হলুদ খাম, পর্ব:২

#হলুদ_খাম
লেখিকাঃ #তানজীমা_ইসলাম_রিয়া

___________________[২]___________________
.
.
.
.
.
সায়ন উঠে তনুর ঘরে ঢুকে বেডে সটান হয়ে শুয়ে পড়ল, তনুর নরম বিছানায় পিঠ ছোয়াতেই সে গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলো।

গত রাতে সাড়ে আট ঘন্টা ট্রেন জার্নি করে ঢাকা থেকে দিনাজপুরে এসেছে সায়ন।

ভোরের দিকে ট্রেন সেতাবগঞ্জ এসে থামতেই একটা রিক্সায় চড়ে আগে বোচাগঞ্জে ফুপ্পির বাসায় এসেছে।

আসা থেকে বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ পায়নি সে, ফুপ্পির সাথে গল্পে গল্পে কখন যে সময় চলে গেছে!

এখন তনু ঘরে নেই রান্নায় ব্যস্ত, ওর নরম বিছানায় আরামছে একটা ঘুম দেওয়া যাবে।
.
.
.
সায়নের ঘুম ভাংলো বিরিয়ানির সুঘ্রাণে, আস্তে আস্তে চোখ মেলে বেডে উঠে বসল সে।

আড়মোড়া ভেঙে বেড থেকে নেমে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো, ডাইনিং এ আসতে আসতে বলল,” ফুপ্পিই! তুমি কি দুপুরে কাচ্চিবিরিয়ানি রান্না করছো!? উম!! কি দারুন স্মেল!!!

তনিমা যোহরের নামাজ পড়ে মাত্র সালাম ফিরিয়েছে, সায়নের কথা শুনে বলল,” আজ সব রান্না তোর বোন করেছে!

সায়নের হটাৎ মনে পড়ল আজ তো তনু রাধবে বলেছিলো, তাহলে কি সত্যিই ও রান্না করেছে!!?

কিন্ত তনু কোথায়!? আশেপাশে তাকিয়ে কোথাও তনুকে দেখতে না পেয়ে সায়ন জিজ্ঞেস করল, ” তো আমাদের রাধুনিবুড়িটা কোথায়!? ফুপ্পি!!

তনিমা মোনাজাত করে উঠে জায়নামাজ ভাজ করতে করতে বলল,” রান্না শেষ করে ও মাত্রই গোসল করতে গেছে। তুই ফ্রেশ হয়ে রোহানকে ডেকে নিয়ে আয়, বোধহয় ওটা পড়েপড়ে ঘুমোচ্ছে।

সায়ন আচ্ছা বলে ফ্রেশ হতে গেলো ওয়াশরুমে, তনু গোসল করে একটা গাঢ় বেগুনি রঙের থ্রিপিস পরে বের হল।

চুলে বাধা তোয়ালেটা দিয়ে চুল মুছতে মুছতে ঘরে এলো সে, ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুল মুছতে লাগল।

সায়ন ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে হাত মুখ মুছবে তা তোয়ালে খুজে পাচ্ছেনা, হটাৎ মনে পড়ল তনুর বেডের পাশেই একটা তোয়ালে দেখেছিলো সে।

তোয়ালে নিতে দ্রুত পায়ে তনুর ঘরে এসে ঢুকল সায়ন, ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা তনুকে দেখে মুহুর্তেই থমকে গেল সে।

তনুর কোমর সমান লম্বা কালো চুল গুলো বেয়ে এখনও টুপটুপ করে পানি পড়ছে।

সায়নের কি হল কে জানে, ধীর পায়ে তনুর দিকে এগিয়ে যেতে লাগল সে।

তনু পেছন ফিরে থাকায় সায়নকে দেখতে পাচ্ছেনা, চুল মুছতে মুছতে সে হাতজোড়া নাকে নিয়ে শুকতে লাগল।

নাহ মশলাপাতির গন্ধটা গেছে, না গিয়ে উপায় আছে! তনু তো ভালো করে ডলেডলে সারা শরীর ধুয়েছে!!

হটাৎ করে ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় সায়নকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে চমকে উঠল তনু।

সায়নের মধ্যে কোনো ভাবান্তর ঘটল না, সে ঘোরলাগা চোখে তাকিয়ে আছে তনুর ভেজা চুলের দিকে!

