শেষ প্রহর, পর্ব:৯+১০

#শেষ_প্রহর
পর্বঃ০৯
জাহান আরা

চায়ের কাপ ভাঙার ঝনঝন শব্দে নাসিম বেগম ছুটে এলেন চন্দ্র পড়ে গেছে কি-না আবার তা ভেবে।
এসে দেখেন চন্দ্র নাই বাহিরে সুলতানার কথা শোনা যাচ্ছে। নাসিমা বেগম বের হয়ে আসেন।
এই কয়দিনে সুলতানা বেশ রোগা হয়ে গেছে চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে,চেহারায় চিন্তার চাপ বিদ্যমান। কি হয়েছে মেয়েটার?

নাসিমা বেগমের খুব কষ্ট হয়। সুলতানা সবার সমস্যা সমাধান করে এসেছে,সবার মুখে হাসি ফুটিয়ে এসেছে সব সময় সেই মেয়েটার ও যে কষ্ট থাকতে পারে সেটা কি কখনো ভেবেছে কেউ?

সুলতানা চন্দ্রকে জড়িয়ে ধরে আছে,চন্দ্র কান্না করছে চিৎকার করে করে,সুলতানা চন্দ্রকে শান্ত করছে বুঝিয়ে বুঝিয়ে,অথচ সুলতানার চোখ দিয়েও পানি পড়ছে,কিন্তু গলার স্বরে তা বুঝার উপায় নেই।
এই মেয়েটা কিভাবে পারে নিজের কষ্ট সবার থেকে আড়ালে রাখতে সবসময়?
নিজের যে বুক ফেটে যাচ্ছে তা কাউকে বুঝতে দেয় না অন্যের কষ্ট মুছার কাজেই থাকে।

চন্দ্র সুলতানা কে ছেড়ে ধাতস্থ হয়ে দাঁড়ায়।

সুলতানা এগিয়ে আসে নাসিমা বেগম কে সালাম করে। তারপর জড়িয়ে ধরে। নাসিমা বেগম চন্দ্রকেও ইশারায় কাছে ডাকে তারপর চন্দ্রকেও বুকে জড়িয়ে ধরে।
আনন্দে বুক ভরে যায়।
হঠাৎ করেই তার ইচ্ছে করে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে দুই বউকে নিয়ে। এরকম লক্ষ্মী বৌ কয়জনা পায়?

তোজাম্মেল চৌধুরী সুলতানা চলে যাওয়ার পর একবারের জন্যও বের হয় নি বাসা থেকে। সুলতানা কে ছাড়া পুরো বাড়ি শূন্য লাগে,একপ্রকার রাগ করেই তিনি ছিলেন।মনে মনে ঠিক করে ফেলেছেন সুলতানা না ফিরে আসা পর্যন্ত তিনি কোথাও যাবেন না,কোথাও না বলতে কোথাও না।
তার প্রিয় বাগানের দেখাশোনা ও করেন নি তাই রাগ করে।

সুলতানা শ্বশুরের রুমে যায়। শ্বশুর কে সালাম করে। তোজাম্মেল সাহেব মুখ ফিরিয়ে রাখেন অন্যদিকে রাগ করে। সুলতানা বুঝতে পারে বাবার রাগ।

“বাবা,কথা না বললে কিন্তু এখনই আবার ফিরে যাবো আমি বলে দিলাম”

তোজাম্মেল সাহেব আর রাগ করে থাকতে পারেন না।হেসে ফেলেন। সুলতানা বাবার পাশে বসে ব্যাগ থেকে পাঁচটা আতরের শিশি,একটা তসবিহ বের করে তার হাতে দেয়।

আতর থেকে চা পাতার মিষ্টি ঘ্রাণ আসছে।তার মনে পড়ে যায় একদিন চা খাওয়ার সময় তিনি বলেছিলেন চা তার ভীষণ প্রিয়,চায়ের কোনো আতর যদি থাকতো তবে তিনি গায়ে মেখে রাখতেন সারাদিন।

সুলতানার সেই কথা মনে রয়েছে দেখে আনন্দে দুচোখ ভিজে এলো তার।এতো ভালো কেনো এই মেয়েটা?

চন্দ্র এখনো রুমে আসছে না দেখে নিষাদ নিচে নেমে আসে।নিচে এসে নিষাদ সারপ্রাইজড হয়ে যায়। ভাই-ভাবী চলে এসেছে। দৌঁড়ে গিয়ে ভাবী কে জড়িয়ে ধরে নিষাদ।

“এখন কিন্তু তোর বৌ আছে নিষাদ,পরে আবার সন্দেহ করে না বসে তোকে আমাকে এভাবে ধরতে দেখলে”

“যে যা সন্দেহ করার করুক ভাবী,আমার বোন কে আমি জড়িয়ে ধরবো কার কি তাতে?”

