শুধু তোমারই জন্য ২ পর্ব -১৫+১৬

#শুধু_তোমারই_জন্য(২)
লেখনীতে- অরনিশা সাথী

|১৫|

বঙ্গবন্ধু সমাধি কমপ্লেক্সে পুরোটা ঘুরে পৌনে চারটা নাগাদ সকল স্টুডেন্টরা দুপুরের খাবার খেতে বসে। বঙ্গবন্ধু সমাধি কমপ্লেক্সের ভিতরে একটা রেস্তোরাঁ আছে। স্যাররা আসার আগেই তাদের সাথে কথা বলে রেখেছিলেন সকল স্টুডেন্ট এন্ড টিচারদের একটা তালিকা করে জানিয়ে দিয়েছিলেন। সে অনুযায়ী এখানকার স্টাফরা খাবার রেখেছিলেন। প্রায় সকলের খাওয়া শেষ৷ আনিতা ওরা সবার লাস্টে গিয়ে বসেছে খেতে। ভিতরে বসেছে অনেকে। কিন্তু আনিতা ওরা রেস্তোরাঁর বাইরে বসেছে। সেখানে দুটো টেবিল একসাথে সেট করা ছিলো। আনিতা ওরা খেতে বসেছে কিছুক্ষণ হবে। এর মাঝেই রিদমান রুশান ওরা বসলো ওদের টেবিলে এসে। আহিয়ান আর আনিতা পাশাপাশি চেয়ারে বসেছে। আর রিদমান রুশান এসে আনিতাদের মুখোমুখি বসেছে। কিছু সময় বাদে খাবার দিয়ে গেলে সকলে একসাথে খেতে শুরু করে৷ দুপুরের খাবারের জন্য রয়েছে পোলাও, রোস্ট, ডিমের কোরমা, সবজি আর গরুর মাংস কষা। আনিতা বসে বসে ডিমের কুসুম খাচ্ছে। আহিয়ান ওর প্লেট থেকে ডিমের কুসুমটা নিয়ে আনিতার প্লেটে দিলো। আনিতা চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই আহিয়ান হেসে খাওয়ায় মনোযোগ দেয়৷ সামনে বসেই রিদমান সবটা দেখছে। প্রথম দেখাতেই আনিতা মেয়েটাকে ওর একটু একটু ভালো লাগতে শুরু করেছে। আনিতা রোস্ট অর্ধেকটা খেয়ে বসে বসে সবজি খাচ্ছিলো। আনিতা সবজি খায়না বললেই চলে। কিন্তু এই সবজিটা ওর কাছে খুব ভালো লাগছে বিধায় খাচ্ছে।

খাওয়া শেষে সবাই বঙ্গবন্ধু সমাধি কমপ্লেক্সের বাইরে চলে এলো। এখান থেকে শেখ রাসেল পৌর শিশু পার্কে যাবে ওরা সকলে। এখানে যাতায়াতের জন্য অটোরিকশা, রিকশা তো আছেই সাথে ভ্যানগাড়িও প্রচলিত। আনিতা ওরা সবাই ভ্যানে চেপে বসলো। এখান থেকে শেখ রাসেল পৌর শিশু পার্কে ওরা ভ্যানে করেই যাবে। ওরা তো ভ্যানে কখনো যাতায়াত করেনি তাই এখন ভ্যানে যাতায়াত করার লোভটা ঠিক সামলে উঠতে পারলো না। ভ্যানের সামনে দুই পাশে রোদেলা আর জেরিন পা ঝুলিয়ে বসে আছে। আর পেছনে আনিতা আহিয়ান একসাথে পা ঝুলিয়ে বসেছে পাশাপাশি। অন্য একটা ভ্যানে তাসকিয়া ফাইয়াজ আর শুভ আছে। ভ্যান চলতে শুরু করে। কিছু সময়ের মাঝে আনিতা ওরা ওদের গন্তব্যস্থলে পৌঁছে যায়। টিকিট কেটে সকলেই পার্কের ভিতরে ঢুকে। পুরো পার্ক ঘোরা শেষে সাড়ে পাঁচটা নাগাদ ওরা সবাই পার্ক থেকে বের হয়ে বাসে উঠে।

পদ্মার বুকে ফেরী চলছে৷ আনিতা রোদেলা জেরিন তাসকিয়া শুভ আহিয়ান ফাইয়াজ সাথে যোগ হয়েছে রুশান আর রিদমান এই নয়জন মিলে ফেরীর দোতলায় উঠে চেয়ারে বসে আড্ডা দিচ্ছে। পাশেই বেশ কিছু দোকানপাট রয়েছে। শুভ ফাইয়াজ চা এনে সকলের হাতে দিচ্ছে। সবাই মিলে আড্ডার আসরে একের পর এক চায়ের কাপ শেষ করছে। রাত সাড়ে দশটা নাগাদ বাজে। আনিতা ওরা সবাই যার যার বাসে গিয়ে বসে পড়লো৷ গোপালগঞ্জ থেকে শরিয়তপুর ফেরীঘাট অব্দি ওরা সবাই বাসে বেশ ইঞ্জয় করেছে৷ রাতের গোপালগঞ্জ ফরিদপুর শরিয়তপুর শহর দেখেছে ওরা। যা ওরা কখনো ভাবেনি দেখতে পারবে। মাওয়া ঘাট থেকে বাস ফেরী থেকে নেমে কলেজের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলো৷ বাসের সবাই মিলে একসাথে উচ্চস্বরে গান গাইছে। সাথে স্যার ম্যামরাও তাল মিলিয়েছে। এভাবে হই হুল্লোড় করতে করতে সাড়ে এগারোটা নাগাদ কলেজের সামনে এসে বাস দাঁড়ালো৷ আনিতা দের বাস প্রথমে ছিলো। তাই ওরা বাস থেকে নেমে বাকী বাসগুলোর জন্য ওয়েট করছিলো। কিছু সময়ের ব্যবধানে একে একে সবগুলো বাস এসে থামলো৷ অনেকের বাড়ির লোক এসেছে নিতে আবার অনেকে দল বেঁধে একসাথে যাচ্ছে। মাওয়া থেকে বের হওয়ার পরই ফাইয়াজ ওদের বাসার পাশের একজন অটোরিকশা চালককে ফোন করে এখানে আসতে বলেছিলো। কারন এত রাতে এখানে রিকশা গাড়ি কিছুই পাওয়া যাবে না। এটা গ্রাম নয়টা সাড়ে নয়টা কিংবা খুব বেশি হলে দশটা নাগাদ গাড়ি পাওয়া যাবে। আর এখন তো সাড়ে এগারোটার উপরে বাজে। ওরা সবাই অটোরিকশায় উঠে বসলো। প্রথমে তাসকিয়া আর রোদেলাকে ওদের বাসায় নামিয়ে দিয়ে জেরিন আর শুভকে নামিয়ে দিলো ওদের বাসায়। তারপর আহিয়ান ফাইয়াজ আনিতা ওরা নিজেদের বাসায় চলে গেলো৷

