#শুধু_তোমারই_জন্য(২)
লেখনীতে- অরনিশা সাথী
১৩+১৪
|১৩|
–“ও আম্মু একটু যাই না প্লিজ। বেশি সময় লাগবে না তো। ঘন্টা দুইয়ের মাঝেই ফিরে আসবো। প্রমিস।”
আনিতা ওর আম্মুর পিছনে দাঁড়িয়ে অসহায় গলায় কথাগুলো বলল। আনিতার আম্মু কিচেনে চালের রুটি বানাচ্ছেন। চালের রুটির সাথে খাওয়ার জন্য ঝাল ঝাল করে হাসের মাংস কষিয়েছে। আহিয়ানের নাকি পছন্দের খাবার এইটা। তাই আহিয়ান আসাতে রাতের জন্য এই রান্নাটা করছেন তিনি। বাড়ির একমাত্র জামাই বলে কথা। শখ আহ্লাদ বলে তো একটা কথা আছে। নিজের হাতে নানান রকম খাবার পিঠাপুলি বানিয়ে তিনি খাওয়াবেন মেয়ের জামাইকে। কিন্তু বিয়ের পর তো সেরকম ভাবে আসেনি তাই অতটা তৃপ্তি সহকারে খাওয়াতে পারেনি। আসলে যা খাইয়েছে তাতে আহিয়ানের পেট ভরলেও আনিতার আম্মুর মন ভরেনি। এবারে আহিয়ানের অফিস থেকে লম্বা একটা ছুটি পেয়েছে তাই আহিয়ান এখানে যে কদিন আছে খুব আদর যত্নে তিনি মেয়ে জামাইকে খাওয়াবেন বলে ঠিক করেছে। তাই তো আহিয়ান দুপুরে আসতেই আনিতার আম্মু বিকেলেই বাজার থেকে হাস কিনে এনেছেন আহিয়ানকে খাওয়ানোর জন্য। আনিতার আম্মু রুটি বানাতে বানাতে বললেন,
–“দু ঘন্টা কেন? তুই যদি বলিস আধ ঘন্টার জন্য যাবি তবুও আমি তোকে এই সময় ছাড়বো না।”
–“আম্মু আমি একা তো যাবো না। উনি তো যাবেন সাথে। আমার অনেএএএক দিনের ইচ্ছে জ্যোৎস্না রাতে নদীর ধারে ঘুরতে যাওয়ার। বাইরে তাকিয়ে দেখো আজকে আকাশে কত্ত বড় একটা চাঁদ উঠেছে। প্লিজ যাই না আম্মু।”
–“এত রাতে কোথাও যেতে হবে না৷ কাল বিকেলে গিয়ে ঘুরে আসিস বারন করবো না।”
–“আম্মু এত রাত কোথায়? সবে তো আটটা বাজে। আর আমার রাতে ঘুরতে যাওয়ার ইচ্ছে বিকেলে নয়।”
–“আচ্ছা যেতে হবে না।”
আনিতা মুখ গোমড়া করে ওর আম্মুর পাশে দাঁড়িয়ে রইলো। গত আধ ঘন্টা যাবত ও ওর আম্মুকে বলে যাচ্ছেন। কিন্তু উনি কিছুতেই রাজি হচ্ছে না। গ্রামের প্রায় নব্বই ভাগ মানুষই মনে করেন নতুন বিয়ের পর মেয়েরা যদি সন্ধ্যার পর বা ভর দুপুরে খোলা চুলে কোথাও যায় তাহলে প্রায় সময়ই বদজ্বীনে নজর করে সেসব মেয়েদের উপর। সবার ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য নয় তবে কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে এরকমটা হয়। সেজন্যই আনিতার আম্মু ওকে যেতে দিতে চাচ্ছেন না। বলা তো যায় না কখন কি হয়। তাই তিনি আর ঝুঁকি নিতে চান না। আনিতা অনেকটা সময় ধরে বুঝিয়েও যখন লাভ হলো না তখন গোমড়া মুখেই নিজের রুমে চলে গেলেন।
আনিতা রুমে গিয়ে ধপ করে বিছানায় বসে পড়লো। আহিয়ান বিছানার হেডবোর্ডের সাথে হেলান দিয়ে বসে ফোন টিপছিলো। আনিতাকে দেখে বলল,
–আম্মু রাজি হলো না?”
আনিতা মাথা নাড়িয়ে না বোঝালো। আহিয়ান আনিতাকে টেনে নিজের কাছে নিয়ে এসে আনিতাকে একপাশ থেকে জড়িয়ে নিলো। তারপর আনিতার মাথাটা ওর বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো। আনিতা চুপচাপ আহিয়ানের বুকে মাথা রেখে বসে রইলো। আহিয়ান আনিতার চুলে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,
–“থাক মন খারাপ করে না। অন্যকোনো সময় নিয়ে যাবো প্রমিস।”
আনিতা আর কিছু বলল না। চুপটি করে রইলো। আহিয়ান আনিতার মাথায় আলতো করে একটা চুমু খেয়ে বলল,
–“তুমি কলেজ ট্যুরে যাচ্ছো৷ পারমিশন পেয়ে গেছো। আর হ্যাঁ তোমাকে একা ছাড়ছি না কিন্তু। আমিও যাচ্ছি সাথে।”
আনিতা আহিয়ানের বুক থেকে মাথা সরিয়ে ওর মুখোমুখি বসলো৷ কথাটা শোনা মাত্রই আনিতার মন খারাপ ভাবটা কেটে গেলো৷ খুশিতে গদগদ হয়ে বলল,
–“সত্যি? সত্যিই আমি কলেজ ট্যুরে যাচ্ছি? আর আপনি? আপনিও যাচ্ছেন আমাদের সাথে?”
আহিয়ান আনিতার গাল টেনে দিয়ে নাকের ডগায় একটা চুমু খেয়ে বলল,
–“হ্যাঁ ম্যাডাম৷ আপনিও যাচ্ছেন আর সাথে আমিও যাচ্ছি আপনাকে গার্ড করার জন্য।”
আনিতা হেসে ফেলল আহিয়ানের কথায়৷ তারপর হুট করেই খুশিতে ঝাপিয়ে পড়লো আহিয়ানের বুকে। আহিয়ানও পরম আবেশে জড়িয়ে নেয় নিজের ভালোবাসাকে নিজের বুকে।
রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ আনিতা আহিয়ান অনিমা অনিক খেতে বসলো। আনিতার বেশ অস্বস্তি হচ্ছে৷ আহিয়ান আসার সময় জোর করেই অনিককে নিয়ে এসেছে। অনিক বিয়েতে ছিলো না বিধায়। আর এতটা কাছে এসেছে আর ভাইয়ের শশুড় বাড়ি দেখবে না তা কি হয়? ভদ্রতার খাতিরেই আনিতা চুপ করে ছিলো। নয়তো অনিককে কিছুতেই নিজের বাড়ি নিয়ে আসতো না। আনিতার আম্মু খাবার টেবিলে গুছিয়ে রেখে সবাইকে খেতে বলে রুমে গিয়েছেন। এখানে ছেলে-মেয়েরা খাবে সেখানে তো আর উনি দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন না। যাওয়ার আগে আনিতা আর অনিমাকে বারবার বলেছে কার কি লাগবে সেদিকটা খেয়াল রাখতে। ওরা দু বোন মায়ের কথায় সম্মতি জানায়। আহিয়ান মাঝে বসেছে। আর অনিমা আনিতা আহিয়ানের দু পাশে বসেছে। ওদের মুখোমুখি চেয়ারে অনিক বসা। অনিক খাচ্ছে কম কিন্তু আড়চোখে আনিতা আহিয়ানের দিকে তাকাচ্ছে বেশি। এতেই আনিতার বেশি রকম অস্বস্তি হচ্ছে। আহিয়ান একটুকরো রুটি ছিঁড়ে তাতে মাংস নিয়ে আনিতার মুখের সামনে তুলে ধরলো। আনিতাও ইতস্তত করে আহিয়ানের হাতে খেয়ে নিলো। তারপর আহিয়ান অনিমাকেও খাইয়ে দিলো। এভাবেই মাঝে মধ্যে নিজে খাচ্ছে আর ওদের দু বোনকে খাওয়াচ্ছে। অনিক মাঝে মাঝে খাওয়া থামিয়ে সেটা দেখছে। আনিতার সেদিকে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই। ও তো ভালো আছে। আহিয়ানকে ভালোবাসে ও খুউউব ভালো আছে। তাহলে আশে পাশে তাকিয়ে লাভ কি?
