শিশিরে ভেজা আলতা পর্ব -৩৪+৩৫

#শিশিরে_ভেজা_আলতা
(২য় খন্ড)
#ফারহানা_আক্তার_রুপকথা

৩৪.
বিয়ে মানেই তো দ্বায়িত্ব! কখনো সেই দ্বায়িত্ব সুখের কখনোবা সেটাই হয় বোঝার মতন। শরতের ক্ষেত্রে সেটা এখন শুধুই অনুভূতিহীন দ্বায়িত্ব৷ সময়ের পরিক্রমায় তা বদল হয়ে কিছু একটা তো হবেই, হওয়ারই কথা। বিনা বার্তায় ঘটে যাওয়া ঘটনাটাও তখনও যেন শরত কোনভাবেই ব্যতিক্রম কিছু উপলব্ধি করতে পারছিলো না। তার উপলব্ধি হলো বাড়িতে ফেরার পর ঘুমাতে যাওয়ার সময়। টুকরো কিছু নিয়ম কানুন পালন করে শিফা চাচী আর নকশি ফুপু মিলে যখন বউকে শরতের ঘরে দিয়ে গেল শরত তখনও জানে না তার জন্য রাতভর কি অপেক্ষা করছে। বেচারা বাড়ি এসেই পাড়া-প্রতিবেশির ভীড়ে অসহ্য হয়ে বাড়ি থেকে বাইরে গিয়েছিল। মোটামুটি গরম আবহাওয়ায় ঝিরঝিরে বাতাসে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে অনেকক্ষণ সে ফোন স্ক্রল করলো৷ কল লগে ভেসে আছে বাইশ মিসড কল সোহার নম্বর থেকে। কিছুটা চিন্তিত হয়ে দ্রুত সে নম্বরে ডায়াল করতেই নম্বর বন্ধ পেলো। বার তিনেক ট্রাই করে না পেয়ে ভাবলো পরে আবার করবে। আগে দু চার দিনে একটা সিগারেট খাওয়ার অভ্যাস হয়ে ছিল এখন তার সেটাও নেই। এদিকে মাথা ভার হয়ে আছে চিন্তায়। মস্তিষ্কের একটা অংশ একেবারে জরাগ্রস্ত হয়ে আছে৷ কি করলে একটু স্বস্তি পাবে বুঝতে পারছে না। রাত সাড়ে নয়টা পর্যন্ত রাস্তার ধারে, বাজারে কাটিয়ে বাড়ি ফিরলো সে। দুপুরে তো ঠিকঠাক খাওয়া হয়নি তাই খিদে টের পেয়ে মায়ের কাছে জানতে চাইলো রান্না হয়েছে কিনা! জয়তুন জানালো চাচী রেঁধেছে সে খানেই খাওয়া-দাওয়া। শরত খেতে গেলে শিফা বলল, নতুন বউ আর তুমি একসাথে খাবা তোমার ঘরে যাও।

কাকীর কথা শুনে শরত চলে গেল নিজের ঘরে। আর সেখানে ঢুকতেই সে বোকা বনে গেল। ঘরের চকচকে নতুন নতুন অবস্থা দেখে ভীষণ অবাক হলো সে। বিছানায় সাদা আর লালের মিশেলে নতুন এক চাদর। তার যতটুকু মনে পড়ে এটা মাস কয়েক আগেই আম্মা কিনেছে। তার কাপড়ের আলনা একদম টিপটপ করে গোছানো। শার্ট, প্যান্ট এমনকি লুঙ্গিটাও ভাঁজে ভাঁজে ঝুলিয়ে রাখা। তার ঘরে আয়না বলতে মেলা থেকে কয়েক বছর আগের কেনা বেতের ফ্রেমে ছোট্ট আয়না ছিলো দেয়ালে পেরেকে আটকানো। সেটা এখন নেই সেখানে রাখা শিউলির ঘরের কসমেটিকস বক্সওয়ালা ড্রেসিংটেবিল। উত্তর আর পূর্ব দিকে জানালা আছে দুটো জানালার সামনেই এখন পর্দা লাগিয়েছে। শরতের যতটুকু মনে পড়ে এই পর্দা সে শিউলির বিয়ের বছর কিনে এনেছিলো। পাকা দেয়ালের ঘর তুলে তাতে ড্রিল করেছে শখ করে পর্দা লাগাতে। অথচ এগুলো নষ্ট হয়ে যাবে বলে বলে আম্মা সারা বছর এগুলো আলমারিতে তুলে রাখতো। একমাত্র মেহমান আসবে শুনলেই তিনি সেসব নামিয়ে লাগাতেন ঘরের সাময়িক সজ্জার জন্য। মেহমান চলে গেলেই আবার তা তুলে রাখতেন আগের মত। আজ সেসব কেন নামলো ভেবে পায় না শরত। পুরো ঘরে একবার ভালো করে তাকাতেই বুঝলো মেয়েটি এখন আম্মার ঘরে। শরত যখন এক নজরে ঘর দেখছে তখন পেছন থেকে ভেসে এলো কান্নার আওয়াজ। এদিকেই আসছে মেয়েটা বুঝতে পেরে সে দরজায় তাকালো।

নকশি কাঁধে হাত রেখে রূপসাকে নিয়ে ঘরে ঢুকলো। তারই পেছনে শিফা আর তার হাতে ঢাকনাসহ বোল।

“কি হয়েছে ফুপুআম্মা কাঁদছে কেন সে?”

” বাচ্চা মেয়ে নতুন জায়গা তো তাই কাঁদছে। তারওপর বাড়ি থেকে একজনকেও সাথে দেয়নি ভয় তো একটু পাচ্ছেই মেয়েটা।” নকশি কথাটা বলতে বলতে রূপসাকে বসিয়ে দিলো খাটে। জয়তুনের দেওয়া সেই শাড়িটি এখন আর তার পরনে নেই। তা বদলে সুতির এক ছাপা শাড়ি গায়ে জড়ানো। হাত, মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে সে মুখ হাত ধুয়ে এসেছে। শিফা হাতের বোল বিছানায় রেখে আবার গেল তরকারির বাটিগুলো নিয়ে আসতে। নকশি মেয়েটার কান্না থামানোর চেষ্টায় এটা ওটা বলে চলছে অনবরত। কিন্তু এ কি কান্ড মেয়েটা যে কিছুতেই থামছে না। শিফা সব খাবার গুছিয়ে দিয়ে শরতকে বলল, “খাওয়া শেষ কর আগে মেয়েটা নাকি দুপুরেও খায়নি।”

শরত মাথা নেড়ে ‘হ্যাঁ’ জানাতেি শিফা নকশিকে নিয়ে চলে গেল। চাচী, ফুপু যেতেই শরত মনোযোগ দিলো মেয়েটির দিকে। এই প্রথম তাকালো সে মেয়েটির মুখের দিকে, শ্যামরঙা লম্বাটে মুখ। ছোট কপাল, নাকটা খুব সরু আর চিকন। কান্নার দমকে ঠোঁট ফুলিয়ে রেখেছে। শরত এবার এগিয়ে বিছানায় গিয়ে বসলো। বার দুয়েক গলা খাকাড়িও দিলো কিন্তু তাতে মেয়েটির মাঝে কোন প্রতিক্রিয়াই হলো না। সে কেঁদেই চলছে অনবরত যেন কেউ তাকে কান্নার জন্যই এখানে বসিয়ে দিয়েছে। বাধ্য হয়েই এবার শরত কথা বলল, “তোমার নামটা কি যেন?”

