#লেডি_ডন
#লেখক_আকাশ_মাহমুদ
#পর্ব_৮

–রুম ছেড়ে বের হয়ে দেখি,প্রান্তর মা,আর তার ছোটবোন রক্তাক্ত অবস্থায় ফ্লোরে পড়ে আছে!কে জানি তাদের গলা কেটে ফ্লোরের উপরে ফেলে রেখে চলে গেছে!কিন্তু প্রান্ত কোথাও নাই!এই দৃশ্য দেখে যেনো পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেলো আমার!ওদের এই অবস্থা দেখে সজোড়ে চিৎকার দিয়ে কান্না করে উঠলাম!

প্রান্তর মা আর ছোটবোন এখনো মাটির উপরে পড়ে আছে।আমার যেনো বিশ্বাস এই হচ্ছে না,যে আমার সামনে দুইটা মানুষ মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে!নাহ,এটা হয়তো আমার চোখের ভ্রম!উঠে গিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলাম।গিয়ে চোখে মুখে পানির ছিটকে দিয়ে আবার ফিরে আসলাম।তখনো এসে দেখি সেই দু’টো মানুষ ফ্লোরে পড়ে আছে!এবার আমি সত্যিই ক্লিয়ার যে তাদের সাথে কিছু একটা হয়েছে।ওদের এই অবস্থা দেখে কলিজাটা যেনো ছিড়ে যাচ্ছিলো আমার!কারন জীবনে মা,বাবাকে চোখে দেখিনি।হয়তোবা আমার জন্ম কোনো পতিতালয়ে হয়েছিলো! না হয় হয়তোবা কারোর নষ্টামির ফল আমি!কারোর চাহিদায় আমায় দুনিয়ায় আসতে হয়েছিলো,কিন্তু তারা আমায় ডাস্টবিনে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে চলে গেছে!তবে বাস্তবতা কি,সেটা আমার জানা নেই।মা,বাবার ভালোবাসা কোনোদিন পাইনি।কিন্তু একটা পরিবার পেয়েছিলাম বহু কষ্টে!তাদেরকেই আজ আমার থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছে খোদা!ভিতর থেকে যেনো দুকড়ে কান্না আসছে।নাহ,ওদের কিছু হতে দেওয়া যাবে না।

জাফরকে ফোন দিয়ে তাড়াতাড়ি গাড়ি আনতে বললাম।তারপর তাদের দুজনকে নিয়ে হসপিটালে চলে গেলাম।কেবিনের বাহিরে দাঁড়িয়ে চোখের অশ্রু ঝড়াচ্ছি!আল্লাহ তুমি ওদেরকে আমার থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যেও না!কাঁদতে কাঁদতে সেখানেই ঘুমিয়ে গেলাম।

সকাল বেলা…
কারোর ডাকে ঘুম ভাংলো।চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি মায়া!অবাক চোখে মায়ার দিকে তাকিয়ে আছি!

–আকাশ কি ভাবে হলো এমনটা?
কে করেছে উনাদের সাথে এইরূপ আচরণ?

–কোনো কথা না বলে মায়াকে জড়িয়ে ধরে ফুফিয়ে কান্না করে দিলাম!মায়া আমি জানিনা ওদের এই অবস্থা কে করেছে!কিন্তু বিশ্বাস করো ওদের কিছু হলে আমি নিজেকে ঠিক রাখতে পারবো না!

–আরেহ পাগল কিছু হবে হা উনাদের!
আমি তো খবর পেয়েই সাথে সাথে হসপিটালে চলে আসলাম।

–তোমায় কে খবর দিয়েছে?

–আরেহ তোমায় সকাল থেকে ফোন করেছি কতবার তুমি দেখো তো?

–মায়ার কথায় পকেট থেকে ফোন বের করে দেখি সতেরো টা মিসকল!আসলে দৌড়াদৌড়িতে ফোনের দিকে খেয়াল করিনি!

–তোমায় ফোনে না পেয়ে তোমার বাসায় গিয়েছিলাম।
পরে সেখানে গিয়ে জানতে পারি,রাতের বেলায় নাকি তোমার ঘরে হামলা হয়েছে।আর বাসার মানুষ আহত,তুমি তাদের নিয়ে হসপিটালে এসেছো।তাই আমিও সোজা হসপিটালে এসে পড়ি।

–ওহ আচ্ছা,কিন্তু মায়া এখন আমার কি হবে?
আর তাছাড়া কাল রাত থেকে প্রান্তর ও কোনো খবর পাচ্ছি না।সে লাপাত্তা..