খাওয়া শেষে আনিতা প্লেটগুলো ধুয়ে কিচেনে রেখে দিলো। আর টেবিলের খাবারগুলো সব ঢেকে রেখে ওর আম্মুকে ডাকলো। আনিতার আম্মু এসে কিচেনে গিয়ে দুধ গরম করে দু গ্লাস দুধ ছোট্ট ট্রেতে করে এনে আনিতার হাতে দিয়ে বলল,
–“অনিকের রুমে দিয়ে আসিস একটা। আর একটা আহিয়ানের জন্য নিয়ে যা।”
–“অনিককে আমি দিতে পারবো না। তুমি বরং অনিমাকে পাঠাও।”
–“পাশাপাশি রুমই তো। যা গিয়ে দিয়ে আয় না। অনিমা শুয়ে পড়েছে এতক্ষণে।”
আর কোনো উপায় না পেয়ে আনিতা রুমের দিকে পা বাড়ালো। আনিতার রুমের ডান দিকের রুমেই অনিক রয়েছে। আনিতা দরজা নক করতেই অনিক বলল,
–“দরজা খোলা আছে আসতে পারেন।”
আনিতা গুটিগুটি পায়ে রুমে গিয়ে বেড সাইড টেবিলে দুধের গ্লাসটা রাখলো। অনিক রুমে নেই। ওয়াশরুম থেকে পানি পড়াস শব্দ হচ্ছে। তার মানে ওয়াশরুমে আছে ও। একটা স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়লো আনিতা অনিকের সামনে পড়তে হলো না বলে। আনিতা চলে আসতে নিলেই অনিক ওয়াশরুমের দরজা খুলে বের হয়ে আসে। এবং বলল,
–“বেশ ভালোই আছো দেখে মনে হচ্ছে।”
–“ভালো তো অবশ্যই থাকবো৷ ভালোবাসার মানু্ষটাকে সারাজীবনের জন্য নিজের করে পেয়েছি। আর সব থেকে বড় কথা সেই মানুষটা আমাকে অনেক বেশি ভালোবাসে। তাহলে কি ভালো না থেকে পারা যায়?”
–“হুম সেটাই। কিন্তু আমার ভালোবাসাটা? আমি যে ভালোবাসি তোমাকে। আর তুমি? তুমিও তো ভালোবাসতে আমাকে। তাহলে এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে কি করে?”
–“ওই যে ভালোবাসতাম। এখন আর বাসি না। আপনাকে ভুলে যাওয়ার যথেষ্ট কারন ছিলো না কি আমার কাছে?”
এইটুকু বলেই আনিতা রুম থেকে বের হয়ে এলো। অনিকের উত্তর আর শুনতে চায় না ও। কি দরকার অযথা কথা বাড়ানোর? আনিতা নিজের রুমে চলে এলো। দুধের গ্লাসটা টেবিলে রেখে পুরো রুমে চোখ বুলালো একবার। আহিয়ান রুমে নেই। ওয়াশরুমের দরজাটাও খোলা। তারমানে নিশ্চয়ই বারান্দায় আছে ও। আনিতার বারান্দার দিকে পা বাড়ালো। বারান্দা থেকে আসা বাতাসের সাথে একটা বিদঘুটে গন্ধ আনিতার নাকে এলো। চোখমুখ কুঁচকে ফেলল আনিতা। সিগারেট? সিগারেটের গন্ধ আসছে? তার মানে আহিয়ান স্মোক করছে বারান্দায় দাঁড়িয়ে? আনিতার পুরো শরীর রাগে থরথর করে কাঁপতে লাগলো। দ্রুত পা ফেলে বারান্দায় গেলো আনিতা৷ আহিয়ান আনিতার উপস্থিতি বুঝতে পেরে বা হাতটা পিছনে লুকিয়ে একটু হাসার চেষ্টা করলো। আমতা আমতা করে বলল,
–“আনি তুমি এখানে? সব কাজ শেষ?”
–“বা হাতে কি? দেখি আমি হাতটা সামনে আনুন।”
আহিয়ান হাত পিছনে রেখেই বারান্দা দিয়ে সেটা ছুঁড়ে বাইরে ফেলে দিলো। বিষয়টি আনিতার চোখ এড়ালো না। আহিয়ান হাত আনিতার সামনে এনে বলে,
–“দেখো হাতে কিচ্ছু নেই। তুমি আমার কথা শুধু শুধুই বিশ্বাস করছিলে না।”
আনিতা আহিয়ানের হাত টেনে নিয়ে ওর নাকের কাছে নিতে গেলেই আহিয়ান হাত সরিয়ে ফেলে। আনিতা চোখ পাকিয়ে তাকায় আহিয়ানের দিকে। আনিতা আহিয়ানের দুগালে হাত রেখে ওর মুখটা একদম নিজের কাছে নিয়ে আসে। আহিয়ানের মুখ থেকে সিগারেটের স্মেল আসতেই আনিতা চোখমুখ কুঁচকে দূরে সরে যায়। আহিয়ান অপরাধীর মতো মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আনিতা কিছুটা রেগে বলে,
–“আপনি স্মোক করছিলেন এখানে দাঁড়িয়ে। আবার আমাকে মিথ্যেও বলেছেন?”
আহিয়ান পেছন থেকে আনিতাকে জড়িয়ে ধরে ওর ঘাড়ে থুতনি রাখলো৷ আনিতা সরিয়ে দিতে চাইলো আহিয়ানকে। কিন্তু পারলো না। আহিয়ান আরো ভালো করে জাপ্টে ধরছে ওকে। আহিয়ান আনিতার পেটে দু হাত রেখে বলল,
–“ইশ্ আমার পিচ্চি বউটা দেখি আবার রাগও করছে। এই রাগলে তো তোমাকে বেশ লাগে।”
আনিতা কিছু না বলে চুপ করে রইলো৷ আহিয়ান এটা সেটা বলে আনিতার রাগ ভাঙানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এভাবে প্রায় মিনিট দশেক বাদে আনিতা রাগ কমায়৷ এই ছেলেটার উপর ও যে বেশিক্ষণ রাগ করে থাকতে পারে না। হুট করেই আহিয়ান আনিতাকে কোলে নিয়ে রুমের দিকে পা বাড়ালো। আচমকা এমন হওয়াতে আনিতা আহিয়ানের টি-শার্ট খামচে ধরে বলে,
–“কি করছেন? কোলে তুলে নিলেন কেন? নামান বলছি এখনি।”
–“নামিয়ে দিবো তো। রুমে যাই আগে।”
–“নাহ এক্ষুনি আর এখানেই নামান। আমার আপনার সাথে কিছু কথা আছে।”
আহিয়ান আনিতার কথা কানে নিলো না। বিছানার সামনে গিয়ে আনিতাকে শুইয়ে দিলো। তারপর রুমের লাইট অফ করে দিয়ে ও আনিতার পাশে গিয়ে শুয়ে আনিতাকে নিজের কাছে টেনে এনে বুকে আগলে নিয়ে বলে,
–“এখন বলো কি বলবা?”