তনু ঠিক বুঝতে পারছেনা সায়ন তাকে এভাবে কি দেখছে!
তোয়ালে রেখে তনু পেছন ফিরল, সায়ন এবার আরেকদফা বিমোহিত হল।

তনুর শুধু চুল না, মুখভর্তি বিন্দু বিন্দু পানি জমে আছে! উফফ!! এই মেয়ে কি ভালোভাবে চোখমুখও মুছতে পারেনা!!!?

তনু ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করল, ” সা’সায়ন ভাইয়া! কিছু বলবেন!!?

তনুর কন্ঠঃ পেয়ে সায়নের হুশ ফিরল, নিজেকে তনুর এতো কাছাকাছি দেখে অবাক হলেও বলল,” তুই কি আর বড় হবি না তনু!?

সায়ন তনুর হাত থেকে তোয়ালে কেড়ে নিয়ে তনুর চোখমুখ মুছে চুল মুছতে মুছতে বলল, ” ভালো করে চুলও মুছতে পারিস না এখনও!!

তনুর চুল ভালো করে মুছে তোয়ালে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো সায়ন, তনু হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

নিজ মনেই প্রশ্ন করল, “কি বলে গেলো সায়ন ভাইয়া! আর আমাকে ওভাবে কি দেখছিলো!!

কিছুই বুঝতে পারছেনা তনু, সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে ঘর থেকে বেরিয়ে কিচেনে গেলো সে।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
কিচেন থেকে একে একে খাবার এনে ডাইনিং টেবিলে সাজাচ্ছে তনু।

আজ মেয়ে রান্না করেছে শুনে রোকন সাহেব তো বিশ্বাসই করতে পারছেন না।

রোহানের সেদিকে খেয়াল নেই, সে সায়নকে বলল,” ভাইয়া আমি তোমার সাথে দাদুবাসা যাবো।

সায়ন হেসে বলল, ” এখন দাদুবাসা গিয়ে কি করবি!? ওখানে তো কেউ নেই! তারচেয়ে আমাদের বাসায় চল, স্নেহা আপুও বলছিলো তোকে আর তনুকে সাথে নিয়ে যেতে।

রোহান একটু ভেবে বলল,” না না, আপু গেলে আমি আম্মু ছাড়া যাবো না। ও আমায় কোত্থাও যেতে দেবে না, সুযোগ পেলেই শুধু ঝাড়ি দেবে।

সায়ন রোহানের পিঠ চাপড়ে বলল,” আরে ভয় পাচ্ছিস কেন!? আমি আছি না! আমার সাথেসাথে থাকবি, তনু কিচ্ছু বলবে না!!

রোহান দুমনা করতে করতে বলল,” আচ্ছা ওকে সাথে নেওয়ার কি দরকার!? ওকে রেখে আমাকে নিয়ে চলো না!

সায়ন মুখে হাসলেও মনেমনে বলল, ” ওকেই তো নিয়ে যাবো!

তনিমা সবার প্লেটে সাদা ভাত আর বেগুনভাজা তুলে দিচ্ছে, তনু কিচেন থেকে সরষে ইলিশের পাত্রটা এনে রাখল।

সায়ন তো এক একটা আইটেম দেখছে আর অবাক হচ্ছে, বেগুনভাজা দিয়ে খাওয়ার পর তনু সবার প্লেটে সরিষা ইলিশ মাছ তুলে দিল।

রোকন সাহেব কবজি ডুবিয়ে খেতে খেতে বলল, ” আহ কি সুস্বাদু! আমার তনুমায়ের হাতে তো জাদু আছে দেখছি!!

তনু স্মিত হেসে বলল, ” মা আমাকে হেল্প করেছে!

সায়ন ভ্রু উঁচিয়ে বলল, ” ও ও ও! তাই তো বলি!! তনু এতো রান্না একা কিভাবে করল!!?

তনিমা হেসে বলল, ” আমি তো শুধু কেটেকুটে দিয়েছি, রান্না সব ঐ করেছে!! তা কেমন হয়েছে বললি না তো!!!

সায়ন ইলিশ মাছের মাথাটা আয়েশ করে চিবাতে চিবাতে বলল, ” তোমার হাতের ছোয়াটা আছে বলেই কোনোরকমে খাওয়া যাচ্ছে আর কি!