প্রশ্ন শুনে রূপসা এবার মাথা তুলে সেকেন্ড কয়েক শরতকে দেখলো৷ চোখ নামিয়ে ফের শুরু করলো কান্না। এ কি অবস্থা ভেবে পায় না শরত।

“আচ্ছা শোনো, কান্না থামাও”

কোন হেলদোল হলো না মেয়েটির মাঝে তাই শরত তার দিকে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিলো। ধরলো না রূপসা সেই গ্লাস উল্টো বসা জায়গা থেকে আরেকটু পিছিয়ে গেল। জীবনে এত বড় বিপদে তো শরত কখনোই পড়েনি এ কি মুসিবত হলো তার!

“তুমি কি কান্না করেই যাবে? আচ্ছা শুনো, তোমার কি আমাকে অপছন্দ হয়েছে? মানে আমি দেখতে খুব বেশিই কি কুৎসিত! দেখো বিয়ে তো হয়েই গেছে এখন তো কিছু করার নেই তাই না? আমি জানি তোমার হয়তো আমাকে বুড়ো বুড়ো লাগছে কিন্তু এটা তো স্বাভাবিক। এমন বয়সের পার্থ্যকেও বিয়ে হয় তো!”

শরত বলেই গেল একের পর এক কিন্তু মেয়েটি তো কিছুতেই থামছে না। এবার শরতের নিজেরই কান্না পেয়ে যাচ্ছে। এ কেমন মেয়ে, বর পছন্দ না হলে বলুক সরাসরি অবশ্য বললেইবা কি এখন করার কিছুই নেই। পেটে যা খিদে ছিল তা উবে গেল এই কান্নাকাটির ঠেলায়। রাতও দশটা বেজে গেছে সবাই ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে নিশ্চয়ই! বিছানায় থাকা খাবার-দাবার তুলে সব তার কাঠের টেবিলটাতে রেখে দিলো৷ রূপসা বসার জায়গা পরিবর্তন করলো অথচ কান্নাকাটিতে কোন পরিবর্তন এলো না৷ মাথা চেপে ধরে শরত গিয়ে বসলো চেয়ারে। ঘরের দরজা এখন লাগিয়ে এসেছে সে৷ মেয়েটার এই গুনগুনিয়ে কান্নাতে তার মাথা ধরে যাচ্ছে। সে মনে মনে নিজেকে গালিও দিলো কয়েকদফা৷ জীবনে নারীঘটিত ভুল কি সব তার জীবনেই ঘটার ছিল! প্রথমে অলি তারপর সোহা এখন রূপসা। শরতের সহজ সরল জীবনটাতে এত গরল এগুলোর শেষ কোথায়? রাতভর শরত কিছু সময় এটা সেটা বলে বলে কখনো থামাতে চেষ্টা করলো কখনো হাল ছেড়ে দিল৷ রূপসাও কখনো গুনগুনিয়ে কখনোবা ফুপিয়ে কাঁদলো তবুও কান্নায় সমাপ্তি টানলো না৷ রাত পেরিয়ে ভোরের পূর্ব মুহূর্তে এসে শরত যখন নামাজের জন্য বের হবে তখন দেখলো ঘুমে ঢুলুঢুলু রূপসা বসা অবস্থায় কাঁধ এলিয়ে দিয়েছে খাটের কার্নিশে। আধশোয়া অবস্থায় ঘাড় বেঁকে আছে দেখে শরতের মনে হলো একটু ঠিক করে দেয় কিন্তু ইতস্ততায় গায়ে হাত দিয়ে ইচ্ছে হলো না৷ সে খুব কাছ থেকে খেয়াল করলো রূপসাকে। ‘এত পিচ্চি মেয়েটা!’ কেমন আজব এক অনুভূতি জেঁকে ধরলো শরতকে। সত্যিই মেয়েটি খুব ছোট বয়স কত হবে ষোলো নাকি সতেরো? নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করে বসলো শরত।

আজ আলতার পরীক্ষা আছে তাই সকালে ওঠেই প্রথমে বই হাতে বসলো৷ এক ঘন্টা পড়াশোনা তারপর গোসলে ঢুকবে এবং কলেজের জন্য তৈরি হয়ে তবেই নাশতা করে বের হবে। রুটিন তার এমনটাই হয় পরীক্ষার সময়৷ কিন্তু তার পরিকল্পিত নিয়মে ব্যঘাত ঘটিয়ে ফোনটা বেজে উঠলো। সে ব্যস্ত হাতে ফোন ধরতেই নকশি বলল, “পরীক্ষার পড়া সব কমপ্লিট হয়েছে?”

“হ্যাঁ আম্মা।”

” নাশতা করেছিস?”

“না”

“আগে গোসল সেরে নাশতা কর তারপর তৈরি হয়ে পড়। তাড়াহুড়ো করবি না, প্রেশারও নেওয়ার দরকার নেই একদম৷ ওহ তুই নাকি এখন আর আসবি না বলেছিস তোর মামার কাছে?”

নকশি হঠাৎ মনে পড়লো এমন করে বলল কথাটা৷ নকশি কাল আহসানের সাথে কথা বলতে বলতে জানিয়েছিলো এবার একদম বোর্ড পরীক্ষার পরে বাড়ি ফিরবে। নকশির প্রশ্নে সে জানালো, “মামাকে তো তাই বললাম কিন্তু কাল শরত ভাই বিয়ে করলো ভাবী দেখবো না! আর এমনিতেও আমি এখনও জারিফকে দেখি নাই, কোলে নেই নাই সেজন্যই তো কত কি পরিকল্পনা করলাম আমি পরীক্ষা শেষ হলেই আব্বাকে বলবো নিতে আসতে।”

আলতার মুখে আওলাদের কথা শুনে কিছুটা বিমর্ষ হলো নকশি। সে তো ভেবে রেখেছিলো জহিরকে বলবে সে যেন আলতাকে এসে নিয়ে যায়। কিন্তু আলতা তো তার নিজের বাবাকে বলবে বলে ঠিক করে রেখেছে। লোকের বলে সৎ মা কখনো আপন হয় না নকশির মনে হলো কথাটা শুধু মা নয় বরং সৎ মা,বাবা হয়তো ভাই বোনের ক্ষেত্রেও একই৷ দীর্ঘশ্বাস চেপে নকশি বলল, ঠিক আছে তোর যেটা ভাল মনে হয়। আমাকে জানাস কবে আসবি?

‘আমাকে জানাস কবে আসবি?’ এই এক বাক্যই অপরিণত বুদ্ধির আলতাকে কিছু বুঝিয়ে দিলো। সে তৎক্ষনাৎ নিজের ভুল শুধরে বলল, “আমি ভাবতেছি একা আসা যাওয়াটা শিখব। আম্মা এবার নিজে নিজে আসার চেষ্টা করি?”

