হলুদ খাম, পর্ব:১

#হলুদ_খাম
লেখিকাঃ #তানজীমা_ইসলাম_রিয়া

___________________[১]______________
|
ঝমঝম করে বৃষ্টি পড়ছে, ঘনকালো মেঘে ঢেকে গেছে বিশাল নীল আকাশটা।
ব্যালকনির গ্রিলের মাঝ দিয়ে দুহাত বাড়িয়ে বৃষ্টিবিলাস করছে তনু।

গতকাল সে ছাদে উঠে বৃষ্টিতে ভিজে জ্বর বাধিয়েছে, তাই আজ ঘর থেকে বেরোনোর অনুমতি নেই তার।

কিন্ত কে শোনে কার কথা, ঘরের দরজা বন্ধ করে ব্যালকনিতে এসে ভিজছে সে।

যদিও ছাদে দাঁড়িয়ে ভেজার মতো অনুভূতি পাচ্ছেনা, তবুও এই বা কম কিসে।

তনুর মা তনিমা এক বাটি স্যুপ রান্না করে মেয়ের ঘরের সামনে এসে দেখল দরজাটা ভেতর থেকে লক করা।

এই ভরসন্ধ্যে বেলা দরজা লক করে কি করছে মেয়েটা! এমনিতেই গায়ে জ্বর বইছে, যদিও টেম্পারেচার একটু কমেছে!!

সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে দরজায় নক করল সে, দরজায় করাঘাতের শব্দ পেয়ে তনু তড়িৎ গতিতে ব্যালকনি থেকে সোজা ঘরে চলে এলো।

দরজা খুলতেই তনিমা ভ্রু কুচকে বলল, ” তোর চোখমুখ এতো ভেজা লাগছে যে! কি করছিলি দরজা লক করে!?

মায়ের কথা শুনে তনুর চোখজোড়া বড়বড় হয়ে গেছে, নিজের দিকে তাকিয়ে দেখল বৃষ্টির ছিচ লেগে পরনের পাতলা টিশার্টটা কিছুটা ভিজে গেছে, হাতে আর মুখেও ছিচ লেগে আছে!

তনু আমতা-আমতা করে বলল, ” ওয়াশরুমে গেছিলাম ফ্রেশ হতে।

তনিমা ও আচ্ছা বলে ঘরে ঢুকে বেডে হেলান দিয়ে বসল, মেয়েকে ইশারায় বসতে বলে বলল,” নে এই স্যুপ টুকু খেয়ে নে, দেখবি ভাল্লাগবে।

তনু নাকমুখ কুচকে বলল, ” আম্মু প্লিজ! আমার স্যুপ খেতে একদম ভালো লাগে না!!

তনিমা চোখ পাকিয়ে বলল, ” এখন ভালো না লাগলেও তোকে খেতে হবে, জ্বর বাধিয়ে মুখ চোখ একেবারে শুকিয়ে ফেলেছিস!

তনু কাচুমাচু করে কিছু বলার আগেই মায়ের ধমক খেয়ে লক্ষী মেয়ের মতো স্যুপ খেতে লাগল।

পুরো এক বাটি স্যুপ খেয়ে তনুর অবস্থা খারাপ, মনে হচ্ছে এই বুঝি গা গুলিয়ে স্যুপ গুলো সব বেরিয়ে আসবে!

তনিমা সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে মেয়ের কপালে চুমু খেয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো।

সে জানে তনু বমি করবেনা, এসবই তার স্যুপ না খাওয়ার বাহানা।

তনু ছোট থেকে যতবারই বৃষ্টিতে ভিজে জ্বর বাধিয়েছে, ততবারই তনিমা তাকে স্যুপ রেধে খাওয়ায়।

এটা যেমন তনুর জন্য শাস্তি, তেমনই ওর শরীরের জন্যও স্বাস্থ্যকর।
|
|
|
|
|
মা ঘর থেকে বেরিয়ে যেতেই বেডে সটান হয়ে শুয়ে পড়ল তনু, তার ভিষণ রকমের গা গোলাচ্ছে।

