শুধু তুই ৩ পর্ব -৩৯+৪০

#শুধু তুই ৩
#পর্বঃ৩৯
#Tanisha Sultana

নিধি কান ধরে বারবার সরি বলেই যাচ্ছে। চোখ খিঁচে বন্ধ করে আছে৷ আদি শক্ত চোখে তাকিয়ে আছে নিধির দিকে। শার্টের দিকে তাকাতেই আদির মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এটা কোনো কথা? শার্টে নাক মোছা কোন ধরনের অভদ্রতা? এই মেয়েটা লাইফটাকে নরক জঙ্গল বানিয়ে দিচ্ছে। নিজেকে কোনো জোকার মনে হচ্ছে। খুব করে বকে দিতে ইচ্ছে করছে নিধিকে। কিন্তু নিধির ইনোসেন্ট ফেস দেখে বকা দিতে বাঁধছে। কেমন করে মুখ করে আছে যেনো ভাজা মাছ উল্টে খেতে পারে না। অথচ এই মেয়েটা মারাক্তক দুষ্টু। যাকে বলে নবেল প্রাপ্ত।

ঠোঁট গোল করে বিরক্তির নিশ্বাস ছাড়ে আদি। শার্ট খুলে পেছনের ছিটে ছুঁড়ে মারে। এখন আদির পরনে শুধু সেন্টার গেঞ্জি। নিধি চোখ হালকা খুলে দেখে আদি নিধির থেকে সরে গেছে। নিধি পুরোপুরি চোখ খুলে। চুল গুলো হাত দিয়ে ঠিকঠাক করে নেয়।
“আসলে হয়েছে কি আমি খুব ইমোশনাল হয়ে গেছিলাম। তাই হুট করে আপনার শার্টে নাক মুছে ফেলেছি। কি আর করবেন বলেন? আমি তো আপনার একটা মাএ বউ তাই না?
ভাব দেখিয়ে বলে নিধি।
” সিরিয়াসলি
ইমোশনাল হয়ে কেউ শার্টে নাক মুছে? এসব আজগুবি কথা তুমি ছাড়া আর কারো কাছে শোনা যায় না। ইডিয়ট।
আদি কিছুটা রাগ দেখিয়ে বলে।
“ইয়ে মানে আমি মুছি। তাছাড়া আপনার শার্টটা এতো সফ্ট আর সাইনিং যে খালি নাক মুছতে ইচ্ছে
আদি চোখ পাকিয়ে তাকাতেই নিধি চুপসে যায়। একটা ঢোক গিলে বলে
” ইয়ে মানে নাহহহ আপনার শার্টে নাক মুছতে ইচ্ছে হয় না। আমি আর কখনোই আপনার শার্টে নাক মুছবো না দরকার পড়লে আপনার টাওয়াল দিয়ে মুছবো। বা আপনার রোমাল প্যান্ট। আরে আরে এখনই অব্ভ্যাস করে ফেলুন। বাচ্চা কাচ্চা হলে তো এমনটাই করবে।
আদি দাঁত কটমট করে। কাঁচা চিবিয়ে খেতে ইচ্ছে করছে নিধিকে। ননস্টপ বকবক করেই যাচ্ছে। একটুও ভয়ডর নেই। নেহাত আদি ওর ইনোসেন্ট ফেস দেখে গলে গেছে। নাহলে ধাক্কা দিয়ে গাড়ি থেকে ফেলে দিতো।

