শুধু তোমারই জন্য ২ পর্ব -১৯+২০

#শুধু_তোমারই_জন্য(২)
লেখনীতে- অরনিশা সাথী

|১৯|

সন্ধ্যার ঘন্টা খানেক পর আনিতা ওরা নদীর ধার থেকে ঘুরে বাসায় ফিরে। বাসার ফেরার পর থেকে আনিতা বেশি একটা আহিয়ানের ধারের কাছে আসছে না। যদি সত্যিই তখনকার কথাটা সিরিয়াসলি বলে থাকে। তাই অনেকটা দূরত্ব রাখছে দুজনের মাঝে। রাতে খাবারের জন্য আহিয়ানকে দরজার কাছ থেকে ডেকেই চলে যায় আনিতা। আহিয়ান তখন ফোনে কিছু একটা করছিলো। ফোনটা পকেটে পুরে ডাইনিংয়ে যাওয়ার জন্য হাঁটা লাগালো ও। সাড়ে এগারোটা নাগাদ বাজে। আনিতা এখনো রুমে আসেনি। বিছানায় একা একা গড়াগড়ি খাচ্ছে আহিয়ান। শেষে উঠে বসলো। অনিমার রুমের দিকে পা বাড়ালো। যা ভেবেছিলো তাই। ওর ভয়ে অনিমার রুমে এসে কি সুন্দর গুটিশুটি মেরে ঘুমোচ্ছে ও।

মাঝরাত। ঘুমের মধ্যে আনিতার মনে হলো কিছু একটা আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে রেখেছে ওকে। নড়তে পারছে না। অনিমা ভেবে ঘুমিয়ে পড়তে চাইলো ও। কিন্তু পরক্ষণেই টনক নড়লো ওর। ছোঁয়াটা কেমন ওর কাছে অন্যরকম লাগছে। মনে হচ্ছে খুব ভালোবেসে কেউ ওকে তার বুকে আগলে রেখেছে। চোখ মেলে তাকালো ও। নাকে এসে বাড়ি খেলো খুব পরিচিত ঘ্রান। চোখ তুলে তাকিয়ে দেখলো ওকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে আহিয়ান। কিন্তু আনিতা তো অনিমার সাথে ঘুমিয়েছিলো তাহলে এখানে কি ভাবে এলো? অবাক হয়ে কয়েক সেকেন্ড নড়তে পারলো না ও। এরপর ঝট করে উঠে বসলো। হঠাৎই উঠে বসায় আহিয়ানও খানিকটা চমকে উঠলো। এখনও ঘুমায়নি ও। কিছুক্ষণ হলো আনিতাকে অনিমার রুম থেকে নিয়ে এসেছে ও। কেবলই চোখ বন্ধ করে ওকে জড়িয়ে ধরে শুয়েছিলো। আনিতাকে চমকে যেতে দেখে মৃদু হাসলো আহিয়ান। আনিতাকে টেনে নিজের বুকের উপর এনে ফেলল। আয়েশ করে জড়িয়ে ধরে আনিতার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল,
–“তো মিসেস আহিয়ান আদৃত, কি ভেবেছিলেন? অনিমার সাথে ঘুমোলেই আপনাকে আমি আর আমার নাগালে পাবো না?”

আনিতা আমতা আমতা করে বলল,
–“আ্ আমি এখানে কি ক্ করে এলাম?”

আহিয়ান আনিতাকে পিছন থেকে ভালো করে জড়িয়ে নিয়ে ওর ঘাড়ে থুতনি রেখে বলল,
–“এবার যে তোমার শাস্তির পাল্লা ভারী হলো বউ। প্রথমে, বিকেলে আমাকে কামড়ে পালিয়েছিলে। তার উপর আবার রাতে ঘরে আসোনি অনিমার ঘরে গিয়ে শুয়েছো। এখানে আমি অনেকটা সময় একা একা তোমার অপেক্ষা করে শেষে না পেরে অনিমার রুমে গিয়ে দেখি তুমি গভীর ঘুমে মগ্ন। ঘুমন্ত আনিতাকে কোলে করে আমার কাছে নিয়ে আসতে হলো কেন? সে নিজে থেকে এলো না কেন? এবার তো তোমার কিছুতেই রক্ষা নেই আমার হাত থেকে। বি রেডি বউ।”

কথাগুলো বলে আনিতার ঘাড়ে একটা কামড় বসালো আহিয়ান। আনিতা কেঁপে উঠলো। মৃদু আর্তনাদ করে বলল,
–“আহ! লাগছে আমার। কি শুরু করলেন এই রাতদুপুরে?”