বিয়ের কেনাকাটা চলছে তাসকিয়া আর ফাইয়াজের। কিছুদিন আগে অন্য এক জায়গায় তাসকিয়ার বিয়ে ঠিক হয়ে গেলে ফাইয়াজ গিয়ে সেই বিয়ে ভেঙে দেয়। তাসকিয়া ফাইয়াজ দুজনেই তাসকিয়ার বাবার হাতে পায়ে ধরে অনেক রিকুয়েষ্ট করে রাজি করায় উনাদের। অবশেষে নিজের মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে ওদের দুজনের সম্পর্কটা মেনে নেন তাসকিয়ার বাবা। পরদিনই ফাইয়াজের বাবা মা গিয়ে ওদের দুজনের বিয়ের ডেট ফিক্সড করে আসে। আর মাত্র চারদিন বাকী বিয়ের৷ কিন্তু অফিসের কাজের জন্য আহিয়ান এসে উঠতে পারেনি এখনো৷ সেজন্য আনিতা বিয়ের শপিংও করেনি। আহিয়ান এলে একসাথে শপিং করতে যাবে বলে।

ছাদে দাঁড়িয়ে আছে আনিতা৷ ভালো লাগছে না ওর কিছু। একটু আগেও আহিয়ান ফোন করেছিলো। বলল শপিং করে নিতে। ও কবে আসবে এখনো শিউর না। হলুদের দিনও আসতে পারে আবার সরাসরি বিয়েতেও জয়েন করতে পারে। এসব ভেবেই আনিতার মন খারাপ হচ্ছে। মাগরিবের আজান দিতে এখনো আধ ঘন্টার বেশি বাকী। এমন সময় আনিতা দেখলো আহিয়ান ঢুকছে বাসায়। কাঁধে ব্যাগ ঝুলানো। প্রচন্ডরকম খুশি হয়ে গেলো আনিতা৷ তারমানে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্যই আহিয়ান বিকেলে ফোন দিয়ে আসবে না বলেছিলো ওকে? কথাটা ভেবে মৃদু হাসলো আনিতা। ঠিক করলো নিচে যাবে না। এখানেই থাকবে৷ এই ভেবে আনিতা ছাদের দরজা লাগিয়ে দিলো। ছাদের অন্যপাশে গিয়ে রেলিং ঘেঁষে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো। এখান থেকে দূরের মাঠটা দেখা যাচ্ছে। বাচ্চারা খেলছে ওখানে। কেউ কেউ মাঠে বসে আড্ডা দিচ্ছে। একপাশে ঝালমুড়ি ফুচকার গাড়ি বসেছে। হুট করেই আনিতার ঝালমুড়ি আর ফুচকা খেতে ইচ্ছে করলো। ফোন নিয়ে আরোহীকে কল করলো। আরোহী রিসিভ করতেই আনিতা বলল,
–“মাঠে আয় ঝালমুড়ি ফুচকা খাবো।”

আরোহীকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই আনিতা লাইন কেটে দিয়ে ছাদের দরজার দিকে দৌড় লাগালো। ছাদের দরজা খুলে দৌড়ে নিচে নামতে গেলেই পেছন থেকে আহিয়ান আনিতার হাত চেপে ধরলো। পেছন ঘুরে আনিতা আহিয়ানকে দেখে বলল,
–“আপনি? আপনি ছাদে এলেন কিভাবে? আমি তো ছাদের দরজা আটকে রেখেছিলাম।”

–“এই ছাদের দরজা লাগিয়েছো। কিন্তু ফাইয়াজদের ছাদের দরজা তো আর লাগাওনি। বাই দ্যা ওয়ে, এভাবে দৌড়ে কোথায় যাচ্ছো তুমি?”

–“বলবো না। আপনি যে আজকে আসবেন আমাকে বলেছেন? বলেন নি তো। উলটো বিকেলে ফোন দিয়েও বলেছেন আসতে পারবেন না। তাহলে আমি আপনাকে কেন বলবো আমি কোথায় যাচ্ছি?”