“প্লিজ দাঁত কটমট করবে না। বাই এনি চান্স যদি দাঁত ভেঙে যায় তাহলে আমার ফিউচার বেবিরা তো আপনাকে বাবা না বলে দাদু বলবে।
আল্লাহ তখন আমি কি করবো? না না প্লিজ দাঁত কটমট করিয়েন না। রাগ হলে চুল টানুন। নাহহ চুলও টানা যাবে না। চুল পড়ে গেলে তো আমার আরই টাক হয়ে যাবে। হাই আল্লাহ
নিধি বিচলিত হয়ে বলে।
আদি মাথা চেপে ধরে।
” ও মা কি হলো আপনার? মাথা ব্যাথা করছে । না কি চুল? আমার কথায় বিরক্ত হচ্ছেন আমি জানি তবুও আমি চুপ করবো না। কারণ এসব সত্যি কথা। আপনাকে মানতে হবে। আমি কিন্তু
নিধি এক নাগারে কথা বলতে থাকে। আদি নিজের ছিট বেল খুলে ফেলে। নিধির ছিটে হাত দিয়ে নিধির দিকে ঝুঁকে ঠুস করে নিধির গালে চুমু দেয়। নিধি স্তব্ধ হয়ে যায়। অর্ধেক বলা কথাটা গলায় আটকে যায়। গালে হাত দিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। লজ্জায় মরি মরি অবস্থা। মুহুর্তেই ফর্সা গাল দুটো লাল হয়ে যায়। চোখ তুলে আদির দিকে তাকাতে পারছে না নিধি। আদি এমন কিছু করবে ভাবতেই পারে নি।

আদি নিজের ছিটে এসে বসে। ছিট বেল্ট পড়ে নেয়।
আদি নিধির দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।
“বাঁচা গেলো। এখন অন্তত শান্তি মত ডাইভ করতে পারবো।
আদি গাড়ি চালানো শুরু করে। নিধি তো মুখে কুলুপ এঁটেছে।
” এতোখন তো খুব কথা বলছিলে এখন কথা কই গেলো? আসলে তোমাকে চুপ করানোর রাস্তা এটাই। এখন থেকে যখনই তুমি বেশি কথা বলবে আমি তোমাকে এভাবেই চুপ করাবো।
মুচকি হেসে বলে আদি।

নিধি আদির অগোচরে এক পলক তাকাতে চায় আদির দিকে। কিন্তু আদির দিকে তাকাতেই দুজনের চোখাচোখি হয়ে যায়। নিধির লজ্জা আরও বেরে যায়। লজ্জায় আস্ত হয়ে গেছে।

বাইরে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। শীতকালে বৃষ্টি হওয়ার ফলে শীত বেরে গেছে। কিন্তু নিধির খুব করে নিধির ইচ্ছে করছে বৃষ্টিতে ভিজতে। কতোদিন বৃষ্টিতে ভেজা হয় না। খুব করে ইচ্ছে করছে জানালা খুলে হা বাড়িয়ে দিয়ে বৃষ্টি উপভোগ করতে। কিন্তু লাটসাহেবের জন্য সেটা করা যাবে না। জানালা খুললেই বকা দিবে।
নিধির ভালোই শীত লাগছে। নিধি আদির দিকে তাকায়। আদিরও নিশ্চয় খুব ঠান্ডা লাগছে। তার গায়ে তো কিছুই নেই পাতলা একটা গেঞ্জি ছাড়া।।
“আপনার কি খুব বেশি ঠান্ডা লাগছে?
নিধি মিনমিনিয়ে জিজ্ঞেস করে।
” নাহহ ঠিক আছি।
আদি এক পলক নিধির দিকে তাকিয়ে বলে।
“সরি
” কেনো?
আপনার শার্ট নষ্ট করে দিলাম। তাই তো আপনার ঠান্ডা লাগছে।
অপরাধীর সুরে বলে নিধি।
“সেরকমটা না
আদি মুচকি হেসে বলে।
নিধি নিজের শাড়ির আচল ছাড়িয়ে আদির গায়ে জড়িয়ে দেয়।
” কি করছো তুমি?
“এতে ঠান্ডা কমবে
ভালো করে জড়িয়ে দিয়ে বলে নিধি।
” হুমমম।