আনিতা আহিয়ানের বুকে মাথা রেখে আহিয়ানকে ভালো করে জড়িয়ে ধরলো। তারপর বলতে শুরু করলো,
–“আপনি তো জানেন আপনার আগেও আমার লাইফে কেউ একজন___”
–“আনিতা প্লিজ স্টপ। এসব বিষয়ে কোনো কথা শুনতে চাই না আমি। তোমার লাইফে আগে কে ছিলো, ছিলো না তা নিয়ে আমার বিন্দুমাত্র মাথাব্যাথা নেই। আমি জাস্ট এতটুকুই জানি যে বর্তমান আর ভবিষ্যতে তোমার লাইফে শুধু আমিই থাকবো।”
–“আমি জানি আপনি শুনতে চান না। কিন্তু আমার বলাটা প্রয়োজন।”
–“এত কথা না বলে এখন চুপচাপ ঘুমাও তো। আমি চুলে বিলি কেটে দিচ্ছি।”
আহিয়ান এইটুকু বলে আনিতার মাথায় হাত বুলাতে লাগলো। আনিতা জেদ ধরেই বলে,
–“আমি বলতে চাই। আর আপনাকে শুনতে হবে আমার কথাটা। প্লিজ শুনুন না।”
আহিয়ান অগ্যতা আনিতার জেদের কাছে হার মেনে বলে,
–“আচ্ছা বলো। শুনছি আমি।”
–“আপনি জানেন এর আগে আমার লাইফে যে ছিলো সে আসলে কে?”
আনিতার কথায় আহিয়ান এবারে বিরক্ত হলো বেশ। ও জানবে কি করে যে এর আগে আনিতার লাইফে কে ছিলো? আহিয়ান বিরক্তিটা বাইরে প্রকাশ করলো না। আনিতার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতেই বলল,
–“তুমি না বললে আমি জানবো কি করে? আর জানার পরই বা কি হবে? আমি কি তাকে চিনি? যে তুমি বলবা আর আমি চিনে ফেলবো?”
–“হ্যাঁ চিনেন তো।”
আহিয়ান এবারে কিছুটা সিরিয়াস হলো। এতক্ষণে কিছুটা বিরক্ত হলেও এবারে যখন আনিতা বলল যে আহিয়ান চিনে ছেলেটাকে তখন আহিয়ানের বিরক্ত ভাবটা কেটে গেলো। কৌতূহল জাগলো বেশ মনে। আহিয়ান অবাক সুরেই জিজ্ঞেস করলো,
–“কি ছিলো সে?”
আনিতা নির্বিকার কন্ঠে জবাব দিলো,
–“অনিক। আপনার ভাই অনিক ছিলো।”
অনিকের নাম শোনামাত্রই আহিয়ানের হাত থেমে গেলো। আনিতাকে নিজের বুক থেকে সরিয়ে থমথমকে চোখে তাকিয়ে রইলো আনিতার দিকে। আনিতা তখন অপরাধীর মতো চোখ নামিয়ে রেখেছিলো। আহিয়ানের চোখে চোখ রাখার সাহস করে উঠতে পারেনি। আহিয়ান থমথমে গলায় প্রশ্নে করে,
–“মানে? কিসব বলছো তুমি? অনিক? ও__ও তোমার সাথে?”
–“হ্যাঁ আপনার ভাই অনিকই ছিলো সেই মানুষটা যাকে আমি একটা সময় ভালোবাসতাম। যে আমাকে একটা সময় খুব বাজে ভাবে ঠকিয়েছে। যে আমার বিশ্বাস ভেঙেছিলো____”
এরপর আনিতা একে আহিয়ানকে সবটা বলতে শুরু করে। অনিকের সাথে পরিচয় হওয়া থেকে শুরু করে অনিকের সাথে সব রকম যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়া অব্দি সবটা বলে। অনিকের জন্য কতটা পাগলামি করেছিলো কত নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে সব__সব বলে আহিয়ানকে। এটাও জানালো মাওয়া ঘুরতে গিয়ে অনিকের সাথে ওর প্রথম দেখা অনিকের ওর কাছে এসে বলা প্রত্যেকটা কথা। এমন কি এটাও বলল যে আজকে অনিক ওদের কলেজে ওর জন্যই এসেছিলো। এবং এসে ওকে কি কি বলেছে সবটা__সবটা আহিয়ানের কাছে বলে আনিতা।
আহিয়ান সবটা শুনে কিছু সময়ের জন্য থমকে যায়। ও ভাবতে পারেনি ওর ভাই এরকম। ও ভাবতে পারেনি ওর ভাই একটা মেয়ের ভালোবাসা ইমোশনস নিয়ে এভাবে খেলেছে। এখন কিনা আবার এত বছরের ভালোবাসা রেখে আনিতার লাইফে ফিরতে চায়? এখন আবার কনা মেয়েটাকেও ছুঁড়ে ফেলে দিলো? আহিয়ান জাস্ট ভাবতে পারছে না কিছু। রাগে থরথর করে কাঁপছে আহিয়ান।
আহিয়ান আনিতাকে এক টানে নিজের কাছে নিয়ে এসে জড়িয়ে ধরলো ওকে। আনিতা আহিয়ানের বুকে মাথা রেখে কাঁদছে। আহিয়ান আনিতার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে,
–“কাঁদবে না। পুরোনো কথা মনে করে একদম কাঁদবে না বলে দিলাম। যদি পুরোনো সব কথা মনে করে কেঁদেছো তো আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না।”
আনিতা ফুঁপিয়ে কাঁদছে। নাক টেনে টেনে আনিতা বলল,
–“বিশ্বাস করুন পুরোনো কথা মনে করে কাঁদছি না আমি। আমি তো আপনাকে ভালোবাসি তাহলে পুরোনো কথা মনে করে কেন কাঁদবো? আমি তো সবকিছু অনেক আগেই মুছে ফেলেছি। শুধু একটাই ভয় হয় আমার।”
–“ভয় কিসের পিচ্ছি-পাখি? আমি আছি তো তোমার সাথে।”
–“হ্যাঁ আপনি আছেন জানি আমি। কিন্তু অনিক? অনিক যদি আপনাকে উলটাপালটা বোঝায় আমার ব্যাপারে? অনিক যদি আপনার মন বিষিয়ে দেয়? তখন? তখন আপনি আমাকে ছেড়ে যাবেন না তো? বিশ্বাস করুন আর যাই হোক আপনাকে ছেড়ে আমি থাকতে পারবো না। আপনাকে হারাতে পারবো না আমি।”
–“আরেহ পাগলী আমি হারাবো না তো। তুমি যেমন আমাকে ভালোবাসো আমিও তো তেমন তোমাকেই ভালোবাসি। আর তুমি তো আমাকে সবটা বললে না? আমি তো সবটা জানি। তাহলে কেন অনিকের কথা বিশ্বাস করে তোমাকে ভুল বুঝবো বলো? অনেক রাত হয়েছে এখন এসব নিয়ে একদম মাথা ঘামাবা না। তোমার আহিয়ান তোমার ছিলো, আছে আর তোমারই থাকবে৷ এই ব্যাপারে তুমি নিশ্চিত থাকো। ঘুমোও এখন।”
কথাটা বলে আহিয়ান আনিতার মাথায় চুমু খায় একটা। আনিতা ভালো করে জড়িয়ে ধরে আহিয়ানকে। আহিয়ান আনিতার থুতনি ধরে মুখটা উঁচু করে আনিতার কপালে আলতো করে ভালোবাসার স্পর্শ এঁকে বলে,
–“ভালোবাসি আমি আমার এই পিচ্চি-পাখিটাকে।”
–“আপনার পিচ্চি-পাখিও আপনাকে খুউউউব ভালোবাসে।”
চলবে ইনশাআল্লাহ~
#শুধু_তোমারই_জন্য(২)
লেখনীতে- অরনিশা সাথী