–“ওহ আচ্ছা এই ব্যাপার? ম্যাডামের তাহলে এর জন্য মন খারাপ হয়েছে? ব্যাপার না। ম্যাডামের মন ভালো করার মেডিসিন আছে আমার কাছে।”

এই বলে আনিতাকে একদম নিজের কাছে নিয়ে এলো। আনিতার গালমুখে উপচে পড়া চুলগুলো কানের পিঠে গুজে দিয়ে ফিসফিস করে বলল,
–“ভালোবাসি বউ। খুউব বেশিই ভালোবাসি।”

লজ্জা পেয়ে গেলো আনিতা। আহিয়ান এখনো আনিতার কোমড় চেপে ধরে আছে। আহিয়ান আনিতার ঠোঁটের দিকে এগোচ্ছে। আনিতার হৃদপিণ্ডটা লাফাচ্ছে। চোখ বন্ধ করে নিলো আনিতা। আহিয়ান সবেই আনিতার ঠোঁটজোড়া নিজের দখলে নিয়েছে আর তখনই আনিতার ফোন বেজে উঠলো। চমকে তাকালো আনিতা। আচমকা ফোনের রিংটোন বাজাতে আহিয়ান আনিতা দুজনেই হুমড়ি খেয়ে একে অপরের থেকে দূরে সরে দাঁড়ালো। আহিয়ান দূরে সরে মাথা চুলকাচ্ছে। ওর মুখ দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে ফোন করেছে তাকে মনে মনে ঝাড়ছে ও। আনিতা হেসে ফোন কেটে দিয়ে ম্যাসেজ করে জানালো, আসছি। মৃদু হেসে আহিয়ানকে বলল,
–“মাঠে যাচ্ছি আমি। চাইলে আসতে পারেন। আবার না-ও আসতে পারেন। আপনার ইচ্ছা।”

এইটুকু বলেই আনিতা রুমে গিয়ে পার্স থেকে কিছু টাকা নিয়ে মাঠে যাওয়ার জন্য বের হলো। আনিতা গিয়ে দেখলো আরোহী আগে থেকেই বসে আছে মাঠে৷ আনিতা গিয়ে আরোহীর পাশে বসতেই আহিয়ান আর অনিমা গিয়ে বসলো ওদের পাশে। প্রথমে চার প্লেট ফুচকা অর্ডার করলো ওরা। ফুচকা খাওয়া শেষে আনিতা আর আরোহী আবার ঝালমুড়িও অর্ডার দিলো। আরোহী ঝাল কম খায় তবে আনিতারটা বেশ ঝাল দিয়ে বানাতে বলল। আহিয়ান আর অনিমা ঝালমুড়ি খাবে না। ফুচকা খেয়েই নাকি ওদের পেট ভরে গেছে। আনিতা এক চামচ ঝালমুড়ি আহিয়ানের মুখের সামনে ধরলে আহিয়ান বলে,
–“ঝাল খাইয়ে মারার প্ল্যান করছেন নাকি ম্যাডাম?”

–“উঁহু একদম না। মানবতার খাতিরে সাধলাম। না দিলে তো আবার বলবেন আমি একা একাই খাচ্ছি।”

–“হুম তা অবশ্য ঠিক। তবে বউ যখন দিয়েছে বউয়ের জন্য তো এতটুকু ঝাল খাওয়া-ই যায়।”

এই বলে আহিয়ান খেয়ে নিলো৷ আনিতা অনিমাকেও সাধলো। কিন্তু ও বলল,
–“তোরটা তুই-ই খা। আমি আরোহীপুর থেকে খামু।”

আনিতা আর আপত্তি জানালো না। ও নিজেই খেতে লাগলো। আহিয়ান আর খায়নি। একবার খেয়েই ওর অবস্থা শেষ। আহিয়ান আনিতাকে বলল,
–“ভাত খাওয়ার সময় তো একবার খেয়ে আর দ্বিতীয় বার নাও না। তাহলে এখন ফুচকা খেয়ে আবার ঝালমুড়ি খাচ্ছো কিভাবে?”

আনিতা ঝালমুড়ি খেতে খেতে উত্তর দিলো,
–“ইট’স সিক্রেট জামাই। বলা যাবে না।”

সবার সামনে এরকম আনিতার মুখে জামাই ডাক শুনে আহিয়ান ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। পরমূহুর্তেই নিজেকে সামলে নিলো ও। আহিয়ানের কান্ডে আরোহী মৃদু হাসলো। ঝালমুড়ি ফুচকা খাওয়া শেষে মাঠে বসে আড্ডা দিয়েছে চারজনে কিছুটা সময়। তারপর মাগরিবের আজানের মিনিট পাঁচেক আগেই বাসায় চলে এসেছে ওরা। আহিয়ান সাথে করে বাড়ির সকলের জন্য ফুচকাও নিয়ে এসেছে। আর জারাফের জন্য আইসক্রিম।

রাতের খাবার খেয়ে আনিতা আর আহিয়ান রুমে চলে এলো। আনিতা ওয়াশরুমে গিয়ে জামা পালটে টি-শার্ট আর প্লাজো পড়ে নিলো। আনিতা এসে রুমের লাইট অফ করার জন্য পা বাড়াতেই বারান্দা থেকে আহিয়ান এসে দাঁড়ালো আনিতার সামনে। আচমকা আহিয়ান এসে পড়াতে দু পা পিছিয়ে যায় আনিতা৷ আহিয়ান আনিতার দিকে এগোতে এগোতে একটানে নিজের গায়ে থেকে টি-শার্ট খুলে বিছানার একপাশে ছুড়ে মারলো। আহিয়ানকে এগোতে দেখে পিছিয়ে যায় আনিতা। পিছিয়ে যেতে যেতে একসময় আনিতা বিছানার সাথে বাড়ি খেয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো ও। ধপ করে আহিয়ানও আনিতার উপরে উঠে শুয়ে পড়লো। আনিতা চিৎকার করে বলল,
–“ওরে মা রে__ওরে বাবারে মরে গেলাম আমি। এই আপনি উঠুন তো। আপনার মতো একটা মানুষের শরীরের পুরো ভর আমার মতো একটা মেয়ে নিতে পারে? সামান্য সেন্স টুকু নেই আপনার?”

