ল্যাম্পপোস্ট পর্ব -১২

#ল্যাম্পপোস্ট (১২)

ইস্টনের সাথে জরুরি মিটিং এ বসেছে অ্যাড। পিন্সেস হেনরি কে নিয়ে টিরোল প্রদেশ থেকে ভিয়েনা চলে এসেছে আরাজ। আরাজের লোকের সাথে কয়েক জন গ্রপ্তচর লুকিয়ে আছে। তারাই খবর পাঠিয়েছে। হেনরি কে নিয়ে পরিকল্পনা চেপেছে। রাজ বংশ কে পদত্যাগ করিয়ে অস্ট্রিয়া তে নিজের রাজত্ব স্থাপন করবে সে। এই সম্পূর্ন কার্যক্রমের সাথে জড়িত আছে আরাজের ফ্যামিলি। দীর্ঘদিনের প্ল্যান এসব। সমস্ত কথা শুনে অ্যাড চিন্তিত হয়ে বলে
“কিং ওয়েন পদত্যাগ করলে আমরা কিছুই করতে পারব না। আমাদের পরিকল্পনা সাজাতে হবে। সবার আগে পিন্সেস হেনরি কে বের করতে হবে।”

“কিন্তু অ্যাড তুমি তো জানোই অস্ট্রিয়ার সাথে আমাদের সম্পর্ক কখনোই ভালো নয়। তারা সর্বদা আমাদের বিরুদ্ধে। ল্যাম্পপোস্ট এর নামে আন্তজার্তিক মামলা ও করেছে। কারণ হিসেবে বলেছে ল্যাম্পপোস্ট নাকি শান্তির বিরুদ্ধে। শান্তি প্রিয় দেশ সমূহ লিভিং থেকে শুরু করে প তি তালয়ে বাঁধা প্রদান করে না।”

“সেসব অতীত ইস্টন। তুমি তো জানোই আন্তজার্তিক ভাবে ল্যাম্পপোস্ট কে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। কোনো ধর্ম ই লিভিং কে কিংবা প তি তা বৃত্তি কে সমর্থন করে না। সব ধর্মই এসব নিষেধ করেছে।”

মাথা ঝাঁকায় ইস্টন। ছয় বছর দীর্ঘ পরিশ্রম করেছে তারা। দুশতাধিক সদস্য নিয়ে তৈরি করা হয়েছে ল্যাম্পপোস্ট। তবে রীতি নীতি বদলাতে পারে নি এখনো। দম ফেলে ইস্টন। হাতের আঙুলের খেলায় মত্ত অ্যাড। হঠাৎ করেই বুদ্ধি খেলে যায়।
“এরাজ নিকো আর ভিক্টরের সাথে হাত মিলিয়েছে। নিকোর মনে সন্দেহ জাগাতে হবে। এরাজ যে নিজে রাজত্ব হাতাতে চায় সেটাই নিকোর কানে ভালো করে ঢুকিয়ে দিতে হবে। রবার্ট কে বলো গুপ্তচর পাঠাতে। তারা যেন নিকোর কানে কথা টা পৌছে দেয়।”

“ঠিক আছে অ্যাড। তুমি নিজের খেয়াল রেখো। আসছি আমি।”

এক চুমুকে কফি শেষ করে ইস্টন। অ্যাড নিজের অভ্যাস বদলাতে পারে নি। এখনো ওয়াইন এর প্রতি ঝোঁক তার। বোতল থেকে ওয়াইন ঢেলে নেয় সে। বয়াম থেকে সুগার কিউব বের করে মিশিয়ে নেয়। এক নিশ্বাসে ওয়াইন পান করে সে। নেশাক্ত চোখে বলে
“তোমাকে ভালোবাসি বিইভা।”

দুদিন যাবত বাসায় ফিরতে পারে নি অ্যাড। ফোনে খোঁজ নিয়েছে সে। ক্লো জানিয়েছে বিভার শরীর এখন সুস্থ। একটু আগে কল করেছিল বিভা ঘুমিয়ে আছে। আবারো কল করে ছেলেটা। ওপাশ থেকে ক্লো বলে
“গুড ইভনিং স্যার।”

“গুড ইভনিং ক্লো। বিইভা কি এখনো ঘুমিয়ে আছে?”

