শুধু তোমারই জন্য ২ পর্ব -২১+২২

#শুধু_তোমারই_জন্য(২)
লেখনীতে- অরনিশা সাথী

|২১|

ভরদুপুর। ফ্লোরে চাদর পাটি কিছু না বিছিয়েই বালিশে মাথা রেখে কোলবালিশ জড়িয়ে বেঘোরে ঘুমোচ্ছে আনিতা। হঠাৎই ও অনুভব করলো কেউ ওকে কোলে তুলে নিয়েছে। ঘুমের ঘোরে স্বপ্ন ভেবে নড়েচড়ে ঘুমানোর চেষ্টা করলো ও। কিছুক্ষণ পর বিছানায় নামিয়ে দিতেই আনিতা পাশ ফিরে শুয়ে পড়লো। ঘাড়ে গরম নিঃশ্বাস পড়তেই মৃদু কেঁপে উঠলো আনিতা। সরতে গেলেই বুঝতে পারলো কেউ একজন আষ্টেপৃষ্টে ওকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। বুঝতে পারলো মানুষটা অন্যকেউ না। আহিয়ান, আহিয়ান আদৃত। চুপ করে ঘুমিয়ে থাকার ভাণ করলো আনিতা। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হলো না। আহিয়ান আনিতার ঘাড়ে একটা চুমু দিয়ে বলল,
–“ঘুমিয়ে নেই তাহলে বৃথা ঘুমোনোর ভাণ ধরছো কেন? জানোই তো আমার কাছে ধরা পড়বে।”

আহিয়ানের ঘোরলাগা কন্ঠের কথা শুনে আনিতা শুকনো একটা ঢোক গিললো। ও কখনোই আহিয়ানের থেকে কিছু লুকোতে পারে না। ধরা পড়বেই পড়বে। আহিয়ানের দিকে ঘুরে শুয়ে বললো,
–“আপনি? কখন কিভাবে এলেন?”

আহিয়ান আনিতার নাকের ডগায় চুমু দিয়ে বলল,
–“প্রথমত, হ্যাঁ আমি। লাইফে প্রথমবার বাবা হবো আর আমার বেবির সাথে দেখা করতে আসবো না তা কি হয়? আর দ্বিতীয়ত, দশ থেকে পনেরো মিনিট হবে এসেছি। আর তৃতীয়ত, বাইক নিয়ে এসেছি।”

পরপর এতগুলো কথা বলে আহিয়ান একটা লম্বা শ্বাস নিলো। আনিতা অবাক চোখে তাকিয়ে বলল,
–“রিল্যাক্স। এত তাড়াহুড়ো করে বলার কি আছে? আমি তো আর পালিয়ে যাচ্ছি না।”

–“তা যাচ্ছো না। কিন্তু ইচ্ছে হলো তাই বললাম।”

আনিতা কিছু বলল না। চুপ করে রইলো। আহিয়ান আনিতাকে টেনে ওর বুকের উপর নিলো। আনিতার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল,
–“ফ্লোরে শুয়েছিলে কেন?”

–“গরম লাগছিলো অনেক। তাই শুয়েছিলাম।”

–“এই সময় ফ্লোরে ঘুমানোটা যে ঠিক না সেটা জানো না? ঠান্ডা ফ্লোরে কিছু না বিছিয়েই শুয়েছিলে যদি ঠান্ডা লেগে যেতো? এসময় কিন্তু একদমই অসুস্থ হওয়া চলবে না আগেই বলে দিলাম।”

–“জাস্ট ফ্লোরেই তো শুয়েছি। আর ঠান্ডা লাগলে লাগুক। ক্ষতি কি?”

–“হ্যাঁ তুমি অসুস্থ হলে হও। আই ডোন্ট কেয়ার। বাট আমার বাবু আর বাবুর আম্মুর ঠান্ডা লাগলে আমি কিন্তু দেখে নিবো তোমাকে।”

–“সেই তো ঘুরেফিরে আমার কথাই বলছেন। এত ঘোরপ্যাঁচের কোনো কারন আছে?”

–“তুমি আমার বাবুর আম্মু?”

–“হ্যাঁ আমিই তো। আমি ছাড়া আর কে হবে?”

–“সত্যিই?”

–“হ্যাঁ। আমিই আপনার বাবুর আম্মু। আপনার বাবু তো এখন আমার পেটেই___”

এইটুকু বলতেই আনিতা মুখ চেপে ধরলো। আহিয়ানের সামনে এভাবে অকপটে যে কথাগুলো বলে ফেলবে ও ভাবতেই পারেনি। একরাশ লজ্জা এসে গ্রাস করে ফেললো আনিতাকে। লজ্জায় মুখ লুকালো আহিয়ানের বুকে। আহিয়ান হো হো করে এসে আনিতাকে জড়িয়ে নিলো নিজের সাথে। মৃদু হেসে বলল,
–“এখন আর আগের মতো খামখেয়ালিপনা করলে হবে না। নিজের যত্ন নিতে হবে সাথে আমার বাবুরও। আমার বাবুর আর বাবুর আম্মুর যাতে কোনো রকম অযত্ন না হয়। মনে থাকবে?”

