শেষ প্রান্তের মায়া পর্ব -১০

#শেষ_প্রান্তের_মায়া (১০)
#বোরহানা_আক্তার_রেশমী
_______________

সময় কত দ্রুত চলে যায় তা কেউই টের পায় না। দেখতে দেখতে কেটে গেছে প্রায় ৪ মাস। মাহিদের এক্সাম শুরু হবে কাল থেকে। তাই ওকে আজই বাড়িতে পাঠিয়ে দিবো। সিহাবকে একটা স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিয়েছি। প্রথমে তো সে ভর্তিই হবে না পরে কত কি করে ভর্তি করালাম। ওর ভাষাটাও শুদ্ধ করে ফেলেছি। মাঝে মাঝে আগের ভাষায় কথা বলে ফেলে। আমি প্রতিদিন কাজ শেষ করে আসার সময় ওকে নিয়ে আসি৷ কোনো কোনো দিন মাহিদও নিয়ে আসে। দুই ভাইয়ের মধ্যে মিল দেখলে আমার চোখ জুড়িয়ে যায়। কেউ এদের দেখলে বলতে পারবে না যে এরা নিজের ভাই না। সকালে যখন দুজনকে ডাকতে যাই তখন এদের অবস্থা দেখলে হাসিও পায় আবার আনন্দও হয়৷ আমি ভাবছিলাম হয়তো মাহিদ সিহাবকে তেমন ভাবে মানতে পারবে না কিন্তু ওদের দুজনের বন্ডিং দেখে আমি নিজেই অবাক হয়ে গেছি। প্রতিদিন সকালে ডাকতে গিয়ে দেখি একজন অন্যজনের কোলের মধ্যে বিড়ালের বাচ্চার মতো জড়সড় হয়ে শুয়ে আছে। এমন না যে জায়গা কম! আসলে ওরা দুজন ঘুমায়ই এমনভাবে। ওহ হ্যাঁ তিন্নি প্রেগন্যান্ট। ডাক্তার যে টেস্ট দিয়েছিলো ওগুলো করানোর পর জানতে পারে তিন্নি প্রেগন্যান্ট। সোহান ভাই আর তিন্নি তো প্রচুর খুশি। সোহান ভাই অনেক খেয়াল রাখে তিন্নির। কাজ থেকে অবসর পেলেই ছুটে আসে বাড়িতে। তিন্নি কি করছে, কি খাচ্ছে, নিজের যত্ন নিচ্ছে কি না সবটার খেয়াল রাখে সে। সোহান ভাইয়ের পাগলামো দেখে তিন্নি শুধু হাসে। আপাতত তিন্নি ৬ মাসের প্রেগন্যান্ট। পেট টা কি সুন্দর ফোলা ফোলা।আগের থেকে মুখে উজ্জ্বলতার ছাপটাও বেশি। আমার ভাবনার মাঝেই তিন্নির ডাক। পেটে হাত দিয়ে আমার বাড়িতে ঢোকে। আমি ভাইয়ের ব্যাগ রেখে এগিয়ে যায় তার দিকে। তিন্নি হেঁসে একটা ব্যাগ আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,

‘এটা মাহিদকে দাও। আমার আর উনার পক্ষ থেকে একটা ছোট্ট গিফ্ট। ওর পরীক্ষা উপলক্ষে।’

আমি নিজেও হেঁসে দিলাম। বললাম, ‘পরীক্ষা উপলক্ষে গিফ্ট! বাহ।’

তিন্নিকে বিছানায় বসিয়ে আমি ব্যাগটা গোছানোর ব্যাগের মধ্যে রেখে দিলাম। সিহাব ছুটে এসে বলে,

‘বুবু ভাইজান আবার কবে আইবো?’

‘তুই ভালো করে কথা বল আগে। তোকে বলেছি না এভাবে কথা বলবি না নয়তো অভ্যাস থেকে যাবে। স্কুলেও এভাবে কথা বলিস?’

সিহাব দাঁত দিয়ে জিভ কাটে। কয়েক মিনিট নিজে নিজেই কিছু আওড়ে আবার বলে,

‘বুবু ভাইয়া কবে আসবে আবার?’

‘তোর ভাইয়ার পরীক্ষা শেষ হলেই চলে আসবে। তা তোর ভাইয়া কই?’

