#লেডি_ডন
#লেখক_আকাশ_মাহমুদ
#পর্ব_৭
–জাদুগর ছবি গুলো ব্যাগ থেকে বের করে দিলো।ছবি গুলো হাতে নিয়ে দেখতেই কলিজা মোচড় দিয়ে উঠলো!আল্লাহ এই ছবির মানুষ গুলা তো আমার পরিচিত!এরা তো মায়ার বডিগার্ড!যাদের আমি মেরেছিলাম!কিন্তু কি করে সম্ভব এটা!এক দিকে মায়ার বডিগার্ড,অন্যদিকে তারা নাকি জাদুগরের ছেলেদেরকেও মেরেছে!
জাদুগর ভালো করে দেখো তাদের?এরাই কি তোমার ছেলেদেরকে মেরেছে?কারন এদের আমি চিনি!
–হ্যাঁ আকাশ ভাই,আমি শিউর,এরাই আমার ছেলেদেরকে মেরেছে!
–জাদুগরের কথা শুনে মাথা পুরো হেটে গেলো!
নাহ,এটা হতে পারে না।আর জাদুগরের কথা যদি সত্যি হয়,তাহলে মায়ার সাথেও এর কোনো সম্পর্ক আছে!
ওকেহ আমি বিষয়টা দেখছি।
তারপর সেখান থেকে চলে এলাম।বাসায় রওনা হয়েছি,আজ তো কলেজ যাওয়া হবে না আর!তখনি প্রান্ত ফোন দিয়ে বললো…
–দোস্ত,মায়া তোর খোঁজ করেছে।সে এখনো বাসায় যায়নি তোর জন্য,আমায় ও যেতে দিচ্ছে না।বলছে তুই না আসলে সে বাসায় যাবে না,আর আমাকেও যেতে দিবে না।তুই প্লিজ যেখানেই আছিস,তাড়াতাড়ি কলেজে আয়।
–প্রান্তর মুখে এসব শুনে টেনশনে পড়ে গেলাম!মেয়েটা নাকি আমার জন্য পাগলামো করছে!যদিও মায়াকে আমি ভালোবাসি না,তবে যে আমায় ভালোবাসে,তাকে তো অবহেলা করা যায় না।তাই বাসায় না গিয়ে সোজা কলেজে চলে গেলাম!মায়া আমাকে দেখতে পেয়েই দৌড়ে এসে আমায় ঝাপটে ধরলো!
–এই তুমি সারাদিন কই ছিলা?
আর আজ কলেজে আসো নি কেনো?কান্না করতে করতে!
–কাজের জন্য কলেজে আসিনি।কিন্তু তুমি কান্না করছো কেনো?
–আমার খুব কষ্ট হয়েছে!ইচ্ছে করছিলো তুমি যেখানেই আছো,তোমার কাছে ছুটে চলে যাই।
–মায়া তুমি কি পাগল হয়ে গেছো?
আর আমার জন্য কষ্ট কেনো হবে তোমার?
–আকাশ তুমি কি বুঝো না?তোমায় যে আমি খুব বেশি ভালোবাসি!তোমায় ছাড়া থাকতে আমার কষ্ট হয়!
–মায়া হয়তোবা এটা তোমার আবেগ!যেই মেয়েটা দুইদিন আগে আমার রক্ত খাওয়ার জন্য পাগল হয়ে ছিলো,সে আজ আমায় ছাড়া কিছু বুঝে না,এটা কেমন যেনো রহস্য জনক আমার কাছে!
–আকাশ তুমি আমার ভালোবাসা নিয়ে সন্দেহ করছো?
–নাহ,তা করছি না।তবে কৌতূহল থেকে জিগ্যেস করলাম!
–বিশ্বাস করো আকাশ,আমি তোমায় নিজের জীবন থেকেও বেশি ভালোবাসি।প্লিজ আমায় একটু বুঝার ট্রাই করো!