–আরেহ পাগল টেনশন করে না।আমি আছি তো তোমার পাশে।দেখবে ওদের কিচ্ছু হবে না।আর প্রান্তর ও খোঁজ বের করে ফেলবো আমি!

–মায়ার কথা শুনে ইচ্ছে করছে ওকে জড়িয়ে ধরে কয়েক হাজার চুমু খাই!মেয়েটা হয়তো সত্যি আমায় ভালোবাসে।আর ভালো না বাসলে এভাবে ছুটে আসলো কেনো!তবে হা,তাড়াহুড়ো করে কোনো ডিসিশন নেওয়া যাবে না।ওকে আগে আরো ভালো করে বুঝে নেই।পরেই ভালোবাসবো।

আজ তিনদিন,
প্রান্তর মা,আর তার ছোটবোন,কারোর এই জ্ঞান ফিরেনি।তবে ডক্টর কিছুটা আশ্বাস দিয়েছে আমায়,যে তাদের কিছু হবে না।আজ তিনদিন না আছে কোনো খানাপিনা,না আছে কিছু।হসপিটালেই পড়ে আছি সারাটাদিন!অবাক করা বিষয়,মায়া আমার সাথে আজ তিনদিন ধরে হসপিটালে!সে আমার ছেড়ে এক মুহূর্তের জন্যেও যায়নি।তাকে অনেকবার বলেছি চলে যেতে।
কিন্তু তার একটাই কথা..

তোমায় এই হালতে রেখে আমি যেতে পারবো না।

–কি আর করা,তবে সত্যিই এই তিনদিনে মায়া আমার মনে জায়গা করে নিয়েছে!চতুর্থ দিনের সময় প্রান্তর বোনের জ্ঞান ফিরে আসে।বিকাল বেলায় তার আম্মুর ও জ্ঞনা ফিরে আসে।খোদার কাছে নামাজ পড়ে শুকরিয়া আদায় করলাম।প্রান্তর আম্মু আমার জড়িয়ে ধরে কেনে দিলো!

–বাবা তুমি যদি সময় মতন না আসতে,তাহলে কোনোদিন ও আমরা আর দুনিয়ার মুখ দেখতে পেতাম না।

–এমন করে বলবেব না প্লিজ।আমার কর্তব্য এটা।বহু কষ্টের বিনিময়ে একটা পরিবার পেয়েছি,তাদের তো আমি হারাতে পারবো না।কিন্তু আপনাদের সাথে এমনটা কে করলো?

তখনি প্রান্তর মা কেঁদে দিলো!
বাবা কি ভাবে বলবো তোমায়,আমার যে বলার মতন কোনো ভাষা বাকি নেই!

–আচ্ছা,আপনার এখন কিছু বলতে হবে না।আমি নিজেই বের করে নিব।আর আপনি এখন রেস্ট করেন।
তখনি কলেজ থেকে ফোন আসে!

–আকাশ মাহমুদ,আজ একটা ক্লাস টেস্ট আছে,তুমি যেখানেই আছো কলেজে এসো!

–গলার আওয়াজ শুনে বুঝতে বাকি রইলো না যে স্যার ফোন করেছে!তাড়াতাড়ি করে মায়াকে নিয়ে কলেজে চলে গেলাম!

–পরিক্ষাটা দিয়ে আবার হসপিটালে চলে আসলাম।
মায়া,সেই শুরু থেকে আমার পিছন ছাড়ছে না।আমি রুগীর সেবাযত্ন করছি,সে আমার সেবাযত্ন করছে!আজ পঁচিশদিন পর প্রান্তর মা আর তার ছোটবোনকে ঘরে নিয়ে আসলাম।তারা এখন মোটামুটি সুস্থ!কিন্তু আমি অসুস্থ হয়ে পাড়লাম।আমার অসুস্থতায় মায়া আমার সেবাযত্ন করায় কোনো কমতি রাখেনি।এসব দেখে যেনো পুরোপুরি ডুবে গেলাম মায়ার ভালোবাসায়।

মায়া তোমায় একটা কথা বলার ছিলো..

–হ্যাঁ,বলো?

–আমার টাকা পয়সা বাড়ি গাড়ি কিছুই নেই।
আমি যদি তোমায় আমাকে বিয়ে করতে বলি,তারপরেও কি তুমি আমায় বিয়ে করবে?

–হ্যাঁ,একশো বার করবো।আমার টাকা পয়সা,বাড়ি, গাড়ি কিচ্ছু চাইনা।কিন্তু তুমি আমায় পুরো লোক সমাজের সামনে স্ত্রীর অধিকার টুকু দিতে হবে!