আহিয়ান কিছু না বলে নিজের দু পা দিয়ে আনিতার দু পা আটকে দিলো৷ আর আনিতার দুহাতও নিজের দুহাতের মুঠোয় নিয়ে আনিতার গলায় কামড় বসালো একটা। মৃদু চিৎকার করে উঠলো আনিতা। খানিক বাদেই আবার কামড়ে দেওয়া জায়গায় শব্দ করে একটা চুমু খেয়ে আহিয়ান বলল,
–“এজন্যই তো বলি বেশি বেশি খাও। বেশি করে না খেলে ফিউচারে আমার শরীরের ভর নিবে কিভাবে? এখন শান্তশিষ্ট হয়ে আছি বলে ভেবো না সারাজীবন এভাবেই থাকবো। ১৮+ হবে আর তো মাত্র কয়েকটা দিন। তারপর কিন্তু তোমার কাছে আসলে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারবো না বলে দিলাম। তখন আমার তোমাকে আরো গভীর ভাবে লাগবে। এখনো কয়েকটা দিন সময় আছে হাতে বেশি বেশি খেয়ে নিজেকে ফিট রাখো৷”

আনিতা আহিয়ানকে ঠেলে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে বলল,
–“পরে কথা বলেন। আগে আপনি আমার উপর থেকে উঠুন তো।”

আহিয়ান স্পষ্ট বুঝতে পারলো আনিতার বিরক্ত রাগ দুটোই হচ্ছে৷ একে তো হুট করেই মেয়েটার উপর ঝাপিয়ে পড়েছে। তার উপর এত করে সরতে বলছে তবুও সরছে না৷ আহিয়ান আনিতাকে আরো একটু জ্বালানোর জন্য ভালো করে আনিতাকে আষ্টেপৃষ্টে ধরলো। আনিতার গলায় মুখ ডুবিয়ে বলল,
–“এই আমি যে এখন তোমার উপরে আছি। কেমন লাগছে এখন? তোমার কোনো ফিলিংস হচ্ছে না আমি তোমার উপরে থাকাতে?”

–“হ্যাঁ হচ্ছে তো। ফিলিংস হবে না কেন? অবশ্যই ফিলিংস হচ্ছে আমার।”

–“বলো না কেমন ফিলিংস হচ্ছে? সামথিং স্পেশাল টাইপ? এই তুমি যদি বলো তাহলে কিন্তু আমি আমার কথা ফিরিয়ে নিতে রাজি৷ ১৮+ হওয়ার আগেই___”

–“মরে যাবো মরে যাবো টাইপ ফিলিংস হচ্ছে আমার। প্লিজ এবার তো সরুন।”

–“আচ্ছা তো এইটা বলো, মরে যাবো মরে যাবো টাইপ ফিলিংস কি লজ্জায় হচ্ছে? নাকি আমার উপর রাগের কারনে হচ্ছে?”

–“দুটোই। এবার সরুন না প্লিজ।”

কথাটা বলে আনিতা এবারে বেশ জোরেই আহিয়ানকে ধাক্কা মেরে নিজের উপর থেকে বিছানায় ফেলে দিলো। আনিতা উঠে বসে বুকে হাত দিয়ে হাঁপাচ্ছে। আনিতার কান্ডে খানিকটা শব্দ করে হেসে দিলো আহিয়ান। আনিতা চোখ পাকিয়ে তাকাতেই আহিয়ান ঠোঁটে আঙুল দিয়ে বলল,
–“এই যে ঠোঁটে আঙুল দিয়েছি আর হাসবো না।”

আনিতা বিছানা ছেড়ে উঠে গেলো। আহিয়ান বালিশ ঠিক করে নিজের বালিশে মাথা রেখে শুয়ে ফোন স্ক্রল করছে। আনিতা রুমের লাইট অফ করে এসে নিজের জায়গায় শুয়ে পড়লো৷ খানিক বাদেই আহিয়ানের হাত থেকে ফোন নিয়ে বালিশের পাশে রেখে দিলো। তারপর আহিয়ানের হাত সরিয়ে আহিয়ানের বুকে মাথা রাখলো আনিতা। আহিয়ানও আনিতাকে জড়িয়ে নিলো নিজের বুকের সাথে। আনিতা আহিয়ানের উম্মুক্ত বুকে কিছু সময় চুপটি করে শুয়ে আহিয়ানের শরীরের স্মেল নিলো। এই ছেলেটার শরীরের স্মেল ওর বড্ড ভালো লাগে। তারপর হঠাৎ করেই আহিয়ানের গালে নাক ঘষতে লাগলো। তা দেখে আহিয়ান বলে,
–“কি হয়েছে? এরকম করছো যে?”