–মায়া আমায় সময় দাও।তোমাকে নিয়ে পরে ভেবে দেখবো।এখন অনেক দূর থেকে এসেছি,মাথা ব্যথা করছে আমার।
–আচ্ছা তুমি ঘরে গিয়ে রেস্ট নাও।
–প্রান্তকে নিয়ে ঘরে চলে আসলাম।
মাথাটা প্রচুর ব্যথা করছিলো।মাথাব্যথা নিয়ে কোনোমতে দিন টা পাড় করলাম।
পরেরদিন সকাল বেলা…
কলেজে ক্লাস করছিলাম,তখনি একজন এসে আমায় ডেকে বলে..
–এই ক্লাসে আকাশ কে?তার সাথে চিপ মিনিস্টার দেখা করতে এসেছে!
–লোকটার মুখে এমন কথা শুনে,পুরো ক্লাসের সবাই হা করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে!আমি নিজেও অবাক!হটাৎ তিনি আমায় খোঁজ করছেন কেনো!
লোকটার সাথে বাহিরে গেলাম।বাহিরে গিয়ে দেখি চিপ মিনিস্টার বসে আছে চেয়ারে।আমাকে দেখতে পেয়ে এসে আমার সাথে কোলাকুলি করলো।
–আকাশ ভাই আপনার কাছে একটা সাহায্যের জন্য এসেছিলাম।
–কি সাহায্য?
–ভাই বিপরীত পার্টি আমাকে পদ থেকে নামানোর জন্য উঠে পড়ে লেগেছে!আমার নামে বিভিন্ন মিথ্যা ঘটনা রটাচ্ছে!ভাই প্লিজ আপনি আমাকে উদ্ধার করেন।
–মিনিস্টার সাহেব,আপনি ভালো করেই জানেন,যে আমি সব কিছু ছেড়ে দিয়েছি!কিন্তু তার পরেও আপনি আমার কাছে এসেছেন?
–ভাই,আমি আপনার পায়ে পড়ি!আপনি আমায় উদ্ধার করেন।আপনি ছাড়া কোনো বাপের বেটা নাই যে আমায় উদ্ধার করবে।প্লিজ আকাশ ভাই,আপনি আমায় বাঁচান!
–আরে আরেহ,এত অনুরোধ করার দরকার নেই।সেদিন আমায় কোলে করে হসপিটালে নিয়ে গিয়েছিলেন।সেই খাতিরে আপনার এই উপকার টা আমি করবো।যে করেছে,তার নামটা সেলিম নিশ্চই?
–হ্যাঁ ভাই..
–ওকেহ কাজ হয়ে যাবে।
বাসায় গিয়ে শান্তিতে ঘুমান।
–ভাই ধন্যবাদ।
–চিপ মিনিস্টার চলে গেলো।নাহ ক্লাসটা করে নেই আগে।ওসব নিয়ে পরেও ভাবা যাবে।ক্লাসের দিকে যেতে ধরবো,তখনি দেখি মায়া আমার দিকে আসছে!
–আকাশ মিনিস্টার সাহেব তোমার সাথে কেনো দেখা করতে এসেছেন?
–এমনিতেই কাজ ছিলো উনার।
–ওহ আচ্ছা,চলো ক্লাসে যাবো।আমি ভেবেছি আজ ক্লাসের পর তোমার সাথে কিছু সময় কাটাবো।কিন্তু তুমি যদি কোথাও চলে যাও,তাই তোমায় পাহারা দিতে এসেছিলাম।
–তুমি সত্যিই পাগল হয়ে গেছো মায়া!
–তোমার জন্য আরকি!তাও তো তুমি বুঝো না!
–কোনো কথা না বলে ক্লাসে চলে আসলাম।
মায়া সারাটা ক্লাস আমার হাত ধরেই বসে ছিলো।শুধু হাত বললে ভুল হবে,মাঝে মাঝে কাঁধে হেলান দিচ্ছিলো,আবার মাঝে মাঝে হাত দিয়ে পেঁচিয়ে ধরছিলো,মানে এক কথায় এটা তার বাসা,আর আমি তার হাসবেন্ড!