‘ভাইয়া তো মন খারাপ করে কোথায় যেনো গেলো।’

এই ছেলেটা যাচ্ছে মাত্র কয়েকদিনের জন্য অথচ ভাবসাব এমন যেনো আমাকে ছেড়ে একদম চলে যাচ্ছে। মানলাম ‘ও’ আমাকে একটু বেশিই ভালোবাসে তার মানে তো এই না যে পড়ালেখা ছেড়ে বসে থাকবে! আমি সিহাবকে বললাম মাহিদকে ডেকে আনতে। তিন্নি আর আমি গল্প জুড়ে দিলাম। কথায় কথায় তিন্নি মজা করে বলে,

‘মায়া বিয়ে করবে নাকি? আমার কাছে ভালো একটা ছেলে আছে।’

আমি তাকালাম তিন্নির দিকে। মেয়েটার মুখে হাসি লেগেই আছে। আমি নিজের কাজে মন দিয়ে বললাম,

‘তোমার পুচকু আগে আসুক তারপর তার পছন্দে বিয়ে করে নিবো নয়তো পুচকু রাগ করবে। ঠিক বলেছি না পুচকু!’

তিন্নি খিলখিলিয়ে হাসে। আমি চেয়ে চেয়ে দেখলাম ওর মন মাতানো হাসিটা। দুজনের কথার মধ্যেই মাহিদ আর সিহাব হাজির। মাহিদকে দেখে ব্যস্ত গলায় বললাম,

‘মাহিদ বই গুলো নিবি নাকি ওখানকার গুলো আছে? তুই বাাড়িতেই তো থাকবি তাই না!’

মাহিদ ধীর কন্ঠে বলে, ‘নাহ। বাড়িতে যাবো না। কিন্তু এতগুলো বই তো নেওয়াও যাবে না। তুমি দিও না বইগুলো আমি ওখানে গিয়ে কিছু একটা ব্যবস্থা করে নিবো।’

আমি পরিপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালাম ভাইয়ের দিকে। মন খারাপ করে আছে। কন্ঠেও কেমন যেনো মলিনতা। আমি মাহিদের হাত ধরে ওকে বিছানায় বসিয়ে বললাম,

‘তুই এমন করছিস কেন ভাই? মাত্র কয়েকদিনেরই তো ব্যাপার। এমন একটা ভাব করছিস যেনো আমাকে শ্বশুরবাড়ি নয়তো কবরে রেখে যাচ্ছিস।’

মাহিদ চমকে তাকায় আমার দিকে। আমি হাসিমুখেই তাকিয়ে ছিলাম। তিন্নি একটা ধমক দিয়ে বলে, ‘তোমার কি যা তা বলার স্বভাব কোনোদিন যাবে না? কি উল্টা পাল্টা বলতেছো এসব?’

মাহিদ রাগ দেখিয়ে কিছু না বলেই ঘর থেকে বের হয়ে যায়। সিহাবও ছোট ছোট চোখ করে কয়েকটা কথা বলেই চলে যায়। তিন্নি তখনো আমার দিকে তাকিয়ে আছে রাগী দৃষ্টিতে। আমি ঢোক গিলে বললাম,

‘কথার কথা বলেছি বলে ৩ জনই এমন রেগে যাবে নাকি!’

‘তুমি জানো না তুমি আমাদের কাছে কি! হয়তো তোমার সাথে পরিচয় অল্প কিন্তু তোমার সাথে সম্পর্কটা এমন যেনো মনে হয় কত আপন তুমি।’

আমি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলাম তিন্নির মুখের দিকে। আনমনে বলে বসলাম, ‘যেখানে নিজের বাবা-মা মুখে বলেছিলো আমাকে ম’রে যাওয়ার কথা সেখানে অপরিচিত তোমরা আমার ম’রার কথা শুনে আমার ওপর রেগে যাচ্ছো! এটাই কি জীবন!’