|১৪|
সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ আনিতা ওরা সকলে কলেজ মাঠে এসে উপস্থিত হয়৷ আটটার দিকে গোপালগঞ্জের উদ্দেশ্যে বাস ছাড়বে এখান থেকে। সব স্টুডেন্ট এর নাম মিলিয়ে একে একে বাসে তুলছে দায়িত্বে থাকা টিচারস আর সিনিয়ররা। মেয়ে দের জন্য পাঁচটা এবং ছেলেদের জন্য পাঁচটা সব মিলিয়ে দশটা বাস ভাড়া করা হয়েছে৷ আনিতারা মেয়েদের এক নম্বর বাসে পড়েছে৷ প্রত্যেকটা বাসের সামনে বড় করে কলেজ ট্যুরের ব্যানার লাগানো। আহিয়ান আর ফাইয়াজ ওরা ছেলেদের বাসে উঠেছে। আনিতাদের বাসে আইসিটির দুজন টিচার, ইকোনমিক এর একজন ম্যাম, সোস্যাল ওয়ার্কের একজন ম্যাম এবং স্কাউট টিচার উঠেছেন।
সব কিছু গোছগাছ করে বাস ছাড়তে ছাড়তে সাড়ে আটটা নাগাদ বেজে গেলো। বাসা ছাড়ার পর থেকেই বাসের সকলে বক্সে গান বাজিয়ে নাচানাচি শুরু করে দেয়। বেশ হই হুল্লোড় করতে করতেই দশটা নাগাদ বাস মাওয়া ফেরী ঘাটের সামনে এসে পৌছায়৷ একে একে সবগুলো বাস একটা ফেরীতে উঠে পড়ে। বাসগুলো সব ফেরী দিয়েই পদ্মা নদী পাড় হয়ে শরিয়তপুরের ফেরী ঘাটে গিয়ে নামবে। ফেরী ছেড়ে দেওয়ার মিনিট পাঁচেক বাদেই স্যার ম্যামরা সকলের হাতে একটা করে খাবারের প্যাকেট দিলেন। তাতে ছোট্ট একটা পাউরুটির প্যাকেট, একটা ডিম সেদ্ধ, একটা কলা এবং একটা করে আপেল৷ কেউ কেউ খাচ্ছে কেউ আবার জানালা দিয়ে বাইরে ছুঁড়ে মারছে। আনিতা তাসকিয়া রোদেলা জেরিন চারজনে মিলে একটা খাবার প্যাকেট রেখে বাকীগুলো ফেরত দিয়ে দিলো। আনিতার ডিমের কুসুমটা অনেক পছন্দ তাই ও ডিম থেকে কুসুম ছাড়িয়ে সেটা খেয়ে এক বাইট পাউরুটি নেয়। জেরিন রোদেলা তাসকিয়া ওরাও অল্প অল্প কিছু খায়৷ আপেল কলা আর দু পিস পাউরুটি এখনো ওভাবেই পড়ে আছে। কিছুক্ষণ বাদেই কলেজের দুজন স্টাফ এসে সকলকে চা এনে দেয় ওয়ানটাইম গ্লাসে করে।
চা খেয়ে আবার সবাই হই হুল্লোড় শুরু করে দিয়েছে। আনিতাদের পাশে ছেলেদের একটা বাস থামানো ছিলো সেই বাসটাতে শুধু অনার্স ফাইনাল ইয়ারের ছেলেরা ছিলো। সেই বাসের ছাদের উপর উঠে পর্যন্ত ছেলেরা নাচানাচি করছে। ছেলেদের বাসে বড় সাউন্ড বক্স আনা হয়েছে। তাই আনিতাদের গান শোনা যাচ্ছে না ওদের গানের জন্য। মেয়েরাও বড় সাউন্ড বক্স আনতে চেয়েছিলো কিন্তু স্যার ম্যামরা এলাউ করেনি। অনার্সের স্টুডেন্টরা অনেক রিকুয়েষ্ট করেছে বিধায় শুধু ওদের জন্য পারমিশন দেওয়া হয়েছে। আর কটা দিন তো আছে অনার্সের স্টুডেন্টরা। আনিতা ওরা জানালার পাশের সিটে বসে ছিলো৷ আনিতা জানালা দিয়ে মাথা বের করে ছেলেদের বাসের উদ্দেশ্যে চিৎকার করে বলে,
–“এক্সকিউজ মি ভাইয়ারা শুনছেন?”
জোরে বক্স বাজার ফলে ছেলেরা কেউ-ই আনিতার ডাক শুনতে পেলো না। আনিতা আরো বেশ কয়েকবার ডাক দিলো৷ শেষে একটা ছেলে আনিতাকে লক্ষ্য করে গান বন্ধ করতে বলল। গান অফ করে ছেলেটাও বাসের জানালা দিয়ে মাথা বের করে বলল,
–“কিছু বলছিলে?”
–“বলছিলাম যে আপনাদের গানের জন্য তো আমরা আমাদের গানের শব্দটা শুনতেই পাচ্ছি না। ভলিউমটা সীমিত করুন না প্লিজ। যাতে আমরাও আমদের গানগুলো শুনতে পারি।”
ছেলেটার পাশের জানালা দিয়ে অন্য একটা ছেলে মাথা বের করলো। দেখতে মোটামুটি ভালোই হ্যান্ডসাম কিউট ড্যাশিং একটা ছেলে। ছেলেটা আনিতার দিকে চোখ বুলালো একবার। তারপর বলল,
–“উঁহু গানের ভলিউম তো কমবে না। আমরা আমাদের বাসে যেভাবে ইচ্ছে ইঞ্জয় করবো গান বাজাবো। তোমরাও তোমাদের বাসে যা ইচ্ছে করো।”
–“আপনাদের গানের জন্য যে আমরা কিছু শুনতে পাচ্ছি না। আর গান না শুনতে পেলে নাচবো কি করে শুনি?”
–“তো আমরা কি করতে পারি মিস?”
–“বেশি কিছু না জাস্ট গানের ভলিউমটা একটু কমান তাহলেই হবে।”
–“সরি মিস সেটা তো হচ্ছে না।”
প্রথম ছেলেটা এবারে দ্বিতীয় ছেলেটাকে কিছুটা ধমকের সুরে বলল,
–“আহ রিদমান! ওরাও ইঞ্জয় করতে চাচ্ছে করুক না। ভলিউমটা একটু কমালে কি হবে? বাচ্চা মেয়ে গুলো এভাবে বললে না করা যায়?”
ওদের কথোপকথন থেকে এটা স্পষ্ট যে, যে ছেলেটা ভলিউম কমাতে চাচ্ছে না তার নাম রিদমান। আর যে ছেলেটা কি কিউট করে আনিতাদের কথা শুনে ভলিউম কমাতে বলছে রিদমানকে সেই ছেলেটার নাম রুশান। আনিতা বাচ্চা বাচ্চা ফেস করে বলল,
–“রুশান ভাইয়া ইউ আর এ সো কিউট। কি সুন্দর আপনি আমাদের কথাটা বুঝলেন আর ওই ছেলেটা রিদমান না কি নাম ও কেন শুনছে না আমাদের কথা? প্লিজ রুশান ভাইয়া ভলিউমটা একটু কমান না। আমরা কেউ ইঞ্জয় করতে পারছি না একটুও।”
রুশান কিছু বলার জন্য মুখ খুলছিলো কিন্তু তার আগেই রিদমান বলে,
–“কিন্তু ভলিউম কমালে যে আমাদের নাচটা ঠিক জমবে না। আমরা ছেলেরা আবার কম ভলিউমে গান ছেড়ে নাচতে পারি না তো।”
কিছু একটা ভেবে আনিতা বলল,
–“ওকে তাহলে এক কাজ করুন। এমন কিছু গান ছাড়ুন যাতে আপনারাও ইঞ্জয় করতে পারেন। আর আমরাও এই বাসে ইঞ্জয় করতে পারি। কিসব রিমিক্স গান বাজাচ্ছেন? এসব বাদ দিয়ে বলিউডের কিছু ফেমাস ফেমাস গান ছাড়ুন যাতে আমরা সবাই মিলে আনন্দ করতে পারি। তাহলেই তো হয়।”
রিদমান কিছু একটা ভেবে হাসলো। তারপর বলল,
–“ওকে মিস__কি যেন আপনার নামটা?”