চন্দ্রর কেনো জানি ভীষণ ভালো লাগে নিষাদের এই কথা। এরা সবাই সুলতানা আপাকে কতো বেশী ভালোবাসে চন্দ্র আবার বুঝে যায়। সুলতানা আপা ছাড়া বাসার সবাই কতো অচল তা হাড়ে হাড়ে টের পায়।

“তুই যেভাবে আমার বৌ’কে জড়িয়ে ধরে আছিস,আমার ও কিন্তু অধিকার আছে চন্দ্র কে জড়িয়ে ধরার,মানে ভাসুর হিসেবে না আরকি,দুলাভাই হিসেবে ও ধরতে পারি”

নিশানের কথা শুনে সবাই হেসে উঠে। নিষাদ সুলতানা কে ছেড়ে চোখ মুছে।

“দেখলা সুলতানা,তোমার দেবরের বৌ এর জন্য কতো টান,আমার কথা শুনে তাড়াতাড়ি তোমাকে ছেড়ে দিয়েছে”

নিষাদ হেসে ফেলে ভাইয়ের দিকে এগিয়ে যায়। ভাইয়ের সাথে কোলাকুলি করে ।

“নিষাদ,আমাদের একটা ফ্যামিলি ফটো তোলার ব্যবস্থা কর তো সবাইকে নিয়ে”
তোজাম্মেল সাহেবের কথা শুনে নিষাদ পকেট থেকে ফোন বের করে ময়ুখকে কল দেয়,ময়ুখ প্রফেশনাল ফটোগ্রাফার।

মাজেদা নাশতা বানিয়ে ফেলেছে সবাই মিলে নাশতার টেবিলে বসে।আজ তোজাম্মেল সাহেবের ভীষণ আনন্দ হচ্ছে,খাওয়ার টেবিলে বসে তিনি নিজেই অকারণ কথা বলে যাচ্ছেন অথচ তিনিই খাবার টেবিলে কেউ কথা বললে শীতল দৃষ্টিতে তাকাতেন।

“বুঝলে নাসিমা,সকাল বেলা নাশতার টেবিল হচ্ছে একমাত্র জায়গা যেখানে পরিবারের সবাইকে একসাথে পাওয়া যায়,এই সময় টা অবশ্যই সবাই মিলে গল্প করা উচিৎ”

তোজাম্মেল সাহেবের কথা শুনে সবাই মুচকি হাসে। আজ যে তিনি ভীষণ আনন্দিত তা সবাই জানে।

তোজাম্মেল সাহেব আর নাসিমা বেগম বসেছেন টেবিলের দুই প্রান্তে। এপাশের দুই চেয়ারে সুলতানা আর চন্দ্র।অন্যপাশে নিশান আর নিষাদ।

খেতে খেতে নিষাদের মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি কিলবিল করে। পা দিয়ে চন্দ্রর পা চেপে ধরে,চন্দ্র খাওয়া রেখে পা টানাটানি করছে।কিন্তু পারছে না,অন্য পা দিয়ে নিষাদের পায়ে সমানে লাথি মারছে কিন্তু নিষাদের কোনো বিকার নেই। নিষাদ উপরন্তু চন্দ্রকে জিজ্ঞেস করছে,”তুমি খাচ্ছো না যে?”
সবাই তাকায় চন্দ্রর দিকে,নিষাদের পেট ফেটে হাসি আসছে কিন্তু তবু মুখ চেপে রাখে হাসি আসতে দেয় না।
অনেক কষ্টে পা ছাড়ায় চন্দ্র।

নিষাদ এবার একটু পর পর চন্দ্রর পায়ে চিমটি দিচ্ছে পা দিয়ে।
চন্দ্র মুখ চেপে সহ্য করে যায়।
একপর্যায়ে আর না পেরে রাগ উঠে যায়,ঠিক করে আর একবার নিষাদ চিমটি কাটলে সে একটা লাথি দিবে নিষাদের পায়ে। চোখ সরু করে তাকায় নিষাদের দিকে।

চন্দ্রর তাকানোর ভঙ্গি দেখে নিষাদ বুঝতে পারে চন্দ্র এবার পাল্টা আক্রমণ করবে।আবার চিমটি দিয় নিজের পা তুলে ফেলে উপরে।
চন্দ্র জোরসে একটা লাথি মারে,লাথি গিয়ে নিশানের পায়ে পড়ে।
নিশান চামচে পুডিং তুলছে,মুখে দিতে যাবে এমন সময় চন্দ্র লাথি দেয়। চামচ টা হাত ফসকে পড়ে যায়। নিশান আম্মা বলে চিৎকার দিয়ে উঠে।

চন্দ্রর হার্টবিট বেড়ে গেছে,কি ভুল করে ফেলেছে সে টের পায়।
নিষাদ হাসতে হাসতে নিশানের গায়ে ঢলে পড়ে।
লজ্জায় চন্দ্রর চোখে পানি চলে আসে।

খাওয়া শেষ করে সবাই ড্রয়িং রুমে বসে।চন্দ্র সুলতানার সাথে এক সোফায় বসেছে,নিষাদ নিশানের সাথে।সুলতানা নিশানা কে ইশারা দেয় সবার অগোচরে।তবু নিষাদ দেখে ফেলে। নিষাদকে বসতে দেখে নিশান উঠে দাঁড়ায়।

