শুধু আমারই পর্ব ১

আমার বিয়ে হয়েছে আজ তিনদিন কিন্তু সায়ান সারাদিন আমার সাথে স্বাভাবিক থাকলেও রাতে ঘুমোনোর সময় হলেই আস্তে করে পিয়া তুমি শুয়ে পড়ো বলে বালিশ নিয়ে মায়ের রুমে চলে যায়। আবার ভোরের দিকে ফিরে এসে বিছানার পাশে রাখা ডিভানে শুয়ে থাকে। আমি ব্যাপারটা প্রথমে স্বাভাবিকভাবেই নিয়েছিলাম। কারন আমার শাশুড়ী এক সপ্তাহ হলো মাইল্ড স্ট্রোক করেছেন। মূলত উনার অসুস্থতার কারণেই আমাদের এ হুট করে বিয়ে হওয়া। এমন হুট করে বিয়েটা সায়ান আমার দুজনের জন্যই একটু বিব্রতকর ছিল। তবুও আমি যতটা স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করছি সায়ান যেন ততোটা আড়ষ্ঠ হয়ে চলছে। ভেবেছিলাম মায়ের অসুস্থতা হয়তো ওকে ভাবিয়ে তুলেছে। কিন্তু ব্যাপারটা যে অন্যকিছু তা আমি তখনও ধরতে পারি নি।

গল্প সিনেমায় যেমন দরকারী সময়ে মোবাইলের চার্জ থাকে না বা নেট পাওয়া যায় না, রাতে ঝড় উঠে, আশেপাশে কেউ থাকেনা, তেমনি আণ্টির মানে আমার শাশুড়ীর অসুস্থতার সময় উনার আত্মীয়রা কেউ ঢাকায় ছিল না। সবাই সিলেটে এক বিয়ের অনুষ্ঠানে ছিলো। আর সায়ান ছিল ইংল্যাণ্ডে ওর বন্ধুর বিয়েতে। আন্টি গাড়িতে হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যাওয়ায় ড্রাইভার ঘাবড়ে গিয়ে সামনে আমার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পেয়ে তাতেই ভর্তি করায়। আমার ইনটার্নশীপ শেষ হতে তখন মাত্র কদিন বাকি ছিলো। আন্টি আমার পূর্ব পরিচিত বলে উনাকে দেখেই আমি চিনে ফেলি আর নিজ দায়িত্ব নিয়ে সব কাজ করি। ড্রাইভার কিছু বুঝতে পারছিল না বলে আমিই আন্টির মোবাইলে সবার সাথে যোগাযোগ করি। সায়ানের আত্মিয়রা প্রথমে অনেক টেনশনে পড়ে গেলেও আমি উনাদের আস্বস্ত করি আর সময়ে সময়ে ইনফরমেশন পাঠাই। অবশ্য উনারা রাতের মধ্যেই সব ঢাকা চলে আসেন।

সায়ানের সাথে আমার যোগাযোগ হয় ভিডিও কলে। ভিডিওতে ওর চেহারা দেখে আমি ভেবেছিলাম কলেজ পড়ুয়া কোনো ছেলে আমার ছোট ভাই প্রত্যুষের বয়সী হবে।। অসম্ভব মায়াবী নির্মল চেহারা, মায়ের টেনশনে অস্থির, কান্নাকাটি করে চোখ ফোলা, নাকের আগা লাল। মনে হচ্ছিল যেন মোবাইলের ভেতর দিয়েই মায়ের কাছে ছুটে আসবে। ফ্লাইটে দুদিন পরের ইমার্জেন্সি টিকিট পায় সে। এ দুদিন আমার মাথা নষ্ট করার উপক্রম। ওর যন্ত্রণায় আমি আন্টির সাথে রাতে থাকতাম আর কিছুক্ষণ পর পর ভিডিও কলে তার মায়ের ঘুমন্ত মুখ দেখাতাম।