–“আনিতা।”
–“ওকে মিস আনি___”
–“ডোন্ট কল মি আনিতা। এই নামে ডাকার অধিকার সবার নেই। আপনি আনিতা বলতে পারেন।”
–“ওকে ওকে। এত রিয়্যাক্ট করার কিছু নেই। তো মিস আনিতা আপনার প্রপোজালে আমরা রাজি। গান আমাদের বাসেই বাজবে। আর সেই একই গানে নাচ হবে দু বাসে।”
–“থ্যাঙ্কিউ সো মাচ ভাইয়া।”
কথাটা বলে আনিতা সরে এলো ওখান থেকে। বাসের দু সারির সিটের মাঝে যে জায়গাটুকু থাকে সেখানে সবাই দাঁড়ালো। ছেলেদের বাসে ফুল ভলিউমে গান বাজতেই এই বাসে মেয়েরাও নাচতে শুরু করে। কেউ কেউ নিজের সিটে দাঁড়িয়েই লাফাচ্ছে৷ আনিতা ওরা গিয়ে দুই ম্যামকে স্টুডেন্টদের মাঝে নিয়ে এলো। স্টুডেন্ট ম্যাম সকলে একসাথে মিলে লাফালাফি হই হুল্লোড় করছে। স্যারের নিজেদের জায়গায় বসেই হাততালি দিচ্ছে আবার মাঝে মাঝে নেচে উঠছে।
এভাবেই প্রায় মিনিট বিশেক চলল। আনিতার পানি পিপাসা লাগায় ওর সিটে থেকে পানির বোতল নিয়ে পানি খেয়ে নিলো খানিকটা। তখনই আনিতার ফোন বেজে উঠে। ফোন হাতে নিয়ে দেখে আহিয়ানের ফোন। আরো চারবার কল করেছিলো। নাচানাচির তালে থাকায় বুঝতে পারেনি। তাড়াতাড়ি করে কলব্যাক করলো আনিতা। একবার রিং হতেই আহিয়ান ফোন রিসিভ করে বলল,
–“এতক্ষণে আমার বউয়ের বাদরের মতো লাফালাফি নাচানাচি বন্ধ হলো তাই না?”
বউ কথাটা শুনে আনিতার কান গরম হয়ে এলো লজ্জায়। আমতা আমতা করে বলল,
–“না মানে আসলে গানের শব্দে খেয়াল করিনি।”
–“হুম বুঝেছি। এখন বাস থেকে বের হয়ে এসো। কিছু খাওনি নিশ্চয়ই? ফেরীর দোতলায় হোটেল আছে একটা ফাস্ট আসো। খাবে কিছু।”
–“এই খেয়েছি তো আমি।”
–“হ্যাঁ দেখেছি। ওই তো ডিমের কুসুম আর এক বাইট পাউরুটি সাথে এক কাপ চা। এতে হবে না বের হয়ে আসো বলছি।”
–“পেট ভরা তো আমার।”
–“যেভাবে বাদরের মতো লাফালাফি নাচানাচি করছো এতে ওইটুকু খাবার অনেক আগেই হজম হয়ে গেছে। কোনো কথা শুনতে চাই না। এক্ষুনি আসো। আমি ওয়েট করছি। আর হ্যাঁ রোদেলা ওদেরকেও নিয়ে আসো। সবগুলোই তো একই রকম আপনারা।”
এইটুকু বলেই আহিয়ান লাইন কেটে দিলো৷ এই ছেলের কথা আবার অমান্য করা যাবে না। আনিতা রোদেলা ওদের নিয়ে ম্যামকে বলে বাস থেকে বের হয়ে এলো। বাস থেকে নামতেই দেখলো ওদের বাসের পাশের বাসের সামনেই আহিয়ান ফাইয়াজ শুভ দাঁড়িয়ে আছে। ওরা সকলে সিড়ি বেয়ে দোতলায় উঠে হোটেলে গিয়ে বসলো। সেখানে সকালের নাস্তা হিসেবে ভাত রুটি পরোটা খিচুড়ি আছে৷ শুভ শুধু নিজের জন্য খিচুড়ি নিলো আর ওরা সকলেই পরোটা নিয়েছে।
দোতলায় পুরোটা জুড়েই দোকান আর হোটেল রয়েছে। মাঝে কয়েক লাইন চেয়ার সাড়ি করে বসানো৷ ওরা সবাই মিলে বেশ কিছুটা সময় সেখানে বসে আড্ডা দিলো। আনিতা উঠে গিয়ে বারান্দায় দাঁড়ালো। বারান্দার রেলিঙে হাত রেখে নিচে পানির দিকে তাকালো ও৷ এতক্ষণ বোঝা যায়নি ফেরীটা চলছে। কিন্তু এখ৷ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে ফেরী নদী পাড়ি দিচ্ছে। কিছুটা ভয় কাজ করছে আনিতার মনে। কারন ও সাতার জানে না। বিষয়টা হাস্যকর হলেও সত্যি৷ পানিতে প্রচুর ভয় পায় আনিতা। হয়তোবা সাতার জানে না বলেই৷ আচমকা কেউ আনিতার কাঁধে হাত রাখতেই আনিতা বেশ ঘাবড়ে গেলো। ভয় পেয়েছে খুব। বুকে ফুঁ দিয়ে পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখলো আহিয়ান দাঁড়ানো। আনিতা রেলিঙের সাথে পিঠ লাগিয়ে আহিয়ানের দিকে মুখোমুখি হয়ে দাঁড়ালো৷ আহিয়ানও আনিতার পাশে গিয়ে রেলিঙে পিঠ লাগিয়ে দাঁড়ালো। তারপর আনিতার মাথাটা নিজের কাঁধে রেখে বলল,
–“এখানে একা একা কি করছিলে? মন খারাপ?”
–“নাহ তো।”
–“তাহলে?”
–“এমনি দাঁড়িয়ে ছিলাম।”
কথাটা বলে আনিতা সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আবারো নদীর দিকে তাকিয়ে রেলিঙের উপর হাত রাখলো। তারপর দূরে আঙুল দিয়ে ইশারা করে আহিয়ানকে বলল,
–“ওই যে দেখুন এখান থেকে পদ্মা সেতু দেখা যাচ্ছে। কাজ চলছে এখনো।”
আহিয়ানও নদীর দিকে মুখ করে দাঁড়ালো৷ আহিয়ানও তাকিয়ে আছে অর্ধেক হওয়া পদ্মা সেতুর দিকে। বেশ কিছুটা সময় দুজনে ওখানেই কাটালো। ফেরী শরিয়তপুর ঘাটের কাছাকাছি চলে এসেছে। তাই ওরা নিচে নেমে আবারো যার যার বাসে উঠে বসলো। মিনিট পাঁচেকের মাঝেই ফেরী শরিয়তপুর ঘাটে এসে থামলো। একে সব বাসগুলো ফেরী থেকে নেমে রাস্তায় উঠলো। শরিয়তপুর পেড়িয়ে ফরিদপুর ভাঙা উপজেলা বঙ্গবন্ধু রোড সব ছাড়িয়ে গোপালগঞ্জের রাস্তায় ঢুকলো বাস।
গোপালগঞ্জের রাস্তায় বাস ঢুকতেই সবগুলো বাসে একসাথে হৈচৈ পড়ে গেলো। আনিতা ওরা সকলে গানের লড়াই খেলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। বাসের মাঝামাঝি জায়গায় দুই সাইডের সিটেই সকলে জটলা পাকিয়েছে৷ সব মেয়েরা দু ভাগে ভাগ হয়ে গেলো। আর স্যার ম্যামরাও স্টুডেন্টদের সাথে দুই ভাগে ভাগ হলো। শুরু হয়ে গেলো গানের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। খালি গলায় গানের তালে তালে সকলে আবার নাচছেও৷