“মা যদি বাবার সাথে এক সোফায় বসে তবে আমি ও আমার বৌয়ের সাথে বসবো,চন্দ্র তুমি উঠে এসে তোমার জামাইয়ের সাথে বসো।”

চন্দ্র লজ্জায় লাল নীল বেগুনি হয়ে যায়। তার পা যেনো চলছে না কিছুতেই উঠে দাঁড়াতে পারছে না।
নিশান গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সুলতানার পাশে,চন্দ্র উঠে দাঁড়ায়। হঠাৎ করে চন্দ্রর মনে হয় পুরো পৃথিবী তাকিয়ে দেখছে তাকে সে নিষাদের সাথে বসতে যাচ্ছে।হঠাৎ করেই লজ্জা মিশ্রিত আনন্দ এসে তাকে যেনো ঝাপটে ধরে।কোনোমতে এসে বসে চন্দ্র নিষাদের পাশে।

হঠাৎ করেই নিষাদের মনে হয় ভাবী যেনো অন্যরকম মানুষ,ঠিকঠাক বুঝে যায় কখন কি হওয়া দরকার।

সবাই গল্প করছে,হাসাহাসি করছে। কিন্তু নিষাদের শান্তি নাই।নিষাদের মাথায় দুষ্টুমি খেলে বেড়াচ্ছে।
চন্দ্র নিষাদের বাম পাশে বসেছে।বাম হাতটা আস্তে পিছনে নিয়ে চন্দ্রর কোমরে একটা চিমটি লাগায়।
চন্দ্র চমকে উঠে উফফ করে উঠে।

কথা রেখে সবাই চন্দ্রর দিকে তাকায়। চন্দ্র বিব্রত হয়ে যায়। নিষাদ কেমন গোবেচারা ভান করে জিজ্ঞেস করছে,”কি হয়েছে চন্দ্র?”

চন্দ্র আরো চমকে যায় নিষাদের এরকম প্রশ্ন শুনে।
সুলতানা হাসছে মিটিমিটি।

“না একটা মশা কামড়েছে”

“মশা এলো কই থেকে এখানে,আমাদের কাউকে কামড়ালো না যে”নিষাদের এই ফাজিলমার্কা প্রশ্নে চন্দ্রর পিত্তি জ্বলে উঠে।
মনে মনে বলে,একটু পরেই টের পাবা মশা কই থেকে এসেছে।বারে বারে ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান।

সবাই আবার গল্প করছে,চন্দ্র চুল থেকে চিকন ক্লিপ খুলে নিয়ে ক্লিপের মাথার মোম ফেলে দেয়। তারপর ডানহাত নিষাদের পিছনে নিয়ে ক্লিপের চোখা অংশ দিয়ে একটা গুতো মারে নিষাদের কোমরে।

নিষাদের ভাবনাতেও ছিলো না চন্দ্র এরকম করতে পারে,” উফফফ” বলে নিষাদ আরো জোরে চিৎকার করে উঠে।

“তোকে ও কি মশা কামড়েছে নাকি নিষাদ”
নিশানের প্রশ্ন শুনে নিষাদ কাতর চোখে চন্দ্রর দিকে তাকায়। চন্দ্র ফ্লাওয়ার বেসের ফ্লাওয়ার ঠিক করছে।

“হ্যাঁ মশা” এটুকু বলে নিষাদ চুপ হয়ে যায়,একটু আগে চন্দ্রকে বিব্রত করার জন্য সে নিজেই বলেছিলো মশা এলো কই থেকে,কাউকে কামড়ায় নি শুধু চন্দ্রকেই কেনো।
এখন কি বলবে?

“তোরা বরং রুমে গিয়ে মশা মার দুজন মিলে”

নিশানের কথা শুনে চন্দ্র ভীষণ লজ্জা পায়।এরা সবাই কতো মিশুক চন্দ্রর খুব ভালো লাগে।
বাহিরে বাইক এসে থেমেছে। ময়ুখ চলে এসেছে।

সবাই চেঞ্জ করে বাগানে আসে জোড়ায় জোড়ায় দাঁড়িয়ে যায় সবাই।চন্দ্রর ভীষণ ভালো লাগছে হঠাৎ করেই,মনে হচ্ছে সুলতানা আপা তার জন্য বেস্ট পরিবার পছন্দ করে দিয়েছে।এতো আনন্দ হচ্ছে কেনো চন্দ্র বুঝতে পারছে না।

ছবি তোলা শেষ করে সবাই রুমে যায় বিশ্রাম নিতে। চন্দ্র লজ্জায় রুমে যাচ্ছে না। ভীষণ লজ্জা পাচ্ছে চন্দ্র হঠাৎ করেই। বিয়ের এতো দিনে চন্দ্রর আজকে ভীষণ লজ্জা লাগছে নিষাদের সামনে যেতে।