“মাথা নষ্ট হয়ে গেছে তোর? এটা কি কাছেপিঠে কোন জায়গা যে বললেই আসতে পারবি একা! তার ওপর শুনিস না চারপাশে মেয়েদের কত বিপদ হইতেছে! কোন দরকার নাই তোর আব্বাকে বলবি আসতে। আর আহসান ভাই, শরত ওরা শুনলে তোর আগে আমাকেই বকবো।”

কঠিন গলায় আলতাকে বকে দিলো নকশি। এ নিয়ে আর কোন কথা হবে না আলতা যেন কিছুতেই একা না আসে সে বিষয়ে কড়া করে সতর্ক করলেন। মা মেয়ে কথাবার্তায় পরিসমাপ্তি টানলো পিচ্চি জারিফের কান্না শুনে। তারপর আলতা গোসল, নাশতা সবই সময়মত শেষ করে কলেজের জন্য বেরিয়ে গেল৷ দুপুর একটা ত্রিশে আলতার পরীক্ষা শেষ সে কলেজ থেকে বের হয়ে হোস্টেলের উদ্দেশ্যে ফিরছিল৷ রিকশায় উঠতে যাবে ঠিক সে মুহূর্তে কোথা থেকে নীরব এসে উপস্থিত হলো। আলতা খেয়াল করেছে নীরব যখন জানলো আলতার জীবনে শিশির আছে তখন সে চুপচাপ হয়ে গিয়েছিলো। নাহারের উছিলাতেই মাঝেমধ্যে এসে কথা বলতো আলতার সাথে কিন্তু সপ্তাহখানেক ধরে তার চিত্র বদলে গেছে। রোজই আসছে কলেজের সামনে কিংবা তার হোস্টেলের সামনে। আলতা দেখেও না দেখার ভান করে কিন্তু কোন না কোন ভাবে কথা বলেই ফ্যালে সে। এ নিয়ে মহা মুশকিলে পড়েছে আলতা কিন্তু এ শহরে কাকে বলবে সে কথা! বললেই কি সমাধান হয়ে যাবে নাকি উল্টো আরো নতুন ঝামেলায় পড়তে হবে! রিকশা ওয়ালা প্যাডেল ঘোরানোর আগেই নীরব এসে আলতাকে বলল, “একটু পরে যেও আয়শা কিছু কথা ছিলো তোমার সাথে।”

“আমার কোচিং আছে ভাইয়া এখনই না ফিরলে দেরি হবে।” আলতা কিছুটা তাড়া দেখিয়েই বলল কথাটা। সে মুহূর্তেই রিকশার পাশে একটি গাড়ি এসে থামলো। আলতা, নীরব দুজনে একসাথেই সেদিকে তাকালো। গাড়ির ড্রাইভিং সিট থেকে তাওহীদ নেমে এলো রিকশার সামনে।

“মাত্র তো দিন চৌদ্দ গেল এখনই নতুন কেউ!” তাচ্ছিল্যের হাসিতে ঠোঁট চওড়া করে বলল তাওহীদ। তা দেখে নিরবই আগে কথা বলল, “এক্সকিউজ মি!”

“নো এক্সকিউজ হার। বাই দ্য ওয়ে হু আর ইউ মি.হ্যান্ডসাম?”
তাওহীদ প্রশ্ন করে বসলো নীরবকে। আলতা রিকশাওয়ালাকে যেতে বলল,
“চাচা চলেন।”

” রিকশা থেকে নেমে আসো এক্ষুনি আর এই ছেলে কে শিশির জানে এর কথা!”

শিশিরের নাম শুনেই হাত পা ঠান্ডা হয়ে এলো আলতার। তাওহীদের দিকে আরও একবার তাকিয়ে মনে করার চেষ্টা করলো এটা কি শিশিরের বন্ধু? আলতার মনে পড়লো না এমন কাউকে দেখেছে বলে। শিশিরের ছেলে বন্ধু বলতে হৃদয়, তুহিন আরও দু একজন মুখচেনা আলতার। আর বড়লোক বন্ধু বলতে হৃদয়, অনুই বোধহয় ছিল যাদের নিজের গাড়ি আছে। এ লোকটাকে সে কিছুতেই চিনতে পারলো না৷ তাওহীদ বুদ্ধিমান এবং চতুর সে হয়ত আলতার ভাবনা আন্দাজ করতে পারলো। তাই নিজেই আবার বলল, “থাক আমিই শিশিরকে কল করে বলছি ওহ তার আগে দাঁড়াও একটু তোমাদের একসাথে একটা ছবি তুলে নেই।”

“খবরদার কোন ছবি তুলবেন না আপনি। আপনাকেই তো আমি চিনছি না আপনি কেন আমাকে এমন ধমক দিচ্ছেন!” আলতা প্রতিবাদ করার মত বলে উঠলো। ততক্ষণে নীরব নিরব ভূমিকা পালন করে বিরক্ত। রিকশাওয়ালাও গাড়িওয়ালা মানুষের সাথে তর্কে জড়াতে চায় না বলে আলতাকে নেমে যেতে বলল। সে বেচারি মনে মনে একটু ভয় পেলেও নিজেকে শক্ত দেখাতে বলে বসলো, “আপনি এমন পথিমধ্যে আমাকে আটকাচ্ছেন কেন? আর নীরব ভাইয়া আপনি কেন রোজ এমন পিছু নিচ্ছেন?”

একই সাথে দুজনকে প্রশ্ন করে বসলো আলতা। মনের ভয় আর প্রকাশ্যে না আনতেই সে চোখ মুখ শক্ত করে রইলো। তাওহীদ বুঝলো সহজে সুযোগ হবে না কথা বলার তাই এবার সরাসরি বলল, “আমি অনুর ফিয়ন্সে। তোমার সাথে আমার কথা আছে ইট’স আর্জেন্ট। আর এই ছেলে কে বলো তো আরও একদিন তোমার খোঁজে এলাম তখনও একে তোমার পাশে দেখেছি৷”

আলতার এবার ভয়টা হলো অন্যরকম৷ অনুর বাগদত্তা তো সবই জানে বলে মনে হচ্ছে। সাহস না খুইয়ে আলতা সত্যিটাই বলে দিলো নিজের মত করে, “উনি আমার বান্ধবীর ভাই। ভাইয়া কিছু বলার জন্য এসেছেন।”

“আচ্ছা! এই ছেলে বলো কি বলতে এসেছো আমিও শুনি কি বলার আছে তোমার বোনের বান্ধবীকে।”

তাওহীদের কথার ধরণেই নীরব পরাস্ত সৈনিকের মত জায়গা ছাড়তে বাধ্য হলো। তবে সে ঠিক করেছে অন্য একদিন কথাও বলবে আর আলতাকে নিজেরও করবে। নীরব যেতেই তাওহীদ আলতাকে বলল, “গেট ইন দ্য কার।”

“নাহ”

“ভয় পাওয়ার দরকার নেই তোমার মত পুঁচকে মেয়েকে আমি কিছুই করবো না। আই হ্যাভ ক্রাশড অন অনু। সো ইউ চিল, আমার শুধু কিছু কথা বলার আছে সেই সাথে জানার আছে। তুমি আর আমি একই পথের পথিক তাই তোমার মত পুঁচকের কাছে আমাকে আসতে হলো।”

তাওহীদের কথাতে স্বাভাবিক আচরণ এবং খুব পরিচিত বলে মনে হলো তাকে। কিন্তু তবুও এতোটা কি ভরসা করা উচিত হবে! বয়সের অপরিপক্কতা সাথে ভীতি দুটোই আলতাকে বারণ করলো যাবে না একসাথে। আলতা জেদ ধরে রইলো গাড়িতে উঠবে না মানে উঠবেই না। বাধ্য হয়ে তাওহীদ গাড়ি সাইড করে রাস্তার পাশেই ফুটপাতে বসলো। আলতাকে ইশারা করলো বসতে কিন্তু কলেজের পাশে এভাবে বসা কি ঠিক হবে? টিচারদের নজরে পড়লে কেমন দেখাবে! কিন্তু তাওহীদ আজ কথা না বলে যাবে না তাই আলতাকে দাঁড়িয়ে থেকেই কথা শুরু করতে হলো। তাওহীদ প্রথমেই প্রশ্ন করলো, “শিশিরের সাথে কি তোমার রিলেশন আছে?”