আহিয়ান আনিতার কানের লতিতে হালকা ভাবে কামড় দিয়ে ফিসফিস করে বলল,
–“সবে তো শুরু করলাম। এখনো অনেক কিছু করা বাকী।”

–“দে্ দেখুন___”

আর কিছু বলতে পারলো না আনিতা৷ তার আগেই আহিয়ান আনিতাকে একটানে উঠিয়ে নিজের কোলের উপর বসালো। এক হাতে আনিতার কোমড় চেপে ধরে অন্যহাতে আনিতার চুল মুঠো করে ধরে আনিতার ঠোঁটজোড়া নিজের দখলে নিয়ে নিলো আহিয়ান। আচমকা এরকম হওয়াতে চমকে যায় আনিতা। চোখ বড় বড় করে তাকায় আহিয়ানের দিকে। অবাকের রেশ কাটিয়ে ধীরে ধীরে সেটা ভালো লাগায় পরিনত হয়৷ আহিয়ানের প্রতিটা স্পর্শে আনিতা ভালোলাগার জগতে হারিয়ে যাচ্ছে। একপর্যায়ে আনিতা নিজেও একহাতে আহিয়ানের ঘাড় আকঁড়ে ধরে অন্যহাত দিয়ে আহিয়ানের চুল খামচে ধরে রেসপন্স করতে শুরু করে৷ আহিয়ানের তালে তাল মিলিয়ে এক অন্যরকম দুনিয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে।

রাত একটা নাগাদ বাজে। চুলে টাওয়াল পেঁচিয়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায় আনিতা। বাইরে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। একটু আগে ওর আর আহিয়ানের অন্তরঙ্গ মূহুর্তের কথাগুলো ভেবে ব্লাশ করছে ও। আহিয়ানের সাথে তাল মিলিয়ে যখন কিস করাতে ও নিজেও রেসপন্স করতে শুরু করলো তখন আহিয়ান কি লজ্জাটাই না দিলো ওকে। আনিতার দিক থেকে রেসপন্স পেয়ে আহিয়ান আনিতার ঠোঁটে কিছুটা জোরে কামড়ে দিয়ে বলে,
–“বউ আই কান্ট বিলিভ দিস। তুমি তো আমার থেকেও ভালো চুমু খেতে জানো।”

একটু আগের বলা আহিয়ানের এই কথাটা এখনো ওর কানে বাজছে। সাথে ভীষণ লজ্জা লজ্জা লাগছে। ছেলেটা ইচ্ছে করে ওকে লজ্জায় ফেলে দেয়। বারান্দায় দাঁড়িয়ে একা একা বৃষ্টি দেখছে আর নিজের মনেই মুচকি হাসছে। আহিয়ান টি-শার্ট গায়ে জড়িয়ে পিছন থেকে আনিতাকে জড়িয়ে ধরে ওর কাঁধে থুতনি রেখে বলল,
–“এখানে দাঁড়িয়ে একা একা ব্লাশ করছো কেন?”

কথাটা আনিতার কানে পৌঁছাতেই আনিতার কান গরম হয়ে এলো। লজ্জায় গালদুটো আরো বেশি রাঙা হয়ে গেলো। আনিতা নিজেকে সামলে নেওয়ার চেষ্টা করে আমতা আমতা করে বলল,
–“ক্ কই ব্ ব্লাশ করছি? আম্ আমি তো বৃষ্টি দেখছিলাম।”

–“বুঝলাম ধরা পড়ে এখন টপিক চেঞ্জ করার চেষ্টা করছো৷ কিন্তু ম্যাডাম আপনি যে অলরেডি ধরা পড়ে গিয়েছেন আমার কাছে। আর লুকোনোর কিছু নেই। আমরা আমরাই তো৷”

–“আমি কিছু কেন লুকোতে যাবো? কিচ্ছু লুকাচ্ছি না আমি।”

আহিয়ান আনিতার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল,
–“এই লজ্জা পেলে না তোমাকে আরো অনেক বেশি সুন্দর লাগে৷ তখন তোমার থেকে চোখ ফেরানো দায় হয়ে যায় আমার। এই যে এখন তুমি লজ্জা পাচ্ছো তোমাকে আগের থেকে আরো বেশি সুন্দর লাগছে। আমি কিন্তু চোখ সরাতে পারছি না।”

প্রত্যুত্তরে আনিতা আর কিছু বলল না। কেবল মুচকি হাসলো। খানিক সময়ের জন্য বৃষ্টি থেমে গিয়ে আবারো মুষলধারে বৃষ্টি নামতে শুরু করলো। আনিতার এখন খুব করে ইচ্ছে করছে বৃষ্টিতে ভেজার। কিন্তু কথাটা যদি বলে আহিয়ান নিশ্চিত ওকে এক ধমকে উগান্ডা পাঠিয়ে দিবে। আনিতার ভিতরে ভিতরে অস্থিরতা কাজ করছে বৃষ্টিতে ভেজার জন্য। আনিতা পিছনে ঘুরে আহিয়ানের মুখোমুখি দাঁড়ালো। আহিয়ানকে জড়িয়ে ধরে আহ্লাদী কন্ঠে বলল,
–“বলছিলাম কি শুনুন না।”

–“হুম শুনছি বলো।”

আনিতা এবারে আহিয়ানের একহাত জড়িয়ে ধরে বলল,
–“আমার একটা কথা রাখবেন আপনি?”