“নো স্যার। ম্যাম ট্রেরেস এ বসে আ গু ন পোহাচ্ছে।”

“ফোন টা বিইভা কে দাও।”

বিভাকে ফোন দিয়ে চলে যায় ক্লো। বিভা লম্বা করে শ্বাস নেয়।
“কেমন আছ অ্যাড?”

“ভালো আছি। তোমার শরীর কেমন?”

“ভালো। আরাজের থেকে সাবধানে থেকো প্লিজ। তোমার ক্ষতি করার জন্য পাগল হয়ে যাবে শ য় তা ন টা।”

“চিন্তা কোরো না বিইভা। সমস্ত কিছু ঠিক করে দিব। তুমি নিজের খেয়াল রেখো। ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া কোরো।তোমার কি কষ্ট হচ্ছে?”

“কষ্ট হওয়ার মতো কিছু ঘটে নি। আরাজ নিজের কার্য সিদ্ধির জন্য আমাকে ব্যবহার করার চেষ্টা করেছে। নারী শরীরের লোভ সামলাতে পারে নি।”

কথা টা প্রচন্ড আক্রোশে বলে বিভা। ওপাশ থেকে চাঁপা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে। নিজেকে ধাতস্থ করে নিয়ে বিভা বলে
“তুমি নিজের খেয়াল রেখো অ্যাড। আমার ভিনদেশী বন্ধুর ক্ষতি আমি মেনে নিতে পারব না।”

“আচ্ছা খেয়াল রাখব। আর শোনো আমি বিডি তে লোক পাঠিয়েছি তারা তোমার পাসপোর্ট সহ সব একাউন্ট ওপেন করে দিবে। আর তোমার ড্যাড এর খবর ও নিবে।”

“ধন্যবাদ অ্যাড। তোমার কথা সব সময় স্মরণ হবে আমার।”

ফ্লাইট এ করে ভিয়েনা চলে এসেছে অ্যাড আর নোলান। রবার্ট দুদিন আগেই সেখানে এসেছে। সমস্ত প্ল্যান মাফিক ই কাজ চলছে। নিকোর মনে সন্দেহর বীজ বপন হয়ে গেছে। আপাতত আরাজের বিরুদ্ধেই কাজ করবে নিকো। তবু ও রিস্ক নিতে চাচ্ছে না অ্যাড। তাই ভিয়েনা চলে এসেছে। যে বাংলোতে হেনরি কে রাখা হয়েছে সেটা নিকোর বাংলো। নিকোর সাথে সাপে নেউলে সম্পর্ক অ্যাডের। তাই সে সামনে যেতে পারবে না। তবে ইস্টন কে কেউ ই চিনে না। মিররে দৃষ্টি দিয়ে নিজের লুক সেট করছে ইস্টন। নোলান ল্যাপটপ নিয়ে ব্যস্ত।
“ইস্টন তোমাকে নিকোর ভালো বন্ধু সাজতে হবে। পিন্সেস হেনরি কে ছাড়িয়ে নিয়ে আমাদের লোকের সাথে বের করে দিবে। পিন্সেস হেনরি কে সাথে নিয়ে নোলান ফিরে যাবে ইন্সব্রুকে। কিং ওয়েন এর সাথে চুক্তি স্বাক্ষরিত করবে। বিষয় টা ইন্টারন্যাশনাল ভাবে দেখা হবে। পার্সোনাল ভাবে যেন কোনো পদক্ষেপ না নেওয়া হয়। আর এরাজ কে ইন্টারন্যাশনাল পুলিশ এরেস্ট করে নিবে। তবে একটা কথা পিন্সেস হেনরি কে নিয়ে নোলান যতক্ষন পর্যন্ত ইন্সব্রুকে পৌছায় ততক্ষন কোনো কাজ করা হবে না। পিন্সেস হেনরি বিপদ মুক্ত হলেই আমরা কাজ শুরু করব।”