আনিতা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ জানালো। আহিয়ান ফোন হাতে নিয়ে সময় দেখে নিলো। একটা বেজে তেরো মিনিট। আনিতাকে ছেড়ে উঠে বসলো আহিয়ান। কাবার্ড থেকে নিজেই ওর আর আনিতা জামাকাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে রেখে এলো। তারপর আনিতার কাছে এসে বলল,
–“চলো গোসলে যাবে।”

–“আপনি আগে যান। আমি একটু পরে গোসল করবো।”

–“উঁহু কোনো কথা না। এখনই চলো।”

কথাটা বলেই আহিয়ান আনিতাকে কোলে তুলে নিলো।

সন্ধ্যার পর বিছানায় বসে বসে ফোন দেখছিলো আনিতা। আহিয়ান বিকেলের দিকে একটু বের হয়েছে ফাইয়াজের সাথে। দরজা খোলার শব্দে মাথা তুলে দেখলো আহিয়ান এসেছে। এসেই কাবার্ড থেকে টাওজার আর টাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো। বেশ খানিকটা অবাক হলো আনিতা। এমনি সময় তো কোথাও থেকে আসলে সবার আগে ওর কাছে আসে তারপর ফ্রেস হতে যায়। তাহলে আজকে উল্টোটা হলো কেন? আনিতার এরকম আকাশ পাতাল চিন্তা ভাবনার মাঝেই আহিয়ান বের হয়ে এলো ওয়াশরুম থেকে। টি-শার্ট গায়ে জড়িয়ে আনিতার কাছে গিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো ওকে। আনিতার অভিমান হয়েছে কিছুটা৷ আহিয়ান প্রথমেই ওর কাছে আসেনি বলে। আহিয়ান আনিতাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলল,
–“কি হয়েছে? মন খারাপ?”

আনিতা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে আহিয়ানকে জড়িয়ে ধরে বলল,
–“আচ্ছা একটা প্রশ্ন করি?”

–“তুমি প্রশ্ন করার আগেই আমি উত্তরটা দিয়ে দেই?”

আহিয়ানের কথায় অবাক হলো আনিতা। চোখ বড় বড় করে তাকালো ওর দিকে। আহিয়ান মৃদু হেসে আনিতার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,
–“যখনই বাসায় ফিরি তখনই আগে তোমার কাছে আসি। কিন্তু আজকে তার ব্যাতিক্রম কেন তাই তো?”

আনিতা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বোঝালো। আহিয়ান আবারো বললো,
–“বর্তমান যে পরিস্থিতি একটার পর একটা অসুখ-বিসুখ, এইটা-সেইটা লেগেই আছে। তারউপর রাস্তাঘাটের ধুলোবালি এতে তো বাসায় ফিরে সুস্থ মানুষের কাছেই যাওয়াটা ঠিক হয় না। আর তুমি তো প্রেগন্যান্ট এই অবস্থায় তোমার তো সতর্ক থাকতে হবেই তার সাথে আমাদেরও। বুঝলে?”

কথাটা বলে আহিয়ান আনিতার নাক টেনে দিলো। আনিতা কিছু না বলে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো আহিয়ানকে। আহিয়ান আনিতার মাথায় হাত বুলাতে লাগলো। একপর্যায়ে ঘুমিয়ে পড়ে আনিতা। আহিয়ান সেসময়ে ঘুমন্ত আনিতাকে নিজের বুকে জড়িয়ে দুজনের বেশ কয়েকটা ছবি তুলে নেয়৷ আনিতাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে আনিতার কপালে একটা চুমু দিলো৷ তারপর পেটে হালকা করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে উঠে বারান্দায় চলে গেলো ও।

আহিয়ান আজকে ভীষণ খুশি। যখন শুনেছে আনিতা প্রেগন্যান্ট তখন থেকে ওর কি পরিমান খুশি যে লাগছে কাউকে বলে বোঝাতে পারবে না। এই মেয়েটা ওর ভীষণ কাছের। ভীষণ রকমের ভালোবাসে ও আনিতাকে। টুপ করে একফোঁটা অশ্রুকণা গড়িয়ে পড়লো আহিয়ানের গাল বেয়ে। বাবা হবে ও। বাবা হওয়ার অনূভুতিটা ওকে পাগল করে দিচ্ছে।

রিংটোনের তীব্র আওয়াজে ঘোর ভাঙলো আহিয়ানের। চোখ মুছে পকেট থেকে ফোন বের করলো। বহু দিন পর ফোনের স্ক্রিনে পুরোনো সেই পরিচিত একটা নাম্বার দেখে কান্না মাখা মুখটাতেই হাসির রেখা ফুটে উঠলো। ফোনটা কানে নিয়ে হাসিমুখেই আহিয়ান বললো,
–“হ্যাঁ রাই বলো।”

ওপাশ থেকে মিষ্টি সুরেলা কন্ঠে একটা মেয়ে বললো,
–“এখনো এই নামটা মনে আছে?”