রোহানও সেইসাথে তাল মিলিয়ে খেতে লাগল, এদিকে তনুর মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে।

এতকষ্ট করে রান্না করে শেষমেশ এসব শুনতে হচ্ছে তাকে!?

তনিমা হালকা ধমক দিয়ে বলল, ” চুপচাপ খা! বদমায়েশের দল!! আমার মেয়েটা কতকষ্ট করে রেধেছে!!!

মায়ের স্বান্তনা তনুর কানে ঢুকল না, অপেক্ষা করতে লাগল বাবার খাওয়া শেষ হওয়ার জন্য।

কারণ বাবার সামনে কোনো সিনক্রিয়েট করতে পারবে না সে, বাবাকে যেমন ভালোবাসে তেমনই ভিষণ ভয় পায় তনু।

রোকন সাহেব বিরিয়ানি খুব একটা পছন্দ করেন না, তবু মেয়ে রেধেছে বলে বেশ খানিকটা খেলেন।

সে খেয়ে উঠে ড্রয়িং রুমে গিয়ে সোফায় বসতেই, তনু আধখাওয়া সরষে ইলিশ রেখেই চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়ালো।

তনিমা ব্যাপারটা বুঝে ওঠার আগেই তনু বেসিনে হাত ধুয়ে হনহন করে সোজা নিজের ঘরে ঢুকে বেডে উলটে পড়ল।
.
.
.
.
.
ভিষণ কান্না পাচ্ছে তার, সে কখনও নিজে ডিম ভেজেও খায়নি।

অথচ সায়নের জন্য জেএসসি পরীক্ষার পর থেকে রান্না করা শিখেছে তনু।

আজ এতকষ্ট করে তার জন্য রান্না করেও প্রশংসা তো দূরের কথা শুধু বদনাম শুনতে হল!

মনেমনে সায়নকে হাজারটা গালি দিয়ে বলল, ” আর কোনোদিন আপনার জন্য রান্না করবো না! কোনোদিন না!! নেক্সট টাইম আমার কাছে কিছু খেতে চাইলে আপনার খাবারে আমি হারপিক মিশিয়ে খাওয়াবো!!!
.
.
.
.
.
এভাবে কাদতে কাদতে ঘুমিয়ে পড়ল তনু, সায়ন এক প্লেট বিরিয়ানি নিয়ে তনুর ঘরে ঢুকে দরজা ভেজিয়ে দিল।

বেড টেবিলের ওপর পানির জগ আর গ্লাস রেখে প্লেট হাতে নিয়ে তনুর বেডে বসল সে।

কাদতে কাদতে মেয়েটার চোখমুখ হালকা ফুলে উঠেছে, সায়ন স্মিত হেসে বলে উঠল, ” তোর হাতের রান্না আমার লাইফে খাওয়া সবচেয়ে সুস্বাদু খাবার।

তনুর হাতজোড়া সায়ন নিজের হাতে নিয়ে বলল,” তোর এই নরম হাতের রান্না খাবো বলেই তো বাসায় না গিয়ে সোজা তোর কাছে এসেছি।

বলেই তনুর হাতজোড়ায় চুমু খেলো সায়ন, তনুর মুখের সামনে এলোমেলো হয়ে থাকা চুল গুলো সরিয়ে কানের পেছনে গুজে দিল সে।

ধীরে ধীরে ঝুকে গিয়ে তনুর বাম গালে চুমু খেলো, হটাৎ গালে নরম কিছুর স্পর্শ পেয়ে ঘুম ভেঙে গেল তনুর।

চোখ মেলে সায়নকে দেখে রাগে অভিমানে তনু আবারও কম্বল মুড়ি দিল।

সায়ন একটানে কম্বল সরিয়ে বলল,” হয়েছে! আর ঢং করতে হবে না, উঠে খেয়ে নে!!

তনু শোয়া অবস্থায় উল্টো দিক ফিরল, উল্টো ফেরাতে তনুর কামিজ সরে গিয়ে সালোয়ারের ওপরে ফর্সা কোমর দেখা যাচ্ছে!

মুহুর্তেই সায়নের গলা শুকিয়ে চৌচির হয়ে গেলো, সেদিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে বলল, ” আমি তোকে খেতে বলেছি তনু, কোমর দেখাতে বলিনি!

