন রেখে দিয়ে পাশে তাকিয়ে দেখে ইলা তার অনেক কাছেই চলে এসেছে।এটা নতুন না।ইলা রাতে ঘুমের মধ্যে যেন বিছানায় যুদ্ধ করে।হাত পা ছুড়তেই থাকে।মাহির প্রতিবার ইলাকে বুকের ভেতর টেনে নেয়।ইলা জানেও না সে প্রতি রাতে মাহিরের বুকে ঘুমায়। এতোটাই গভীর ঘুম ইলার।আজ ও ব্যতিক্রম না।মাহির ইলার কপালে চুমু দিয়ে ইলাকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে নিল।ইলা ও মাহিরকে পেয়ে শুরশুর করে ঘুমের ভেতর জড়িয়ে ধরলো।

৮৮

-দেখুন মিস আপনি আমার মেয়েকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?
-ম্যাম আলিশাকে তো স্কুলে ভর্তি করতে হবে।ওর ছবি লাগবে।কতদিন হয়ে গেল।আপনি চিন্তা করবেন না।মাহির সাহেব এমনি এমনি আমাকে ওকে নিয়ে যেতে দেবেন না।বাইরে গার্ড আছে।

মিলা মানতেই পারছে না।একে তো আলিশার নতুন মিস উনি।আজকাল তো যা অবস্থা নিজের মা বাবাকেই মানুষ বিশ্বাস করতে ভয় পায়।সেটা তো বাদ।কথায় আছে না জীবনের কোনো বিশ্বাস নেই।না বলে চলে যায়।আর দাঁত সেও সুযোগ পেলে গালে কামড় দেওয়ার চেষ্টা করে।

মিলার ভাবনার মাঝেই শায়লা বেগম বলে উঠলেন,

-মিলা চিন্তা করার তো কিছুই নেই।এখানে আছি।ভেতরে রান্না করে খাওয়া ছাড়া আর কিছুই করা লাগে না আমাদের।ছোটো জামাই এর গাড়ি ওকে নিয়ে যাবে তাতে সমস্যা কি? আর আজ ওর জন্মদিন।ও মন খারাপ করে আছে।নিজেও তো একটু ডেকে মেয়েটাকে আদর করলিনা।বাইরে গেলে ছোটো বাচ্চা যদি মনটা ভালো হয়।
-রাখো তোমার জন্মদিন।ওই তো আমার আরেক কাটা।বাপের জ্বালিয়েছে।এখন মেয়ে।যত্তসব।

মিলা আলিশার টিচারের দিকে তাকালো।

-দেখুন মিস মুক্তা আমার মেয়েকে ভরসা করে আপনার সাথে পাঠাচ্ছি।তাড়াতাড়ি আসবেন।
-আচ্ছা ম্যাম আপনি চিন্তা করবেন না।আলিশা কোথায়?

শায়লা বেগম মুক্তা কে অন্য ঘর দেখিয়ে দিলেন।

-ও বোধ হয় জামা পড়ছে।আপনি ও ঘরে যান।
-আচ্ছা।

৮৯

সকাল থেকে এতো এতো রান্না।ইলা হিমশিম খাচ্ছে।মাহির ইশতিয়াক যদিও তাকে সাহায্য করছে।ইলা আজ অনেক খুশি ।মাহির তাকে কথা দিয়েছে আলিশাকে সে আজ এ বাড়িতে আনবে।অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে ইলা।রান্নার ফাঁকে ফাঁকে সদর দরজা খুলে একটু বাইরে উকি দিচ্ছে একটু পর পর।মাহির বিষয়গুলো বেশ লক্ষ্য করছে।মাহিরের নিজের ও খুব ভালো লাগছে ইলাকে খুশি দেখে।সে তো এটাই চায় সব সময়।

বাইরে গাড়ির হর্ন এর আওয়াজ।ইলা চুলা বন্ধ করে ছুট দিল দরজার দিকে।

ইলার আগেই মাহির দরজা খুলে দাড়িয়ে আছে।একটা ছোট হাত মাহির নিজের হাতে ধরে রেখেছে।খুশিতে কেঁদেই দিল ইলা।মাহিরের পাশে আলিশা দাঁড়ানো।