–“মনে না থাকার তো কোনো কারন নেই। বরং মনে রাখার অনেক কারন আছে।”

–“আচ্ছা সেসব কারনে না হয় অন্যদিন যাবো। এখন বলো কেমন আছো তুমি?”

–“খুউব ভালো। তোমার কি খবর সেটা বলো।”

মেয়েটা মৃদু হেসে বললো,
–“যেমনই আছি আলহামদুলিল্লাহ।”

–“বাবাইটা কেমন আছে? কি করছে এখন?”

–“আলহামদুলিল্লাহ ভালো। কিছুক্ষণ হলো ঘুমিয়েছে।”

–“দুটো গুড নিউজ একসাথে আছে দিবো? কিন্তু তোমার জন্য গুড না ব্যাড ঠিক বলতে পারবো না।”

কথাটা শুনেই অজানা কোনো কারনে রাইয়ের বুকটা ধক করে উঠলো। কাঁপা কাঁপা স্বরে বললো,
–“দুটো গুড নিউজ একসাথে? ক্ কি গুড নিউজ?”

আহিয়ান বিচলিত হয়ে প্রশ্ন করলো,
–“কন্ঠস্বর কাঁপছে কেন তোমার? এভরিথিং ইজ ওকে?”

–“হ্যাঁ সবকিছু ঠিকঠাক আছে তুমি ভুল শুনেছো।”

–“কেন মিথ্যা বলছো? ভুলে যাও কেন আমাকে মিথ্যা বলার আগে তোমার গলার স্বর কেঁপে উঠে।”

–“আচ্ছা বলবো না কখনো মিথ্যে। এখন বলো গুড নিউজ দুটো কি?”

–“আচ্ছা শুনো, প্রথমটা হলো আমার ভালোবাসায় সাকসেস হয়েছি আমি।”

–“ম্ মানে?”

–“বলেছিলাম না যদি কখনো তেমন ভাবে কাউকে ভালোবেসে ফেলি তাহলে তাকে আর হারাতে দিবো না? সত্যিই হারাতে দেইনি তাকে। সেই মানুষটা গত দেড় বছর যাবত আমার বউ।”

কথাগুলো শুনে রাইয়ের চোখ বেয়ে আপনাআপনি কয়েক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। চোখের পানিটা মুছে জিজ্ঞেস করলো,
–“ব্ বিয়ে করেছো তুমি? তাও দেড় বছর আগে? কই জানাওনি তো।”

–“সেরকম ভাবে সুযোগ হয়ে উঠেনি। তারউপর আবার তখন বাবাইটাও বেশ ছোট তাই আর বলিনি।”

রাই মলিন হেসে বললো,
–“আচ্ছা। তো দ্বিতীয় গুড নিউজটা কি?”

আহিয়ান এবারে বেশ উৎফুল্ল কন্ঠে বললো,
–“রিসেন্টলি জানতে পেরেছি আমার পিচ্চিটা প্রেগন্যান্ট। বাবা হবো আমি।”

কষ্টের মাঝেও এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো মেয়েটার মুখে। বুকের মধ্যে কষ্টগুলো পাথরচাপা দিয়ে মলিন হেসে বললো,
–“এজন্যই এত খুশি বুঝি?”

–“হ্যাঁ প্রচন্ড খুশি আমি। কেন তুমি খুশি হওনি? নাকি এগুলো তোমার জন্য খুশির না?”

–“না না খুশি হবো না কেন? আমি তো বরাবরই চেয়ে এসেছি তুমি যাতে সবসময় খুশি থাকো হ্যাপি থাকো।”

আহিয়ান বারান্দা থেকে উঁকি দিয়ে দেখলো আনিতা এখনো ঘুমোচ্ছে। আবারো ফোন কানে নিয়ে বললো,
–“হ্যাঁ তা অবশ্য চেয়ে এসেছো। কিন্তু আমার কেন জানি মনে হচ্ছে এখন তুমি খুশি হতে পারোনি।”

চুপ করে গেলো রাই। কি বলবে ও? সত্যিই কি ও খুশি হতে পেরেছে? কিন্তু ও তো বরাবরই আহিয়ানের খুশিতে খুশি হয়ে এসেছে। তাহলে আজ কেন বুকের ভেতরটা বড্ড ফাঁকা ফাঁকা লাগছে? কেন মনে হচ্ছে খুব কাছের কেউ একজন ওর থেকে অনেক অনেক দূরে সরে যাচ্ছে? রাই নরম কন্ঠে বললো,
–“আহিয়ান___”

সাথে সাথেই আহিয়ান জবাব দিলো,
–“এভাবে ডেকো না রাই।”

রাই আহিয়ানের কথা উপেক্ষা করে বললো,
–“তুমি তো আমারও হতে পারতে আহিয়ান। আজকে তোমার এই খুশির কারনটা তো আমিও হতে পারতাম। আমাকে কেন ভালোবাসলে না তুমি আহিয়ান? অনিয়মের নিয়ম ভেঙে আমার হলে কি খুব বেশি ক্ষতি হয়ে যেতো আহিয়ান?”