–“ডোন্ট ডিস্টার্ব মি।”

কথাটা বলে আনিতা আবারো একই কাজ করতে লাগলো। আহিয়ান সরে গিয়ে পাশ ফিরে শুয়ে বলল,
–“ওকে ডিস্টার্ব করলাম না।”

আনিতা আহিয়ানকে আবারো টেনে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলো। গাল ধরে আহিয়ানের মুখটা নিজের একদম কাছে নিয়ে এসে বলল,
–“আপনার গাল আর চাপদাড়ি গুলোর স্মেল আমার কাছে খুউউউব ভাল্লাগে। আপনার গালে আর চাপদাড়িতে নাক ঘষতেও প্রচুউউউর ভালোলাগে আমার। সো আমি এখন তাই করবো যা করতে আমার ইচ্ছে হয়। এভাবেই চুপচাপ শুয়ে থাকুন। আবারো বলছি ডোন্ট ডিস্টার্ব মি।”

কথাগুলো একদমে বলে আনিতা আহিয়ানের আরো কাছে চলে গেলো। প্রথমে আহিয়ানের কপালে শব্দ করে একটা চুমু খেয়ে গালেও চুমু খেলো। তারপর আবারো আহিয়ানের গাল আর চাপদাড়ি জুড়ে নাক ঘষতে শুরু করলো ও। আহিয়ান মুচকি হাসলো আনিতার কাজে। মেয়েটা সত্যিই পাগল একটা। আহিয়ানও আষ্টেপৃষ্টে আনিতাকে জড়িয়ে নিয়ে ওর মাথায় একটা চুমু দিয়ে শুয়ে পড়লো।
#শুধু_তোমারই_জন্য(২)
লেখনীতে- অরনিশা সাথী

|১৬|

কাচা হলুদ কালারের একটা লেহেঙ্গা পড়েছে আনিতা। মাঝে সিথী করে মাথায় সিলভার রঙের বড় টিকলি কানে বড় ঝুমকো। আর গলায় আহিয়ানের পড়িয়ে দেওয়া ছোট্ট হোয়াইট গোল্ডের একটা চেইন আর তাতে ইংলিশ ফ্রন্টে ‘এ’ লেটারের ছোট্ট একটা লকেট ঝুলানো। কোমড় সমান চুলগুলো ডান কানের পিঠে বড় করে একটা খোপা করে তাতে বেলি ফুলের মালা আটকানো। চোখে গাঢ় কাজল, ঠোঁটে নুড লিপস্টিক। ব্যাস এইটুকুতেই আজকে ফাইয়াজের হলুদের জন্য রেডি আনিতা। সেবারে ওর ছোট চাচ্চুর বিয়েতে দুদিন পার্লারে সেজেছে আবার ওর কাবিনেও সেজেছিলো ফলে মুখে ব্রন উঠেছিলো কিছুটা। তাই এবারে ওর আম্মু পার্লারে যাওয়ার জন্য একদমই বারন করে দিয়েছেন। একটি আধটু মন খারাপ হয়েছে আনিতার। তবে সেটা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। কেননা, আহিয়ান আজ নিজ হাতে সাজিয়ে দিয়েছে ওকে। আয়নায় এক পলক নিজেকে দেখে নিলো আনিতা। ও নিজেই তো ওর প্রেমে পড়ে যাচ্ছে এবারে। কি সুন্দর করে আহিয়ান সাজিয়েছে ওকে। ভাবতেই লজ্জায় ওর গাল দুটো লাল হয়ে গেলো।

আনিতা নিজেকে ভালো করে একবার দেখে নিয়ে রুম থেকে বের হওয়ার জন্য পা বাড়ালো। হুট করেই আনিতার সামনে অনিক এসে দাঁড়ালো। এভাবে আচমকা সামনে এসে পড়াতে কিছুটা ঘাবড়ে যায় আনিতা। অনিকের মতিগতি ওর একদম পছন্দ না। আহিয়ানের কাজিন বলেই সহ্য করছে ওকে৷ নয়তো কিছুতেই ফাইয়াজের বিয়েতে ওদের ইনভাইট করতে দিতো না আনিতা৷ কিছুতেই না। অনিককে দেখলেই এখন আনিতার মেজাজ গরম হয়। বিরক্ত লাগে খুব। অথচ কে বলবে এই ছেলেটাকেই একসময় ও পাগলের মতো ভালোবাসতো। আদেও ভালোবাসতো তো? সত্যিই ভালোবাসলে কি কখনো অনিককে ভুলতে পারতো ও? অনিকের উপস্থিতিতে কখনো বিরক্তবোধ করতো? নাকি কখনো ভালোই বাসেনি অনিককে? নাকি অনিকের জন্য করা পাগলামি কান্নাকাটি সবটাই একটা মোহ ছিলো? সবটাই কি তবে ওই বয়সের আবেগ ছিলো? আবেগে গা ভাসিয়ে অনিকের জন্য না খেয়ে থাকা পাগলামি কান্নাকাটি করা এসব করতো? কি জানি এর উত্তর সত্যিই আনিতার কাছে নেই। ও মাঝে মাঝে সত্যিই বুঝে উঠতে পারেনা ও আসলেও অনিককে ভালোবেসেছিলো কিনা? আচ্ছা ভালোবাসার মানুষটাকে এত সহজে ভোলা যায়? যায় না তো। তাহলে কি করে ভুলে গেলো? শুনেছি ভালোবাসার মানুষটা কাছে এলে নাকি বুক ঢিপঢিপ করে, লজ্জা লজ্জা লাগে, তাকে দেখলে মনের ভিতর অন্যরকম অনূভুতি জাগে, মানুষটা সামনে এলে নাকি সবকিছু গুলিয়ে যায়। তবে অনিকের ক্ষেত্রে তার উল্টোটা কেন হয়? কেন ও অনিককে এখন সহ্য করতে পারে না? কেন বিরক্ত হয়, মেজাজ খারাপ হয়? কিছুতেই ভেবে পায় না আনিতা৷ তবে কি ও অনিককে ভালোবাসেনি কখনো? সবটাই শুধুমাত্র আবেগ আর মোহ ছিলো?