“ওকে। আমি তাহলে বেরিয়ে যাচ্ছি।”

ইস্টন চলে যায়। নোলান বলে
“রবার্ট এর সাথে কথা হয়েছে আমার। প্রিন্সেস হেনরি কে টর্চার করেছে এরাজ। প্রচন্ড আক্রোশে চাবুকের আ ঘা ত করেছে।”

কথাটা শুনেই চোখ বন্ধ করে নেয় অ্যাড। পিন্সেস হেনরির কথা ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে। ভালোবেসে সে ও ঠকে গেল।

রাতের আঁধারে বের হয় অ্যাড আর নোলান। নিকোর বিশাল বাংলোর কাছে এসে ফোন করে ইস্টন কে। কল রিসিভ করে ইস্টন বলে
“পিন্সেস হেনরি কে বের করতে পারছি না আমি। সিকিউরিটি প্রচন্ড হার্ড।”

“হোয়াট। স্টিটেম আনলক হয় নি?”

“হয়েছে তবে তার সময় সীমা কয়েক সেকেন্ড মাত্র।”

“ওহ শীট। আমি আসছি তুমি পিন্সেস হেনরি কে অজ্ঞান করে ফেলো। এমনি তেই ভয় পেয়ে আছে। কেউ দেখে ফেললে চিৎকার চেঁচামেচি করবে।”

“ওকে। বাট অ্যাড পিন্সেস হেনরির অবস্থা খুব ভালো নয়। বার বার ঝিমুচ্ছে। মনে হচ্ছে ড্রা গ পুশ করা হয়েছে।”

“আমি নোলান কে দিয়ে হসপিটাল বুক করাচ্ছি। তুমি নিজের খেয়াল রেখো।”

“ঠিক আছে। তুমি ও সাবধানে এসো। গার্ডেন এর শেষ মাথায় একটা চেরি গাছ দেখতে পাবে। সেটার মধ্যে একটা সবুজ বাটন রয়েছে। গাছ টা আর্টিফিশিয়াল হলে ও ইলেকট্রনিক ইনডিকেটর লাগানো আছে। তাই লক্ষ্য রাখবে গাছের একটা শিকরে ও যেন স্পর্শ না লাগে। শুধু মাত্র বাটন এ ক্লিক করেই পেছনের গেট দিয়ে চলে আসবে। তোমার হাতে মাত্র তিন মিনিট সময় থাকবে। তাই কাজ টা দ্রুত করতে হবে।”

“ওকে আমি দেখছি।”

ইস্টন এর কথা মতো পা টিপে টিপে বাংলোর পেছনে চলে আসে অ্যাড। পুরো বাংলোয় লাইট এর ব্যবহার খুব ই কম। মনে হচ্ছে বাংলো টা ভুতুড়ে মুভি করার জন্য তৈরি করা হয়েছে। বাগানের শেষ মাথা তে চেরি গাছ দেখতে পায় ছেলেটা। ইস্টন এর কথা মতো সমস্ত কাজ সম্পূর্ন করে ছুট লাগায়। টাইম কাউন্ট করা শুরু হয়ে গেছে। ১৮০ সেকেন্ড এর মধ্য বাংলোয় প্রবেশ করতে হবে। এমনকি ৪৮ খানা সিঁড়ি ও পার করতে হবে। নিজের সর্বোচ্চ স্পিড দিয়ে দৌড়াচ্ছে অ্যাড। বাংলোয় প্রবেশ করেই দম ফেলে। সঙ্গে সঙ্গে বাংলোর প্রবেশ পথ বন্ধ হয়ে যায়। এক সেকেন্ড এর হেরফের হলে সর্বনাশ হয়ে যেত!

নোলান কে ফোন করল অ্যাড। নোলানের কণ্ঠটা ভীষণ উদ্বিগ্ন।
“তুই কি ঠিক ঠাক পৌছেছিস?”

