শুধু_তোমাকে_প্রয়োজন পর্ব ৩

#শুধু_তোমাকে_প্রয়োজন
#পর্ব_০৩
#অধির_রায়

সকাল বেলা নিয়তি ঘুম ভাঙে অধিরের পরে৷ নিয়তি ঘুম থেকে উঠে অধিরকে কোন জায়গায় খোঁজে পায়না৷ অধির নিয়মিত ছাঁদে ব্যায়াম করে অথচও আজ ছাঁদেও যায়নি। নিয়তি নিরাশ হয়ে রুমে ফিরে আসে৷

নিয়তির মনে সন্দেহের কড়া নাড়া দিচ্ছে৷ অধিরকি তার সাথে কোন অভিনয় করছে? যদি তার ভালোবাসা সত্যি হতো তাহলে সে আমাকে না জানিয়ে ভোরে কোথাও চলে যেত না৷ এতই বিজি তাহলে একটা মেসেজ দিতেও পারত৷ ফোন নিয়ে নড়াচড়া করছে আর আকাশ পাতাল ভেবে ঘেমে একাকার হয়ে যাচ্ছে। হুট করেই চোখ আটকে যায় ট্রি টেবিলের উপর রাখা একটা চিরকুট খামের উপর৷ কিসের খাম দেখার জন্য হাতে তুলে নেয়৷

নিয়তি খামের ভেতর থেকে একটা নীল রঙের চিরকুট পায়৷ চিরকুটটি খোলে দেখে

প্রিয়
আমি জানি তুমি ঘুম থেকে উঠে আমার খোঁজ করবে৷ প্রথমে তোমার আঁখি এই চিরকুটের উপর পড়বে না৷ যখন হতাশা হয়ে তুমি আমায় নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বে ঠিক তখনই তোমার মায়াবী চোখ ধাঁধানো আঁখিতে আমার চিরকুট ধরা দিবে৷
তোমার জন্য আজ একটা সারপ্রাইজ প্ল্যান করেছি৷ ভেবে পাচ্ছিলাম না কিভাবে তোমাকে সারপ্রাইজ করতে পারি৷ তাই এভাবে প্ল্যান করতে হলো৷ সকাল ১০ টার দিকে আমি বাড়ি ফিরে আসবো৷ তখন তোমাকে যেন সিল্কের সাদা শাড়িতে দেখতে পায়৷ শাড়িটা রাখা আছে আলমারির বা পাশে৷
সারপ্রাইজ
সারপ্রাইজ

নিয়তি চিরকুটটা নিজের বুকের মাঝে নিয়ে “দিল ওয়ালী” গানে ড্যান্স দিতে থাকে৷

নিয়তি অধিরের কথা মতো সাদা সিল্কের ডিজাইন করা শাড়িটি বের করে৷ কিন্তু নিয়তি শাড়ি পড়তে পারে না৷ সে কিভাবে শাড়ি পড়বে৷ শাড়ি নিয়ে কলো মেঘের মতো মন খারাপ করে শাড়ি নিয়ে সোফায় বসে আছে৷

নিয়তিকে খাবারের জন্য ডাকতে আসে নিয়তির শ্বাশুড়ি মা৷ এসে দেখে নিয়তি মুখটা কালো করে শাড়ি নিয়ে বসে আছে৷ অধিরের মায়ের বুঝতে দেরি হলো না কিসের জন্য বসে আছে৷

অধিরের মা নিয়তির কাঁধে হাত রাখতেই নিয়তি অধির ভেবে ” আপনার সাথে কোন কথা নেই৷ আপনি জানেন না আমি শাড়ি পড়তে পারি না৷ কেন বললেন আমাকে শাড়ি পড়তে৷ আমি অভিমান করেছি আমার অভিমান ভাঙান আগে৷”

— “তুমি আমার সাথে অভিমান করেছো?” (অধিরের মা)

মেয়েলি কন্ঠ শুনে নিয়তি পিছনে ফিরে তাকায়৷ পিছনে ফিরে দেখে তার শ্বাশুড়ি মা মুখ চেপে হাসি আটকানোর চেষ্টা করছে৷

— মাথা নিচু করে ” আসলে মা আমি বুঝতে পারি নি!”