বেড ছেড়ে নেমে বেড টেবিলের ওপর থেকে পানির গ্লাসটা নিতে গিয়ে আধখোলা ড্রয়ারের দিকে তার চোখ জোড়া আটকে গেল।

পানির গ্লাসটা রেখে নিচু হয়ে ড্রয়ারটা খুলে একটা গোল ঝুড়ির বক্স হাতে নিল সে।

এটা সে গতবছর বানিজ্য মেলা থেকে কিনেছে, ঝুড়ির ঢাকনা খুলে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তনু।

ঝুড়ি ভর্তি হলুদ খামের ছড়াছড়ি! এই খাম গুলোকে গুছিয়ে রাখার জন্যই তো ঝুড়িটা কিনেছিলো সে!!

ঝুড়ির ভেতর থেকে একটা খাম নিয়ে চিঠি বের করে পড়তে লাগল তনু,”

“প্রিয়” বলে উল্লেখ করলাম না, শেষে দেখা যাবে এই প্রিয় লেখা নিয়ে সবাইকে বলে কি এক এলাহি কান্ড করে বসেছিস।
সে যাইহোক, শুনলাম তুই নাকি পড়াশোনায় বেশ মনোযোগী হয়েছিস!
আমি তো শুনে নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারিনি!!
এই সপ্তাহে ফুপ্পির বাসায় আসতেছি, দেখবানে তুই পড়াশোনায় কত্ত মনোযোগী হয়েছিস!
নাকি পুরাটাই তোর ভাওতাবাজি!! তখন ফুপা-ফুপ্পির সাথেসাথে আমার হাতেও ধোলাই খাবি!!!

চিঠিটা পড়তে পড়তে তনুর ঠোঁটের কোণায় এক চিলতে হাসি ফুটে উঠেছে।

এই চিঠি সে কতশত বার পড়েছে কোনো হিসেব নেই, কিন্তু প্রতিবারই মনে হয় যেন সে প্রথমবার পড়ছে!

তনু চিঠিটা সযত্নে খামে ঢুকিয়ে ঝুড়িতে রেখে দিল, ঝুড়িটা ড্রয়ারে রেখে বেডে উলটে আবার শুয়ে পড়ল।

এই চিঠিটা তার বড় মামার ছোট ছেলে সায়ন পাঠিয়েছিলো। তখন তনু ক্লাস ফাইভের পিএসসি পরীক্ষার চিন্তায় পাগল প্রায়।

এদিকে সায়ন এমন ভয়ানক এক চিঠি পাঠিয়ে তার ভয়টা আরও বাড়িয়ে দিল।

সায়ন তখন ক্লাস টেনের স্টুডেন্ট, সে যেমন মেধাবী তেমন রাগী স্বভাবের।

মেধাবী আর রাগী এই স্বভাব দুটোর কারণেই সায়নকে যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতো তনু।

ছোট থেকেই সায়নের তুখোড় রেজাল্ট শুনতে শুনতে অতিষ্ঠ হয়ে গেছে সে।

সবার মুখে ঐ এক কথা,” দেখেছিস সায়ন কতো মেধাবী! ক্লাসের টপ বয়!! স্যার ম্যামদের চোখের মনি!!! তোকেও অমন হতে হবে!!!!

এদিকে অসহায় তনু কিভাবে বোঝাবে, স্কুলে সে তো স্যার ম্যামদের চোখে দুষ্টুর শিরোমণি!!
|
|
|
|
|
ফজরের নামাজ পড়ে ব্যালকনিতে এসে দোলনায় বসেছে তনু, সারারাত আকাশ ভেঙে বৃষ্টি হয়ে ভোরের দিকে থেমেছে।

আকাশে এখন মেঘ নেই, ধীরে ধীরে পুব আকাশে সূর্য উঁকি দিয়ে নতুন দিনের জানান দিচ্ছে।

তনুর ব্যালকনিতে সাজানো ছোট্ট বাগান থেকে আসা ফুলের ঘ্রাণে ম-ম করছে চারিদিক।

দোলনা ছেড়ে নেমে “কুরচি” ফুল গাছের কাছে গিয়ে বুক ভরে নিঃশ্বাস নিল সে।

এটার ঘ্রাণ কেমন যেন নেশা ধরিয়ে দেয়৷ বেশিক্ষণ ঘ্রাণ নেওয়া যায়না, তনুর নিজেকে মাতাল মাতাল লাগে। আর সেটা যে শুধুই এর সুগন্ধে নয় তা তনুও ভাল করেই জানে।