চন্দ্র আসছে না দেখে নিষাদ নিচে নেমে আসে। দেখে চন্দ্র কিচেনে দাঁড়িয়ে আছে।
নিষাদ গিয়ে পিছন থেকে কোলে তুলে নিয়ে বের হয়ে আসে। চন্দ্র চিৎকার করতে গিয়েও করে না আজকের সকালের অভিজ্ঞতাতে চন্দ্র বুঝে গেছে নিষাদ কি পরিমাণ ফাজিল হতে পারে।

চন্দ্র চোখ বন্ধ করে আছে,দোতলায় যেতেই নিশানের সামনে পড়ে যায়।

“বাব্বাহ,কি প্রেম মানুষের,কোলে তুলে নিয়ে আসে নিচ থেকে। তোর ভাবী প্রেগন্যান্ট না থাকলে আমিও কোলে তুকে নিয়ে তোকে দেখিয়ে দিতাম বুঝলি নিষাদ”

লজ্জা পেয়ে চন্দ্র নিষাদ কে আঁকড়ে ধরে।

রুমে চলে যায় নিষাদ।চন্দ্র কে বিছানায় শুইয়ে দেয়। রুমের দরজা বন্ধ করে লাইট অফ করে দেয়। চন্দ্রর উপর শুয়ে কানে কানে বলে,”সবার বাসর রাতে হয় আমার বুঝি এই সকালে হবে।”

চন্দ্র লজ্জায় গুটিয়ে যায়।কপালে নিষাদের ঠোঁটের ছোঁয়া পেতেই চন্দ্র কেঁপে উঠে।

নিষাদ চন্দ্রর দুই হাত নিজের দুই হাত দিয়ে শক্ত করে চেপে ধরে। নিষাদের ঠোঁট নেমে আসে চন্দ্রর ঠোঁটের উপর। চন্দ্র চোখ বন্ধ করে ফেলে,ভুলে যায় সবকিছু মুহূর্তে।

নিষাদ ঠোঁট ছেড়ে গলার দিকে নামছে,ফোন বেজে উঠে নিষাদের। চন্দ্র হকচকিয়ে উঠে বসে।নিষাদ পাশে বসে ফোন বের করে। স্ক্রিনের উপর জ্বলজ্বল করে ভেসে উঠে সুস্মিতার নাম।
আড়ষ্ট হয়ে চন্দ্রর দিকে তাকায় নিষাদ,চন্দ্রর দুচোখ মুহূর্তে জলে ভরে উঠে।নিষাদ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে চন্দ্রর দিকে।
কি আশ্চর্য,টলমল অশ্রু চোখে কোনো মেয়েকে এতো মায়াবতী লাগতে পারে নিষাদের ধারণা তে ছিলো না।

চোখ মুছে চন্দ্র উঠে চলে যায় রুম থেকে। ভীষণ কষ্ট হচ্ছে তার এই মুহূর্তে। সব সুখ যেনো মুহূর্তে বিষাদে রূপান্তরিত হয়ে যায়।
আগে তো এতো কষ্ট পায় নি চন্দ্র তবে আজ কেনো এরকম লাগছে?
স্বামী মানেই কি তবে এরকম?
শুধুই নিজের একান্ত মানুষ যাকে অন্য কারো সাথে কথা বলতে দেখলেও কি সবারই এরকম হয় নাকি আমার মন ছোট বলে আমার এমন লাগছে?

চন্দ্র কোনো উত্তর খুঁজে পায় না। বুক ছিঁড়ে কান্না আসছে তার।
নিচে নেমে বাগানে চলে যায়। শরৎকাল চলছে,শিউলি তলায় অনেক ফুল পড়ে আছে। কিছুটা জায়গা পরিষ্কার করে নিয়ে চন্দ্র বসে সেখানে।

এরকম সুন্দর একটা মুহূর্ত সুস্মিতা নষ্ট করে দিলো মেজাজ খারাপ হয়ে যায় নিষাদের।
রাগ সংবরণ করে শান্ত হয়ে বসে। ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখে সুস্মিতার জন্য মনে কোনো ফিলিংস আসছে না।তবে উটকো ঝামেলা কেনো রাখবে জীবনে সে?

সুস্মিতার নাম্বার ব্লাকলিস্টে দিয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়ে নিষাদ।

দোতলায় সুলতানার রুমের বারান্দা থেকে বাগান দেখা যায়। সুলতানা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। তার কেমন যেনো লাগছে,ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। কাউকে বলতে ইচ্ছে করছে না।

বাহিরে তাকিয়ে দেখে চন্দ্র কাঁদছে। নিজের কষ্টের কথা ভুলে যায় সুলতানা চন্দ্রকে কাঁদতে দেখে। নিশান কে ডেকে বলে নিষাদ কে ডেকে দিতে।

নিশান বের হয়ে যায় নিষাদকে ডাকতে।সুলতানা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে চন্দ্র কে দেখে,কাঁদলে এই মেয়েটা কে কি ভীষণ মিষ্টি লাগে,এতো রূপ নিয়ে এসেছে কেনো এই মেয়েটা?