তিন্নি কিছু বললো না। এই একটা কথার পিঠে আর কোনো কথা কারোরই আসে না। জীবন এগিয়ে গেছে ঠিকই তবে এখনো কিছু কথা মনে দাগ কেটে আছে। আপনজনদের সেই নি’ষ্ঠুর রুপ গুলো আজও ভেতরে ভেতরে আমাকে পু’ড়ায়৷ অন্যের কথা তাও মুখ বুজে সহ্য করা যায় কিন্তু নিজের মানুষগুলোর কথা একদম তীরের মতো বুকে এসে বিঁধে।

খানিক পরই মাহিদ, সিহাব একসাথে বেড়িয়ে আসে। মাহিদ রেডি হয়ে গেছে। সোহান ভাই নিজেই যাবে মাহিদকে বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত এগিয়ে দিতে। মাহিদ অভিমানে আমার দিকে তাকালোই না। আমি নিজেও ওর সাথে কথা বললাম না। কারণ কথা বললেই এখন আর যেতে চাইবে না। কিন্তু ওর যাওয়াটা দরকার। কোনো কিছুর জন্য না হলেও নিজের পড়ালেখার জন্য তো যেতেই হবে। পড়ালেখা ছাড়া এখন আর জীবনে কিছু নাই। যদিও আজকাল মেধার চেয়েও ঘু’ষের দাম বেশি তবুও পড়ালেখা শেষ করাটা অন্যরকম শান্তি। সৎ পথে থেকে চললে আল্লাহ তায়ালা কোনো না কোনো ব্যবস্থা ঠিক করে দিবে। মাহিদ যখন বাড়ি থেকে বের হয় তখন পিছন ফিরে আরো একবার তাকায়। আমি হেঁসে শুধু ভাইয়ের চুল গুলো এলোমেলো করে দিলাম। ভাই হেঁসে জড়িয়ে ধরে।

___________
ভাই গেছে আজ কয়েকদিন হলো। ওর পরীক্ষা গুলো আল্লাহর রহমতে ভালোই হচ্ছে। ওর টাকা দিয়ে ওকে ফোন কিনে দিয়েছিলাম আর আমি ছোট্ট একটা বাটন ফোন কিনে নিয়েছিলাম শুধু মাত্র কথা বলার জন্য। সিহাবেরও স্কুল ভালো যাচ্ছে। শুধু তিন্নির শরীরটা ইদানীং খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। এই অবস্থায় এমন হওয়াটা স্বাভাবিক। গার্মেন্টস থেকে বের হয়ে দ্রুত পায়ে হাঁটা লাগালাম সিহাবের স্কুলের দিকে। তার মধ্যেই সামনে এসে দাঁড়ালো সেই ছেলেটি। এতগুলো দিনেও আমি তার নাম শুনিনি, জানিও না। ইচ্ছেও প্রকাশ করিনি জানার মতো। প্রায়ই এখানে তাকে দেখা যায়। আমরা মেয়েরা বরাবরই কারো চোখ, মুখ দেখলে বুঝতে পারি সে কোন দৃষ্টিতে তাকায়। তাই আমারও বুঝতে অসুবিধা হয়নি আর এজন্যই আরো বেশি করে এড়িয়ে যাই। ছেলেটা আমার সামনে এসে বলে,

‘আপনার সাথে আমার কথা আছে।’

‘আপনি আমাকে চিনেন? অপরিচিত একটা মেয়ের সাথে কি কথা আপনার?’

‘আমি আপনাকে চিনি না। তাতে কি! কথাও বলা যাবে না?’

আমি নিজেকে যথা সম্ভব শান্ত রাখার চেষ্টা করলাম। শান্ত গলায় বললাম, ‘সিহাবের স্কুল ছুটি হয়ে গেছে আমার ওকে আনতে হবে। আপনার সাথে কথা বলতে গেলে ওকে আনতে দেড়ি হয়ে যাবে। রাস্তা ছাড়েন।’

‘সিহাবের স্কুলে তো প্রতিদিনই হেঁটে যান। চলুন হাঁটতে হাঁটতেই কথা বলবো।’

ছেলেটাকে কি দিয়ে কি বুঝাবো জানি না। এভাবে কথা না বললে যে পিছুও ছাড়বে না তাও হাড়ে হাড়ে টের পেলাম। তাই কিছু না বলে নিজের মতো হাঁটা লাগালাম। সাথে সাথে ছেলেটাও হাঁটতে লাগলো। নিজে থেকেই বললো,

‘আমি আরাফ। আপনার নাম মায়া তাই না?’

‘জানেন যখন তখন জিজ্ঞেস কেনো করছেন? কি বলবেন সেইটা বলুন।’

ছেলেটা নিজের স্বর পরিষ্কার করে নিলো। আমতা আমতা করে মিনমিনিয়ে বলে, ‘এতো কড়া না হয়ে একটু ভালো ভাবে কথা বলা যায় না? ফ্রেন্ড মনে করেই না হয় বলুন!’