–“রাই থাক না এসব কথা।”

–“কেন থাকবে আহিয়ান? আমি ভালো নেই বিশ্বাস করো। তোমার কথা মনে হলেই আমি দুমড়ে মুচড়ে শেষ হয়ে যাই।”

–“শেষ হলে তো চলবে না রাই। বাবাই আছে তো। ওর জন্য তোমাকে ভালো থাকতে হবে। এখন অনেক ভালো আছো তুমি। যে সম্পর্কটা হয়নি। যেটা হওয়ার ছিলো না কোনোদিনও সেটা নিয়ে মন খারাপ কেন করবে? যেভাবেই আছো খুব ভালো আছো। হয়তো তুমি যেটা চেয়েছিলে সেটা তোমার জন্য ভালো ছিলো না।”

–“ভালো কেন হতো না? অবশ্যই ভালো হতো আহিয়ান যদি তুমি__”

–“বললাম তো পুরোনো সেসব কথা থাক। এতদিন পর কি মনে করে ফোন করলে সেটা বলো।”

–“এমনি তোমার কথা খুব মনে পড়ছিলো তাই আরকি। আচ্ছা আহিয়ান__”

–“বললাম না এভাবে ডেকো না আর।”

–“শুনো না। সত্যিই কি তুমি বিয়ে করেছো?”

–“বিয়ে না করলে বাবা হবো কিভাবে?”

–“হ্যাঁ তা-ও তো কথা।”

–“কংগ্রাচুলেশনস জানাবে না আমাকে?”

–“আহিয়ান এখনো ভা___”

আহিয়ান বুঝতে পারলো রাই কি বলবে তাই তাড়াতাড়ি করেই কথা ঘুরানোর জন্য বলে উঠলো,
–“আচ্ছা রাখছি আনিতা উঠে পড়বে যে কোনো সময়। আমাকে এভাবে দেখলে পরে কষ্ট পাবে মেয়েটা। আর ওর কষ্ট আমি জাস্ট নিতে পারি না। সহ্য হয় না আমার।”

–“আমার জন্য এরকমটা ফিল করেছিলে কখনো?”

–“আবারো সেই একই কথা তুলছো?”

–“বলো না প্লিজ। এরপর আর জানতে চাইবো না।”
#শুধু_তোমারই_জন্য(২)
লেখনীতে- অরনিশা সাথী

|২২|

–“আমি তোমাকে সবসময় বন্ধুর নজরে দেখেছি। তোমাকে নিয়ে সেরকম ভাবে কখনো ভাবিনি আমি।”

–“সত্যিই কি সেভাবে ভাবোনি আমাকে নিয়ে?”

আহিয়ান মৃদু হাসলো রাইয়ের কথা শুনে। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
–“ফিল করিনি বললে ভুল হবে৷ কিছু তো একটা ফিল করেছিলাম তোমাকে নিয়ে। কিন্তু সেটা লাভ না এট্রাকশন সেটা জানি না। হয়তোবা এট্রাকশন হবে নয়তো আনিতাকে ভালোবাসলাম কি করে? তোমার বিয়ের মাস খানেক বাদেই কিন্তু আনিতার মায়ায় জড়িয়েছিলাম নিজেকে। তোমাকে ভালোবাসলে এমনটা নিশ্চয়ই হতো না।”

আহিয়ানের কথায় রাই একটা শুকনো ঢোক গিললো। চোখের জলগুলো বাধ মানছে না। এই ছেলেটাকেই ও ভালোবাসতো। ভালোবাসতো বললে ভুল হবে। এখনো ভালোবাসে। মনের কোথাও একটা এখনো এই ছেলেটা রয়ে গেছে। কিন্তু আফসোস এই ছেলের ভালোবাসাটা ও কখনোই পায়নি। যে ছেলেটাকে একসময় কোনো মেয়ের সাথে দেখলেই রাগে সারা শরীর রিঁ রিঁ করে উঠতো সেই ছেলের সবটা জুড়ে এখন অন্য একটা মেয়ে বিচরণ করে। আহিয়ানকে ও কখনোই সেভাবে ওর মনের কথাটা বলতে পারেনি। এনগেজমেন্ট এর পরদিন হুট করেই ভালোবাসি কথাটা বলেছিলো আহিয়ানকে৷ আহিয়ান ফিরিয়ে দিয়েছিলো সেদিন ও অন্যকারো বাগদত্তা বলে। মানেনি ওর ভালোবাসাটাকে। বলেছিলো রাইয়ের ভালোবাসার কথাটা যদি ও এনগেজমেন্ট এর আগের দিনও জানতো তাও ব্যাপারটা নিয়ে ভেবে দেখতো ও। কিন্তু তখন কিছুই করার ছিলো না। রাই বলেছিলো আহিয়ানকে ছাড়া ওর থাকতে কষ্ট হবে ভীষণ। উত্তরে আহিয়ান বলেছিলো বন্ধু হয়ে যেমন আগে ছিলো তেমন ভাবেই সারাজীবন বন্ধু হয়েই ওর পাশে থাকবে৷ রাই রাজি হয়নি। কান্না করতে করতে চলে এসেছিলো সেদিন।