সুলতানার ইচ্ছে করে চন্দ্র কে কাছে ডেকে নিতে,কানে কানে বলতে অতীতের একটা গোপন ঘটনা।
পরক্ষণেই মত বদলায়,বলবে না কিছু চন্দ্রকে,চন্দ্র এই শোক সামলাতে পারবে না।

#শেষ_প্রহর
পর্বঃ ১০
জাহান আরা

মুখোমুখি চেয়ারে বসে আছে সুলতানা আর নিষাদ,সুলতানার মুখ থমথমে। নিষাদের কলিজা শুকিয়ে গেলো সুলতানার থমথমে মুখের দিকে তাকিয়ে।
শিউলি তলায় বসে চন্দ্র এখনো কাঁদছে নিষাদের চোখ বার বার সেদিকে যাচ্ছে।

চন্দ্রর চারদিকে ছড়িয়ে আছে অজস্র শিউলি ফুল।সাদা শিউলির মাঝে চন্দ্রকে নিষাদের প্রতিমার মতো লাগছে।মনে হচ্ছে যেনো চন্দ্রর চরণে পুষ্পাঞ্জলি দিয়েছে শিউলি গাছ নিজের সব ফুল দিয়ে।

এতো সুন্দর কেনো চন্দ্র?
নিষাদের বুক কেঁপে উঠে ভাবতেই।সে এই সুন্দর মেয়েটাকে কাঁদাচ্ছে কিভাবে,ওর এক ফোটা চোখের জল মুক্তার মতো।

সুলতানা চুপ করে আছে,নিষাদের অস্বস্তি আরো বাড়ছে।
নিরবতা ভেঙে নিষাদ কথা বললো আগে।
“কিছু হয়েছে ভাবী?”

“তোমার সাথে আমার কিছু জরুরি আলাপ আছে তাই ডেকেছি,কথাগুলো আগেই বলা উচিৎ ছিলো আর,পরিস্থিতি বিবেচনা করে বলি নি।”

নিষাদের কেমন কষ্ট হতে লাগে,কি বলবে ভাবী?
চন্দ্রকে ছেড়ে দেয়ার কথা বলবে না-কি আবার?
চন্দ্রকে ছেড়ে নিষাদ বাঁঁচবে কিভাবে,না এটা হতে পারে না।ভাবী এসব বলতে পারবে না।চন্দ্র তার বৌ।

“আমি বাবা মায়ের এক মেয়ে জানো তো,কতো আদরে বড় হয়েছি। যখন আমি ক্লাস টেনে পড়ি বড় ভাইয়া অনার্স ১ম বর্ষে,মেঝ ভাইয়া ইন্টার ফাইনালে,ছোটজন ৭ এ পড়ে।
বাবা মায়ের যতোটা আদর পেয়েছি ভাইদের আদর তার চাইতে হাজার গুণ বেশী পেয়েছি।

বিশেষ করে মেঝ ভাইয়া।
এমন কোনো দিন বাদ যায় নি যে ভাইয়া কলেজ থেকে ফিরেছে আর সবার আগে আমাকে ডাকে নি।
ভাইয়ার ঘুম ছিলো খুব ভারী,কুম্ভকর্ণের মতো।কুম্ভকর্ণ কে জানো তো??
রাবণের ভাই ছিলো কুম্ভকর্ণ।৷ রাবণের মেঝ ভাই ছিলেন তিনি।তিনি এতটাই ধার্মিক, বিচক্ষন ও অজেয় ছিলেন যে স্বয়ং দেবরাজ ইন্দ্র ও তার শক্তির প্রতি ঈর্ষান্বিত ছিলেন৷ তিনি তার ভাই রাবণ ও বিভীষণের সাথে এক মহাযজ্ঞে অংশগ্রহণ করে তারা প্রজাপতি ব্রহ্মাকে তুষ্ট করতে সফল হন৷ কিন্তু ব্রহ্মার কাছে বর চাওয়ার সময় দেবরাজ ইন্দ্রের অনুরোধে দেবী সরস্বতী তার জিহ্বা আড়ষ্ট করে দেন৷ এই কারণে বর হিসাবে ‘ইন্দ্রাসন’ চাওয়ার বদলে তিনি ‘নিদ্রাসন’ চেয়ে বসেন। তার এই অনুরোধই ব্রহ্মা গ্রহণ করেন৷ তার বড়ভাই রাবণ বিভিন্নভাবে ব্রহ্মাকে এই শাপরূপী আশীর্ব্বাদ না দেওয়ার অনুরোধ করলেও তিনি তাতে সম্মতি দেন নি৷ কুম্ভকর্ণ টানা ছয়মাসযাবৎ নিদ্রাচ্ছন্ন থাকতেন এবং তার ঘুম ভাঙলে মানুষসহ হাতের সামনে যা পেতেন তাই খেতেন…………থাক সেসব বাদ দিই,আমার ভাইদের কথা বলি।

