শুধু_তোমাকে_প্রয়োজন পর্ব ৫

#শুধু_তোমাকে_প্রয়োজন
#পর্ব_০৫
#অধির_রায়

সকাল বেলা নিয়তি অধিরের পাশে বসে অধিরের সেবা করে যাচ্ছে৷ এদিকে অধিরের ফোনে একই নাম্বার থেকে বার বার ফোন আসছে৷ অধিরের ফোন সাইলেন্ট থাকার জন্য অধির বুঝতে পারছে না৷

নিয়তি অধিরের কাছ থেকে কিভাবে ফোন নিবে? তার মাথায় কিছু কাজ করছে না৷ ফোনটা যদি সাইটে থাকতো তাহলে নেওয়া সহস হতো৷ কিন্তু অধির ফোনটা নিজের বুকের উপর রেখেছে৷ তার উপর এক হাত রাখা ফোনের উপর ৷ নিয়তির মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি উদয় হয়৷ নিয়তি রশি এনে অধিরের পা ধীরে ধীরে বেঁধে ফেলে৷ অধির ঘুমের মাঝে থাকাতে বুঝতে পারে না৷ তার পর তার বাম হাত বেঁধে রাখে খাটের এক পাশে৷ এখন ডান হাত কিভাবে বাঁধবে যদি জেগে যায়৷

নিয়তি চোখ বন্ধ করে সৃষ্টি কর্তার স্মরণ নিয়ে অধিরের হাত ধরে ধীরে ধীরে বাঁধতে থাকে৷ বাঁধন টাইট যখনই করতে নেয় হাতে চোট পড়ে অধির জেগে যায়৷

অধির কিছুতেই তার হাত পা নাড়াতে পারছে না৷ এক হাত কিছুটা হালকা সেটা নড়াতে পারলে শক্তি জোগাতে পারছে না৷ মাথা কিছুটা কাঁধ করে দেখে নিয়তি হাত বেঁধে চলছে৷

— তোর সাহস কম নয় তুই আমার হাত পা বেঁধে রেখেছিস। ক্ষেপে বলে উঠে অধির।

— আপনাকে এভাবে হার্ট করার কোন দরকার ছিল না আমার৷ আমি জানতে চাই আমার বোন নিঝুম কোথায়৷

— কোনদিন জানতে পারবি না৷

— জানতে পারব কিনা জানি না৷ তবে জেনেই ছাড়বো আজ৷ যতক্ষণ পর্যন্ত নিঝুমের খোঁজ না দিবেন আপনাকে এভাবে বেঁধে রাখবো৷

অধিরেরও চোখ পড়ে ফোনের উপর। দেখতে পায় কেউ এক নাম্বার থেকে বার বার ফোন করে যাচ্ছে,, নাম্বারটা সেভ না থাকার কারণে জানতে পারছে না কে ফোন করে যাচ্ছে।

— আমার হাত খুলে দে।আমার ফোন বেজে চলছে জুরুরি ফোন হতে পারে৷

— আমি তুলছি৷

— খবরদার তুই আমার ফোনে হাত দিবি না৷

নিয়তি অধিরের কথা অমান্য করেই ফোন হাত নেয়৷ এতে অধির আরও ক্ষেপে যায়৷ চোখ পাকিয়ে বলে উঠে “ফোন রেখে দে বলছি৷

–ফোন রাখবো না,, কিন্তু তার আগে আপনার একটা ব্যবস্থা করতে হবে৷

— কিসের ব্যবস্থা৷

— নিয়তি কোন কিছু না ভেবে অধিরের মুখে কস্টিপ লাগিয়ে দেয়৷ অধিরের মুখে কস্টিপ লাগিয়ে দেওয়ার সাথে সাথে অধির শুধু মাথা নাড়িয়ে যাচ্ছে আর উম্ উম্ করে যাচ্ছে৷

নিয়তি ফোনের স্পিকার অন করে ফোন রিসিভ করে,

— অধির দা আমি সীমান্ত বলছি৷ এটা আমার নতুন নাম্বার৷ আপনাকে কখন থেকে ফোন করে যাচ্ছি আপনি ফোন তুলেছেনই না৷ কি হলো অধির দা কথা বলছেন না কেন?