ইংল্যাণ্ডে বসে বসে সায়ানের অতিরিক্ত অস্থিরতা আমাকেও অস্থির বানিয়ে ফেলতো। মাইল্ড স্ট্রোক করায় আন্টি এতোটাও অসুস্থ ছিলেন না। প্রথম দিন উনার উপর দিয়ে ধকল গেলেও পরদিন থেকে উনি কিছুটা সামলে উঠেন। কিন্তু সায়ানকে কে বুঝাবে! আন্টি নিজেও সায়ানকে বুঝিয়েছেন তিনি সুস্থ আছেন। তবুও সায়ান শান্ত হতো না। এক সময় তো আমি ধমক লাগাতাম -এতো কেন অস্থিরতা! আন্টির সামনেও এক একবার ধমক দিয়ে বসেছি। পরে আন্টি কি ভাবলেন ভেবে চোরা চোখে তাকিয়ে দেখি উনি মিটমিট করে হাসছেন। বলেন আমার ছেলেটা একটু বেশিই ছিঁচকাঁদুনে। মা ছাড়া কিছু বুঝে না। আমি দিব্যি ভালো আছি বলার পরও তোমাকে জ্বালাচ্ছে। ভালো করেছো বকে দিয়েছো।

সায়ান আমাকে প্রথম দিন থেকেই কেন জানি তুমি তুমি করে বলেছে। আমিও তুমি করেই কথা বলেছি পিচ্চি ছেলে ভেবে। কিন্তু হসপিটালে যখন প্রথম সামনাসামনি ওকে দেখলাম আমি তো তখন রীতিমতো ধাক্কা খেলাম। ছফুট লম্বা, পেটানো শরীর সুদর্শন এক ছেলে। বড়লোকের লুতুপুতু একমাত্র ছেলে সুদর্শন হওয়া তো স্বাভাবিক কিন্তু সায়ানের চেহারায় অনেক বেশি ছেলেমানুষী মায়া মায়া ভাব ছিল। আমি দরজায় দাঁড়িয়ে ওকে দেখতে লাগি।
সায়ান তার মায়ের হাত নিয়ে নিজের ঠোঁটে চেপে বসে আছে। দু চোখ বেয়ে অশ্রু পড়ছে আর নাকটা লাল হয়ে আছে। মায়ের প্রতি কি অদ্ভুত ভালবাসা! আমি মুগ্ধ হয়ে দেখতে থাকি এমন দৃশ্য। মা ছাড়া যে তার জীবন অন্ধকার তা আমি ভিডিও কলেই হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিলাম।

কিন্তু সায়ান তো মোটেও কলেজ পড়ুয়া বাচ্চা ছেলে নয়। রীতিমতো বড়সড় সুপুরুষ, আমার চেয়ে তো মিনিমাম তিন চার বছরের বড় হবে। আমি ভিডিও কলে তা মোটেও ধরতে পারি নি কেন!! আমার এতো বিব্রত লাগছিল!
আন্টি আমায় দেখেই বললেন এসো পিয়া, আমার পাগল ছেলে দেখো চলে এসেছে!

আমি হেসে সামনে এগিয়ে গেলেই সায়ান আমাকে অবাক করে দিয়ে আমার হাত ধরে সোফায় বসে পড়ে।
— পিয়া, কিভাবে যে তোমাকে ধন্যবাদ দিবো! তুমি এতো সাপোর্ট দিয়েছো যে আমি বুঝাতে পারবো না। আমি এতো অস্থিরতার পরও কেন জানি তোমার উপর ভরসা করতে পারছিলাম। তুমি আম্মুর জন্য যা করেছো তা শুধু ধন্যবাদ দিয়ে শেষ করা যাবে না।

আমি হেসে বললাম আন্টির বিপদে আমি এটুকু তো করতেই পারি! আন্টি আমাকে আর আমার ভাইকে তো সব সময় আদর করেছেন।