আমি দাঁড়িয়ে গেলাম। আরাফের পা থেকে মাথা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করে বললাম, ‘আমার নাম বাদ আর কিছু জানেন আমার বিষয়ে?’

আরাফ দ্রুত গতিতে মাথা নাড়ায়। বলে, ‘হ্যাঁ। আপনি মায়া। আপনি ডিভোর্সী এবং ওই গার্মেন্টসে কাজ করেন।’

‘এগুলো তো আমার থেকেই শুনেছেন! এর বেশি কিছু জানেন?’

‘এর বেশি কিছু জানার প্রয়োজন নেই। শুধুমাত্র বন্ধু হতেই তো বলছি। একটু বন্ধুর মতো কথা বললে কি এমন হবে?’

‘ডিভোর্সীদের বন্ধু-বান্ধব বলতে কিছু হয় না। সুযোগ বুঝে তারাও পিঠ পিছে ছু’ড়ি বসিয়ে দেয়।’

আরাফের হাঁটা থেমে গিয়েছে। থমথমে গলায় পেছন থেকে চেঁচিয়ে বলে, ‘সবাই এক না মায়া। সবাই পিঠ পিছে ছু’ড়ি না বসিয়ে খোঁপায় বেলীফুলের মালাও গুজে দেয়।’

আমি হাঁটা থামালেও পিছু ফিরে তাকালাম না। ছেলেটার বয়স আনুমানিক ২৪/২৫। আমার বড়ই হবে তারপরও এমন ইমম্যাচুউরদের মতো কথা বলতে পারে কিভাবে! ওর ব্যবহার, কথার ধরণ দেখলেই বুঝা যায় সে আমাকে পছন্দ করে। একজন ডিভোর্সীকে পছন্দ করার মানে বুঝে উনি? নিজের লাইফটা নষ্ট করতে উঠে পড়ে লেগেছে। আরাফ আর আসে না। তবে আমি এগিয়ে যাই৷ সিহাবকে নিয়ে চুপচাপ বাড়ি চলে আসি। বাড়ি এসে সিহাবের ড্রেস খুলে ওকে হাত মুখ ধুয়ে নিতে বললাম। আমি হাত মুখ ধুয়ে আগে তিন্নির কাছে গেলাম। মেয়েটা এই অবেলাতেই শুয়ে আছে। বোধহয় শরীরটা অনেক বেশি খারাপ। তিন্নি ঘুমাচ্ছে বলে আমি আর কিছু না বলে নিজের বাড়ি এসে হাত মুখ ধুয়ে দ্রুত রান্না বসালাম। সিহাব বস্তির ছোট ছোট ছেলেপুলেদের সাথে খেলতে গেছে। ভাত রান্না হয়ে গেছে কেবল তরকারি তুলে দেবো এমন সময় হুট করেই তিন্নিদের ঘর থেকে তিন্নির জোড়ে জোড়ে কান্নার আওয়াজ পেলাম। আমি কোনো কিছু না ভেবে চুলায় পানি ঢেলে এক দৌড়ে গেলাম তিন্নির কাছে। তিন্নি মেঝেতে বসে পেট চেপে কান্না করতেছে। সোহান ভাইও দেখলাম আসেনি। তিন্নির কান্নার আওয়াজ ধীরে ধীরে আরো জোড়ালো হলো। চিন্তায় আমার ঘাম দিচ্ছে। তিন্নিকে আগলে নিয়ে কোনো রকমে বসলাম। ৬ মাসের প্রেগন্যান্সিতে হঠাৎ এমন ব্যাথার কারণ বুঝলাম না। তিন্নি কোনো কথা না বলে কান্না করেই যাচ্ছে। আমি ভয় পাচ্ছি না জানি বাচ্চাটার কিছু হয়। যা বুঝতেছি তাতে ওকে তাড়াতাড়ি হসপিটাল নিতে হবে। আশে পাশে তাকিয়ে তিন্নির ফোন নিয়ে দ্রুত কল দিলাম সোহান ভাইকে। ২ বার রিং হওয়ার পরই তিনি কল রিসিভ করলেন। আমি ব্যস্ত গলায় বললাম,

‘সোহান ভাই দ্রুত বাড়ি আসেন। তিন্নি কেমন যেনো করতেছে ওকে এখনই হাসপাতাল না নিলেই নয়।’