-আলিশা।

ইলা দৌড়ে গিয়ে আলিশাকে জাপটে ধরলো।আলিশা ও মামোনি বলে কেঁদেই দিল ইলাকে জড়িয়ে।

-মামোনি মামোনি তুমি কি আমাকে ভুলে গেছো?তুমি একটুও ভালো বাসো না আমাকে।তোমার একটু ও মনে পড়ে না আমার কথা।

ইলা মাথা উঠিয়ে আলিশার চোখ মুছে দিল।কোলে তুলে নিল আলিশাকে।আলিশার গালে মুখে চুমু খেল ইলা।আলিশাকে সোফায় নিয়ে গিয়ে বসালো।

-Happy Birthday my আলু পাখি।
-Thank you.তোমার মনে আছে?
-ভুলবো কেন?আমার ছোট্ট মা টার জন্মদিন আজ।

ইলা আবার ও আলিশাকে মন ভরে চুমু খাচ্ছে।কতদিন পর ইলা দেখছে আলিশা কে।মেয়েদের ক্ষেত্রে এটা প্রায় ই ঘটে।নিজে মা হওয়ার আগেই তারা মা হয়ে যায় বোনের সন্তানের।

মাহির পেছন থেকে একটু শব্দ করে কাশি দিল।ইলা আলিশাকে ছেড়ে পেছনের দিকে ঘুরলো।

মাহির বলে উঠলো,

-আমাকে তো সবাই ভুলেই গেছে।
-আপনি এদিকে আসুন ।

মাহির এগিয়ে গেল আলিশা কে কোলে তুলে নিল।

-Happy Birthday মামোনি।
-Thank you.মামোনি এই আংকেল টা কে?

আলিশা ইলার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো।মাহির ও ইলার দিকে তাকালো।সে ও জানতে চায় কি উওর দেয় ইলা।

-আলু পাখি তুমি বলতে না আমার একটা লাল টুকটুকে বর পুতুলের সাথে বিয়ে দেবে।এই সেই বর পুতুল।
-এই আংকেল টা?
-হুম।
-কিন্ত মামোনি তোমাকে তো আমি বউ পুতুলের মতো সাজতে দেখিনি।একটা বড় গাড়িও আসেনি তোমাকে নিতে।
-মা সব সময় বউ সাজতে হয় নাকি?আমিও সেজেছিলাম।তোমাকে ছবি দেখাব।
-চলো চলো আমি ছবি দেখব।

ইলা মাহিরের কোল থেকে নেমে আলিশার দিকে ছুট দিল।

৯০

ফোন হাতে নিয়ে বসে আছে নিবিড়।অনেক চেষ্টার পর সে আশার আলো দেখতে পেয়েছে।

একটু আগেই অনুর বাবা তাকে ফোন করেছিল।একে তো অফিসের কাজ তার পর অনুর চিন্তা।নিবিড় তো শুরু তে ই কয়েকটা গালিও দিয়েছিল তাকে।কিন্তু পরে সে যা শুনলো তাতে পারলে রমজান সাহেব কে নিয়ে মাথায় তুলে নাচতো সে।

আজ আরিয়ান অনুর গ্রামে গিয়েছিল।তার স্কুল থেকে তার সার্টিফিকেট নিয়ে অনুর সেই প্রতিবেশী বান্ধবীর বাড়ির খোঁজে বেড়িয়েছিল।অবশেষে তাকে পেয়েও যায় সে।তার থেকে অনুর কাগজ পত্র যা ছিল নিয়ে আবার ঢাকাতে ফিরে যায় সে।

কথা বাতাসের আগে ছোটে কথায় আছে।রমজান সাহেবের কানেও ঠিক এভাবেই কথাটা যায়।তিনি নিশ্চিত যে অনু ঢাকাতে ই আছে তাও একটা পুলিশের কাছে।এক মুহূর্ত দেরি না করে নিবিড়কেই খবর দেন তিনি।

-অনু রানি অনেক কষ্ট দিয়েছো।এবার দেখো কি করি আমি।তোমাকে পাই একবার।তোমার ছাল ছাড়িয়ে তাতে লবণ মরিচের গুঁড়া ঢালব তবেই আমার শান্তি।

চলবে————-

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here