— আরে সমস্যা নেই৷ আমি যেমন অধিরের মা ঠিক তেমনই তোমার মা। আর আমি তোমাকে শাড়ি পড়িয়ে দিচ্ছি৷

— আপনি আমাকে শাড়ি পড়িয়ে দিবেন।

— কেন? তুমি আমার কাছ থেকে শাড়ি পড়তে চাও না৷

— না না না.. মা। এমন কথা আমি মুখের আনতে পারি না৷ আমি ভাবছিলাম কিভাবে আপনার কাছে আমার শাড়ির প্রতি দুর্বলতা তুলে ধরব৷

— আরে পাগল মেয়ে৷ জন্মের পর সবাই সবকিছু শিখে৷ জন্মের আগে শিখে আসে না৷ আমি তোমাকে শাড়ি পড়া শিখিয়ে দিচ্ছি।

অধিরের মা খুব সুন্দর করে মিয়তিকে শাড়ি পড়িয়ে দেয়৷ তার পর নিয়তি হালকা মেকআপ করে নেয়৷ চোখে কাজল, ঠোঁট গাঢ় করে লাল লিপস্টিক।


অধীর পিছনে থেকে এসে নিয়তিকে জড়িয়ে ধরে৷ গলায় আলতু করে একটা কিস করে ” তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে৷ ”

গলায় আলতু করে কিস করাতে নিয়তি সারা শরীর কেঁপে উঠে৷ নিয়তি অধিরের হাত চেপে ধরে৷

–অধির মুচকি হেঁসে ” এভাবে আমার হাত চেপে ধরলে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারব না৷

— যান আপনি একটা দুষ্টু৷ ছাড়তে আমাকে।

— না ছাড়বো না তোমাকে। বলে ছিলাম না তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে৷

— কি সারপ্রাইজ? আমাকে কেউ সারপ্রাইজ দিতে চাইলে আমি নিজেকে আটকিয়ে রাখতে পারি না৷ জলদি বলেন।

— না বলা যাবে না৷ তুমি নিজের চোখে দেখে নিবে৷

— তাহলে সেখানে আমাকে তারাতাড়ি নিয়ে যান৷

— নিয়ে যাব তবে চোখ বেঁধে।

— “কি আমার চোখ বাঁধবেন কেন? আমার কাজল নষ্ট হয়ে যাবে। আমি অনেক কষ্ট করে কাজল লাগিয়েছি৷” কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে উঠে

— কিছু হবে না হালকা করে বাঁধবো। এতে তোমার কাজল একটুও সরে যাবে না৷ যদি তুমি চালাকি করার চেষ্টা কর তাহলে সরে যাবে৷

— আসলে আপনি একটা পঁচা মানুষ৷ আমার কাজল নষ্ট হলে আমি আপনার কি অবস্থা করব ভেবে পাবেন না৷

— ওঁকে,, তোমার যা করার রাতে করলে ভালো হয়৷ গভীর ভালোবাসা,, “ঠোঁট ঠোঁট মিকি কথা হবে৷” দুষ্টামি করে.

— অসভ্য ছেলে৷ আপনি চোখ বাঁধবেন তো বাঁধেন তাতে আমার কি? আমার কষ্টটা কেউ বুঝতে চায় না৷ প্যাচার মতো মুখ করে৷

অধির নিয়তির এমন স্বভাব দেখে মুখে চেপে হাসছে৷ প্রকাশ করতে পারছে না যদি প্রকাশ করে তাহলে তার সব প্ল্যান নষ্ট হয়ে যাবে।

— কটাক্ষ কন্ঠে বলে উঠে ” যা বলছি তাই করতে হবে। ”

নিয়তি এমন হুংকার শুনে সব সব উধাও হয়ে যায়। নিজেকে গুছিয়ে নেয়৷ নিয়তি জানে অধির অনেকটা রাগী স্বভাবের৷ তার কথা না শুনা মানে বিপদ৷ নিয়তি চুপসে যায়৷ অধির নিয়তির চোখ সাদা কাপড় দিয়ে বেঁধে দেয় হালকা করে৷ যেন নিয়তির কাজলে কোন ইফেক্ট না পড়ে৷