আলতা এ কথার জবাব কি করে দিতে হয় জানে না তবুও নিজের মত বলল, “আমরা ভরসা করি দুজন দুজনকে, একসাথে থাকব সারাজীবন।”

“মানে দুজনে সম্পর্কে আছো, কমিটেট আছো বিয়ে করবে তাইতো! আমিও অনুর সাথে কমিটেড কিন্তু অনু শিশিরকে ভালোবাসে।”

আলতা কথাটা প্রথমবার জানলে হয়তো চমকাতো কিন্তু না সে অনেক আগেই জেনে গেছে এ কথা। শিশির নিজে আন্দাজ থেকে বলেছিলো আর সোহা সেদিন সত্যিটাই বলে দিয়েছে তাই তৃতীয়বার শুনে কোন প্রতিক্রিয়া হয়নি। তাওহীদ আবারও বলল, “সেদিন ক্যাফেতে যে দৃশ্য আমি দেখেছিলাম তুমিও তাই দেখেছো।”

“হুম, সেটা শুধুই একটা নাটক ছিল। সেদিন শিশির ভাই তার আলতাকে মানে আমাকে প্রপোজ করতে চেয়েছিল এভাবে সেটাই বান্ধবীদের দেখাচ্ছিলো।”

তাওহীদ এ কথা শুনে বিষ্ময়ে হা হয়ে গেল। তবে কি সেদিন অনু মিথ্যে বলেছিলো যাওয়ার আগে! সে যে বলল শিশিরের সাথে সে রিলেশনে জড়াচ্ছে ইভেন লন্ডনে তারা লিভ ইনে…. তাওহীদ বুঝতে পারলো সবটাই নাটক। তবে বুঝতে দেরি হয়ে গেল। ওই পাগলাটে, ক্ষ্যাপাটে মেয়েটা তাকে ফাইনালি বোকা বানিয়েই গেল। কিন্তু না অত সহজে তো সে ছাড়বে না। আগামী পাঁচ ছয় মাস তার ব্যস্ত শিডিউল অফিসের। এরপর! সে যাবে লন্ডনেই। কিছুতেই আর ছাড় নেই অনুর অনেক হয়েছে জেদ। তাওহীদ এবার চলে যেতে পা বাড়াচ্ছিলো হঠাৎই আবার আলতার দিকে ফিরে জানতে চাইলো, নীরবকে নিয়ে কোন প্রকার ঝামেলা আছে কিনা!

আলতা বলবে না বলবে না করেও কেন জানি বলে দিলো, ছেলেটা তাকে প্রপোজ করেছিলো অনেক আগেই কিছুদিন আগে চুপচাপ ছিল কিন্তু এখন হুট করেই কেমন পিছু লেগে আছে।

তাওহীদ শুনে আর কিছু বলল না। রিকশা ডেকে আলতাকে পাঠিয়ে তাওহীদও চলে গেল নিজ গন্তব্যে।

শিশিরের ডিপার্টমেন্টে আজ ক্লাস নেই। ক্যাম্পাসে কিছুটা সময় ঘুরেফিরে সে অনুকে কল দিলো দেখা করার জন্য। এখানে তাদের সাবজেক্ট আলাদা তারওপর শিশিরের অক্টোবরের প্রথমে যে টেস্টের কথা ছিল সেটা ডেট চেঞ্জ হয়েছে। এখানে শিশিরের যে ফান্ড এপ্লিকেশন ছিল তাতেও সমস্যা দেখা দিয়েছে। অথচ উইদাউট ফান্ড হেল্প সে এ দেশে থেকে পড়াশোনা করতে পারবে না। অন্তত মান্থ শেষে তার মোটা অংকের খরচ দেশ থেকে সে কিছুতেই আনতে পারবে না। অনু অবশ্য তার কাজিনের মাধ্যমে কাজের ব্যবস্থা করে দেবে বলেছে কিন্তু এই পরদেশে এতোটাও সহজ হবে না তার জন্য । অনু কল পেয়ে চলে এসেছে মিনিট দশের মাঝেই। দু জনে ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে হাটতে লাগলো। হাঁটতে হাঁটতেই অনু প্রশ্ন করলো, কি যেন বলবি বলে ডাকলি?”

“ভাই কাল বিয়ে করেছে।”

“কিহ! শরৎচন্দ্র বিয়ে করে ফেলেছে?”
চেঁচিয়ে উঠলো অনু সেই সাথে পা থামিয়ে শিশিরের দিকে তাকালো অবিশ্বাসের চোখে।

“হু”

“কাকে আর কেন?”

“কেন মানে কি বিয়ে করবে না! আর কাকে করেছে আমি ঠিক চিনি না তবে আম্মা বলছিলো জেঠির ভাইয়ের মেয়ে।”

“ওহ, মানে তার মামাতো বোন।”

“হুম, বিয়েটা আসলে একটা দূর্ঘটনার মাধ্যমে হয়েছে বলে শুনলাম। তবে আমি খুশি ভাইয়ের জীবনে এবার পরিবর্তন আসবে।”

“ভালো তো!”

“এভাবে বলছিস কেন?”

“তো কিভাবে বলব? তোর ভাই বিয়ে করেছে সেটা ভালো। সোহাকে তো আর করেনি যে খুশিতে নাচব!”

“সোহারও বিয়ে হয়ে গেছে অনু৷ এখন আর এমন কথা না বললেই বোধহয় ভালো হবে।”

“হু, বলবো না। কি ভাগ্য যে যাকে চায় তাকে পায় না আর যাকে চায় তাকে পায় না!” বিষন্ন গলায় কথাটা বলেই অনু অন্যদিকে মুখ ঘোরালো। শিশির বোঝে অনুর দীর্ঘশ্বাস আর বিষন্নতার কারণ কিন্তু তার যে কিছুই করার নেই। অনুও পরিস্থিতি বদলে দেখতে চাইলো শরতের বউয়ের ছবি। শিশির জানালো কোন ছবি নেই এমনকি সে এখনও দেখেনি ভাবীর মুখ। ভিডিও কল অবশ্য করেছিলো শিউলি গ্রুপে কিন্তু শরত কিছুতেই মেয়েটির সামনে ফোন নিয়ে যায়নি। তবে আম্মা বলেছে আজ রাতে নাকি আবারও বউকে সাজিয়ে ছবি তুলবে। শিউলি হয়তো বিকেলেই চলে আসবে তখন সুযোগ হবে দেখার। অনু আর শিশির কিছু সময় চলতে চলতেই কথাবার্তা বলতে থাকলো। পরে অনু চলে যেতেই সে আলতাকে কল দিলো। আলতা প্রথম কলেই রিসিভ করে সালাম দিলো।

“কেমন হলো পরীক্ষা?”