আহিয়ানের ডাকে অতীতের পাতা থেকে বর্তমানে ফিরে আসে ও। চোখের পানিটা মুছে হাসিমুখেই বলে,
–“হ্যাঁ বুঝলাম। ভালোবাসোনি কখনো আমাকে। আমি একতরফা ভাবেই ভালোবেসে গিয়েছিলাম। আর এখনো ভালোবেসেই যাচ্ছি।

প্রত্যুত্তরে আহিয়ান কিছু বললো না। কিছু বলার নেই ওর। কি-ই বা বলবে ওর উত্তরে ও? তাই চুপ করে থাকাটাই শ্রেয় মনে করলো। রাই বললো,
–“তোমার আর আনিতার খেয়াল রেখো। দোয়া করি ভালো থাকো দুজনে সারাজীবন। রাখছি।”

কথাটা বলে আহিয়ানকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই রাই ফোন কেটে দিলো। আহিয়ান দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ফোন পকেটে ঢুকিয়ে আনিতার কাছে চলে গেলো।

আবারো কান্নায় ভেঙে পড়েছে রাই। কত রাত যে এই ছেলেটার বিরহে চোখের জলে বালিশ ভিজিয়েছে তার হিসেব নাই। অনেক রাত নির্ঘুম কাটিয়েছে রাই আহিয়ানের বিরহে। প্রচন্ডরকম ভালোবাসতো কিনা। রাই ওর বিয়ের সময়ও দেখেছিলো আহিয়ান কি সুন্দর সব রিচুয়্যালসে উপস্থিত ছিলো। কি সুন্দর ওর বিয়েতে হই হুল্লোড় করেছিলো। কিন্তু রাই পারেনি সবটা মেনে নিতে। হলুদের দিন রাতেও আহিয়ানকে জড়িয়ে ধরে প্রচুর কান্না করেছিলো ও। কিন্তু আহিয়ান সেদিন মুখ ফুটে কিছুই বলেনি। বেশ কিছুক্ষণ ওভাবেই দাঁড়িয়ে থেকে রাইকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে থমথমে পায়ে চলে যায় সেখান থেকে। বিয়ে হয়ে যায় রাইয়ের। এরপর ও আর আহিয়ানের সাথে যোগাযোগ করেনি। মাঝেমধ্যে দেখা হতো দুজনের। আহিয়ান রাইকে দেখলেই ওর ভুবন ভোলানো হাসিটা দিতো। আর রাই বরাবরই ওর হাসিতে দূর্বল হয়ে পড়তো। আহিয়ান দেখতো রাই কত সুখে আছে স্বামী সংসার নিয়ে। কিন্তু রাই জানতো ও ভালো নেই। আহিয়ানকে ছাড়া ও একদমই ভালো নেই। আহিয়ানকে দেখলেই ওর বুকের ভেতরটা কেমন করে উঠতো। আহিয়ানকে যাতে না দেখতে হয় তাই রাই এই শহর ছেড়ে অন্য শহরে যায়। কিন্তু তারপরও আহিয়ান নামক ছেলেটাকে ও ভুলতে পারেনি। বুকের বাঁ পাশটাতে এখনো আহিয়ান নামক ছেলেটারই বাস।

রাইয়ের বিয়ের পর আজকে বাদে এর আগে দুবার কথা বলেছিলো আহিয়ানের সাথে৷ প্রথমবার রাই যখন প্রেগন্যান্ট হয় তখন ফোন করে জানিয়েছিলো ওকে। আহিয়ান খুব খুশি হয়েছিলো রাইয়ের বাবু হওয়ার কথা শুনে। আর দ্বিতীয়বার রাই বাচ্চাটা দুনিয়াতে আসার মাস দুয়েক বাদে আহিয়ানকে ফোন করে জানিয়েছিলো।

রাইয়ের আজকে সকাল থেকেই খুব অশান্তি অশান্তি লাগছিলো। আর আহিয়ানের কথাটাও বড্ড মনে পড়ছিলো কয়েকদিন যাবত৷ তাই আজকে দেড় বছর পর আহিয়ানের নাম্বারে ফোন করেছিলো ও। কিন্তু আহিয়ান যে ওর জন্য এতবড় দুটো সারপ্রাইজ রেডি করে রেখেছিলো রাই তা কল্পনাতেও ভাবেনি। চোখের পানি মুছে নিলো রাই। পাশেই ঘুমিয়ে থাকা ওর দু বছরের ছেলেটার দিকে তাকালো কি নিষ্পাপ মুখখানা। আহিয়ান ঠিকই বলেছে আর কারো জন্য না হোক নিজের ছেলের জন্য ওর ভালো থাকতে হবে। হ্যাঁ ও ভালো থাকবে। ওর এই নিষ্পাপ বাচ্চাটার মুখের দিকে তাকিয়ে ও ভুলে থাকবে আহিয়ানকে। মনে মনে এসব ভেবে বাচ্চাটাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লো রাই।

আনিতাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে জোর করে রাতের খাবার খাইয়ে দেয় আহিয়ান। তারপর ও ডাইনিংয়ে চলে যায় খেতে৷ আনিতাও সবার সাথে খেতে চেয়েছিলো। আহিয়ানই জোর করে রুমে খাবার এনে খাইয়েছে ওকে৷ আনিতা বসে বসে আহিয়ানের ফোন ঘাটছে। কিছুক্ষণ বাদে আহিয়ান ডিনার শেষ করে এক গ্লাস দুধ হাতে করে রুমে আসে। আহিয়ানকে দেখে আনিতা ফোনটা পাশে রেখে দেয়। আহিয়ান দুধের গ্লাসটা এগিয়ে দেয় আনিতাকে। দুধ দেখেই আনিতা নাক সিঁটকানো শুরু করে। আহিয়ান জোর করে আনিতাকে অর্ধেক গ্লাস দুধ খাইয়ে দেয়৷ বাকীটুকু নিজে খেয়ে গ্লাসটা বেড সাইড টেবিলে রেখে দেয়। রুমের লাইট অফ করে দিয়ে ড্রিমলাইট অন করে। বিছানার হেডবোর্ডের সাথে হেলান দিয়ে বসে আনিতাকে ওর বুকের উপর নিয়ে আসে। আনিতার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,
–“কি কি পেলে আমার ফোনে?”

–“মানে?”

–“মানে এতক্ষণ তো আমার ফোনই দেখছিলে। তো আমার ফোন ঘেটে কি কি পেলে তুমি? সন্দেহজনক কিছু পেয়েছো কি?”

আনিতা ভ্রু কুঁচকে জবাব দিলো,
–“কিসব যাতা বলছেন? আপনার ফোন চেক করতে যাবো কেন? আমি তো এমনি গ্যালারিতে গিয়ে ছবিগুলো দেখছিলাম। পুরো গ্যালারি জুড়ে আমার ছবিই বেশি।”

–“হ্যাঁ আমার দশটা না পাঁচটা না একটা মাত্র বউ। গ্যালারি জুরে বউয়ের ছবি থাকবে না তো কার ছবি থাকবে?”

কিছু বললো না আনিতা। চুপচাপ আহিয়ানের বুকে মাথা রেখে ওর হার্টবিট শুনতে লাগলো। আহিয়ান আবারো বললো,
–“কল লিস্টে গিয়ে দেখো তুমি যখন ঘুমিয়ে ছিলে তখন একটা মেয়ের সাথে কথা বলেছিলাম অনেকটা সময়।”

আনিতা আহিয়ানকে আরো ভালোভাবে জাপ্টে ধরে বললো,
–“এখন বসে আছেন কেন? এখনো কথা বলুন না করেছে কে?”

–“বিশ্বাস করছো না? সত্যিই কথা বলেছি কিন্তু।”

–“তো? কি করবো এখন আমি?”

–“কিছু বলবে না? তোমাকে রেখে আমি অন্য একটা মেয়ের সাথে কথা বলেছি তারপরও তুমি এতটা শান্ত আছো? রাগ লাগছে না? খুন করে ফেলতে ইচ্ছে করছে না আমাকে?”

–“করলেও বলবো না। আপনি একটা কেন দশটা মেয়ের সাথে কথা বলুন তবুও আমি কিছু বলবো না। কারন আমি জানি আপনি শুধু আমাকেই ভালোবাসেন। আমাকে ছেড়ে আপনি কখনো যাবেন না।”

–“এতটা বিশ্বাস আমার উপর?”

–“হ্যাঁ।”

–“বিশ্বাস থাকা ভালো আনিতা। তবে এতটাও না।হিতে বিপরীত হতে পারে। যখন বিশ্বাস ভেঙে যাবে তখন দুমড়ে মুচড়ে শেষ হয়ে যাবে।”

আনিতা কিছু বললো না। ও বুঝতে পারছে না আহিয়ান হঠাৎ এসব বলছে কেন? যাক-গে যা বলার বলুক ও এসব নিয়ে মাথা ঘামাবে না। ও এখন শান্তিতে আহিয়ানের বুকে মাথা রেখে ঘুমোতে চায়। আনিতা ভালো করে আহিয়ানের বুকে মাথা রেখে জাপ্টে ধরলো ওকে। আহিয়ান আনিতার চুলে বিলি কাটতে কাটতে বললো,
–“বউ কিছু কথা বলবো?”