এভাবেই হই হুল্লোড় আনন্দ করতে করতে একসময় বঙ্গবন্ধু সমাধি কমপ্লেক্সের কিছুটা সামনে এসে ওদের বাস থামায়। একে একে সকলে বাস থেকে নেমে যায়। অপেক্ষা করছে বাকী বাসগুলোর। কয়েক সেকেন্ড বা মিনিটের ব্যবধানে একে একে সবগুলো বাসা এসে জায়গা মতো পার্ক করে। সবাই একসাথেই বঙ্গবন্ধু সমাধি কমপ্লেক্সের ভিতরে প্রবেশ করে৷ আনিতা ওরা প্রথমেই ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে। মিনিট দশেক বাদে সকলে ফ্রেস হয়ে বের হয়ে আসে। হাজার হাজার মানুষের ভীর। অনেকেই এসেছেন এখানে ঘুরতে। আনিতা ওরা এক সাইডে দাঁড়িয়ে ছিলো। আহিয়ান ওদের সাথে এখনো দেখা হয়নি। কিছুক্ষণের মাঝেই আহিয়ান ফোন করলো আনিতাকে। আনিতা কোথায় আছে সেটা জেনে ফোন রেখে দিলো ও। মিনিট দুয়েক বাদেই আহিয়ান ফাইয়াজ শুভ এসে দাঁড়ালো ওদের সামনে। তারপর সকলে মিলে সামনের দিকে পা বাড়ালো সবটা ঘুড়ে দেখার জন্য।
#শুধু_তোমারই_জন্য(২)
লেখনীতে- অরনিশা সাথী
|১৫|
বঙ্গবন্ধু সমাধি কমপ্লেক্সে পুরোটা ঘুরে পৌনে চারটা নাগাদ সকল স্টুডেন্টরা দুপুরের খাবার খেতে বসে। বঙ্গবন্ধু সমাধি কমপ্লেক্সের ভিতরে একটা রেস্তোরাঁ আছে। স্যাররা আসার আগেই তাদের সাথে কথা বলে রেখেছিলেন সকল স্টুডেন্ট এন্ড টিচারদের একটা তালিকা করে জানিয়ে দিয়েছিলেন। সে অনুযায়ী এখানকার স্টাফরা খাবার রেখেছিলেন। প্রায় সকলের খাওয়া শেষ৷ আনিতা ওরা সবার লাস্টে গিয়ে বসেছে খেতে। ভিতরে বসেছে অনেকে। কিন্তু আনিতা ওরা রেস্তোরাঁর বাইরে বসেছে। সেখানে দুটো টেবিল একসাথে সেট করা ছিলো। আনিতা ওরা খেতে বসেছে কিছুক্ষণ হবে। এর মাঝেই রিদমান রুশান ওরা বসলো ওদের টেবিলে এসে। আহিয়ান আর আনিতা পাশাপাশি চেয়ারে বসেছে। আর রিদমান রুশান এসে আনিতাদের মুখোমুখি বসেছে। কিছু সময় বাদে খাবার দিয়ে গেলে সকলে একসাথে খেতে শুরু করে৷ দুপুরের খাবারের জন্য রয়েছে পোলাও, রোস্ট, ডিমের কোরমা, সবজি আর গরুর মাংস কষা। আনিতা বসে বসে ডিমের কুসুম খাচ্ছে। আহিয়ান ওর প্লেট থেকে ডিমের কুসুমটা নিয়ে আনিতার প্লেটে দিলো। আনিতা চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই আহিয়ান হেসে খাওয়ায় মনোযোগ দেয়৷ সামনে বসেই রিদমান সবটা দেখছে। প্রথম দেখাতেই আনিতা মেয়েটাকে ওর একটু একটু ভালো লাগতে শুরু করেছে। আনিতা রোস্ট অর্ধেকটা খেয়ে বসে বসে সবজি খাচ্ছিলো। আনিতা সবজি খায়না বললেই চলে। কিন্তু এই সবজিটা ওর কাছে খুব ভালো লাগছে বিধায় খাচ্ছে।
খাওয়া শেষে সবাই বঙ্গবন্ধু সমাধি কমপ্লেক্সের বাইরে চলে এলো। এখান থেকে শেখ রাসেল পৌর শিশু পার্কে যাবে ওরা সকলে। এখানে যাতায়াতের জন্য অটোরিকশা, রিকশা তো আছেই সাথে ভ্যানগাড়িও প্রচলিত। আনিতা ওরা সবাই ভ্যানে চেপে বসলো। এখান থেকে শেখ রাসেল পৌর শিশু পার্কে ওরা ভ্যানে করেই যাবে। ওরা তো ভ্যানে কখনো যাতায়াত করেনি তাই এখন ভ্যানে যাতায়াত করার লোভটা ঠিক সামলে উঠতে পারলো না। ভ্যানের সামনে দুই পাশে রোদেলা আর জেরিন পা ঝুলিয়ে বসে আছে। আর পেছনে আনিতা আহিয়ান একসাথে পা ঝুলিয়ে বসেছে পাশাপাশি। অন্য একটা ভ্যানে তাসকিয়া ফাইয়াজ আর শুভ আছে। ভ্যান চলতে শুরু করে। কিছু সময়ের মাঝে আনিতা ওরা ওদের গন্তব্যস্থলে পৌঁছে যায়। টিকিট কেটে সকলেই পার্কের ভিতরে ঢুকে। পুরো পার্ক ঘোরা শেষে সাড়ে পাঁচটা নাগাদ ওরা সবাই পার্ক থেকে বের হয়ে বাসে উঠে।
পদ্মার বুকে ফেরী চলছে৷ আনিতা রোদেলা জেরিন তাসকিয়া শুভ আহিয়ান ফাইয়াজ সাথে যোগ হয়েছে রুশান আর রিদমান এই নয়জন মিলে ফেরীর দোতলায় উঠে চেয়ারে বসে আড্ডা দিচ্ছে। পাশেই বেশ কিছু দোকানপাট রয়েছে। শুভ ফাইয়াজ চা এনে সকলের হাতে দিচ্ছে। সবাই মিলে আড্ডার আসরে একের পর এক চায়ের কাপ শেষ করছে। রাত সাড়ে দশটা নাগাদ বাজে। আনিতা ওরা সবাই যার যার বাসে গিয়ে বসে পড়লো৷ গোপালগঞ্জ থেকে শরিয়তপুর ফেরীঘাট অব্দি ওরা সবাই বাসে বেশ ইঞ্জয় করেছে৷ রাতের গোপালগঞ্জ ফরিদপুর শরিয়তপুর শহর দেখেছে ওরা। যা ওরা কখনো ভাবেনি দেখতে পারবে। মাওয়া ঘাট থেকে বাস ফেরী থেকে নেমে কলেজের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলো৷ বাসের সবাই মিলে একসাথে উচ্চস্বরে গান গাইছে। সাথে স্যার ম্যামরাও তাল মিলিয়েছে। এভাবে হই হুল্লোড় করতে করতে সাড়ে এগারোটা নাগাদ কলেজের সামনে এসে বাস দাঁড়ালো৷ আনিতা দের বাস প্রথমে ছিলো। তাই ওরা বাস থেকে নেমে বাকী বাসগুলোর জন্য ওয়েট করছিলো। কিছু সময়ের ব্যবধানে একে একে সবগুলো বাস এসে থামলো৷ অনেকের বাড়ির লোক এসেছে নিতে আবার অনেকে দল বেঁধে একসাথে যাচ্ছে। মাওয়া থেকে বের হওয়ার পরই ফাইয়াজ ওদের বাসার পাশের একজন অটোরিকশা চালককে ফোন করে এখানে আসতে বলেছিলো। কারন এত রাতে এখানে রিকশা গাড়ি কিছুই পাওয়া যাবে না। এটা গ্রাম নয়টা সাড়ে নয়টা কিংবা খুব বেশি হলে দশটা নাগাদ গাড়ি পাওয়া যাবে। আর এখন তো সাড়ে এগারোটার উপরে বাজে। ওরা সবাই অটোরিকশায় উঠে বসলো। প্রথমে তাসকিয়া আর রোদেলাকে ওদের বাসায় নামিয়ে দিয়ে জেরিন আর শুভকে নামিয়ে দিলো ওদের বাসায়। তারপর আহিয়ান ফাইয়াজ আনিতা ওরা নিজেদের বাসায় চলে গেলো৷