–“হুম অবশ্যই রাখবো। একটা কেন? আপনার হাজারটা কথা রাখবো আমি। শুধু এখন এই মূহুর্তে বৃষ্টিতে ভেজা ছাড়া।”

আনিতা সঙ্গে সঙ্গেই আহিয়ানের হাত ছেড়ে দিয়ে অবাক চোখে তাকালো ওর দিকে। আহিয়ান বুঝলো কি করে ও বৃষ্টিতে ভেজার কথা বলবে? আনিতা আবারো আহিয়ানের হাত জড়িয়ে ধরে বাচ্চাদের মতো বায়না ধরে বলল,
–“প্লিজ চলুন না। বেশি ভিজবো না তো। অল্প একটু ভিজবো। আমার না খুউউব ইচ্ছে করছে বৃষ্টিতে ভেজার।”

–“আপনার এই আবদার আমি ডিনাই করলাম।”

–“প্লিজ চলুন না। এরকম করছেন কেন? আমি না আপনার বউ হই? আর বউয়ের সামান্য এই কথাটা রাখতে পারবেন না আপনি?”

–“আজ্ঞে না ম্যাডাম আপনার এই কথাটা আমি রাখতে পারবো না। রাখতাম যদি না এখন মাঝরাত হতো৷ তার উপর আবার শাওয়ার নিয়েছো এখন আবার এই মধ্যরাতে বৃষ্টিতে ভিজলে ভোর হবার আগেই জ্বর ঠান্ডা এসে হামলা করবে তোমার উপর।”

–“আমি এত কিছু শুনতে চাই না। আমি বলেছি বৃষ্টিতে ভিজবো সুতরাং ভিজবোই। প্লিজ।”

–“উঁহু। রুমে চলো ঘুমাবা এখন।”

কথাটা বলে আহিয়ান আনিতার হাত ধরে রুমে নিয়ে গেলো। বিছানার এক পাশে মুখ গোমড়া করে বসে আছে আনিতা। ওর খুউউব করে ইচ্ছে করছে বৃষ্টিতে ভেজার। কিন্তু আহিয়ান তো কিছুতেই রাজি হচ্ছে না। কি করবে এখন? যে করেই হোক আহিয়ানকে কনভেন্স করাতেই হবে। এই ভেবে আনিতা আহিয়ানের কাছে গিয়ে ওর গলা জড়িয়ে ধরলো। আনিতা কিছু বলে উঠার আগেই আহিয়ান বলল,
–“যত যাই করো না কেন আমি বৃষ্টিতে ভিজতে দিচ্ছি না৷ ইট’স ফাইনাল।”

আনিতা সরে এলো আহিয়ানের থেকে। ফোন হাতে নিয়ে তাসকিয়াকে টেক্সট করলো। খানিক বাদেই রিপ্লাই চলে এলো। আনিতা তাসকিয়াকে বৃষ্টিতে ভেজার কথা বললেই তাসকিয়া রাজি হয়ে যায়। আনিতা বলে ফাইয়াজকে রাজী করাতে। মিনিট দশেক বাদে তাসকিয়া ফাইয়াজকে রাজি করিয়ে আনিতাকে টেক্সট করে। আনিতা টেক্সট-টা দেখে একটা হতাশ নিঃশ্বাস ছাড়ে। মনে মনে ভাবলো,
–“এদিকে আমি আধ ঘন্টা যাবত রাজি করানোর চেষ্টা করছি উনি কিছুতেই রাজি হলো না। আর অন্যদিকে ফাইয়াজ ভাইয়া দশ মিনিটের মাথায় রাজি হয়ে গেলো?”

একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আনিতা তাসকিয়াকে ম্যাসেজ করলো,
–“তোরা ছাদে যা আমি আসছি।”

আনিতা পা টিপে টিপে বিছানা থেকে নেমে দরজা খুলে বের হতে নিলেই আহিয়ান খপ করে ওর হাত ধরে ফেলে। আনিতা একটা শুকনো ঢোক গিলে পিছন ফিরে তাকায়। রাগী চোখে তাকিয়ে আছে আহিয়ান। ঝাঁজালো কন্ঠে বলল,
–“বললাম না এখন বৃষ্টিতে ভিজলে সাথে সাথেই অসুস্থ হয়ে যাবা তুমি? এমনিতেই ঠান্ডার সমস্যা আছে তোমার। বোঝার চেষ্টা করো। তোমার ভালোর জন্য বলছি আমি। আচ্ছা অন্যদিন ভিজবো আমরা কেমন?”

আনিতা মাথা নিচু করে বলল,
–“কোনো ইচ্ছে অপূর্ণ রাখতে নেই। আপনি তো আমার সব কথা রাখেন। প্লিজ এই কথাটাও রাখুন না। আমার এখন ভীষণ রকমের ইচ্ছে করছে বৃষ্টিতে ভেজার। প্লিজ না করবেন না। প্লিজ প্লিজ প্লিজ।”

শান্ত দৃষ্টিতে আনিতার দিকে তাকিয়ে আছে আহিয়ান। এতক্ষণে আহিয়ান অন্তত এইটুকু বুঝতে পেরেছে এই মেয়ে নাছোরবান্দা। আজকে বৃষ্টিতে না ভিজে কিছুতেই শান্ত হবে না। শেষে আনিতার জেদের কাছে হার মেনে আহিয়ান বলল,
–“ওকে বাট পাঁচ মিনিট ভিজতে পারবে এর থেকে এক মিনিট বেশিও না। রাজি?”