“ভালো হয়েছে।”

” দুপুরে খেয়েছিস?”

“সন্ধ্যার নাশতাও শেষ আমার৷ তোমার ওখানে এখন কি বিকেল হয়েছে?”

“নাহ, সবে দুপুর শুরু।”

“ভালো আছো শিশির ভাই?”

হঠাৎ প্রশ্ন করে বসলো আলতা। এই প্রশ্নটা আদৌও প্রশ্ন ছিলো নাকি নিজের ভালো না থাকার বার্তা তা বুঝতে শিশিরের একটুও সময় লাগেনি। খারাপ তো তারও লাগে, সেও তো মিস করে তার এই চঞ্চল পাখিটিকে৷ কিন্তু সে কথা প্রকাশ করার মত দূর্বলতা তার নেই। অনেক লম্বা সময় তাকে কাটাতে হবে দূরত্ব নিয়ে তাই মিথ্যে করেই বলল, খুব ভালো আছি। তুই কেমন আছিস?”

“আমার ভালো লাগে না কিছু৷ মন বসে না পড়ালেখায়, টিউশনিতে। সারাক্ষণ চুপচাপ বসে থাকতে ইচ্ছে করে আর যখন যখন তোমার কথা খুব বেশি মনে পড়ে তখন বুকের ভেতর কেমন যেন কষ্ট কষ্ট লাগে আমি বুঝি না।” আলতা ঝরঝর করে বলে দিলো তার মনের অবস্থা অথচ বুঝতেই পারলো না তার এই কষ্ট প্রকাশ ওপাশের ব্যক্তিটির হৃদয়টাকে কি যে দগ্ধ করছে যন্ত্রণার অনলে। চোখ ঝাপসা হলো শিশিরের কণ্ঠও রোধ হলো। কিন্তু তার তো এতোটা ভেঙে পড়লে চলবে না যাতোটা আম্মা আর আলতা ভাঙছে তাকে ছাড়া প্রতিটি মুহূর্তে।

“পরে কথা হবে এখন রাখি।”

“রাতে আজ কথা হবে না!” ব্যাকুল হয়ে জানতে চাইলো আলতা।

“হুম হবে।”

“আচ্ছা!”

“আলতা শোন”

“হু”

“খুব ভালোবাসি রে তোকে।”
….

“কিছু বলবি না?” কাতর গলায় প্রশ্ন করলো শিশির।

আলতা চাইছে বলতে কিন্তু যা বলতে চায় তাতো কণ্ঠদেশ থেকে বেরিয়ে আসছে না। কিন্তু মন সে কথা প্রতি মুহূর্তে বলে ক্ষণে ক্ষণে এ কথা তো তসবীহ’র মত জপে যায়। অথচ যে মানুষটা এ কথা শোনার অপেক্ষায় তার কাছে বলা হয় না।
#শিশিরে_ভেজা_আলতা
(২য় খন্ড)
#ফারহানা_আক্তার_রুপকথা

৩৫.
বুকের কাছে কোথাও একটা ঝর্ণার ঝিরঝিরে বয়ে চলা৷ মন উতলা হাওয়ার দাপট এলোমেলো করে অন্তর্দেশ। অল্পবয়সী আবেগ এখন ধীরে ধীরে প্রাপ্তবয়স্ক যুক্তি, বুদ্ধিতে ভারীও হয়েছে একটুখানি। সে এখন বড়দের মত অনেক কথাই ভেবেচিন্তে তারপর বলে। কাল কথা বলার সময় শিশিরকে নিজে থেকেই তাওহীদের কথা বলে দিয়েছে আলতা তবে নীরবের কথাটাই চেপে গেল ভয়ে। নীরবের মনোভাব জানার পর যে বিদেশে থেকেই চিন্তায় অস্থির হয়ে পড়বে শিশির সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। আরেকটু সে নিজেই নীরবকে এড়িয়ে দেখবে কতটুকু কাজ হয়! এরপর না হয় অন্যকিছু ভাববে তারওপর নাহারকেও আবার জানিয়ে দেখতে হবে। আলতার ভাবনায় থাকা নীরবকে নিয়ে চিন্তাটা বেশিক্ষণ স্থির রইলো না। বাবার ফোন পেয়ে মনের ভেতর আবার বাড়ি যাওয়ার একটা ব্যাপার জাগ্রত হলো। আওলাদের ব্যবসা মন্দা এ মাসে তা যেন আলতা তার আব্বার গলার স্বরের স্তিতিতে টের পেয়ে গেল। আলতা এ বছরে টিউশনির টাকা থেকে টাকা জমিয়েছে কিছু। কিছু বলতে একেবারে সামান্য নয়। তার জন্য মোটের ওপর প্রায় হাজার পনেরো টাকা অনেক বড় এমাউন্ট। আব্বা প্রতিমাসে যা দেয় আবার আম্মাও দেয় সব মিলিয়ে তার হোস্টেল খরচ আর কলেজ, কোচিং হয়ে যায় সমানে সমান৷ কাপড়চোপড় তো আর প্রতিমাসেই লাগেনা তাই টুকটাক কেনাকাটার পেছনে হাজার খানেক টাকা নিজের টিউশন থেকেই নিতে পারে। শিশির ভাইয়ের কারণেই সে গত বছরের চেয়ে এ বছরে টিউশনি ভালো পেয়েছে৷ মনে মনে দোয়া করছে যেন ইন্টারমিডিয়েটে চমৎকার একটা রেজাল্ট করতে পারে একদম শিশির ভাইয়ের মত তাহলে তার কোচিংয়ের এক স্যার বলেছে সেখানেই তাকে একটা সুযোগ দিবে। এতে তার অনেকগুলো সুবিধাও আছে কিন্তু এই সুযোগ পেতে হলে দেখানোর মত রেজাল্ট লাগবে। চোখের পলকে সময় কেটে যাচ্ছে পরীক্ষার বেশিদিন বাকি নেই। শিশিরও সাধ্যমত রাতে তার পড়াশোনা দেখছে ভিডিও কলে এতে অবশ্য নতুন রুমমেট সিনিয়র আপুটা বেশ বিরক্ত তার ওপর। আলতা হ্যান্ডফ্রী ব্যবহার করে তবুও মেয়েটি বেশ বিরক্তি প্রকাশ করে অথচ প্রথম যে আপুর মাধ্যমে সে এখানে এসেছিলো শিশিরের বন্ধুর বোন, সে আপুটা তাকে যথেষ্ট সাপোর্ট করতো এমনকি শিশিরের সাথে তার এই প্রণয়ের সূচনাটাও তিনি খুব সহজভাবে নিতেন। কিন্তু ওই আপু যাওয়ার পর যে এলো সেও সিনিয়র তবে সে যথেষ্ট রূঢ়ভাষী।