আসলে আমার আব্বু সায়ানদের অফিসে এইচ আর ম্যানেজার ছিলেন। চার বছর আগে অসুস্থতার দরুন অবসর নেন। আব্বুর চাকরী সুবাদে আমাদের অফিস আসা যাওয়া হতো। অফিসের এম. ডি হিসাবে আন্টিকে আমরা চিনতাম। আমি মেধাবী ছিলাম বলে আণ্টি সব সময় আমার লেখাপড়ার খোঁজখবর নিতেন।

আমি একটু বিব্রত অবস্থায় বললাম, ইয়ে মানে আমি আপনাকে না বুঝে অনেক তুমি তুমি করে কথা বলছি আসলে আমি বুঝি নি আপনি আমার চেয়ে বড়।
— ওটা ব্যাপার না! অনেকেই আমাকে বাচ্চাছেলে ভেবে ভুল করে। তবে তুমি আমাকে তুমি করেই বলো পিয়া! ওটাই স্বস্থিদায়ক, হঠাৎ আবার আপনি আপনি শুরু কর না প্লিজ!!
— আসলে আমি খুবই দুঃখিত আমি আপনাকে অনেকবার শাসনও করেছি। আমি আসলে…
— আহা! এতো চিন্তা করছো কেন? আমি আম্মুর শাসনেই বড় হয়েছি। আম্মুর ধমক না খেলে তো আমার মনে হয় কি জানি নাই আমার জীবনে বলে সায়ান মায়ের দিকে তাকিয়ে হাসি দেয়।

আমি মুগ্ধ হয়ে তাকাই ওর হাসি দেখে। ওর একটা গজদাঁত আছে ঠিক তার মায়ের মতো। সে কারণে সায়ানকে হাসলে আরও সুন্দর লাগে। ওকে এই প্রথম আমি হাসতে দেখলাম।
সায়ান বলল বুঝলে পিয়া, ধমক খাওয়া আমার ভালই লাগে। আমাকে যারা ধমক দেয় তারা আমাকে অসম্ভব ভালোও বাসে।

তখন থেকে বিয়ে হওয়ার আগ পর্যন্ত সায়ান আমার সাথে খুব স্বতঃস্ফূর্তভাবে কথা বলছিলো যেন আমি তার পরিবারেরই সদস্য কিন্তু আমাদের বিয়ে হওয়ার পর থেকেই সে কেন জানি আমার দিকে চোখ পর্যন্ত তুলে তাকায় নি। যেন আমাকে দেখলেই তার পাপ হবে।

ডিসচার্জের দিন আন্টি যখন আমার আব্বু আম্মুকে আসতে বললেন আমি তখনও তার কারণ জানতাম না।
আব্বু একটা নীরব জায়গায় আমায় নিয়ে গিয়ে যখন বললেন রোকেয়া আন্টি তার একমাত্র ছেলে সায়ানের জন্য আমার বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন তখন আমি আব্বুর চোখের কোণে খুশির ঝিলিক দেখতে পেলাম।
আব্বুর চোখে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি উনি আমার উত্তর হ্যাঁ-ই আশা করছেন।

সায়ানকে না করার আমার কোনো কারন ছিলো না। রোকেয়া আন্টি যেমন ভালে মনের মানুষ তেমনি নিরহংকারী। উনার পরিবারের মানুষরাও ভালো।অসুস্থতার সময় উনার নিকটাত্মীয়রা সব অনেক টেনশনে পড়ে গেলেও কেউ আমাকে এক্সট্রা জ্ঞান দেয় নি, সনামধন্য হসপিটালে নেবার জন্য হাঁকডাকও করে নি বরং খুব আন্তরিক ছিলো।

আর সায়ানকে যতোটুকু দেখেছি বার বারই মুগ্ধ হয়েছি। এতো মা পাগল পারিবারিক একটা ছেলে! এমন ছেলে বা তার পরিবারকে না করার তো কোনো কারন দেখি না। বরং রোকেয়া আন্টি আমায় কেন পছন্দ করলো সেটাই জানার বিষয়। হতে পারি আমি ডাক্তার, পরিবারিক ও আর্থিক অবস্থান মন্দ নয়, দেখতেও সুন্দরীর পর্যায়ে পড়ি তবুও তাদের মতো তো বিত্তশালীও নই। সায়ানের জন্য ধনীর আদরের রাজকন্যা তিনি চাইতেই পারতেন। উল্টো আমি যথেষ্ট কাটখোট্টা মেয়ে। যে মেয়ে মায়ের সামনেই তার আদরের ছেলেকে ধমকাধমকি করে এমন মেয়েকে মা কেন পছন্দ করবেন?