–“নাহ।”

সোজাসাপটা উত্তর আনিতার। কিন্তু আহিয়ান হার মানলো না। আবারো বললো,
–“প্লিজ বলি না।”

এবার আর আনিতা না করলো না। আহিয়ানকে বলতে বললো। আহিয়ান আনিতার হাত নিজের হাতে নিয়ে নিলো। তারপর রাইয়ের সাথে ওর পরিচয় হওয়া থেকে শুরু করে আজকে ফোন দেওয়া অব্দি সবটা বললো। রাই আজকে কি কি বলেছে সেটাও বললো আনিতাকে। পরবর্তীতে আনিতা যাতে ওকে আর ভুল না বুঝে।

বেশ কিছুক্ষণ হলো আনিতা চুপ করে আছে। আহিয়ানের কথাগুলো শুনেও আনিতা কিছু বলছে না। তাই আহিয়ান কিছুটা ঘাবড়ে গেলো। রাগ করেনি তো আবার? এই ভেবে আহিয়ান আনিতাকে ডাকতেই আনিতা বললো,
–“হ্যাঁ বলুন, আর কিছু বলার আছে? নাকি এতটুকুই?”

আহিয়ান মাথা নেড়ে জানালো আর কিছু বলার নেই। এতটুকুই বলার ছিলো। আনিতা হাতের বাঁধন আলগা করে বললো,
–“সত্যিই তো মেয়েটা মানে রাই আপনাকে কত্তটা ভালোবাসে আপনি কেন ভালোবাসলেন না ওকে? রাইকে ভালোবাসলে কি এমন ক্ষতি হতো? ওর জীবনটাতো তাহলে অন্যরকম হতো। আপনাকে পেলে ও অনেক খুশি হতো।”

–“জানিনা কি হতো। তবে রাইকে ভালোবাসলে যে আজকে তোমাকে পেতাম না আমি। আর আমার কাছে তোমার ভালোনাসাটাই এনাফ। আমি মনে করি তোমার থেকে বেশি আর কেউ আমাকে ভালোবাসতে পারবে না।”

আনিতা এবারে ওর হাতের বাঁধন শক্ত করে নিলো। তারপর কাঁদোকাঁদো কন্ঠে বললো,
–“প্লিজ আমাকে ছেড়ে যাবেন না। আমি সত্যিই আপনাকে খুউব বেশিই ভালোবাসি।”

আহিয়ান কিছু না বলে শক্ত করে জড়িয়ে নিলো ওকে। তারপর ওর মাথায় চুমু দিয়ে বললো,
–“একবার যেহেতু এন্ট্রি নিয়ে নিয়েছি তোমার লাইফে তুমি নিশ্চিন্ত থাকো। মৃত্যু ছাড়া আলাদা হবো না আমরা।”

আনিতাও আর কিছু বললো না। চুপ করে রইল খানিকটা সময়। আহিয়ান ফোন বের করে ইউটিউবে ওয়েব সিরিজ দেখছে সাথে আনিতাও। হঠাৎ করেই আনিতা খুব বমি পাচ্ছে। সামলাতে পারছে না নিজেকে। আহিয়ানের থেকে সরার সময় টুকু পায়নি ও। আহিয়ানের গায়ের উপরই বমি করে দেয়। আহিয়ান আনিতার মাথায় পিঠে হাত বুলাতে থাকে। মিনিট পাঁচেক বাদে আনিতা নিজেকে সামলে নিলে আহিয়ান বললো,
–“এখন ঠিক আছো? নাকি এখনো বমি বমি পাচ্ছে?”

আনিতা মাথা নাড়িয়ে জানালো এখন আর বমি বমি পাচ্ছে না। আহিয়ান আনিতাকে বসতে বলে উঠে ওয়াশরুমে চলে গেলো। আনিতা বেশ ভয় পেয়ে গিয়েছিলো। ভেবেছিলো আহিয়ান নিশ্চয়ই কিছু বলবে বা রাগ করবে ওর গায়ের উপর এভাবে বমি করে দেওয়ার জন্য। কিন্তু না আনিতার ভাবনা ভুল প্রমান করে দিয়ে আহিয়ান কিছুই বললো না। মিনিট পনেরো বাদে আহিয়ান ফ্রেস হয়ে আনিতার কাছে আসে। আনিতাকে কোলে তুলে নিয়ে আবারো ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ায়। আনিতাকে ফ্রেশ করিয়ে এনে শুইয়ে দেয় বিছানায়। পাশে আহিয়ানও শুয়ে পড়ে। আনিতা মুখ গোমড়া করে বলে,
–“বলেছিলাম দুধ খাবো না আমি। তারপরও জোর করে দুধ খাওয়ালেন। আবার একগাদা খাবারও খাইয়েছেন। এখন আমার জন্য আপনার এত রাতে গোসল করতে হলো। ইশ্!”