এই অদ্ভুত নামের ফুলটাও সায়নই তাকে দিয়েছিলো, সাথে দিয়েছিলো আরেকটি হলুদ খাম।

তাতে লিখেছিলো,”

অনেক ভেবে দেখলাম, প্রতিবার সম্বোধনহীনভাবে চিঠি লিখতে ব্যাপারটা কেমন যেন বেমানান লাগে।
আর তোর নাম লিখলে তো মহাবিপদে ফেলে দিবি আমায়, তোকে আমি হাড়েমজ্জায় চিনি।
তাই ভেবেছি তোকে এবার থেকে “কুরচি ফুল” নামেই সম্বোধন করবো।
জেএসসিতে তো ভালই রেজাল্ট করেছিস শুনলাম, তাই উপহার স্বরূপ এই ফুল পাঠালাম তোকে।
তোর মতই এই ফুলের নামটাও বেশ অদ্ভুত বুঝলি, তাই অনেক খুজে তোর জন্য পাঠিয়েছি।
সে যাইহোক তুই যে রান্না করে আমাকে খাওয়াবি বলেছিলি মনে আছে!?
এডমিশনের জন্য আসতে পারছিনা দেখে ভাবিস না তুই পার পেয়ে যাবি।
ভালো করে রান্নাটা শিখে রাখ, আমি এলে প্রতিদিন তুই রান্না করে খাওয়াবি। নাহলে তোর কপালে দুঃখ আছে!

“কুরচি ফুলের সায়ন”

চিঠিটার লেখা গুলো মনে পড়তেই তনু হেসে ফেলল, তার জেএসসি পরীক্ষার আগে সায়ন বলেছিলো,” যদি জেএসসি তে রেজাল্ট ভালো না করতে পারিস তাহলে তোকে টাকাওয়ালা টাকলার সাথে বিয়ে দেবো।

তখন তনুও মুখ বেকিয়ে বলেছিলো,”আমি ভালো রেজাল্ট করবই, তখন আপনাকে বিয়ে দেবো আশি বছরের বুড়ির সাথে।

সায়ন হেসে বলেছিলো, ” আমার বিয়ে নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না। রেজাল্ট ভালো করলে নিজে রান্না করে আমাকে খাওয়াইস। ওহ তুই তো রান্নাও করতে পারিস না! অকর্মার ঢেকি!!

তনু তখন গাল ফুলিয়ে বলেছিলো,” পারিনা তো কি হয়েছে! শিখে নেবো!!



ফ্লোরে বসে দেওয়ালে হেলান দিয়ে আকাশের দিকে তাকালো তনু।
আকাশ এখন বেশ পরিষ্কার হয়ে এসেছে, তনু সেদিকে তাকিয়ে স্মৃতির পাতায় চোখ বুলাতে লাগল।

জানুয়ারি মাসের কোনো এক শীতের সকালে কম্বল মুড়ি দিয়ে বেঘোরে ঘুমোচ্ছিলো সে।

জেএসসি পাশ করে সদ্য কিশোরী মেয়েটি ক্লাস নাইনে উঠেছে।
পড়াশোনার প্রেশার আপাতত কম, তাই ঘুমটাও বেশ জেকে ধরেছে তাকে।

ঠিক তখনই অনুভব করল শীতটা যেন বেশিই লাগছে, ঠান্ডায় হাত পা বরফ হয়ে যাচ্ছে তার।

গায়ে জড়ানো মোটা কম্বলেও শীত মানাচ্ছেনা, তনু আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকাতেই চমকে উঠল।

তার পড়ার টেবিলের চেয়ারে পায়ের ওপর পা তুলে নিশ্চিন্তে বসে আছে সায়ন ভাইয়া।

সকাল সকাল এটা আবার কোত্থেকে উদয় হল কে জানে!
তবে তনুর ঘুম যে এক সপ্তাহের জন্য হারাম হতে চলেছে সেটা বুঝতে বাকি নেই তার।

সায়ন যতবারই তাদের বাসায় আসে, প্রায় এক সপ্তাহ না থেকে যায় না।

একমাত্র ফুপ্পির কলিজার টুকরো বলে কথা! সায়নকে পেলে তনিমা তো নিজের মেয়েকেই চিনতে পারেনা এমন অবস্থা!!