আমি ওতো শত চিন্তা বাদ দিয়ে আব্বুকে বলি আমার সমস্যা নেই আব্বু, তোমরা যা ভালো মনে করো!
আব্বু খুশিতে আলহামদুলিল্লাহ বলেন! কিন্তু মামনী, আরেকটা কথা আছে!
— আবার কি??
— রোকেয়া ম্যাম চাইচ্ছে আজই তোদের বিয়ে হোক। তোকে নিয়েই উনি বাসায় ফিরতে চাইচ্ছেন।

সে রাতেই শশুড়বাড়িতে বসে হুট করে অনাড়ম্বর ভাবে আমাদের বিয়ে হয়ে যায়।
********★******

আজ রাতের খাবার শেষে আণ্টি আমায় তার রুমে বসতে বললেন।
— পিয়া, সায়ান নাকি প্রতিরাতে আমার কাছে এসে শোয়??

আমি নত মুখে কি উত্তর দিবো বুঝে পাই না। গলার স্বর নামিয়ে বলি আন্টি আপনি অসুস্থ বলে হয়তো ওর টেনশন হয়। তাই…

— আমি তো হসপিটাল থেকেই সুস্থ হয়ে ফিরেছি। আর পায়ের অবশ ভাবটা আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে। তাই বলে সায়ান নতুন বউ রেখে আমার কাছে শোবে?? স্বপ্না না বললে তো আমি জানতামও না। ছেলেটা আমার ঘুম ভাঙ্গার আগেই তো পালিয়ে যায়। স্বপ্না দুদিন ফজরের নামাযের সময় তা খেয়াল করে আমাকে জানায়।

আমি নিশ্চুপ দেখে আন্টি নিজেই বলেন ঠিক আছে তুমি যাও। আমি দেখছি।
— আন্টি থাক না। ও তো আপনার ব্যাপারে কেমন অস্থির তা তো আমি দেখেছি। পরে না হয়…
— হয়েছে তোমাকে আর ওর হয়ে বলতে হবে না। তুমি যাও। আর আমাকে আন্টি ডাকছো কেন? শাশুড়ী পছন্দ হয়নি তোমার??
— কি যে বলেন আণ্টি!
— আবার আন্টি! মা ডাকো। তবেই খুশি হবো।
আমি হেসে জি মা বলে রুমে চলে আসি।

রুমে সায়ান বসেই ছিল। ওর ভ্যাবাচেকা চেহারা দেখে বুঝি আমার আগে এই মহাশয়ের ক্লাস নিয়েছে আন্টি মানে শাশুড়ী মা। আমার কেন জানি ওর করুন চেহারা দেখে হাসি পেয়ে যায়।

সায়ান দুএকটা কথা বলে আবার আমাকে অবাক করে দিয়ে” পিয়া তুমি শুয়ে পড়ো” বলে ডিভানে নিজে শুয়ে পড়ে। আমার খুব রাগ লাগে। ছেলেটার সমস্যা কি? মানলাম হুট করে বিয়ে, ফ্রি হতে সময় লাগবে আর সে সময়টা একটা মেয়ে চেয়ে নেয়ার কথা কিন্তু এখানে তো পুরো ব্যাপারই উল্টো। সায়ানের পক্ষ থেকে কোনো ভুমিকাই নেই।
আমিও গজগজ করতে করতে শুয়ে পড়লাম।