সকালে মেঝ ভাইয়া কে ঘুম থেকে তোলা ছিলো দুরূহ এবং কষ্টসাধ্য। বাবা যে কতো মার মেরেছে এই ঘুমের জন্য কিন্তু ভাইয়া ঘুম থেকে জাগিতেই পারতো না।
সেই ভাইয়ার ঘুম আমি ২০ সেকেন্ডে ভাঙ্গিয়ে দিতাম। শুধু তার কানের কাছে গিয়ে কান্নাভেজা কণ্ঠে বললেই হতো,” ভাইয়া,ও ভাইয়া,ভাইয়া রে”
৫ টি শব্দ ব্যবহারেই ভাইয়া লাফ দিয়ে বিছানায় উঠে যেতো,কি কি কি হয়েছে সুলতানা বলতে বলতে।

আমি তখন খিলখিল করে হেসে উঠতাম,ভাইয়া জানতো এটা তাকে ঘুম থেকে তোলার একটা টেকনিক কিন্তু তবু ঘোমের ঘোরে তো আর এসব মনে থাকে না মানুষের, ভাইয়া উঠে যেতো ঘুম থেকে।

মাঝেমাঝে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে দিতে রাত হয়ে যেতো,মা বাবা কে লুকিয়ে আমি-ই দরজা খুলে দিতাম ভাইয়া কে ঘরে আসার,ফ্রিজ থেকে খাবার গরম করে খেতে দিতাম যেদিন ভাইয়া দেরি হবে বলতো ফিরতে সেদিন আর আমি রাতে সবার সাথে খেতাম না।

মাঝেমাঝে বড় ভাইয়া ঝগড়া লেগে যেতো আমি তাকে পছন্দ করি না বলে।অথচ আমার ৩ ভাইয়ের কলিজার টুকরো ছিলাম আমি।
মেঝ ভাইয়ার প্রতি আমার ভালোবাসা বেশী হওয়ার কারন ছিলো,ভাইয়ার এক পায়ে সমস্যা ছিলো জন্মগত,ভাইয়া পা টেনে টেনে চলতো কিছুটা”

নিষাদ বুঝতে পারছে না এসব কেনো বলছে ভাবী,ভাবীর তো ভাই দুইজন এখন,একজন মারা গেছেন,তবে কি তার কথা মনে পড়েছে আজ এজন্য ভাবীর মুখ থমথমে হয়ে আছে?
নিষাদের আবার আফসোস হয় নিজের বোন নেই বলে,বোন থাকলে তো সেই বোন ও এভাবে তাদের জন্য শোক করতো,মাসে মাসে ছুটে আসতো বাবার বাড়ি,আনন্দে মাতিয়ে রাখতো তাদের পরিবার। অবশ্য সেই দায়িত্ব এখন ভাবী পালন করছে।

“আমার খুব আফসোস হতো আমার কেনো বোন নেই,মা বাবা আমাকে কোথাও যেতে দিতো না কেনো জানি। এক মেয়ে ছিলাম বলেই হয়তো মা বাবার ভয় ছিলো।আর ভাইয়ারা ও যেতে দিতো না আমাকে।নানার বাড়ি বেড়াতে গেলে ভাইয়েরা ৩ জনেই রেডি হয়ে যেতো কেউ না বলতেই,তাদের এক কথা আমাকে একা যেতে দিবে না।আমি বাড়ি না থাকলে ওদের দম আটকে আসে।বাবা বলতো যেকোনো একজন যাবে আমার সাথে কিন্ত ওরা শুনতো না।
দেখা যেতো বাবা শুধু বড় ভাইয়াকে যেতে দিয়েছেন,আমি বড় ভাইয়ার সাথে যাচ্ছি,ঠিক তার পর পরই ওই দুজন সু্যোগ পেতেই ছুটে বের হয়ে যেতো আমাদের পরের বাসে করে চলে যেতো নানার বাড়ি।

চন্দ্র আর অনিতা ছোট ছিলো,ওদের দুই বোন কে দেখতাম সারাক্ষণ এক সাথে থাকতো।দুজন সারাদিন কথা বলতো,আমি চেষ্টা করতাম ওদের সাথে মেশার কিন্তু চন্দ্র আমাকে পাত্তাই দিতো না।

আমি সায়েন্সের স্টুডেন্ট ছিলাম,বাবার ইচ্ছে ছিলো আমাকে ডাক্তার বানাবে।

সব ইচ্ছে কি আর মানুষের পূর্ণ হয় এক জীবনে!!

সুলতানা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। নিষাদ বাহিরে তাকায়।চন্দ্র এখন কান্না বন্ধ করে গাছে হেলান দিয়ে বসে আছে। নিষাদ ভাবছে যদি সে এই শিউলি গাছটা হতে পারতো তবে তো চন্দ্রকে ছুঁতে পারতো,কেনো গাছ হলো না।

” আচ্ছা নিষাদ,চন্দ্র কি তোমাকে বলেছে তার জীবনের একটা দুর্ঘটনার কথা? ”

নিষাদ এই কথা শুনে চকিতে সোজা হয়ে যায়। সুলতানা এবার আসল কথাতে এসেছে। এই কথাটাই বলতে চেয়েছে সুলতানা তাহলে তাকে।

“না তো,বলবে বলেছে,পরে কেনো জানি এড়িয়ে গেছে”