নিয়তিকে নিয়ে ধরে ধরে এগিয়ে যাচ্ছে অধির৷ কিন্তু নিয়তি এখনো কোন কথা বলছে না৷ হংকারের কাজ করেছে। কিন্তু নিয়তি থেমে নেই৷ হাকলা করে বাঁধার ফলে সে নিচে কিছুটা দেখতে পাচ্ছে৷ মাথা উঁচু করে সামনে কি হচ্ছে দেখার চেষ্টা করে৷

নিয়তির সব আশাতে জল ঠেলে দেয়৷ হুট করেই নিয়তিকে কোলে তুলে নেয় অধির৷ আচমকা এমন হওয়ায় নিয়তি অনেক ভয় পেয় যায়৷ আর অধিরের শার্ট খাঁমচে ধরে।

— ভয়ের কিছু নেই৷ তোমাকে ফেলে দিব না৷ বিশ্বাস না হলে শার্ট ছেড়ে গলা জড়িয়ে ধর।

অধিরের কথা মতো নিয়তি গলা জড়িয়ে ধরে। গলা জড়িয়ে ধরার ফলে নিয়তির মুখটা কিছুটা অধিরের মুখের কাছাকাছি চলে আছে৷ যার ফলে অধিরের নিঃশ্বাস নিয়তির মুখে পড়ছে৷ যা নিয়তিকে নেশায় পরিণত করছে৷ নিয়তি মন ভরে এই মুহুর্তটা উপভোগ করছে৷

সেটাও সহ্য হলো না অধিরের হুট করেই নিয়তিকে নামিয়ে দেয়৷ নামিয়ে দিয়ে নিয়তির চোখের বাঁধন খোলে দেয়৷

নিয়তি চোখ মেলে তার বাবা মাকে দেখতে পায়৷ অধির নিয়তির কানে ফিসফিস করে বলে উঠে “কেমন সারপ্রাইজ দিলাম ”
অধিরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেঁসে জবাব দেয় সে খুব খুশি হয়েছে।নিয়তি তার বাবা মাকে দেখতে পেয়ে এক প্রকার দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে।

কান্না করতে করতে ” তোমরা খুব পঁচা। তোমরা একবারও আমাকে ফোন কর নি৷ আমি তোমাদের অনেক ট্রাই করেছি। কিন্তু ফোনে পাইনি৷ ” (খুশির কান্না)

অধির চোখ দিয়ে ইশারা করে বলতে বলে নেটওয়ার্ক ছিল না৷ সেজন্য অধির আমাকে তোমাদের কাছে নিয়ে এসেছে৷

— আসলে আমাদের দিকে নেটওয়ার্কের প্রচুর সমস্যা হচ্ছে। সেজন্য তুমি আমাদের ফোনে পাওনি। (নিয়তির বাবা)

— অধির তার নিয়তির মা বাবাকে নিয়ে অন্য রুমে চলে যায়। অধির তখন তার আসল রুপে ফিরে আসে৷

— নিয়তি তুমি কি তোমার বাবা মাকে সুখী দেখতে চাও?

— হুম আমি সব সময় চাই আমার মা বাবা যেন সুখে থাকে৷

–তাহলে তোমাকে একটা কাজ করতে হবে?

— কি কাজ?

— কিছু এসাইনমেন্টে সাইন করতে হবে।

— নিয়তির বাবা বলে উঠে ” না নিয়তি কোন এসাইনমেন্টে সাইন করবে না৷ ”

— আরে শ্বশুর মশাই এত ক্ষেপে যান কেন? আপনার তো হায় বিপি। বেশি ক্ষেপে গেলে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে৷

— না নিয়তি কিছুতেই এসাইনমেন্টে সাইন করবে না৷ (নিয়তির মা)

— ওঁকে,, ফাইন। নিয়তি এসাইনমেন্টে সাইন না করলে আপনার মেয়ো নিঝুমকে খোঁজে পাবেন না৷

— কি আমার বোন নিঝুম বেঁচে আছে? (নিয়তি)

— নিঝুম বেঁচে আছে? ( নিয়তির মা বাবা একসাথে)

— আরে হুম শ্বাশুড়ি মা & শ্বশুর মশাই। যদি জীবিত দেখতে চান তাহলে নিয়তিকে সাইন করতে বলেন৷

