লাবণ্যর সংসার পর্ব -১৭

#লাবণ্যর_সংসার
#পর্ব_17
#কৃ_ষ্ণ_ক_লি

সকাল থেকেই আজ আকাশের মুখ ভার , ঝিরঝির বৃষ্টির সাথে মাঝে মাঝে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বিছানার এক কোণে বসে অশ্রুপাত করছে মেঘলা। বেশি কিছু চায়নি ও শুধু চেয়েছিলো ভালোবাসার মানুষটার সাথে সংসার করতে। কিন্তু সেটা ভাগ্যে ছিলো না তো। ওর পোড়াকাপালে সেই সুখ কোথায়! তা নাহলে কি নিবিড়ের জায়গায় অভ্র নামক মানুষটাকে স্বামী হিসাবে পেতে হয়!

ভেবেছিলো লাবণ্য চলে গেলে নিবিড় ও কে বিয়ে করবে। ও কে স্বীকৃতি দিয়ে নিজের স্ত্রী বানাবে। কিন্তু গতকাল অভ্রের ফোন কলে ওর সব স্বপ্ন ধ্বংস করে দেয়। অবশ্য এতে ওর মার অবদান বিশেষ বড়ো।

গতকালের ঘটনা,,,,
লাবণ্যর চলে যাওয়াতে মেঘলাই সব থেকে বেশী খুশি হয়। মনে মনে অনেক ধন্যবাদ জানায় লাবণ্যকে। আজ লাবণ্য ও কে পুনরায় ওর সবকিছু ফিরিয়ে দিয়েছে। সেই খুশিতে ও নিজেকে তৈরী করে নববধূর সাজে। আয়নায় দাঁড়িয়ে নিজের সাজ দেখে গুনগুনিয়ে গেয়ে উঠে,,

Saj dhaj ke main zara ban than ke
Baan chalaaungi nainan ke
Aainaa zara nihaar loon
Khud apni nazar utaar loon
Ke main to saj gayi re sajna ke liye
Main to saj gayi re sajna ke liye
Main to saj gayi re sajna ke liye
Main to saj gayi re sajna ke liye
Main to saj gayi re sajna ke liye.

খিলখিলিয়ে হেসে উঠে মেঘলা। ও একদম রেডি , লাবণ্যর থেকেও বধূর সাজ ও কে আরও বেশী ভালো লাগছে। তাই নিবিড় ও কে ফেরাতেই পারবে না। আজকেই হবে নিবিড় আর ওর বিয়ে।

মেঘলা শাড়ির কুঁচি ধরে নিয়ে দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসে ড্রয়িং রুমে। নিবিড় সোফায় নিজের মাথায় হাত রেখে বসে আছে। মনে তার উল্টো পাল্টা ভাবনা – চিন্তা… প্রথমত লাবণ্য ভুল কিছু করে বসবে না তো! দ্বিতীয়ত ওর কোনও ক্ষতি হবে না তো! তৃতীয়ত মেয়েটা কোথায় গেলো! কোথায় খুঁজবে ও কে!

—“ নিবিড় ভাইয়া দেখো আমি বউ সেজে তৈরী। আমায় বিয়ে করবে তো এবার তুমি। আমি লাবণ্যর থেকেও অনেক ভালো বউ হয়ে দেখাবো তোমায়। বিয়ে করোনা আমায়। ”

নিবিড় নিস্তব্ধ হয়ে থাকে , মূলত এই মুহুর্তে ও লাবণ্যর চিন্তায় মগ্ন। মেঘলার সব কথাগুলোই ওর মাথার ওপর দিয়ে গেলো। নিবিড় শুধু ফ্যালফ্যাল মেঘলা মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। এমনিতেই বাড়ির সবার লাবণ্যর চিন্তায় পাগল প্রায় অবস্থা। তার ওপর মেয়ের এমন কান্ড – কারখানা দেখে রুমানিয়া বেগমের অপ্রীতিকর অবস্থা। ভাগ্যিস ভাইয়া – ভাবী ভালো বলে এখনো পর্যন্ত ওদের এই বাড়িতে রেখেছে। তা নাহলে ছেলের সংসার ভাঙ্গছে এমন মেয়েকে কেউ বাড়িতে রাখে! মেঘলাকে দেখে রুমানিয়া বেগমের রাগটা প্রখর হয়। মেয়ের হাত ধরে টান দিয়ে সরিয়ে নিয়ে আসে নিবিড়ের কাছ থেকে। মেয়ের গালে তিন চারটা থাপ্পড় মেরে দেয়। শিউলি বেগম বাঁধা দেওয়ার জন্য হাত তুলে বারণ করতে গেলেও থেমে যায়। আসলেই মেয়েটার শাসন প্রয়োজন। সঠিক সময় সবাই যদি শাসন করতো তাহলে হয়তো এমন দিন দেখতে হতো না আজ।

—-“ আজ তোর জন্য , তোর জন্যই এমন অবস্থা। লাবণ্য চলে গেছে শুধু মাত্র তোর জন্য। আর কি বিয়ে বিয়ে করছিস হ্যা। তুই এতো বড়ো হয়ে গিয়েছিস যে আমাদের কথা শুনবি না। তুই নিবিড়কেই বিয়ে করার জন্য এতো উতলা কেনোও। ভালোবাসিস তাই না , তুই ভুলবিনা নিবিড়কেই মনে রাখবি। কিন্তু আমি মা হয়ে চুপ করে থাকবো না আর এসব কিছুও সহ্য করবো না। তুই যাতে লাবণ্য ও নিবিড়ের সংসারে নাক গলাতে না পারিস , আর ওদের সম্পর্ক আর নষ্ট করতে না পারিস তার ব্যবস্থাও আমি করবো। ”

