শরতের শুভ্র মেঘের ভেলায় পর্ব- ১২

#শরতের_শুভ্র_মেঘের_ভেলায়(১২)
Sadia afrin nishi
____________________________

সাক্ষরকে দেখে খুবই চিন্তিত মনে হচ্ছে।আমি না হয় সামনাসামনি দেখে ভয় পেয়েছি কিন্তু ওনার আবার কী হলো।আমি ভ্রুঁ কুঁচকে কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবো ঠিক তখনই সাক্ষর হনহনিয়ে তাড়াতাড়ি বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেলেন।আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। সাক্ষর এমন কেন করল আর গেলই বা কোথায়?

শরীরটা ভালো লাগছে না। এসব চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে একটু ঘুমনোর চেষ্টা করছি।শোয়ার একটু পরেই দুচোখের পাতায় ঘুমপরীরা ভর করল।বিকেলে বসে বসে টিভি দেখছিলাম। হঠাৎই চোখে পড়ে খবরের নিউজে সকালের ঘটে যাওয়া ঘটনাটির কথা বলছে। কিন্তু অদ্ভুতভাবে সেই লাশটা নাকি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।পোস্টমর্টেমের জন্য ক্লিনিকের মর্গে রাখা হয়েছিল লাশটি। সেখান থেকেই গায়েব হয়ে গেছে। কে বা কারা লাশটি গায়েব করল তা এখনো পর্যন্ত জানা যায় নি। এই নিয়ে তদন্ত চলছে।এই নিউজ দেখার পর সকালের ঘটনাটি আবারও মনে পড়ে গেল।একা বাড়িতে আছি।সাক্ষরের তো কোনো দেখাই নেই।টিভিটা অফ করে সোফার এক কোণে গুটিশুটি মেরে শুয়ে পরলাম।ক্রমাগত সেই বিভৎস মুখশ্রী মনের কোণে হানা দিচ্ছে।

রাত আটটা বাজতেই সাক্ষর চলে এলো।আজ তাকে দেখে আমার প্রচন্ড রাগ উঠছে।বাড়িতে যে বউ আছে সে খেয়াল কী তার আছে?সে শুধু আসে আর যায়। বউয়ের কোনো খেয়ালই রাখেনা।আমাকে মুখ ফুলিয়ে বসে থাকতে দেখে সাক্ষর বলল,,

_”কী হয়েছে এমন বেলুনের মতো মুখ ফুলিয়ে বসে আছো কেন?”

সাক্ষরের এমন কথায় অভিমানটা আরও জোরদার হলো আমার।আমি কিছু না বলে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে বসে রইলাম। হঠাৎ পেছন থেকে কারো উষ্ণ স্পর্শ পেতেই চমকে উঠলাম আমি।পেছনে তাকিয়ে দেখি সাক্ষর আমার কাঁধে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে। এক অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে আমার। অনুভূতি বলতে অস্বস্তি হচ্ছে খুব। এর আগে দু একবার আমার হাত ধরা ছাড়া উনি কখনো আমাকে টাচ করেনি।আমার যে অস্বস্তি হচ্ছে সেদিকে তার কোনো হেলদোল নেই। সে তো নিজের মতো আমাকে জেড়া করায় ব্যস্ত।

_”কী হলো বলো মুখ ফুলিয়ে বসে আছো কেন। রাগ হয়েছে কী আমার ওপর”

এবার আর আমি চুপ থাকতে পারলাম না। ওনার হাতটা আমার কাঁধ থেকে ঝাড়া মেরে ফেলে দিয়ে উঠে দাড়ালাম। তারপর চোখেমুখে বিরক্তির রেশ ফুটিয়ে বলতে লাগলাম,,

_”আমি কীভাবে থাকব না থাকব তা আপনাকে দেখতে হবে না। আপনি আপনার জীবন নিয়ে পড়ে থাকুন।বাড়িতে যে বউ আছে সে খেয়াল হয়তো আপনার থাকে না। এমন একটা ভাব করেন সবসময় মনে হয় বিয়ে করে আমাকে উদ্ধার করে ফেলেছেন।ধুর ভাল্লাগে না। আপনার সাথে কথা বলার আমার কোনোই ইচ্ছে নেই।”

কথা শেষ করে হনহনিয়ে চলে যাচ্ছিলাম কিন্তু তাতে বাঁধ সাধল সাক্ষর। পেছন থেকে আগত কন্ঠস্বর শুনে দাঁড়িয়ে পরলাম আমি।

_”এই যে মিসেস হারিকেন ওপস সরি সরি মিসেস নিহারিকা।কথা বলার ইচ্ছে নেই তাতেই এই আর যদি ইচ্ছে থাকত তাহলে কী করতে?”