সময় তার তল্পি গুটিয়ে এগোতেই থাকে নিজের মত। শরত, রূপসার বিয়ে হলো আজ তৃতীয় রাত চলে। কাল রাতেও মেয়েটি ঘ্যানঘ্যান করে কান্না শুরু করতেই শরত দোকানে চাবি নিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিল। কে বলেছিল এই বাচ্চা মেয়েটার উপকার করে নিজের কপালে শনি আনতে! রাতভর ভ্যাপসা গরমে, মশার কামড়ে রাত কেটেছে তার। সকালে বাড়ি ফিরে মায়ের ধমকানি, চাচীর কথা সব মিলিয়ে তার তখন রূপসাকে ধরে দুটো লাগাতে ইচ্ছে করছিলো খুব৷ ঠান্ডা মানুষ গরম হলে ভয়ানক কান্ড ঘটবে এটাই তো বলে লোকে। শরতের ক্ষেত্রেও তাই হলো। চুপচাপ স্বভাবের ছেলেটা রেগে ঘর থেকে টেনে রূপসাকে বের করে দিলো। জয়তুনের বকাবকি আরও বেড়ে গেল, শিফা বোঝাতে চাইলো শরতকে। কোন কাজে এলো না কারো শাষণ, বারণ। শরত রূপসাকে নিয়ে রওনা দিলো তাদের বাড়ি৷ যে করেই হোক এই মেয়েকে এখানে রাখা যাবে না। বয়সে ছোট তারমানে একদম নাদান বাচ্চাও নয় বিয়ে হয়েছে শ্বশুর বাড়ি থাকবে তাতে কান্নার কি আছে বুঝে পায় না শরত৷ সে তো মেয়েটার ওপর অত্যাচার করছে না, অন্য পুরুষদের মত গায়েও হাত দিচ্ছে না তবুও কেন কাঁদতে হবে! সত্যিই শরত রূপসাকে নিয়ে দুপুরেই চলে এলো তাদের বাড়ি। বিয়ে যেমন করেই হোক বাড়ির লোক মেয়েকে দেখতে যাবে, খোঁজ নেবে এটাই তো স্বাভাবিক কিন্তু রূপসার বাড়ি থেকে খোঁজ নেয়নি। শরতরা যখন পৌঁছে গেল রূপসাদের বাড়ি তখন পরিস্থিতি বৈরী সে বাড়িতে। ধার কর্জা করে মেয়ে বিয়ে দিচ্ছিলো সেই সাথে জমি বিক্রি৷ বলা যায়, হাতের জমা সব শেষ নিম্নবিত্ত পরিবারের। মেয়ে আর জামাইকে দেখে রূপসার মা তড়িঘড়ি বিছানার চাদরটা টেনে একটু গোছাতে চেষ্টা করলেন। রূপসার ছোট ভাইকে দশটা টাকা দিয়ে দ্রুত চিনি আনতে বললেন৷ ঘরের পেছনের লেবু গাছ থেকে দুটো লেবু এনে তাতে শরবত বানাতে বসলেন। রূপসার ভাই দশ টাকায় কাগজে মোড়ানো একটু খানি এনে মায়ের হাতে দিয়ে আবার গেল আব্বাকে ডাকতে৷ রূপসার তখন কান্নাকাটি একদমই শেষ পথেও আর কাঁদেনি সে। শরত টিনের ঘরটায় বসেই শুনতে পাচ্ছে সকলের ছোটাছুটি৷ এসে তো ছিল মেয়েটিকে রেখেই চলে যাবে বলে কিন্তু এখানে সবার অস্থিরতা দেখে কিছু বলতেও সংকোচ হলো তার৷ রূপসার বাবা এসেই বললেন, জামাই তোমরা কি আজই যাইবা না থাকবা একদিন?

মুখের ওপর এমন প্রশ্নে শরত ভীষণ লজ্জা পেয়ে গেল। কেউ তো কোন আত্মীয় এলেও এভাবে মুখের ওপর যাওয়ার কথা বলে না আর সে তো একদিন আগে তাঁর মেয়েকে বিয়ে করা বর৷ বিয়ে যেমন করেই হোক মেয়ে আর জামাই বাড়িতে এসে থাকে না! উচিত তো ছিল তাদের নিজেদেরই নিয়ে আসা সেখানে নিজে থেকে আসা জামাইকে কেউ এমন প্রশ্ন করে! শরতের হতবুদ্ধি অবস্থা হয়ে গেছে সে আমতা আমতা করে বলল, “আমি একটু পরই চলে যাব। ও কাঁদছিলো তাই….”

“নতুন বিয়া হইছে কান্নাকাটি তো করবোই। তুমি অত ভাইবো না তোমার মায় মানে জয়তুন বুবু ঠিক সামলাই নিব অরে। ওর থাকা লাগবো না সাথেই নিয়া যাইও।” একদমে সবটা বলে রূপসার বাবা চলে গেলেন সামনে থেকে৷ শরত ভেবে পায় না এটা কি জোর করে তার ঘাড়ে গছিয়ে দিলো মেয়েকে! পরে মনে হলো সে নিজেই টেনে নিয়েছে ঘাড়ের ওপর। কিন্তু এ কেমন বাবা যে বিয়ের পরদিনই মেয়ে, জামাইকে এক প্রকার তাড়িয়েই দিচ্ছে! শরত তখনই হয়ত চলে আসতো কিন্তু বাধ সাঁধলো তার আপন মামী৷ তিনি এক প্রকার জোর করেই দুপুরে নিজের বাড়িতে খাওয়ালেন সেই সাথে জানালেন রূপসার বাবা সেদিন বিয়ের ঘটনার পর থেকেই অস্বাভাবিক আচরণ করছেন৷ এমনিতেও জমিজমা কিছু বিক্রি করে মেয়ের বিয়ে দিচ্ছিলেন সেখানে নানারকম ঝামেলায় হয়ত এমন করছেন৷ তারওপর ঘরে বাজার সদাই নেই। মেয়ের বিয়ে উপলক্ষেই ইনকামের সব টাকা শেষ করেছেন৷ এখন চলতি মাস কাজ করবে পরেই না হাতে টাকা আসবে৷ শরত সবটা চুপচাপ শুনলো কিছু বলার মত নেই। বাড়ি ফেরার আগে সে আবার রূপসাদের বাড়ি গেল। পাশাপাশি তার নানার বাড়ি এবং তাঁর ভাইদের। জয়তুনের বাবা, চাচারা মোটে তিন ভাই তার মধ্যে কেউ বেঁচে নেই। বয়স্ক বলতে শুধু রূপসার দাদী এখনো জীবিত আছেন৷ রূপসা বাড়ি এসে অব্ধি দাদীর ঘরে বসে আছে। শরত বাড়ি ফেরার জন্য তাদের বাড়ি এলে রূপসার মা ভীষণ লজ্জিত বোধ করলেন৷ শত হলেও মেয়ের জামাই তাও আবার প্রথমবার এসেছে অথচ তারা এক মুঠো ভাত খাওয়াতে পারলো না! ছেলেটা যে ভারী ভালো তা তিনি সেদিনই বুঝেছেন৷ শরত বোধহয় শ্বাশুড়ির মনোভাব আন্দাজ করতে পারলো কিছুটা তাই সে এগিয়ে এসে বলল, “মামী ওকে ডাকুন এখন রওনা দেব আমরা।”

“তুমি এই ঘরে যাও বাবা রূপসা হের দাদীর লগে বইয়া আছে।”