“খালু মারা গেছে চন্দ্ররা ছোট থাকতে। একটা মজার কথা কি জানো,খালু আমাকে ও ভীষণ আদর করতো,কিন্তু আমি কখনো বুঝতে পারি নি কেননা উনি কখনোই আমাদের বাড়ি আসেন নি,আমি যেতাম মায়ের সাথে ওরা আসতো না।খালা খুব কম আসতো কিন্তু খালু আসেই নি,চন্দ্র আর অনিতাও না।
হয়তো খালু হীনমন্যতায় ভুগতেন আমার বাবা বড় চাকুরিজীবী বলে।
খালুর আমার প্রতি প্রবল ভালোবাসা আমি বুঝতে পারি খালুর মারা যাওয়ার সময়। মারা যাওয়ার আগ মুহূর্তে উনি চন্দ্র,অনিতা কাউকে না,আমাকে দেখতে চেয়েছেন,ভীষণ কষ্ট পাচ্ছিলেন,মা আমাকে নিয়ে যাওয়ার পর খালু আমার হাত ধরেন,আমি মুখে এক চামচ পানি দিই,তারপর খালু মৃত্যুবরণ করেন।

চন্দ্রর একদিন ভীষণ জ্বর ছিলো,খালা ফোন করে মেঝ ভাইয়া কে বললো ঔষধ নিয়ে যেতে। মেঝ ভাইয়া চন্দ্রদের বাড়ি যায়।খালা ছিলো স্কুলে,অনিতা ও স্কুলে।ভাইয়া যাওয়ার পর চন্দ্র ভাইয়া কে চা দেয়।
চন্দ্র চা দিয়ে চলে যেতে নিতেই ভাইয়া চন্দ্রর বুকের উপর হাত দেয়।”

এই কথা শুনেই নিষাদ তড়াক করে উঠে দাঁড়ালো,চন্দ্রকে কেউ নোংরা স্পর্শ করেছে নিষাদের ভাবতে কষ্ট হয়। কান্না চলে আসে নিষাদের।

“বসো,এখনো কথা বাকি আছে।”

নিষাদ বসে যায়।

“চন্দ্র ভীষণ ভয় পেয়ে যায় ভাইয়ার এই ব্যবহারে।মেয়েদের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় এসব ক্ষেত্রে বেশি সচেতন থাকে চন্দ্র ছুটে গিয়ে অন্য রুমের দরজা লাগিয়ে দেয়।
ভাইয়া সিগারেট ধরায়,তারপর চা খায়। চন্দ্রর রুমের কাছে গিয়ে চন্দ্রকে ডাকে দরজা খুলতে।চন্দ্র যখন কিছুতেই রাজী হয় নি তখন ভাইয়া অন্যপথ ধরে।

ভাইয়া জানে অনিতাকে চন্দ্র কতো ভালোবাসে তাই ভাইয়া বলে যে চন্দ্র দরজা না খুললে এই কাজ ভাইয়া অনিতার সাথে করবে।
চন্দ্র বাধ্য হয় দরজা খুলতে। তারপর ভাইয়া তার পুরুষত্ব দেখায় চন্দ্রর সাথে। ছোট একটা মেয়ে,তার পক্ষে এই সেক্সুয়াল বিষয় টা কেমন হতে পারে ভাবতে পারো নিষাদ?”

নিষাদ চুপ করে আছে,ইচ্ছে করছে এখনই গিয়ে চন্দ্রকে জড়িয়ে ধরে।

“ভাইয়া বাড়ি ফিরে এলো দুপুরে,গোসল করে রুমে গেলো।আমি ভাইয়ার রুমের দিকে পা বাড়াতেই শুনি ভাইয়ার কথা শোনা যাচ্ছে ফোনে।ভেবেছিলাম ভাইয়া প্রেমে পড়েছে তাই আড়ি পেতে শুনতে লাগলাম দরজার পাশে দাঁড়িয়ে। ভাইয়া তার কোনো বন্ধুর কাছে রসিয়ে রসিয়ে গল্প করছে,চন্দ্রর শরীরের প্রতিটি ভাজের বর্ণনা দিচ্ছে ভাইয়া।
আমার মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পড়ে। আমার ভাই কিভাবে পারলো এই নোংরা কাজ করতে,আমি আমার কানকে বিশ্বাস করতে পারছি না।
রাগ হলো,ভীষণ রাগ হলো।

চলে এলাম রুমে,চন্দ্রর নিষ্পাপ মুখটা বার বার ভেসে উঠছে চোখের সামনে।ওই হতভাগীর না আছে বাবা না আছে ভাই না আছে একটা বড় বোন,কার কাছে বলবে সে নিজের মনের ব্যথা?