আনিতার এসমস্ত ভাবনার মাঝে বিভোর। আর অনিক আনিতাকে দেখতে মগ্ন। অনিক দু কদম এগিয়ে আনিতার মুখোমুখি দাঁড়ালো। অনিককে এগোতে দেখে আনিতা ভাবনার জগত থেকে ফিরে এলো। পিছিয়ে গেলো দু কদম। অনিক আনিতার দিকে আরো একবার চোখ বুলিয়ে বলল,
–“দেখতে কোনো পরীর থেকে কম লাগছে না তোমাকে। পরী। আনিতা পরী! শুধু আমা___”

–“ভাবী__ভাবী হই। আমি যে আপনার বড় ভাই মানে আহিয়ানের বউ সেটা মনে আছে তো? সম্পর্কে ভাবী হই আমি আপনার সেটা ভুলে যাবেন না। তাই এরকম কিছু বলবেন না যাতে আপনার জন্যই খারাপ হয়।”

–“হ্যাঁ ওই একটা মাত্রই বাঁধা আছে। তোমার আর আমার মাঝখানে হুট করে আহিয়ান এসে সবটা এলোমেলো করে দিলো। সেদিন ও তোমার লাইফে না এলে তুমি আমাকেই ভালোবাসতে আর আমারই থাকতে। তুমি এখনো আমাকে ভালোবাসো সেটা আমি জানি। শুধুমাত্র আহিয়ানের জন্য কিছু বলছো না তুমি তাই না? ও কি তোমাকে কোনো কিছুতে আই মিন তোমাদের সম্পর্কে বিয়েতে কোনোভাবে জোর জবরদস্তি করেছে? বলো আমাকে? আমি সবটা ঠিক করে দিবো। শুধু একবার বলো তুমি আমাকে ভালোবাসো।”

–“না। ভালোবাসি না আমি আপনাকে। চলেই তো গিয়েছিলেন তাহলে আবার কেন ফিরে এসেছেন? কেন শান্তিতে থাকতে দিচ্ছেন না আমাকে? কেন বারবার আমার সামনে এসে পড়ছেন? কেন এমন উদ্ভট আচরণ করছেন আপনি আমার সাথে? ভালোবাসি না আমি আপনাকে। প্লিজ এবার তো চলে যান। শুধু শুধু আমার আর আহিয়ানের মাঝে ঝামেলা সৃষ্টি করবেন না আপনি প্লিজ। আমি আহিয়ানকে অনেকটা ভালোবাসি। ওকে হারালে আমি মরেই যাবো। প্লিজ থাকবেন না আপনি আর আমাদের মাঝে। কনা আপনাকে অনেক ভালোবাসে ওর সাথে নিজের জীবনটা গুছিয়ে নিন। কি করে পারছেন আপনি এত বছরের ভালোবাসাকে ভুলতে? এতগুলো বছর যে মেয়েটার সাথে থেকেছেন তাকে এখন কিভাবে ছুড়ে ফেলে দিচ্ছেন আপনি? প্লিজ আপনি কনার সাথে ভালো থাকুন আর আমাদেরও ভালো থাকতে দিন।”

অনিক আর দু পা এগিয়ে গেলো আনিতার দিকে। আনিতা এবারেও পিছিয়ে যায়। অনিক হাত উঠিয়ে আনিতার বাহু ধরতে গেলেই পেছন থেকে আহিয়ান বলে,
–“ডোন্ট ডেয়ার টু টাচ মাই ওয়াইফ অনিক।”

কথাটা বলতে বলতে আহিয়ান আনিতার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে ওর কাঁধে হাত রেখে একপাশ থেকে জড়িয়ে নিলো আনিতাকে। আহিয়ান একপলক আনিতাকে দেখে আবার অনিকের দিকে তাকিয়ে বলল,
–“কি করছিলি তুই এখানে? আর ওর দিকে এভাবে এগিয়ে আসছিলি কেন? কেন ওর দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়েছিস তুই?”

অনিক চোখমুখের এক্সপ্রেশন পালটে ফেলল মূহুর্তেই। আহিয়ানের দিকে কিছুটা সরে গিয়ে বলল,
–“আহিয়ান তুই জানিস না। আনিতা তোকে আমাকে দুজনকেই ঠকাচ্ছে। ও তোকে___”

–“জানি আমি। সবটাই আমি জানি। আনিতা কাউকে ঠকাচ্ছে না। কে কাকে ঠকিয়েছে সবটাই আমি জানি অনিক। আই হোপ নেক্সট টাইম আনিতাকে বিরক্ত করতে আসবি না। হ্যাঁ মানছি তুই আমার ভাই। কিন্তু আমার বউয়ের দিকে যদি তুই অন্য নজরে তাকাস তাহলে সেটা তো আমি সহ্য করতে পারবো না। ওর সামনে আসার আগে তোর মন মাইন্ডে ঠিকভাবে সেট করে আসবি যে আনিতা তোর ভাবী। আমার বউ।”

এইটুকু বলেই আহিয়ান আনিতার হাত ধরে ওখান থেকে চলে গেলো। কিছু বলতে চেয়েছিলো অনিক কিন্তু ওকে আর একটা কথাও বলার সুযোগ দেয়নি আহিয়ান।