ক্লাস শেষে মায়া আমায় জোর করে গাছ তলায় নিয়ে গেলো।তার জোড়াজুড়িতে তাকো নিয়ে বসতে হলো গাছ তলায়!
–আকাশ প্লিজ তুমি আমায় একটু হলেও ভালোবাসো!
–মায়া,জোরজবরদস্তিতে ভালোবাসা হয়না।আর তোমায় ভালোবাসবো,তেমন কোনো শক্ত ইস্যু আমি খুঁজে পাচ্ছিনা।তবে তোমায় তো আমি সময় দিয়েছি,তুমি সেই সময়ের মধ্যে পারলে আমায় নিজের করে নাও।এখন আমি উঠলাম,আমার কাজ আছে।
মায়াকে রেখে বাসায় চলে এলাম।
বাসায় এসে খেয়ে দেয়ে রুমে শুয়ে আছি।তখনি চিপ মিনিস্টারের কথা মনে পড়লো।সাথে সাথে জাফরকে ফোন দিয়ে কি করতে হবে,সেটা বলে দিলাম।আর এটাও বললাম,যে আমি রাতে সেখানে যাবো।
মাগরিবের পর জায়গা মতন চলে গেলাম।যেখানে সেলিমকে বেঁধে রাখা হয়েছে।সেখানে গিয়ে দেখি জাফর চেয়ার নিয়ে বসে আছে।সে আমাকে দেখতে পেয়েই দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরলো!
–ভাই আজ কতদিন পর আপনাকে দেখতে পেলাম।
–হ্যাঁ রে আজ আমিও অনেকদিন পর তোকে দেখেছি।
আচ্ছা মাল টা কই?
–ভাই ঐ রুমে বেঁধে রেখেছি,কিসব আবোল তাবোল বকছে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে!আপনি একটু দেখেন তো..
–সেলিমকে যেই রুমে বেঁধে রাখা হয়েছে,সেই রুমে গেলাম।মুখে রুমাল পেঁচিয়ে নিলাম।সেলিমের সামনে যেতেই..
–এই তোরা আমায় কেনো বেঁধে রেখেছিস?
–তুই নাকি চিপ মিনিস্টারের নামে কি সব উল্টা পাল্টা ঘটনা রটাচ্ছিস?
–হ্যাঁ রটাচ্ছি,কারন ওর চেয়ার আমার চাই।কিন্তু তোদের কেনো এত দরকার?
–আমাদের কোনো দরকার নেই,শুধু তোকে মেরে নদিতে ভাসিয়ে দিব।
–এই ছেলে,তুই কিন্তু জানিস না আমি কে!আমি কোন জলের মাছ সেটা তোরা জীবনেও কল্পনা করতে পারবি না।আমার ছেলেপেলেরা আসলে তোদের বারোটা বাজিয়ে দেবে।ভালোয় ভালোয় বলছি আমায় ছেড়ে দে!
–আরেহ বেটা ধামকি দিচ্ছিস তুই আমাকে?
তোর ধামকির পরোয়া আমি করি না।তুই যদি জলের মাছ হস,তাহলে আমি তো নীল নদের রক্তচোষা তিমি!
–তুই তিমি না নীল নদের কীটপতঙ্গ,সেটা তোদের কাজ কর্ম দেখেই বুঝা যাচ্ছে।
–সেলিম,মুখ সামনে কথা বলিস! না হয় তো এমন ভাবে তোকে মারবো,করব পর্যন্ত তোর লাশ গোছে নিতে ভয় পাবে।তোর লাশ দেখে মাটিও চিৎকার করে আর্তনাদ করবে,যে এই লাশ অন্য কোনো জমিনে দাফন করো।এমন বিভৎস লাশ গ্রহণ করার ক্ষমতা আমাদের নেই!
–হা,হা,হাসাইলি ভাই!তাহলে তুই হয়তো চিনিস না,যে আমি সেলিম কোন বাঘের বাচ্চা!আমি তোর কি হালত করতে পারি,সেটা তুই সময়ে টের পেয়ে যাবি।এখন দেখি তোর পরিচয় দে?