–
বিয়ের কেনাকাটা চলছে তাসকিয়া আর ফাইয়াজের। কিছুদিন আগে অন্য এক জায়গায় তাসকিয়ার বিয়ে ঠিক হয়ে গেলে ফাইয়াজ গিয়ে সেই বিয়ে ভেঙে দেয়। তাসকিয়া ফাইয়াজ দুজনেই তাসকিয়ার বাবার হাতে পায়ে ধরে অনেক রিকুয়েষ্ট করে রাজি করায় উনাদের। অবশেষে নিজের মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে ওদের দুজনের সম্পর্কটা মেনে নেন তাসকিয়ার বাবা। পরদিনই ফাইয়াজের বাবা মা গিয়ে ওদের দুজনের বিয়ের ডেট ফিক্সড করে আসে। আর মাত্র চারদিন বাকী বিয়ের৷ কিন্তু অফিসের কাজের জন্য আহিয়ান এসে উঠতে পারেনি এখনো৷ সেজন্য আনিতা বিয়ের শপিংও করেনি। আহিয়ান এলে একসাথে শপিং করতে যাবে বলে।
ছাদে দাঁড়িয়ে আছে আনিতা৷ ভালো লাগছে না ওর কিছু। একটু আগেও আহিয়ান ফোন করেছিলো। বলল শপিং করে নিতে। ও কবে আসবে এখনো শিউর না। হলুদের দিনও আসতে পারে আবার সরাসরি বিয়েতেও জয়েন করতে পারে। এসব ভেবেই আনিতার মন খারাপ হচ্ছে। মাগরিবের আজান দিতে এখনো আধ ঘন্টার বেশি বাকী। এমন সময় আনিতা দেখলো আহিয়ান ঢুকছে বাসায়। কাঁধে ব্যাগ ঝুলানো। প্রচন্ডরকম খুশি হয়ে গেলো আনিতা৷ তারমানে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্যই আহিয়ান বিকেলে ফোন দিয়ে আসবে না বলেছিলো ওকে? কথাটা ভেবে মৃদু হাসলো আনিতা। ঠিক করলো নিচে যাবে না। এখানেই থাকবে৷ এই ভেবে আনিতা ছাদের দরজা লাগিয়ে দিলো। ছাদের অন্যপাশে গিয়ে রেলিং ঘেঁষে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো। এখান থেকে দূরের মাঠটা দেখা যাচ্ছে। বাচ্চারা খেলছে ওখানে। কেউ কেউ মাঠে বসে আড্ডা দিচ্ছে। একপাশে ঝালমুড়ি ফুচকার গাড়ি বসেছে। হুট করেই আনিতার ঝালমুড়ি আর ফুচকা খেতে ইচ্ছে করলো। ফোন নিয়ে আরোহীকে কল করলো। আরোহী রিসিভ করতেই আনিতা বলল,
–“মাঠে আয় ঝালমুড়ি ফুচকা খাবো।”
আরোহীকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই আনিতা লাইন কেটে দিয়ে ছাদের দরজার দিকে দৌড় লাগালো। ছাদের দরজা খুলে দৌড়ে নিচে নামতে গেলেই পেছন থেকে আহিয়ান আনিতার হাত চেপে ধরলো। পেছন ঘুরে আনিতা আহিয়ানকে দেখে বলল,
–“আপনি? আপনি ছাদে এলেন কিভাবে? আমি তো ছাদের দরজা আটকে রেখেছিলাম।”
–“এই ছাদের দরজা লাগিয়েছো। কিন্তু ফাইয়াজদের ছাদের দরজা তো আর লাগাওনি। বাই দ্যা ওয়ে, এভাবে দৌড়ে কোথায় যাচ্ছো তুমি?”
–“বলবো না। আপনি যে আজকে আসবেন আমাকে বলেছেন? বলেন নি তো। উলটো বিকেলে ফোন দিয়েও বলেছেন আসতে পারবেন না। তাহলে আমি আপনাকে কেন বলবো আমি কোথায় যাচ্ছি?”
–“ওহ আচ্ছা এই ব্যাপার? ম্যাডামের তাহলে এর জন্য মন খারাপ হয়েছে? ব্যাপার না। ম্যাডামের মন ভালো করার মেডিসিন আছে আমার কাছে।”
এই বলে আনিতাকে একদম নিজের কাছে নিয়ে এলো। আনিতার গালমুখে উপচে পড়া চুলগুলো কানের পিঠে গুজে দিয়ে ফিসফিস করে বলল,
–“ভালোবাসি বউ। খুউব বেশিই ভালোবাসি।”
লজ্জা পেয়ে গেলো আনিতা। আহিয়ান এখনো আনিতার কোমড় চেপে ধরে আছে। আহিয়ান আনিতার ঠোঁটের দিকে এগোচ্ছে। আনিতার হৃদপিণ্ডটা লাফাচ্ছে। চোখ বন্ধ করে নিলো আনিতা। আহিয়ান সবেই আনিতার ঠোঁটজোড়া নিজের দখলে নিয়েছে আর তখনই আনিতার ফোন বেজে উঠলো। চমকে তাকালো আনিতা। আচমকা ফোনের রিংটোন বাজাতে আহিয়ান আনিতা দুজনেই হুমড়ি খেয়ে একে অপরের থেকে দূরে সরে দাঁড়ালো। আহিয়ান দূরে সরে মাথা চুলকাচ্ছে। ওর মুখ দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে ফোন করেছে তাকে মনে মনে ঝাড়ছে ও। আনিতা হেসে ফোন কেটে দিয়ে ম্যাসেজ করে জানালো, আসছি। মৃদু হেসে আহিয়ানকে বলল,
–“মাঠে যাচ্ছি আমি। চাইলে আসতে পারেন। আবার না-ও আসতে পারেন। আপনার ইচ্ছা।”
এইটুকু বলেই আনিতা রুমে গিয়ে পার্স থেকে কিছু টাকা নিয়ে মাঠে যাওয়ার জন্য বের হলো। আনিতা গিয়ে দেখলো আরোহী আগে থেকেই বসে আছে মাঠে৷ আনিতা গিয়ে আরোহীর পাশে বসতেই আহিয়ান আর অনিমা গিয়ে বসলো ওদের পাশে। প্রথমে চার প্লেট ফুচকা অর্ডার করলো ওরা। ফুচকা খাওয়া শেষে আনিতা আর আরোহী আবার ঝালমুড়িও অর্ডার দিলো। আরোহী ঝাল কম খায় তবে আনিতারটা বেশ ঝাল দিয়ে বানাতে বলল। আহিয়ান আর অনিমা ঝালমুড়ি খাবে না। ফুচকা খেয়েই নাকি ওদের পেট ভরে গেছে। আনিতা এক চামচ ঝালমুড়ি আহিয়ানের মুখের সামনে ধরলে আহিয়ান বলে,
–“ঝাল খাইয়ে মারার প্ল্যান করছেন নাকি ম্যাডাম?”
–“উঁহু একদম না। মানবতার খাতিরে সাধলাম। না দিলে তো আবার বলবেন আমি একা একাই খাচ্ছি।”
–“হুম তা অবশ্য ঠিক। তবে বউ যখন দিয়েছে বউয়ের জন্য তো এতটুকু ঝাল খাওয়া-ই যায়।”
এই বলে আহিয়ান খেয়ে নিলো৷ আনিতা অনিমাকেও সাধলো। কিন্তু ও বলল,
–“তোরটা তুই-ই খা। আমি আরোহীপুর থেকে খামু।”
আনিতা আর আপত্তি জানালো না। ও নিজেই খেতে লাগলো। আহিয়ান আর খায়নি। একবার খেয়েই ওর অবস্থা শেষ। আহিয়ান আনিতাকে বলল,
–“ভাত খাওয়ার সময় তো একবার খেয়ে আর দ্বিতীয় বার নাও না। তাহলে এখন ফুচকা খেয়ে আবার ঝালমুড়ি খাচ্ছো কিভাবে?”