মেঘলা রুমানিয়া বেগমের হাত দুটো ধরে চিৎকার করে কেঁদে বলে,,,

—-“ মা.. মা গো তুমি কি করবে , তুমি নিবিড়ের সাথে আমাকে বিয়ে দিয়ে দাও। আর লাবণ্য তো কখনোই আসবে না , ও তো ছেড়ে চলেই গেছে। আমাকে সবটা ফিরিয়ে দিয়ে গেছে। তোমরা কেনোও আমাদের এক হতে বাঁধা দিচ্ছ! ”

পুনরায় রুমানিয়া বেগম মেয়ের গালে থাপ্পড় মারেন। দ্বিতীয় থাপ্পড় মারার জন্য হাত তুলতে গেলেই উনি থেমে যান। নিবিড়ের ফোনে একটা কল আসে। কল করে ওর বন্ধু অভ্র। এমনিতেই মন মেজাজ ভালো না থাকায় কথা বলতে কারুর সাথেই ইচ্ছা করছে না। কিন্তু অভ্র ওর প্রাণের বন্ধু ও কে তো সবটাই জানাতে হবে। কল রিসিভ করতেই ওপর পাশ থেকে বলে উঠে লাবণ্যর খোঁজ। নিবিড় একছুটে দ্রুত বের হয়ে যায় মেঘলা বা কেউ কিছু বোঝার আগেই।

মেঘলার পাগলামি আরও বেড়ে যায়। নিবিড়ের পিছনে পিছনে মেঘলা ছুটতে গেলেই রুমানিয়া বেগম খপ করে মেয়ের হাতটা ধরে ফেলে।

—“ তুমি আর কোনও কিছুতেই সমস্যার সৃষ্টি করবে না মেঘলা হাত জোড় করছি। ”

তারপর মেঘলাকে একটা রুমের মধ্যে বন্ধ করে রাখে ওর মা। ও দরজা ধাক্কা দেয় অনেকবার কেউ খোলে না।

তখন ঘড়িতে রাত নয়টা মেঘলার রুমের দরজা খোলা হয়। মেঘলা একটা আশার আলো খুঁজে পায়। ভাবে হয়তো নিবিড় এসেছে তাই দরজা খুলেছে। মেঘলা চোখের পানি মুছে হাসিমুখে দরজার কাছে গিয়ে অনেকটাই অবাক হয়ে যায়। নিবিড়ের জায়গায় ওর বন্ধু অভ্র!

কিছু বুঝে উঠার আগেই মেঘলাকে হাত ধরে টেনে নিয়ে যায় অভ্র। মেঘলা ছাড়ানোর চেষ্টা করে নিজের হাতটা। চিৎকার করে , মা – মামা – মামীকে
ডেকেও কাউকে পাশে পায় না। অভ্র জোর করে ও কে কাজী অফিসে নিয়ে যায়। অভ্রের পিছুপিছু বাড়ির সবাই চলে আসে। একপ্রকার জোর করেই মেঘলাকে অভ্র বিয়ে করে নেয়। মেঘলার হাজার আকুতি – মিনতি কেউ শোনে না।

বর্তমানে,,,
হঠাৎ চোখে পানি পড়ায় মেঘলা কেঁপে উঠে ভাবনার জগৎ থেকে বের হয়ে আসে। অভ্র মেঘলার দিকে একটা তোয়ালে ছুড়ে দেয়।

—-“ সারারাত তো কান্না করেছো। নিজেও ঘুমাওনি আর আমাকেও ঘুমাতে দাওনি। এবার অন্তত একটু বিশ্রাম নাও। ফ্রেশ হয়ে এসো, রেডি হও। গেস্টরা এবার আসতে চলেছে। আফটার অল আজ আমাদের রিসেপশন। আমার দাদীও আসছে তোমায় দেখতে। উনি এখন থেকে এখানেই থাকবে। আমি এয়ারপোর্ট যাচ্ছি দাদীকে আনতে।”

মেঘলা কিছু বলার আগেই অভ্র গাড়ির চাবি নিয়ে বের হয়ে যায়। মেঘলা থম মেরে পুনরায় বিছানায় বসে পড়ে।

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মাথা আঁচড়িয়ে চোখে হালকা করে কাজল টেনে নেয় লাবণ্য। নিবিড় কোথা থেকে এসে লাবণ্যর
চুলটা খোঁপা করে বেলী ফুলের মালা পরিয়ে দেয়।
লাবণ্য চুলে হাত দিয়ে দেখে নিবিড় বেশ ভালো ভাবেই ওর চুলের খোঁপাটা করে দিয়েছে। লাবণ্য অবাক হয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয় নিবিড়ের দিকে ,,,

—“ আপনি খোঁপা করতে পারেন? ”

নিবিড় প্রতিত্তরে হেসে বলে,,,

—“ পারি তো! শাড়ির কুঁচি ধরে দেওয়া , শাড়ি পড়িয়ে দেওয়া সব পারি। এখন আমি তোমাকে শাড়ি পড়িয়ে নিজের হাতে সাজাবো। ”

লাবণ্য অবাক হয়ে নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে থাকে। মানুষটার সমস্ত কথাই যেনো ওর মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে।

চলবে… ..

(লেখায় কোনও ভুল ত্রুটি থাকলে ক্ষমা করবেন 🙏)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here