— তবুও নিয়তি কিছুতেই সাইন করবে না৷ (নিয়তির মা) আমাদের দুই মেয়ে চলে গেলেও আমরা এতিমখানা ভাঙতে দিব না৷ সেখানে তুই কিছুতেই ফেক্টরি করতে পারবি না৷

— শ্বাশুড়ি মা আমি আপনাদের ভালো করে বলেছিলাম ওই জমিটা আমার দরকার৷ এখনো বলছি আমার দরকার৷ যদি এখন ভালোই ভালোই না দেন জোর করে আদায় করব৷ আর হ্যাঁ এতিম বাচ্চাদের কথা চিন্তা করেন৷ তাদের কি হবে৷ যদি দেন তাদের ব্যবস্থা করে দিব৷

— তুমি কেন বুঝতে চাইছো না৷ সেখানে তারা খেলাধুলা করতে পারে৷ আর তুনি যেখানে তাদের থাকার ব্যবস্থা করেছো সেখানে তারা খেলা ধূলা করার মতো জায়গা পাবে না৷ তাদের বিকাশ সঠিকভাবে হবে না৷

— আর সেই জমি যদি আমি না পায় তাহলে আমার কোটি কোটি টাকা লস হয়ে যাবে৷,, নিয়তি তুই সাইন করবি কিনা বল৷ যদি সাইন না করিস তাহলে তোর বোন, মা, বাবা কেউ জীবিত থাকবে না৷ ইভেন তুইও জীবিত থাকবি না৷ তার পর ওই এতিম বাচ্চাদের কি হবে ভেবে দেখেছিস?

— না তাদের কিছু করবেন না আমি সাইন করে দিচ্ছি৷ বাবা মা তোমরা আমার কাছে সব থেকে প্রিয়৷ আর তাদের জন্য তো ব্যবস্থা করাই হচ্ছে। তারা তো আর না খেয়ে বেঁচে থাকবে না৷ তাদের সঠিক বিকাশের জন্য আমি কিছু একটা করব৷

— না মা৷ তুই যা ভাবছিস অধির তা নয়৷ সে অনেক নিচু মনের মানুষ৷ সে কাউকে রেহ,,

তার আগেই অধির নিয়তির বাবার মুখে লাড্ডু ঢুকিয়ে দেয়৷

— শ্বশুর মশাই আমি চাইনা আপনার গায়ে হাত দিতে৷ আমি বড়দের সম্মান করি। যদি বেশি কথা বলেন তাহলে,,,, নিয়তিকে সাইন করতে বলেন৷

— প্লিজ আমি আপনার পায়ে পড়ি৷ আমার মা বাবার সাথে এমন করবেন না৷ আমি আপনার শর্তে রাজি।

নিয়তি এসাইনমেন্টে সাইন করে দেয়৷ এসাইনমেন্ট বা দলিলে লেখা নিয়তির বর্তমান, অবর্তমানে যা কিছু আছে সবই অধিরের।



নিয়তি বিছানায় বসে কান্না করছে৷ একটা মানুষ কতটা নিষ্ঠুরতম হলে এমন কাজ করতে পারে৷

— তোর জায়গা খাটে না৷ তুই যদি এই বাড়িতে থাকতে চাস তাহলে তুই সোফায় বা মাটিতে শুয়ে থাকবি৷ আর গত দুই রাতের কথা স্বপ্ন মনে করে ভুলে যায়।

— আমি পৃথিবীতে অনেক মানুষ দেখেছি কিন্তু আপনার মতো নিষ্ঠুরতম মানুষ দেখি নি।

— লেকচার বন্ধ করে শুয়ে পড়,, আমার ঘু্ুম পাচ্ছে৷

অধির কোন কথা না বলে শুয়ে পড়ে৷ নিয়তি কান্না করতে করতে ফ্লোরে ঘুমিয়ে যায়৷

চলবে..

গল্পের নাম শুধু তোমাকে প্রয়োজন। কখন বুঝতে পারবে এই কথাটা। যখন অবহেলা বেশি হয়ে যাবে তখন তাকে সঙ্গ দেওয়ার মতো কেউ থাকবে না৷ তখন সে উপলব্ধি করতে পরবে৷ রি চেক দেওয়া হয়নি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here