রাত দশটার দিকে আদি নিধি বাসায় পৌছায়। বৃষ্টির বেশ কমেনি বরং কিছুটা বেড়েছে। এখন গাড়ি থেকে নেমে বাসায় পৌছাতে পৌঁছাতে ভিজে যাবে। কিন্তু গাড়িতেও কতোখন বসে থাকবে। আদি নিধির শাড়ি গুটিয়ে নিধির কাছে দেয়।
“এই বৃষ্টি আবারও আর সময় পেলো না।
আদি বিরবির করে বলে।
” বৃষ্টি ভালো তো। আমার তো দারুণ লাগছে।
নিধি খুশিতে গদগদ করে বলে।
“তোমার তো দারুণ লাগবেই। ইডিয়েট না তুমি?
নিধি ভেংচি কাটে আদিকে।
আদি ছিট বেল খুলতে খুলতে দেখে নিধি নেমে গিয়ে বৃষ্টিতে ভিজছি।
“ইডিয়েট একটা
আদি বিরবির করে বলে।
আদি গিয়ে নিধির হাত ধরে।
” তারাতাড়ি চলো। ভিজে যাচ্ছো তো।
আদি নিধির হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যেতে যেতে বলে।
নিধি বিরক্তির শব্দ বের করে মুখ দিয়ে।
“নিরামিষ একটা। রোমান্টিক ওয়েদার কোথায় একটু এক সাথে ভিজবো তা না টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে।
নিধি মুখ বাঁকিয়ে বলে।
আদি থেমে যায়। নিধির কথা গুলো শুনে ফেলে আদি।
” এটা হয়ত বা রোমান্টিক ওয়েদার বাট এখন শীত কাল। বৃষ্টিতে ভিজলে ঠান্ডা লেগে যাবে। যেটা আমি চাইছি না। শীত চলে গেলে সারাদিন রাত বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে রোমাঞ্চ করবো। কেমন?
আদি চোখ টিপে বলে। নিধি ভরকে যায়। এতো আস্তে বলা কথা কি করে শুনলো?
“এবার যাওয়া যাক।
আদি সামনের রাস্তা দেখিয়ে বলে।
নিধি লাজুক হাসে।

দুজনই ভিজে একাকার হয়ে গেছে। নিধির এবার ভীষণ ঠান্ডা লাগছে। কাপছে রীতিমত।
” চলো তারাতাড়ি চেঞ্জ করতে হবে।
আদি আর নিধি রুমে চলে যায়। কিন্তু রুমে গিয়ে দুজনই অবাক। সুন্দর করে ফুল দিয়ে সাজানো পুরো রুমটা। একদম ফুলসজ্জা খাট সাজানো। নিধি বেশ লজ্জা পেয়ে যায়।
“এসব করলো কে?
আদি পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে বলে।
” বুঝতে পারছি না।
নিধি বলে।
“ঠিক আছে বুঝতে হবে না তুমি চেঞ্জ করে আসো।
আদি তারা দিয়ে বলে।
নিধি কাবাড থেকো ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।
কিন্তু ওয়াশরুমে গিয়ে নিধি আরও অবাক। কারণ সুন্দর একটা শাড়ি রাখা ওখানে।
” কে রাখলো? নিশ্চয় জিসান হবে।
নিধি মনে মনে খুব খুশিই হয়। চট করে শাড়িটা পড়ে নেয়।

আদি রুমে চোখ বুলিয়ে মুচকি হাসে।
“যাক তাহলে আজকেই ফুলসজ্জাটা সেরেই ফেলি। আজ একটু আমিষ হই। একদম পিচ্চিটার মনের মতো।
মনে মনে বলে আদি।
রুমে থেকেই ভেজা জামাকাপড় পাল্টে নেয় আদি।

নিধি ওয়াশরুমের দরজা খুলে বের হয়। শাড়িটা ঠিক মতো পড়তে পারে নি। কোনোরকমে পেঁচিয়ে এসেছে। এক হাতে তোয়ালে দিয়ে চুল মুছছে আরেক হাত দিয়ে শাড়ি ধরে রেখেছে।
আদির সামনে এভাবে যাবে কি করে? ভাবতেই লজ্জা লাগছে নিধির।
” শাড়ি পেলে কই?
এক হাতে কোমর জড়িয়ে ধরে বলে নিধির।
নিধি কেঁপে ওঠে। হঠাৎ আগমনে কিছুটা ভয় পেয়ে যায়। এতোখন তো কোথাও দেখা গেলো না আদিকে। তাহলে এখন কোথা থেকে বের হয়েছে?
“ওওওয়াশরুমে রাখা ছিলো।
থেমে থেমে মাথা নুয়িয়ে বলে নিধি।
” ওহহহ আচ্ছা
#শুধু তুই ৩
#পর্বঃ৪০
#Tanisha Sultana