আনিতা লাফিয়ে উঠে আহিয়ানের কথা শুনে। আহিয়ানকে জড়িয়ে ধরে বলে,
–“ওক রাজি।”

আনিতা-আহিয়ান ছাদে গিয়ে দেখলো তাসকিয়া আর ফাইয়াজ আগে থেকেই ফাইয়াজদের ছাদে বৃষ্টিতে ভিজছে। আহিয়ান ওদের দিকে তাকিয়ে বলল,
–“ওরা এসময় বৃষ্টিতে ভিজছে?”

আনিতা দাঁত কেলিয়ে আহিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,
–“আমি বলেছি। জানেন ফাইয়াজ ভাইয়া কত্ত ইজিলি রাজি হয়ে গেছে? মাত্র দশ মিনিটেই আর আপনাকে রাজি করাতে গিয়ে আমার কতটা সময় পাড় হলো। ফাইয়াজ ভাইয়া-ই ভালো৷ আপনি একটুও ভালো না।”

–“হ্যাঁ তোমাকে বাঁদরামি করতে দিলেই আমি ভালো হতাম। বাদঁরামি করতে দেই না বলে এখন আমি ভালো না।”

কথাটা বলে আহিয়ান হেঁটে ছাদের অন্যপাশে চলে গেলো। আনিতা পিছন পিছন গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে বলল,
–“রাগ করেন কেন? আমি তো এমনি বলেছিলাম। আপনি তো আমার অনেএএএক ভালো জামাই। যে কিনা আমার সব ভালো আবদার অন্যায় আবদার পূরণ করে।”

আনিতা আহিয়ানকে ছেড়ে দিয়ে আহিয়ানকে ওর দিকে ঘুরালো। তারপর দুদিকে দুহাত মেলে দিয়ে বলল,
–“আপনাকে আমি এত্তগুলা ভালোবাসি। আই লাভ ইউ জামাই।”

আহিয়ান মুচকি হেসে আনিতাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
–“আমিও আমার পাগলিটাকে অনেক ভালোবাসি।”

কিছুক্ষণ দুজনে একসাথে থেকে ছাদের মাঝে চলে এলো। ফাইয়াজকে ডেকে এই ছাদে আসতে বলল ওরা। ফাইয়াজ ওরা এলে চারজনে একসাথে ভিজতে শুরু করে। আনিতা আর তাসকিয়া দুজনে দুজনের হাত ধরে লাফিয়ে যাচ্ছে৷ ফাইয়াজ গিয়ে আনিতার মাথায় চাটি মেরে বলল,
–“এই মধ্যরাতে বৃষ্টিতে ভেজার আইডিয়াটা তোর না?”

–“উফস চাটি মারো কেন? লাগে তো।”

–“লাগুক। লাগার জন্যই তো দিছি৷ নেক্সট টাইম যাতে আর এরকম উদ্ভট আইডিয়া না আসে তোর মাথায়। আর আসলেও তার মাঝে আমাকে আর আমার বউকে জড়াবি না।”

–“এই শুনো আমি মোটেও তোমাকে আর তোমার বউকে জড়ায়নি। আমি আমার বেস্ট ফ্রেন্ডকে জড়িয়েছি হুহ।”

কথাটা বলে আনিতা আবার তাসকিয়ার হাত ধরে পানি জমে যাওয়া জায়গাগুলোতে লাফাতে শুরু করলো। আহিয়ান এগিয়ে এসে আনিতার হাত ধরে ওকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
–“পাঁচ মিনিটের জায়গায় দশ মিনিট হয়ে গেছে। এখন রুমে চলো।”

আনিতা হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলল,
–“আর একটু ভিজি? বেশি না দুই মিনিট।”

–“দুই মিনিট কেন? এক সেকেন্ডও না। চলো।”

কথাগুলো বলেই আহিয়ান টানতে টানতে আনিতাকে রুমে নিয়ে গেলো। জামা পালটে আনিতা ব্রাশ হাতে ড্রয়িংরুমে চলে গেলো৷ ওরা যেদিক দিয়ে এসেছে ওখান দিয়ে পানি পড়েছে। পানিগুলো মুছে ব্রাশটা জায়গা মতো রেখে রুমে চলে গেলো ও। আহিয়ান ততক্ষণে চেঞ্জ করে শুয়ে পড়েছে। আনিতার এখন শীত শীত লাগছে। এটা এখন আহিয়ান জানতে পারলে নিশ্চিত ওকে একটা ধমক মারবে। আনিতা রুমের লাইট অফ করে দিয়ে বিছানায় গিয়ে কাঁথা মুড়ি দিয়ে গুটিশুটি মেরে শুয়ে পড়লো। আহিয়ান ফোন পাশে রেখে কাঁথার নিচে গিয়ে আনিতাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে জড়িয়ে ধরে বলল,
–“এজন্যই বলেছিলাম বৃষ্টিতে ভিজতে হবে না। ভিজেছো যখন তাহলে এখন কাঁপছো কেন এভাবে?”