আজও পারে নি কাউকে বলতে এই ভয়াবহ অতীতের কথা।জীবনে প্রেমে পড়ে নি চন্দ্র,আবার যদি এই নোংরা কাজ কেউ করে সেই ভয়ে।

পরেরদিন স্কুলে গেলাম,ল্যাবে স্যার আমাদের কে নিয়ে যেতো প্রতি সোমবার। ভাগ্যক্রমে পরের দিন সোমবার ছিলো।ল্যাব থেকে চুরি করে কিছুটা সায়ানাইড নিয়ে এলাম।চন্দ্রকে ধর্ষণ করার শাস্তি আমি নিজে দিবো ঠিক করলাম।সেদিন রাতেই ভাইয়ার আনা বিয়ারের মধ্যে মিশিয়ে দিলাম।

সকালে ভাইয়া কে ডাকতে গিয়ে নিপুণ অভিনয় করলাম।চিৎকার করে মা’কে ডেকে বললাম ভাইয়া মনে হয় মদ খেয়েছে মা দেখে যাও ঘরে মদের বোতল।
বাবা এলেন,মা এলেন,বড় ভাইয়া,ছোট ভাই সবাই এলো।
ভাইয়ার এই অভ্যাসের কথা আমি আগে থেকেই জানতাম।রাতে এজন্যই আমি জেগে থাকতাম যাতে বাড়িতে আর কেউ না জানতে পারে ভাইয়ার এই অভ্যাসের কথা।

বাবা রেগে গিয়ে ভাইয়ার কলার টেনে ধরলেন,কিন্তু ভাইয়া চোখ খুলছে না,কি মনে করে বাবা ভাইয়ার গায়ে হাত দিলেন,তারপর চিৎকার করে উঠলেন ভাইয়া মরে গেছে বলে।আমরা সবাই হকচকিয়ে গেলাম,আমি দৌঁড়ে গিয়ে ভাইয়া কে জড়িয়ে ধরলাম,আর পাগলের মতো বলতে লাগলাম,”আমার ভাইয়া মরতে পারে না,আমার ভাইয়া বেঁচে আছে তোমরা ভাইয়াকে হাসপাতালে নাও না কেনো এখনো”

বাবার যেনো হুশ এলো। মা তো আরো আগেই অজ্ঞান হয়ে আছেন।বাবা ও জানেন ভাইয়া মরে গেছে আমি তো আরো আগেই জানি,কিন্তু বুঝতে দিলাম না এমন ফার্স্টক্লাস অভিনয় করলাম।
হাসপাতালে ডাক্তার বলে দিলো ভাইয়ার মৃত্যু অনেক আগেই হয়েছে।আমি হাসপাতালের ফ্লোরে শুয়ে গড়াগড়ি খেলাম কাঁদতে কাঁদতে।

তোমাদের হাসপাতালেই গিয়েছিলাম আমরা ভাইয়া কে নিয়ে,সেখানেই তোমার ভাইয়া আর বাবা আমাকে দেখে,ভাইয়ার জন্য আমার কান্না দেখেই আমাকে তোমাদের ভালো লেগে যায়।

ভাইয়ার এই হুট করে মৃত্যু কেউই প্রত্যাশা করে নি।থানা পুলিশ হলো,কে মেরেছে প্রমাণ নেই,তার উপর আমার মন ছুঁয়ে যাওয়া অভিনয়। তোমার ভাই ছাড়া আজও কেউ জানে না খুনী আমি,এখন তুমি জানলে।

চন্দ্র কিন্তু ভাইয়ার মৃত্যুর দিনে এসেছিলো জীবনে প্রথম আমাদের বাড়ি,আমি খেয়াল করেছিলাম চন্দ্রর মুখে একটা মুচকি হাসির রেখা ফুটে আছে।

আমি কোনো ভুল করি নি। উচিৎ শাস্তি দিয়েছি,যাও এবার আমার আর কিছু বলার নেই,তোমার ভাইকে বলো আমার লেবার পেইন উঠেছে অনেক আগে,আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে,পানি ভাঙছে অনেকক্ষণ ধরে”

নিষাদ অবাক হয়ে যায় সুলতানার কথা শুনে। লেবার পেইন নিয়ে এই মেয়ে কেমন নির্বিকারভাবে এতো কথা বলে গেলো,কিভাবে পারে এভাবে সহ্য করে যেতে নিষাদ বুঝতে পারছে না।
নিষাদের মনে একটা প্রশ্ন জেগে উঠে। কেনো নিজের ভাইকে খুন করে ফেললো খালাতো বোনের জন্য সুলতানা। কিন্তু এখন সেই পরিস্থিতি নেই। নিষাদ ভালো করে তাকিয়ে দেখে ব্যথায় সুলতানার ফর্সা চেহারা নীল হয়ে গেছে।

দাঁত কামড়ে বসে আছে,নিষাদ উঠে দাঁড়ায়। ফ্লোর ভিজে আছে।

নিষাদ দৌঁড়ে নিচে নেমে যায়।

নিশান,নাসিমা বেগম,তোজাম্মেল সাহেব,চন্দ্র,নিষাদ সবাই উপরে আসে।সুলতানা কেমন শক্ত হয়ে বসে আছে। ড্রাইভার গাড়ি বের করেছে।নিশান সুলতানা কে কোলে তুলে নেয়।

গাড়িতে বসে সুলতানা মা,মা করে ডাকতে থাকে,নিশান সুলতানার মা,বাবা,ভাইদের কল দেয়।

চলবে……???

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here