“হ্যাঁ অল ইজ ওয়েল। শোন পিন্সেস হেনরি কে সাথে করে সামনের গেট দিয়ে যাওয়া যাবে না। আমরা পেছনের গেটের কাছে এসে তোকে ম্যাসেজ করে দিব। তুই চেরি গাছের বাটন এ ক্লিক করে সোজা গাড়ি রেডি করবি। তিন মিনিটের মধ্য আমাদের বাংলো থেকে বের হতে হবে। তারপর ই রেড এলার্ট বেজে উঠবে। আমরা বেরিয়ে যাব। হসপিটালে পৌছে দিয়ে আবার বাংলোয় ফিরে আসব। ততক্ষনে পুলিশরা তাদের কাজ করে ফেলবে।”

“ঠিক আছে। সাবধানে আছিস।”

নোলানের কল কেটে ইস্টনের কাছে যায় অ্যাড। ইস্টন কিছুটা স্বস্তি বোধ করছে। তার ভয় হচ্ছিল।
“পিন্সেস হেনরি কে কোলে তুলে নাও। আমি সব ব্যবস্থা করে দিয়েছি। কোনো ভুল করা যাবে না ইস্টন।”

“চিন্তা কোরো না অ্যাড। আমি সব খেয়াল রাখব।”

পিন্সেস হেনরি কে কোলে তুলে হাঁটা লাগায় ইস্টন। ততক্ষণে সামনে আগায় অ্যাড। পুরো বাংলোয় লাইট এর ব্যবহার খুব ই কম হওয়ায় অন্ধকার পথে পথ চলতে অসুবিধা হচ্ছে। তবু অ্যাড থেমে নেই। ছোট ছোট কদমে আগাচ্ছে সে। পেছনের গেটের কাছে এসেই নোলান কে ম্যাসেজ পাঠিয়ে দেয়। দরজা খুলে যেতেই ছুট লাগায় ইস্টন আর অ্যাড। নোলান গাড়ি রেডি করে নিয়েছে। পিন্সেস হেনরি কে গাড়ি তে উঠাতেই রেড এলার্ট বেজে যায়। পুরো বাংলোয় হৈ চৈ লেগে যায়।
“পিন্সেস হেনরি কে নিয়ে হসপিটালে যা তুই। আমাদের সামলাতে হবে সব। লেট করিস না।”

অ্যাডের কথা মতো নোলান ফুল স্পিডে ড্রাইভ করে চলে যাচ্ছে। ওরা দৃষ্টির অগোচরে যেতেই অ্যাড পুলিশ কে ম্যাসেজ করে দেয়। সবাই বাংলোয় ঘেরাও করেই ছিল। বন্দুকের গু লি র শব্দ শোনা যায় শুধু। অ্যাড দেখতে পায় আরাজ পালাচ্ছে। রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে যায় ছেলেটার। ছুটে যায় আরাজের কাছে। শক্ত পোক্ত হাতের সাহায্য নাক বরাবর পাঞ্চ করে। লুটিয়ে পড়ে আরাজ। ইস্টন অ্যাড কে সামলায়।
“ইন্টারন্যাশনাল ভাবে সামলানো হচ্ছে। বেশি আ ঘা ত কোরো না অ্যাড। নিজেকে সংযত করো।”

“একে তো সেদিন ই শু ট করতে চেয়েছিলাম। ভাগ্য ভালো থাকায় বেঁচে গেল। জা নো য়া র একটা।”

এক দলা থু থু ফেলে অ্যাড। আরাজ কে পুলিশ এরেস্ট করছে। সাথে এরেস্ট করে নেয় নিকো আর ভিক্টর কে ও। ন্যাশনাল ভাবে কাজ সম্পন্ন হলে নিকো আর ভিক্টর এর শাস্তি কম হওয়ার সম্ভবনা থেকে যেত। এখন আর সেটা নেই। ওদের এক মাত্র শাস্তি হবে মৃ ত্যুদ ণ্ড।

চলবে….
কলমে ~ ফাতেমা তুজ নৌশি

আগামী পর্বেই সমাপ্তি। আর কাল থেকে আসতে চলেছে নতুন একটা গল্প।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here