আনিতা ঝালমুড়ি খেতে খেতে উত্তর দিলো,
–“ইট’স সিক্রেট জামাই। বলা যাবে না।”
সবার সামনে এরকম আনিতার মুখে জামাই ডাক শুনে আহিয়ান ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। পরমূহুর্তেই নিজেকে সামলে নিলো ও। আহিয়ানের কান্ডে আরোহী মৃদু হাসলো। ঝালমুড়ি ফুচকা খাওয়া শেষে মাঠে বসে আড্ডা দিয়েছে চারজনে কিছুটা সময়। তারপর মাগরিবের আজানের মিনিট পাঁচেক আগেই বাসায় চলে এসেছে ওরা। আহিয়ান সাথে করে বাড়ির সকলের জন্য ফুচকাও নিয়ে এসেছে। আর জারাফের জন্য আইসক্রিম।
রাতের খাবার খেয়ে আনিতা আর আহিয়ান রুমে চলে এলো। আনিতা ওয়াশরুমে গিয়ে জামা পালটে টি-শার্ট আর প্লাজো পড়ে নিলো। আনিতা এসে রুমের লাইট অফ করার জন্য পা বাড়াতেই বারান্দা থেকে আহিয়ান এসে দাঁড়ালো আনিতার সামনে। আচমকা আহিয়ান এসে পড়াতে দু পা পিছিয়ে যায় আনিতা৷ আহিয়ান আনিতার দিকে এগোতে এগোতে একটানে নিজের গায়ে থেকে টি-শার্ট খুলে বিছানার একপাশে ছুড়ে মারলো। আহিয়ানকে এগোতে দেখে পিছিয়ে যায় আনিতা। পিছিয়ে যেতে যেতে একসময় আনিতা বিছানার সাথে বাড়ি খেয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো ও। ধপ করে আহিয়ানও আনিতার উপরে উঠে শুয়ে পড়লো। আনিতা চিৎকার করে বলল,
–“ওরে মা রে__ওরে বাবারে মরে গেলাম আমি। এই আপনি উঠুন তো। আপনার মতো একটা মানুষের শরীরের পুরো ভর আমার মতো একটা মেয়ে নিতে পারে? সামান্য সেন্স টুকু নেই আপনার?”
আহিয়ান কিছু না বলে নিজের দু পা দিয়ে আনিতার দু পা আটকে দিলো৷ আর আনিতার দুহাতও নিজের দুহাতের মুঠোয় নিয়ে আনিতার গলায় কামড় বসালো একটা। মৃদু চিৎকার করে উঠলো আনিতা। খানিক বাদেই আবার কামড়ে দেওয়া জায়গায় শব্দ করে একটা চুমু খেয়ে আহিয়ান বলল,
–“এজন্যই তো বলি বেশি বেশি খাও। বেশি করে না খেলে ফিউচারে আমার শরীরের ভর নিবে কিভাবে? এখন শান্তশিষ্ট হয়ে আছি বলে ভেবো না সারাজীবন এভাবেই থাকবো। ১৮+ হবে আর তো মাত্র কয়েকটা দিন। তারপর কিন্তু তোমার কাছে আসলে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারবো না বলে দিলাম। তখন আমার তোমাকে আরো গভীর ভাবে লাগবে। এখনো কয়েকটা দিন সময় আছে হাতে বেশি বেশি খেয়ে নিজেকে ফিট রাখো৷”
আনিতা আহিয়ানকে ঠেলে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে বলল,
–“পরে কথা বলেন। আগে আপনি আমার উপর থেকে উঠুন তো।”
আহিয়ান স্পষ্ট বুঝতে পারলো আনিতার বিরক্ত রাগ দুটোই হচ্ছে৷ একে তো হুট করেই মেয়েটার উপর ঝাপিয়ে পড়েছে। তার উপর এত করে সরতে বলছে তবুও সরছে না৷ আহিয়ান আনিতাকে আরো একটু জ্বালানোর জন্য ভালো করে আনিতাকে আষ্টেপৃষ্টে ধরলো। আনিতার গলায় মুখ ডুবিয়ে বলল,
–“এই আমি যে এখন তোমার উপরে আছি। কেমন লাগছে এখন? তোমার কোনো ফিলিংস হচ্ছে না আমি তোমার উপরে থাকাতে?”
–“হ্যাঁ হচ্ছে তো। ফিলিংস হবে না কেন? অবশ্যই ফিলিংস হচ্ছে আমার।”
–“বলো না কেমন ফিলিংস হচ্ছে? সামথিং স্পেশাল টাইপ? এই তুমি যদি বলো তাহলে কিন্তু আমি আমার কথা ফিরিয়ে নিতে রাজি৷ ১৮+ হওয়ার আগেই___”
–“মরে যাবো মরে যাবো টাইপ ফিলিংস হচ্ছে আমার। প্লিজ এবার তো সরুন।”
–“আচ্ছা তো এইটা বলো, মরে যাবো মরে যাবো টাইপ ফিলিংস কি লজ্জায় হচ্ছে? নাকি আমার উপর রাগের কারনে হচ্ছে?”
–“দুটোই। এবার সরুন না প্লিজ।”
কথাটা বলে আনিতা এবারে বেশ জোরেই আহিয়ানকে ধাক্কা মেরে নিজের উপর থেকে বিছানায় ফেলে দিলো। আনিতা উঠে বসে বুকে হাত দিয়ে হাঁপাচ্ছে। আনিতার কান্ডে খানিকটা শব্দ করে হেসে দিলো আহিয়ান। আনিতা চোখ পাকিয়ে তাকাতেই আহিয়ান ঠোঁটে আঙুল দিয়ে বলল,
–“এই যে ঠোঁটে আঙুল দিয়েছি আর হাসবো না।”
আনিতা বিছানা ছেড়ে উঠে গেলো। আহিয়ান বালিশ ঠিক করে নিজের বালিশে মাথা রেখে শুয়ে ফোন স্ক্রল করছে। আনিতা রুমের লাইট অফ করে এসে নিজের জায়গায় শুয়ে পড়লো৷ খানিক বাদেই আহিয়ানের হাত থেকে ফোন নিয়ে বালিশের পাশে রেখে দিলো। তারপর আহিয়ানের হাত সরিয়ে আহিয়ানের বুকে মাথা রাখলো আনিতা। আহিয়ানও আনিতাকে জড়িয়ে নিলো নিজের বুকের সাথে। আনিতা আহিয়ানের উম্মুক্ত বুকে কিছু সময় চুপটি করে শুয়ে আহিয়ানের শরীরের স্মেল নিলো। এই ছেলেটার শরীরের স্মেল ওর বড্ড ভালো লাগে। তারপর হঠাৎ করেই আহিয়ানের গালে নাক ঘষতে লাগলো। তা দেখে আহিয়ান বলে,
–“কি হয়েছে? এরকম করছো যে?”
–“ডোন্ট ডিস্টার্ব মি।”
কথাটা বলে আনিতা আবারো একই কাজ করতে লাগলো। আহিয়ান সরে গিয়ে পাশ ফিরে শুয়ে বলল,
–“ওকে ডিস্টার্ব করলাম না।”
আনিতা আহিয়ানকে আবারো টেনে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলো। গাল ধরে আহিয়ানের মুখটা নিজের একদম কাছে নিয়ে এসে বলল,
–“আপনার গাল আর চাপদাড়ি গুলোর স্মেল আমার কাছে খুউউউব ভাল্লাগে। আপনার গালে আর চাপদাড়িতে নাক ঘষতেও প্রচুউউউর ভালোলাগে আমার। সো আমি এখন তাই করবো যা করতে আমার ইচ্ছে হয়। এভাবেই চুপচাপ শুয়ে থাকুন। আবারো বলছি ডোন্ট ডিস্টার্ব মি।”
কথাগুলো একদমে বলে আনিতা আহিয়ানের আরো কাছে চলে গেলো। প্রথমে আহিয়ানের কপালে শব্দ করে একটা চুমু খেয়ে গালেও চুমু খেলো। তারপর আবারো আহিয়ানের গাল আর চাপদাড়ি জুড়ে নাক ঘষতে শুরু করলো ও। আহিয়ান মুচকি হাসলো আনিতার কাজে। মেয়েটা সত্যিই পাগল একটা। আহিয়ানও আষ্টেপৃষ্টে আনিতাকে জড়িয়ে নিয়ে ওর মাথায় একটা চুমু দিয়ে শুয়ে পড়লো।
চলবে ইনশাআল্লাহ~