ঘড়ির কাটায় সাতটা বাজতে গুনে গুনে এখনো ষোলো মিনিট সময় বাকি। আহিয়ান আনিতাকে নিয়ে সোজা ছাদে চলে গেলো। ফাইয়াজের হলুদের ডেকোরেশন ছাদে করা হয়েছে। পুরো ছাদ নানান রকম লাইটিংয়ে সেজে উঠেছে। আশেপাশের লাইটিং সব জ্বলে উঠেছে। ছাদে এখন কেউ নেই বললেই চলে। সবাই নিচে ব্যস্ত হলুদের ডালা সাজাতে। আধ ঘন্টার ভিতরেই তাসকিয়াকে হলুদ লাগাতে যাবে সকলে। আশেপাশে একবার চোখ বুলিয়ে আনিতা ঝাপিয়ে পড়লো আহিয়ানের বুকে। শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো যেন ছাড়লেই আহিয়ান পালাবে ওকে রেখে। আহিয়ান মৃদু হেসে আনিতার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,
–“আমি এতসহজে তোমায় ছেড়ে যাচ্ছি না আনিতা। সুতরাং ভয় পাওয়ার কোনো কারন নেই। তুমি কেমন সেটা আমি জানি। অন্যকেউ এসে তোমার নামে উল্টোপাল্টা বুঝালেই আমি তোমাকে ছেড়ে যাবো না। তুমি ভালো হলেও এই আহিয়ান আদৃতের আর খারাপ হলেও এই আহিয়ান আদৃতেরই থাকবে।”

–“এত ভালো কেন আপনি? কোনো কিছু না বলতেই সবটা বুঝে যান। এত ভালো কেন বাসেন আমাকে?”

–“প্রথমত, আমি কতটা ভালো সেটা আমি সত্যিই জানি না। তবে, তুমি আমার আছো বলেই হয়তো আমি এত ভালো আছি। আর তুমি আমার সবটা জুরে আছো আনিতা। তোমার চোখমুখ বুঝে যদি আমি সবটা না বুঝতে পারি তাহলে কেমন ভালোবাসি আমি তোমাকে? যাকে আমরা ভালোবাসি তার সবকিছু আমরা এমনিতেই বুঝে যাই বুঝলে?”

আনিতা আহিয়ানকে ছেড়ে দিয়ে ওর মুখোমুখি দাঁড়ালো। কিছুটা নাক টেনে আনিতা বলল,
–“আমিও তো আপনাকে এত্তগুলা ভালোবাসি। তাহলে আমি কেন আপনার সবটা বুঝি না? তাহলে কি আমি আপনাকে ভালোবাসি না?”

আনিতার কথায় আহিয়ান হো হো করে হেসে দিলো। তারপর আনিতার নাক টেনে দিয়ে বলল,
–“কে বলেছে তুমি আমাকে ভালোবাসো না? তুমি তো আমাকে অনেকগুলা ভালোবাসো। জানি তো আমি। এখনো বাচ্চা তো তাই সবটা বুঝতে পারো না। আর একটু বড় হও আস্তে আস্তে তুমিও আমার না বলা সমস্ত কিছুই বুঝতে পারবে। এখনো বুঝো তবে একটু কম।”

আনিতা বাচ্চাদের মতো মুখ ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। ঘুরেফিরে আহিয়ান ওকে বাচ্চা বলল যেটা আনিতা একদমই মানতে পারেনি। আর এটা ভেবেও খারাপ লাগছে যে ও কিছু না বলতেই আহিয়ান সবটা বুঝে যায় আর ও-ই আহিয়ানকে বুঝতে পারে না ভালো করে। ছেলেটা ওকে কত্তটা ভালোবাসে। আহিয়ান ওকে ভালোবাসে কথাটা মাথায় আসতেই মুচকি হাসলো ও। তারপর বলল,
–“আচ্ছা এবারে দ্বিতীয় কারনটা বলুন। এত ভালোবাসেন কেন আপনি আমাকে?”

আহিয়ান আনিতার কাছে গিয়ে ওর কপালে একটা চুমু খেলো। তারপর জড়িয়ে ধরে বলল,
–অনেকটা ভালোবাসি আমি তোমাকে। কেন ভালোবাসি কতটা ভালোবাসি এটা সত্যিই আমি তোমাকে বুঝাতে পারবো না। শুধু জানি ভালোবাসি আমি তোমাকে। তোমাকে ছাড়া আমার একদম চলবে না। হয়তো আমি এই পৃথিবীতে এসেছি #শুধু_তোমারই_জন্য। তোমাকে ভালোবাসার জন্য।”

আর কিছু বলল না আনিতা৷ মৃদু হাসলো আহিয়ানের জবাবে। চুপটি করে আহিয়ানের সাথে মিশে রইলো ও।

স্টেজে ফাইয়াজকে মাঝে বসিয়ে দুপাশে বসেছে তন্ময় আর আহিয়ান। সোফার দুই হাতলে আবার আরহান আর রাতুল বসেছে। রাতুল আর আহিয়ান একসাথে তন্ময় আর আরহান একসাথে বসেছে। পাঁচ বন্ধু মিলে ফটোশুট করছে৷ কি সুন্দর হেসে হেসে একেক জন একেক রকম স্টাইল নিচ্ছে। স্টেজ থেকে অনেকটা দূরে ছাদের এক কোনে চেয়ার নিয়ে গোল করে বসে আড্ডা দিচ্ছে আনিতা আরোহী অনিমা আয়রা অদ্রি আর রুহি। আনিতার চোখজোড়া ঘুরেফিরে বারবার আহিয়ানের উপর গিয়ে পড়ছে। কাঁচা হলুদের পাঞ্জাবিটার বুকের বা দিকে এ্যাশ কালারের ছোট ছোট কারুকার্যটা বেশ মানিয়েছে। পাঞ্জাবিটা যেন একান্ত আহিয়ানের জন্যই বানানো হয়েছে এমনটা মনে হচ্ছে আনিতার। ইশ্ কি সুন্দর লাগছে ওর আহিয়ানকে। ও নিজেই তো বারবার আহিয়ানের প্রেমে পড়ছে তাহলে অন্য মেয়েরা কি করবে? অন্য মেয়েদের কথা মাথায় আসতেই আনিতার মাথাটা একদম বিগড়ে গেলো।