আমার আবার রাগ উঠে গেল মাথায়। চোখ মুখ লাল করে ওনার দিকে তাকাতেই দেখি উনি মিটিমিটি হাসছে। তারমানে উনি আমাকে ইচ্ছে করে রাগাতে চাইছে।আমি কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলাম। এখন ওনার সাথে তর্কে যাওয়া মানে বোকামি। মুখ ফিরিয়ে নিয়ে সোজা ওপরে চলে গেলাম।

একটু পরেই উনি এলেন আমাকে খাবার জন্য ডাকতে। কিন্তু আমি আজকে খাবো না বলে পণ করেছি। আমাকে ইগনোর করার ফল “সাক্ষর আহমেদ” তুমি হারে হারে টের পাবে।কয়েকটা ডাক দিয়েও যখন আমি খেতে উঠলাম না তখন উনি আর আমাকে না ডেকে একা একাই চলে গেলেন।

“ধুর এটা কী হলো কী করতে চাইলাম আর কী হলো? সব প্ল্যান শেষ হয়ে গেল আমার”

রাগে,দুঃখে,অপমানে এবার আমি কান্না জুড়ে দিলাম।শুয়ে শুয়ে নাক টেনে টেনে কাঁদছি।এই লোকটা আসলেই আমাকে একটুও ভালবাসে না,একটুও বোঝে না।কিছুক্ষণ পর সাক্ষর রুমে এলো।আমি ওনার পাঁয়ের শব্দ পেয়ে তাড়াতাড়ি চোখ বুঝে ঘুমের ভান ধরলাম।উনি আমাকে কোনো রুপ ডাক না দিয়েই সোজা টেনে তুলে বসিয়ে দিলেন।আমি সাথে সাথে ধড়ফড়িয়ে চোখ মেললাম।সামনে তাকিয়ে দেখি সাক্ষর আমার সামনে খাবারের প্লেট নিয়ে বসে আছে।এটা দেখে আমার মনের কোথাও একটা হিমশীতল হাওয়া বয়ে যেতে লাগল।এক মুহূর্তে সব রাগ,অভিমান চলে গেল।কিন্তু এতো সহজে তো এ কথা ওনাকে বুঝতে দিলে চলবে না তাই মুখের ভাবমূর্তি আগের ন্যায় বজায় রেখে জোরালো কন্ঠে বললাম,,

_”আমি খাব না”

উনি আমার কথার উত্তরে আর কিছু না এক লোকমা ভাত মেখে আমার মুখের সামনে তুলে ধরলেন।বাবা ছাড়া এভাবে কেউ আমাকে কখনো খাইয়ে দেয়নি।প্রথমে না করতে চাইলেও কোথাও একটা বাঁধা থেকেই গেল।কেন জানি চেয়েও ওনাকে ফেরাতে পারছি না। তাই চুপচাপ ভদ্র মেয়ের মতো ওনার হাত থেকে খাবারটা শেষ করে নিলাম।

—————-

সেদিনের ওই ঘটনার পর সাক্ষর আমাকে আর কলেজে যেতে দেয়নি। বলেছে আরও কিছুদিন কলেজ না যেতে।কিন্তু আমার তো ইম্পর্ট্যান্ট ক্লাস, নোট সব মিস হয়ে যাচ্ছে।তাই মিতালীকে বলেছি আমাদের বাসায় আসতে তাহলে নোটও নিতে পারব সাথে দুই বান্ধবী মিলে জমিয়েও আড্ডা দিতে পারব।

সকালের নাস্তা শেষে বসে বসে ফোন স্ক্রলিং করছি।সাক্ষর আজ বাড়িতেই আছে। হয়তো আমার গতদিনের রাগ করার রেজাল্ট এটা।ফোনের মধ্যে তাকিয়েই কানে এলো কলিংবেলের আওয়াজ। তাড়াতাড়ি করে উঠে দরজা খুলে দিলাম। মিতালী চলে এসেছে। এসেই আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রয়েছে। সে কী কথা তার। কতদিন পর দেখা হলো আমাদের তাই তার বকবকানির ঝুলি খুলে নিয়ে বসেছে আমার সামনে।দু’জনে মিলে জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছি আর নোট তুলছি।এমন সময় সাক্ষর নেমে এলো সিঁড়ি বেয়ে।সাক্ষরের মুখে মাস্ক না থাকায় মিতালী খুব সহজেই তাকে চিনে ফেলল।মিতালী অবাকে চোখে সাক্ষরের দিকে তাকিয়ে আমাকে প্রশ্ন করল,,

_”এটা তো সেই ছেলেটা আমাদের কলেজের। ও তো নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল তাহলে তোর সাথে বিয়ে কীভাবে কী?”

আমি একটা তপ্ত শ্বাস টেনে বললাম,,

_”ওসব তোকে পরে সব বলবো।এখন ঠিকভাবে পরিচিত হয়ে নে”

মিতালী আমার কথা মতো সাক্ষরের সাথে নর্মালি বিহেভ করল।কিন্তু আমি জানি ওর মনেও আমার মতো অনেক প্রশ্ন জমা পরে গেছে।সাক্ষর আর মিতালী খুব সুন্দরভাবে পরিচিত হয়ে নিল। এদের দেখে বোঝাই যায় না যে এদের মধ্যে নতুন পরিচয় হয়েছে।

বারোটা নাগাদ মিতালী চলে গেল।বাড়িতে এখন আমরা দুজন।কিচেন থেকে ঠকঠক শব্দ শুনে সেদিকে হেঁটে গেলাম আমি। ও মা সাক্ষর রান্না করছে।সে কী আদৌও কিছু রাঁধতে পারে?আগে তো জানতাম পারে না তাহলে এখন এসব কী করছে।

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here