আহিয়ান আনিতাকে নিজের কাছে টেনে এনে জড়িয়ে ধরলো। তারপর বললো,
–“এমন ভাবে বলছো যেন এর আগে কখনো আর রাতে গোসল করতে হয়নি। এখন তো সবে এগারোটা বাজে। আগে তো মাঝরাতেও গোসল করেছি। এমন কি ভোররাতেও।”

আহিয়ানের কথায় আনিতা লজ্জা পেয়ে গেলো। ও বুঝতে পেরেছে আহিয়ান কি ভেবে কথাটা বলেছে। লজ্জায় আর আনিতা মুখ তুলে তাকালো না। আহিয়ানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেই ঘুমিয়ে পড়লো। আহিয়ানও মৃদু হেসে ওর কপালে চুমু দিয়ে ঘুমিয়ে যায়।

মাঝে দুটো দিন পার হয়েছে। আহিয়ান চলে যাবে কাল। সেই নিয়ে আনিতার কিছুটা মন খারাপ। মুড অফ করে বিছানার একপাশে বসে আছে ও। আহিয়ান বাজারে গিয়েছে একটু। অবশ্য আনিতার জন্যই গিয়েছে। দুপুর থেকে বায়না ধরেছে আইসক্রিম খাবে। আইসক্রিম কিনতেই আহিয়ান বাজারে গিয়েছে। আহিয়ান না আসা অব্দি আনিতা ওভাবেই বসে রইলো। আধ ঘন্টা পর আহিয়ান ফিরে এসে আনিতাকে ওভাবে বসে থাকতে দেখে বললো,
–“যাওয়ার সময় এভাবে বসে থাকতে দেখে গেলাম। এখন এসেও দেখছি এভাবেই বসে আছো। ভালো লাগছে না? শরীর খারাপ লাগছে?”

আনিতা মাথা নাড়িয়ে না জানালো। আহিয়ান আনিতার পাশে বসে আইসক্রিম বক্সটা ওর হাতে দিলো। আইসক্রিম বক্স হাতে পেয়ে আনিতা খুব খুশি হয়ে যায়। অনিমাকে ডেকে চামোচ আর বাটি নিয়ে আসতে বললো ও। অনিমা এলে আহিয়ান আনিতার থেকে আইসক্রিমের বক্স নিয়ে কিছুটা আইসক্রিম বাটিতে তুলে দেয়। অনিমার কাছে আইসক্রিমের বক্স দিয়ে বললো,
–“বাকীটা তোমার আর জারাফের জন্য যাও।”

আনিতা খাওয়া বন্ধ করে হা করে তাকিয়ে রইলো আহিয়ানের দিকে। আহিয়ান চোখের ইশারায় প্রশ্ন করে,
–“কি হয়েছে?”

আনিতা বাটিটা পাশে রেখে মুখ ভার করে বললো,
–“আইসক্রিম খেতে ইচ্ছে করলো আমার। আর আপনি আমাকে একটুখানি দিয়ে সম্পূর্ণটা অনি আর জারাফকে দিয়ে দিচ্ছেন? এটা কেমন কথা বলুন তো?”

–“এসময়ে এসব আইসক্রিম খেয়ে ঠান্ডা লাগালে চলবে না। খেতে চেয়েছিলে এনে দিয়েছি তাই বলে পুরোটা খেতে দিবো নাকি? যদি ঠান্ডা লেগে যায় তখন কি হবে?”

–“ভালো না আপনি। খুউউব পঁচা আপনি।”

–“ইয়েস, আই নো।”

আনিতা মুখ ঘুরিয়ে বসে রইলো কিছুক্ষণ। তা দেখে আহিয়ান বললো,
–“খাচ্ছো না কেন? আইসক্রিম গলে যাচ্ছে তো। তাহলে অনিমাকে ডেকে দিয়ে দেই?”

আহিয়ানের কথায় আনিতা তাড়াহুড়ো করে আইসক্রিমের বাটি হাতে নিয়ে খেতে শুরু করে। আনিতার বাচ্চামোতে আহিয়ান মুচকি হাসে। খাওয়া শেষে আনিতা বলে,
–“আর একটু এনে দিন না প্লিজ।”

–“সরি পারছি না।”

প্রত্যুত্তরে আনিতা কিছু বললো না। ও জানে আহিয়ানকে এখন হাজার বললেও আহিয়ান আর আইসক্রিম এনে দিবে না। তাই শান্ত মেয়ের মতো আসাম দিয়ে বসে ফোন হাতে নিলো। নিউজফিড স্ক্রল করছিলো আনিতা৷ তখনই আহিয়ান পকেট থেকে কয়েকটা কিটক্যাট বের করে আনিতার কোলের উপর রাখলো। চকলেট পেয়ে আনিতা খুব খুশি হয়ে যায়। ফোন পাশে রেখে একটা চকলেট ছিঁড়ে কামড় বসায়। তারপর আহিয়ানের দিকে এগিয়ে দেয়। আনিতার কামড়ে নেওয়া অংশ থেকেই আহিয়ান এক কামড় চকলেট নিয়ে খেতে শুরু করে।

চলবে ইনশাআল্লাহ~
চলবে ইনশাআল্লাহ~

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here