আনিতা কিছু না বলে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে ওর উম্মুক্ত বুকে শব্দ করে একটা চুমু খেলো। খানিকটা কেঁপে উঠে আহিয়ান। আহিয়ান আনিতার কপালে চুমু দিয়ে জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করে বলল,
–“ঘুমাও এখন।”

চলবে ইনশাআল্লাহ~#শুধু_তোমারই_জন্য(২)
লেখনীতে- অরনিশা সাথী

|২০|

সময় বহমান। এর মাঝে বেশ কয়েকটা মাস কেটে যায়। গত সপ্তাহেই আনিতাদের এইচএসসি এক্সাম শেষ হয়েছে। মুখের উপর হাত দিয়ে শুয়ে আছে আনিতা। বেশ কিছুদিন যাবত ওর শরীরটা বেশ দূর্বল দূর্বল লাগছে। খাবারের প্রতি অনীহা কাজ করছে। খানিক বাদে বাদে মাথা ঘুরিয়ে উঠছে৷ চোখ বন্ধ করে শুয়েছিলো আনিতা। সেসময় আনিতার আম্মু শুকনো জামাকাপড় হাতে ওদের রুমে আসে। আনিতার জামাগুলো ভাজ করতে করতে বলল,
–“অসময়ে শুয়ে আছিস কেন? শরীর ভালো না? কিছু হয়েছে কি?”

আনিতা জবাব দিলো না। ওভাবেই শুয়ে রইলো। আনিতার আম্মু জামাগুলো ভাজ করে কাবার্ডে রেখে আনিতার পাশে গিয়ে বসে ওর মাথায় হাত রাখলেন। মুখের উপর থেকে হাত সরিয়ে চোখ মেলে তাকালো আনিতা ওর আম্মুর দিকে। আনিতার চোখমুখ দেখে বেশি সুবিধার ঠেকলো না উনার কাছে। আনিতার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,
–“চোখমুখের কি হাল করেছিস। কয়েকদিন যাবত লক্ষ্য করছি খেতে পারছিস না ঠিকমতো। কোনো সমস্যা হলে বল আমাকে। শরীর খারাপ লাগছে? ডক্টরের কাছে নিয়ে যাই চল।”

আনিতা ভাঙা ভাঙা গলায় জবাব দিলো,
–“তেমন কিছু না আম্মু। এমনি শরীর দূর্বল লাগছে আর মাথা ঘুরাচ্ছে।”

–“হ্যাঁ তা তো হবেই আরো না খেয়ে থাক। না খেয়ে থাকলেই সুস্থ হয়ে যাবি।”

–“আহ আম্মু! খাই তো আমি। তারপরও এভাবে বলছো কেন?”

–“ঠিকঠাক মতো খাস না বলেই তো শরীর দূর্বল আর মাথা ঘুরায় তাই না? আজকে দুপুরেও ঠিক মতো খাসনি। তুই বস আমি কিছু খাবার নিয়ে আসছি।”

–“খাবো না আমি, ভালো লাগছে না।”

–“চুপ এই বিষয়ে কোনো কথা শুনতে চাই না।”

কথাটা বলে আনিতার আম্মু উঠে গেলেন। দরজার কাছে গিয়ে কিছু একটা ভেবে আবারও ফিরে আসলেন তিনি। আনিতার মাথায় হাত রাখতেই আনিতা আবারো চোখ খুলল। আনিতার মাথায় হাত রেখেই বললেন,
–“আচ্ছা একটা কথা বল তো, তোর পিরিয়ড হচ্ছে ঠিকমতো?”

চমকে তাকালো আনিতা ওর আম্মুর দিকে। পিরিয়ডের কথা বলাতে ও খেয়াল করলো গত দু মাস যাবত ওর পিরিয়ড হচ্ছে না। আনিতাকে চুপ থাকতে দেখে তিনি আবারো বললেন,
–“কি হলো বল? এ মাসে হয়েছিলো?”

আনিতা মাথা নাড়িয়ে না বুঝালো। উনি আবারো প্রশ্ন করলেন,
–“ডেট কবে?”

এবার আনিতা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
–“দু মাস যাবত হচ্ছে না।”

চমকে তাকালেন তিনি মেয়ের দিকে। দু মাস যাবত পিরিয়ড অফ যাচ্ছে আর ও বলেনি এখনো? এজন্যই কি তাহলে খেতে পারছে না মাথা ঘুরাচ্ছে শরীর দূর্বল লাগছে? উনি যা ভাবছেন তা কি সত্যিই তাহলে? আনিতার আম্মু কিছু একটা ভেবে বললেন,
–“তাসকিয়াকে বলে ফাইয়াজকে দিয়ে আমি প্রেগন্যান্সির কিট আনাচ্ছি। কাল সকালে চেক করে নিবি। এখন খাবার পাঠাচ্ছি চুপচাপ সেটা খেয়ে নিবি।”

এই বলেই আনিতাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই তিনি উঠে গেলেন। সবকিছু মাথার উপর দিয়ে গেলো আনিতার। পরে ওর আম্মুর কথাগুলো ভালো করে ভাবতেই শিরদাঁড়া ঠান্ডা হয়ে গেলো ওর। প্রেগন্যান্সির কিট? ও কি তাহলে? আনিতার এসকল ভাবনার মাঝেই আয়রা এলো খাবার নিয়ে৷ ভারী খাবার পাঠায়নি। হালকা নাস্তা পাঠিয়েছে ওর আম্মু। আয়রা কিছুক্ষণ আনিতার সাথে গল্প করে চলে গেলো। আনিতা নডুলসের বাটি হাতে নিয়ে খেতে শুরু করলো। সন্ধ্যার কিছুটা পর তাসকিয়া এসে প্রেগন্যান্সি কিট দিয়ে যায়। যাওয়ার আগে অবশ্য দু বান্ধবী বেশ কিছুটা সময় গল্প করে কাটিয়েছে৷ তাসকিয়া যাওয়ার পরই আনিতা শুয়ে পড়ে বিছানায়। শরীর দূর্বল দূর্বল লাগার ফলে শুতেই ঘুমিয়ে পড়ে ও।