তনু কম্বলের ভেতর থেকে মুখ তুলে দেখল, ঘরের জানালা গুলা সব হাট করে খোলা, ওপরে ফ্যানটাও ঝড়ের বেগে চলছে!

তনু বিরক্তি মাখা মুখে বলল,” ভাইয়া আপনার কি সমস্যা বলুন তো! এই শীতের মধ্যে আমাকে এভাবে টর্চার করছেন কেন!! আপনার হয়তো শীত লাগছেনা, কিন্ত আমার ভিষণ শীত লাগছে!!!

সায়ন একবার তনুর দিকে তাকিয়ে আবার ফোনে গেম খেলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল!

তনু আর শুয়ে থাকতে পারলো না, রেগেমেগে বেড থেকে নেমে ফ্যান অফ করে ঘরের জানালা গুলোও লক করে দিল।

সায়নের মধ্যে কোনো হেলদোল নেই, যেন কিছুই হয়নি সবকিছু স্বাভাবিক আছে!

তনু জানালা লক করে আবার বেডের দিকে এগিয়ে যেতেই সায়ন উঠে এসে খপ করে তার হাত ধরে ফেলল।

একে তো তনু ঠান্ডায় জমে যাচ্ছে, তারমধ্যে সায়নের ঠান্ডা হাতের ছোয়ায় আরেক দফা কেপে উঠল সে।

সায়ন ফোন পকেটে ঢুকিয়ে বলল, ” তুই এতো ঘুমকাতুরে হয়েছিস কবে থেকে রে!? ফুপ্পি বলল তুই নাকি সারাদিন কুম্ভকর্ণের মতো পড়ে পড়ে ঘুমাস!! তোর পাশে কেউ মরে পড়ে থাকলেও তো টের পাবিনা!!

তনু তার নরম হাতটা সায়নের বলিষ্ঠ হাতের মুঠো থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বলল, ” আমি মোটেই অতো ঘুমাই না, আম্মু সবসময় একটু বাড়িয়ে বলে!

সায়ন বাকা হেসে বলল, ” ঘুমিয়ে নে ঘুমিয়ে নে, বিয়ের পর তো ঘুমানোর সুযোগই পাবি না।

তনু মুখ ভেংচি কেটে বলল,” ঘুমাতে না পারলে আমি বিয়েই করবো না। হুহ!

সায়ন আস্তে আস্তে তনুর কাছে এসে বলল, ” তো সারাজীবন কি ফুপা ফুপ্পির ঘাড়ে বসেই খাবি নাকি!

তনু আবারও মুখ ভেংচি কাটতে গেলেই সায়ন তার দুই গাল টিপে বলল, ” খবরদার তনু! আবার যদি আমার সামনে মুখ ভেংচি কেটেছিস! তোর এমন হাল করবো যে

তনু ভয়ে কাচুমাচু করে বলল, ” কি করবেন আমাকে!?

সায়ন কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো, হুট করেই তনুকে ছেড়ে ঘর থেকে বেরোতে বেরোতে বলল,” ফ্রেশ হয়ে পাঁচ মিনিটের মধ্যে ডাইনিং এ আয়, লেট হলে তোর শাকচুন্নি মার্কা লম্বা চুল গুলো আমি কাচি দিয়ে কেটে দেবো।।

তনু আর বিন্দুমাত্র দেরি না করে ওয়াশরুমে ঢুকে ফ্রেশ হতে লাগল।










ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং এ এসে দেখল সবাই ব্রেকফাস্ট করছে, তনু একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসল।