–মুখ থেকে মাক্সটা খুলে ফেললাম।
মাক্স খুলতেই দেখি সেলিম আমার দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে!কিরে বাঘের বাচ্চা,এভাবে হা করে কি দেখছিস এখন?
–ভাই আপনি!আমার তো বিশ্বাস এই হচ্ছে না।
লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবহানাকা ইন্নি কুনতুম মিনাজ জোয়ালিমিন।হে-আল্লাহ,আমি কার সাথে পাঙ্গা নিয়ে বসলাম।এবার তো আমার আর রক্ষা নাই!
সেলিম আকাশকে দেখে ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে চেয়ার নিয়ে উল্টে পড়ে যায়!
–বিশ্বাস হবে,যখন আমি আমার রূপে ফিরে আসবো!
সেলিম পাটিতে পড়েই আকাশের কাছে মাফ চাচ্ছে!
–ভাই প্লিজ আপনি আমায় ক্ষমা করে দেন।আমি আপনার পায়ে পড়ি।এই রকমের ভুল আমি আর কোনোদিন করবো না।বিশ্বাস করেন,আমি আপনাকে চিনতে পারি নাই।
–তোদের হাজার বার বলে এসেছিলাম,যে কেউ পাওয়ারের জন্য বেঈমানী করবি না।কিন্তু তুই সেটাই করলি!
–ভাই আমি আপনার পায়ে পড়ি।আমি আর কোনোদিন এই রকমের ভুল করবো না।এই বারের মতন ক্ষমা করে দেন।
–আমি তোকে জমের বাড়ি পাঠাতে এসেছি।তবে মিনিস্টার যদি আমায় মারতে মানা করে,তাহলে তুই মাফ পেয়ে যাবি।সাথে সাথে চিপ মিনিস্টারকে ফোন দিলাম।মাল টাকে কি চিরতরে শেষ করে দিব?
তবে সে কিন্তু মাফ চেয়েছে!
–ভাই তাহলে শাসিয়ে ছেড়ে দেন।
–ওকেহ,ফোন রেখে দিলাম।যাহ তোর জীবন বেঁচে গেলো।এরপর আর কোনোদিন যেনো এরূপ করতে না শুনি।
–ভাই কোনোদিন শুনবেন না।
–সেলিমকে ছেড়ে দিয়ে রাতেই বাসায় চলে এলাম।
বাসায় এসে খেয়ে দেয়ে শুয়ে আছি।যাক চিপ মিনিস্টারেরে ঝামেলা টা মিটে গেলো,কিন্তু জাদুগরের ঝামেলাটা মিটানো এখনো বাকি।আবার ফোন দিলাম জাফরকে..
জাফর,ড্রাগনে টিমের লিডার কে,সেটা খুঁজে বের কর তো।তারা নাকি জাদুগরের ছেলেদেরকে মেরেছে!
–ভাই,আমাকে দুই-তিনদিন সময় দিন।আমি তাদের টিমের পুরো লিষ্ট আপনার কাছে পৌঁছে দিব।
–ওকেহ,ফোন রেখে দিয়ে শুয়ে আছি।
হটাৎ এই রাতের বেলায় ঘুম ভেঙ্গে গেলো ভাংচুরের শব্দ শুনে!
বিছানা ছেড়ে উঠে পরলাম।হটাৎ এতরাতে ভাংচুরের শব্দ কোথা থেকে আসছে!রুম ছেড়ে বের হয়ে দেখি
প্রান্তর মা,আর তার ছোটবোন রক্তাক্ত অবস্থায় ফ্লোরে পড়ে আছে!কে জানি তাদের গলা কেটে ফ্লোরের উপরে ফেলে রেখে চলে গেছে!কিন্তু প্রান্ত কোথাও নাই!এই দৃশ্য দেখে যেনো পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেলো আমার!ওদের এই অবস্থা দেখে সজোরে চিৎকার দিয়ে কান্না করে উঠলাম!
চলবে…?