সাড়ে আটটা নাগাদ বাজে। প্রেগন্যান্সি কিট হাতে নিয়ে অবিশ্বাস্য চোখে কিটের দিকে তাকিয়ে আছে আনিতা৷ ও যেন নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। নিজের অজান্তেই ওর বা হাতটা পেটের উপর চলে গেলো। দু ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো গাল বেয়ে। কষ্টের নয়। খুশির অশ্রু এইটা। মা হবে ও? ওর মধ্যে আর একটা ছোট্ট প্রান ধীরে ধীরে বেড়ে উঠছে? ভাবতেই খুশিতে সারা বাড়ি লাফিয়ে বেড়াতে ইচ্ছে করছে ওর। কাঁপা কাঁপা হাতে কিটের ছবি তুলে আহিয়ানের হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে দিলো ও। অনলাইনে নেই আহিয়ান। কাল রাতে বের হয়েছে। ছবিটা পাঠিয়ে ফোনটা পাশে রেখে দিলো। তখনই দরজা ঠেলে ভিতরে এলো তাসকিয়া। আনিতা তখনও কিট হাতেই বসে ছিলো। তাসকিয়া এসে কিট হাতে নিয়ে রেজাল্ট পজেটিভ দেখে খুশিতে চিৎকার করে উঠলো। লাফাতে লাফাতে কিট হাতেই ঘর থেকে বের হয়ে গেলো ও সবাইকে নিউজটা দেওয়ার জন্য।

মিনিট দুয়েকের মাঝেই সকলে এসে আনিতার রুমে ভীর জমালো। আনিতার আম্মু আর দাদু দুজনে দু পাশে বসে জড়িয়ে আছে আদরের মেয়েকে। তাদের ছোট্ট মেয়ের মাঝে কিনা আজ আরো একটা অংশ বড় হচ্ছে। বাড়ির সকলেই খুব খুশি। আনিতার দাদু আম্মু ফুপ্পি তিনজনেই বেশ কিছু জ্ঞান দিলো আনিতাকে। এসময়ে এটা করা যাবে না ওটা করা যাবে না। বেশি দৌড়ঝাঁপ লাফালাফি করা যাবে না। নিয়মিত এবং বেশি বেশি খেতে হবে। ভরদুপুর সন্ধ্যা রাতে ছাদে বা বাড়ির বাইরে যাওয়া যাবে না। এরকম আরো হাজারটা কথা বলেছে আনিতাকে। আনিতা বসে বসে মাথা নিচু করে চুপচাপ সবটা শুনেছে শুধু। একে একে রুম থেকে সকলেই বের হয়ে গেলেন।

রুমেই আনিতার নাস্তা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে আজ। তাসকিয়া নিজেই নিয়ে এসেছে ওর আর আনিতার খাবারটা। দুই বান্ধবী মিলে গল্প করতে করতে নাস্তা করবে। ট্রেতে করে ডিম সেদ্ধ, পরোটা, ভাজী, অমলেট। কেটলিতে করে দুধ চা। তাসকিয়া চায়ের কেটলিটা বেড সাইড টেবিলে রেখে নাস্তার ট্রে বিছানায় নামিয়ে রেখে বলল,
–“আহিয়ান ভাইয়া জানে? জানিয়েছিস উনাকে?”

আনিতা মাথা নামিয়ে নিলো। লজ্জা লাগছে খুব। নিচু স্বরে জবাব দিলো,
–“ম্যাসেজ করেছিলাম। অনলাইনে নেই।”

–“আচ্ছা এখন খাওয়া শুরু কর। খাওয়া শেষে ফোন করে জানাবি কেমন?”

আনিতা কিছু না খেতে শুরু করলো। তাসকিয়া সবে ডিম মুখে দিয়েছে তখনই ফাইয়াজ রুমে এসে আনিতার মাথায় গাট্টা মেরে ওর পাশে আধশোয়া হয়ে বসলো। তারপর তাসকিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলল,
–“বান্ধবীকে পেয়ে এখন আমায় ভুলে যাচ্ছো? ওদিকে তোমার বর মানে আমি যে না খেয়ে তোমার জন্য নাস্তার টেবিলে ওয়েট করছি সেই খেয়াল নেই না?”

–“এখন তো শুধু বান্ধবীকে পেয়ে তোমাকে ভুলেছি কিছু মাস পর যখন বান্ধবীর বাচ্চা চলে আসবে আমি আন্টি প্লাস মামি হয়ে যাবো তখন তুমি আরো পাত্তা পাবেন না আমার কাছে।”

ফাইয়াজ তাসকিয়ার কথার আগামাথা কিছুই বুঝলো না। পরোটা ছিড়ে নিজের মুখে পুড়ে বলল,
–“মানে?”