ভোরে আমার ওঠার অভ্যাস। বসন্তকাল চললেও শীতশীত আমেজ রয়ে গেছে। এ রুমের সাথে লাগোয়া বেলকনিটা বেশ বড়। তাতে গাছগাছালিতে ভরা সাথে একটা বড় দোলনা ঝুলানো। আমি স্লাইড ডোরটা খুলতেই হু হু করে দক্ষিণা বাতাস রুমে ঢুকে পড়লো। ভোরের ঠান্ডা বাতাসে আমার শীত শীত লাগছে।

সায়ান তখনও গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। কিন্তু মনে হয় না ওর খুব একটা ভালো ঘুম হচ্ছে। এ ডিভানটা ছয়ফুট লম্বা শরীরের জন্য যথেষ্ট নয়।
আমি আমার শালটা খুঁজতে গিয়ে দেখি তা ডিভানের উপর রাখা আর কিছুঅংশ সায়ানের বালিশের নিচে চাপা পড়া।
আমি আস্তে করে শালটা টানলেও নিচেরটুকু বের করতে পারি না। পরে সায়ানের মাথার কাছে ঝুঁকে বালিশটাকে হাল্কা তুলে শালটা বের করে আনি। ঐ মুহূর্তেই সায়ান চোখ খুলে, হঠাৎ আমাকে ওর এতো কাছে দেখে ভূত দেখার মতো সে ধড়ফড়িয়ে উঠে। তোতলার মতো বলে তুমি.. তুমি কি করছিলে?

আমি সরল উত্তর দেই আমার শাল তোমার বালিশের নিচে ছিলো তা বের করছিলাম।

— ও আচ্ছা!

হঠাৎ আমার মেজাজ চড়ে যায়। সে আমাকে এমন প্রশ্ন করলো কেন??
— সায়ান, তুমি আমাকে কেন জিজ্ঞেস করলে আমি কি করছিলাম?? তুমি কি ভেবেছো??.

— আমি.. আমি..আসলে..

আমি দাঁত কিটমিট করে বললাম তুমি ভেবেছো তুমি অবলা পুরুষ বলে আমি তোমার দূর্বলতার সুযোগ নিচ্ছি??

সায়ান অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলে এসব তুমি কি বলছো??

— ঠিকই বলছি। আমরা বিবাহিত, তুমি আমার কাছে আমি তোমার কাছে আসতেই পারি। এতে তুমি এমন ধরফর করে উঠবে কেন??

সায়ান চুপ করে মাথা নিচু করে আছে।

—এক মিনিট! এক মিনিট! তোমার কি কোনো শারীরিক সমস্যা আছে?
মানে তুমি.. তুমি কি ইম্পোটেণ্ট??

সায়ান খুবই অবাক হয়ে বলে, পিয়া তুমি কি বলছো না বলছো বুঝে বলছো??

— তুমি কি… মানে তোমার কি ছেলেদের প্রতি আগ্রহ…

— ইউউ… পিয়া প্লিজ থামো থামো। তোমার এসব অনুমান করা ছাড়ো। তোমার মুখে কি কিছু আটকায় না? কি সব যা- তা বলছো?

— হ্যাঁ আমার মুখে কিছু আটকায় না। আমি এরকম ই। মা আমাকে দেখেই পছন্দ করেছেন। কিন্তু তুমি কি তা আমার জানা দরকার। তোমার সমস্যার কথা মা কি জানেন???
— তুমি দয়া করে চুপ কর! আমি ও রকম কিছুই না। আমি জাস্ট….
সায়ানের মুখ হঠাৎ অন্ধকার হয়ে উঠে। বুকের মাঝে যেন কোনো পাথর নিয়ে চলছে।
— তুমি জাস্ট কি??
— আমি ফেঁসে গেছি পিয়া। আম্মুর অসুস্থতায় আমার কিছু করার ছিলো না। তুমি তো দেখেছো আমি কতটা ভীতু আম্মুর ব্যাপারে। হঠাৎ আমাদের বিয়ের কথা বলায় আমি কি করবো বুঝতে পারি নি। আম্মু তো ডিশিসন নিয়ে আর সময় দেয় নি আমাদের। আমি তোমাকে কিছু বলার সুযোগও পাই নি।

আমি কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম কি বলার সুযোগ পাও নি???