রূপসার দাদী দুপুরের ভাত খেয়েই নাতনিকে নিয়ে বসেছেন কথা বলতে। সে কথা হলো, স্বামীর সাথে বিগত রাত দুটো কেমন কাটলো এবং পরবর্তী রাতে কিভাবে কাটাতে হবে। এমনকি স্বামী যা বলবে এবং করবে তা চুপচাপ মেনে নিতে হবে। ফরজ গোসল থেকে ধরে স্বামীর আদর -সোহাগ সবই যেন সবিস্তারে নাতনিকে বুঝাতে চাইলেন। রূপসা বিরক্ত হয়ে বলে উঠলো, “দাদী তুমি অনেক বেশরম। সব খালি খারাপ কথা কও আমি থাকমু না এই ঘরে।”

“আরে বুবু এডি খারাপ কথা না বিয়া হইলে সবাই এইডি কয় নাতিনগো শিখায়া দেয়।”

শরত ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে দাদী নাতনীর শেষের কথাটুকু শুনে ঘরে ঢুকতে ইতস্তত করছিল। তাকে পেছন থেকে দেখে রূপসার মা নিজেই এবার এগিয়ে এসে ডাকলেন, “রূপসা ঘরেরতন বাইর হ জামাই দরজায় খাড়াইয়া আছে।”

দাদী -নাতনী দুজনেই এবার নড়েচড়ে উঠলো। রূপসার দাদী শরতকে ঘরে নিয়ে বসালেন। শরত এবার রূপসাকে বলল তৈরি হও আমরা এখনই ফিরব। রূপসা সে কথা শুনে সে দাদীকে জাপটে ধরে বলল, “আমি যামু না দাদী৷ ওই বাড়িতে আমি কার কাছে থাকমু আমার ভয় লাগে।”

“আরে ছাড় ছেমড়ি এমনে জামাইরে ধরিস। ওই বাড়ি গিয়া জামাইর লগে থাকবি আর কারে দরকার?”

“আমি যামু না।”

“যা তো শ্বশুরবাড়ি গেলে নতুন শাড়ি চুড়ি পাবি।”

আরও অনেকরকম কথা বলে কয়ে রূপসার দাদী আর মা মিলে তাকে পাঠালো শরতের সাথে। পথে একদম মৃত মানুষের মত যেন দমবন্ধ করে বসে রইলো রূপসা। শরত মনে মনে নিজেকে শ খানেক গালি দিয়েও ভেতরে স্বস্তি পেলো না। এ কি ভুল করলো সে! জীবন তো ছেলেখেলা নয় এত অপরিণত বুদ্ধির মেয়েকে নিয়ে কিভাবে কাটবে তার জীবন? একটা এসএসসি পাশ মেয়ে এতোটাও অবুঝ হয় মেয়েরা! এই মেয়েটা আমাদের আলতার চেয়ে খুব বেশি ছোটো হবে না কিন্তু আলতা তো কত ভালো বোঝে পরিস্থিতি, সম্পর্ক৷ শরত নিজ মনেই এতোটা ভাবল যে তার রূপসার প্রতি একরকম বিরক্তি এসে গেল অল্প সময়েই। বাড়ি ফিরতে সন্ধ্যে হলেও সে দোকানে চলে গেল। শিউলি এসেছে আজই বিকেলে ভাইয়ের বউ দেখবে বলে। কিন্তু বউয়ের গায়ের রঙটা দেখতেই তার মন ভার হয়ে এলো। তার ভাই কত ফর্সা সেখানে এই মেয়েটা শ্যাম বর্ণের। ভাইয়ের পাশে দাঁড়ালে একদমই সাদা আর কালোর মত ব্যবধান মনে হবে। এরচেয়ে কত ভালো হতো যদি কাকার কথামত আলতারে বিয়ে করতো! ওদিকে শিশির ভাই শ্যামলা আর আলতা দুধে আলতা গোলাপি রঙের। ভাবী দেখে খুব মন খারাপ হলো শিউলির কিন্তু সেটা আর ভাইয়ের সামনে প্রকাশ করেনি।

আলতার লুকানো কথা শিশিরের কানে পৌঁছাতে মাত্র অর্ধরাত লেগেছে। তাওহীদ নিজেই শিশিরের সাথে সোশ্যালে যোগাযোগ করে নীরবের কথা জানিয়েছে। আর সে কথা তাওহীদের মাধ্যমে জানতে পারায় আজ শাস্তি মিলেছে তার। রাত সাড়ে তিনটার পরও আলতা বইখাতা রাখতে পারছে না সামনে থেকে৷ অথচ ভেবেছিলো একটার মধ্যে পড়া শেষ করে চুপচাপ আধঘন্টা শুধু শিশির ভাইকেই দেখে যাবে৷ কবে থেকে মন ভরে দেখতে না পারায় কেমন এক হাহাকার বুকের ভেতর। বলা যায় চঞ্চল কিশোরীর নতুন প্রেমে খরা জাগা এক চর তৃষ্ণায় চৌচির। কিন্তু একি হলো নিজেরই করা ভুলে এখন মন ভরে দেখার সাধ আর মিটলো না৷ শিশির ঘুমানোর প্রস্তুতি নিয়ে বিছানা, বালিশ গুছিয়ে নিচ্ছে। ফাঁকে ফাঁকে ফোনের স্ক্রীণে চোখ রেখে দেখছে আলতা ম্যাথ করছে কিনা৷ এদিকে আলতার হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল আর তর্জনি ব্যথায় লাল হয়ে উঠেছে। লেখা পড়ার পর্ব যখন চুকে গেল তখন শিশির তাকে কিছু বলতে না দিয়ে কল কেটে দিল। ভারী মন খারাপ নিয়ে ঘুমাতে গেল আলতা। রাতের শেষ প্রহর হওয়ায় আর চোখ মেলে রাখতে পারেনি। সকালে এলার্ম বাজতেই আবার উঠে নাশতা, গোসল সব সেরে তৈরি হলো কলেজ ইউনিফর্ম পরে৷ যাওয়ার আগে চোখ বুলিয়ে নিলো বইয়ে, খাতায়। সময়মত কলেজে গিয়ে পরীক্ষা দিয়ে আবার ফিরেও এলো৷ রুমে ফিরে প্রথমেই সে ফোন চেক করলো কোন কল, মেসেজ আসেনি৷ সারা বিকেল তার টিউশন আর টেনশন একসাথেই কাটলো। সন্ধ্যে রাত পেরিয়ে রাতের প্রায় এগারোটার দিকে এলো কাঙ্ক্ষিত ফোন কলটি৷ আলতা রিসিভ করে কিছু বলার আগেই শিশির বলল, নেক্সট কি পরীক্ষা?

“ফিজিক্স ”

“পুরো সিলেবাস কমপ্লিট করার জন্য তোর হাতে সময় দু ঘন্টা। এরই মধ্যে সব শেষ করবি।”

সিলেবাস বলতে শিশিরের বন্ধুর মাধ্যমে কালেক্ট করা এক সাজেশন পত্র ছিলো সেটাই। আলতার সুবিধার প্রায় প্রতিটা বিষয়েই সে খেয়াল রাখার চেষ্টা এখনো করে সুদূর লন্ডনে বসেও৷ আলতা বুঝতে পারলো শিশির ভাই এখনো তার ওপর প্রচণ্ড রেগে আছে৷ কিন্তু এই রাগটাই তো সে ভাঙাতে জানে না৷ শিশির যখন তাকে পড়া বুঝিয়ে পড়তে দিলো আলতা চুপচাপ নিজের পড়ায় মন দিলো। শিশিরের নিজেরও কোন এক টেস্ট ছিল বলে সে নিজেও নোটস হাতে বসে পড়লো। নিঃশব্দে পড়ার মাঝেই হঠাৎ কানে এলো ফোঁপানোর আওয়াজ। শিশির ফোনটা চোকের সামনে ধরে অবাক হয়ে দেখলো আলতা মাথা নিচু করে কাঁদছে৷ সে এই কান্না দেখে ব্যাকুল হয়ে ডাকলো, “এ্যাই আলতা কি হয়েছে? কাঁদছিস কেন?”