“কে রাখলো?
আদি নিধির মুখের কাছে মুখ নিয়ে বলে।
” আআমি জানি না
থেমে থেমে বলে নিধি। আদির স্পর্শে ভীষণ নার্ভাস লাগছে। তারপর আবার কে এসব করলো তারও টেনশন হচ্ছে। আদির নিশ্বাস নিধির চোখে মুখে আচড়ে পড়ছে।
“আচ্ছা
নিধির কোমর জড়িয়ে ধরে নিধিকে খানিকটা উঁচু করে বলে আদি।
নিধি হকচকিয়ে যায়। চোখ বড়বড় করে আদির দিকে তাকায়। আদির মুখে দুষ্টু হাসি দেখে মিয়িয়ে যায় নিধি। সাথে সাথে চোখ নামিয়ে নেয়। শ্বাস আটকে যাওয়ার মতো অবস্থা। পরে যাওয়ার ভয়ে দুই হাতে আদির চুল আকড়ে ধরে। চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে নেয়।
” কি যেনো বলছিলে?
আদি নিধির দিকে তাকিয়ে বলে।
নিধি ভ্রু কুচকে ফেলে। চোখ না খুলেও মুখটা গোল করে ফেলে। মনে করতে থাকে আসলেও কি আদি কিছু বলেছিলো।
“কি হলো বলো?
আদি তারা দিয়ে জিজ্ঞেস করে। নিধির মনে যতটুকু পড়ছে তাতে আদি কিছুই বলে নি।
নিধি ঘাবড়ে যায়।
” আমাকে নামিয়ে দিন।
পরে যাওয়ার ভয়ে আতষ্ঠ হয়ে বলে নিধি।
“ভয় পাচ্ছো?
পাল্টা প্রশ্ন করে আদি।
” না মানে আমি অনেক ভারি। ককখন ব্যালেন্স হারিয়ে
(বলার মাঝে জীভ দিয়ে একটু ঠোঁট ভিজিয়ে নেয়) ওই আরকি।
পরে গেলে ব্যাথা পাবো
ইনিয়েবিনিয়ে বলে নিধি। চোখে মুখে এখনও ভয় স্পষ্ট।
“সিরিয়াসলি
তোমার মতো চার পাঁচটা পিচ্চিকে এক সাথে কোলে তুলে ফেলে দিতে পারবো।
আদি নিজের মার্সেলের দিকে একবার তাকিয়ে কিছুটা ভাব নিয়ে বলে।
অন্য সময় হলে নিধি নির্ঘাত ঝগড়া করতো কথার পিষ্টে কথা বলতো। কিন্তু এখন অস্বস্তি আর জড়তার ভিরে কিছুই বলতে পারে না।
আদি নিধিকে ঘোরাতে শুরু করে। নিধি আদির গলা জড়িয়ে ধরে।
” প্লিজ নামিয়ে দিন। পরে যাবো
চিৎকার করে বলে নিধি
বেশ কয়েকবার গোল গোল করে ঘুরিয়ে খাটে বসে পড়ে নিধিকে কোলে নিয়েই। নিধি ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে গেছে। ভয়ে হাত পা কাঁপছে। আদির গলা জড়িয়ে ধরে হাঁপাচ্ছে।
আদি মুচকি হাসে।
“এতো ভয় পেলে চলে মিসেস আদিল চৌধুরী। একটু তো সাহসী হও
আদি নিধির কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে।
” পানি
নিধি আদির গলা ছেড়ে কাঁধে মাথা বলে।
“ওকে নামো
নিধি তারাহুরো করে নেমে যায়। বিছানায় আধশোয়া হয়।
আদি নিধির দিকে এক পলক তাকিয়ে পানি আনতে চলে যায়।

এক গ্লাস পানি এনে নিধির সামনে ধরে। নিধি এক ঢোকে পুরো পানিটা শেষ করে ফেলে।
আদি গ্লাসটা রেখে দিয়ে এসে নিধির পাশে বসে। নিধি চোখ বন্ধ করে আছে বুকে হাত দিয়ে।