সায়নের কথা শুনে তনু ধড়ফড়িয়ে উঠে বসল, জামাকাপড় ঠিক করতে করতে দেখে নিল আর কোথাও দেখা যাচ্ছে কিনা।

সায়ন বুঝল তনু বেশ লজ্জায় পড়ে গেছে, তনুকে আরও লজ্জা দিতে সায়ন বলল,” এতো তাড়াহুড়োর কি আছে!? সময় হলে নিজেই সবটা দেখে নেবো!!

তনু সচকিত হয়ে সায়নের দিকে তাকালো, সায়নের চোখেমুখে দুষ্টুমি খেলা করছে।

তনু রেগেমেগে কিছু বলার আগেই সায়ন বিরিয়ানির লোকমা নিয়ে তনুর গালে ঢুকিয়ে দিল।

না চাইতেও খেতে লাগল তনু, মানতে হবে বিরিয়ানিটা দারুন হয়েছে।

কিন্ত আর খাবে না সে, নাহলে সায়ন ভাব্বে সে একটা খাদক!! কে জানে কখন রাক্ষসী উপাধি দিয়ে দেবে হয়তো!!!

সায়ন আরেক লোকমা এগিয়ে দিতে তনু মুখ ঘুরিয়ে নিল, সায়ন লোকমাটা নিজের গালে পুরে বলল, ” খাবি না তো! ঠিকাছে, বেছে বেছে সবগুলো খাসির মাংস এই প্লেটে তুলে এনেছি। তুই না খেলে আমি একাই সবটা খেয়ে ফেলবো।

তনু আড়চোখে তাকিয়ে দেখল সত্যিই প্লেটভর্তি মাংস, বিরিয়ানির চেহারা দেখা যাচ্ছে না এমন অবস্থা!

তাহলে কি সত্যিই সায়ন ভাইয়া সব মাংস তুলে এনেছে! কিন্ত আমি তো আরও মাংস দিয়েছিলাম, কে জানে হতেও পারে!!

সায়ন খেতে খেতে বলল, ” আহ কি টেস্ট! এবার থেকে বাড়ি যাওয়ার আগে সোজা তোর বাসায় আসবো, তুই নিজের হাতে আমার জন্য রান্না করবি বুঝলি!!

তনু কাদোকাদো হয়ে বলল,” এতই যদি ভালো লেগেছে, তাহলে তখন অমন বললেন কেন!!?

সায়ন শুনেও না শোনার ভান করে খেতে লাগল, তনু খেয়াল করল সায়ন ননস্টপ খেয়েই চলেছে!

এদিকে তার পেটের ইন্দুর গুলোও কাচ্চিবিরিয়ানি খাওয়ার জন্য মরে যাচ্ছে!

সায়ন মাংস ছাড়িয়ে লোকমা গালে তোলার আগেই তনু এগিয়ে গিয়ে গপ করে খেয়ে নিল!

সায়ন সেদিকে তাকিয়ে স্মিত হেসে বলল,” কিরে, বলেছিলি যে খাবিনা!

বলেই তনুকে খাওয়াতে লাগল সে, তনু খেতে খেতে বলল, ” আপনিও তো বলেছিলেন রান্না ভালো হয়নি। হুহ!

সায়ন হেসে জিজ্ঞেস করল, ” বীরগঞ্জ যাবি!?
তনু কোনোকিছু না ভেবেই বলে উঠল, ” হ্যাঁ যাবো! কত্তদিন বড় মামা মামিকে দেখিনি, স্নেহা আপুকেও খুব মিস করি!!

সায়ন গ্লাসে পানি নিয়ে তনুর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, ” তাহলে প্যাকিং শুরু করে দে, কাল সকালে বের হবো আমরা।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
রোহানের ডাক পেয়ে ভাবনায় ছেদ পড়ল তনুর, ব্যালকনি থেকে উঠে ঘরে এলো সে।

রোহান বলে উঠল, ” আপু আমার স্কুলে আজ ক্রিকেট খেলা আছে। তোর সাথে যাওয়া হবে না, আমি এখনই বেরিয়ে পড়ছি।