তার অপজিটের চেয়ারে বসে আরামছে পরোটা আর গরুর মাংস খাচ্ছে সায়ন।

এটা তার পছন্দের ব্রেকফাস্ট, তাই সে যতবার আসে তনিমা ব্রেকফাস্টে এই মেন্যুটা অবশ্যই রাখে।

তনুর বাবা রোকন সাহেব ব্রেকফাস্ট শেষে অফিসের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েছে।

সে একটা সরকারি ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার, তনুর ছোট ভাই রোহান ব্রেকফাস্ট করে কোচিং এ যাওয়ার জন্য বেরিয়ে পড়েছে।

তনিমা খেতে খেতে সায়নের উদ্দেশ্যে বলল,” যাক, এতদিনের কষ্টের পর সফল হয়েছিস। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়া কি চারটে খানি ব্যাপার!!?

মায়ের কথা শুনে তনুর আধ চিবানো পরোটা মুখেই আঁটকে গেল!

সায়ন ভাইয়া তাহলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছে! অবশ্য এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।

বরং সে চান্স না পেলেই বেশি অবাক লাগতো, কিন্ত তার ভয় অন্য জায়গায়।

সায়ন যেহেতু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছে, এখন সবাই বলবে,” তোকেও কোনো না কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেতেই হবে। রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে হলেও পেতেই হবে।

অবশ্য তাতে ভালই হবে, প্রকৃতির মাঝে গিয়ে নিশ্চিন্তে শ্বাস নিতে পারবে সে।
আর সায়ন ভাইয়ার থেকেও দূরে থাকা যাবে! এটা ভেবেই তনু প্রশস্ত হাসি দিয়ে পরোটা চিবাতে লাগল।

তনিমা থালাবাসন নিয়ে কিচেনে ঢুকতেই, সায়ন খেতে খেতে বলল, ” তা সায়েন্স নিয়েছিস কোন আক্কেলে!? ফেল করে টাকলা বিয়ে করার সখ জেগেছে নাকি তোর!!?

তনু মনেমনে বলল, ” এহহ! সায়েন্সে যেন শুধু উনিই পড়তে পারবেন!! আর আমরা তো সব গাধী!!!
কিন্ত মুখে বলল,” আমি ভেবেচিন্তেই সায়েন্স নিয়েছি।

সায়নকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই তনু নিজের ঘরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো।

কারণ সে জানে, সায়ন এক কথায় দুকথায় তাকে পচানোর কোনো পথ অবশিষ্ট রাখবে না।

কিন্ত সাথেসাথেই সায়নের ধমক পেয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল সে, সায়ন একটা তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে বলল, ” ওদিকে কোথায় যাচ্ছিস রে!? কিচেন তো এদিকে!!

পেছন ফিরে তনু ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করল, ” তো আমি কি এখন কিচেনে গিয়ে পড়তে বসবো নাকি!!!

সায়ন শয়তানি হাসি দিয়ে বলল, “আমি এলে যে নিজে রান্না করে খাওয়াবি বলেছিলি সেটাও কি ভুলে খেয়েছিস নাকি!? তোর এই ঘোড়ার ডিম মার্কা মেমোরি নিয়ে সায়েন্স পাশ করবি কিভাবে!!? আমি তো স্পষ্ট তোর ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছি, টাকলা জামাই নিয়ে

সায়নের বাকি কথাটুকু মুখেই রয়ে গেলো, তনু তেড়ে এসে বলল, ” আর সেই টাকলা জামাই হবেন আপনি, আপনার চুল না পড়লেও রেজার দিয়ে কেটে আপনাকে টাক বানাবো আমি।

বলেই হনহন করে কিচেনে চলে গেল তনু, সায়ন কিছুক্ষণ সেদিকে তাকিয়ে হেসে ফেলল।

তনু সেই গা জ্বালানো হাসির শব্দ এক কান দিয়ে ঢুকিয়ে অন্য কান দিয়ে বের করে দিল।

দুনিয়ায় যত রেসিপি আছে আজ সব রান্না করবে সে, তারপর সেগুলো সায়নের নাক দিয়ে মুখ দিয়ে গেলাবে।





(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here