” খুব তো বলতে তোমার বর নিরামিষ।
আদি খাটে গোল হয়ে বসে বলে।
“আপনি তো নিরামিষ ই
তালে তালে নিধি বলে ফেলে।
নিধির কথা শেষ হওয়ার আগেই আদি দুই পাশে হাত রেখে নিধির দিকে ঝুঁকে।
নিধি ঘাবড়ে যায়
” আজ প্রুফ করে দেবো।
আদি নিধির নাকে নাক ঘসে বলে। নিধি লজ্জায় দুই হাতে মুখ ঢাকে।
আদি কিছু একটা ভাবে।
“নাহহ এভাবে না।
নিধি চোখ খুলে তাকায়।
” একটু রোমান্টিক বেপার সেপার আছে না?
নিধির ওপর থেকে সরে আসে আদি।
“একটা কথা বলি
আদি নিধির পাশে এসে শুয়ে পড়ে নিধির হাত দুটো নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে।
” হুমমম
নিধি আদির থেকে একটু সরে গিয়ে বলে।
আদি এবার নিধির থেকে একেবারে সরি আসে। চিৎ হয়ে শুয়ে মাথার ওপরের ছাদের দিকে তাকায়।
“আমার তোমাকে প্রয়োজন। জীবনের শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত আমার তোমাকে চাই। তোমাকে ছাড়া আমি শূন্য। আমি আজ থেকে আমাদের নতুন জীবন শুরু করতে চাই। আজ বলছি কেনো? এখন থেকে। তোমাকে ভালোবাসতে চাই।
তুমি বলেছিলে না এমনভাবে ভালোবাসতে যাতে তুমি সবাইকে বলতে পারো আমার আর বেস্ট বর। তোমার বরের মতো আর কেউ কখনো তার বউকে ভালোবাসতে পারবে না। ওতোটাই ভালোবাসবো তোমায়।
আজ থেকে কখনো কোনো কষ্ট পেতে দেবো না তোমায়। আই প্রমিজ। ভালোবাসায় মুরিয়ে রাখবো। খুব ভালোবাসি তোমায়।
খুব
ভীষণ
প্রচন্ড
মারাক্তক
দুইহাত প্রসারিত করলে যত দুর যায় তার থেকেও বেশি।
এক আকাশ সমান ভালোবাসি আমার পিচ্চি বউটাকে।

নিধি চোখের কোনে পানি চলে আসে। জীবনের সবচুকু চাওয়া আজ নিধি পেয়ে গেছে। আর কি চাই?

” তুমি কি আমার হবে?
আদি নিজের একটা হাত বারিয়ে দিয়ে বলে। নিধি প্রশান্তির হাসি হেসে চোখের কোনে জমে থাকা পানি মুছে আদির হাতটা ধরে।
আদি মুচকি হেসে নিধির দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ দিয়ে বলে
“আজকে তোমার নিরামিষ বরটা আমিষ হয়ে যাবো। কেমন ফিল করছো?
নিধি লজ্জা পেয়ে ” ধ্যাত” বলে আদির বুকে মুখ লুকায়।
“আমার পাগলি
হয়ে গেলো আদি নিধির মিল।