–“মানে তুমি মামা হচ্ছো আর আমি মামি। আরো সহজ ভাবে বললে, তোমার আনি বুড়ি প্রেগন্যান্ট। ওর মাঝে আহিয়ান ভাইয়া আর ওর ছোট্ট একটা অংশ বেড়ে উঠছে।”

তাসকিয়ার কথায় আনিতার গাল লাল হয়ে এলো লজ্জায়। ওর আর আহিয়ানের অংশ? ওদের ভালোবাসার চিহ্ন? মাথা নামিয়ে নিলো আনিতা। ওদিকে ফাইয়াজ খাবার চিবানো বন্ধ করে হা হয়ে তাকিয়ে আছে আনিতার দিকে। তাসকিয়া কিছুটা ধমকের সুরে বলল,
–“হা বন্ধ করো। এভাবে হা করে থাকলে মুখে মশা ঢুকবে।”

ফাইয়াজ তৎক্ষনাৎ নিজেকে সামলে নিয়ে আনিতাকে একহাতে জড়িয়ে নিয়ে বলে,
–“আজকে আমি ভীষণ খুশি আনি বুড়ি। আমার ছোট্ট আনি বুড়িটা আজকে কত বড় হয়েছে সামনে কিনা সে আমাদের আর একটা ছোট্ট প্রিন্স/প্রিন্সেস গিফট করবে। ভাবা যায় তাসকিয়া?”

আনিতা ফাইয়াজের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে লজ্জায় মাথা নিচু করে বলল,
–“ভাইয়া চুপ করো এসব কথা থাক না।”

ফাইয়াজ হাসলো। বুঝতে পারলো ও লজ্জা পেয়েছে। ফাইয়াজ খেতে খেতে আবারো প্রশ্ন করলো,
–“আহিয়ান জানে?”

তাসকিয়া বলল,
–“ম্যাসেজ করেছিলো অনলাইনে নেই।”

ফাইয়াজ পকেট থেকে ফোন বের করে আহিয়ানের নাম্বারে ডায়াল করতে করতে বলল,
–“ওয়েট আমি জানাচ্ছি ওকে।”

শুক্রবার আজকে। অফিসের ঝামেলা নেই। তাই এখনো ঘুম থেকে উঠেনি আহিয়ান। হঠাৎই ফোনের রিংটোনে নড়েচড়ে উঠে ও। চোখ বন্ধ করেই বালিশের পাশ থেকে ফোন হাতে নিলো। ফোন বাজতে বাজতে কেটে যায়। ফোন রাখতে গেলে আবারো নতুন উদ্যমে বাজতে শুরু করে। রিসিভ করে ঘুমঘুম কন্ঠেই বলল,
–“হ্যাঁ আহিয়ান বলছি।”

লাউডে দিয়ে রেখেছে ফাইয়াজ। আহিয়ানের ঘুমঘুম কন্ঠ শুনেই আনিতার হৃদপিণ্ড প্রচন্ড বেগে লাফাচ্ছে। এই ছেলের সবকিছুতেই ও বার বার প্রেমে পড়ে। আজকে আরো একবার নতুন করে ওর ঘুম কাতুরে কন্ঠের প্রেমে পড়লো ও। ফাইয়াজ কিছুটা ধমকের সুরে বলল,
–“শালা এদিকে আমি মামা হয়ে গেলাম। অন্যদিকে তুই এখনো পড়ে পড়ে ঘুমোচ্ছিস?”

–“এ কদিন কাজের প্রচুর চাপ গেছে মামা। বড্ড ক্লান্ত আমি। আজকে অফডে, সুতরাং সারাদিন ঘুমোবো। নো ডিস্টার্ব। তোর সাথে পরে কথা বলছি আমি।”

আনিতা এজন্যই প্রথমে ফাইয়াজকে বারন করেছিলো ফোন না করতে। ও জানে বেশ কিছুদিন যাবত অফিসের কাজের চাপে টাইমলি খাওয়া গোসল ঘুম কোনোটাই হচ্ছে না আহিয়ানের। তাই বারন করেছিলো ফাইয়াজকে এখন ফোন না দিতে। কিন্তু ফাইয়াজ ওর বারন শুনেনি। ফাইয়াজ গলা ঝেড়ে বলল,
–“ওকে ঘুমা। তবে ঘুমোনোর আগে একটা নিউজ শুনে তারপর রিল্যাক্সে ঘুমা ওকে?”