“সিমান্ত কথা শুনে অধিরের চোক বড় হয়ে যায়৷ সিমান্তের কব্জায় রেখে এসেছে নিঝুমকে৷ নিঝুমের কিছু হয়নি তো?” (মনে মনে)

নিয়তি অধিরের রিয়াকশন দেখে বুঝতে পারে কুচ কালা হে।

–নিয়তি ফোনের উপর কাপড় চেপে ধরে গলার স্বর কিছুটা অধিরের মতো করে বলে উঠে” কি হয়েছে সীমান্ত? আমার খুব গলা ব্যথা করছে৷ আমি কথা বলতে পারছি না তেমন৷ ”

— অধির দা নিঝুম কিছু খাচ্ছে না৷ সে বলছে তাকে তার মা বাবার কাছে ফিরিয়ে না দিলে সে কিছু খাবে না৷ না খেয়ে মরে যাবে৷

নিঝুমের কথা শুনে নিয়তি কেঁদে ফেলে। তার বোন তার বেঁচে আছে৷ যেভাবেই হোক তার বোনকে সেখান থেকে নিয়ে আনতে হবে৷

অধিরের হাত পা বাঁধা থাকার জন্য অধির নড়তে পারছে না৷ নিজেকে ছাড়ানের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে অধির৷

–নিয়তি নিজেকে স্বাভাবিক করে” ফোনটা একটু নিঝুমের কানে ধর”

— ওঁকে (সিমান্ত)

সিমান্ত নিয়তির কথা মতো ফোনটা নিঝুমের কানে ধরে। নিঝুম কিছুতেই কথা বলবে না৷

নিঝুম বলে উঠে ” তুই কোন কিছু আমার কানে নিয়ে আসবি না৷” বেশি বাড়াবাড়ি করলে তোর নামে বাজে কথা বলে বাজে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিব৷

— ফোনটা অধিরের। আর ফোন না ধরলে অধির তোমার মা বাবার কি অবস্থা করবে তা তোমার থেকে ভালো কে জানে৷

— নিঝুম মাথা নিচু করে ফেলে,, সিমান্ত ফোনটা নিঝুমের কানের কাছে ধরে,,

— নিঝুম বলে উঠে ” আমি খাবার খাচ্ছি। প্লিজ আমার মা বাবার কোন ক্ষতি করবেন না৷ ”

— কোন কথা বলবি না৷ আমি নিয়তি৷ যা বলছি মন দিয়ে শুন৷

–নিঝুম চোখ বড় করে ফেলে নিয়তি নাম শুনে৷ তবুও নিজেকে শান্ত করে বলে উঠে ” হুম বলেন কি করতে হবে। প্লিজ আমার মা বাবার কোন ক্ষতি করবেন না৷

— তোকে আমি আজই ফিরিয়ে নিয়ে আসবো৷ তুই শুধু ওই ছেলেটার সাথে এখানে আয়৷ তোর কেউ কিছু করতে পারবে না৷ যা বলার আমি সিমান্তকে বলে দিচ্ছি।

— ওকেঁ ঠিক আছে৷ (নিঝুম) সিমান্তকে উদ্দেশ্য করে আপনার সাথে কথা বলবে৷

— হ্যাঁ অধির দা বলেন?

— নিঝুমকে আমার বাড়িতে নিয়ে দিয়ে যাও৷ আর হ্যাঁ তাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিলে সে নিজ থেকে এখানে এসে পড়বে৷ কোন চালাকি করবে না৷

— ওঁকে যেমন টা বলবেন তেমনটাই হবে৷

নিয়তি আর কিছু না বলে ফোন কেটে দেয়৷ অধিরের মুখের উপর থেকে কস্টিপ তুলে বলে উঠে ” আমি বলেছিলাম না। যেভাবেই হোক আমি নিঝুমকে খোঁজে বের করব৷ কিন্তু আমাকে খোঁজে বের করতে হলো না৷ নিজ থেকেই ধরা দিল পাখি৷ ”

— তুই খুব বড় ভুল করতেছিস৷ তোর কি হাল করব তুই নিজেও জানিস না৷

— চুপ তোকে এখনো সম্মান দিয়ে কথা বলতেছি বলে তুই আমাকে দুর্বল ভাবছিস৷ আমি মেয়ে তোর থেকে অধির বুদ্ধি বহন করি৷”

— হাতি কাঁদায় পড়লে পিঁপড়াও লাথি দিতে ভুলে না। তার প্রমাণ দিয়ে দিলি তুই৷

— চুপ কোন কথা বলবি না৷ যদি তুই আমাকে সম্মান করিস তাহলে তোকে আমি মাথায় করে রাখবো৷ একজন আদর্শ স্ত্রী হয়ে সব সময় পাশে থাকবো৷ কখন ছেড়ে চলে যাব না৷ যেমনটা কথা দিয়েছিলাম বাসর রাতে৷

“আমাকে এখন নিয়তির কথা সব শুনতে হবে৷ না হলে আমার উদ্দেশ্য কোনদিন সফল হবে না৷ কিভাবে এখন নিয়তিকে ব্যবহার করা যায়৷” (মনে মনে)

— চিন্তা করবেন না৷ আপনি যা ভাবছেন তা কোনদিন হবে না৷ আমার জন্য আজ আপনার এই অবস্থা। আপনি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত আমি এখানেই থাকব৷