ওপাশ থেকে কোনো আওয়াজ এলো না৷ আমি তিন্নিকে রেখে বাহিরে এসে পাশের বাড়ির কাকিকে ডাকলাম। আর ওই বাড়িরই ছোট একটাা ছেলেকে বললাম সিহাবকে ডাকতে। কি রেখে কি করবো আমার মাথায় কিচ্ছু আসতেছে না। টেনশনে মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। আমি কোনো রকমে নিজেকে শান্ত করলাম। যা করার তা মাথা ঠান্ডা করে করতে হবে। নয়তো বিপদ বাড়বে বয় কমবে না। আমি আর পাশের বাড়ির কাকি মিলে দ্রুত তিন্নিকে তুললাম। কাকা গেছে মোড় থেকে গাড়ি আনতে। এর মধ্যেই ছুটে আসে সোহান ভাই। সিহাবও চলে এসেছে। সোহান ভাই কোনোদিকে না তাকিয়ে তিন্নিকে আগে পাজা কোলে তুলে নিলেন। তিন্নি ব্যাথায় ছটফট করছে আর কান্না করছে। আমি একটা জিনিস ভেবেই খুব অবাক হলাম। ৬ মাসে হঠাৎ এমন কেনো হলো! একটু এগোতেই কাকা একটা সিএনজি নিয়ে হাজির হলো। সিহাবকে আমার ফোন আনতে বলে আমি পেছন পেছন ছুট লাগালাম। সিএনজির মধ্যে আমি প্রথমে বসে আমার পাশে তিন্নিকে বসিয়ে নিলাম। সিহাবও ছুটে আসে। সোহান ভাই আর সিহাব সিএনজির সামনে বসে। ঢাকা শহর মানেই জ্যাম। কোনো না কোনো ঝামেলা লেগেই থাকবে৷ তবে ভাাগ্য ভালো থাকায় তেমন একটা জ্যাম পেলাম না। যত দ্রুত সম্ভব তিন্নিকে একটা হসপিটালে নিয়ে আসলাম। ইমার্জেন্সিতে ডক্টর দেখলো। ব্যাথা কমার জন্য ইনজেকশন আর স্যালাইন দিলো। ব্যাথায় চোখ মুখের হাল খারাপ তিন্নির। ডক্টর ম্যাম আমাকে জিজ্ঞেস করলেন,

‘উনার রিপোর্ট গুলো আছে?’

আমি রিপোর্ট গুলো সিহাবের থেকে নিয়ে ম্যামকে দিলাম। ভাগ্যিস তখন রিপোর্ট গুলো কাজে লাগবে ভেবে নিয়ে নিয়েছিলাম নয়তো আরো ঝামেলা বাড়তো। সোহান ভাই চুপ করে বসে রইলেন একটা বেঞ্চে। ম্যাম রিপোর্ট গুলো আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে চলে গেলেন। আমি সিহাবকে নিয়ে বসলাম সোহান ভাইয়ের কাছে। সোহান ভাইয়ের মনের অবস্থা ভেবেই আরো বেশি খারাপ লাগছিলো। এমন সময় ফোন আসে মাহিদের। আমি নিজেকে যথেষ্ট শান্ত রাখার চেষ্টা করে ফোন রিসিভ করলাম। সাথে সাথেই ওপাশ থেকে মাহিদ ব্যস্ত কন্ঠে বলে উঠে,

‘বুবু আব্বা-মা মাহমুদার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে। তন্ময় ভাইয়ের মতোই এবারের ছেলেটাও বড়লোক। ২/৩ দিনের মধ্যেই বোধহয় বিয়ে হয়ে যাবে৷ কি করবে বুবু!’

মাথায় যেনো আকাশ ভে’ঙে পড়লো। আমার মতো আমার বোনটার অবস্থা হবে না তো! আমি যেমন কষ্ট পেয়েছি আমার বোনটাও পাবে না তো! কিন্তু এই মুহুর্তে আমি যাবো কি করে! একদিকে তিন্নির এই অবস্থা ওদিকে আমার বোনটা। আমি না গেলে আব্বা-মা সত্যি সত্যি ওর বিয়ে দিয়ে দেবে। এমন পরিস্থিতিতে কি করা উচিত বুঝে উঠলাম না। অনুভূতিশূণ্যের মতো চেয়ে রইলাম তিন্নির বেডের দিকে….

চলবে..
(আসসালামু আলাইকুম। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here