–“কি বলবি তাড়াতাড়ি বল। নয়তো লাইন কাটছি আমি।”

ফাইয়াজ চট করে বলেই ফেলল,
–“আনিতা প্রেগন্যান্ট।”

–“ওহ আচ্ছা। আমার হয়ে ওকে কংগ্রাচুলেশনস বলে দিস। এখন রাখছি, বা____”

এইটুকু বলেই আহিয়ান থেমে গেলো। ফাইয়াজের কথাটা ভালোভাবে বুঝে উঠতেই শোয়া থেকে লাফিয়ে উঠলো ও। মূহুর্তেই যেন ওর ঘুম উড়ে গেলো। অস্থির কন্ঠে বলল,
–“এই এক মিনিট। কি্ কি বললি তুই? আবার বল।”

আহিয়ানের কান্ডে ফোনের ওপাশে ফাইয়াজ তাসকিয়া মুখ টিপে হাসছে। আর আনিতা লজ্জায় লাল নীল হচ্ছে। ফাইয়াজ বাঁকা হেসে বলে,
–“কেন শুনতে পাসনি তুই? আচ্ছা বাদ দে কিছু না। তুই ঘুমা। আমরা না হয় পরে কথা বলে নেবো।”

–“একটু আগের কথাটা আবার রিপিট কর। কি বললি তুই?”

–“বললাম যে, আনিতা প্রেগন্যান্ট মানে___

–“মানে আমি বাবা হবো?”

এদিক থেকে আনিতা স্পষ্ট আহিয়ানের খুশিটা ফিল করতে পারছে। ও বুঝতে পারছে আহিয়ান ঠিক কতটা খুশি হয়েছে। আহিয়ান লাইন না কেটে ফোন কানে রেখেই চিৎকার করে ওর আম্মু ভাই ভাবীকে ডাকতে থাকে। কিছু সময় বাদে উনারা আহিয়ানের রুমে আসে। আহিয়ানের আম্মু কিছুটা ধমকের সুরে বলে,
–“কি হলো? এভাবে ষাঁড়ের মতো চিল্লাচ্ছিস কেন? এখনো কি বাচ্চ আছিস তুই?”

আহিয়ান উঠে গিয়ে ওর আম্মুকে জড়িয়ে ধরে বলে,
–“আম্ আম্মু আম্মু আমি বাবা হবো। আমার আনিতার মাঝে আমাদের ছোট্ট একটা অংশ বেড়ে উঠছে আম্মু।”

আহিয়ানের আম্মু মুচকি হেসে ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,
–“আস্তে বাবা। আমরা জানি সবটা। সকালেই আনিতার আম্মু ফোন করে জানিয়েছে আমাদের।”

আহিয়ান ওর আম্মুকে ছেড়ে দিয়ে বলল,
–“তোমরা জানো তাহলে আমাকে আগে জানাওনি কেন?”

–“কাল অনেক রাত করে বাসায় ফিরেছিস খুব ক্লান্ত ছিলি তাই আর ঘুম থেকে জাগাইনি তোকে। এখন ফ্রেস হয়ে খেতে আয়।”

এইটুকু বলে উনি চলে গেলেন। রুহি মুচকি হেসে বেরিয়ে গেলেন রুম থেকে। নাহিয়ান কুনই দিয়ে আহিয়ানের পেটে গুঁতা মেরে বলল,
–“বাব্বাহ! বাবা হওয়ার খুশিতে দেখছি পাগল হয়ে যাচ্ছিস একেবারে।”

–“হ্যাঁ হবো না? লাইফে প্রথমবার বাবা হতে যাচ্ছি বলে কথা। এইটুকু খুশি তো খুব কম হয়ে গেছে।”

নাহিয়ান মৃদু হেসে আহিয়ানের মাথায় চাটি মেরে বের হয়ে গেলো রুম থেকে। ওদিকে আনিতা লজ্জায় কিছু বলতেও পারছে না আর সইতেও পারছে না। আহিয়ান ফোন কানে নিয়ে হ্যালো বলতেই ফাইয়াজ বলল,
–“ভাই তোর লাফানো অফ হইছে?”

–“হ্যাঁ। হইছে। তবে মনে হলো লাফালাফিটা খুব কম হয়ে গেছে।”

–“হ রে কমই হইছে। আমি তো ভাবছিলাম কম হইলেও বাবা হওয়ার খুশিতে তুই আরো দুই চার ঘন্টা তো অনায়াসে লাফাবি।”

–“হুম পরে করে নিবো। সমস্যা নেই। আচ্ছা আনিতা তোর সাথে?”

–“হ্যাঁ। দিবো?”

–“হুম দে তো।”

ফাইয়াজ স্পিকার অফ করে আনিতার দিকে ফোন এগিয়ে দিলো। আনিতা মাথা নিচু করেই জানালো কথা বলবে না। ফাইয়াজ আহিয়ানকে বলল,
–“বলবে না কথা। তোর বউ লজ্জা পাচ্ছে।”

–“বউটারে নিয়ে আমি কি করি বল তো? বিয়ের বছর পেরিয়ে গেলো। কয়েক মাস বাদে মা হবে এখনো বউয়ের লজ্জাটাই ভাঙাতে পারলাম না আমি। আচ্ছা রাখছি। পরে কথা হচ্ছে।”

এই বলে লাইন কেটে দিলো আহিয়ান। বাবা হওয়ার আনন্দ যে ঠিক কতখানি তা আহিয়ান কাউকে বলে বুঝাতে পারবে না। শুধুমাত্র যারা বাবা হয়েছে তারাই বুঝবে এর ফিলিংসটা। আনিতার একটা ছবিতে বেশ শব্দ করে চুমু খেয়ে ফোনটা পাশে রেখে দিলো ও। কাবার্ড থেকে জিন্স আর টাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে।

চলবে ইনশাআল্লাহ~

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here