নিয়তি আর কিছু না বলে বেলকনিতে চলে যায়। এতক্ষণ নিজের মনের সাথে লড়াই করে অধিরের সাথে খারাপ ব্যবহার করলেও এখন আর নিজেকে সামলিয়ে রাখতে পারছে না৷ চোখের জলে নিজেকে বিলীন করে তুলছে৷ কিভাবে পারল সে অধিরকে হার্ট করতে৷ মেয়েদের জীবনে তার স্বামীই তো সব৷ স্বামী ভালো হক আর খারাপ হক তার সাথেই তো নিজেকে সাত পাকে বাঁধে ফেলেছি৷
!
!
!
অধির মনে মনে নিয়তির ক্ষতি করার কথা ভেবে যাচ্ছে। অধির কিছুতেই নিয়তি কে ছেড়ে দিবে না৷ সে নিজেকে কি মনে করে৷ আমার সাথে নিজেকে তুলনা করে৷ সে নিজেও জানে না কার সাথে কি করে যাচ্ছে। তার ভুলের শাস্তি নিজের জীবন দিয়ে দিতে হবে৷ রাগে অধিরের মাথা আরও ফেটে যাচ্ছে। এখনও পর্যন্ত হাত পায়ের বাঁধন খোলে দেয়নি৷

অধির ঘুরে দেখে নিয়তি বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আকাশ প্রাণে চেয়ে রয়েছে। অধির মুচকি হেঁসে চিৎকার করে “হ্যাঁ সৃষ্টি কর্তা তুমি তো সব জানো? সবাই নিজের দিকটায় দেখে৷ কেউ জানতে চাইনা আমি কেন এমন কাজ করেছি৷ কিসের জন্য করেছি৷ এসব করে আমার কি লাভ? প্লিজ সৃষ্টি কর্তা তুমি সকলের মনে এই প্রশ্নটা তুলে ধর৷ ”

নিয়তি অধিরের কথা শুনে কিছুটা বুঝার চেষ্টা করে৷ কিন্তু কোন সমাধান পায় না৷ যাক সে নিয়ে পড়ে ভাবা যাবে৷

অধির আবার বলে উঠে ” আমি কে? “আমাকে নিয়ে কেউ ভাবতে চাইবে কেন? আমি তো সবার ক্ষতি করি কারো ভালো করি না৷ সৃষ্টি কর্তা সকলের মনে আমার এসব নিয়ে প্রশ্ন না তুলতে পারলে প্লিজ আমাকে তুমি নিয়ে যাও৷ জানি কিছু মানুষের অভিশাপে আমার জায়গা নরকেও হবে না৷

নিয়তির কানে মৃত্যুর কথা পৌঁছাতেই নিয়তির বুকটা মোচড় দিয়ে উঠে৷ যতই হোক অধির নিয়তির স্বামী৷ কোন স্ত্রীই তার স্বামীর মৃত্যু কামণা করে না৷ নিয়তি অধিরের কাছে এসে পায়ের বাঁধন খোলতে শুরু করে৷

— এই আলমারি একজন মানুষকে বলে দে যেন আর মৃত্যুর কথা মুখে না আনে৷

নিয়তির এমন অভিমান দেখে অধিরের খুব হাসি পায়৷ ঠিক বাচ্চাদের মতো কথা বলছে৷ কেন হাসি পেল জানা নেই?

নিজ থেকে বলে উঠে ” এই আলমারি তাকে বলে দে কথাটা যেন সরাসরি বলে?” এখানে আমি আর ওই ছাড়া তৃতীয় কোন ব্যক্তি নেই৷

— আমার ঠ্যাকা পড়ে নাই আমি কারো সাথে কথা বলতে চাই না৷ যেদিন ভালোবেসে কাছে টেনে নিবে সেদিনই কথা বলবো৷ আর এটাও বলে দে এভার আমি অন্ধ নয়৷

— অন্ধ সেটা কি?

— অন্ধ মানে আমি এখন কিছুতেই কাউকে বিশ্বাস করব না৷ দুই বার বিশ্বাস করে ঠকেছি৷ সেটা যদি হয় ভালোবাসা আর তো নয়৷

অধির মনে মনে” এভার তাহলে আমাকে অনেক কাট কয়লা পুরাতে হবে৷ তবে কোন সমস্যা নেই। চেষ্টা করলে কোন কাজই থেমে থাকে না৷ আমি যে করেই হোক আমার উদ্দেশ্য সফল করব৷
.
.
.
নিয়তি নিঝুমের ডাক শুনে দৌড়ে নিচে চলে আসে। নিঝুমকে দেখে জড়িয়ে ধরে,,

চলবে.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here