–মানে কি বলছো বুঝলাম না!

–তুমি আমায় পুরো কলেজের সামনে স্ত্রীরের অধিকার দিতে হবে।পুরো কলেজের সামনে সজোড়ে চিৎকার করে বলতে হবে তুমি আমায় নিজের স্ত্রী রূপে গ্রহণ করেছো!

–মায়া এসবের মানে কি?
বিয়েটা তোমায় আমি করবো,কিন্তু সেসব কথা লোক সমাজে কেনো এলান করতে হবে?

–কারন আমি চাই পুরো কলেজ জানুক,যে আমি তোমার ভবিষ্যৎ স্ত্রী!তোমার দিকে যেনো এরপর আর কোনো মেয়ে চোখ তুলে তাকাতে না পারে!

–মায়া এমনটা করা কি খুব প্রয়োজন?

–হ্যাঁ,কারন পুরো কলেজের মেয়েরা তোমার দিকে ঝুকে আছে।আমি তোমায় হারাতে চাইনা।তাই তুমি সেটা নিজেই লোক সমাজে এলান করো,তেমনটা আমি চাই!

–আচ্ছা যাও আগামীকাল পুরো কলেজকে জানিয়ে তোমায় গ্রহণ করবো।পুরো কলেজ জানবে মায়া আকাশের!এবার খুশি তো?

মায়া খুশিতে আকাশকে জড়িয়ে ধরে অনেকগুলো চুমু বসিয়ে দেয় তার গালে!

–হ্যাঁ,আমি অনেক খুশি!
আর চলো আজ আমাকে নিয়ে ঘুরতে যাবে!

–আচ্ছা চলো..
মনে মনে অনেক খুশি লাগছে,যে মায়া আমাকে এতটাই ভালোবাসে,সে আমায় কখনো হারাতে চায় না।পুরো কলেজে যেনো কেউ আর আমার দিকে সেরূপ দৃষ্টিতে না তাকায়।তাই সে নিজের অধিকার লোক সমাজকে সাক্ষী রেখে বুঝে নিতে চায়!

মায়াকে নিয়ে ঘুরতে বের হলাম।
ইশ আজ প্রান্ত যদি সামনে থাকতো,তাহলে সে অনেক খুশি হতো।এখনো পর্যন্ত প্রান্তর কোনো খোঁজ আমি পাইনি!

–এই,এতো কি ভাবছো?

–প্রান্তর কথা ভাবছিলাম।সে হটাৎ করে কোথায় উধাও হয়ে গেলো!

–আরেহ চিন্তা করিও না।দেখবে সে ঠিক চলে আসবে।

–তাই যেনো হয়।

–এবার আমার দিকে ফোকাস করো।বাকি সমস্ত চিন্তা বাদ দাও।

–আচ্ছা,
সেদিনটা মায়াকে নিয়ে অনেকটা ঘুরাঘুরি করলাম।
নিজের ভিতরে কেমন যেনো একটা ফিল হচ্ছে!আজ বাদে কাল মায়া আমার নিজের হবে,ভাবতেই কেমন যেনো খুশি লাগছে!

সারাদিন ঘুরাঘুরি করে রাতের বেলায় বাসায় চলে আসলাম।এসে খেয়ে দেয়ে শুয়ে আছি।তখনি জাফরের কথা মনে পড়লো।সে আমায় বলেছিলো ড্রাগন টিমের তথ্য দিবে।তাকে ফোন করলাম।

–কিরে,তুই না আমায় ড্রাগন টিমের পুরো তথ্য দেওয়ার কথা ছিলো?

–সে তো আমি কবেই আপানাকে মেইল করে দিয়েছি।কিন্তু আপনি হয়তো মেইল চেক করেন নি!

–জাফরের কথা শুনে অনেকটা অবাক হয়ে গেলাম!
আচ্ছা দাঁড়া আমি চেক করছি।চেক করে দেখি জাফর আমাকে অনেক আগেই মেইল করেছে।সরি রে,আমি আসলে বেশ টেনশনে ছিলাম,তাই চেক করতে সময় পাইনি।

–ভাই কোনো ব্যাপার না,সব তথ্য দিয়েছি,কিন্তু বাকি লিডার যে আছে,তার কোনো তথ্য জোগাড় করতে পারিনি।তবে এটুকু জেনেছি,সে একটা মেয়ে।

–জাফরের কথা শুনে মাথার টনক নড়ে উঠলো!
কি বলিস রে?একটা মেয়ে ড্রাগনের মেইন লিডার?