*তাসকিয়াকে হলুদ লাগানোর জন্য যখন ওদের বাড়ি গেলো তখন একটা মেয়ে একেবারে হাত ধুয়ে আহিয়ানের পিছনে লেগেছিলো। যা আনিতার মোটেও সহ্য হয়নি। একসময় তো আনিতা সহ্য করতে না পেরে বলেই দিলো,
–“আপু উনি আমার জামাই হয় জামাই। লজ্জা করে না এভাবে অন্যের জামাইর সাথে ফ্লার্ট করতে? দুনিয়াতে কি ছেলের অভাব পড়েছিলো যে একটা বিবাহিত ছেলের পিছনে এভাবে আদাজল খেয়ে পড়েছেন। এরপর যেন আপনাকে আমি আমার জামাইর থেকে গুনে গুনে একশ হাত দূরে দেখি।”

–“উ্ উনি বি্ বিবাহিত? দেখে তো ম্ মনে হয় না।”

–“দেখে মনে হয় না বলেই কি আমার জামাইয়ের পিছনে পড়বেন আপনি? এটা কেমন কথা রে ভাই।”

–“স্ সরি আ্ আমি আসলে জ্ জানতাম না।”

কথাটা বলেই মেয়েটা মানে মানে কেটে পড়ে সেখান থেকে। আনিতার কথায় মেয়েটা বেশ লজ্জায় পড়ে গিয়েছিলো। ভাবেনি এভাবে লজ্জায় পড়তে হবে। মেয়েটা ওখান থেকে যেতেই আহিয়ানের পেট ফাঁটা হাসি শুরু হয়। হাসতে হাসতে মাটিতে গড়াগড়ি খাওয়ার উপক্রম। আহিয়ানকে এভাবে হাসতে দেখে আনিতা গোমড়া মুখ করে ফেলে। আহিয়ান হাসি থামিয়ে বলে,
–“বাব্বাহ! আমার বউটা দেখছি বেশ জেলাস। তার জামাইয়ের পাশে অন্য মেয়েকে একদমই সহ্য করতে পারে না।”

–“হ্যাঁ পারি না তো। কেন সহ্য করবো আমি আপনার পাশে অন্যকাউকে? আপনি আমার না? শুধুমাত্র আমারই থাকবেন। এরপর থেকে আপনার আশেপাশে যাতে আমি অন্যকোনো মেয়েকে ঘুরঘুর করতে না দেখি।”

কথাটা বলেই চলে যায় আনিতা৷ আর আহিয়ান পাশে চেয়ারে বসে আবারো হো হো করে হেসে উঠে।*

আনিতাকে একমনে আহিয়ানের দিকে তাকিয়ে কিছু ভাবতে দেখে আরোহী কাঁধ দিয়ে হালকা ভাবে ধাক্কা দেয় ওকে। রুহিও ব্যপারটা এতক্ষণ লক্ষ্য করেছে। আনিতাকে লজ্জা দেওয়ার জন্য রুহি বলল,
–“বাহ! আমার জায়ের দেখি আমার দেবরের সাথে এইটুকু দূরত্বও সহ্য হয় না। একধ্যানে আহিয়ানের দিকে তাকিয়েই আছো। একদমই চোখের আড়াল করতে চাইছো না। এই তাহলে তোমরা এতটা দূরে কিভাবে থাকো? আহিয়ান ঢাকায় আর তুমি এখানে। আমি তো বাবা কখনোই পারতাম না।”

রুহি কথাটা বলে শেষ করতেই আহিয়ান এসে আনিতার পাশের চেয়ার ধপ করে বসে পড়লো। তারপর আনিতার দিকে পলক তাকিয়ে রুহির দিকে তাকালো আবার। রুহির দিকে কিছুটা ঝুকে আহিয়ান বলল,
–“একেই বলে কপাল বুঝলে ভাবী? বিয়ে করা বউ আমার অথচ দেখো বিয়ের পরও বউকে ছাড়া একা একা থাকতে হয়। কি আর করার? তোমার দেবরের বউটা যে বড্ড পিচ্চি তাই এই দূরত্ব৷ নয়তো সেদিনই বিয়ে করে একেবারে সাথে করে নিয়ে যেতাম। আর তো মাত্র কয়েকটা দিন। তারপর আর আমি আমার বউকে কাছ-ছাড়া করছি না। সবসময় নিজের সাথে সাথে রাখবো।”

আহিয়ানের কথা শুনে সেখানে সবাই মুখ টিপে হাসতে শুরু করে। আনিতা বেশ লজ্জা পেয়ে যায়। এই ছেলে এমন কেন? আনিতা লজ্জা পেয়ে ওখান থেকে উঠে আসতে নিলেই আহিয়ান আনিতার হাত ধরে দাঁড়িয়ে যায়। সবার উদ্দেশ্যে বলে,
–“তোমরা আড্ডা দেও। আমি আমার বউকে একটু নিয়ে যাচ্ছি।”

কথাগুলো বলেই আহিয়ান আনিতাকে নিয়ে ওখান থেকে স্টেজে চলে যায়। প্রথমে ফাইয়াজের সাথে দুজনে বেশ কয়েকটা ছবি তোলে। তারপর ফাইয়াজকে স্টেজ থেকে নামিয়ে দিয়ে ওরা দুজনে ফটোশুট করতে থাকে।

চলবে ইনশাআল্লাহ~
চলবে ইনশাআল্লাহ~

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here