বেরিয়ে যেতে গিয়ে আবার বলল, ” আর হ্যাঁ, আম্মু তোকে ডাকছে।

তনু আচ্ছা বলতেই রোহান দ্রুত পায়ে বোনের ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।

রোহান এবার ক্লাস নাইনে উঠেছে, আর তনু অনার্স প্রথম বর্ষে।

বাবা রোকন সাহেব অফিসে গেছে, তনু মেইন দরজা লক করে বাবা-মায়ের ঘরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো।

ঘরে ঢুকে দেখল মা ফোনে কারও সাথে কথা বলছে,” আল্লাহ বাচিয়ে রাখলে যাবো ইনশাআল্লাহ।

মেয়েকে দেখে বলল,” আচ্ছা ভাবি রাখি, পরে কথা হবে।

বলেই তনিমা কল কেটে দিল, তনু ভ্রু কুচকে তাকালো মায়ের দিকে।
তনিমা স্মিত হেসে বলল, ” পরশু স্নেহার মেয়ের আকিকা, ওর তো শ্বশুর শ্বাশুড়ি কেউ বেচে নেই। একটা ননদ আছে সেও থাকে অস্ট্রেলিয়ায়, তাই ওর ইচ্ছা মেয়ের আকিকা বাপেরবাড়িতে করবে।

তনু ও আচ্ছা বলে বেডে হেলান দিয়ে বসল, তনিমা ফোনটা বেড টেবিলের ওপর রেখে বলল, ” কিন্ত তোর বড় মামি বলছে,” অনেকদিন হল তোমরা ভাইবোনেরা সব একসাথে হওনি। স্নেহার মেয়ের আকিকাটা গ্রামের বাড়িতে করলে সবাই একসাথে হওয়া যাবে। তাই সবাই ঠিক করেছি অনুষ্ঠানটা আমতলীতে করবো।

সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার কথা শুনে চমকে উঠল তনু, তার মামা মামি কাজিনরা সাথে “সায়ন ভাইয়া” ও তো থাকবে!

স্নেহা আপুর শ্বশুর বাড়িতে অনুষ্ঠান হলে নাহয় কোনোরকমে প্রোগ্রামটা এড়িয়ে যেতো সে।

কিন্ত গ্রামের বাড়িতে সবাই যাবে তখন কি বলে যাওয়াটা ক্যান্সেল করবে সে!?

সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে তনু বলল,” আম্মু তোমরা যাও, আমার পড়া আছে, আমি যাবো না।

তনিমা অবাক হয়ে বলল, ” এখন আবার কিসের পড়া তোর!? এই পড়া পড়া করে গত আড়াই বছর ধরে বাপেরবড়ি যেতে পারিনি!!

তনু কিছুটা রেগে বলল,” তোমাকে যেতে মানা করেছে কে!? তুমি যাও, তোমরা সবাই যাও!! কিন্ত আমি যাবো না!!!

তনিমা মেয়েকে ধমক দিয়ে বলল, ” আমরা যাবো মানে!? তোকে একা বাসায় রেখে আমরা বেড়াতে যাবো!? তখন বলতি, তোর এইচএসসি পরীক্ষা শেষে যাবি, এইচএসসি শেষ হলে বললি এডমিশন দিয়ে যাবি, এডমিশন শেষ এখন অনার্সে উঠেছিস। পড়াশোনার চাপও কম!! তাহলে কেন যাবি না তুই!!? আর তোকে বাসায় রেখে গেলে সবাই যখন জিজ্ঞেস করবে তনু আসেনি কেন!!? কি বলবো তখন!!?

তনু বিড়বিড় করে বলল, ” আমি না গেলে কারও কিচ্ছু এসে যায় না!

তনিমা ধৈর্য্য হারিয়ে বলল, ” আমি আর কোনো অযুহাত শুনবো না তনু, তুই যাবি মানে যাবি।

বলেই গটগট করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল তনিমা, তনু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, ” আড়াইটা বছর আপনার থেকে কোনো চিঠি পাইনি! আচ্ছা আপনি কি আমাকে ভুলে গেছেন সায়ন ভাইয়া!!? ভুলেই গেছেন হয়তো!! আমিও ভুলে গেছি আপনাকে!! আমি যাবো নানুবাসায়, গিয়ে দেখিয়ে দেবো আপনাকে আমার একদম মনে নেই!!!
.
.
.

.
.
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here