আলতা কোন জবাব দিলো না। সে তার মতোই কেঁদে যাচ্ছে তবে প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছে যেন কান্নার আওয়াজ রুমের বাকি দুজন মানুষ টের না পায়। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না টুম্পা উঠে এসে জড়িয়ে ধরলো আলতাকে। শিশির তখনও একটানা ডেকেই চলছে৷ হ্যান্ডফ্রী লাগানো ছিলো আলতার কানে যা টুম্পার জড়িয়ে ধরার সময়েই পড়ে গেছে৷ তাই শিশিরের কোন আওয়াজই সে শুনতে পাচ্ছিলো না। আলতার কান্না শুনে সিনিয়র আপুটা বিড়বিড়িয়ে বলল, “যত্তসব ন্যাকামি শুরু করেছে রাতবিরেত। ঘুমিয়ে শান্তি নেই এসব নিব্বিদের সাথে থাকলে।”

টুম্পা কিছুক্ষণ মাথায় হাত বুলিয়ে একটু পানি খাইয়ে আলতাকে চুপ করালো। সে দেখলো আলতার ফোনে কল চলছে সাইলেন্টলি স্ক্রীণে নাম শিশির ভাই৷ সে রিসিভ করতেই শুনতে পেলো অস্থির কণ্ঠ শিশিরের।

“ভাইয়া আয়শার কান্না থেমেছে। কাল কথা বলুন না হয় আমি ওকে ঘুমাতে বলেছি।”

শিশির ফোন রাখলো কিন্তু তার আর ঠিকঠাক ঘুম হলো না রাতভর। পরেরদিন বিকেলেই সে আবার কল দিলো। আলতা কোচিংয়ের জন্য রওনা দিয়েছিলো তখন। গরমের শেষান্তে হিম হিম হাওয়া বাতাসে৷ আলতা গম্ভীর মুখে বসেছিল রিকশায়। কোথা থেকে তাওহীদ এসে গাড়ি থামালো রিকশার সামনে। আজও আলতা ভয় পেলো তবে নিজেকে স্বাভাবিক রাখলো তাওহীদের সামনে। এ শহরে এসে সে প্রথমে যা শিখেছিলো তা হলো কাউকে নিজের দূর্বলতা বুঝতে না দেওয়া৷ মানুষ দূর্বলতা জানতে পারলেই আঘাত করে। আর এ কথা শিশির ভাই তাকে কঠোরভাবে বুঝিয়ে, শিখিয়ে গেছে। সেও তা মেনে চলতে চেষ্টা করে৷ তাওহীদ গাড়ি থেকে বের হতেই আলতা রেগে প্রশ্ন করলো, “এসব কি? আপনি এমন সামনে এসে থামলেন কেন?”

“কথা আছে রিকশা থেকে নেমে এসো।”

“আমার পড়া আছে। ”

“সে আমি বুঝবো এসো তুমি।”

“না সরে যান। মামা রিকশা চালান।”

তাওহীদ শুনলো না অনেকটা জোর করেই নিয়ে গেলো সাথে করে৷ আলতার কোচিল সেন্টারের কাছেই এক রুফটপ ক্যাফেতে নিয়ে বসালো৷ তারপর ধীরে ধীরে বলল শিশিরের কথা সে নীরবের কথা ইচ্ছে করেই জানিয়েছে। বলা যায়, শিশিরের বিশ্বস্ততা পাওয়ার জন্য৷ অনুর সাথে তার যোগাযোগ মুশকিল কিন্তু সত্যিই তো সে অনুকে প্রচণ্ড ভালোবাসে৷ সে জানে আলতা শিশিরের জীবনে কি তা সে সোহার সাথে শেষবার কথা বলতে গিয়েই জেনেছে। আর তাই আলতার সুরক্ষা সে নিশ্চিত করতে পারলে শিশিরও নির্দ্বিধায় তার জন্য কিছু করবে এমনটা ভেবেই সে পিছু নিয়েছে৷ নীরব যেন আলতার পেছনে কিছুতেই আর না আসে সেদিক খেয়াল রাখার দ্বায়িত্বটা নিজের কাঁধেই তুলে নিয়েছে। আলতা কথা বলে বুঝতে পারলো তাওহীদ তার ক্ষতি করবে না। সে কোচিং থেকে ফিরে নিজেই শিশিরকে নক দিলো। মাত্র কয়েক সেকেন্ড এর মাঝেই কলটা এলো শিশিরের। যেন আলতার অপেক্ষাতেই সে ফোন হাতে বসেছিল।

“তুই কাঁদছিলি কেন রাতে কি হয়েছে তোর? ঠিক আছিস না!”

শিশিরের কণ্ঠে চিন্তা, অস্থিরতা স্পষ্ট। আলতা তা বুঝতে পেরে জানালো, “তুমি রেগে ছিলে আমার ওপর।”

“তাই বলে তুই ওভাবে কাঁদবি! রাগ করবো না তো কি করব কাজই তো তেমন করেছিস।”

” আমি লুকাতে চাইনি কিছু শুধু চাইছিলাম নিজে থেকে চেষ্টা করে দেখতে যেন নীরব ভাইকে বুঝিয়ে যদি দূর করা যায়।”

“তোকে এত বুঝতে বলেছে কে হ্যায়? আর কি বলিস ও নীরব ভাইয়া হ্যা ভাইয়া হয় তোর! একদম খু-ন করে ফেলব। সে তোর কোন জনমের আত্মীয়। এজন্যই তো রাগটা বাড়ে আমার।”

‘ভাইয়া’ শব্দটাকে খুব টেনে টেনে ব্যঙ্গ করে বলল শিশির।

“তুমি আবার রেগে যাচ্ছো।”
ফুঁপিয়ে বলল আলতা। শিশির বুঝতে পারলো এই মেয়ে আবার কান্না করবে রাতের মত৷

“এ্যাই থাম কাঁদিস না এখন আর। কাছে নেই এখন যে একটু আদর টাদর করে কান্না থামাবো। আর রাগবো না বলছি থেমে যা এক্ষুনি নইলে কিন্তু লন্ডন থেকে ওড়ে চলে আসবো।”

“তাহলে চলেই আসো।” ফোঁপানো থামিয়ে বলে দিলো আলতা।

“ইশ, এভাবে বলিস নারে! এমনিতেই অন্তর পোড়ে দূরে থাকতে৷ তার ওপর যদি এমন করে বলিস তবে তো দু বছর দূর দুই মাসও টিকতে পারবো না।”

শিশিরের কথাটা শুনে চোখে পানি এলো আলতার। সত্যিই খুব কষ্ট হয় তার কিন্তু এ কষ্টের পরই হয়তো তাদের সুখের সম্মেলন হবে! অপেক্ষার প্রহর বড় ভয়ংকর সুন্দর।

চলবে
(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here