সারা রাতই গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পড়ে। এই বৃষ্টি খুব সহজে শেষ হওয়ার নয়। কাল সারা রাত ছিলো আজও হয়ত সারা দিন থাকবে। আজ আবার ইভার বিয়ে।
নিধি আদির বুকে গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে। ঘুম ভেঙে গেছে কিছুখন আগেই। জীবনে শ্রেষ্ঠ একটা রাত পার করেছে। প্রিয় মানুষটির ভালোবাসা পেয়েছে। এতোদিন যার একটু এটেনশন পাওয়ার জন্য এতো লড়াই করেছে। আজ তার ভালোবাসা পেয়ে পরিপূর্ণ হয়েছে নিধি।
ভালোবাসার মানুষটির থেকে একটু ভালোবাসা পাওয়া যে কতোটা সুখের সেটা যারা পায় তারাই জানে।
ঘুমন্ত আদির মুখের দিকে এক পলক তাকায় নিধি। কতো নিষ্পাপ মুখটা। এই মুখটা দেখে নিধি সারাজীবন কাটিয়ে দিতে চায়। কখনো চোখের আড়াল করতে চায় না নিধি। যত বাঁধা আসুক যত ঝড় আসুক কখনোই নিধি আদির হাত ছাড়বে না। যতদিন প্রাণ আছে ততোদিন আদি নিধিকে কেউ আলাদা করতে পারবে না।
নিধি মুখটা এগিয়ে নিয়ে আদির কপালে একটা চুমু দেয়।
“খুব ভালোবাসি আপনাকে। আমি কখনো ভাবি নি যে আপনার ভালোবাস পাবো। মরিচিকার পেছনে ছুঁটেছি আমি। আজ আমি সার্থক। পরিপূর্ণ আমি।

” আমিও আজ পরিপূর্ণ
চোখ বন্ধ রেখেই নিধির কোমর জড়িয়ে ধরে বলে আদি।
“আপনার ঘুম ভাঙলো কখনো?
নিধি থেমে থেমে আতস্থ হয়ে বলে।
” যখন পিচ্চিটা চুমু দিলো তখন।
মুচকি হেসে বলে আদি।
নিধি লাজুক হাসে।
“আচ্ছা ছড়ুন। আজ তো ইভা আপুর বিয়ে। তারাতাড়ি যেতে হবে আমাদের।
আদির হাত ছাড়াতে ছাড়াতে বলে নিধি।
” বিয়ে তো বিকেলে এখন তো সকাল
মিষ্টি করে হেসে বলে আদি।
নিধি আদির হাসি মুখের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।
“আপনার এই হাসিটাই আমি সারাজীবন দেখতে চাই। কখনো আর মুড অফ করবেন না। বা গোমড়ামুখো হয়ে থাকবেন না। সব সময় হাসি খুশি থাকবেন।
আদির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে নিধি।
“ওকে তবে তোমাকেও সব সময় দুষ্টুমি করতে হবে। আমার দুষ্টুমিষ্টি বদমাইশ নিধিকেই ভালো লাগে। লজ্জা ভয় জড়তা তোমাকে মানায় না। তবে লজ্জা যখন নারীর ভূষন তখন একটু আতটু লজ্জা পেয়ো কিন্তু লজ্জা পেয়ে লাল নীল হইয়ো না। বা লজ্জা পেয়ে আমার থেকে পালাই পালাই করবে না। ডান
নিধি একটু হাসে।
” ডান

নিধি ফ্রেশ হয়ে গোলাপি রংয়ের একটা শাড়ি পড়ে নেয়। এখন থেকে প্রতিদিন শাড়িই পড়বে। শাড়ি পড়লে ওকে বড় বড় লাগে।
ডেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে চিন্তা করছে কে করলো এরকম মহৎ কাজ। নিধি আর আদির জন্য একদম ফুলসজ্জা খাট সাজিয়ে দিলো। কাল তো সবাই গেছিলো ইভাদের বাড়িতে। তাহলে কে করলো? আজ নিধিকে এটা জানতেই হবে। যে করেই হোক। তাকে খুব ভালো করে মিষ্টি করে একটা থ্যাংকু বলে দেবে নিধি। তার জন্যই তো আদি কাল ওকে ভালোবাসি বললো।
রাতের কথা মনে পড়তেই একরাশ লজ্জা এসে জড়ো হয় নিধির চোখে মুখে। কিন্তু এখন তো লজ্জায় লাল হয়ে বসে থাকলে চলবে না। কাজ আছে। তারপর আবার কে করলো তাকে খুঁজতে হবে। সাজুগুজু করে ইভাদের বাসায় যেতে হবে। এতোগুলা কাজ রেখে বসে বসে লজ্জা পেলে আদি খুব বকা দিবে। রোমান্টিক বরটা আমার গোমড়ামুখো হয়ে যাবে। যেটা নিধি একদম করবে না।

চলবে
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here