সায়ান কিছু সময় চুপ থেকে গম্ভীর কণ্ঠে বলে আমি একজনের কাছে কমিটেড পিয়া। আমার এফেয়ার আছে।

প্রথমে আমার বুঝতে একটু সময় লাগে। আমি আসলে ধরেই নিয়েছিলাম সায়ান হয়তো লাজুক ছেলে আমাদের এমন হঠাৎ বিয়েতে সে হয়তো একটু সময় চাচ্ছে। কিন্তু এফেয়ার আছে?? এখন সমাধান কি??

আমি ধপ করে বিছানায় বসে পড়ি। আমার মাথা হঠাৎ এলোমেলো হয়ে যায়। এমনিতে আমি অনেক শক্ত স্বভাবের বাস্তববাদী মেয়ে। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে তো আর কখনোও পড়ি নি। আমি কখনো প্রেম ভালেবাসা নিয়ে মাথা ঘামাইনি। সবসময় পড়াশোনায় ডুবে থাকতাম। কিন্তু আজ আমার জীবনে এমন পরিস্থিতি হলো! এখন আমি কি করবো? সায়ান অন্য কাউকে ভালোবাসে, সে তার মায়ের কারণে আমাকে বিয়ে করেছে কিন্তু এখানে আমার কাজ কি?? আমি কেন এখানে থাকবো যেখানে আমার উপস্থিতি সায়ানের অস্বস্থির কারণ!
আমার চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়তে থাকে।

সায়ান তার স্বভাবসুলভভাবে আমার হাত ধরে বলে, পিয়া প্লিজ! প্লিজ পিয়া আমার কিছু করার ছিলো না। আমি সানজানার কথা আম্মুকে বলার সুযোগ পর্যন্ত পাই নি। আর আম্মু যে হঠাৎ আমার বিয়ের এভাবে প্ল্যান করবে আমি বুঝি নি। আমি কি করতে পারি পিয়া??
— তুমি কি করতে পারো মানে!! আমি এখন কি করবো বলো??
— প্লিজ পিয়া এখন কিছুই কর না। আম্মু কেবল সুস্থ হয়ে ফিরেছেন। এখন উনাকে কিছু বললে উনি হয়তো নিতে পারবেন না। প্লিজ পিয়া তুমি এখনই কোনো ডিশিসন নিও না। প্লিজ!

আমি দাঁত কিটমিট করে বললাম সব তোমার এবং তোমাদের ইচ্ছামতো হবে তাই না??

সায়ান মনে হয় আমার কথায় বেশ আহত হলো। চুপ করে মাথা নিচু করে থাকলো কিছুক্ষণ তারপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল তুমি কি চাও বলো??

— আমি যদি বলি তুমি সব ভুলে আমার সাথে সংসার কর তাহলে শুনবে??

সায়ান আবারো দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল ঠিক আছে পিয়া! আমি তোমার অপরাধী। তুমি যা বলবে আমি সেভাবেই চেষ্টা করবো।

আমার মেজাজ এবার সপ্তমে চড়লো। আমি রেগে বললাম, আমি বলবো আর তুমি আমার হয়ে যাবে! তোমার নিজেস্ব কোনো মতামত নাই! মা বলল বিয়ে করতে তুমি করে ফেললে এখন আমি বলবো তোমার ভালোবাসা ভুলে যাও তুমি ভুলে যাবে? তুমি কি আহাম্মক নাকি??
আমি কেন তোমার করুনা নিয়ে চলবো সারাজীবন? আমি এ বিয়ে মানি না। আমার ডিভোর্স চাই।

চলবে।।

ভালো লাগলে অবশ্যই তা প্রকাশ করুন।

গল্পঃ শুধু আমারই,
লিখাঃ ঝিনুক চৌধুরী।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here