–হ্যাঁ ভাই,তবে আমার মনে হচ্ছে না,যে শুধু মেয়ে লিডার!তার পিছনেও হয়তো কেউ আছে!

–ওকেহ ঠিক আছে,বাকিটা আমি দেখে নিচ্ছি!
কিন্তু শোন,আগামীকাল কলেজে আসবি।কারন তোর ভাবিকে সবার সামনে বিয়ের প্রপোজাল দিতে বলেছে!

–ওকেহ ভাই…

–ওকেহ এখন রাখলাম।
জাফরের সাথে কথা বলে ফোন রেখে দিলাম।
সমস্ত কিছুর হিসাব নিকাশ করলাম,যে কে হতে পারে।জীবনে তো কম নেতা খেতাকে দেখিনি!বহু বড় বড় নেতা,খেতা,লিডার,ভক্কর চক্কর বহুকেই দেখেছি,কিন্তু তাদের মাঝে কোনো মেয়েকেই তো এইরূপ দেখিনি!
হয়তোবা সে কোনো নতুন পাবলিক।আমার সাথে তার পালা কখনো পড়েনি।এসব নিয়ে ভাবছিলাম,তখনি মায়া ফোন দিলো…

–এই যে শুনছো?

–হ্যাঁ শুনছি তো বলো?

–কাল কিন্তু লাল গোলাম দিয়ে আমায় বিয়ের প্রপোজাল দিবে!না হয় কিন্তু আমি তোমাকে ফিরিয়ে দিব।

–আচ্ছা বাবা করবো!

–হয়েছে এখন ঘুমাও!এটা বলার জন্যই ফোন করেছিলাম।

–আচ্ছা,তারপর ফোন রেখে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।

সকাল বেলা…
ঘুম থেকে উঠে রেডি হয়ে কলেজে চলে গেলাম।কলেজে যাওয়ার আগে রাস্তা থেকে লাল গোলাপের একটা গুচ্ছ কিনে নিলাম।এটা দিয়ে মায়াকে বিয়ের প্রপোজাল দিব।কলেজে গিয়ে দেখি মায়া আমার আগেই কলেজে এসে গেছে!

–এত সময় লাগে আসতে হ্যাঁ?

–আরেহ ফুল কিনতে একটু দেরি হয়ে গেছে!

–এখন কত কি যে বলনা..
হয়েছে এবার প্রপোজ করো বিয়ের জন্য।

–এই যে সবাই শুনছেন?
যে যেখানে আছেন,সবাই দাঁড়িয়ে যান।সবাই এক মিনিট একটু সময় নিয়ে এদিকে ফোকাস করুন।
মায়া আমি তোমায় খুব ভালোবাসি!আমি তোমার দুই জীবনের সাথী হতে চাই!আমি তোমার সাথে সারা জীবন পাড়ি দিতে চাই!যেই জীবনে শুধু থাকবে ভালোবাসা আর ভালোবাসা!যেই জীবনে থাকবে না কোনো কষ্টের ছিটেফোঁটা!মায়া আই উইল ইউ ম্যারি মি?তুমি কি আমায় বিয়ে করবে?তুমি কি আমায় দেবে সেই অধিকার টুকু?

তখনি পিছন থেকে কেউ একজন এসে আকাশের মাথায় লাঠি দিয়ে সজোড়ে এক বাড়ি মারে!

আকাশ মাগো বলে চিৎকার দিয়ে মাটিতে শুয়ে পড়ে!
চিড়চিড় করে রক্ত পড়ছে মাথা থেকে!আকাশ মাথায় হাত দিয়ে ফিছনে ফিরে দেখে প্রান্ত!

–প্রান্ত তুই?

–হ্যাঁ,আমিই বলে সজোড়ে হাসতে থাকে!

–কিরে জানোয়ারের বাচ্চা,তুই না বলে অনেক বড় হায়েনা?তোর না কেউ কিছু করতে পারবে না?

–আরেহ প্রান্ত তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি!কাকে কি বলছো তুমি?এই কুকুরের বাচ্চা যদি হায়েনা হয়,তাহলে হায়েনাকে কি বলবে তুমি?
এই ছোটলোক তো আমার জুতার ও সমান না,বলে মায়া আকাশের মুখের মধ্যে জুতা ঘোষে দেয়!

–অবাক চোখে তাকিয়ে আছি প্রান্ত আর মায়ার দিকে!
তাদের দুজনকেই যেনো আমার কাছে অপরিচিত লাগছে!হে-আল্লাহ!কাকে ভালোবাসলাম আমি!যে কিনা ছলনাময়ী এক রক্তচোষা…!

চলবে…?

ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার নজরে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here